ম্যাজিক ল্যাম্প:: জুলাই ২০২০

পঞ্চম বর্ষ।। তৃতীয় সংখ্যা।। জুলাই ২০২০
বিশেষ ছড়া সংখ্যা


প্রচ্ছদঃ বিল্টু দে
_____

সম্পাদকীয়:: জুলাই ২০২০


ম্যাজিক ল্যাম্পের প্রিয় বন্ধুরা,
কেমন আছ সবাই? ঘরের মধ্যে বসে বসে আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে মনটা উদাস হয়ে যাচ্ছে তো? নাকি অনলাইন ক্লাস করতে করতে জেরবার! মাঝে মাঝে বলছ – “দুত্তোর আর ভালো লাগছে না!”
জানি এটা খুব কঠিন একটা সময়। তবে দেখো এই সময়টাও একদিন গল্প হয়ে যাবে। ম্যাজিক ল্যাম্প বন্ধু হয়ে রয়েছে তোমাদের পাশে সবসময়। এবারে এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে উপস্থিত আমাদের ছড়া সংখ্যা। টক মিষ্টি ঝাল নানা স্বাদের তারা, কিন্তু তেতো নয় মোটেই। চেখে দেখে জানাও তো আমাদের কোন ছড়া মন ভরাল, মেঘ সরাল, আলো ছড়াল। প্রচুর ছড়া এবং তাদের সঙ্গে রয়েছে ছড়া নিয়ে আলোচনা, গল্প পাঠ, ছবিছাবা ও অন্যান্য নিয়মিত বিভাগ।
এই সংখ্যার অলংকরণ শিল্পীরা হলেন অতনু দেব, সুমিত রায়, নচিকেতা মাহাত, সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী, সমীর সরকার, সুজাতা চ্যাটার্জী, শ্রী ময়ী, শেলী ভট্টাচার্য এবং শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য। সুন্দর প্রচ্ছদটি এঁকে দিয়েছেন বিল্টু দে, আর সংখ্যাটি সাজিয়ে গুছিয়ে তোমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন তাপস মৌলিক।
ভালো থেকো বন্ধুরা। ভালোবাসা নিও।
ইতি,
জিনি
_____
ছবিঃ বিল্টু দে

ছড়া-কবিতা:: তাইরে নানা তাই - কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়


তাইরে নানা তাইরে নানা
তিনটে ভূতের দেড়টা ছানা
রাতদুপুরে মুন্ডু নেড়ে মিষ্টি সুরে গাইছে গানা
হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও।
সেই সুরেতে রাতবিরেতে বাঁশবনেতে উঠছে ঝড়
বাদুড় পেঁচা হেঁচকি তুলে পড়ছে ঝুলে ধড়াদ্ধড়।
হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও ।
#            #            #
তাইরে নানা তাইরে নানা
তেপান্তরের দত্যিদানা
কেওড়াবনে আপনমনে শীর্ষাসনে খাচ্ছে খানা
নাচছে তারা কলবলিয়ে, খলবলিয়ে হাসছে রে
হল্লা শুনে দিগ্বিদিকের হাজার ভূতে আসছে রে।
হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও।
#            #            #
তাইরে নানা তাইরে নানা
কারুর কি ভাই রয়েছে জানা,
কোন্‌ খুশিতে মাঘের শীতে গভীর রাতে আসরখানা?
সেই কথাটি খুব গোপনে বলছি শোনো পরিষ্কার
স্কন্ধকাটার মুন্ডু ওরা পেয়েছে খুঁজে বনের ধার।
হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও।
হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও হোঃহো, হো-ও-ও-ও।।
                     _____
                 ছবিঃ অতনু দেব

ছড়া-কবিতা:: রূপকথা - সঙ্গীতা দাশগুপ্তরায়


রূপকথা
সঙ্গীতা দাশগুপ্তরায়

স্ফটিকজলের দিঘির নিচে তিন কন্যের বাড়ি
এক কন্যে বোনেন সেথায় পদ্মরেণুর শাড়ি
দুই কন্যে সাজান বাগান পান্না চুনির আলোয়
তিন কন্যে আঁকেন ছবি সাদা সবুজ কালোয়

বাড়ির দোরে শিকল বাঁধা দুধ রঙা দুই হাতি
শ্যাওলা রঙা জলের নিচে জ্বলছে হাজার বাতি
প্রবাল গাঁথা সিংহাসনের চুড়োয় সোনার তাজ
তিন কন্যের মনে তবু সুখ নেইকো আজ

রাজা গেছেন যুদ্ধ জয়ে, রানিও গেছেন পিছে
এক কন্যে বলেন, এসব বাগান আলো মিছে
ফিরিয়ে আনি মা-বাবাকে কেউ যদি দেয় খোঁজ
দুই কন্যে বলেন, আমি আলো সাজাই রোজ

