উপন্যাস:: মহেন্দ্রলালের হিরে - সত্যজিৎ দাশগুপ্ত


মহেন্দ্রলালের হিরে
সত্যজিৎ দাশগুপ্ত

()

    এবার তো অঙ্কে ভালো নম্বর পেয়েছিস চটপট একটা হিসেব বল তো!” খবরের কাগজ পড়তে পড়তে এবার তার ওপর দিয়ে মাথাটা উঁচিয়ে একবার আমার দিকে চেয়ে নিয়ে আবার কাগজে মুখ গুঁজল অনিদা, আর আমিও একটা ইন্টারেস্টিং চ্যালেঞ্জের আশা নিয়ে নড়েচড়ে বসলাম
    আমার এখন গরমের ছুটি গত সোমবারেই অবশ্য স্কুল খোলার কথা ছিল কিন্তু কলকাতায় এবার যা গরম, তাতে ছুটি বেড়েছে আরও পনেরো দিন!
    পটাপট বল দেখি, সাড়ে ছয় লক্ষ ইন্টু পঁচাত্তর পয়েন্ট এক ছয়কত হয়?”
    অনিদার ভাব দেখে মনে হল দুয়ে দুয়ে কত হয়, প্রশ্নটা সেই লেভেলের! এক থেকে পাঁচ গোনারও সময় দিল না তার মধ্যেই তাড়া দিয়ে উঠল বল বল, কত হয়?”
    অনিদা প্রশ্ন করবে শুনে প্রথমে উৎসাহে আমার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেছিল কিন্তু বাধ্য হয়েই আবার সোফায় শরীর এলিয়ে দিলাম চ্যালেঞ্জ নেবার ইচ্ছেটাই নিজে থেকেই ভ্যানিশ হয়ে গেল মুখটা তেতো তেতো লাগছিল যেন কুড়িটা নিমপাতা একসঙ্গে চিবিয়ে ফেলেছি! আমতা আমতা মুখ নিয়ে মাথা চুলকাতে শুরু করলাম
    আমার অসহায় অবস্থাটাকে কোনও রকম পাত্তা না দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে হঠাৎ তুড়ি মেরে বলল, “দেখ তো, মনে হচ্ছে সংখ্যাটা পাঁচ কোটির কাছাকাছি কিছু একটা হবে
    চ্যালেঞ্জের বদলে দেখলাম অনিদার পরীক্ষা নেওটাই আমার কাছে এবার সহজ হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি মোবাইল ক্যালকুলেটরে হিসেব করে সাংঘাতিক আশ্চর্য হয়ে বললাম, “বাবা!”
    কেন কী হল? কত বেরোল?” জিজ্ঞাসা করল অনিদা
    আমি মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে বললাম, “চার কোটি অষ্টআশি লক্ষ চুয়ান্ন হাজার!”
    প্রায় ঠিকই বলে ফেলেছিলাম, কী বল?” আমার দিকে চেয়ে দু’বার ভুরু নাচিয়ে বলল অনিদা
    তোমার গোয়েন্দা না হয়ে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত ছিল
    আমার প্রশংসাটাকে পাত্তাই দিল না অনিদা যদিও জানি সেটা ওকে খুশিই করেছে তবে হাবেভাবে আমাকে সেটা বুঝতে না দিয়ে আবার কাগজে মুখ ঢাকল অসময়ে হঠাৎ এমন একটা বাউন্সার মার্কা প্রশ্ন কেন তা নিয়ে আমার তখন কৌতূহল তুঙ্গে! তাই জিজ্ঞাসা করলাম, “ওটা কীসের হিসেব গো অনিদা?”
    আমার প্রশ্ন শুনে অনিদা প্রথমে কাগজটা মুখের সামনে থেকে নামাল এবার সেটা ভাঁজ করে রাখতে রাখতে বলল, “আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের কথা বর্ধমানের এক ডাকসাইটে জমিদার ছিলেন মহেন্দ্রলাল দত্ত বন্ধুর বন্ধু, আর শত্রুর যম এই ছিল ওনার পরিচয় সেই সময় এক আফগান ব্যবসায়ীর সঙ্গে ওনার খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল তো সেবার সেই ব্যবসায়ী বর্ধমানে গিয়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর মহেন্দ্রলাল নিজে দিনরাত ওনার সেবা করে ওনাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন নতুন জীবন পেয়ে সেই ব্যবসায়ী মহেন্দ্রলালকে তখন একটা হিরে উপহার দিয়েছিলেন এর কিছুদিন পর থেকেই দিন ফিরতে শুরু করল মহেন্দ্রলালের আর তাতে উনি মনে করতে শুরু করলেন যে তার পেছনে রয়েছে ওই হিরেটা তাই সেটা যাতে কোনও ভাবেই হাতছাড়া না হয় তার জন্য উনি হিরেটাকে বাড়ির মধ্যেই একটা গোপন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন অনেকেই সেই হিরেটার কথা জানলেও সেটা যে কোথায় রাখা ছিল, সেটা কেউ জানত না! ওনার মৃত্যুর পর অনেকেই হিরেটার খোঁজ করেছিল বটে, তবে কেউই সেটার নাগালের মধ্যে যেতে পারেনি শেষে এতদিন পর, গত বুধবার কলকাতার এক প্রত্নতত্ত্ববিদ ডঃ প্রসূন ব্যানার্জি হিরেটা খুঁজে পান হিসেব করে দেখা গেছে, আজকের দিনে হিরেটার দাম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা!”
    পাঁচ কোটি!” হিরের দাম শুনে আমার মুখ নিজে থেকেই হাঁ হয়ে গেল এবার ঢোঁক গিলে জিজ্ঞাসা করলাম, “ওটা কি বিক্রি হবে? অত দামি জিনিস কে কিনবে?” আসলে একটা হিরে যে এত দামি হতে পারে সেটা একেবারেই আমার ধারণার বাইরে
    আমার প্রশ্ন শুনে একটা একপেশে হাসি হেসে অনিদা বলল, “পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের কাছে এই টাকাটা একেবারে নস্যি যদিও এই হিরেটা বিক্রির জন্য নয়
    তবে?”
    মিউজিয়ামে রাখা হবে
    মিউজিয়ামের কথা শুনে আমি চনমনিয়ে উঠলাম জিজ্ঞাসা করলাম, “আমরা দেখতে পাব?”
    তাতে অনিদা হেসে বলল, “হ্যাঁ, সে ব্যবস্থাই করা হয়েছে তবে এত দামি জিনিস তো তাই মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন যে ওটা দেখতে হলে স্পেশাল পারমিশন লাগবে অবশ্য আগামী এক থেকে তিন তারিখ সাধারণ মানুষ টিকিট কেটেই হিরেটা দেখার সুযোগ পাবেন তবে সামনে থেকে নয়, দূর থেকে
    আমরা যাব না?” আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলাম
    নিশ্চয়ই, এই সুযোগ কেউ ছাড়ে?”
    কবে যাব?” উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমি
    দু’তারিখ, মানে সামনের শনিবার অসুবিধে নেই তো?”
    না না,বলে এবার সোজা হতে গিয়ে ডান হাঁটুটা সেন্টার টেবিলে একটা ধাক্কা খেল আর তাতে জলের বোতলটা মাটিতে পড়ল!
    গুড! আমরা তাহলে দুপুর দুটো নাগাদ বেরিয়ে পড়ব,বলে অনিদা একবার মাটিতে পড়ে থাকা বোতলটার দিকে তাকাল যার মানে হল, বেশি বাড়াবাড়ি না করতে বলা
 
*                          *                          *
 
    কাল অনিদার মুখে হিরেটার কথা শোনার পর থেকে আজ সারাদিন আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বলে একটা পাথর উঁকি মারছিল থেকে থেকে সেটার রঙও বদলে যাচ্ছিল ইতিহাসকে চোখের সামনে দেখতে পাব ভেবে আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছিল ওদিকে অনিদার মধ্যে অবশ্য নিয়ে তেমন কোনও হেলদোল নেই আমার মন যখন প্রায় সাড়ে তিনশো বছর পিছিয়ে, তখন ব্যস্ত আজ রাতের এশিয়া কাপে ভারত শ্রীলঙ্কা ম্যাচ নিয়ে সেটা নিয়ে অমিতদার সঙ্গে তো আবার এক প্রস্থ তর্কই হয়ে গেল
 
*                          *                          *
 
    মিউজিয়ামে শো-এর টাইম বিকেল তিনটে থেকে পাঁচটা আমরা পৌঁছোলাম মিনিট দশেক আগেই ওদের ওপর মহলের সঙ্গে অনিদার আগে থেকেই চেনাশোনা তাই বলা ছিল যে সবার দেখা হয়ে গেলে আমরা পাথরটা একবার সামনে থেকে দেখব মানে শো এর পর
    হিরেটা নিয়ে যে মানুষের মনে বিরাট একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে তা বুঝলাম লাইনের সাইজ দেখে আড়াইটে থেকেই লাইন পড়া শুরু হয়ে গেছিল এবার তিনটের সময় এগোতে শুরু করল আগেই বলেছি মিউজিয়ামের ওপরের মহলের লোকেদের সঙ্গে অনিদার চেনাশোনার কথা তাই আমাদের আর লাইন দিতে হয়নি যদিও একবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে দেখে মনে হয়েছিল যে এটা সুবিধে নেওয়া হয়ে যাচ্ছে, তবে পরে মনে হল এটা এমন কিছু একটা অন্যায় নয়! হিরের তদারকিতে থাকা এসিপি গুহ আমাদের সঙ্গে ছিলেন এর কিছুক্ষণের মধ্যে লালবাজারের ওসি রাজাদাও চলে এল এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, রাজাদা অনিদার খুব ভালো বন্ধু আমাকেও খুব ভালোবাসে
    হিরেটার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই দিন চারজন সি আই ডি অফিসারকে নিয়ে একটা বিশেষ দল তৈরি হয়েছে তাঁদের সবার সঙ্গেই আমরা পরিচয় করলাম পার্থ মিত্র হলেন এই দলটার ক্যাপটেন ওনাকে দেখে সি আই ডি বলে মনে হয় না কেমন যেন প্রফেসর প্রফেসর দেখতে শান্ত শিষ্ট এই চেহারার মানুষকে অপরাধী ভয় পায়! যদিও জানি ওনার চেহারার থেকে মাথার দামটাই বেশি পার্থ মিত্রর সঙ্গে আছেন কুশল রায় এবং আশীষ ঘোষ এনাদের চেহারা নিয়ে আলাদা করে বলার মতো কিছু নেই আর এনাদের নিচে কাজ করছেন এক জুনিয়ার অফিসার আবীর বোস এসিপি গুহ আর রাজাদার সঙ্গে পরিচয় থাকার জন্য ওনারা আমাদের বেশ খাতির করছিলেন জুনিয়ার হলেও এনাদের মধ্যে আমার সব থেকে বেশি মন কেড়েছিলেন আবীর লম্বা ছিপছিপে শরীরের গড়ন ফরসা গায়ের রং কথাবার্তাতেও বেশ চৌখস
    এত বড়ো একটা হিরে চোখের সামনে! আলো যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে ওটার মধ্য থেকে একটানা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখ ধাঁধিয়ে যায় সব হিরের মতোই এই হিরেটার আকারও অনেকটা প্রিজমের মতো দেখে মনে হচ্ছিল যেন পেল্লায় বড়ো একটা লাট্টু একটা কাচের ঘরে আরেকটা কাচের বাক্সের মধ্যে রাখা ছিল হিরেটা
    জ্যান্ত ইতিহাস চাক্ষুস করছি কথাটা ভাবতেই সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল জিনিসটাকে সামনে থেকে দেখার জন্য মন ছটফট করছিল কিন্তু শো শেষ না হওয়া পর্যন্ত উপায় নেই আর ঠিক এই সময়তেই ঘটল একটা মজার কান্ড!
    প্রদর্শনী চলছে ঠিক এমন সময় বোঁ করে বেজে উঠল মিউজিয়ামের সাইরেনটা হিরেটা যে কাচের ঘরে রাখা হয়েছিল, তার কোণে লাগানো লাল আলোটা বার বার জ্বলতে নিভতে শুরু করল যার মানে হল বিপদের আশঙ্কা! স্বাভাবিকভাবেই ঘরের মধ্যে একটা হৈ হল্লা লেগে গেল এদিকে সাইরেনের আওয়াজ শুনেই মেশিনগানধারী পুলিশ বাহিনী দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে এসিপি গুহ থেকে অন্যান্য সি আই ডি অফিসারেরা সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পজিশন নিয়ে নিয়েছেন ঠিক তখন ভ্যাঁ করে একটা কান্নার আওয়াজ শুনে ডানদিকে চেয়ে আবিষ্কার করলাম বছর পাঁচেকের একটা বাচ্চা ছেলেকে সে বেচারা তখন দু’হাতে চোখ ডলছে আর পাশে দাঁড়ানো তার বাবা থেকে থেকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “আপনারা কেউ কিছু মনে করবেন না!” এবার ছেলেকে শাসাতে শাসাতে বললেন, “তোমাকে বলেছিলাম না যে কোনও জিনিসে হাত না দিতে? তাও তুমি কাচে হাত দিয়েছ? এরপর আর কোনোদিন আমি তোমাকে নিয়ে কোথাও যাব না
    এসিপি গুহ তখন আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রিভলবার পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বাচ্চাটার গাল টিপে দিয়ে বললেন, “না না বাচ্চা ছেলে কী করে বুঝবে? অযথা ওকে বকবেন না
    এদিকে সবাই তখন ওর দিকে চেয়ে হাসছে দেখে বাচ্চাটা এবার লজ্জা পেয়ে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর মায়ের কোলে মুখ লুকাল
    বাচ্চাটার বাবার কথা শুনেই আন্দাজ করেছিলাম ঠিক কী ঘটেছিল এবার বিষয়টা পরিষ্কার হল মিঃ গুহর কথায় আসলে বাচ্চাটা না জেনেই ঘেরা কাচে হাত দিয়ে ফেলেছিল যেহেতু কাচের দেয়ালে সেন্সর লাগানো রয়েছে, তাই তাতে বাচ্চাটার হাতের ছোঁয়া লাগতেই লাইট জ্বলে সাইরেনটা বেজে উঠেছিল
    শো-এর শেষে আমরা এবার কাচের ঘরের ভেতরে ঢুকলাম পাথরটা এখন আমাদের মাত্র এক হাতের মধ্যে মিঃ গুহ এবার নিজে থেকেই হিরেটা নিয়ে অনিদার হাতে দিলেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেকক্ষণ দেখার পর অনিদা এবার সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিল আমি এতক্ষণ হাঁ করে চেয়ে ছিলাম হিরেটার দিকে এবার কাঁপা কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে দিলাম অনিদার দিকে হিরেটা ছুঁতেই আমার সারা গায়ে কারেন্ট খেলে গেল চোখের সামনে যেন মোগল মারাঠা যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছিলাম ব্রিটিশরা ভারতে রাজত্ব চালাচ্ছে, সিপাহীরা বিদ্রোহ করছে, সব ভেসে উঠছিল চোখের সামনে এবার ঘোর কাটল অনিদার কথায়
    কীরে, কী ভাবছিস?”
    না না, কিছু নাকেউ যাতে কিছু না বুঝতে পারে, তাই তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে এসিপি গুহকে ফিরিয়ে দিলাম হিরেটা
    অনিদা তখন আমার দিকে চেয়ে হেসে বলল, “এমন অ্যান্টিক জিনিস হাতে পড়লে ইতিহাসের যুগে চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক!”
    বুঝতে পারলাম ওর কাছে ধরা পড়ে গেছি তাও ভাগ্য ভালো যে অন্যরা জিনিসটা বুঝতে পারেনি শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরলাম বটে, তবে মন পড়ে রইল মিউজিয়ামে
 
