চিলাপাতার জঙ্গলে
হিমি মিত্র রায়
আগুনরঙা পাখিটাই এখন সুতীর্থর একমাত্র
পথপ্রদর্শক। পাখিটা
যেদিক দিয়ে উড়তে থাকল, সুতীর্থও ওর ভাঙা পা-টা টানতে টানতে ওকে অনুসরণ করতে থাকল। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। আর এক পা ফেলাও যেন মনে হচ্ছে হাজার
মাইল হাঁটার সমান। পাখিটার সঙ্গে যেন আর পেরে উঠছে না ও। আস্তে আস্তে চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে
ওটা। সুতীর্থ
হাত তুলে ডাকার চেষ্টা করেও বিফল হল। গলা দিয়ে আর কোনও আওয়াজই বেরোচ্ছে না। অন্ধকার গুহাটার ছোটো ছিদ্রটাও কেমন যেন বন্ধ হয়ে গেল মনে
হচ্ছে। যতটুকু
আলোর রেখা ওই ছিদ্র দিয়ে আসছিল, অন্ধকার হবার সাথে ওইটুকু আশার আলোও নিভে গেল। সুতীর্থর মনে হচ্ছে দু’টো মোটা কালো কর্কশ হাত হঠাৎ পেছনের গুহার দেওয়াল ভেদ করে ওর গলাটা
চেপে ধরল।
হাতটাকে সর্বশক্তি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা
করে চলেছে অনবরত, কিন্তু কিছুতেই পারছে না। আস্তে আস্তে নিথর হয়ে যাচ্ছে, জিভ বেরিয়ে যাচ্ছে ওর। নিজেকে হাতদু’টোর করাল গ্রাসে
সঁপে দিচ্ছে ও। হঠাৎই মনে হল একটা নরম হাতের পরশ ওর মাথায়, ডাকছে, “বাবা ওঠ, আর কত ঘুমোবি?”
ধড়মড় করে উঠে বসল সুতীর্থ। মাকে জড়িয়ে ধরে আবার শুয়ে পড়ল ও কোলে মাথা রেখে।
“উঠবি না? ঋতম ফোন করেছিল ল্যান্ড ফোনে। তোর মোবাইল বন্ধ পাচ্ছিল। বারোটার সময় রেডি হয়ে থাকতে বলেছে। তোকে তুলে বেরিয়ে যাবে, দাঁড়াবে না।”
লাফ দিয়ে উঠে পড়ল ও। ভুলেই গেছিল স্বপ্নটার জন্য। আজকে তো ওরা ঘুরতে বের হবে, চিলাপাতার জঙ্গলে। তিন চারদিন জঙ্গলে কাটাবে,
তাঁবুতে থাকবে। বাড়িতে অবশ্য বলেছে রিসর্টেই থাকবে, কিন্তু আসলে নয়। কী আর করা যাবে, মাকে অযথা টেনশন দিয়ে
লাভ নেই। সালারজং
মিউজিয়ামের
সেই চুরি হওয়া ‘তাজ’ উদ্ধারের ঘটনা এখন মিডিয়ার দৌলতে সকলেরই
জানা। মাও
খুব খুশি। কিন্তু
মায়ের মন তো! অগত্যা
মিথ্যে কথা।
গভীর জঙ্গলে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা
ওদের এর আগে হয়নি। তাজপুরে
সমুদ্রের ধারে তাঁবু টানিয়েছিল ঠিকই, তবে রাতে তো আর থাকা হয়নি। তাই ভাবতে বেশ থ্রিলিং লাগছে।
