বায়োস্কোপ:: সিনেমা: ক্যাসপার - রিভিউ: সোনাল দাস


সিনেমাঃ ক্যাসপার
রিভিউঃ সোনাল দাস

ভূতের সিনেমা বললেই তোমাদের চোখের সামনে যে হাড়হিম করা ছবিগুলো ফুটে ওঠে তার থেকে একদম আলাদা একটা ছবির কথা তোমাদের বলব। এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রটি হল বারো বছর বয়সী একটি ছেলে, যে অপঘাতে মারা গিয়ে এখন পাকেচক্রে ভূত হয়ে গেছে। সে থাকে বিরাট একটা কাসেলে, কিন্তু ভূত হয়ে এখানে একা একা থাকা তার একদম পছন্দ নয়। সেও চায় তার কিছু বন্ধু হোক। তাই তার সম-বয়সী কাউকে কাসেলে ঢুকতে দেখলেই সে এসে হাজির হয় তাদের সামনে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে। তাদেরকে বলে - "সে ক্যাসপার নামের একটি ভূত এবং সে এখানেই থাকে।" কিন্তু ভুতের বন্ধু কে হবে! তার মুখ থেকে এই কথা শুনে হয় তারা অজ্ঞান হয়ে যায়, নয়তো যে যেদিকে পারে দৌড় দেয়। ফলে কাসেলে বেচারাকে একেবারে একলাই থেকে যেতে হয়।

এদিকে এই কাসেলটির যিনি মালিক ছিলেন তিনিও মারা যান এবং উত্তরাধিকার সুত্রে বিরাট এই কাসেলটি পেয়ে যায় তার নির্দয় এবং বখে যাওয়া মেয়ে ক্যারিগান। ক্যারিগান প্রথমে এই সম্পত্তির প্রতি উদাসীন থাকলেও তার ছায়াসঙ্গী পল ডিবস যখন তাকে বলে এই কাসেলে লুকোনো রয়েছে এক বিশাল ধনসম্পত্তি তখন তারও মন পাল্টে যায়। সেও উত্সাহিত হয়ে পরে এই লুকোনো ধন-সম্পত্তি খুঁজে বের করতে। কিন্তু ততদিনে এই কাসেলটি ভূতুড়ে বলে সারা শহরে দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে। অতএব এখান থেকে ভূত তাড়াতে না পারলে কিছুতেই এই সম্পত্তি হস্তগত করা যাবে না বুঝে ক্যারিগান একে একে নিযুক্ত করে একজন ধর্ম-যাজক ও ভূত তাড়ানোর ওঝাকে।

কিন্তু তারা দুজনেই ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলে তারা ঠিক করে কাসেলটিকে ভেঙ্গে ফেলে হবে। কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনাটিও সফল হয় না এবং কাসেলটি ভূতুড়ে বলে ছড়িয়ে থাকা গুজবটি একেবারে পাকাপোক্তভাবে শহরবাসীর মনে বাসা বাঁধে।

এত কিছু ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও ক্যারিগানের মন থেকে লুকোনো ধন-সম্পত্তি পাবার আশা মোছে না এবং সে অপেক্ষায় থাকে। একদিন তার চোখে পড়ে টিভিতে চলা একটি অনুষ্ঠানের।  যেখান থেকে সে সন্ধান পায় ডক্টর জেমস হার্ভি নামক এক "ভূত-বিশেষজ্ঞর" যার মূল বিষয় হল পরলোক-চর্চা। তার মতে ভূতেদের কিছু অপূর্ণ ইচ্ছা থাকার ফলেই তারা এই জগতের মায়া ত্যাগ করতে পারে না এবং যদি সেই ইচ্ছা পূরণ হয়ে যায় তাহলে তারা মুক্তি পেয়ে যায়। ব্যাস, ক্যারিগানকে আর পায় কে, সে শীঘ্রই তলব পাঠায় ডক্টর জেমস হার্ভিকে এবং কাসেলের ব্যাপারে সব কিছু বুঝিয়ে দেবার সাথে এটাও জানিয়ে দেয় এই কাজটি তাকে সারতে হবে আগামী দুসপ্তাহের মধ্যে।

ক্যারিগান এবং পল ডিবস

ডক্টর জেমস হার্ভি ভূত-বিশেষজ্ঞ হলেও আজ পর্যন্ত কোনো ভুতের দেখা পাননি, ফলে ভূতেদের যে ঠিক কি রকম দেখতে হয় তাই তার জানা নেই। কিন্তু এই কাসেলে এসে তার মনে হয় এখানে নিশ্চয়ই ভূত থেকে থাকবে, অতএব এবার তার ভূত দেখার ইচ্ছে মিটবে। ঠিক এই কথাটাই সে জানায় তার সাথে আসা বারো বছর বয়সী মেয়ে ক্যাথলিনকে। ক্যাথলিন তার বাবাকে খুব ভালো করে চেনে, ফলে তার কথাকে খুব একটা পাত্তা দেয় না এবং পাক্কা প্রমিস করিয়ে নেয় যে এখানেও যদি ভূত দেখা না যায় তাহলে তারা আর ভূতের সন্ধানে চারপাশে ঘুরে বেড়াবে না।

ডক্টর জেমস হার্ভি ও তার মেয়ে ক্যাথলিনকে কাসেলে ঢুকতে দেখে ক্যাসপার আনন্দে আটখানা হয়ে ওঠে। সে মনে মনে ঠিক করে নেয় এবার আর কোনও ভুল করা চলবে না, যে ভাবে হোক এদের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলতেই হবে। কিন্তু যতই সে ভালো সাজার চেষ্টা করুক না কেন, সে তো আসলে ভূত! ফলে তাকে সামনে দেখতে পেয়ে ক্যাথলিন ভয়ে মূর্ছা যায়। এদিকে ডক্টর হার্ভিও সন্ধান পায় এই কাসেলে লুকিয়ে থাকা আরও তিনটি ভূতের এবং তাদের দেখে তারও আত্মা খাঁচাছাড়া হবার অবস্থা হয়। প্রথম ভূত দর্শন বলে কথা!!! এই তিনটে ভূত ভীষণ পাজি, তারা ক্যাসপারকে দিয়ে সারাদিন নানারকম ফাই-ফরমাস খাটিয়ে নেয়, আর নিজেরা গায়ে হওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

ডক্টর জেমস হার্ভি ও তিনটে পাজি ভূত

আস্তে আস্তে ক্যাসপার এবং অন্যান্য ভূতেদের সাথে ক্যাথলিন ও ডক্টর জেমস হার্ভির আলাপ পরিচয় হয়ে যায় এবং ক্যাথলিন জানতে পারে ক্যাসপারের আগের জীবনের সব ঘটনার কথা। সে কী ভাবে ভূত হলো সেই ঘটনার কথাও ক্যাসপার জানায় এবং সাথে জানায় এমন এক "জাদু সিরাপের" কথা যা শুনে ক্যাথলিন অবাক হয়ে যায়। এই জাদু সিরাপ নাকি ভূতেদের ফের মানুষ করে তুলতে পারে, আর সাথে এটাও জানাতে ভোলে না যে এই কাসেলে খুব দামী একটা জিনিস লুকোনো আছে। এই সব কথা ক্যারিগানও জেনে ফেলে ক্যাথলিন এর সাথে, কারণ সেই সময় সে আর পল ডিবস আড়ি পেতে ক্যাসপার-এর সব কথা শুনছিল।

ক্যাথলিন ও ক্যাসপার মুখোমুখি

সব কিছু জানার পরে ক্যারিগান কি কাসেলে লুকোনো সেই দামী সম্পত্তিটির হদিস পায়? ক্যাসপারও কি সেই জাদু সিরাপের দৌলতে ভূত থেকে মানুষ হয়ে উঠতে পারে? এসব কিছু জানতে হলে তোমাদের দেখে ফেলতেই হবে "Casper" নামক এই মজাদার ভূতের সিনেমাটা। কারণ এরপর ছবিতে ঘটতে থাকে একের পর এক চমকপ্রদ ঘটনা, যা বলে দিলে তোমাদের ছবি দেখার মজাটা নষ্ট হবে। তাই ঘটনাগুলোর মজা পুরোদমে পেতে দেখে নিও Casper (১৯৯৫) নামক ছবিটি এবং ভূতেদের নিয়ে এরকম মজাদার ছবি যে তোমরা এর আগে কখনও দেখনি এই কথাও জোর গলায় বলে রাখলাম। তোমাদের ছবিটা কেমন লেগেছে তা জানিও আমাদের ম্যাজিক ল্যাম্পের পাতায়।

পুনশ্চ, কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা  -

২৮শে জুলাই ১৯৯৫ সালে আমেরিকাতে মুক্তি পায় এই কমেডি-ফ্যান্টাসি-হরর ছবিটি এবং ছবিতে কম্পিউটার গ্রাফিক্স/ স্পেশাল এফেক্টস (VFX) এর কাজ সেই সময়তেই অনবদ্য ছিল। ছবিতে ডক্টর জেমস হার্ভি ও ক্যাথলিনের চরিত্রে যথাক্রমে বিল পোলম্যান এবং ক্রিস্টিনা রিচির অভিনয় দর্শক মহলে উচ্চপ্রশংসিত হয়। ক্যাসপার নামক ভূতের চরিত্রটি নেওয়া হয় "Casper the Friendly Ghost" নামক একটি কমিক্স বই থেকে যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে "হার্ভি কমিক্স" নামক প্রকাশনী থেকে।

এই ছবিটির জনপ্রিয়তা এতটাই হয় যে পরে এর থেকে একটি কার্টুন টিভি সিরিজ চালু হয় "The Spooktacular New Adventures of Casper" (১৯৯৬) নামে। সেই সময় বহু নামী ভিডিওগেম কোম্পানিও (সুপার; NES; Game Boy; Playstation) বাজারে নানা রকম ভিডিওগেম নিয়ে আসে "ক্যাসপার" চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে।
_______

15 comments:

  1. বাহ,সুন্দর লেখা। ঝরঝরে গদ্য। ছোটোরা পড়লে সিনেমাটা দেখতে চাইবেই, এটা হলপ করে বলা যায়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ বিশ্ব :)

      Delete
    2. অনেক ধন্যবাদ বিশ্ব :)

      Delete
  2. Ami boro hoyeo cenema ti age dekhbo.... osadharon review...

    ReplyDelete
    Replies
    1. Oboshyo dekho, khub bhalo laglo tomar motamot jene.

      Delete
    2. Oboshyo dekho, khub bhalo laglo tomar motamot jene.

      Delete
  3. Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ দাদা, তোমার মতামত জেনে খুব খুশি হলাম।

      Delete
    2. অনেক ধন্যবাদ দাদা, তোমার মতামত জেনে খুব খুশি হলাম।

      Delete
  4. চমৎকার হয়েছে লেখাটা। ধন্যবাদ সোনাল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম,আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জানাই।

      Delete
  5. ক্যাসপার আমার খুব প্রিয় মজাদার ভূতের সিনেমাগুলোর একটা। এই দারুণ review টা পড়ে আরেকবার nostalgic হয়ে পড়লাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুব খুশি হলাম আপনার লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে। ভূতের সিনেমাগুলোর মধ্যে এটা সত্যিই বেশ মজাদার ছোটদের দেখে খুব ভালো লাগবে।

      Delete
  6. কাসপার সিনেমাটির [পরিচালক ব্র্যাড সিল্ডারিন ] একটি চমৎকার রিভিউ পড়লাম । ছোটদের মেজাজ বুঝে রিভিউ করা সহজ নয় মোটেই । বিশেষ করে গল্প বলার পাশাপাশি সিনেমাটিক টাচ লেখাটিকয়ে আকর্ষণীয় করে তুলেছে । ধন্যবাদ সোনাল সুন্দর রিভিউ প্রেজেন্ট করার জন্য ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি পড়ার জন্য এবং আপনার মতামত জানানোর জন্য। খুব খুশি হলাম :)

      Delete