ইয়েলবং রহস্য
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
পাড়ার পিকনিকে ঘিস নদী আর
তিস্তার সঙ্গমে এসেছিল রুবাইরা। সিএমওএইচের একটা মিটিং থাকায় ওর
বাবা ডঃ রাজেশ বাবু এই পিকনিকে আসতে পারেননি এবার। রুবাইয়ের মা, অন্বয়-দার মা
আর পাড়ার কাকিমারা সবাই অন্তাক্ষরী খেলতে ব্যস্ত। রিয়ারা কয়েকজন ব্যাডমিন্টন খেলছে। রিয়ার বাবা আর শম্ভু জেঠু রান্নার তদারকিতে ব্যস্ত। রাজীব,
তনয় আর বলু ফুটবল নিয়ে বালির চরে নেমে পড়েছে।
রুবাই অন্বয়দার সঙ্গে নতুন কেনা বাইনোকুলার দিয়ে পাখি দেখতে নেমেছিল বালির চরে। শীতে প্রচুর বিদেশী পাখি আসে এখানে। বাকি বন্ধুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্প করছিল। দাস কাকু ঘোষণা করল খাবার তৈরি, ছোটোদের প্রথম ব্যাচে বসিয়ে দিতে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই খেতে বসে পড়ল। ভাত, ডাল, বেগুনি,
ফুলকপির কোপ্তা আর পাঁঠার মাংস, শেষ পাতে চাটনির পর নলেন গুড়ের সন্দেশ - জব্বর খাওয়া। খাওয়ার পর
নদীর জলে হাত ধুয়ে ওঠার সময়ই রুবাই দেখতে পায় জলের ধারে বালিতে খালি বোতলটা। একটা ফাঁকা কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল, কিন্তু ভিতরে কী যেন একটা ভরা।
“এখানেও পরিবেশ দূষণ,
পিকনিকে এসেই সবাই এসব নোংরা ফেলে যায়,” বলে বালির মধ্যে প্রায় গেঁথে যাওয়া বোতলটা টেনে তোলে রুবাই। কোকা কোলার বোতল। ভেতরে একটা কালচে মেরুন পাথর আর একটা ভাঁজ করা কাগজ দেখে রুবাইয়ের কৌতূহল বেড়ে যায়।
“সিকিমের গুরুদোংমার লেক থেকে ‘হু’ কয়েক ট্রাক ময়লা তুলেছিল। তার মধ্যে হাজার হাজার পানীয়ের বোতল ছিল, জানিস। তাই এখন লাচেন গ্রামে বোতলের জল
এলাউ না। টুরিস্টরাই গ্ৰামকে নোংরা করছিল। এখন গ্ৰামটাকে ওরা পরিষ্কার রাখছে এভাবেই,” অন্বয়দা বোতলটা দেখে বলে।
রুবাই বোতলটা খুলে কাগজটা বার করার চেষ্টা করছে দেখে অন্বয় বলে, “কী রে
ওটা?”
“একটা কাগজ রয়েছে,
দেখ তো বার করা যায় কিনা?” রুবাই বোতলটা এগিয়ে দেয়।
একটু চেষ্টা করেই কাগজ আর
কালচে মেরুন পাথরটা বার করে ফেলে অন্বয়। রুবাইদের পাড়ার ছেলে অন্বয় আবার ওদের স্কুলের গেম টিচার। রুবাইয়ের ক্যারাটের গুরুও অন্বয়। আগেও কয়েকবার সে
জড়িয়ে পড়েছে রুবাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন রহস্য উদঘাটনে। বয়সে রুবাই বেশ ছোটো হলেও অন্বয় জানে রুবাই খুব বুদ্ধিমান। কাগজটায় সুন্দর অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে কয়েকটা লাইন।
‘জল বেড়েই চলেছে চুকুলঢুক নদীর, আমরা আটকে গেছি এই গুহায়। জানি না বেঁচে ফিরতে পারব কিনা। তবে এই গুহার ভেতর রয়েছে বেশ কিছু রহস্য। শীতে জল কমলে এই রহস্য উদঘাটনে আসতে হবে। এই পাথরটা পরীক্ষা করলে কিছু পাওয়া যাবে হয়তো। আমরা তিনজন রয়েছি এখানে। সাহায্য চাই।
ডঃ গ্ৰাহাম জন।
12/9/2018 ’
অন্বয় কাগজটা উলটেপালটে দেখে রুবাইয়ের হাতে দেয়।
রুবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলে, “একজন অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক নিখোঁজ হয়েছিল গত
বছর পেপারে পড়েছিলাম, সেটা কি এই লোকটা?”