()
 
    আজ একটা ইংরিজি ম্যাগাজিন মহেন্দ্রলালের হিরেটা নিয়ে লিখেছে সেটার ওপর চোখ রেখে অনিদা বলল, “খুব সুন্দর হয়েছে
    সকাল এখন প্রায় দশটা অনিদার ঘরে বসে মহেন্দ্রলালের হিরেটা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে এমন সময় অনিদাদের কাজের লোক বিজুদা এসে জানাল যে দু’জন লোক অনিদার সঙ্গে দেখা করতে চায়
    অসময়ে অতিথি শুনে প্রথমটায় একটু ভুরু কোঁচকাল অনিদা এবার তারা তাদের নাম বলেছে কিনা জিজ্ঞাসা করায় বিজুদা জানাল যে ওনাদের মধ্যে একজনের নাম কুশল রায়
    সঙ্গে সঙ্গে কোঁচকানো ভুরু সোজা হয়ে চোখ জোড়া কপালে উঠল অনিদার অতিথির নাম শুনে আমিও অবাক অনিদার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “সি আই ডি অফিসার কুশল রায়?”
    অনিদা এবার উঠে দাঁড়িয়ে বিজুদাকে জিজ্ঞাসা করল, “আরেক জনের নাম?”
    "আরেকজন হলেন গিয়ে," মাথা চুলকে বিজুদা একটু চিন্তা করে বলল, “হ্যাঁ, মনে পড়েছে, আশীষ -”
    বিজুদাকে আর ঘোষবলতে না দিয়ে ঝট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অনিদা আমার ততক্ষণে বুঝতে বাকি নেই ওনারা আর কেউ নন, সেই দুজন সি আই ডি অফিসার!
    আমি তখন ভাবছি যে ওনারা হঠাৎ অনিদার কাছে কেন আসবেন, ঠিক সেই সময় অনিদা ওনাদের সঙ্গে নিয়ে ঘরে এসে ঢুকল
    লালবাজারের গোয়েন্দারা অনিদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন জানতে পারলে পাড়ায় হই হই পড়ে যাবে আমার কাছে অবশ্য এগুলো এখন জলভাত কলকাতার পুলিশ কমিশনারও এখন অনিদার ঘনিষ্ঠ অনিদা এর মধ্যে বিজুদাকে ডাকতে গেছিল কিন্তু তার আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে অতিথিদের জন্য খাবার তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে আসলে আমার মতো বিজুদাও এসবে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে
    কুশল রায় আর আশীষ ঘোষকে বসতে দিয়ে আমার পাশের সিঙ্গল সোফাটাতে বসল অনিদা এর মধ্যে বিজুদা ওনাদের জন্য ঠান্ডা জল দিয়ে গেছে প্রায় এক ঢোঁকে গ্লাস শেষ করে আশীষ ঘোষ বললেন, “দেখুন মিঃ সেন, একটা বিপদে পড়ে আমরা আপনার কাছে এসেছি
    বিপদে পড়ে? সেটা কী রকম?” জিজ্ঞাসা করল অনিদা দুজন সি আই ডি অফিসার বিপদে পড়ে অনিদার মতো একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভের কাছে এসেছেন! জিনিসটা সত্যিই অবাক হওয়ার মতোই বটে!
    কিন্তু তার আগে আপনাকে কথা দিতে হবে যে ব্যাপারটা আপনি গোপন রাখবেন,বললেন আশীষ ঘোষ
    তাতে মাথাটা দুবার সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে কুশল রায় বললেন, “এতে আমাদের মান সম্মান থেকে শুরু করে পুরো ক্যারিয়ার জড়িয়ে আছে মিঃ সেন
    আসলে ব্যাপারটা খুব সেন্সেটিভ,গলা নামিয়ে বললেন মিঃ ঘোষ
    অনিদা তখন ওনাদেরকে আশ্বস্ত করে বলল, “দেখুন, কী বিষয়ে আপনারা আমার সাহায্য চাইছেন, জানি না তবে কথা দিচ্ছি, আপনাদের যদি আমাকে কোনোভাবে দরকার পড়ে, তাহলে আমি সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছি আর গোপনীয়তা নিয়ে কিছু ভাববেন না
    এমন দু’জন দুঁদে গোয়েন্দাদের অনিদার কাছে কীসের সাহায্যের দরকার, সেটা তখন আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতে শুরু করে দিয়েছে ওনারা এর পরেও কিন্তু কিন্তু করছেন দেখে অনিদা তখন আবার ওনাদেরকে আশ্বস্ত করে বলল, “আপনারা নিশ্চিন্তে বলতে পারেন
    এতে আমি একবার ভাবলাম যে আমার সামনে থাকার জন্য মনে হয় ওনারা কিছু খুলে বলতে চাইছেন না আমাদের অনেক ক্লায়েন্টই এমনটা করেন আমি বয়সে ছোটো বলে অনেকে হয়তো ভরসা পান না পরে অনিদা যখন বলে যে আমি ওর সহকারী, তখন কিছুটা হলেও কাজ হয়
    সবাই জানে যে আমি অনিদার মাসতুতো ভাই এমনি ভাই বললে আবার ঝামেলা আছে কারণ অনিরুদ্ধ সেন আর রণজয় বোস, আলাদা নাম বলে আমাদেরকে মানুষ ভাই বলে মেনে নেয় না আসলে তা নয় আমার আর অনিদার মায়েরা সেই ছেলেবেলাকার, থুড়ি, মেয়েবেলাকার বান্ধবী আমরা আর ওরা কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মেঘমালা এপার্টমেন্টের দোতলায় পাশাপাশি দুটো ফ্ল্যাটে থাকি অনিদার কেসগুলো গল্পের আকারে আমিই লিখি তাই অনিদার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এখন আমাকেও চেনে
কুশল রায় আর আশীষ ঘোষ, দু’জনের মুখই তখন থমথমে আমাদের ঘরের আবহাওয়াটা এর মধ্যেই কখন যেন গুমোট মেরে গেছে এর মধ্যে আশীষ ঘোষের মুখ থেকে যে কথাটা বেরিয়ে এল, সেটা অনেকটা আচমকা কড়াৎ করে বাজ পড়ার মতো
    বারকয়েক ঢোঁক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় আশীষ ঘোষ বললেন, “একচুয়ালি মিঃ সেন, মহেন্দ্রলালের হিরে ইজ মিসিং!”
    হোয়াট!” প্রায় চেঁচিয়ে উঠে মিঃ ঘোষের দিকে ঝুঁকে পড়ল অনিদা ওর কপালের চারটে ভাঁজ তখন ভীষণ কড়া!
    কথাটা শুনে আমার বুকে হাতুড়ি পিটতে শুরু করেছে মনে হল যেন স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না এই সকালে এমন খবর একেবারেই আশা করিনি
    কী বলছেন আপনি?” ফ্যাসফ্যাসে গলা শুনে বুঝলাম অনিদাও তখন ঘোলা জলে
    ইয়েস, দ্যাটস রাইট হিরেটা চুরি হয়ে গেছে আমাদের নাকের ডগা দিয়েই,ঘন ঘন মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন মিঃ রায়
    কিন্তু কী করে?” নিজেকে সামলে নিলেও চোখে মুখে এখনও উত্তেজনা ধরা পড়ছিল অনিদার কবে হল? কখন হল?” আবার জিজ্ঞাসা করল
    বিজুদা এর মধ্যে ফিস ফ্রাই আর কোল্ড ড্রিঙ্কস দিয়ে গেছে অনিদা অতিথিদের দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আমাকে ডিটেইলসে বলুন
    উত্তরে মিঃ ঘোষ বললেন, “তার আগে একটা কথা আপনাকে জানানো দরকার মিঃ সেন যে হিরেটা কাল আপনারা দেখেছেন, সেটা আসল ছিল না
    আবার একটা ধাক্কা! মিঃ ঘোষের কথা শুনে ফিস ফ্রাইতে কামড় মারতে গিয়ে জিভ কামড়ে ফেললাম
    অনিদার মধ্যে অবশ্য এতে কোনও হেলদোল নেই কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাসে চুমুক মেরে খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল, “জানি
    জানেন!” অনিদাকে অবাক করতে গিয়ে নিজেরাই অবাক হয়ে গেলেন দু’জন সি আই ডি অফিসার চোখ কপালে তুলে মিঃ ঘোষ জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কী করে জানলেন?”
    পাথরটার নিচের দিকে বউবাজারের একটা দোকানের ঠিকানা লেখা ছিল মিঃ ঘোষ সেটা আমার নজর এড়ায়নি আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওটার দাম খুব বেশি হলে হাজার দুয়েক হবে,হেসে বলল অনিদা
    আপনি তো সাংঘাতিক মানুষ মশাই!” মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন মিঃ ঘোষ
    আমার মুখ ততক্ষণে হাঁ হয়ে গেছে শুধু রাগ উঠছে এই ভেবে যে সব জেনেশুনেও অনিদা আমাকে ব্যাপারটা জানায়নি! আর আমি নাকি ওর এসিস্ট্যান্ট! ভেতরে ভেতরে অবশ্য ওর নজরের তারিফ না করে পারছিলাম না চোখ কান ভীষণ রকমের খাড়া করা না থাকলে জিনিস ধরা সম্ভব না
    অনিদা তখন জিজ্ঞাসা করল, “এবার বলুন যে আসল হিরেটা কোথায়? সেটাই কী চুরি হয়েছে?”
    হ্যাঁ,মাথা নেড়ে মিঃ ঘোষ বললেন, “আসল হিরেটাই চুরি হয়েছে নকলটা যেমন ছিল তেমনই আছে
    আসলটা আপনারা কোথায় রেখেছিলেন?”
    সেটা থেকেই তো আসল ঘটনার শুরু,বললেন মিঃ ঘোষ
    আসলে সেদিন পার্থদা, আমি আর মিঃ ঘোষ একটা ডিসিশান নিয়েছিলাম,বললেন মিঃ রায়
    কী ডিসিশান?” ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল অনিদা
    এমন একটা ডিসিশান, যেটা কিনা শেষমেশ আমাদের কাল হয়ে দাঁড়াল,বললেন মিঃ ঘোষ
    কুশল রায় বলতে থাকলেন, আপনারা হয়তো কাগজে পড়ে থাকবেন, আজকাল মুম্বইয়ের একটা গ্যাং কলকাতায় অপারেশন চালাচ্ছে কোথা থেকে কী হয়ে যায়! তাই কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চাইনি আর সেইমতো আমরা আসল হিরেটাকে নিয়ে যাই আমাদেরই অফিসের একটা গোপন জায়গায়
    আর তার জায়গায় নিয়ে আসেন নকল হিরেটা?”
    ঠিক তাই মিঃ সেন,মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে মিঃ রায় বললেন, “প্রদর্শনী শেষ হয় তিন তারিখ ঠিক ছিল তারপরই হিরেটা আসল জায়গায় ফিরিয়ে দেব সেইমতো আমি আর আশীষ সেদিন সন্ধ্যাবেলা অফিসে যাই কিন্তু হিরেটা যেই ঘরে ছিল, সেখানে ঢুকে প্রথমে কিছু আন্দাজ করতে পারিনি আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে কিন্তু এবার লকার খুলতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল! কারণ লকারে তখন হিরে নেই! নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমরা কতক্ষণ যে ওইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম বলতে পারব না, কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই যা হবার হয়ে গেছে
    হুম,কয়েক মুহূর্ত কী যেন ভাবল অনিদা তারপর জিজ্ঞাসা করল, “সেই সময় পার্থ মিত্র আর আবীর বোস কোথায় ছিলেন?”
    ওনারা মিউজিয়ামেই ছিলেন
    তাতেবলে চোখ সরু করে মাটির দিকে চেয়ে রইল অনিদা
    মিঃ ঘোষ তখন বললেন, “বিশ্বাস করুন মিঃ সেন, আমরা তিনজন মিলে আজ পর্যন্ত অনেক কেস সলভ করেছি কত খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছি তার ইয়ত্তা নেই! পার্থদা, আমি আর কুশলএই ত্রিফলাকে ভয় পায় না, এমন অপরাধী এই ভূভারতে নেই কিন্তু এই ঘটনাতে আমরা সত্যিই চাপে পড়ে গেছি যখন দেখলাম যে লকারে হিরে নেই, সেই সময়টা যে আমাদের কী অবস্থা হয়েছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না খবরটা পার্থদাকেই বা কী করে দেব মাথায় ঢুকছিল না তবু শেষ পর্যন্ত ওনাকে জানাতে হয়েছিল এদিকে ব্যাপারটা বাইরে চেপে রাখাও অসম্ভব শেষমেশ গ্রেপ্তার হতেই হবে, বুঝতে পারছি সঙ্গে চাকরি যাবার ভয় তো আছেই তবু আপাতত কোনোরকমে চুরির ঘটনাটা লুকিয়ে রেখেছি
    তাতে কুশল রায় বললেন, “তবে এটাও জানি যে সত্যি বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যাবে না জানি না, ‘না করা’ চুরির দায়ে আমাদের কী সাজা পেতে হবে!”
    এতে পার্থ মিত্রর কী রিঅ্যাকশান?
    বাড়াবাড়ি রকমের চুপচাপ হয়ে গেছেন ভদ্রলোক কারও সঙ্গেই বেশি কথা বলছেন না থম মেরে বসে থাকছেন সবসময় কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে উনি এর জন্য নিজেকেই দোষি ভাবছেন কারণ প্ল্যানটা এসেছিল ওনার মাথা থেকেই
    আজ আপনারা আমার কাছে এসেছেন তা উনি জানেন?” জিজ্ঞাসা করল অনিদা
    হ্যাঁ,মাথা ওপর-নিচ করে মিঃ রায় বললেন, “তবে এব্যাপারে উনি বিশেষ কিছু মন্তব্য করেননি
    মিঃ ঘোষ এবার বললেন, “সবই তো শুনলেন মিঃ সেন তাই আমাদের অনুরোধ যে এই কেসটাতে আপনি আমাদের পাশে থাকুন
    এই ডাকসাইটে গোয়েন্দারা অনিদার সাহায্য চাইছে দেখে আমি এমনিতেই হতবাক অনিদার দিকে চেয়েছিলাম কী বলে সেটা দেখার জন্য কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অনিদা এবার বলল, “আমি প্রথমেই একটা কথা জিজ্ঞাসা করি আপনাদের তিনজনের কথা শুনে ভয় পায় না এমন অপরাধী নেই অনেক জটিল কেস আপনারা সলভ করেছেন সে কথা আমার অজানা নয় কিন্তু তার পরেও এই কেসটা নিজেরা হাতে না নিয়ে আপনারা আমার কাছে এসেছেন কেন?”
    তাতে মিঃ রায় বললেন, “দেখুন মিঃ সেন, কেস যতই জটিল হোক না কেন, তাতে আমাদের ভয় নেই কিন্তু এখানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে নিজেদের ভুলের মাশুল আমরা আজ দিচ্ছি ব্যাপারটা যদি কোনোরকমে জানাজানি হয়ে যায়, তাহলে আর রক্ষে থাকবে না আমরা জানি না আসলে কে অপরাধী আমাদের মধ্যেও কেউ হতে পারে আবার নাও হতে পারে তাই থার্ড কারও হাত পড়লে ব্যাপারটার মধ্যে একটা নিরপেক্ষতা থাকে তাই আমরা নিজেরা এটার মধ্যে সরাসরি জড়াতে চাই না তবে তদন্তটা গোপনে চলাটা খুব জরুরি আপনার রেপুটেশনের কথা আমরা জানি অনেস্টির কথাও জানি তাই আপনার কাছে আসা
    হুম,বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনিদা বলল, “কাজটা কিন্তু আপনারা বাচ্চাদের মতো করে ফেলেছেন
    তাতে ওনারা দু’জনই চুপ মেরে গেলেন অনিদা তখন জিজ্ঞাসা করল, “এই নকল হিরের ব্যাপারটা আপনারা তিনজন ছাড়া আর কে জানে?”
    কেউ না মিঃ সেন,বললেন মিঃ রায়
    আর চুরির ঘটনাটা?”
    আমরা তিনজনই
    ওকে,অনিদা এবার মাথাটা বারদুয়েক সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বলল, “আমি আপনাদের সঙ্গে আছি
    কেসটা যে অনিদা নেবে সেটা বুঝতেই পেরেছিলাম হিরেটা চুরি হয়ে গেছে জেনে আমার মনটা ভার হয়ে গেছিল কিন্তু তার সঙ্গে এটাও আমার কাছে একটা খুশির ব্যাপার যে এমন গোয়েন্দাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অনিদা কাজ করবে!
    অনিদা এবার জিজ্ঞাসা করল, “হিরেটা আপনারা কোথায় রেখেছিলেন?”
    আমাদের অফিসের বারো তলার ঘরে যেখানে আমরা তিনজন বসি সেখানে আমাদের একটা লকার আছে হিরেটা সেটার মধ্যেই রেখেছিলাম
    লকারের চাবি কার কাছে থাকত?”
    ওর কোনও চাবি নেই নম্বরের কম্বিনেশনে লকারটা অপারেট করা হয়
    সেই কোড নম্বরটা কে কে জানেন?”
    আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ না আর কিছুদিন পর পরই আমরা পুরোনো কোড বদলে নতুন কোড দিই
    কেন?”
    সিকিউরিটি পারপাসে কারণ বিভিন্ন কেসের গোপনীয় তথ্যগুলো আমরা ওই লকারের ভেতরেই রাখি
    অনিদা তখন বলল, “দেখুন, চুরি যেহেতু লকারের ভেতর থেকে হয়েছে, তাই বলা যায় যে অপরাধী কোডটা জানতে পেরে গেছিল
    সে তো হান্ড্রেড পারসেন্ট!” কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন মিঃ ঘোষ
    ওই ঘরে আপনারা ছাড়া আর কে কে ঢোকেন?”
    কমিশনার বা এসিপি তো ঢোকেনই, আর তাছাড়া অন্যান্য অফিসাররা এমনকি জুনিয়র অফিসারদের যাতায়াতও আছে আমাদের ঘরে তবে বিনা পারমিশনে কেউ আসেন না
    আর ঘরে আপনারা না থাকলে?”
    ঘর বন্ধ থাকে
    চাবি?”
    তিনজনের কাছে তিনটে চাবি আছে
    আচ্ছা লকারের কোডটা শেষ কবে বদলান?”
    এক তারিখ মানে যেদিন হিরেটা লকারের মধ্যে রাখা হয়
    লকারের গায়ে কোনও হাতের ছাপ পাননি?”
    না তবে অদ্ভুত একটা জিনিসের ছাপ লকারের কী বোর্ডের কী গুলোর ওপর পেয়েছি আমরা
    সেটা কেমন?” ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল অনিদা কিছু একটা নতুন তথ্য জানার আশায় আমিও উৎসুক হয়ে উঠলাম
    মিঃ ঘোষ তখন বললেন, “কী গুলোর গায়ে ডট পেনের কালির ছাপ পাওয়া গেছে
    ডট পেনের কালি? স্ট্রেইঞ্জ!” অনিদার কপালে তখন গোটা তিনেক ভাঁজ এমন অদ্ভুত জিনিস শুনে আমিও অবাক অনিদা তখন বলল, “তার মানে অপরাধী লকার খোলার জন্য ডট পেন ব্যবহার করেছিল যাতে হাতের ছাপ কোথাও না পাওয়া যায়!”
    অনিদার কথার উত্তরে অফিসার দু’জন কিছু না বলে চুপ করে থেকে চেয়ে রইলেন অনিদা আবার জিজ্ঞাসা করল, “ঘরে আর কিছুতে কোনও কিছুর ছাপ-টাপ পাওয়া যায়নি?”
    না”, নিচের ঠোঁট উলটে মিঃ রায় বললেন, “সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুজেছি মিঃ সেন কিচ্ছু পাইনি
    আমি তখন বললাম, “চোর তো গ্লাভস পরেও ঢুকতে পারে?”
    কথাটা মনে হয় খুশি করল অনিদাকে আমার কাঁধে দুটো চাপড় মেরে বলল, “যাতে কোনও প্রমাণ না থাকে?”
    এবার মিঃ ঘোষ বললেন, “চুরিটা বেশ সাবধানেই করা হয়েছে কারণ কালির ছাপটা ছাড়া আর কিছুই নজরে আসেনি আমাদের ঘরে আর কোথাও কিছুই পাইনি আমরা!”
    তা তো বটেই,মাথা নেড়ে অনিদা বলল, “এর সঙ্গে একথাও পরিষ্কার যে, চোর যেই হোক না কেন, সে আপনাদের গতিবিধির ওপর সবসময় নজর রেখে গেছে
    তাতে কোনও সন্দেহ নেই মিঃ সেন,মাথা নেড়ে বললেন মিঃ রায়
    আর সে এও জানে যে তথ্য কী করে লোপাট করতে হয়,কথাটা বলে আবার কী যেন ভাবল অনিদা তারপর বলল, “এক্সপার্ট চোর!” এবার জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা শেষ কখন আপনারা হিরেটাকে লকারের মধ্যে দেখেছিলেন?”
    তিন তারিখ মানে যেদিন চুরি হয় সেদিন দুপুর দুটো নাগাদ
    আর তারপর আপনারা ঠিক ক’টার সময় ওই ঘরে ঢোকেন?”
    এই সাতটা হবে,বললেন মিঃ রায়
    তার মানে চুরিটা হয়েছে ঠিক দুপুর দুটো থেকে সাতটার মধ্যে,বলল অনিদা
    ঘটনার গতিক তো তাই বলছে,বললেন মিঃ ঘোষ
    ওই সময়টাতে আপনারা সবাই মিউজিয়ামেই ছিলেন?”
    আশীষ আর আমি তো ছিলামই আবীরও ছিল আমাদের সঙ্গে শুধু পার্থদা মাঝে একবার ঘণ্টাখানেকের জন্য একটা পার্সোনাল কাজে বেরিয়েছিলেন
    কোথায় গেছিলেন? আপনারা জানেন?”
    বললেন তো কলেজ স্ট্রিট রায় এন্ড রায়-এর দোকানে ছেলের জন্য নাকি বই কেনার ছিল
    হুম,বলে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অনিদা এবার বলল, “ওকে, কাল সকালে আমি একবার আপনাদের অফিসে যেতে চাই
    ইউ আর অলওয়েজ ওয়েলকাম মিঃ সেন,হেসে বললেন মিঃ রায়
    মিঃ ঘোষ তখন বললেন, “দেখবেন ব্যাপারটা যাতে পাঁচ কান না হয়
    না না,মাথা নেড়ে অনিদা বলল, “আমি বরঞ্চ কাল গিয়ে বলব যে আমি আমার একটা পার্সোনাল কাজে আপনাদের কাছে এসেছি
    সেই বরঞ্চ ভালো,হেসে বললেন মিঃ ঘোষ
    অনিদা তখন বলল, “আচ্ছা, সেই পেনের কালিটার ব্যাপারে আর কিছু জানতে পেরেছেন আপনারা?”
    হ্যাঁ,মাথা নেড়ে মিঃ রায় বললেন, “পরীক্ষা করিয়ে জানতে পেরেছি, সেটা কোনও ব্রিটিশ কম্পানির পেনের কালি
    ব্রিটিশ কম্পানির পেনের কালি!” অবাক হয়ে অনিদা জিজ্ঞাসা করল, “আপনাদের চেনাশোনা কেউ ওইরকম পেন ব্যবহার করেন?”
    তাতে ওনারা কোনও উত্তর না করে একে অপরের দিকে চেয়ে নিয়ে আবার অনিদার দিকে তাকাল
    আপনারা চুপ করে আছেন যে?” বলে দু’জনের দিকেই একবার করে চাইল অনিদা বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছেন না ওনারা
    তাতে আমতা আমতা করে মিঃ রায় বললেন, “আসলে ওই পেনটা দিয়েই লকার খোলা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে প্রমাণ ছাড়া এতটা নিশ্চিত হওয়াটা কি উচিত?”
    তাতে সোজা হয়ে বসে অনিদা বলল, “কে ব্যবহার করেন ওই পেন?”
    তাতে কিন্তু কিন্তু করে মিঃ ঘোষ বললেন, “পার্থ মিত্রর ছেলে লন্ডনে থাকে গত মাসেই ওনার জন্য সেখান থেকে একটা পেন এনে দিয়েছে!”
 