এন.জে.পি স্টেশন পৌছতে একটু লেটই করল ট্রেনটা। প্রায় দেড় ঘন্টা লেট। দু’টো বেজে গেল। ওরা একটা মারুতি ভ্যান ভাড়া করে রওনা হল। জলদাপাড়া পৌঁছে ‘গ্রীন ভ্যালি হোটেল’-এ পেট ভরে ভাত ডাল ঝিরি আলুভাজা আর চিকেন খেয়ে নিল। সঙ্গে জলের বোতল আর শুকনো খাবার তো ছিলই।
আর সময় নষ্ট না করে জঙ্গলের ভেতরে
যাবার জন্য বনদপ্তরের জিপে উঠে পড়ল ওরা। গার্ডটি যদিও সতর্ক করছিল বারে বারে, কিন্তু ওরা মানবার পাত্র নয়। জঙ্গলেই ওরা থাকবে, তবে অপেক্ষাকৃত
ফাঁকা জায়গা বেছে নেবে। ডি.এফ.ও-এর সঙ্গে আগেই কথা হয়েছিল। যেহেতু ‘তাজ’ উদ্ধারের সুবাদে ওদের সকলেই প্রায়
চেনে তাই
উনি একটু বেশিই বিগলিত বলে মনে হল।
চুকচুকী নদীর ধারে ওদের ছেড়ে দিয়ে
চলে গেল জিপ। গার্ড
আজকের রাতটা ওদের সঙ্গেই থাকবে। কাল ফিরে যাবে। একটু যে গা ছমছম করছিল না তা নয়। তবে ওদের সঙ্গে বেশ আধুনিক কিছু সরঞ্জাম
রয়েছে, তাই
চিন্তার কিছু নেই। ঋতমের
দিদি আমেরিকা থেকে আসবার
সময় ওর পছন্দের লিস্ট অনুযায়ী তাঁবু নিয়ে এসেছিল – যে তাঁবু কোনও বন্যজন্তু হামলা করতে পারবে না।
সুইচ অন করলেই এর থেকে একটা মৃদু আলোর
বিকিরণ হবে যাতে বন্যপ্রাণীরা কাছে ঘেঁষতে ভয় পাবে। বিদেশে নাকি এখন যে কোনও অভিযানে যাওয়ার জন্য অভিযাত্রীরা এই
তাঁবুই নিয়ে যাচ্ছে। বেলা প্রায় সাড়ে তিনটে। এমনিতেই বেলা হয়ে আসছে, তার ওপর জঙ্গল। অন্ধকার আগেই থাবা বসায়। সন্ধে নামার আগে ওরা ঠিক করল একটু
আশেপাশে ঘুরে দেখবে।
এই চিলাপাতার জঙ্গল আয়তনে বিরাট আর
খুব ঘন। একবার
ঢুকলে পথ হারাবার প্রবল সম্ভাবনা। সাথে গার্ডটি যদিও রয়েছে। ওর নাম প্রণয় প্রধান। নেপালী ছেলে, এদিককার নাড়ি-নক্ষত্র সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।
“বাবু, আপনাদের মতো আগেও দু’চারজন এখানে আসছিল। কী জানি খোঁজ করতেছিল, পায় নাই। পরে আবার আরও একজন একা আইসেছিল তিনদিন। সারাদিন জঙ্গলে কী জানি খুঁজত। তারপর রাতে হোটেলে চলি যেত। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলত না।”
“এখানে আবার কীসের খোঁজে আসে বল তো? স্ট্রেঞ্জ!”
“তাই তো! যাক গে ছাড়, ওসব ভেবে কাজ নেই। তিনদিন চুটিয়ে মজা করব। নো হেকটিক শিডিউল! কী বলিস ঋতম?”
“আবার নয়ত কী!”
আস্তে আস্তে চুকচুকি নদী
হেঁটে হেঁটে
পার হল ওরা। প্রণয়কে বলল, আসবার দরকার নেই, ওরা বেশিদূর যাবে না। সামনেই থাকবে। নদীতে গোড়ালি পর্যন্ত জল। তবে স্রোত আছে ভালো।
নদীর নীচের শ্যাওলায়
মাঝে মাঝে পা জড়িয়ে যাচ্ছিল। ব্যাঙাচি, ছোটো ছোটো কুচোমাছ ঘুরে
বেড়াচ্ছে নিজের খুশি
মতো।
ওপারে পৌঁছে ভেতরে ঢোকার লোভ সামলাতে পারল না ওরা। একবার ঢুকলে পথ হারাবার প্রবল সম্ভাবনা। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল প্রণয় ধীরে ধীরে ছোটো হয়ে যাচ্ছে। এদিকে জঙ্গল যত ঘন হচ্ছে সেই অদ্ভূত
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গাছগুলো আকারে এত
বড়ো আর ঝাঁকড়া যে সূর্যের আলো ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে না। ওরা সোজা না গিয়ে
বাঁদিকে গাছের ভাঙা ডালটা যেদিকে পড়ে আছে সেদিকে
ঢুকল। পকেটে
শুধু ফোল্ডিং ছুরি, যেটাও বিদেশি। খুললে পরে ইঞ্চি দশেক লম্বা হয়ে যায় আর আত্মরক্ষার জন্য আদর্শ। আরও কিছুদূর এগিয়ে গেল ওরা।
“ওটা কী?” সুতীর্থর চোখ সামনে।
একটা বহু পুরনো জরাজীর্ণ মন্দিরের
ধ্বংসাবশেষ।
বহুকাল ওখানে কোনও পুজো হয় না মনে হচ্ছে। পাশে একটা বেশ বড়ো মাপের বেদীমতো করা যার ওপর আগাছা হতে হতে আসল জিনিসটাই
চোখের আড়ালে। হঠাৎ বিকট আওয়াজে নির্জনতা ভঙ্গ হল। দু’টো বুনো শুয়োর ছুটে বেরিয়ে গেল। ঋতমরা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল।
“মনে হয় এখানে আগে মনসা পুজো হত!” সুতীর্থ দেওয়ালে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করল।
“হতে পারে। চল ফিরে যাই, বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না।”
ওরা সময় নষ্ট না করে এবার ফিরে যাবার
জন্য প্রস্তুত হল। অন্ধকার
হয়ে আসছে। দু’পা এগিয়েই সামনে আগাছায় ভরা বেদীটার
মধ্যে কেমন অস্বাভাবিক কিছু একটা লক্ষ্য করল ওরা।
“কিছু চেঞ্জ দেখতে পাচ্ছিস?” সুতীর্থ বলল।
“তাই তো মনে হচ্ছে। জঙ্গলগুলো কেমন যেন মনে হচ্ছে নাড়াচাড়া
হয়েছে! চল ত দেখি!”
সামনে গিয়ে টর্চ দিয়ে ভালোভাবে দেখতে থাকে ওরা। হঠাৎ চোখে পড়ে একটা সরু
ফাঁক, বেদীটা বরাবর। চোখ চাওয়াচাওয়ি করে দু’জন। ইশারায় কথা বলে দু’জনে মিলে বেদীটা ঠেলতে শুরু করল। অদ্ভুতভাবে ওদের চমকে দিয়ে ওটা
ঘড়ঘড় আওয়াজ করে সরে আসতে থাকল।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় ওরা দু’জন। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। বিস্মিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। বেদীটা সরে যেতেই দেখে মাটির
সিঁড়ির ধাপ নীচে চলে গেছে। কতটা গভীর বোঝা যাচ্ছে না ওপর থেকে। তবে একটা হাল্কা নীল আলো আছে। একদম নিশ্ছিদ্র অন্ধকার নয়। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না ওরা। নীচে নামাটা ঠিক হবে কি না বুঝে উঠতে পারছে না। ওদের কাছে হাতিয়ার বলতে শুধু ওই ছুরি। ভেতরে কী আছে তা না দেখে ফিরেও যেতে পারছে না দু’জনে। অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। কিছু তো একটা রহস্য আছেই নীচে। কিন্তু সেটা কী?
খুব সন্তর্পণে নামতে শুরু করল ওরা আস্তে আস্তে পা ফেলে। টর্চ জ্বালানো বোকামি হবে তাই ওটাকে
না জ্বালিয়ে হাতে রাখল। আর মোবাইলগুলো সাইলেন্ট করে নিতে ভুলল না। যদিও জঙ্গলের ভেতর নেটওয়ার্ক নেই, তবুও সাবধানের মার নেই। বেশ অনেকটা নামার পর মাটি ছুঁল পা।
হাল্কা নীল আলোটা একটু উজ্জ্বল এখানে। নীচটা বেশ ঠাণ্ডা, গুমোট ভাব নেই। আপাতত কাউকে চোখে পড়ছে না। অবশ্য চোখে পড়ছে না মানে কেউ নেই এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই। পকেট থেকে আত্মরক্ষার একমাত্র অস্ত্রখানা
বের করে নিল ওরা। পা
টিপে টিপে চলছে। বিশেষ
কিছু দেখা যায়নি চোখে পড়ার মতো। শুধু একটা স স আওয়াজ আসছে, যদিও খুব মৃদু। কোনদিক থেকে ওটা আসছে বোঝার চেষ্টা করল ওরা।
মৃদু আলোয় দেখা যাচ্ছে জায়গাটিকে বসবাসের
যোগ্য করার জন্য যে যে জিনিস প্রয়োজন তার বেশ কিছু রয়েছে সেখানে। খাটিয়া, বালিশ, চাদর, জলের জার, চা করার জায়গা, প্রচুর খালি গ্লাস, বোতল, দড়ি ইত্যাদি। ঋতমরা মুখে কিচ্ছু বলছে না, শুধু দেখে যাচ্ছে। এবার আরও বেশি সচেতন হয়ে গেল ওরা। ছুরিটাকে তাক করে ভেতরে যেতে থাকল। হঠাৎ কিছু দেখে থমকে দাঁড়াল। এখানেও খাটিয়া পাতা আর ওখানে কেউ একজন শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে ঘুমোচ্ছে।
আইডিয়া এল সুতীর্থর। ঋতমকে ইশারায় দাঁড়াতে বলে দৌড়ে গিয়ে
পাশের ঘর থেকে দড়িটা নিয়ে এল। দড়িটা আনা মাত্র ঋতম বুঝে গেল কী করতে হবে। দু’জন মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে
বেঁধে ফেলল। হাজার চেষ্টা করেও সে ছাড়াতে পারল না নিজেকে। অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকল শুধু। দেখে মনে হচ্ছে যে সে প্রচণ্ড অবাক
হয়েছে আর ঘুমের মধ্যে এরকম একটা কান্ড ঘটার কথা কখনওই ভাবেনি। পাশে থাকা বন্দুকটা অতি সন্তর্পণে নিজেদের কাছে নিয়ে নিল ওরা।
লোকটা হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে বিস্ফারিত
চোখে। ইয়া
মোটা গোঁফ। মনে
হয় যেন রোজ তা দেয়। পরনে
খাকি পোশাকই তো মনে হচ্ছে ওই আলোয়।
এইসবের চক্করে ওরা চারদিকে ভালো করে তাকায়ইনি। হঠাৎ চোখ পড়তেই দেখে
সার বেঁধে টেবিল, তার ওপর অসংখ্য কাচের বয়াম। তার মধ্যে অপরিচিত নানারকমের তরল পদার্থ। এক একটায় এক এক রঙ। কোনওটা সাদা, কোনওটা বাদামি বা কোনওটা সবজে। আর বয়ামের গায়ে বিভিন্ন কোড নাম্বার
লেখা। হাল্কা
আলোয় খুব বেশি বোঝা না গেলেও বেশ বোঝা যাচ্ছে ওগুলো তরলই।
পাশের সরু জায়গাটা দিয়ে গিয়ে আর একটা
বড়ো জায়গা। ওখানে নাম না জানা কতো ধরনের যন্ত্রপাতি - কাঁচি, ছুরি আরও অনেক কিছু। আর একপাশে ফরাস পাতা, মশারি টাঙানো। যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে ওরা। এবার যা দেখল তাতে ওদের বুঝতে বাকি
রইল না
এখানে কী চলছে। পেছনের পর্দা
টাঙানো জায়গাটায় ঢুকতেই দেখল চারটে বিশাল
আকারের কাচের বাক্স, অ্যাকোয়ারিয়ামের মতো। তাতে কিলবিল করছে বিভিন্ন ধরনের সাপ।
“চল শিগগির! এদের হাতে পড়লে আর রক্ষে
নেই। যে কোনও মুহূর্তে কেউ চলে আসতে পারে,” ঋতম বলল।
লোকটার বাঁধন ঠিকমতো পরীক্ষা করে কোনওরকম সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে বেদীটা ঠেলে আবার আগেরমতো অবস্থায় করে রাখল। এদিকে গাঢ় অন্ধকার। বেশ গা ছমছমে একটা পরিবেশ। হনহন করে হাঁটছে ওরা। কারও মুখে কোনও আওয়াজ নেই। কিছুদূর যাওয়ার পরই দেখল প্রণয় আরও দু’জন বনকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এদিকে আসছে। ওদের দেখা মাত্রই হাত তুলে ডাকল, “ইধর সাহাব!”
