ম্যাজিক ল্যাম্প:: জুলাই ২০১৬

প্রথম বর্ষ।। চতুর্থ সংখ্যা।। জুলাই ২০১৬।।



প্রচ্ছদ – স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায় এবং চিরঞ্জিত সামন্ত

_______

সম্পাদকীয়:: জুলাই ২০১৬


ম্যাজিক ল্যাম্পের প্রিয় বন্ধুরা,

পৃথিবীতে আগে যত রকমের ভূত ছিল তাদের মধ্যে বহু প্রজাতিই এখন বিলুপ্তপ্রায় আমরা বন জঙ্গল কেটে, নদী-নালা বুজিয়ে, পুরোনো বাড়ি ভেঙে তার জায়গায় শপিং কমপ্লেক্স, ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি করছি বেচারা না-মানুষেরা যাবেই বা কোথায়
আর এখন এই ইন্টারনেট, আইফোনের যুগে ভূতেদের যে কী কষ্ট কী বলবো তোমাদের আমাদের দপ্তরেও এসে পৌঁছেছে প্রচুর না-মানুষদের চিঠি পেঁচো এসে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সামনে হাত পা নাড়লেও তারা ভিডিও গেম থেকে মুখটি পর্যন্ত তুলছে না
তবে ভূতেদের জনসংখ্যা কমলেও পপুলারিটি কিন্তু মোটেই কমেনি।
তাই তো ম্যাজিক ল্যাম্প তোমাদের জন্যে নিয়ে এসেছে ভূত-রহস্য সংখ্যা
ভূতের গল্প যেমন আছে তেমন আছে রহস্য গল্পও রহস্য গল্পে ভূত থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে ভূতের গল্পে কিন্তু রহস্য থাকবেই
“হরর ফাইলস” বিভাগটিতে থাকছে সত্যি ভূত দেখার অভিজ্ঞতা বানিয়ে বলা গাঁজাখুরি গপ্পো তোমরা ভাবতেই পারো, আমিও খুব অবিশ্বাসী ছিলাম তবে একবার আমাদের গ্রামে ভাইবোনদের নিয়ে বিকেলবেলা আমি আম বাগানের ধার দিয়ে আসছি ওদের বলছিলাম ভূত-টুত ওসব অন্ধবিশ্বাস বাজে গল্প দেয় লোকে অমনি হঠাৎ পেছন থেকে দেখি এক তালঢ্যাঙ্গা ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলছেন - “হে হে ভূত কিন্তু সত্যিই আছে এই আমবাগানে আছে
লোকটার চেহারাটা ফ্যাকাশে রক্তশূন্য আর চোখ গুলো যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে আমি লোকটাকে পাত্তা না দিয়ে কিছুটা তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলাম তারপর পিছন ফিরে দেখি সে আর নেই যেন হাওয়া থেকে এসেছিল হাওয়ায় মিলিয়ে গেল
আমরা সবাই তখন ভয়ে দৌড়ে পালিয়েছি
তবে তোমরা কিন্তু পালিয়ে যেও না ভূতের অনেক রকম আছে বন্ধু ভূতও আছে এই সংখ্যাতে সবরকম ভূতকেই পাবে তার গ্যারান্টি দিচ্ছি লিখছেন এই সময়ের জনপ্রিয়, বিশিষ্ট শিশু-কিশোর সাহিত্যিকরা আর আমাদের আঁকিবুকি বিভাগের সদস্যরা এঁকেছে চমৎকার সব ছবিম্যাজিক পেন্সিল নামে নতুন একটি আঁকিবুঁকির বিভাগ হয়েছে ছোটদের জন্যে। এবারের থিম ছিল “ভূতের বাড়ি”। তাপস মৌলিক অসাধারণ ভাবে সাজিয়ে তুলেছেন এই ওয়েবজিনের পসরা
ম্যাজিক ল্যাম্প কেমন লাগছে আমাদের জানিও

ভালো থেকো ভালোবাসা নিও
ইতি,
জিনি

গল্পের ম্যাজিক:: গুহাচিত্র - গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়


গুহাচিত্র
গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়

প্রিয় নিখিল,
চিঠিটা পেয়ে নিশ্চয় অবাক হচ্ছিস। আজকাল ই-মেল এসএমএসের যুগে চিঠি লেখা তো উঠেই গেছে। তবে আমার হাতে এখন অনেক অবসর। তাই ভাবলাম তোকে বেশ গুছিয়ে একটা চিঠি লিখি। বন্ধুদের মধ্যে তুইই শুধু আমার মনের অবস্থাটা আন্দাজ করতে পারবি। এক কথায় বলতে গেলে খুব ভাল আছি। একটা থাকার জায়গা জুটেছে। ছবি একটা শুরু করেছি − মনে হচ্ছে ভালোই হবে।
চিঠির পোস্টমার্ক থেকে খবর পাবি এখন কোথায় ডেরা বেঁধেছি। তবে যেখানে আছি, ডাকঘরটা তার কাছে নয়এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পারাসি বলে একটা গ্রাম আছে। সেখানকার মুদির দোকান থেকে হপ্তায় একদিন চাল ডাল কেরোসিন কিনতে যাই। সে গাঁয়েও পোস্ট অফিস নেই। দোকানদারকে চিঠিটা দিয়ে আসব। গাঁয়ের সবাই তাই করে − মুদিই আনঅফিসিয়াল পোস্টমাস্টার। জিনিসপত্র কিনতে গঞ্জে যখন যান, চিঠিগুলো সব একসঙ্গে ডাকঘরে দিয়ে আসেন। কোনও চিঠি থাকলে নিয়েও আসেন। কাজেই চিঠির উত্তর লিখলে কেয়ার অফ রামচন্দ্র, গ্রাম পারাসি - এই লিখে পাঠাস।
কাউকে কিছু না বলেই কলকাতা ছেড়ে চলে এলাম। প্রত্যেকদিন সেই একই ছকে বাঁধা জীবন একেবারে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। তাই একদিন সকালে বাড়িতে তালা লাগিয়ে হাওড়া গিয়ে প্রথম যে দূরপাল্লার প্যাসেঞ্জার ট্রেনটা দেখলাম, তাতেই একটা টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। ভেবেছিলাম শেষ স্টেশনে নেমে দেখব তারপর কোথায় যাওয়া যায়। কিন্তু তার আগেই একটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যখন ট্রেনটা যাচ্ছিল, বাইরেটা ভারি সুন্দর লাগছিল। দূরে একটা পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে থেকে মাথা তুলেছে। তার পরেই যে ছোট্ট স্টেশনে ট্রেনটা দাঁড়াল, সেখানেই নেমে পড়লাম। স্টেশনমাস্টারকে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করলাম, ট্রেন থেকে এক্ষুনি যে জঙ্গলটা দেখলাম, সেখানে কেমন করে যেতে হয়?
ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন, “গামহারিয়ার কথা বলছেন? সে তো অনেক দূর!”
“তাতে কী হয়েছে? আমি ওখানেই যাব
“এখন জঙ্গলে যাবেন কেমন করে? পৌঁছোতেই তো অনেক রাত হয়ে যাবে। গামহারিয়ার কাছে পারাসি বলে একটা খুব ছোট্ট গ্রাম আছে। আজ মঙ্গলবার, এখানে স্টেশনের পাশে হাট বসে। পারাসির মুদি আজ হাটে এসেছিল দেখেছি। এখনও বোধহয় ফেরেনি। ইচ্ছে করলে আপনি ওর গাড়িতে যেতে পারেন। আমি দেখছি ওকে পাই কি না
একজন কুলিকে ডেকে বললেন, “দেখো তো রামচন্দ্র এখনও হাটে আছে কি না। থাকলে এখানে একটু আসতে বলো।”