আসবে ফিরে সবাই কেবল এই আশাতে থাকি
ছোট বলেন, আমিও তাঁদের ফেরার স্বপন আঁকি।
যুদ্ধ কোথায় কোন সুদূরে সব ভুলে এক মনে
ফিরবে মা-বাপ এ ভরসায় কন্যেরা দিন গোনে

দিন কেটে যায় রাত ঘুরে যায় তিন বোনেদের দোরে
হঠাৎ জলে ঢেউ ওঠে এক শ্রাবণমাসের ভোরে
দাঁড় ছপছপ আওয়াজ ওঠে সঙ্গে বাজে ভেরি
তিন কন্যের মুখে হাসি, আর নেই বোন দেরি

যুদ্ধজয়ী রাজা ফেরেন সঙ্গে ফেরেন রানি
জলপ্রাসাদের অলিন্দে আজ খুশির কানাকানি
রাজা রানি তিন কন্যের স্ফটিক জলের ঘরে
এখন কেবল রঙিন মাছ আর পদ্ম খেলা করে
_____
ছবিঃ অতনু দেব

ছড়া-কবিতা:: এক ঝুড়ি বিল্লি - মধুমিতা ভট্টাচার্য


এক ঝুড়ি বিল্লি
মধুমিতা ভট্টাচার্য

এক ঝুড়ি বিল্লি
যাচ্ছিল দিল্লি
গায়ে দিয়ে পশমিনা শালটা
আহ্লাদে ম্যাও সুরে
গান গেয়ে ঘুরে ঘুরে
টেবিলেতে ঠুকে নিল তালটা।
দাদরা না ঝাঁপতাল
তেওড়া কি তিনতাল
তেরেকেটে মেরেকেটে ধিন তা
দিল্লিতে গরমে
হাঁসফাঁস চরমে
শাল নিয়ে কি ভীষণ চিন্তা
দাদী বলে সুইটি
ডার্লিং কিউটি
ডোন্ট ওরি, ইট ইস তো নরমাল
ইয়ুআ মা' বিউটি
বেবি মিউমিউটি
ঝুড়ি তো ডিজাইনার ফরমাল।
মিউ বলে দুচ্ছাই
চলে যাই মুম্বাই
তার আগে নাক ডাকি জমিয়ে
আরামের ঝুড়িতে
গুটিসুটি ভুঁড়িতে
ইচ্ছেখুশিতে থাকি ঘুমিয়ে।
_____
ছবিঃ লিয়ন হুবার (আন্তর্জাল)

ছড়া-কবিতা:: ছড়া - অমিতাভ প্রামাণিক


ছড়া
অমিতাভ প্রামাণিক

ছড়াতে সবাই খুশি (পশু মানে যদি পোষ),
ছড়ার ছররা নিয়ে তাই যাদু-প্রদীপও।
তোরা তো মজারু ভারী, মোটে পাখিপড়া নোস
কী রকম ছড়া চাই? নুন-ঝাল ছড়ানো?
ইস্কুল বন্ধ যে, তাই নেই পিটিএম
ছড়ার ওপরে দেব আমচুর ছিটিয়ে?
একটা দারুণ ছড়া পড়লাম কাল যা!
মিঠে-মিঠে, টক-টক, নুন-নুন, ঝাল-ঝাল।
ঠিক মিলেমিশে হলে যে রকম ছড়াটা
দেখলেই পছন্দ, লাগেও না পড়া তার,
সে রকমই গোলগাল, সে রকমই অদ্ভুত।
যেমন মিষ্টি স্বাদ, গায়ে নেই বদবু!
অন্য ছড়ার মতো হিংসুটে-বদমাশ
মোটে নয়, ঠিক যেন ধবধবে কদমা!
সে রকম ছড়া নিবি? নাকি নিবি আস্ত
ফজলি আমের মতো লম্বাটে, বাস্তব?
সজনে ডাঁটার মতো যারা ঝোলে দেয়ালে,
তাদের তো পছন্দ করে না রে শেয়ালেই!
তার চেয়ে যে রকম ছড়া বলে দিদু রে,
যে রকম ছড়া শুনে খুশি হয় ইঁদুরেও,
সে রকম কয়েকটা লিখে দিই এখানে?
ইস্কুল বন্ধ তো, ধারাপাত শেখা নেই।
ক্লাশ নেই, টিউশন, পরীক্ষা-তরাসও
এইবেলা ছড়া পড়্‌, ছড়া লেখ্‌, ছড়া শোন্‌।
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল

ছড়া-কবিতা:: কান্তপুরের কথা - দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী


কান্তপুরের কথা
দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী

কান্তপুরের পান্তো রাজা সবাই তাকে মানত
তার দুটি ভাই খাজা, গজা ছিল ভীষণ শান্ত

সুন্দরী তার বোনটির নাম লবঙ্গ-লতিকা
মিঠে-কড়া স্বভাবটি, আর বড়োই সুরসিকা

রাজার আছে ভিনদেশি বৌ ম্যাডাম লেডিকেনি
মণ্ডা এবং মিঠাই নামে তার পোষা দুই মেনি

রাজার পিসি অমৃতি রায় লেখেন ভালো গদ্য
বুঁদিগড়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন দেখে এলাম সদ্য