*                          *                          *
 
    সি আই ডি অফিসারেরা চলে যেতে আমি অনিদাকে বললাম, “আচ্ছা অনিদা, আমি মানলাম যে পেন দিয়েই পাসওয়ার্ড টাইপ করা হয়েছিল কিন্তু তার জন্য তো রিফিলের ডগা দিয়ে না করে সেটা ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে নিয়ে তারপর সেটা ব্যবহার করা উচিত ছিল আর টিপ পেন হলে রিফিলটা চেপে ভেতরে ঢুকিয়ে নেওয়া উচিত ছিল তাই না? চোর এত স্মার্ট আর এটা বুঝল না যে এতে করে ধরা পরে যাবার চান্স থাকে?”
    আমার কথা শুনে খুশি হয়ে অনিদা বলল, “ভেরি গুড পয়েন্ট জয় আর তোর কথার মানে করলে এটাই দাঁড়ায় যে চোর ইচ্ছে করেই পেনের মুখ খোলা রেখে পাসওয়ার্ড টাইপ করেছে যাতে পেনের কালিটা কী বোর্ডের কী গুলোর গায়ে লেগে যায় আর সবার সন্দেহটা মিঃ মিত্রর ওপর গিয়ে পড়ে!”
    তার মানে মিঃ মিত্র অপরাধী নন,একটা সূত্র অন্তত বের করতে পেরেছি ভেবে ডান হাতটা মুঠো করেছি, তখন অনিদা আমার উৎসাহে জল ঢেলে দিয়ে বলল, “দেখা যাক সবই প্রমাণসাপেক্ষ
 
()
 
    পরের দিন সকালবেলা আমরা পৌঁছলাম সি আই ডি অফিসে ঢোকার মুখে আমাদের আপাদমস্তক সার্চ করা হল মিঃ রায় আর মিঃ ঘোষের কথা বলতে এবার ওনাদের সঙ্গে ইন্টারকমে যোগাযোগ করা হল
    আমরা এসে গেছি শুনে ওনারা দু'জন নিচে নেমে এলেন আমাদের ওপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার আগেই অবশ্য আমাদের ছবি আর বুড়ো আঙুলের ছাপ নিয়ে নেওয়া হয়ে গেছে যে অফিসে ঢুকছি, সেখানে এই ব্যবস্থা তো হবেই! অনিদা সে কথা আগেই বলেছিল আমাকে অবশ্য এত করেও সিকিউরিটি গার্ডদের শান্তি হয়নি দু’জনেরই গলায় ভিজিটরস কার্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে থেকে থেকে মনে হচ্ছিল আমরা যেন আন্ডার ওয়ার্ল্ডের নাম করা গুন্ডা এই মাত্র ধরা পরেছি এবার হাই কোর্টে তুলছে!
বারো তলার ঘরটা বেশ সুন্দর বাইরের দিকের দেয়ালটা কাচের আজকালকার প্রায় সব উঁচু উঁচু বিল্ডিং-এই এই ব্যবস্থা এতে বিল্ডিং-এর ওপর বেশি চাপ পড়ে না জানালাগুলো স্লাইডিং সেগুলোও কাচের
    ঘরের তিনদিকে তিনটে টেবিল তার প্রতিটাতেই একটা করে ল্যাপটপ খোলা অবস্থায় দেয়ালে ঝোলানো পৃথিবী থেকে শুরু করে ভারত বর্ষের ম্যাপ ছাড়া ঘরে প্রচুর বইও চোখে পড়ল আমাদের বিজ্ঞান, ইতিহাস, কী নেই? অনিদাকেও এই রকম ধরনের নানা বই পড়তে দেখেছি আসলে ওদের পেশাটাই ওদেরকে এত পড়তে বাধ্য করে যেমন এই মুহূর্তে মনে পড়ছে ফেলুদা তো আবার রান্নার বইও পড়ত!
    পার্থ মিত্রকে দেখছি না?” জিজ্ঞাসা করল অনিদা
    উনি এসিপির কাছে গেছেন এখুনি এসে পড়বেন,বললেন মিঃ রায়
    কাচের দেয়াল হওয়ার জন্য এই ঘরের ভেতর থেকে কলকাতা শহরের বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায় আশেপাশে এত বড়ো আর কোনও বাড়ি না থাকার জন্য সামনের অনেকটাই খোলামেলা বেশ কিছুটা দূরে অবশ্য একটা উঁচু বাড়ি রয়েছে তবে সেটা আন্ডার কন্সট্রাকশন জানালা দিয়ে একটু মুখ বাড়িয়ে ডাইনে তাকালে আবার হাওড়া ব্রিজও চোখের নাগালে চলে আসে! যদিও আবছা যত দেখছিলাম, তত চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল! এর মধ্যেই আমাদের জন্য চিকেন বার্গার আর কোল্ড ড্রিঙ্কস চলে এসেছে অনিদা এতটুকু সময় নষ্ট না করে বার্গারে কামড় মারল
    এর মধ্যে আমি অবশ্য আমার ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও অন করে দিয়েছি আসলে আমরা যে তদন্তেই নামি না কেন, সব কিছু রেকর্ড করে নিই এতে পরে হিসেব-নিকেশে সুবিধে হয় অবশ্য এই পুরো ব্যাপারটাই গোপনে চলে কারণ অনিদা চায় না যে ওর এই পদ্ধতি বাইরের কেউ জানুক সুতরাং মোবাইল ক্যামেরা তার কাজ করে যেতে লাগল আর আমি আমার মাথার হার্ড ডিস্কে সব কিছু গেঁথে নেবার চেষ্টা করতে লাগলাম
    এটাই সেই লকার যেটা থেকে হিরেটা চুরি হয়েছিল?” অনিদার প্রশ্নে ঘরের উত্তর-পূর্ব কোণে একটা লকারের দিকে চোখ গেল বুঝলাম অনিদার প্রশ্নটা সেটা দেখেই
    হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন হিরেটা ওতেই ছিল,আচমকা পেছন থেকে একটা গলা পেয়ে পেছন ফিরে দেখি পার্থ মিত্র আজকের মিঃ মিত্র আর সেদিনের মিঃ মিত্রর মধ্যে বিস্তর ফারাক পেলাম ঘটনার জেরেই হয়তো ওনার চোখ-মুখ এমন শুষ্ক হয়ে রয়েছে ঘরে ঢুকে উনি বললেন, “ঘটনার দায়টা পুরোটাই আমার আপনি তো সবই শুনেছেন মিঃ সেন সেদিন যদি বোকার মতো এই স্টেপটা না নিতাম, তবে নিজেও এমন ফ্যাসাদে পড়তাম না আর এই বেচারারাও এভাবে খাদের কিনারায় চলে আসত না
    আপনি এমন করে ভাবছেন কেন?”
    না মিঃ সেন,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিঃ মিত্র বললেন, “আপনি হয়তো আরও শুনে থাকবেন যে লকারের কী বোর্ডের ওপর একটা পেনের কালির দাগ পাওয়া গেছে
    হ্যাঁ, শুনেছি
    আর এও নিশ্চয়ই জানেন যে আমার ঠিক ওই রকম একটা পেন আছে?”
    কিন্তু তাতে কিছু প্রমাণ হয় কি?”
    আর প্রমাণের কী প্রয়োজন মিঃ সেন?”
    কথা শুনে বুঝলাম ভদ্রলোক কতটা মুষড়ে পরেছেন অনিদা ওনাকে বলল, “আপনি এত বড়ো অফিসার হয়েও এমন কথা বলছেন?”
    কী করব বলুন?” হতাশ গলায় মিঃ মিত্র বললেন, “ব্যাপারটার মধ্যে এমনভাবে জড়িয়ে পড়লাম! ইনভেস্টিগেশনটা হয়তো আমরা নিজেরাই করতে পারতাম কিন্তু তাতে লোক জানাজানির একটা ভয় থাকে কারণ আমাদের গতিবিধি একটু আলাদা হলেই সেটা চোখে পড়ে যাবেউত্তেজিত হয়ে বললেন মিঃ মিত্র বললেন, “আর তাছাড়া, আমিই বা একাজ করিনি তার কী প্রমাণ আছে? আমাদের লাইফটাও হয়তো এবার শেষ হয়ে যাবে! যদি চাইতাম তাহলে খুব সহজেই সাজিয়ে ফেলতে পারতাম যে হিরে মিউজিয়ামের মধ্যে থেকেই চুরি হয়েছে কিন্তু সেটা আমরা চাই না আমরা অপরাধীকে ধরতে চাই
    আমিও,বলে অনিদা ওনার দিকে এগিয়ে গেল বলল, “সেই ব্রিটিশ পেনটা আছে আপনার সঙ্গে?”
    হ্যাঁ, ওটা আমার সঙ্গে সবসময় থাকে,বলে পকেট থেকে পেনটা বের করে অনিদাকে দিলেন উনি অনিদা একবার সেটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল তারপর সাদা কাগজে দুচারটে লাইন টানল অবশ্য জানি না কেন! এবার সেটা আমার হাতে দিয়ে লকারটার দিকে এগিয়ে গেল এবার পকেট থেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করে লকারের কী বোর্ডের কী গুলো খুঁটিয়ে দেখতে লাগল
    ভালো করে দেখলে বুঝতে পারবেন, কী গুলোর বেশ কয়েকটাতে এখনও কালি লেগে আছে,পাশ থেকে বললেন মিঃ রায়
    হুম,কাজ করতে করতেই উত্তর দিল অনিদা
    পেনটাতে যে কালির রিফিল ছিল, সেটা খুব ঘন অনেক সময় কালি রিফিলের মুখে এসে জমা হয় আর সেই সময় সেই পেন দিয়ে লিখলে একসঙ্গে অনেকটা কালি বেরিয়ে পরে আমার মনে হয় এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে পেনটা দিয়ে যখন পাসওয়ার্ড টাইপ করা হয়েছে, তখন তার থেকে কালি বেরিয়ে কী বোর্ডে লেগে গেছে তবে সেটা কিন্তু তখনই হয় যখন পেন বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয়
    অনিদা এবার মিঃ মিত্রকে জিজ্ঞাসা করল যে ওই পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে উনি পেনটা হাতছাড়া করেছিলেন কিনা তাতে জোরে জোরে ডাইনে বাঁয়ে মাথা নেড়ে মিঃ মিত্র বললেন, “না না, কখনও না পেন আমি হাত ছাড়া করি না মিঃ সেন সবসময় সঙ্গেই রাখি বলে পেনটা এবার আমার কাছ থেকে নিয়ে নিজের বুক পকেটে রাখলেন মিঃ মিত্র
    ওকে,এবার কিছুক্ষণ মাটির দিকে চেয়ে থেকে অনিদা আমাকে বলল, “আয় তো একবার বাইরে
    আমি কোনও কথা না বলে অনিদার পেছন পেছন এগিয়ে গেলাম আমাদের ঘর থেকে বেরোতে দেখে মিঃ ঘোষ জিজ্ঞাসা করলেন, “কোথায় চললেন মিঃ সেন?”
    এক মিনিটআপনারা নরমালি কথা বলতে থাকুন পারলে একটু গলা চড়িয়েই বলুন,বলে আমাকে নিয়ে বাইরে এসে দরজা বন্ধ করে দিল অনিদা তারপর আমাকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কিছু শুনতে পারছিস?”
    আমার কানে কিছুই আসছিল না অনিদা তাই এবার দরজা ফাঁক করে মাথাটা ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আপনারা কথা চালিয়ে যাচ্ছেন তো?”
    হ্যাঁ হ্যাঁ,ভেতর থেকে মিঃ মিত্রর গলা পেলাম
    তখন আবার দরজাটা বন্ধ করে বাইরে এসে অনিদা আমাকে বলল, “ভালো করে দরজায় কান পাত ওনাদের কথা শুনতে পাচ্ছিস?”
    তুমি বুঝি সন্দেহ করছ যে বাইরে থেকে কেউ ওনাদের প্ল্যান শুনে ফেলেছিল কিনা?” অনিদা কিছু না বলাতে বুঝলাম আমার প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ কিন্তু আমার কানে কিছুই আসছিল না দরজাটা যখন অনিদা খুলেছিল, তখন ভেতর থেকে কথার আওয়াজ পাচ্ছিলাম কিন্তু বন্ধ করে দেবার পর আর কিছুই কানে আসছিল না একবার করে ডান কান বাঁ কান দিয়ে দরজার নানা জায়গায় পেতে অনেক চেষ্টা করেও কিছু শুনতে পেলাম না
    অনিদা তখন কপাল কুঁচকে নিচের ঠোঁটটা উলটে একদৃষ্টে মাটির দিকে চেয়ে থেকে বলল, “বাইরে থেকে কেউ ভেতরে কী কথা হয়েছে সেটা শোনেনি, সেটা সম্পর্কে সিওর হওয়া গেল
    আমরা ভেতরে ঢুকতে অনিদা এবার ওনাদেরকে জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা এই হিরেটা নিয়ে আপনারা কোথায় কোথায় আলোচনা করেছিলেন?
     ব্যাপারে আমরা বাইরে কোথাও কিছু আলোচনা করিনি মিঃ সেন হিরেটা এখানে সরিয়ে আনা, সেটা চুরি হওয়ার ঘটনা বা আপনাদের এখানে আসার কথা, কোনও কিছুই আমরা বাইরে আলোচনা করিনি
    অনিদা কিছু বলছে না দেখে আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী ভাবছ অনিদা?
    অনিদা খুব গম্ভীরভাবে বলল, “তাহলে ভেতরের খবর বাইরে বেরোল কী করে? চোর জানল কী করে যে এই ঘরের ভেতরে হিরে রয়েছে? আর তাছাড়া লকারের কোডটাই বা পেল কী করে? এবার অফিসারদের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিন্তু অপরাধীর কাছে এই খবর পৌঁছেছিল খবর এই ঘরের বাইরে গেছিল
    কিন্তু কী করে? অনিদার কথা শুনে পার্থ মিত্র বললেন, “আমরা কখনও বিষয়ে বাইরে আলোচনা করিনি আর ঘরে কথা বললে কোনোভাবেই তা বাইরে যায় না সেটা তো আপনি দেখলেনই
    হুঁ, সেটা অবশ্য ঠিক,মাথা নেড়ে বলল অনিদা তারপর বলল, “তবে একটা জিনিস, চুরি যখন হয়েছে, চোর ঘরে ঢুকেছিল সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই ঘরে ক্যামেরা লাগানো নেই?
    হ্যাঁ আছে,বললেন মিঃ রায়
    গুড! ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে একটা ঘুঁষি মেরে অনিদা বলল, “তাহলে তো চোর আমাদের হাতের মুঠোয়!
    না মিঃ সেন,শুকনো হাসি হেসে মিঃ ঘোষ বললেন, “এটাই তো আসল ভূতুড়ে ব্যাপার
    ভূতুড়ে ব্যাপার! অবাক হয়ে অনিদা জিজ্ঞাসা করল, “সেটা কী রকম?
    তাতে মিঃ রায় জানালেন যে ক্যামেরা সব সময় অন থাকে সেদিনও ছিল কিন্তু তাতে সেই সময়ের কোনও ছবি নেই!
    সে কী!” অনিদার সঙ্গে সঙ্গে আমিও তখন বেজায় অবাক
    তাহলে তো বলতে হয় অদৃশ্য কারও হাত রয়েছে এ কাজে!” যেন আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল অনিদা তারপর ডানদিকের কোনার দিকে দেওয়ালের ওপরে তাকাল সেখানেই লাগানো ছিল সিসিটিভি ক্যামেরাটা অনিদার কথামতো এবার চুরির দিনের ফুটেজটা চালানো হল ক্যামেরাতে দরজা আর তার বাঁ দিকের দেয়ালটা কভার হলেও কাচের দেয়ালের সবটা কভার হচ্ছিল না
    পাঁচ ঘণ্টার ফুটেজ এই মুহূর্তে দেখা সম্ভব না তাই ওনারা সেটা অনিদাকে হার্ড ডিস্কে দিয়ে দিলেন কখন কী দরকারে লাগে, তাই আমরা আমাদের সঙ্গে পেন ড্রাইভ থেকে শুরু করে এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক, সব রাখি অনিদা এবার ডানদিকের দেয়ালের কাচের জানালাটার দিকে এগিয়ে গেল স্লাইডিং জানালাটা টেনে খুলতে হুড়মুড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া এসে ঢুকল ঘরের ভেতর এবার জানালা দিয়ে মাথা বাড়িয়ে একবার করে ডাইনে বাঁয়ে তাকাল অনিদা তারপর জানালাটা বন্ধ করে দিল
    ঘড়িতে এখন প্রায় সাড়ে আটটা আমাদের এবার এখান থেকে বেরোনোর পালা কিন্তু ঘর থেকে বেরোতেই লাইট গেল আশ্চর্যের ব্যাপার, কাল থেকে এই বিল্ডিং-এর জেনারেটরটাও খারাপ! তাই লিফটে নামার আর এখন কোনও উপায় নেই, সিঁড়ি ভেঙেই নামতে হবে অবশ্য সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যতটা কষ্ট, নামতে ততটা হয় না
    নিচে নামার জন্য সবার আগে এগিয়ে গেলাম আমিই পেছনেই ছিল অনিদা ওর পেছন পেছন আসছিলেন তিনজন অফিসার এবার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে টর্চটা অন করতে গেছি, এমন সময় আচমকা পা হড়কে গেল অনিদার হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাবার আগেই ধরে ফেললাম ওকে ঝট করে দেয়ালে ভর দিয়ে নিজেকে সামলে নিল অনিদা এই অন্ধকারে সিঁড়ি দিয়ে হড়কে পড়ে গেলে কী হত ভেবেই আমার বুক কাঁপছিল মোবাইলের আলোর ওপর ভরসা করে আমরা বারো তলা থেকে এক তলায় নামলাম নিচে আমাদের সঙ্গে দেখা হল আবীর বোসের ততক্ষণে আলো এসে গেছে আবীর বোস বললেন উনি সিগারেট কিনতে গেছিলেন অনিদাকে দেখে বললেন, “আরে! আপনি কখন এলেন?”
    এই তো, কিছুক্ষন আগে,হেসে বলল অনিদা
    ফেরার সময় একমনে গাড়ি চালাচ্ছিল অনিদা চুরি হওয়া হিরে আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লোকজনের ব্যাপারে প্রচণ্ড কৌতূহল হচ্ছিল আমার এদিকে অনিদাও মুখে তালা লাগিয়েছে অনেকক্ষণ উশখুশ করার পর এবার থাকতে না পেরে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “পার্থ মিত্রকে তোমার কেমন লাগল অনিদা?”
    হয় এক নম্বর ধড়িবাজ না হয় গল্পের বইয়ের কোনও এক সৎ অফিসার আজকের দিনে দু’নম্বরটা আশা করা অন্যায়,বলে আমার দিকে একবার চেয়ে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল অনিদা
    আমি তখন আবার প্রশ্ন করলাম চুরি হল অথচ ক্যামেরাতে ধরা পড়ল না! এটা হতে পারে?”
    আমার কথার কোনও উত্তর দিল না অনিদা আমি বললাম, “আচ্ছা, চোর কি শুধু দরজা দিয়েই আসতে পারে? জানালা দিয়ে নয়?”
    তাতে মুচকি হেসে একবার আমার দিকে তাকাল অনিদা
    তাতে মনে হল আমার চিন্তাটা বেকার কারণ অত উঁচুতে বারো তলার জানালা বেয়ে কে বা চুরি করার সাহস করবে? অনিদা কোনও কথা বলছে না দেখে আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কী ভাবছ অনিদা?”
    অনিদা তখন আমাকে চমকে দিয়ে বলল, “ভাবছি, সিঁড়িতে আমাকে ধাক্কাটা মারল কে?”
    মানে!”
    পার্থ মিত্র ছিলেন সবার পেছনে মিঃ রায় ছিলেন আমার বাঁ দিকে আর মিঃ ঘোষ আমার ডান দিকে দু’হাতের মধ্যে হাঁটছিলেন
    অনিদার কথা শুনে আমি তখন ওকে কেউ ধাক্কা মেরেছে! অথচ আমরা কেউ কিছু বুঝতেও পারিনি!
    ধাক্কাটা মেরেছিল ডান কাঁধে আর যত দূর মনে হয় সেটা মারা হয়েছিল বাঁ হাত দিয়ে
    আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী করে বুঝলে?
    বুড়ো আঙুলের ছোঁয়ায় তাই মনে হয়েছিল,বলে অনিদা বলল, “মিঃ রায়ের পক্ষে বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে বাঁ হাত ব্যবহার করে ও কাজ করা সম্ভব না আর কোনও স্বাভাবিক মনের মানুষ সেটা করতেনও না ডান হাতই ব্যবহার করতেন আর পার্থ মিত্রর পক্ষে অত দূর থেকে আমার ধাক্কা মারা সম্ভব নয়
    তাহলে তো আর বাকি থাকেন আশীষ ঘোষ!” আমি অবাক হয়ে বললাম
    তাতে মুখ দিয়ে চিক করে একটা শব্দ করে অনিদা বলল, “সামান্য হলেও কাজটা ওনার পক্ষেই করা সম্ভব কিন্তু কারণ?”
    শেষ যে কথাটা অনিদা প্রশ্নের আকারে করল, সেটা ওর নিজেকেই নিজে করা আমি অনিদার কথাগুলো হাঁ করে গিলছিলাম এবার জিজ্ঞাসা করলাম, “সে চোর কি তাহলে মিঃ ঘোষ?”
    তাতে হ্যাঁ বা না কিছুই বলল না শুধু বলল, “ফুটেজটা দেখতে হবে
 
()
 
    সকালবেলা ঘণ্টাখানেকের জন্য অনিদা আমাকে না বলে কোথায় যেন বেরিয়েছিল এইরকম অবশ্য আগেও করেছে হুট হাট করে আমাকে না জানিয়ে কোথায় চলে গেছে এগুলো আমার ভালো লাগে না আমি নাকি ওর সহকারী!
    দুপুরে আমরা ওর ঘরে বসে ছটফটানিই বলে দিচ্ছিল যে এই কেসটা নিয়ে কতটা উত্তেজিত সেদিনের তোলা ভিডিও আর ছবিগুলো আমরা বার বার দেখেছি কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়েনি
    তোমার কি মনে হয় এই হিরে চুরির ব্যাপারটা এদেরই সাজানো?” অনিদাকে জিজ্ঞাসা করলাম
    হতে পারে আবার নাও হতে পারে,ছোট্ট কথায় উত্তর করল অনিদা
    না হলে তো বলতে হয় এতে চার নম্বর কারও হাত আছে
    সেটাও এই মুহূর্তে ঠিক বলা যাবে না আমাদের আরও কিছুটা এগোতে হবে
    এরা তিনজন তো এক সঙ্গে মিলে থাকতেও পারে?”
    উঁহু,আমার কথায় জোরে মাথা নাড়ল অনিদা
    এতটা সিওর হচ্ছ কী করে?”
    আরে বোকা, তাহলে তো ওরা জিনিসটা চেপেই যেত আমাকে এ কাজ করতে দিত না
    অনিদার কথায় ওজন ছিল আমি কিছু না বলে ওর দিকে চেয়ে রইলাম বলল, “ঘটনার কয়েকটা পয়েন্ট আমাদের মাথায় রাখা দরকার প্রথমেই আসি পার্থ মিত্রর কথায় ওনার কথামতো হিরেটা মিউজিয়াম থেকে নিয়ে আসার পর সেটা চুরি হয় এতে ভদ্রলোকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই চাপে পড়ে গেছেন উনি ভালোভাবেই জানেন এতে ওনাদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ, জিনিস বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যাবে না তাই জেনেশুনে উনি নিজের পায়ে কুড়ুল মারবেন না তাও আবার ক্যারিয়ারের এই জায়গায় এসে আর সত্যিই যদি ওনার চুরি করার বা করাবার মতলব থাকত, তবে চুরির দিন ওইভাবে মিউজিয়ামের বাইরে বেরিয়ে শুধু শুধু সন্দেহটা নিজের দিকে টেনে আনতেন না তাছাড়া আমি আজ কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সত্যিই উনি সেদিন রায় এন্ড রায় থেকে চারটে বই কিনেছিলেন
    তাহলে তো পার্থ মিত্র নির্দোষ
    অনিদা আমার কথার কোনও উত্তর করল না আমি তখন বললাম, “সেক্ষেত্রে বলতে হয়, কুশল রায় বা আশীষ ঘোষের মধ্যেই কেউ একজন অপরাধী?”
    সেরকমটা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু এখনই আমি সে ব্যাপারে সরাসরি মন্তব্য করব না
    আমি তখন ওকে বললাম, “প্রথম পয়েন্ট হল পার্থ মিত্র নির্দোষ দুনম্বর পয়েন্ট হল মিঃ ঘোষ আর মিঃ রায় যাঁদের ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাবে না এগুলো ছাড়া আর কিছু আছে?”
    অনিদা তাতে বলল, “তিন নম্বরটা হল, এনারা তিন জন ছাড়া আর কে কে আছেন যাঁরা হিরেটার কাছে যেতে পেরেছিলেন
    এসিপি গুহ আর জুনিয়র অফিসার আবীর বোস কিন্তু এনারা তো পার্থ মিত্রদের প্ল্যানের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না,অনিদাকে বললাম আমি
    তাতে অনিদা হুঁবলে বারদুয়েক ওপর-নিচ মাথা নাড়ল
    আমি তখন বললাম, “তাহলে তো প্রমাণ হয়েই গেল যে আবীর বোস বা এসিপি গুহ, কেউই এর সঙ্গে জড়িয়ে নেই
    অনিদা এর উত্তরে একটা অন্য কথা বলল বলল, “কাল আবীর বোস একটা মিথ্যে কথা বলেছিলেন
    মিথ্যে কথা?” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “সেটা কী রকম?”
    অনিদা তখন বলল, “কাল যখন ওনার সঙ্গে নিচে আমাদের দেখা হল, তখন উনি বলেছিলেন যে উনি সিগারেট কিনতে গেছিলেন
    হ্যাঁ, বলেছিলেন কিন্তু তাতে কী?” অনিদা কী বলতে চাইছে বুঝলাম না তাই জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কি বলতে চাইছ উনি সিগারেট কিনতে যাননি? আর যদি নাই বা গিয়ে থাকেন, তুমি সে কথা জানলে কী করে?”
    কারণ ওনার বুটে তখন কাদার দাগ লেগে থাকতে দেখেছিলাম, যেটা ছিল কিনা টাটকা আর ওনাদের অফিসের সামনে যে সিগারেটের দোকানগুলো রয়েছে, সেখানকার সব রাস্তাই পাকা ঢালাই করা অনেক বৃষ্টিতেও কাদা জমার কোনও চান্স নেই আর কাল তো বৃষ্টিও হয়নি! তাহলে জুতোয় কাদা এক কোথা থেকে?”
    তার মানে উনি কাদা জমা রাস্তা দিয়ে হেঁটে এসেছিলেন!”
    কাদা জমা মানেমাটির রাস্তা?”
    হ্যাঁ আমি দেখেছি যে তেমন রাস্তা ওনাদের অফিসের ডান দিকেই আছে
    অনিদা তাতে হেসে বলল, “গুড অবজারভেশন
    আমি তখন চমকে উঠে বললাম, “কিন্তু আবীর বোস ওদিকে কেন গেছিলেন ওই সময়?”
    সেটা নিয়ে ভাবার এখনও সময় আসেনি তাই পরের পয়েন্টটা নিয়ে আলোচনা করা যাক,বলল অনিদা
    ওকে,আমি ঘাড় কাত করে বললাম, “তবে তাই হোক
    অনিদা তখন বলল, “হিডেন ক্যামেরাতে কিছুই ধরা পড়েনি অথচ হিরেটা ঘরের মধ্য থেকেই চুরি হয়েছে তাই প্রশ্ন হল কে কাজটা করেছে আর তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন, কী করে করেছে? আর সেটা জানতে পারলে অনেক কিছুর ওপর থেকেই ঢাকনা সরে যাবে রে জয়বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনিদা তারপর বলল, “এই অজানা উত্তরটাই হল আমার চার নম্বর পয়েন্ট
    প্রথম দুটো পয়েন্ট সহজেই মাথায় ঢুকেছিল এবারে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেললাম এত কিছুর পরেও পাঁচ শতাংশের বেশি এগোতে পারিনি আমরা আকাশ পাতাল অনেক কিছু ভাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু চিন্তাটা শূন্য থেকে শুরু হয়ে আবার শূন্যতে এসে মিলিয়ে গেল তাই আমি একরকম হতাশ হয়েই অনিদাক জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমার সন্দেহটা তাহলে কোথায় হচ্ছে?”
    অনিদা তখন আমাকে বেশ হতাশ করে বলল, “সন্দেহ করতে গেলে তো শক্তপোক্ত একটা বেস লাগে সেটাই তো পাওয়া যাচ্ছে না!”
    তাহলে এবার কী করনীয়?”
    চল, সিসি টিভির ফুটেজটা একবার দেখে নিই,বলে অনিদা এবার হার্ড ডিস্কে করে আনা সেই পাঁচ ঘণ্টার ফুটেজটা চালিয়ে দিল
    এমন একটা পাগলাটে বোরিং কাজ আমি জীবনে করিনি ল্যাপটপের স্ক্রিনে সি আই ডি অফিসের বারো তলার ঘরটা দেখা যাচ্ছে সব একেবারে চুপচাপ কিছুটি নড়ছে না বোঝা যাচ্ছে না যে এটা স্টিল ছবি না ভিডিও ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবার জোগাড় পাঁচ মিনিটই কাটছে না, পাঁচ ঘণ্টা কী করে দেখব!
    খুব কষ্ট করে দেড় ঘণ্টা দেখেই মারাত্মক কাহিল হয়ে পড়লাম আমি চোখ খুলেই ঝিমোচ্ছি ঠিক এমন সময় অনিদা চেঁচিয়ে উঠল, “হোল্ড অন, হোল্ড অন!” আর সঙ্গে সঙ্গে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম আমি অনিদার চিৎকারে তখন আমার ঝিমোনি উধাও
    ব্যাক কর, ব্যাক কর,বলে নিজেই অনিদা ফুটেজটাকে কয়েক মিনিট পিছিয়ে দিল এবার সেটা আবার চলতে শুরু করতে দেখি ওর চোখ জোড়া বড়ো বড়ো হয়ে উঠেছে এবার ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, “দেখ!” স্পষ্ট উত্তেজনা ধরা পড়ছিল ওর গলায়
    আমি তখন ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে দেখি সিসি টিভিতে তোলা ফুটেজে ঘরের মেঝেতে লম্বা সরু একটা দাগ দেখা যাচ্ছে!
    স্লাইডিং জানালার দুটো স্লাইড বন্ধ করার পর মাঝে যে জায়গায় স্লাইড দুটো এসে মেশে, সেখানকার দুটো স্লাইডের ধারের কাঠামোগুলো সামনে পেছনে একসঙ্গে থাকে এবার বুঝতে পারছিস?” মেঝের সরু দাগটা দেখিয়ে আমাকে অনিদা বলল, “এই দাগটা সেটারই ছায়া
    জিনিসটা অবশ্য আমি আগেই দেখেছি তাই বললাম, “এটা তো আগেই ছিল এটার মধ্যে আবার কী নতুন জিনিস খুঁজে পেলে তুমি?” কিন্তু কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠে দেখি লম্বা ছায়াটা ম্যাজিকের মতো দুআধখানা হয়ে দু’দিকে সরতে শুরু করেছে!
    অনিদা তখন চাপা গলায় বলল, “জানালাটা কেউ বাইরে থেকে খুলছে!”
    আমার ততক্ষণে বুক ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করে দিয়েছে গলার কাছটা শুকিয়ে আসছিল দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করছি মুখোশের আড়াল থেকে আসল অপরাধীর বেরিয়ে আসার কিন্তু হঠাৎ করে পুরো ভোঁ ভাঁ! আমাদের সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে আচমকা থেমে গেল ক্যামেরা! রাগে ঠোঁট উলটে অনিদার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “এটা কী হল অনিদা?”
    অনিদা তখন বলল, “ঠিক এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড অপেক্ষা কর ক্যামেরা আবার চলতে শুরু করবে
    এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড!” আমি অবাক হয়ে বললাম, “সে আবার কী?”
    আঃ! দেখই না,ল্যাপটপে চোখ রেখে বলল অনিদা
    আর হলও তাই পজহবার ঠিক এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড বাদে আবার চলতে শুরু করল ক্যামেরা! কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, মেঝের ওই দাগটা তখন আবার নিজের জায়গায় ফিরে এসেছে! স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটা!
    এটা কী হল?” এবার বিরক্ত লাগল আমার
    কী আবার হবে?” হেঁয়ালি করে অনিদা বলল, “যা দেখলি, তাই হল
    মানে?”
    মানে চোর এই দুমিনিটের মধ্যেই কাজ সেরে ফেলেছেবলে ল্যাপটপ থেকে এবার হার্ড ডিস্কটা খুলে নিল অনিদা
    আমি তখন বললাম, “ওকি! ওটা বের করে নিলে যে? আর দেখব না?”
    অনিদা তখন সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বলল, “লাভ নেই ক্লু বা সূত্র, যাই বল না কেন, ওই এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড!” এবার উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে তর্জনীতে ঘোরাতে শুরু করল এর মানে আমি জানি তাই জিজ্ঞাসা করলাম, “এসময় চললে কোথায়?”
    অনিদা তাতে বলল, “কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নে
    কোথায় যাব?”
    সি আই ডি অফিসেতারপর কয়েক মুহূর্ত চুপ করে ভুরু কুঁচকে চেয়ে থেকে বলল, “ক্যামেরাটা শুধু কারেন্টেই চলে নাকি ব্যাটারিতেও চালানো যায়?”
    ব্যাটারিতে?” অনিদার কথার মানেটা আমার কাছে পরিষ্কার হল না
     তখন বলল, “আশা করি লক্ষ করেছিস যে ক্যামেরার সুইচটা ঘরের ভেতরেই ছিল?”
    হ্যাঁ, ক্যামেরার ঠিক নিচে
    তবে সেটা বন্ধ করতে হলে কাউকে না কাউকে ঘরের ভেতরে আসতেই হবে
    কিন্তু ভেতরে তো কাউকে দেখতে পেলাম না!”
    তার মানে এটাই দাঁড়াচ্ছে যে লোডশেডিং হলে তবেই একমাত্র ক্যামেরা বন্ধ করা যায়
    আমি তখন বিরক্ত হয়ে বললাম, “ওঃ, ওই সময়তেই লাইট যেতে হল?”
    লাইট অফ ছাড়া আরও নানা ভাবে তো ক্যামেরা বন্ধ করা যায় জয়
    আমি প্রশ্ন নিয়ে অনিদার দিকে তাকালাম বলল, “কেউ যদি ইচ্ছ করে সেটা বন্ধ করে দেয়?”
    কথাটা শুনে আমার মুখ হাঁ হয়ে গেল কারণ এটার মানে হচ্ছে, এই চুরির সঙ্গে এক জন না, অন্তত দুজন জড়িয়ে!
    অনিদা তখন বলল, “এতে একটা জিনিস অন্তত জানা গেল যে, চোর এসেছিল জানালা দিয়ে আর তাতে আন্দাজ করা যায়, এর পেছনে বাইরের কোনও মাথা কাজ করছে না
    তার মানে কি কেউ এমন আছে যে এই গোয়েন্দাদের মধ্যেই কারও হয়ে কাজ করছে?”
    শেষ পর্যন্ত সেটাই না হয় রে জয় কারণ বাইরের কারও পক্ষে এভাবে বারো তলার ঘরে ঢোকা    বলতে গেলে তো অসম্ভব, তাই না?”
    রাস্তায় যেতে যেতে তিনটে বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হল
    এক, কারেন্ট যদি নিজে থেকে যায়, তাহলে ঠিক আছে কিন্তু প্রশ্ন হল, বেছে বেছে ঠিক ওই সময়তেই কারেন্ট যেতে হল!
    দুই, কারও সাহায্য ছাড়া চোর ওই বারো তলার ঘরে ঢুকল কী করে? সিঁড়ি ভেঙে নাকি বারো তলার কার্নিশ বেয়ে?
    তিন, এবার অনিদা কিন্তু আমার সন্দেহর কথাটাই তুলল অপরাধী কি গোয়েন্দাদেরই এক জন?
 