ঘন্টাখানেক পরে গরুর গাড়িতে করে পারাসির দিকে রওনা হওয়া গেল। বেলা পড়ে এসেছে। গোটা রাস্তাটা যেন পলাশে শিমূলে লাল হয়ে আছে। রামচন্দ্র হাট থেকে গ্রামের দোকানের জন্য মাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বাংলা হিন্দি মেশানো ভাষায় তাঁর সঙ্গে কথা দিব্যি চলছিল।
“কোথায় যাবেন?” রামচন্দ্র জিজ্ঞাসা করলেন।
“ট্রেন থেকে যে জঙ্গলটা দেখলাম, ওখানে থাকার জায়গা পাওয়া যাবে? গামহারিয়া না ওইরকম কী একটা নাম শুনলাম
“জঙ্গলের মধ্যে কোথায় থাকবেন? এদিকের জঙ্গলে ভাল্লুক আছে, মাঝে মাঝে হাতিও বেরোয়। তবে ইদানিং অবশ্য হাতির দল এদিকে আসেনি।”
“কোনও ব্যবস্থা করা যাবে না? আমার যা হোক একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেই চলবে।”
অনেকক্ষণ ভেবে রামচন্দ্র বললেন, “পারাসি থেকে কিছুটা দূরে একটা বাড়ি আছে। অনেকদিন আগে এক পাগলা সাহেব বানিয়েছিল। কিন্তু গ্রামের লোকে বলে বাড়িটা অপয়া
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “কেন? ভূত আছে নাকি?”
“ভূত পেত্নির খবর রাখি না। গ্রামের লোকে অনেক কথা বলে বটে, কিন্তু তাতে আমি খুব একটা কান দিই না। যে সাহেব বাড়ি বানিয়েছিল, সারাদিন জঙ্গলে ঘুরত বলে তাকে লোকে পাগলা সাহেব বলত। সে নাকি হঠাৎ একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়তার অনেক কারণ থাকতেই পারে। তখন জঙ্গল আরও গভীর ছিল, অনেক বেশি জানোয়ার থাকত। কোনও হিংস্র জন্তুর সামনে হয়তো পড়ে গিয়েছিল জঙ্গলে সাপে কামড়াতেও পারে। কয়েক বছর আগে এক আর্টিস্ট ভদ্রলোক ওখানে থাকতে এসেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন থাকার পর তাঁরও আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাহেবের নাম তো পাগলা সাহেব ছিলই, আমার মনে আছে আর্টিস্ট ভদ্রলোককেও সবাই পাগল বলত। জঙ্গলের মধ্যে একা থাকতেন, ছবি আঁকতেন। আপনিও কি ছবি আঁকেন?”
অপরাধ স্বীকার করলাম। তারপর বললাম, “সেই আর্টিস্ট তো নিজেই চলে গিয়েও থাকতে পারেন
“তাও হতে পারে। আপনারা আর্টিস্টরা তো খেয়ালি হন বলেই শুনেছি। তবে দু’জন লোক বাড়িটাতে থেকেছেন, দু’জনেই বেঘোরে মারা গেছেন বলেই সবার ধারণা। তাই বাড়িটাকে লোকে অপয়া বলে মনে করে। আপনি সাহস করলে গিয়ে থাকতেই পারেন।”
নানা কথায় সময় কেটে গেল। গ্রামে যখন পৌঁছোলাম, সন্ধে হয়ে গেছে। সে রাতটা মুদিরই আটচালায় ঠাঁই মিলল, সঙ্গে গরম গরম জোয়ারের রুটি আর সবজি।
পরেরদিন সকালে উঠেই রামচন্দ্রের কাছে আবার জঙ্গলের মধ্যে বাড়ির কথাটা পাড়লাম, “ওখানে থাকার জন্য কার অনুমতি নিতে হবে?”
রামচন্দ্র অনেক চেষ্টা করেছিলেন আমাকে নিরস্ত করতে বুনো জানোয়ারের ভয় দেখালেন। যখন বুঝলেন আমি ছাড়ার পাত্র নই, তখন বললেন, “ও তো পোড়োবাড়ি হয়ে আছে জঙ্গলের মধ্যে কাকে আবার বলবেন? একটা ছেলেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি সাফসুতরো করে দেবে। আপনার জন্য চাল ডাল নিয়ে যাবে। একটা কেরোসিনের স্টোভও দিয়ে দেব। রান্না করতে পারেন তো? তবে একটা কথা, সন্ধের পরে বাইরে বেরোবেন না। শহরের লোক, জঙ্গলের মধ্যে কোথায় বিপদে পড়বেন?”
নিখিল, না দেখলে বিশ্বাস করবি না কোনও জায়গা এত সুন্দর হতে পারে। বাড়িটা জঙ্গলের মধ্যে হলেও চারপাশে অনেকটা খোলা জায়গা। যে সাহেব বানিয়েছিল, জন্তুর হাত থেকে বাঁচার জন্য চারদিকে একটা খাল খুঁড়ে রেখেছিল। একটু পিছন থেকে পাহাড় উঠেছে, তার থেকে নেমে এসেছে একটা ছোটো ঝর্ণা। খালটা তার সঙ্গে যোগ করা, তাই জলে ভর্তি। খাল পেরোনোর জন্য একটা বাঁশের সাঁকো আছে সেটা এখনও বেশ মজবুত। বাড়ির দু’টো ঘরের অবস্থা বেশ ভালো। ভিতরে গাছটাছ হয়নি, মোটামুটি পরিষ্কার। মনে হয় সেই আর্টিস্ট ভদ্রলোক বাড়িটাকে থাকার উপযোগী করার জন্য অনেক খেটেছিলেন।