পিসেমশাই গোয়েন্দা এক শুধুই করেন সন্দ
সন্দেশ যেই পান ছুটে যান ঘটলে কোথাও মন্দ

রাবড়ি দিদি খবর পড়েন জিলিপি চ্যানেলে
সরপুরিয়া কলেজে তার পড়তে গেল ছেলে

রাজার জামাই ক্ষীরমোহনের বরফিগঞ্জে বাস
রাজার মামা স্বভাবকবি চন্দ্রপুলি দাস
_____
ছবিঃ নচিকেতা মাহাত

ছড়া-কবিতা:: দুটি ছড়া - সিদ্ধার্থ সিংহ

দুটি ছড়া
সিদ্ধার্থ সিংহ

(১)


বাসে উঠতেই

বই দিয়েছি, পেন দিয়েছি
সঙ্গে লেখার খাঁচা
ও কেবলই টানছে বালিশ
পুরোনো লেপ-কাঁথা।

দুধ দিয়েছি, কলা দিয়েছি
সঙ্গে সেঁকা রুটি
আধ ঘণ্টা পরেও দেখি
খেলছে কাটাকুটি।

তেল শ্যাম্পু সাবান দিয়ে
বলছি চানে যা না
এসে দেখি হাঁ করে সে
দেখছে কাকের ছানা।

ব্যাগ দিয়েছি, সঙ্গে টিফিন
বোতল ভরা জল
বাসে উঠতেই রাস্তাখানা
আনন্দে ঝলমল।
_____

(২)


বলব না

এই ছিল তারাগুলো
কই গেল? কই?
হঠাৎ কে ঢেলে দিল
ফুটফুটে খই?

এ ডালে ও ডালে ফোটে
টপাটপ ফুল,
ঝটপট ভেঙে যায়
যাবতীয় ভুল।

শিস দিয়ে উড়ে গেল
রঙদার পাখি,
দেরি হলে খুঁজবে না
ওর বাবা-মা কি?

ওই তো উঠেছে চাঁদ
চাঁদোয়ার গায়ে,
বলব না তার নাম
রয়েছে যে বাঁয়ে।
_____
ছবিঃ সুমিত রায়

ছড়া-কবিতা:: দু'টি কবিতা - হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

দু'টি কবিতা
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ১।।



এই দেখো এই আমার দিকে
আমি একটা গোটা মানুষ
মানুষ ছাড়া আর যা কিছু
সবই জেনো মিথ্যে ফানুস।

তোমার মতো আমিও ঠিক
দুঃখ পেলে কাঁদতে পারি
গভীর দুঃখে তোমার কাছে
খুলব আমি মনের হাঁড়ি।

তোমার ভালোই আমার ভালো
সবার ভালোয় আমরা হাসি
তোমার সাথে জড়িয়ে আমি
বাজাব এক আলোর বাঁশি।

আমি মানুষ ------ এই পরিচয়
বর্ণে ধর্মে কী আসে যায়
সব মানুষের মনের ঘরে
লালন কবীর গান গেয়ে যায়।

।। ২।।


খাবার আগে তাকিয়ে দেখো
কে পায়নি আজকে খাবার
সবার মুখে খাবার তুলে
তোমার খাবার সময় এবার।
নিজের পেটে খাওয়া মানেই
পাপের বোঝা বেড়ে যাওয়া
সবার কথা ভাবে যে জন
তার খাওয়াটাই আসল খাওয়া।
_____
ছবিঃ অতনু দেব

ছড়া-কবিতা:: ভোরের আশায় - রূপসা ব্যানার্জী


ভোরের আশায়
রূপসা ব্যানার্জী

বর্ষাদিনে ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি যখন ঝরছে,
পিছলে কাদায়... ফুটবল পায়ে... বড্ড মনে পড়ছে
আবার যখন ঝলমলে রোদ, সূয্যি মামা হাসছে
তোদের সাথে ক্রিকেট খেলার দৃশ্য চোখে ভাসছে
রথের মেলায় পাঁপড়ভাজা, ফুচকা এবং ঘুগনি,
মস্ত উঁচু নাগরদোলার ঘোর লাগানো ঘূর্ণি;
কোচিং ক্লাসে কামাই করে মুভি দেখার ফন্দি -
সে সব শুধুই চার-দেয়ালে স্মৃতির পাতায় বন্দি
লকডাউনের দীর্ঘ সময় কাটতে মোটেই চায় না,
অবাধ্য মন ধরছে কেবল আড্ডা দেওয়ার বায়না
চল না সবাই দুধের সোয়াদ মেটাই ঘোলে অল্প,
অনলাইনে লাইভ চ্যাটে জমিয়ে করি গল্প
না হয় ধরে ভার্চুয়ালি সবাই সবার হাতটা -
ভোরের আশায় দিই কাটিয়ে গভীর কালো রাতটা
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল