আমাদের
রোজকার ব্যবহার করা শব্দের মধ্যেই কত যে মজা লুকিয়ে আছে তা খুঁড়তে বসলে এমন নেশা
ধরে যায় যে দেখতে পাওয়া যায় কত না-দেখা আলো, শুনতে পাওয়া
যায় কত না-শোনা গল্প। ‘মজা পাওয়া’-র কথা বলতে গিয়ে আজ আমার ‘বিনোদন’ শব্দটা নিয়ে
ভাবতে ইচ্ছে করছে। আমরা যাকে ইংরেজিতে বলি ‘entertainment’ বা ‘recreation’; সেটিকেই
প্রধান ভারতীয় ভাষাগুলিতে ‘বিনোদন’ বলা হয়। এটা একটা বিশুদ্ধ সংস্কৃত
শব্দ, এইটা
একটু খুঁড়ে দেখি তো এই অর্থটা সে কীভাবে জোটাল!
বিনোদন শব্দ
তিনটি প্রধান উপকরণ দিয়ে তৈরি; তারা হল ‘বি’ উপসর্গ (prefix), নুদ্
ধাতু (verbal
root) আর অন প্রত্যয় (suffix)। শব্দের মূল
অর্থটা সাধারণত তার মধ্যেকার ধাতুটির অর্থে লুকিয়ে থাকে। সেখানেও আবার ঠেলাঠেলি কম
নয়, কারণ
একই ধাতুর অনেক অর্থ থাকতে পারে। যাই হোক, নুদ্ ধাতুর
মূল অর্থ হল ‘ঠেলা মারা’, ‘ধাক্কা দেওয়া’। ‘বি’ উপসর্গের
মানেও অনেক রকম হয়, তবে সাধারণত সেটি ‘বিশেষভাবে’ - এই মানে
বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। আর ‘অন’ প্রত্যয় ধাতুটিকে ভাব বা ক্রিয়া-বাচক
বিশেষ্যে বদলে দেয়। তাহলে বিনোদন শব্দটির সাধারণভাবে মানে দাঁড়াল ‘বিশেষভাবে ঠেলা
মারা বা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া’। আমাদের
সারাদিনের খাটাখাটনির ক্লান্তি অথবা নানা দুশ্চিন্তার ভার যার বিশেষ রকমের ধাক্কা
খেয়ে দূরে সরে যায়, আমরা আবার শরীরে আর মনে চনমনে হয়ে উঠি, সেইটিই
তো ‘বিনোদন’
- তা সে গান শোনা হোক, সিনেমা বা
সিরিয়াল দেখা হোক
বা মনের মতো বই পড়া হোক - এই সব কাজগুলোই বিনোদন, যদি তারা
শরীরের বা মনের ক্লান্তিকে একেবারে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। কাজেই দেখছ এই পুরোনো
শব্দটাকে খুঁড়ে আমরা সেই মানেটাই পেলাম, যে মানে বোঝাতে আজও এই শব্দটাকে
অজান্তেই আমরা ব্যবহার করে চলেছি। কেমন মজার না!
খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteজানতে পরে ভালো লাগল
ReplyDelete