রামচন্দ্র যে অল্পবয়সী ছেলেটাকে পাঠিয়েছেন, তার নাম পাঙ্গারাম। ছেলেটা বেশ চৌকসচট করে ঘরদোর পরিষ্কার করে ফেলল। ঝর্ণা থেকে জল ভরে রান্নার ব্যবস্থা করে দিলচারদিকে একটু কার্বলিক অ্যাসিড ছড়িয়ে দিল
ফিরে যাওয়ার সময় পাঙ্গারাম বলল, “আপনি এখানে একা একা থাকবেন, ভয় করবে না?”
“কিসের ভয়? হাতি ভাল্লুক তো খাল পেরিয়ে এখানে আসবে না। এলেও পাকাবাড়িতে আমার কী করবে?”
“জায়গাটা ভালো নয়। কাছে একটা গুহা আছে তার দেওয়ালে ভূতের ছবি আছে। রাত্রিবেলা ভূতগুলো দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আসে।”
“গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকা? ভূতের ছবি, তারা আবার জ্যান্ত হয়ে ওঠে? এ তো বেশ মজার ব্যাপার। নিজের চোখে ভূতগুলোকে দেখেছ?”
“আমি দেখিনি, কিন্তু ছোটুলাল দেখেছে। হোলির দিন রাত্রিবেলা ছোটুলাল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ফিরছিল। ভাঙের নেশা একটু বেশি হয়েছিল, নাহলে সে এ রাস্তায় আসত না। এই বাড়িটার পিছনের পাহাড়ে একটা গুহা আছে। ছোটুলাল যেই গুহাটার কাছে এসেছে, গাছের ফাঁক দিয়ে দেখে এক জায়গায় আগুন জ্বলছে, আর তাকে ঘিরে কতগুলো ভূত নাচছে। দেখেই তো ওর হয়ে গেছে। রামনাম জপতে জপতে একেবারে একদৌড়ে গাঁয়ে পৌঁছে তবে থামে।”
“তারপর?”
“তারপর আর কী আগে তবু দিনের বেলা গাঁয়ের লোক এদিকে আসত, এখন তাও ছেড়ে দিয়েছে।”
“বুঝলাম ভাঙটা সেদিন একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। তা সেই গুহাটা কোথায়?”
“ঐ তো, একটা বড়ো পাথর দেখতে পাচ্ছেন। ওটাকে ডান হাতে ফেলে আর একটু এগোতে হবেতারপর একটু ওপরদিকে উঠলেই সামনে দেখতে পাবেন। তবে ভুলেও ওদিকে যাবেন না। আগে লোকে ভিতরে ছবি দেখতে যেত। ভূতের ভয়ে ছেড়ে দিয়েছে।”
“কীসের ছবি?”
“আমি দেখিনি। যারা দেখেছে তারা বলেছে একেবারে ভূতের ছবি। ভূত নাচছে, হাতি শিকার করছে, এরকম সব ছবি। ঐ ভূতগুলোই তো রাত্রিবেলা বাইরে এসে নাচে।”
“হাতি শিকারী ভূত?” আমি হেসে ফেলি।
আমাকে তো চিনিস। বুঝতেই পারছিস, ভূতের ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার লোক আমি নই।
ছেলেটাকে বিদায় করে দিলাম। বেশ সন্ধে হয়ে গিয়েছিল তাই সেদিন রান্না করে খেয়েদেয়ে একেবারে ঘুম। রাত্রিবেলা যতবার ঘুম ভেঙেছিল, শুধু ঝর্ণার আওয়াজ আর ঝিঁঝির ডাক শুনেছি। অন্য কোনও শব্দ পাইনি।

পরদিন সকাল। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙার কথা গল্পে পড়েছি − সেদিন প্রথম অভিজ্ঞতা হলবাইরে বেরিয়েই এক অপূর্ব দৃশ্যের মুখোমুখি শালগাছেরা যেন সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। মাটিতে তখনও আলো এসে পড়েনি। কিন্তু গাছের ওপরের ডালগুলো দিনের প্রথম সূর্যের আলোয় ঝলকাচ্ছে। পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে যেন আগুন লেগে গেছে। পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসা ঝর্ণায় সাতরঙা রামধনুর ওঠানামা। যেন এক মায়াবী রূপকথার রাজ্যে এসে পড়েছি।
ভেবেছিলাম সকাল সকাল রান্না চাপিয়ে দেব। সেসব ভুলে গেলাম। তাড়াতাড়ি আঁকার সরঞ্জাম বার করে প্রকৃতির মুখোমুখি বসলাম। ঘন্টা পাঁচেক কীভাবে কেটে গেল বেমালুম টেরই পেলাম না। দেহের ক্লান্তি যখন মালুম হল, সূর্য তখন মাথার উপর চলে এসেছে

বেশ ক’দিন কেটে গেছে। দিনের বেলা হয় ঘুরে বেড়াই, না হয় ছবি আঁকিএখনও পর্যন্ত হাতি বা ভাল্লুকের মুখোমুখি হইনি। খরগোশ হরিণ শিয়াল অনেক দেখেছি। তারা আমাকে দেখলে পালিয়ে যায়। রাতের বেলা বেরোই না। কুপি জ্বেলে রান্না করি। নয়তো ঘরের দাওয়ায় বসে আকাশ দেখি। শহর থেকে দূরে জঙ্গলের আকাশ পরিষ্কার, তাই তারাগুলো যেন হিরের কুচির মতো জ্বলজ্বল করে। এখনও পর্যন্ত একটাই ছবির কাজ শুরু করেছি আমার তো মনে হয় এর থেকে ভালো ছবি আমি আগে কখনও আঁকিনি।
রসদ শেষ হয়ে এসেছে। কাল আবার পারাসি যেতে হবে। তাই সন্ধেবেলা প্রদীপের আলোতে চিঠিটা লিখে ফেললাম। কাল রামচন্দ্রকে পোস্ট করার জন্য দিয়ে দেব। ইচ্ছে হলে উত্তর দিস। সবাই ভালো থাকিস।
ভালোবাসাসহ
অনিমেষ

*      *      *

প্রিয় নিখিল,
মাত্র গতকাল আগের চিঠিটা লিখে শেষ করেছি। পোস্ট করার জন্য আজই দিয়ে এসেছি এখনও সেটা সম্ভবত ডাকবাক্সে পড়েনি। কিন্তু এই একদিনেই লেখার মতো অনেক কিছু জমেছে। তাই ভাবলাম তোকে আর একটা চিঠি লিখে ফেলি। পরে যেদিন পারাসি যাব, তোকে পাঠিয়ে দেব।
সকালে আগের চিঠিটা রামচন্দ্রের হাতে দিতে পারাসি যাচ্ছিলাম মনে হল পাঙ্গারামের বলা সেই গুহাটা দেখে আসি। অন্ধকারের জন্য একটা টর্চ নিয়ে নিলাম। এমনিও গ্রাম থেকে ব্যাটারি কিনতে হবে।
গুহাটা সহজেই খুঁজে পাওয়া গেল। সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। এখানেই নিশ্চয় ছোটুলাল ভূতের নাচ দেখেছিল। কথাটা মনে পড়তেই হাসি পেয়ে গেল।
গুহা আমি অনেক দেখেছি। অনেকগুলো তো টুরিস্টদের জন্য ভিতরে আলো দিয়ে বিশেষভাবে সাজানো থাকে। সেগুলোর কথা যদি ছেড়ে দিই, একা একা যখন পাহাড়ে বেড়িয়েছি, তখন ছোটোবড়ো অনেক গুহাতে ঢুকেছি। সত্যি বলছি, সেগুলোর ভিতরের অন্ধকারের দিকে তাকালে বুকটা সবসময় ছমছম করে উঠেছে।
মনের দিক থেকে তাই তৈরি ছিলাম ভয়টাকে কাটাতে হবে কিন্তু এই গুহাটা যেন একেবারেই অন্যরকম। ভিতরটা অন্ধকার নিশ্চয়, কিন্তু সেই অন্ধকারটা যেন অন্যরকম, যেন আমাকে ডাকছিল। জানি এসব পড়ে তোর মনে হবে একা একা থেকে অনিমেষের মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। আমি শুধু বলতে পারি গুহাটাতে ঢুকতে আমার এতটুকু ভয় করেনি। এমনকি ভিতরে সাপখোপ বা অন্য জন্তু জানোয়ার থাকতে পারে, সে কথাও মাথায় আসেনি। আমি টর্চটা হাতে নিয়ে সোজা ভিতরে পা বাড়ালাম
গুহার প্রথমদিকটা কিছুটা সরু, সুড়ঙ্গমতো, তারপর একটা মোড় ঘুরে একটা বড়ো গহ্বর। মোটামুটি চৌকো মতো, টর্চের আলোতে দেখলাম অন্তত দোতলা সমান উঁচু। চওড়া এক এক দিকে ফুট বিশেক হবে। আশ্চর্য যে ভিতরটা বেশ পরিষ্কার। কিন্তু এসব দেখেছি আসলে অনেক পরে। সেই মুহূর্তে গুহার দেওয়াল থেকে চোখ ফেরাতে পারিনি।
নিখিল, জানিনা তুই ভিমভেটকা গেছিস কি না। আমি গিয়েছিলাম সেখানকার গুহাচিত্র দেখার জন্য। প্রস্তরযুগের মানুষের আঁকা সেই ছবি আমার চোখে খুবই অসাধারণ লেগেছিল। তারপর গুহাচিত্র নিয়ে একটু পড়াশোনা করেছিলাম। আজকাল তো সব ছবি ইন্টারনেটে দেখা যায়। পারলে একবার স্পেনের আলতামিরার গুহাচিত্রগুলো দেখবি। আলতামিরার দেওয়ালে বাইসন শিকারের যে ছবি আঁকা আছে, তার তুলনা আধুনিক ছবিতেও পাওয়া শক্ত। মাত্র কয়েকটা রেখাতে যে জীবন, যে গতি ফুটিয়ে তুলেছিলেন প্রস্তরযুগের কোনও দা ভিঞ্চি, তা কথায় প্রকাশ করা যাবে না। সেই ছবি আমি দেখেছি।
নিখিল, আমি হলফ করে বলতে পারি সেই আলতামিরার ছবিও ম্লান হয়ে যায় এই গুহার ছবির পাশে। একটা দেওয়ালে আছে ম্যামথ শিকারের ছবি। পাঙ্গারাম এটাকেই নিশ্চয় হাতি শিকার বলেছিল। কয়েকটা টান, তাতে যেন ম্যামথটা দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আসবে। মানুষগুলোর ছবিও কয়েকটা মাত্র রেখায় আঁকা, তাতে মুখ আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু কি জীবন্ত! ম্যামথের সামনে যে শিকারী মাটিতে পড়ে গিয়েও বল্লম তুলে ধরেছে, জীবনের আশা যেন ছেড়ে দিয়েছে সে। পিছনের মানুষগুলো যেন তাকে বাঁচানোর জন্য আরও জোরে দৌড়োতে চাইছে। আর রঙ? যেন জীবন্তম্যামথের গায়ে একটা বর্শা বিঁধে রয়েছে। সেই ক্ষত থেকে বেরোনো রক্ত যে গুহার  দেওয়াল বেয়ে মাটিতে পড়ছে না সেটাই আশ্চর্য।
কতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। এক সময় সম্বিত ফিরল। মোবাইল ফোনটা এখানে কাজ না করলেও অভ্যাসবশত পকেটে ছিল। শিকারের ছবিটার কয়েকটা ফটো তুললাম। একটা দেওয়ালেই ছবি আঁকা, বাকিগুলো ফাঁকা।
দেরি হয়ে যাবে, আবার আসা যাবে। তাই ইচ্ছের কিছুটা বিরুদ্ধেই পিছনে ফিরলাম। বড়ো গহ্বরটা থেকে বেরোনোর সময় দেখলাম, সুড়ঙ্গটা যেখান থেকে শুরু হয়েছে, তার ঠিক ওপরের দেওয়ালে পাঁচটা মানুষের উদ্দাম নাচের ছবি। আগে চোখে পড়েনি।