প্রণয়কে কিছু বলল না ওরা। তাঁবুতে
ফিরে গিয়ে আস্তে আস্তে
ডি.এফ.ও-কে
ফোন করল যাতে
প্রণয় কিছু টের না পায়। ডি.এফ.ও তো শুনে ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা। বলল, এক্ষুনি পুলিশ নিয়ে আসছে।
আধঘন্টার মধ্যে সমস্ত ফোর্স চলে এল। ওদেরকে গাড়িতে তুলে নদীর ওপর দিয়ে
উঠে ওপারের জঙ্গলের ভেতর গিয়ে দাঁড়াল। গাড়িটাকে দু’টো বিশাল ঝাঁকড়া গাছের পেছনে লুকিয়ে রাখা হল। এবার হেঁটে ওই সরু পথটার ভেতর দিয়ে গিয়ে বেদীটা
দেখিয়ে দিল সুতীর্থরা।
এ যাত্রায়ও আর
তাঁবুতে রাত কাটানো হল না ওদের। একটা বড়ো আন্তর্জাতিক পাচার চক্র যা কি না সাপের বিষ নিয়ে কারবার করার জন্য
এমন একটা ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল, তাও একেবারে বনদপ্তরের নাকের ডগায়, ওদেরকে হাতে নাতে ধরিয়ে দেওয়ায় ঋতমদের
প্রাণহানির
আশঙ্কা তো বেড়েই গেল। তাই ওদেরকে জঙ্গলে না থাকারই পরামর্শ
দিল সকলে। ওরাও
আর না করল না।
প্রণয় শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে ওদের দেখছে। মুখে বলছে না কিছু। ডি.এফ.ও শ্রী তাপস ঘোষ মহাশয় ওদেরকে
নিয়ে আগেই বড়ো বেশি
বিগলিত ছিলেন। আর
এখন তো
কথাই নেই।
“আমার এরিয়ার মধ্যে এমন সব দুর্বৃত্তরা
আস্তানা গেড়েছিল আর
আমিই কিছু খবর পেলাম না? ছিঃ! তোমাদের কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাব জানি না। আগামী সাতদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের
যে কোনও জায়গায়, মানে জঙ্গলে তোমরা ঘুরে এস, আমি আজই সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ব্রেভ বয়েজ! থাকা খাওয়া সব ফ্রি। শুধু কোথায় যেতে চাও বল!”
“না না, ব্যস্ত হবেন না প্লিজ। আমাদের জায়গায় যে কেউ থাকলে এই কাজ
করত। আমাদের কর্তব্য ছিল পুলিশকে আর আপনাদের জানানো। সেটাই করেছি শুধু।”
“নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ সবাই
করত না। কিন্তু তোমরা করেছ বলে পুরস্কার তো
এমনিই পাবে। আমি
পারসোনালি তোমাদের জন্য সুন্দরবনে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ক’টা দিন লঞ্চে থাকবে, খাবে, আরাম করবে, অ্যান্ড ইটস ফাইনাল!”
সেবারও তাঁবুতে না
থাকা হলেও সুন্দরবনে বাকি চারটা দিন লঞ্চে থেকে তাঁবুতে না থাকতে পারার কষ্টটা ভুলে গেল। ঘুরে এসে ডি.এফ.ও-কে ফোন করে ধন্যবাদ জানাতে ভুলল না ওরা।
________
ছবি - ঋদ্ধিরাজ
পালিত
লেখক
পরিচিতি - ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো, সবে সবে
লেখালেখিতে, ছোট বড় সবার জন্য কলম ধরতে ভাল লাগে। ভাল
লাগে বই পড়তে, অয়েল পেন্টিং করতে, আর মাঝে মাঝে সঞ্চালনার কাজে যেতে। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে সেই
অভিজ্ঞতা খাতায় তুলে ধরতেও বেশ লাগে।
No comments:
Post a Comment