“ধুর,
কেউ মজা করার জন্য করে থাকতে পারে। এমন মজা অনেকেই করে,” অন্বয়দা পাত্তাই দেয় না।
“এমন ঝরঝরে ইংরেজি লেখা,
বোতলে ভরে কে ফেলবে... অবশ্য কাছেই ডন বস্কোর হোস্টেল রয়েছে। তাছাড়া এখানে পিকনিক করতেও আসে কত
পার্টি। কী জানি!” রুবাই আপন মনে বলে।
“আর লেখাটা যদি সত্যিও হয়
এ লোক তো মরে ভূত হয়ে গেছে। দেড় বছর হতে চলল প্রায়। তারিখটা দেখেছিস!” অন্বয় কথাটা বলেই স্মার্ট ফোনে সার্চ করতে শুরু করে।
গ্ৰাহাম জন
বলে এক পর্যটক উত্তরবঙ্গে এসে নিখোঁজ হয়েছিল গত বছর, পাওয়া গেল। কিন্তু এর
বেশি কিছুই নেই নেটে। লোকটা চুইখিমের কাছে ইয়েলবং-এ একটা এনজিও চালাত।
“এই ইয়েলবংটা কোথায়?
আর চুকুলঢুক নদীর নাম শুনিনি কখনও, সেটাই বা কোথায়?”
“নামটা আমিও প্রথম শুনলাম,” রুবাই পাথরটা হাতে নিয়ে দেখছিল। কয়লার মতো হলেও নরম পাথর,
আগে এমন পাথর ও দেখেনি।
রুবাইয়ের বাবা ডঃ
রাজেশ বাবু মিটিং শেষে সন্ধ্যায় বাড়িতেই ছিলেন। রুবাই পিকনিক থেকে বাড়ি ফিরেই বাবাকে সবটা খুলে বলল। অন্বয়দাও ছিল সঙ্গে। ওর মা
সব শুনে বলেছেন কাল পাশের বাড়ির ফিজিক্সের রম্যাণীদিকে দেখাবে পাথরটা। ও
ফিজিক্সের প্রফেসার। হয়তো কিছু বলতে পারবে।
রুবাইয়ের মা
শ্রমণা দেবী মেয়েদের স্কুলের প্রিন্সিপাল। আর
বাবা হসপিটালের সুপার। উনি চিঠিটা এক ঝলক দেখেই পাথরটা দেখতে চাইলেন। সরু পাথরটা কালচে মেরুন রঙের জমাট বাঁধা রক্তের মতো। চুকুলঢুক নদীর কথা উনিও জানেন না। তবে ইয়েলবং জায়গাটা চেনেন। বাগরা কোট বাগানের উপর চুইখিমের কাছে একটা ছোট্ট গ্ৰামের নাম ইয়েলবং। উনি মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে গেছিলেন একবার বললেন।
ওঁর এক
পেশেন্ট ডেভিড ইয়েলবং-এ থাকেন, উনি তক্ষুনি ফোন করলেন নিজেই। ওধার থেকে সারা পেতেই উনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন গ্ৰাহাম জনের ব্যাপারে জানতে চান। দু-একবার হু হা করেই ফোন ছেড়ে উনি অন্বয় আর রুবাইকে বললেন, “গ্রাহাম জন চুইখিম হয়ে ইয়েলবং গিয়েছিল, কিন্তু সেখান থেকেই উধাও হয়ে যায়। তবে এমনভাবে লোকটা আগেও উধাও হয়েছে। লোকটা প্রকৃতিকে ভালোবাসত। তাই প্রথম দু-চারদিন ডেভিডরা চিন্তা করেনি। তারপর ও খোঁজ নেয় আর জানতে পারে ইয়েলবং গ্ৰামের দুটো ছেলেকে নিয়ে ও হারিয়ে গেছিল। ওদের আর
পাওয়া যায়নি।”
“ইয়েলবং...
নামটা নতুন শুনছি। জায়গাটা তো
কাছেই, কাল ভাবছি একবার ঘুরে আসব,” অন্বয় বলে।
“আমিও যেতে চাই। প্লিজ!” রুবাই উৎসাহিত হয়ে যায়। বাবা-মা আজকাল আর
ওকে এসব কাজে বাধা দেয় না। আর
অন্বয়দাকে সবাই পছন্দ করে।
পরদিন অন্বয়দা বাইক নিয়েই রুবাইকে নিয়ে সকাল সকাল রওনা দেয়। মাত্র বত্রিশ কিলোমিটার মতো পথ। বাগরা কোট চা
বাগানকে পিছনে ফেলে বাইক যখন পাহাড়ে উঠতে শুরু করে বহুদূরে ছবির মতো তিস্তাকে দেখা যায়। একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ায় অন্বয়। নিচে যতদূর দৃষ্টিতে ধরা পড়ে সম্পূর্ণ তরাই অঞ্চল বাঁধা পড়েছে এক ফ্রেমে। ধোঁয়া ধোঁয়া পাহাড়,
নদী, অরণ্য আর মেঘের লুকোচুরি, এ যেন এক রূপকথার দেশ।
“এখানে মাটিতে খেয়াল করে দেখ, অনেক কয়লা দেখতে পাবি। এই অঞ্চলে অনেক কয়লা খনি ছিল একসময়,” অন্বয়দা একটা ছোট্ট পাথর তুলে রুবাইয়ের হাতে দেয়। বলে, “তবে এখন সরকার থেকে কয়লা তোলা বারণ। কয়লার কোয়ালিটি ভালো নয়, আর এলাকাটা ধ্বসপ্রবণ। এমনিতেই এই উত্তরবঙ্গ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যখন তখন হড়পা বান আসে নদীতে। তাই বন্ধ হয়ে গেছিল খনিগুলো। তবুও এখনও কিছু স্থানীয় গরীব লোক এখানে চুরি করে কয়লা তোলে।”
একটা বাইক নেমে আসছিল পাহাড়ের উপর থেকে,
চালকের থেকে ইয়েলবং-এর পথ জেনে নিয়ে রুবাইরা এগিয়ে চলে। চালক বলে দেয় চুইখিমের পাঁচ কিমি আগেই ডানদিকে একটা সরু পথ
পাওয়া যাবে, ওটাই ইয়েলবং গ্ৰামে গেছে। সেই ডানদিকের পথটা দিয়ে কিছুক্ষণ পর ওরা একটা পাহাড়ের মাথায় উঠে আসে। ছবির মতো সুন্দর সাজানো কিছু বাড়ি,
জুম চাষের খেত আর আদিম কিছু গাছ নিয়েই ইয়েলবং। ওরা গ্ৰামে ঢুকতেই এগিয়ে এল
ডেভিডের সঙ্গে ফ্রেড্রিক বলে একজন, ওরা কোথা থেকে এসেছে, থাকবে কিনা এসব জেনে নিল। ডেভিডের দুটো হোম-স্টে রয়েছে। আপাতত খালি আছে। তিন দিন পর
একটা গ্ৰুপ আসবে, তাও বলল। অন্বয় আর
রুবাই থাকবে বলে আসেনি। ওরা সরাসরি ডেভিড আর ফ্রেড্রিককে জন গ্ৰাহামের হারিয়ে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করে।
ফ্রেড্রিক একটা বাড়ির সামনে বাঁশের মাচায় বসায় ওদের। দূরের পাহাড়ের গায়ে সাদা তুষারের প্রলেপ বলছে শীত আসছে। সেদিকে তাকিয়ে ও বলে, “মিঃ জন আগেও দু’বার এসেছেন এনজিওর কাজে। গতবার উনি গ্রাম্য দুটো ছেলেকে নিয়ে ট্রেকে বেরিয়ে আর
ফেরেননি।”
“ট্রেক করে কোথায় যাচ্ছিল ওঁরা?” রুবাই জিজ্ঞেস করে।
“রোভার্স কেভের নাম শুনেছ?”
“সে তো
বিদেশে, অবশ্য দেরাদুনেও একটা আছে বাবা বলেছিল,” রুবাই বলে।
“এখানেও একটা আছে,
চুকুলঢুক নদীতে, ছোটো, কিন্তু আরও ভয়ঙ্কর এবং দুর্গম। সেটার টানে কিছু বিদেশী পর্যটক আসে।”
“চুকুলঢুক নদীর নামটা শুনেছি!
কোথায় এই নদীটা?”
“তুমি চুকুলঢুকের নামও জানো!” এবার একটু বিস্মিত হয় ফ্রেড্রিক।
ডেভিড বলে, “চুকুলঢুক ও
রুমতি খোলার মিলিত স্রোত ঘিস নদী যা নিচে গিয়ে তিস্তায় মিশেছে। এই
চুকুলঢুক বড্ড দুর্গম। কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর। এই নদীতেই ট্রেক করে অনেকে। নেওড়া ভ্যালি অরণ্যর শুরু এখান থেকেই।”
“তিনটে লোক এভাবে মিসিং হয়ে গেল তোমরা কিছু করলে না?” অন্বয়দা অবাক হয়।
“আসলে ডঃ
জন এর আগেও দু-চারদিন ট্রেক করে এদিকে ওদিক গেছেন। তাই প্রথমে বুঝিনি যে
হারিয়ে গেছেন। তাছাড়া প্রবল বর্ষায় নদীর জল
ভীষণ বেড়ে গেছিল সে সময়। কিন্তু এক
সপ্তাহ পর যখন ফিরল না কয়েকজন রোভার্স কেভে গেছিল। রুমতি নদীর চরে ওদের তাঁবু এবং ব্যাগ সব
পড়েছিল। কিন্তু ওরা কোথাও ছিল না। ওদিকে নদীর জল বেড়েই চলেছিল। তখন পুলিশে খবর দেওয়া হয়।”
“ঐ অঞ্চলে গুহা আছে?” অন্বয়দা বলে।
“অনেক গুহা,
চুকুলঢুক তো গুহা আর গিরিখাত দিয়েই বেরিয়ে এসেছে।”
“আমাদের নিয়ে যাবে একবার?” রুবাই বলে।
“ডঃ জন
তো এক বছরের বেশি নিখোঁজ, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট আর পুলিশ অনেক খুঁজেছে।ওদের পায়নি।”
অন্বয়দা পকেট থেকে প্লাস্টিকের ল্যামিনেট করা কাগজটা বের করে। ওটা কালকেই ল্যামিনেট করে নিয়েছিল ও। বলে, “ওঁর হাতের লেখা কি
চেন? এটা দেখ তো একবার?”