কে বলবে মূর্তিগুলো স্থির? এখানেও মাত্র কয়েকটা টানে শিল্পী নাচের গতিকে ফুটিয়েছেন। এর সামনেও ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। ছবি নিলাম। সু্যোগ হলে তোকে ছবিগুলো পাঠিয়ে দেব; তখন দেখবি আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি কি না।
বাইরে রোদে বেরিয়ে এলাম। সারা রাস্তাটা কেমন যেন ঘোরে কেটে গেল। এরকম গুহাচিত্র, আলতামিরাতেও যার তুলনা নেই, তা কী আমি আবিষ্কার করলাম? কখন যে পারাসি পৌঁছে গেছি, তা নিজেরই খেয়াল নেই।
রামচন্দ্রের দোকানে গেলাম। তোকে লেখা আগের চিঠিটা ওনার হাতে দিলাম। পরে যে দিন গঞ্জে যাবেন উনি, চিঠিটা পোস্ট করে দেবেন। কেনাকাটা করলাম। পাঙ্গারামের হাতে সেগুলো আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম, “আচ্ছা ঐ বাড়ির কাছে একটা গুহার ভিতরে আঁকা ছবির ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন?”
রামচন্দ্র একমুহূর্ত ভেবে উত্তর দিলেন, “পাঙ্গারাম বলেছে বুঝি আপনাকে?”
“তা বলেছিল বটে। কিন্তু আমি তো নিজের চোখে দেখে এলাম।”
“শুনেছি একটা গুহার মধ্যে কীসব ছবি আছে। কয়েক বছর আগে তা নিয়ে একবার হইচই হয়েছিল। আপনাকে সেই যে আর্টিস্ট ভদ্রলোকের কথা বলেছিলাম, তিনিও ব্যাপারটাতে ছিলেন। পুরোটা আমি ঠিক জানি না। মনে আছে দিল্লী থেকে একবার কয়েকজন লোক এসেছিল। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি মাস্টারবাবুর সঙ্গে কথা বলেন আপনি। মাস্টারবাবু পড়ালেখা করা লোক, অনেক খবর রাখেন। এই তো ওনার নামে কয়েকটা কাগজ আর বই এসেছে। সেই আর্টিস্টের সঙ্গেও ভালো খাতির ছিল ওনার।”
“ওনাকে পাব কোথায়?”
“ঐ যে আমগাছটা দেখতে পাচ্ছেন, ওটাকে ডান হাতে রেখে চলে যান। বাঁদিকে একটা একতলা লাল রঙের পাকা বাড়ি পড়বে, ওটাই ওনার বাড়ি।”
“দিন, আমি তাহলে ওনার বইপত্রগুলো নিয়ে যাই। এই ছুতোয় আলাপ হয়ে যাবে। কী নাম ওনার?”
“মাস্টারবাবু আপনার মতোই বাঙালি, নাম অবিনাশ ঘোষ। অনেক বয়স। শুনেছি এদিকেই কোথাও একটা কলেজে পড়াতেন। আলাপ করুন, ভালো লাগবে।”
গ্রামে পাকা বাড়ি বেশি নেই, তাই মাস্টারবাবুর বাড়ি খুঁজে পেতে অসুবিধা হল না। কড়া নাড়তে যিনি দরজা খুলে দিলেন, দেখেই বুঝলাম তাঁর কাছেই এসেছি। বললাম, “আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল।”
“আসুন আসুন। আপনি নিশ্চয় আমাদের এখানে আসা নতুন আর্টিস্ট। রামচন্দ্রের কাছে আপনার কথা শুনেছি। আপনিই তো পাগলা সাহেবের বাড়িতে আছেন।”
ভিতরে গিয়ে বসলাম। আমার নাম বললাম। ভদ্রলোক একাই থাকেন। আমাকে চা করে খাওয়ালেন। বললেন, “এই একটা নেশা এখনো ছাড়তে পারিনি।”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “এখানে এসে পড়লেন কেমন করে?”
“দুমকার ওদিকে একটা কলেজে ইতিহাস পড়াতাম। অনেকদিন চাকরির পর আর ভালো লাগছিল না। বিয়ে থা করিনি, ঝাড়া হাত পা। ভাবলাম যা জমিয়েছি আর পেনশন যা পাব, একটা লোকের চলে যাবে। চাকরি ছেড়ে এদিক ওদিক ঘুরছিলাম, পারাসিতে এসে বেশ ভালো লেগে গেল। এখানকার মানুষজনও বেশ ভালো। এখানেই বাড়ি বানিয়ে আছি তা ধরুন প্রায় কুড়ি বছরআপনি এখানে এলেন কেমন করে?”
সংক্ষেপে বললাম। তারপর আসল কথায় এলাম।
“আপনি জানেন এখানে একটা গুহা আছে, যার ভিতর প্রস্তরযুগের গুহাচিত্র আছে?”
অবিনাশবাবু একটু চুপ করে থেকে বললেন, “গুহা আছে জানি। তার দেওয়ালের ছবি আমি দেখেছি। প্রস্তরযুগ কি না বলতে পারব না।”
“আপনি দেখেছেন? প্রস্তরযু্গ কি না বলতে পারবেন না কেন? আপনি তো ঐতিহাসিক
“ঐতিহাসিক হলেও আমার বিষয় আধুনিক যুগ। প্রাক-ইতিহাস নয়। আমার কথা বোঝাতে গেলে একটা পুরনো গল্প বলতে হবে। একটু সময় লাগবে। আপনার অসুবিধা নেই তো? তবে শুনুন। বছর সাতেক আগে দিল্লী থেকে আপনারই মতো এক আর্টিস্ট আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। তিনিও ওই পাগলা সাহেবের বাড়িতেই থাকতেন।”
“হ্যাঁ, রামচন্দ্রের কাছে শুনেছি।”
“তার নাম ছিল শিখর। একেবারেই অল্প বয়স। আমার সঙ্গে প্রায়ই গল্প করতে আসত। সেও একদিন ঐ গুহার ছবি দেখে খুব উত্তেজিত হয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমাকে প্রায় টানতে টানতে ছবি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলতখন আমার শরীর এখনকার থেকে মজবুত ছিল। এখন আর অতদূর হাঁটতে পারব না। সে যা হোক, আমি ছবি দেখে বললাম, শিখর, এতো উজ্জ্বল রঙ, এ ছবি কিছুতেই প্রাচীন নয়। আপনিও তো রঙ দেখেছেন। আমার মনে হয় এদিককার ছেলে-ছোকরাদের কেউ মজা করার জন্য এঁকে থাকবে।”
“তার আগে কারোর চোখে পড়েনি এগুলো?”
“না, আসলে গুহার মুখটা একটা বড়ো পাথর দিয়ে চাপা ছিল। বছর কয়েক আগে বর্ষার সময় একবার ধসে পাথরটা সরে গিয়ে গুহার মুখটা বেরিয়ে পড়ে। শিখর আমার কোনও কথা শুনল না। ওর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ছবিগুলোর অনেক বয়স। ও তখন আর্কিয়লজিকাল সার্ভেতে যোগাযোগ করে। দিল্লীর লোক বলে ওর চেনাজানা ছিল, সেখান থেকে এক্সপার্টরা আসে। তারাও আমার মতোই ছবি দেখে বলে সেগুলো নতুন। এমনকি আভাসে ইঙ্গিতে এও বোঝাতে চায় শিখরই ওগুলো এঁকেছে।”
“সেটা হতে পারে?”
“অসম্ভব। শিখরের মতো সৎ লোক আমি বেশি দেখিনি। খুবই কষ্ট পেয়েছিল বেচারি। আমি অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। ও আমাকে বলল, আলতামিরার গুহা চিত্র আবিষ্কারের পরেও নাকি এইরকমই হয়েছিল। কেউ বিশ্বাস করেনি সেগুলো প্রস্তরযুগের হতে পারে। আলতামিরার নাম আপনি জানেন তো?”
আমি বললাম, “জানি। শিখরবাবু কি হাল ছেড়ে দিলেন তারপর?”
“বলতে পারব না। তারপর থেকেই ছেলেটা কেমন একটু পালটে গেল। আমার বাড়িতে আসা ছেড়ে দিলএকদিন ওকে মুদির দোকানে ধরেছিলাম। তখন রামচন্দ্রের বাবা দোকানদারি করতেন। আমাকে কেমন যেন এড়িয়ে গেল। বলল পরে সব কথা জানাবে। চোখের চাউনিটাও একটু অদ্ভুত লেগেছিল। তারপর আর দেখা হয়নি। অনেকদিন যখন গ্রামের দিকে আসেনি, আমিই একদিন কয়েকজনকে পাগলা সাহেবের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। তারা এসে বলল, জিনিসপত্র সব পড়ে আছে, কিন্তু মনে হয় অনেকদিন ঐ বাড়িতে কেউ থাকেনিপুলিশ এসেছিল, জঙ্গলেও খোঁজ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। জঙ্গলের মধ্যে কোনওভাবে মারা গেল, নাকি এখান থেকে চলে গেল, জানি না।”
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অবিনাশবাবু বললেন, “ওই ছবিগুলো তাহলে এখনও আছে
“আমি মোবাইলের ক্যামেরাতে ছবি তুলে এনেছি। দেখুন।”
অবিনাশবাবু ছবিগুলো অনেকক্ষণ ধরে ভালোভাবে দেখলেন। তারপর বললেন, “রঙ তো মনে হচ্ছে একই রকম উজ্জ্বল আছে। আমার মনে আছে শিখর একটা মশাল জ্বেলেছিল। বলেছিল প্রাচীন যুগে তো মশালের আলোতেই ছবি আঁকা হত। খালি একটা কথা, আমার মনে হচ্ছে যেন ওই যে নাচিয়ে মানুষ, ওরকম চারটে ফিগার ছিল। অনেকদিন আগের কথা তো, ভুলে গেছি হয়তোনয়তো কেউ গিয়ে হয়তো আরও একটা মানুষ এঁকে দিয়ে থাকতে পারে। যাহোক, আপনি এবার রওনা হয়ে যান, না হলে যেতে যেতে অন্ধকার হয়ে যাবে।”
ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। মনের মধ্যেটা কেমন করছে লিখে বোঝাতে পারব নাখেয়াল নেই কোথায় পা ফেলছি – দু’তিনবার হোঁচট খেতে খেতে বেঁচে গেলাম। যে যাই বলুন, আমার মন বলছে এই ছবি আধুনিক কালের কোনও মানুষের আঁকা হতে পারে না। এই উদ্দামতা আজকের জগতের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ঘরে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়ল আমার অর্ধসমাপ্ত ছবিটার দিকে। ক’দিন ধরে আঁকছি, মনে করছিলাম আমার সবচেয়ে ভালো ছবি, সেটাকে এখন নিতান্ত প্রাণহীন মনে হচ্ছে। কাগজটা একদিকে সরিয়ে রাখলাম।
রাত্রে খেয়ে নিলাম। ঠিক করলাম শুয়েই পড়ি। তার আগে আজকের সব কথা তোকে লিখে রাখছি। সকালে দেখা যাবে কী করা যায়। আজকাল তো ছবির বয়স মাপার নানারকম কায়দা বিজ্ঞানীরা বার করেছেন, সেরকম কোনওভাবে ঐ ছবিগুলো কত পুরানো নিশ্চয় বোঝা যাবে।

*      *      *

নিখিল, কাল এই পর্যন্ত লিখেছিলাম। তারপর আরও নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। সকালেই সেগুলো চিঠিতে লিখে রাখি। আজ সন্ধেবেলা অন্য পরিকল্পনা আছে।
কাল ঘুমোতে গিয়েছিলাম − কতক্ষণ পরে জানি না, হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। দূরে কোথাও খুব চেঁচামেচি হচ্ছে। আওয়াজটা এদিকেই আসছে মনে হল। তাড়াতাড়ি করে জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আজ কি কালকের মধ্যে বোধহয় পূর্ণিমা, বাইরেটা চাঁদের আলোয় যেন ভেসে যাচ্ছে। আওয়াজটা ক্রমশই কাছে আসছে। মনে হল কোনও বড়ো জন্তু, হাতিই হবে হয়তো, গাছের ডালপালা ভেঙে দৌড়োলে এইরকম আওয়াজ হবে। হাতির ডাকও যেন শুনলাম! তার সঙ্গে রয়েছে অনেক মানুষের চিৎকার। কী বলছে তা বোঝার অবশ্য উপায় নেই।
দূরে মশালের আলো দেখা যাচ্ছে? নাকি ওটা চোখের ভুল? আগুপিছু না ভেবে জামা আর প্যান্টটা চাপিয়ে বাইরে বেরোলাম। টর্চটার কথাও খেয়াল নেই। ভোর হতে খুব বেশি দেরি নেই। গাছের শিকড়ে ঠোক্কর খেতে খেতে দৌড়োলাম
সামনে কীসের আলো? কতগুলো লোক হাতে মশাল নিয়ে দৌড়োচ্ছে? তাদের সামনে ওটা কি একটা হাতি? ওরা কি হাতিটাকে তাড়া করছে? শুনেছি গ্রামে হাতি ঢুকলে সবাই মিলে তাকে তাড়া করে। কিন্তু ঐরকম পাহাড়ের মতো বড়ো হাতি এখানে এল কোথা থেকে?
হঠাৎ একটা লতায় পা বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। তারপরই একটা বড়ো দেহ পড়ার শব্দ। মানুষের উল্লাসের ধ্বনি বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁল। তারপর গলার আওয়াজ দূরে সরে যেতে থাকল। গুহার দিকে চলে গেল কি? আমিও তাহলে সেদিকে যাই। আর একটা মোড় ঘুরলেই গুহার মুখটা দেখা যাবে। আওয়াজটা মিলিয়ে যাচ্ছেএতগুলো লোক কি গুহার মধ্যে ঢুকে পড়ল?
একটা বড়ো পাথর পেরিয়েই গুহার মুখটা দেখতে পেলাম। কিন্তু আর এগোতে পারলাম না − পা যেন মাটিতে কেউ স্ক্রু দিয়ে আটকে দিয়েছে।
গুহাটা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে। তার সামনের মাঠে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তাকে ঘিরে পাঁচটা মানুষ নেচে চলেছে। এত দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। তাদের গায়ে কোনও পোশাক আছে বলে মনে হল না − খালি সকলের মুখে একটা মুখোশ।
অভিভূত হয়ে তাদের নাচ দেখছিলাম। কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম বলতে পারব না। হঠাৎ মনে হল আমাকেও যেতে হবে ওখানে, যোগ দিতে হবে ওদের নাচে। পা দু’টো এবার নিজে নিজেই দৌড়োতে শুরু করল।
গুহার পথটা সোজা নয়, ঘুরে ঘুরে গেছেসব সময় তাই গুহাটা দেখতে পাচ্ছিলাম না। হাঁপাতে হাঁপাতে যখন গুহার সামনে পৌঁছোলাম, তখন সেখানে কোনও মানুষের চিহ্ন নেই।
গেল কোথায়? এইমাত্র তো দেখলাম। ভোর হয়ে গেছে, সূর্যের প্রথম আলো এসে পড়েছে মাঠে। আশেপাশে তাকালাম, জনপ্রাণী নেইসবাই কি গুহার মধ্যে ঢুকে পড়ল?
গুহার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভিতরটা সূচীভেদ্য অন্ধকার। আশেপাশের থেকে কতগুলো শুকনো ডাল কুড়িয়ে নিলাম। পকেট থেকে লাইটার বার করে জ্বালিয়ে নিলাম। সুড়ঙ্গটা পেরিয়ে ভিতরের বড়ো গহ্বরটাতে পা দিলাম।
কোথাও তো কেউ নেই! কালই দেখেছিলাম, আজ আবার তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। ঐ সুড়ঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। তাহলে লোকগুলো নিশ্চয় ভিতরে আসেনি। অন্যদিকে চলে গেছে, আমি দেখতে পাইনি।
শিখর অবিনাশবাবুকে মশালের আলোতে ছবিগুলো দেখিয়েছিলেন। দেখি তো আমার কেমন লাগে?
মশালের আলোতে ছবিটা সত্যি যেন আরও জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আলো ছায়ার খেলাতে মনে হচ্ছে ছবির মানুষগুলো নড়াচড়া করছে। কাল কি ছবিটা ভালো করে দেখিনি? বর্শাটা কি ম্যামথের ডানদিকে বিঁধেছিল, নাকি বাঁদিকে? সামনের শিকারীটা কি ম্যামথের একেবারে পায়ের তলায় ছিল? এত ভুল দেখেছিলাম? দেখি তো মোবাইলের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে।
পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ফোনটা নেই। হয় ঘরে ফেলে এসেছি, নয়তো এখানে আসার সময় পকেট থেকে পড়ে গেছে। ফোন এখানে কোনও কাজে লাগছিল না, কিন্তু ছবিগুলো তো ছিল। ফেরার সময় খুঁজে দেখতে হবে।
বেরনোর আগে সেই পাঁচটা নাচিয়ে মানুষের ছবিটার সামনে মশালটা ধরলাম। আজ ছবিগুলো সত্যিই যেন আরও জীবন্ত, তাদের নাচ যেন আরও উদ্দাম। কী উন্মাদনা, কী জীবনীশক্তি বিচ্ছুরিত ঐ নাচে!
কিন্তু মাঝের মূর্তিটা কি হাত বাড়িয়ে কাউকে ডাকছে? কাল এরকমই ছিল? একেবারে ডানদিকের দু’টো ফিগারের মধ্যে আরও একটা মানুষের ছবি আঁকার মতো জায়গা ছিল নাকি কাল? স্মৃতি এতটাই বিশ্বাসঘাতকতা করবে আমার সঙ্গে? না, মোবাইলটা খুঁজে পেতেই হবে। কিন্তু আর দেরি করা যাবে না, মশালটা নিভে আসছে।
ফেরার পথে অনেক খুঁজেও মোবাইলটা পেলাম না। আজ সারাদিন কোনও কিছুই আর ভালো লাগছে না। চোখের সামনে শুধু দেখছি দাউদাউ আগুন ঘিরে পাঁচটা মানুষের উদ্দাম নাচ।
নিখিল, শহুরে মানুষ আমরা। মেপে মেপে কথা বলি, দেখে শুনে পা ফেলি। তোকে বলে বোঝাতে পারব না কী ছিল ঐ নাচের ছন্দে। শুধু বেঁচে থাকার আনন্দ, শুধু জীবনের আদিম উল্লাস। কাল কী হবে পরোয়া নেই। শত সহস্র বিপদের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিদিনের বাঁচাই যেন জীবনের জয়গান – তার মূর্ত প্রকাশ ওই নাচ।
আমি ঠিক করেছি আমি দেখব ঐ নাচ। আমাকে ওরা দেখাতে চায় না। আমিও জানি কেমন করে ওদের কাছে যেতে হবে। বিকেলে অন্ধকার হওয়ার আগে গুহাটার ভিতরে গিয়ে লুকিয়ে থাকবচিঠিটা আজ সারাদিন ধরে লিখলাম কী হল কাল তোকে লিখে চিঠিটা শেষ করব

*      *      *

পাতা উলটে দেখলাম পেছনটা সাদা। অনিমেষ চিঠিটা শেষ করেনি। টেবিলের ওপাশ থেকে ইন্সপেক্টর দ্বিবেদী আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। তাঁর হাতে অনিমেষের প্রথম চিঠিটা।
ভদ্রলোক আজ সকালবেলা হঠাৎ বাড়িতে এসে হাজির হয়েছেন। হাতে অনিমেষকে লেখা আমার চিঠিটা। জানতে চাইলেন, “আপনার নাম নিখিল? এই চিঠিটা কি আপনার লেখা?”
“হ্যাঁ, কিন্তু এটা আপনার হাতে কেন? কে আপনি?” আমি অবাক হয়ে জানতে চাই।
“আমি পুলিশ ইন্সপেক্টর দ্বিবেদী। আপনার সঙ্গে আপনার বন্ধু অনিমেষবাবুর ব্যাপারে কিছু কথা ছিল। ভিতরে আসতে পারি?”
ঘরে বসে ভদ্রলোক যা বললেন, সংক্ষেপে তা এইরকম। অনিমেষ নামের এক কলকাতার বাঙালী আর্টিস্ট পারাসি গ্রামের কাছে গামহারিয়া নামের একটা জঙ্গলের মধ্যে থাকছিল। সে সপ্তাহে অন্তত একদিন পারাসিতে বাজার করতে আসত। কয়েক সপ্তাহ সে না আসায় গ্রামের লোকের সন্দেহ হয়। জঙ্গলের মধ্যে তার থাকার জায়গায় খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় অনিমেষের জিনিসপত্র পড়ে আছে, কিন্তু তার দেখা পাওয়া যায় না। এই অসমাপ্ত চিঠিটাও তার কাগজপত্রের মধ্যে পাওয়া যায়। কাছের জঙ্গলে সন্ধান চালিয়ে লাভ হয়নি। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু শুধু নাম আর কলকাতার লোক, এইটুকুর ওপর নির্ভর করে পুলিশও বেশিদূর এগোতে পারেনি।
এই সময় অনিমেষের উত্তরে লেখা আমার প্রথম চিঠিটা পারাসি পৌঁছোয়। সেই সূত্র ধরে ইন্সপেক্টর দ্বিবেদী আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। ভদ্রলোকের ছোটবেলাটা কলকাতায় কেটেছে, তাই বাংলা পড়তে পারেন, বলেনও ভালো।
ওনাকে অনিমেষের প্রথম চিঠিটা দেখালাম। ইতিমধ্যে আমরা দু’জনে অনিমেষের বাড়িটা দেখে এসেছি যেমন তালা বন্ধ ছিল, তেমনি আছে।
অনিমেষের প্রথম চিঠিটা পড়ার পরে আমাকে ওর অসমাপ্ত চিঠিটা পড়তে দিয়েছিলেন। বললেন, “এটা আপনার বন্ধু অনিমেষবাবুর লেখা তো?”
আমি ঘাড় নাড়লাম, “দ্বিতীয় অংশটা তাড়াতাড়ি লিখেছে, তাই জায়গায় জায়গায় লেখাটা জড়িয়ে গেছে। কিন্তু এটা ওরই লেখা।”
দ্বিবেদী বললেন, “আমারও তাই মনে হয়, তবে এক্সপার্টের মতামত নিতে হবে। পুলিশে চাকরি করতে করতে ছবি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় পাই না। অনিমেষবাবুর আঁকা ছবিটা আমি দেখেছি। উনি লিখেছেন জঙ্গলের ছবি আঁকছিলেন। না বলে দিলে আমি অন্তত ওটাকে জঙ্গলের ছবি বলে মনে করতাম না। কেমন আর্টিস্ট ছিলেন ভদ্রলোক?”
“ছিলেন বলছেন কেন? ও যে মারা গেছে এমন কোনও প্রমাণ আছে আপনার হাতে?”
“না না, ওটা ভুল করে বলে ফেলেছি। মাপ করবেন।”
“অনিমেষ চিঠিতে একথা লেখেনি ও জঙ্গলের ছবি আঁকছিল, লিখেছে জঙ্গলের শোভা দেখে ও প্রেরণা পেয়েছে। তবে সত্যি যদি জানতে চান, শিল্পী হিসাবে ও খুব সাধারণ মানের। ওর একটা ক্ষমতা আছে, ছবির গুণাগুণ ভালো বিচার করতে পারে। দেখার চোখ আছে, আঁকার হাত নেই। তা বলে চেষ্টায় ওর কোনও খামতি নেইসবচেয়ে দুঃখের কথা হল নিজের ছবি কেমন সেটা নিজেই বিচার করতে পারে। ওর আঁকা ছবিটা একবার দেখাবেন? যেটাকে ও অন্তত প্রথমে ভালো ভেবেছিল।”
সেটা তো এখন সঙ্গে আনিনি। দ্বিতীয় চিঠিটা পড়ে মনে হয় কোনও কারণে হ্যালুসিনেশনে ভুগছিলেন। কোনওরকম মাদকের নেশা ছিল কি না আপনি জানেন? বোঝেনই তো, আর্টিস্টদের সম্পর্কে তো কত কথাই শুনি।”
“না না, সেরকম কোনও নেশা কখনও করেনি অনিমেষ।”
“তাহলে ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে পড়ল।”
“আপনার কী মনে হয়? অনিমেষের কী হয়েছে?”
“মনে হয় জঙ্গলের মধ্যে রাত্রি কাটাতে গিয়ে কোনও বিপদে পড়েছিলেন। ওনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কমতবে দেহ না পাওয়া পর্যন্ত আনঅফিসিয়ালি আমরা ধরে নেব উনি নিরুদ্দিষ্ট। ওনার জিনিসপত্রগুলো কলকাতায় পাঠিয়ে দেব। আপনাকে অনুরোধ, একবার লোকাল থানায় গিয়ে দেখবেন আইডেন্টিফাই করতে পারেন কি না। তখনই না হয় ছবিটাও দেখবেন। আমি আজ চলি − রিপোর্টটা লিখে শেষ করতে হবে।”
দ্বিবেদী দরজা পর্যন্ত গিয়েও ফিরে এলেন। বললেন, “আপনার মতে আপনার বন্ধুর ছবি দেখার চোখ আছে। তাহলে নিশ্চয় ছবির খুঁটিনাটি ভালো নজর করতেন?”
“নিশ্চয়, এ ব্যাপারে ওর স্মৃতিশক্তিও সাংঘাতিক ভালো।”
“স্ট্রেঞ্জ!” বলে দ্বিবেদী চুপ করে গেলেন।
“কেন, কী হয়েছে?”
“চিঠিতে আছে অবিনাশবাবু বলেছেন ওনাকে যখন শিখর ছবি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন তখন সম্ভবত চারটে ফিগার ছিল। অনিমেষবাবু নিজে লিখেছেন উনি পাঁচটা মানুষের ছবি দেখেছেন। উনি ছবির ডানদিকে দু’টো ফিগারের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গার কথাও বলেছেন।”
একটু চুপ করে ইন্সপেক্টর ভদ্রলোক বললেন, “আমাকেও ঐ গুহাতে ঢুকতে হয়েছিল। আমি নিজের চোখে ছ’টা ফিগার দেখেছি। তাদের মধ্যে আরও মানুষের ছবি ঢোকানোর মতো জায়গাই নেই।”
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। কোনওমতে বললাম, “হয়তো কেউ এর মধ্যে গুহায় ঢুকে একটা মানুষের ছবি এঁকেছে। অনিমেষও এঁকে থাকতে পারে।”
দ্বিবেদী আমার চোখে চোখ রেখে বললেন, “হয়তো তাই। আমার রিপোর্টে আমি সেই কথাই লিখব।”

_______
ছবি - পুস্পেন মণ্ডল

লেখক পরিচিতি - পেশায় পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলায় কিশোরদের জন্য গল্প এবং বিজ্ঞান বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে থাকেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ থেকে প্রকাশিত হয়েছে গল্পের বই 'কল্পবিজ্ঞানের গল্পসংকলন'