ফ্রেড্রিক কাগজটা নিয়ে অবাক হয়ে দেখে। তারপর বলে, “ওঁর কয়েকটা চিঠি ছিল আমার কাছে। মিলিয়ে দেখতেই পারি।”
কিছুক্ষণ পর
চিঠির ফাইল এনে দেখা হল, মনে তো হয়
একই লেখা। ফ্রেড্রিকের প্রশ্নে অন্বয়দা জানাল কী
করে জিনিসটা পাওয়া গেছে।
একটু পরে রুবাইয়ের বাবা ফোন করেছিল ওরা কত দূর জানার জন্য, ও বাবাকে জানায় চুকুলঢুক নদীর খোঁজ পাওয়া গেছে। গুহাও রয়েছে ঐ
অঞ্চলে। অন্বয়দা বলে দেয় ওদের ফিরতে দেরি হবে,
চিন্তা করতে না।
অন্বয় ওদের সঙ্গে আলোচনা করে বলে যে
ওরা রোভার্স কেভে যাবে।
কিন্তু ফ্রেড্রিক বলে, “বাচ্চারা ও
পথে যেতেই পারবে না। বড্ড দুর্গম,
খাড়া এবং পিছল রাস্তা, কোথাও কোমরে দড়ি বেঁধে, কোথাও হামাগুড়ি দিয়ে কখনও বা সাঁতার কেটে এগোতে হবে। মোবাইল ক্যামেরা প্যাক করে প্লাস্টিক পাউচে নিতে হবে। তুমি তো বাচ্চা, তুমি কি সাঁতার জান?”
রুবাই সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন,
মালবাজারের
পাশে একটা টি গার্ডেনের ক্লাবে ও সাঁতার শিখতে যায়।
আর ও এখন সেভেনে পড়ে, তাই বাচ্চা বললে ওর খুব রাগ হয় ওর। কারণ বেশ কয়েকটা রহস্য সমাধানের পর
ওকে এলাকায় সবাই বেশ গুরুত্ব দেয়।
অন্বয়দা ব্যাপারটা জানে। তাই বলে, “ও পারবে, ও স্কাউটের ছেলে, ট্রেকে গেছে, ক্লাইম্বিংও জানে।
ওকে নিয়ে চিন্তা নেই।”
“কিন্তু বেলা প্রায় এগারোটা, এখন গেলে ফিরতে তো বিকেল নয়... সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আমরা দুপুরে গেলে আর ফিরি না সেদিন। পরদিন ফিরি।”
“আজকেই ফিরব। চলো ঘুরেই আসি।”
“জল বেশি হলে আপনাদের জামাকাপড় তো
ভিজে যাবে।
শুকনো পোশাক এনেছেন?”
“ফুলপ্যান্ট আর
জ্যাকেট খুলে পিঠের ব্যাগে রেখে যাচ্ছি। এই
শীতকালে নিচের ঘিস নদীতে তো জল নেই, ওপরে সাঁতার কাটতে হবে?
এত জল থাকবে?” অন্বয়দা বলে।
একটু দোনোমনা করে ফ্রেড্রিক রাজি হয়। ওদের বাড়ি লোকাল মুরগির ডিমের ঝোল, লাল মোটা চালের ভাত আর
পাহাড়ি আলুর চোখা খেয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ে রোভার্স কেভ আর চুকুলঢুকের উদ্দেশে।
আদিম অরণ্য পার হয়ে ঝরা পাতায় ঢাকা পথে ওরা চলেছে প্রাগৈতিহাসিক গুহার সন্ধানে। কে জানে কী
রহস্যের খোঁজ ডঃ জন পেয়েছিলেন! কিছুটা শ্যাওলায় মোড়া পিচ্ছিল উৎরাই পথ পার হয়ে ওরা এসে পৌঁছায় এক গিরিখাতের মাঝে। টারজানের বইতে এমন গিরিখাতের কথা পড়েছে রুবাই। বাড়ির এত কাছে এমন রহস্যে ঘেরা অঞ্চল রয়েছে অন্বয়ও জানত না। অবাক বিস্ময়ে ওরা দেখছিল গভীর খাতের ভেতর রূপার মতো চিকচিক করছে সরু জলরাশি। ফ্রেডিক বলে এ পথে নয়, আরেকটু এগিয়ে গিয়ে নামতে হবে। পথ অসম্ভব পিচ্ছিল। রুবাই দু’বার আছাড় খেতে খেতে বেঁচেছে।
আরও দুশো মিটার এগিয়ে একটা বড়ো গাছের ঝুরি ধরে খাড়া পথে ওরা একে একে নেমে পড়ল গিরিখাতের ভিতর,
দু’ধারে শ্যাওলা মাখা দেয়ালে পা ঠেকিয়ে হাতের উপর শরীরের ভারসাম্য রেখে এভাবেই এগোতে হবে। ফ্রেডিকের দেখাদেখি এভাবেই এগিয়ে চলে ওরা,
কিছুটা চলার পর গিরিখাত বেশ চওড়া হয়েছে, এবার একটা দড়ি ধরে ওরা নেমে পড়ে জলধারার বুকে।
ফ্রেড্রিক বলে, “শীতকাল বলে এখন পায়ের পাতা ভেজা জল। বর্ষায় মানুষ ডোবা জল থাকে এখানে। ঐ
দেখুন জলের দাগ।”
অন্বয়ের মাথারও বেশ কিছুটা ওপরে মরা হলুদ শ্যাওলা দেখে ওরা বোঝে ওটা জলের দাগ।
“আর সেই জলে থাকে মারাত্মক স্রোত। দু’জন বিদেশী পর্যটক ঐ স্রোতে ভেসে গেছিল এই বর্ষায়। তবুও অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় মেতে উঠতে ভালোবাসে বিদেশিরা,” ফ্রেড্রিক তার হাতের লাঠিটা দিয়ে মাকড়সার জাল পরিষ্কার করতে করতে এগোয় আর
গল্প করে।
দু’ধার থেকে চেনা অচেনা গাছের শিকড় নেমে এসেছে। হঠাৎ সামনে ওরা দেখতে পায় একটি সরু গুহামুখ। রুবাই লাফিয়ে ওঠে,
শীর্ণ হলুদ জলধারা বয়ে আসছে গুহার ভেতর থেকে। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ওরা গুহায় ঢোকে,
কিন্তু কিছুটা গিয়েই গুহাটা শেষ, পাথরের ফাটল চুইয়ে নামছে জলধারা। রুবাই কান রাখে পাথরের গায়ে,
কোনও বইতে পড়েছিল পাথরের পিছনে নদী বা আবদ্ধ জল লুকিয়ে থাকলে সেই পাথরে জলের আওয়াজ পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছুই টের পায় না। দু’জন আবার ফিরে চলে শীর্ণ নদীর দিকে। দুটো পাথরের ফাটল পার করে সরু অংশ দিয়ে বেরিয়ে এসেই দেখতে পায় দ্বিতীয় গুহাটা।
ফ্রেড্রিক বলে, “এটা আমরা খুঁজে দেখেছি,
গুহাটা এক কিলোমিটার লম্বা। কিন্তু কিছুই পাইনি।”
তৃতীয় গুহার মুখ খুব সরু। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয়। ভেতরটা অবশ্য বড়ো। কিন্তু এতেও কোনও ক্লু পাওয়া গেল না। আরও কিছুটা সঙ্কীর্ণ পথে এগিয়ে শুরু হল
চড়াই পথ। চুকুলঢুক বয়ে এনেছে বড়ো বড়ো পাথর। সেই সব পাথরে পা দিয়েই আস্তে আস্তে উপরে উঠতে শুরু করল ওরা। সামনেই আরেকটা গুহা। তবে কিছুটা যেতেই বেশ সরু। তাছাড়া এটায় জল
ঢোকে না। তাই ওরা বেরিয়ে এল। রুমতি খোলার দিকটাও হেঁটে দেখে এল, কিন্তু এর মধ্যে কোন গুহায় আটকে পড়েছিলেন ডঃ জন বোঝা গেল না। দুটো গুহার মুখের কাছে বেশ জল
জমে রয়েছে।
রুবাই বলে, “ডঃ জন
লিখেছিলেন গুহায় জল বাড়ছে, তার মানে এই গুহাগুলোও হতে পারে।”
“এগুলো বর্ষায় জলে ভরা থাকে,
তখন ঢোকা যায় না। উনি এসব গুহায় ঢুকতে পারতেন না,” ফ্রেড্রিক বলে।
সূর্যের আলো হলুদ থেকে কমলা হয়ে এসেছে,
ঘরে ফেরা পাখির দলের কলতান শুনে অন্বয়দা বলল, “আজ ফিরে যেতে হবে আমাদের। তবে আমরা আবার আসব। একজন বিদেশী এভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে তা জেনে কি চুপ করে বসে থাকা যায়?”
হাঁটু জল
ভেঙে রুমতি খোলা পার হয়ে এবার ফেরার পথ ধরল ওরা। দুটো সরু ঝরনার থেকে তিরতির করে জল
পড়ছে। বর্ষায় যে
এগুলো বিশাল হয়ে ওঠে আশেপাশের পাহাড় তার সাক্ষী। আবার পাহাড় বেয়ে গাছের শিকড় ধরে শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে উপরে ওঠা শুরু। বেশ কষ্টকর,
হাঁপিয়ে যাচ্ছিল ওরা, অথচ একটানা উঠতে হবে, বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই। ফ্রেড্রিক প্রথমে, তারপর অন্বয়দা,
শেষে রুবাই। হঠাৎ কী
হল যেন, রুবাই যে গাছের ঝুড়িটা ধরে উঠছিল কী
করে যেন ছিঁড়ে গেল, আর মুহূর্তের মধ্যে রুবাই পপাত ধরণীতল। মাত্র এক ফুট চওড়া গিরিখাতের দু’দিকে পাথুরে দেয়ালের ঘষায় ওর কাঁধ, হাত, কনুই সব ছড়ে গেছিল।
তবে ও
পড়েছে যেখানে ঠিক সেখানে জলের নিচে অল্প বালি ছিল বলে হাত পা ভাঙেনি। সামনেই একটা বড়ো পাথর ছিল,
এক চুল এদিক ওদিক হলে ঐ পাথরের উপর পড়ে চিঁড়ে-চ্যাপটা হয়ে যেত রুবাই। ওর
হাঁটুর কাছটা বালিতে ছড়ে গিয়ে রক্ত ঝরছিল।
একটা পাথরে ভর
দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ও চিৎকার করে, “অন্বয়দা? তোমরা কোথায়?”
তর
তর করে নেমে আসে উপর থেকে দু’জন। অন্বয়দার মুখ শুকিয়ে গেছে, রুবাইকে তার ভরসায় ছেড়েছে ওর মা-বাবা। ও
সুস্থ আছে, উঠে দাঁড়িয়েছে দেখে শান্তি পায় দু’জনেই। ফ্রেড্রিক ওর
হাঁটু আর কনুই দেখে কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু রুবাই অবাক হয়ে দেখে সামনের বড়ো পাথরটার নিচ দিয়ে জলের ধারা বেরিয়ে আসছে এবং চুকুলঢুকে মিশছে। হঠাৎ ও জলের ভেতর থেকে একটা কালচে খয়েরি পাথর তুলে ধরে। গাছের ছায়া ও
দু’ধারের খাড়া দেয়াল ভেদ করে সূর্যের আলো প্রায় ঢোকেই না এখানে। কিন্তু কালো পাথরটা দেখে রুবাইয়ের দু’চোখ জ্বলছে,
বড়ো পাথরটার পাশ দিয়ে একটা ফোকর রয়েছে, হাঁটুর নিচে জলের স্রোত পাক খাচ্ছে।
রুবাই অন্বয়দাকে বলে, “মোবাইলটা বার করে একটু জ্বালাও। এই ফোকরের ভেতরটা দেখব।”
মোবাইলের আলোয় যা
বোঝা গেল গুহাটা বেশ বড়ো। একটু কষ্ট করে ছেঁচড়ে ঐ গুহায় ঢুকে পড়ে রুবাই, ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, পায়ের নিচে জলস্রোত বয়ে চলেছে। চোখ সয়ে যেতেই দেখল সামনে একটু সরু হয়ে এগিয়ে গিয়ে গুহাটার তিনটে মুখ রয়েছে। একটা নিচু হয়ে উত্তর দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছে। বাকি দুটো এঁকেবেঁকে পূব দিকে এগিয়ে গেছে।
অন্বয় ততক্ষণে ঢুকে পড়েছে ওর
পেছনে, ফ্রেড্রিক অবশ্য বাইরেই ছিল। জলের নিচে মোবাইলের আলো ফেলে রুবাই দেখল নুড়ি পাথর রয়েছে, কিন্তু অমন কালচে খয়েরি পাথর আর
নেই। উত্তরের গুহার ভেতরটাও এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলেছে,
ওরাও এগিয়ে যায় কিছুটা, সামনে আবার দুটো গুহামুখ, তিরতির করে জল বয়ে চলেছে দু’দিক থেকেই।
“আমার মনে হয়
এটাই সেই গুহা...” রুবাই বলে।
“কিন্তু বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে। এবার ফিরতে হবে। জায়গাটা তো পেলাম। পরে একদিন আসব। চল, আজ ফিরে যাই।”
ইচ্ছা না
থাকলেও রুবাই অন্বয়ের অবাধ্য হতে পারে না কখনও। তাছাড়া অন্ধকারে কিছু দেখাও যাচ্ছিল না। পরে আসবে ভেবেই ফেরার পথ ধরে ওরা। কিন্তু কিছুটা হেঁটে এসে দেখে গুহাটার আরও দুটো মুখ,
যাওয়ার সময় তো দেখেনি! আন্দাজে হেঁটে আসে কিছুটা কিন্তু ওরা ঐ বড়ো পাথরের খাঁজটা খুঁজে পায় না। দু’চার পাক ঘুরে দু’জন দু’জনের দিকে তাকায়,
মোবাইলের আলো কমে আসছে। অন্বয়দা বলে, “জলের স্রোত দেখে এগোতে হবে।”
“কিন্তু জল
তো দু-তিনটে পথ দিয়ে বাইরে যাচ্ছে, দিনের আলো থাকলে বাইরের দিকের মুখটা দিয়ে আলো আসত। বাইরে অন্ধকার বলে আমরা কিছু দেখতেও পাচ্ছি না,” রুবাই বলে।
সামনে একটা বড়ো পাথর দেখে অন্বয় চিৎকার করে ডাকে, “ফ্রেড্রিক...” প্রতিধ্বনি ধাক্কা খায় গুহার দেয়ালে।
মাত্র পনেরো পারসেন্ট চার্জ। অন্বয় ফোন করতে যায়, টাওয়ার নেই। এই গুহায় টাওয়ার থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।
ও রুবাইকে বলে, “অন্ধকার হয়ে গেলেও ভয়
পাবি না, ফ্রেড্রিক তো জানে আমরা এই
গুহায় রয়েছি, ও ঠিক খুঁজে বার করবে আমাদের।”
রুবাই ভয়
পায় না ঠিকই, কিন্তু কিছুটা এগোবার পর হঠাৎ ওর চোখে পড়ে পাথরের খাঁজে দুটো কঙ্কালের পা, একটা পায়ের স্নিকারটা আলগা হয়ে ঝুলছে। ধূসর হাফ প্যান্ট আর হলদেটে গেঞ্জি ঢলঢল করছে গায়ে। পাশে একটা বিবর্ণ ব্যাগ ঝুলছে,
রুবাইয়ের বুকটা কেমন কেঁপে ওঠে। মোবাইলের আলো অফ
হওয়ার আগে ও অন্বয়কে ইশারায় দেখায় কঙ্কাল দুটো। হাফ প্যান্ট হলদেটে গেঞ্জি পরা কঙ্কালটি মনে হয় ডঃ জনের।
পাশেরটা কালো গেঞ্জি, একটু বেঁটে কঙ্কালটা ওঁর সেই সঙ্গী, ইয়েলবং গ্ৰামের যুবক মনে হয়।
ওদের একটা ফটো দেখেছিল নেটে, এমন গেঞ্জি পরা, যেদিন হারিয়ে যায় সেদিন ডেভিডের ফোনে তোলা ছবি। আর
তখনই মোবাইলের চার্জ পুরো শেষ হয়ে যায়। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসতেই রুবাই অন্বয়ের হাতটা চেপে ধরে। এর
আগেও বহুবার রুবাই বিপদে পড়েছে, বুদ্ধির জোরে বেরিয়েও এসেছে। কিন্তু এমন বিপদ আগে আসেনি কখনও। বাড়ির এত কাছে এভাবে প্রাকৃতিক গুহায় আটকা পড়বে ওরা কখনও কল্পনাও করেনি। কয়েকটা মিনিট যেন কয়েক যুগের সমান।
রুবাই বলে, “ফ্রেড্রিকদা এখনও কেন আমাদের খোঁজ করছে না
বুঝতে পারছি না!”
“ও হয়তো গ্ৰামে গেছে লোক ডাকতে। সময় লাগবে।”
“কতক্ষণ এভাবে বসে থাকতে হবে কে
জানে।” রুবাইয়ের মনে হয় সরসর করে পায়ের উপর দিয়ে কিছু সরে গেল। অন্ধকারে কিছুই বোঝা যায় না।
হঠাৎ একটা কথা রুবাইয়ের মনে হয়,
ও বলে, “ডঃ জনের কঙ্কালের পাশে একটা পিঠের ব্যাগ ছিল, ওটার ভেতর যদি কিছু থাকে?
টর্চ জাতীয়?”
“এই গুহা তো
বর্ষায় বোধহয় পুরো জলে ভরে যায়, টর্চ থাকলেও জল
লেগে খারাপ হয়ে গেছে হয়তো,” অন্বয়দা বলে।
“ওরা ঢোকার পর
জল বেড়েছিল, তাই লেখা ছিল চিঠিতে। একবার ব্যাগটা দেখলে হত।”
রুবাইয়ের সাহস দেখে অবাক হয়
অন্বয়। এই অন্ধকারে ঐ
কঙ্কালের পাশে রাখা ব্যাগ ঘাঁটবে বলছে!! ও বলে, “দাঁড়া, একটু অপেক্ষা করি আমরা।”
রুবাই নিজের হাতঘড়ির আলোটা জ্বালে,
আস্তে আস্তে আন্দাজে পাথরে হাত রেখে এগিয়ে যায়। ছাদের পাথরের ফাটল চুইয়ে খুব হালকা চাঁদের আলো ঢুকছে,
তাতে চোখ সয়ে গেছে, কিন্তু যে ফোকর গলে ওরা ঢুকেছিল তা দেখা যাচ্ছে না। কঙ্কাল দুটো যেন হাসছে। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে যায় রুবাইয়ের। চোখ বন্ধ করে ব্যাগটা টানতেই প্রথম কঙ্কালটা ওর
গায়ের উপর পড়ে যায়। এক
ঝটকায় ওটাকে সরিয়ে ব্যাগটা নিয়ে দু’পা পিছিয়ে আসে রুবাই। অন্বয়দার কাছে এসে ব্যাগটা খোলে, অন্ধকারে হাতে ঠেকে একটা ডাইরি, কয়েকটা কাগজ, আর একটা পাউচের ভেতর বন্ধ মোবাইল। একটা ইলেকট্রিক টর্চ। আর কিছু ওষুধের ফয়েল। দুটো পাথরের টুকরো। রুবাই ফোনটা অন করতে ব্যর্থ চেষ্টা করে। ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে। এবার চার্জেবল টর্চটা জ্বালে। অল্প চার্জ এখনও রয়েছে,
মৃদু একটা হলুদ আলো ছড়িয়ে পড়ে গুহার ভেতর।
পেছনে রয়েছে আরও দুটো গুহা মুখ। গুহাটা তো
শাখা প্রশাখা বিস্তার করে পুরো অঞ্চলটা জুড়েই ছড়িয়ে আছে। তবুও আলোটার জন্য ওরা সাহস ফিরে পায়। একটা পাথরের টুকরো দিয়ে পাথরের দেয়ালে চিহ্ন দিতে দিতে এগোয় দু’জনে। কিন্তু এই আলোটারও জোর কমে আসছে। দপ দপ করতে করতে নিবেই গেল একসময়।
অন্বয় রুবাইকে বলে, “এভাবে গোলকধাঁধার মতো ঘুরপাক খেয়ে লাভ নেই। এতে হয়তো আমরা আরও ভেতরে ঢুকে যাচ্ছি। এক
জায়গায় দাঁড়াই আমরা। মাথা ঠাণ্ডা রেখে এগোতে হবে।”
রুবাই ততক্ষণে বুঝতে পেরেছে এভাবেই একদিন ডঃ
জন ও তার সঙ্গীরাও হারিয়ে গেছিল। সে
সময় গুহায় জল বেশি ছিল। হয়তো বৃষ্টিতে জল
বেড়ে গেছিল। কিন্তু এখন তো
জল কম, মনে জোর করে সাহস আনে রুবাই। কে যেন বলেছিল ভয় পেতে নেই। ভয়
পেলেই ও হেরে যাবে। তবে গুহার ভেতর ঠাণ্ডাটা কম,
এটাই রক্ষা। একটা বড়ো পাথরের উপর উঠে বসে ওরা,
এতক্ষণ জলে ভিজে পাগুলো কেমন যেন লাগছে! কিন্তু গ্রাম থেকে কেউ আসে না। একটা ভাঙ্গা ফাটল দিয়ে হালকা চাঁদের আলো এসে পড়েছে ভিতরে। রুবাই-এর খুব বাড়ির কথা মনে পড়ছিল। মা-বাবা হয়তো খুব চিন্তা করছে ওদের ফোন না
পেয়ে!
আস্তে আস্তে একসময় অভিশপ্ত রাতটা কেটে সকাল হয়। এবার ফাটল চুইয়ে দিনের আলো এসে পড়ে গুহার ভেতরে। আন্দাজে ভর
করে ওরা এগিয়ে আসে কিছুটা। হঠাৎ কানে আসে চিৎকার... “রুবাই.ই.ই...
অন্ব..য়..য় সার...”
এসেছে ওদের খোঁজে গ্ৰামের লোক। সামনের বাঁকটা ঘুরতেই ফ্রেড্রিক আর গ্ৰামের আরও দু’জনের সঙ্গে দেখা হয়। ফোকরটা একটা বড়ো পাথরের আড়ালে ছিল বলে ওরা কাল অন্ধকারে খুঁজে পায়নি। বাইরে বেরিয়ে জোরে শ্বাস নেয় রুবাই। বড্ড অবসন্ন লাগছে এবার।
ততক্ষণে প্রচুর লোক চলে এসেছে ওদের খোঁজে। অন্বয়দা আর রুবাই ফ্রেড্রিকদের বলে ডঃ গ্ৰাহাম জন আর তার এক সঙ্গীর কথা। অন্য সঙ্গীর দেহও হয়তো গুহাতেই রয়েছে। গ্ৰামে ফিরে আরও বড়ো চমক অপেক্ষা করছিল রুবাইয়ের জন্য।
ওরা রাতে বাড়ি ফেরেনি,
ফোনও বন্ধ। বাবা,
মা তাই ভোর হতেই গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে ইয়েলবং।
মালবাজার থানা থেকে পুলিশও এসেছে ওদের খোঁজে।
রুবাইয়ের মা
বললেন, “ঐ কালো পাথরটা কাল রম্যাণী পরীক্ষা করে দেখেছে। বেশ কয়েকটা নতুন যৌগের সন্ধান পাওয়া গেছে ঐ
পাথরে। হয়তো কোনও নতুন ধাতুর সন্ধান পাওয়া যাবে,
রম্যাণী রাত জেগে ল্যাবে কাজ করছে।”
আপাতত ডঃ
গ্ৰাহাম জন এবং তার সঙ্গীদের দেহাবশেষ উদ্ধার করার জন্য পুলিশ ও গ্ৰামবাসীর একটা দল আবার এগিয়ে যায় রোভার্স কেভের দিকে। রুবাইকে তখন টানছে ডঃ
জনের ডাইরি। হয়তো সেখানে লুকিয়ে রয়েছে কোনও নতুন রহস্য। ডাইরিটা আপাতত রয়েছে ওর পিঠের ব্যাগে। পুলিশে জমা দেওয়ার আগে ওটা অবশ্যই একবার পড়ে দেখবে রুবাই। ওর মন
বলছে ওদের আবার আসতে হবে ঐ রোভার্স কেভে।
_____
ছবিঃ রাজা আক্তার
Good presentation!
ReplyDeleteThanks
Deleteধন্যবাদ
ReplyDelete