()
 
    অনেকটা ইঞ্জিনিয়ারদের মতো সি আই ডি অফিসের বারো তলার ঘরটা মন দিয়ে দেখছিল অনিদা আমি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে চোর আসার রাস্তাটা অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম এখান থেকে নিচের দিকে তাকালেই মাথাটা বোঁ বোঁ করে ওঠে গা গুলিয়ে যায় তাই এই পথে চোর ঢুকবে, বিশ্বাস হয় না
জানালার পাল্লা খুলে অনিদা এবার মাথাটা ঝুঁকিয়ে অনেকক্ষণ নিচের দিকে চেয়ে রইল তারপর হঠাৎ আমার হাত ধরে টেনে আমাকে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল
    ওকি! চললেন কোথায়?” আমাদের এভাবে যেতে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন পার্থ মিত্র
    তাতেআসছিবলে অনিদা ওনার দিকে না তাকিয়ে সটান দরজা খুলে বেরিয়ে এল এক তলায় এসে নিচ থেকে অনেকক্ষণ ধরে সি আই ডি অফিস বিল্ডিংটার দিকে চেয়ে রইল অনিদা দেখতে দেখতে আমরা ততক্ষণে কাঁচা রাস্তাটা ধরে বাড়ির পেছন দিকে চলে এসেছি এবার বিল্ডিং-এর পেছন দিকে কোনায় একটা জিনিসে চোখ আটকে গেল অনিদার
    এবার এটা কীবলে সেটার দিকে এগিয়ে গেল পেছন পেছন আমিও কাছে গিয়ে দেখা গেল জিনিসটা একটা লোহার ঢাকনা! দু’জন মিলে অনেক চেষ্টা করেও এক চুল নড়াতে পারলাম না সেটাকে একবার কান পাতলাম ঢাকনাটার ওপর ভাবলাম যদি কিছু কানে আসে মনে হল, ঢাকনাটার ভেতরের দিকে অনেকটা জায়গা ফাঁকা সুড়ঙ্গ কি? জানি না আঙুল দিয়ে টোকা মেরে দেখলাম ভেতরটা ফাঁপা বলেই মনে হল
    এটা তো সাধারণ কোনও ম্যানহোল বলে মনে হচ্ছে না অনিদা ভেতর থেকে বন্ধ মনে হয়
    কলকাতা শহরে এই ধরনের ম্যানহোল অনেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সারা শহরের ড্রেনগুলো এই ম্যানহোলগুলো থেকে অপারেট করা হয় তবে আমার মনে হল না যে এটা একটা ম্যানহোল অনিদাও মনে হল আমার মতোই ভাবছে বলল, “মনে হচ্ছে কোনও এমারজেন্সি ডোর
    অনিদা এবার পার্থ মিত্রকে ফোন করতে জানতে পারলাম আমাদের অনুমানই ঠিক চোরা পথে একটা সিঁড়ি এগারো তলা থেকে নেমে এসে এই জায়গায় মিশেছে আগুন লাগা থেকে শুরু করে আচমকা বিপদের হাত থকে বাঁচতে এই ব্যবস্থা
    এই দেখ জয়,অনিদা এবার হাঁটু গেড়ে বসে ঢাকনাটার চাবি দেবার জায়গাটা আমাকে দেখিয়ে বলল, “এখানে ইন্টারলক সিস্টেম রয়েছে
    আমি তখন বললাম, “তার মানে তো এটা বাইরে ভিতরে, দুদিক থেকেই খোলা যায়?”
    এতে হাসির ঝলক দেখা গেল অনিদার মুখে এবার উঠে দাঁড়িয়ে হেঁয়ালি করে বলল, “দেবীর ব্রজে আগমন নাকি গজে, সেটা অন্তত এবারে বোঝা গেলতারপর আমাকে বলল, “তুই ওপরে যা
    আর তুমি?”
    আমি আসছি
    কোথায় যাচ্ছ?”
    আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সামনে রাস্তার দিকে দৌড়ে চলে গেল অনিদা এবার বারো তলায় উঠে ঘরে ঢুকতেই এগিয়ে এলেন মিঃ রায় কী ভাই? কোথায় গেছিলে তোমরা?” এবার অনিদাকে দেখতে না পেয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার দাদাটি কোথায়?”
    অনিদা কোথায় গেছে আমাকে বলে যায়নি, কথাটা ওনাকে বলতে লজ্জা করছিল এমন সময় হুড়মুড়িয়ে এসে ঘরে ঢুকল অনিদা
    ৩২৯ ফর সিক্স কোহলি আবার সেঞ্চুরি!”
    এই দু’দিন আগেই এশিয়া কাপ শেষ হয়েছে এর মধ্যেই আবার শুরু হয়ে গেছে ভারত নিউজিল্যান্ড সিরিজ কিন্তু এমন একটা সিরিয়াস কাজের সময়তেও অনিদা খেলা নিয়ে আলোচনা করছে! পারে বটে অনিদা! ওর মুখে এমন একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে তিনজন অফিসার একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন অনিদা অবশ্য এতে গা করল না বলল, “নিচ থেকে যে সিঁড়িটা উঠে এসেছে, সেটা কোথায় গিয়ে মিশেছে, একবার আমাকে দেখাবেন চলুন
     সারটেইনলি,মিঃ ঘোষ এবার আমাদের এগারো তলার সেই সিঁড়ির মুখটাতে নিয়ে গেলেন, পেছন পেছন এলেন বাকি দুই অফিসারও
    মাত্র কুড়ি মিনিট তার মধ্যেই এই সিঁড়িটা বেয়ে নেমে নিচ থেকে ঘুরে চলে এল অনিদা এত কম সময়ের মধ্যে এগারো তলা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে একটু হাঁপাচ্ছিল বটে, কিন্তু একেবারে ধরাশায়ী হয়নি অনিদার এতটা দম পাওয়ার কারণ আমি জানি সকালে উঠে নিয়মিত যোগব্যায়াম
    নতুন কোনও সূত্র পেলে?”
    আমার প্রশ্নের উত্তরে অনিদা বলল, “গোপনে যাতায়াত করার জন্য এই সিঁড়িটা খুবই হেলপফুল    তারপর পার্থ মিত্রর দিকে চেয়ে বলল, “চোর কিন্তু পথেই এসেছিল মিঃ মিত্র
    সে কী!” অনিদার কথা শুনে অবাক হয়ে মিঃ ঘোষ বললেন, “কী করে?
    পাশ থেকে মিঃ রায় বললেন, “কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব?”
    কেন নয়?” এবার মিঃ রায়ের দিকে ফিরল অনিদা
    কারণ যে রাস্তা ব্যবহার করে থাকুক তাকে তো বাইরের লোহার ঢাকনা খুলতে হবে চাবি পাবে কোথা থেকে মিঃ সেন?” অনিদার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইলেন না পার্থ মিত্র
    আমি বললাম, “সিঁড়ি তো এগারো তলা পর্যন্ত কিন্তু তারপর?”
    অনিদা তখন হেসে বলল, “তারপর খুব সোজা নিচ থেকে খেয়াল করিসনি? এই দেয়ালে যে কাচের স্লাইডিং জানালা আছে, তার ঠিক নিচে একটা শেড আছে যেখানে দাঁড়িয়ে সহজেই এই জানালার নাগাল পাওয়া যায় সিঁড়িটা এগারো তলায় যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানেও একটা কাচের স্লাইডিং জানালা আছে এই জানালা আর ওই শেডটার মধ্যে ফারাক মাত্র এক হাত জানালা থেকে সহজেই শেড- টপকে যাওয়া যায় তাই এটা অনুমান করা যায় যে চোর এই পথেই বারো তলার এই ঘরে ঢুকেছিল
    অনিদার কথা শুনেই আমার মাথা ঘুরে গেল এত উঁচু তলার কার্নিশচোরের সাহস আছে বলতে হবে একটা পা জানালাতে রেখে এক হাতে দেয়াল ধরে অন্য পাটা কার্নিশেনাঃ, ভাবা যাচ্ছে না আমার তো জিনিসটা ভেবেই মাথা ঘুরছে!
    আমার মতো ঘরে উপস্থিত অন্যদের মুখও তখন হাঁ হয়ে রয়েছে অনিদা আমাদের অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বলল, “এক মিনিটে কোটিপতি হতে গেলে এতটুকু রিস্ক তো নিতেই হয়!” তারপর জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা ওই লোহার গেটের চাবিটা থাকে কার কাছে?”
    সে তো শিবার কাছে থাকে,বললেন মিঃ মিত্র
    কে শিবা?” গল্পে নতুন নাম যোগ হতে অনিদার কপালে দুটো ভাঁজ দেখতে পেলাম
    আমাদের বিল্ডিং-এর সিকিউরিটি গার্ড
    আচ্ছা, আর এই বিল্ডিং-এর মেইন সুইচটা কোথায়?”
    এক তলায়
    ওটা কে অপারেট করে? মানে দরকারের সময়?”
    সেটাও শিবাই করে
    সেটাও শিবা!” কথাটা শুনে কেন জানি না মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠল অনিদার এবার আমার দিকে ঘুরে বলল, “তার মানে এই চাবিটা দিয়েই কারেন্টে তালা দেওয়া হয়েছিল, কী বুঝলি?”
    কারেন্টে তালা! এটা আবার কেমন কথা? মাঝে মাঝে অনিদা এমন সব হেঁয়ালি করে কথা বলে না! বাকি অফিসারদের মুখ দেখে বুঝলাম আমার মতো ওনারাও ধোঁয়াশায়!
    ঠিক এই সময় মিঃ ঘোষের একটা ফোন আসাতে উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন অনিদা তখন বলল, “আমার মনে হয় এই শিবা লোকটার সঙ্গে একবার দেখা করার দরকার আছে
    শিবার সঙ্গে?” বলে মিঃ মিত্র একবার মিঃ রায়ের দিকে তাকালেন তাতে মিঃ রায় বললেন, “দেখুন মিঃ সেন, আমরা চাই না যে ব্যাপারটা বাইরে বেরোক, তাহলে কিন্তু আমরা বিপদে পড়ে যাব এটা খেয়াল রাখবেন
    সেটা হবে না আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন,বলল অনিদা আমি তখন বললাম, “তাহলে ওই সিকিউরিটি গার্ডই কি - ”
    অনিদা আমাকে ইশারা করে থামিয়ে দিল তারপর সবার থেকে তফাতে এসে গলা নামিয়ে বলল, “এত তাড়াতাড়ি আজে বাজে উপসংহার টানার চেষ্টা করলে তোর সংহার আমার হাতে আগে প্রমাণ হোক, তারপর
    আমি আর কথা না বাড়িয়ে লিফটের দিকে পা বাড়ালাম নিচে নামার সময় সাত তলা থেকে আশীষ ঘোষ লিফটে উঠলেন মুখে চোখ দেখেই মনে হচ্ছিল কোনও একটা কারণে উনি তখন খুব উত্তেজিত কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে জানালেন ওনার বাবা খুব অসুস্থ বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই ওনাকে বেরোতে হতে পারে
    এক তলায় লিফট থেকে নামতেই এবার কানে এল একটা হই হই শব্দ তা শুনে পার্থ মিত্র বললেন, “ওই কন্ট্রোল রুমের দিক থেকেই আওয়াজটা আসছে বলে মনে হচ্ছে
    এবার চলুন তো একবার দেখা যাকবলে সবার আগে এগিয়ে গেলেন মিঃ রায়
    কিন্তু যে খবরটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল সেটার জন্য কোনোভাবেই তৈরি ছিলাম না আমরা অবশ্য তার সঙ্গে এটাও মনে হতে লাগল যে কেস সলভ করার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম
    দুপা এগিয়েছি, এমন সময় পড়িমরি করে ছুটে এলেন আবীর বোস অঘটনের খবরটা উনিই দিলেন আমাদের হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, “মার্ডার মার্ডার! খোদ সি আই ডি অফিসে মার্ডার!”
    মার্ডার! কে হল মার্ডার? কে করল? কোথায় হল?” চমকে উঠে বললেন পার্থ মিত্র
    বেচারা আবীর বোস দমও ফেলতে পারছিলেন না কোনোরকমে বার দুয়েক ঢোঁক গিলে বললেন, “শিবা খুন হয়ে গেছে স্যার পাশের জঙ্গলটাতে ওর লাশ পড়ে আছে!”
    মিঃ বোসের কথার মধ্যেই আমার নজর গেল মিঃ ঘোষের ওপর কেন জানি না ভীষণ ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল ওনার মুখটা দেখে মনে হল যেন কিছু ঢাকার চেষ্টা করছেন উনি এবার নিজেকে সামলে নিয়ে দৌড়ে গেলেন কন্ট্রোল রুমের দিকে
    হিরে চুরি কেসটার সঙ্গে শিবা বলে লোকটার জড়িয়ে থাকার ব্যাপারে আর কোনও সন্দেহ রইল না আমার একটা মাত্র সাক্ষীকে হাতে পেতে পেতেই তাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল! অনিদার চোয়ালটা দেখলাম ভীষণ শক্ত হয়ে উঠেছে ভুরু জোড়া কুঁচকে দুচোখ স্থির হয়ে রয়েছে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, “কাওয়ারড!”
    আমার বুকে এর মধ্যে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেছে কেসটা ছিল চুরির এবার তাতে খুন যোগ হল!
    শিবার বডিটা এনে ততক্ষণে মাটিতে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে ক্ষতবিক্ষত শরীরটা চোখে দেখা যাচ্ছিল না আমি অবশ্য এসবে এখন অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি নিশ্চয়ই ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে বডিটা! গলার নলিটা একেবারে হাঁ হয়ে আছে
    মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ আশেপাশের সব জায়গায় চিরুনি তল্লাশ শুরু করে দিল বিশেষ করে যেখানে ওর লাশটা পাওয়া গেছে, সেখানটা অনিদা অবশ্য তখন চুপ করেই দাঁড়িয়ে আমাদের যেহেতু যে কোনও ভাবেই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে, তাই এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়
    পার্থ মিত্রর নিরুপায় মুখটা দেখে খুব খারাপ লাগছিল হতবাক হয়ে ভদ্রলোক এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অনিদা এবার ওনার দিকে এগিয়ে গেল গলাটা যতটা সম্ভব নরম করে বলল, “আপনার অবস্থাটা বুঝতে পারছি মিঃ মিত্র কাইন্ডলি যদি একটা কথার উত্তর দেন!”
    তাতে খুব গম্ভীরভাবে মিঃ মিত্র বললেন, “বলুন কী জানতে চান
    অনিদা তখন জিজ্ঞাসা করল, “আপনাদের রুমের সিসিটিভি কি ব্যাটারিতেও চালান যায়?”
    না, ওটা শুধু কারেন্টে চলে কোনও রকম ব্যাটারি ব্যাক আপ নেই
    আর লোডশেডিং হয়ে গেলে?”
    বন্ধ হয়ে যায় আবার লাইট এলে অটোমেটিক অন হয়ে যায়
    আমরা সি আই ডি অফিসে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করলাম না ফেরার পথে অনিদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “খুনটার সঙ্গে হিরে চুরির কোনও সম্পর্ক আছে বলে তোমার মনে হয়?”
    অনিদা তখন খুব জোর দিয়ে বলল, “ডেফিনিটলি চুরিটা হয়েছে বলেই না মার্ডারটা হল তবে খুনি যেই হোক না কেন, সে আমাদের আশেপাশেই আছে
    তুমি কি মিঃ ঘোষের কথা বলতে চাইছ?”
    উত্তরে অনিদা চুপ করে রইল আমি বললাম, “কিন্তু উনি কী করে কাজ করবেন? উনি তো সেই সময় ফোনে ব্যাস্ত ছিলেন
    আমার কথা শুনে অনিদা বলল, “তোর ফোনের রিং টোনটা আমাকে শোনাতে কতক্ষণ লাগবে?”
     আবার কী কথা? কতক্ষণ আবার? এই তো এক্ষুনি শুনিয়ে দিচ্ছি,বললাম আমি
    রাইট!” আমার কথা শুনে বাঁ হাতের তর্জনী শূন্যে ছুঁড়ে অনিদা বলল, “সেই ভাবেই রিং টোন অন করলেই লোকে ভাবতে বাধ্য যে তোর ফোন এসেছে তাই না?”
    ঠিক ঠিক,আমি তুড়ি মেরে বললাম, “আর ঠিক এই ফাঁকে নিচে গিয়ে সাক্ষীকে সরিয়ে দিয়ে লিফটে করে উঠে সাত তলায় এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া! তাই তো?”
    এটা কিন্তু একটা সন্দেহ মাত্র
    বুঝলাম পোক্ত প্রমাণ না পেলে অনিদা কিছুতেই কোনও পাকা সিদ্ধান্তে আসবে না তাই আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তাহলে কি এর পেছনে কোনও অন্য খেলা আছে?”
    অনিদা তখন আমাকে বলল, “মনে আছে তো ওই এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ডের গল্পটা?”
    হ্যাঁ, কিন্তু তুমি হঠাৎ একথা জিজ্ঞাসা করছ কেন?”
    তাতে মুচকি হেসে অনিদা বলল, “বলছি তার আগে বল ওই সময় ঠিক কী হয়েছিল?”
    লোড শেডিং হয়েছিল আর ঠিক সেই সময় চোর ওই বারো তলার ঘর থেকে হিরেটা চুরি করেছিল
    অনিদা তাতে মাথা হেলিয়ে বলল, “চুরি হয়েছিল লোডশেডিং- হয়েছিল কিন্তু তুই জানলে অবাক হবি যে লোডশেডিং শুধু এই বিল্ডিং-এই হয়েছিল
    মানে?” আমার মুখ হাঁ হয়ে গেল
    অনিদা তখন বলল, “সেদিন ওই সময় আলো যায়নি, বন্ধ করে রাখা হয়েছিল সেদিন তোকে ওপরে পাঠিয়ে আমি আশেপাশের বেশ কিছু বিল্ডিং- খোঁজ নিয়ে দেখেছি কোনও লোডশেডিং সেদিন এই অঞ্চলে হয়নি
    আমি কী বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না শুধু ভাবছিলাম এতে কার হাত থাকতে পারে?
 
()
 
    অনিদার মাথায় মাঝে মাঝে যে কী হয় জানি না গতকাল আমরা গেছিলাম একটা নাটক দেখতে সেখানে আমাদের সঙ্গে পরিচয় হল ওই নাটকের গ্রুপের পরিচালকের সঙ্গে ভদ্রলোক আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে অভিনয় করছেন বেশ কিছু ছবিতেও কাজ করেছেন ওনার সঙ্গে কথা বলে পুরোনো দিনের সিনেমার ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারলাম আর এখান থেকেই তখনকার দিনের সিনেমা, বিশেষ করে তিরিশ আর চল্লিশ দশকের সিনেমা দেখার ইচ্ছেটা চাড়া দিয়ে উঠল অনিদার মধ্যে
    যেমন ভাবা তেমন কাজ কাজের সূত্রেই সিনেমা জগতের বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ রয়েছে অনিদার এনাদের মধ্যে একজন হলেন প্রবীণ পরিচালক শ্রী অনন্য রায়চৌধুরী ভদ্রলোক চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বহু বাংলা ছবি পরিচালনা করেছেন অনিদা ফোন করে ওনার এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিল বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওনার বাড়ি যাওয়া ঠিক হল
    এই পরিচালক ভদ্রলোক থাকেন শ্যামবাজারে মেট্রোয় গেলে সময় বাঁচে তাই সে পথেই পা বাড়ালাম আমরা যতীন দাস মেট্রো স্টেশনে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় একটা হাত এসে পড়ল অনিদার কাঁধে আর তার সঙ্গে কানে এল একটা গলা – “হ্যাল্লো, মিঃ সেনঅনিদাকে কেউ ডাকছে শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সি আই ডি অফিসার আবীর বোস আগেই বলেছি ভদ্রলোকের একটা আলাদা ব্যাক্তিত্ব আছে আর সেটা আবার আমার খুব পছন্দ তার ওপর কথার এমন সুন্দর উচ্চারণ বাংলা হোক কী ইংরিজি
    আরে, মিঃ বোস যে!” হেসে হাত বাড়িয়ে দিল অনিদা
    হ্যাঁ, এসেছিলাম হাজরাতে একটা কাজ ছিল আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?”
    শ্যামবাজার আপনি এখান থেকে কোথায় যাবেন?”
    আমি যাব চাঁদনি চক
    প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ট্রেন এসে ঢুকল তিনজন এক সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু আচমকা একটা ভিড় এসে অনিদাকে আমাদের থেকে আলাদা করে দিল ট্রেনে উঠলেও ওকে পাশের দরজাটা নিতে হল ট্রেনটাতে এতটাই ভিড় ছিল যে অনেক চেষ্টা করেও আমরা অনিদার কাছে পৌঁছোতে পারলাম না অগত্যা আমি আর মিঃ বোস দরজার এক পাশে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম আমাদের ঠিক উলটোদিকে কোনাকুনি দাঁড়িয়ে ছিল অনিদা ওর শুধু মুখটা দেখা যাচ্ছিল এবার এসপ্ল্যানেড পেরোতে মিঃ বোস নামার জন্য তোড়জোড় শুরু করলেন কারণ পরের স্টেশনই চাঁদনি চক স্টেশন আসতে উনি আমার আমার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললেন, “ওকে ম্যান, সি ইউ বাই
    বাই,হেসে বললাম আমি
    এবার অনিদার দিকে ফিরতে অনিদা কিছু একটা বলল ট্রেনের ভিড় আর আওয়াজের জন্য সেটা আমাদের কারোর কানেই পৌঁছোল না কিন্তু আবীর বোস কী বুঝলেন কে জানে অনিদার কথার উত্তরে হেসে হাত নেড়ে বললেন, “সিওর, একদিন জমিয়ে আড্ডা হবে
    শ্যামবাজারে নেমে আমি অনিদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি তখন মিঃ বোসকে কী বললে?”
    অনিদা কী বলেছিল, এর মধ্যে দেখি ভুলে গেছে জিজ্ঞাসা করল, “কখন বল তো?”
    ওই উনি যখন ট্রেন থেকে নামছিলেন
    ও!হেসে অনিদা বলল, “তেমন কিছু না, শুধু বললাম, বাই, সি ইউ একদিন বসে গল্প হবে কেন বল তো?”
    না না কিছু না, আসলে এত আওয়াজের মধ্যে আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারিনি অথচ উনি সেটা বুঝেও গেলেন আর উত্তরও দিলেনতাতে মুচকি হেসে অনিদা বলল, “চল, এই দিকের সিঁড়িটা দিয়ে উঠে যাই
    অনন্য রায়চৌধুরীর কাছ থেকে চারটে চল্লিশ দশকের বাংলা সিনেমার কালেকশান পাওয়া গেল এই সিনেমাগুলোর সম্পর্কে অনেক শুনেছি কিন্তু ইউটিউবে পাওয়া যায় না
    প্রায় ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরলাম কোনোরকমে মুখে রাতের খাবারটা গুঁজেই ছুটলাম অনিদাদের ফ্ল্যাটে আজ একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ করলাম অনিদার মধ্যে হিরে চুরির কেসটা নিয়ে আজ একটা কথাও বলেনি যদিও আমি বেশ জানি এটা ওর বাইরের রূপ ভেতরে ভেতরে ঠিক হিসেব করে চলেছে
    টিভিতে সিনেমা চলছে ঘর পুরো অন্ধকার অনিদা বলে সিনেমা হলে সব আলো নিভিয়ে দেবার পেছনে নাকি একটা সাইন্টিফিক কারণ থাকে দর্শক যাতে সিনেমার সঙ্গে মানসিকভাবে একাত্ম হতে পারেন তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় সিনেমাটা ভালোই এগোচ্ছিল তবে বেশি পুরোনো হওয়ার জন্য ছবি ভীষণ কাঁপছিল চামচিকের মতো মোটা মোটা দাগ ঝিকমিক করে স্ক্রিনের পাশ থেকে ছিটকে ছিটকে বেরোচ্ছিল তবে সব থেকে মজার ব্যাপার হল সিনেমার চরিত্রগুলো যখন সংলাপ বলছিল, তখন তাদের কথাগুলো কানে আসছিল প্রায় দুসেকেন্ড পর মানে প্রথমে ঠোঁটটা নড়ছিল আর তার কিছুক্ষণ পর তাদের বলা কথাগুলো শুনতে পাচ্ছিলাম প্রথম প্রথম অসুবিধে হলেও পরে ব্যাপারটার সঙ্গে আমরা ধাতস্থ হয়ে গেছিলাম ঠোঁট নড়া দেখে আমরা প্রথমে ডায়লগটা আন্দাজ করে নিচ্ছিলাম, আর তারপর আসল ডায়লগটা শুনে সেটার সঙ্গে আমাদের আন্দাজটা মিলিয়ে নিচ্ছিলাম প্রথমদিকে সব কিছু উলটোপালটা হলেও আস্তে আস্তে আমাদের আন্দাজগুলোর বেশ কিছু মিলেও যাচ্ছিল বেশ মজা লাগতে শুরু করল আমাদের একটা খেলা পেয়ে গেছিলাম যেন!
    জিনিসটা ভালোই চলছিল কিন্তু এবার ঝট করে উঠে দাঁড়াল অনিদা লক্ষ করলাম ওর হাসি হাসি মুখটা হঠাৎ করে কেন জানি না কঠিন হয়ে উঠেছে বুঝতে পারলাম কিছু একটা মাথায় চাড়া দিয়েছে আর সেটা যে কেস নিয়ে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই কিন্তু সে জিনিসটা যে কী তা বুঝতে পারা তো দূরের কথা, তার বিন্দুমাত্র আন্দাজও করতে পারলাম না চুপ করে অনিদার কারবার লক্ষ করে যেতে লাগলাম ঘরের এক কোণ থেকে আরেক কোণে পায়চারি করছিল অনিদা এবার ডান হাতে একটা তুড়ি মেরে ল্যাপটপ খুলে সি আই ডি অফিসের বারো তলার ঘরের যে ছবিগুলো নেওয়া হয়েছিল সেগুলো স্লাইডে চালিয়ে দিল
    ছবি দেখা শেষে পার্থ মিত্রকে ফোন করল অনিদা ঠিক হল কাল সকাল দশটা নাগাদ আমরা সি আই ডি অফিসে মিট করব
    কী উদ্দেশ্য তা জানতে চাইলে অনিদা আমাকে হেঁয়ালি করে বলল, “চায়ের নেমন্তন্ন আছেবুঝলাম এখন কিছুই খোলসা করবে না তবু সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কি চোর ধরে ফেলেছ?”
    তাতে কিন্তু এতটুকু রাগ করল না বলল, “না
    তাহলে?”
    সেই চেষ্টাই তো করছিতারপর সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল, “যা সিনেমাটা আবার চালিয়ে দে আর মনে রাখিস, কাল সকাল সাড়ে সাতটায় বেরোতে হবে তার আগে যোগ ব্যায়াম আছে
    সাড়ে সাতটা?” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “এই যে বললে দশটায় মিট করব? এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে কী করবে?”
    তাতে হেসে বলল, “সেটা কালকেই দেখতে পাবি
 
()
 
    বউবাজারে একটা এঁদো গলির মধ্যে একটা ঘুপচিতে কোনোরকমে মাথা গুঁজে পরিবারকে নিয়ে থাকত শিবা সি আই ডি অফিসে যাবার আগে সেখানেই আজ সকালে গেছিলাম আমরা অনিদার আসল পরিচয় দেওয়া যাবে না তাই নিজেকে লালবাজারের পুলিশ বলে পরিচয় দিল আর তাতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন শিবার স্ত্রী শিবার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ওর স্ত্রী-এর সঙ্গে যা কিছু কথা হল তাতে আমাদের কেস কোনোরকম আলো পেল না অনিদা এবার শিবার স্ত্রীকে কিছু প্রশ্ন করল
    গত সাত দিনে কি বাইরের কেউ আপনাদের বাড়ি এসেছিল?”
    গত সাত দিনে?”
    হ্যাঁ, চেনা অচেনা কেউ?”
    চেনাঅচেনা?” একটু ভেবে শিবার স্ত্রী বললেন, “কই, তেমন তো কাউকে মনে পড়ছে না স্যার
    একটু ভেবে দেখুন চেষ্টা করুন
    অনিদা জোর করতে মনে হয় কাজ হল ঝট করে মাথা তুলে শিবার স্ত্রী জানালেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে গত বুধবার রাতের বেলা কোনও এক বাবু এসেছিলেন ওকে বাইরে থেকে ডাক দিলেন বেরিয়ে গেল
    কে এসেছিল? আপনি দেখেছিলেন?”
    না স্যার আমি দেখিনি
    কোথা থেকে এসেছিল?”
    মনে হল আপিস থেকে
    আপনাকে কে বলল অফিস থেকে?”
    কেউ বলেনি মনে হল আমার
    কী কথা হয়েছিল ওদের মধ্যে?”
    তা বলতে পারব না স্যার আমাকে কিছু বলে নাই তবে ফিরে আসার পর ওকে খুব খুশি দেখাচ্ছিল খালি থেকে থেকে বলছিল, আসল কাজটা হয়ে গেছে বাকিটা হয়ে গেলেই অনেক টাকা বকশিস পাব!”
    আসল কাজ মানে?” বলে আমার দিকে একবার তাকাল অনিদা কীসের আসল কাজ?” বলে এবার শিবার স্ত্রী- দিকে তাকাল শিবার স্ত্রী তাতে বললেন যে সে ব্যাপারে উনি কিছু জানেন না অনিদা তাতে আবার জিজ্ঞাসা করল, “লোকটার গলাটা কেমন ছিল মনে আছে?”
    না বাবু গলা তো শুনতে পাইনি ফোন করে ডাকল যে
    ফোন করে?”
    হ্যাঁ স্যার, মোবাইলে ফোন করে ডেকেছিল
    ওর ফোনটা আছে হাতের কাছে?”
    এই দিই স্যার
    শিবার স্ত্রী ফোনটা নিয়ে এসে অনিদার হাতে দিতে দিতে আবার কেঁদে ফেললেন আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, “মানুষটা জীবনে কারও কোনও ক্ষতি করে নাই স্যার আমি এর বিচার চাই স্যার
    শিবার এই পরিণতি সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না মহিলাকে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল অনিদা ততক্ষণে মোবাইলের কল লিস্ট দেখতে শুরু করে দিয়েছে তাতে আমার ধুকপুকানিটাও বাড়তে শুরু করেছে বেশ বুঝতে পারছিলাম আমরা ক্লাইম্যাক্স থেকে আর বেশি দূরে নেই খটাখট মোবাইলের ডাউন অ্যারো বোতাম টিপে যাচ্ছিল অনিদা এবার হঠাৎ করে একটা জায়গায় এসে ওর চোখ আটকে গেল জ্বলজ্বলে চোখ দেখেই বুঝলাম যে মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষটা বাইরে চলে এসেছে আমি উৎসুক হয়ে চেয়ে আছি দেখে অনিদা এবার সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিতে সেটার স্ক্রিনে যে নামটা চোখে পড়ল সেটা দেখে আমার পেট গোলাতে শুরু করল কারণ মোবাইলের স্ক্রিনে তখন দেখা যাচ্ছে কুশল রায়ের নাম!
 
()
 
    কথামতো সকাল দশটার মধ্যে সি আই ডি অফিসে পৌঁছে গেলাম আমরা পার্থ মিত্র জিজ্ঞাসা করলেন, “এত দিন হয়ে গেল একটা খুনও হয়ে গেল দুটো ঘটনার কোনও রিলেশান খুঁজে পেলেন মিঃ সেন?”
    রিলেশান একটা যে আছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই তবে সেটা কীসের সেটা এখনও জানা যায়নি মিঃ মিত্র,বলল অনিদা
    তাহলে এখনই এভাবে জরুরি মিটিং ডাকলেন যে?” জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ ঘোষ
    উনি মুখ খুলতে আমার মনে পড়ল খুনের ঠিক আগেই উনি ফোন কল পেয়ে ঘরের বাইরে গেছিলেন তাতে একবারের জন্য মনে হল উনিই আসল কালপ্রিট সঙ্গে সঙ্গে আবার মনে পড়ল কালকে দেখা শিবার মোবাইলের কল লিস্টে কুশল রায়ের নামটার কথাও তাহলে কি ঘটনার সঙ্গে এনারা দুজনেই জড়িয়ে! শিবাকে দিয়ে চুরি করিয়ে শেষে ওকেই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলেন? আমার ঘোরটা এবার কাটল মিঃ রায়ের কথায়
    আমাদের বিপদ কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলেছে সত্যিটা আর বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যাবে না তার ওপর একটা খুনও হয়ে গেছে! হিরেটার ব্যাপারে যদি শিবা সত্যিই কিছু জেনে থাকে, তাহলে কিন্তু আমরা এবার কিনারায় নয়, একেবারে খাদের মধ্যে
    আমার সেকথা মাথায় আছে মিঃ রায়,শান্ত গলায় বলল অনিদা
    পার্থ মিত্র তখন বললেন, “দেখুন, আমরা কিছু করতে পারছি না তাই কাইন্ডলি আপনি কেসটাতে আরও বেশি করে ইনভলভড হোন আমাদের থেকে যেমন সাহায্য দরকার, আমরা সব করব
    ইস, সেদিন একটু যদি আঁচ পেতাম!” ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের চেটোয় একটা ঘুঁষি মেরে বললেন মিঃ ঘোষ
    কালপ্রিট যে চেনা লোক তাতে কোনও সন্দেহ নেই
    অনিদার কথা শুনে আমি বললাম, “তাহলে খুনটা?”
    তাতে অনিদা বলল, “চুরি আর খুন, দুটোতেই একই লোকের হাত রয়েছে রে জয়!”
    কিন্তু চুরির সঙ্গে খুনের কী সম্পর্ক থাকতে পারে? হিরেটা যে এখানে ছিল, সেটা তো কেউ জানতই না শিবার পক্ষেও সে কথা জানা সম্ভব ছিল না বোঝাই তো যাছে যে দুটো আলাদা আলাদা ঘটনা
    আশীষ ঘোষের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল এখুনি ওনাদের মুখের ওপর বলি যে আসল কালপ্রিট তো আপনারাই অনিদা এই সময় হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “তোর বাইনোকুলারটা এনেছিস?”
    এই ফাঁকে বলে রাখি, অনিদা কেন জানি না আমাকে আগে থেকেই আমার বাইনোকুলার আনার কথা বলে রেখেছিল তাই সেইমতো আমি সেটা নিয়ে এসেছি এবার আমাকে ওটার কথা বলার পর আমি বাইনোকুলারটা ব্যাগ থেকে বের করতেই ওটা আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে সেটা চোখে দিল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওর মুখে একটা হালকা হাসি ফুটে উঠতে শুরু করল
তবে কি কিছু একটা নতুন সূত্র পেল? ভাবতে ভাবতে খুব উৎসাহ নিয়ে আমি তখন ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম এবার অনিদা বাইনোকুলারটা আমার হাতে দিতে আমি সেটা দিয়ে জানালার বাইরেটা দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু অনিদার চোখে ঠিক কী পড়েছে সেটা খুঁজে পেলাম না রাস্তা, অফিস, তাতে কাজে ব্যস্ত লোকজন, আর কিছুটা দূরে একটা আন্ডার কন্সট্রাকশন বিল্ডিং, এর বেশি কিছু চোখে পড়ল না আমার আর এগুলোতে নিশ্চয়ই অনিদা এতটা খুশি হবে না? হতাশ হয়ে চোখ থেকে বাইনোকুলারটা নামাব, ঠিক এমন সময় চোখে পড়ল দূরের ওই আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংটার সিঁড়ি দিয়ে একটা লোক লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে! অনেক চেষ্টা করেও অবশ্য লোকটার মুখটা বুঝতে পারলাম না শুধু মনে হল ওর হাতে কী যেন একটা ধরা রয়েছে
    কাউকে দেখতে পেলি?” আমি যে কিছু একটা দেখতে পেয়েছি, অনিদা সেটা বুঝতে পেরেছিল তাই বোধহয় আমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে ফিসফিস করে কথাটা জিজ্ঞাসা করল
    আমি বাইনোকুলারটা চোখে রেখেই বললাম, “হ্যাঁ দেখেছি একটা লোক কিন্তু মুখটা বুঝতে পারছি না আর লোকটার হাতেই বা ওটা কী?”
    অনিদা তখন আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, “লোকটার হাতে একটা বাইনোকুলার তোরটার থেকে অনেক বেশি পাওয়ারফুল
    অনিদা বলাতে আমি এবার বুঝতে পারলাম আরে! সত্যিই তো কিন্তু লোকটা ওটা নিয়ে ওখানে কী করছে অনিদা?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম অনিদাকে
    তাতে অনিদা হেসে বলল, “সে কথা ওকে গিয়েই জিজ্ঞাসা কর!”
    আমি তখন বললাম, “আঃ, হেঁয়ালি ছেড়ে বল না ব্যাপারটা কী? কি এমনিই দৌড়ে দৌড়ে নামছে নাকি পালাচ্ছে? তাহলে কি এই লোকটাই আসল হিরে চোর?”
    অনিদা তখন বলল, “আমি হলফ করে বলতে পারি যে ওই লোকটা আমাদের ওপর নজর রাখছিল
    তিনজন অফিসার এতক্ষণ চুপ করে আমাদের কথা শুনছিলেন এবার নজর রাখার কথা শুনে এগিয়ে এলেন পার্থ মিত্র কে লোকটা? কোথায় সে? আমাদের ওপর নজর রাখছে কেন? ওই কি আসল হিরে চোর?” বলে এবার আমার হাত থেকে বাইনোকুলার নিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন
    তাহলে আমরা এখানে বসে আছি কেন?” বলে এবার সঙ্গে সঙ্গে দরজার দিকে ছুটে গেলেন মিঃ রায়
    তখন অনিদা ওনাকে থামতে বলায় মিঃ ঘোষ বললেন, “এখনও হয়তো লোকটাকে আমরা ধরতে পারি মিঃ সেন
    অনিদা তাতে হেসে বলল, “তাতে কিছু লাভ হবে না মিঃ ঘোষ এসব করলে লোক জানাজানি হয়ে যেতে পারে আর তাতে আপনাদের বিপদ বাড়তে পারে তাই না?”
    তাহলে আপনি এবার আমাদের কী করতে বলেন?” বেশ অসহায় শোনাল মিঃ মিত্রের গলা
    আমারও কিন্তু মনে হচ্ছিল যে আমরা বড্ড দেরি করে ফেলছি অপরাধীকে হাতের কাছে পেয়েও ধরব না! অনিদার মাথায় কী চলছে কে জানে!
    অনিদা তখন পার্থ মিত্রর দিকে চেয়ে বলল, “আমাকে আর সাতটা দিন সময় দিন মিঃ মিত্রতারপর মিঃ রায় আর মিঃ ঘোষের দিকে চেয়ে বলল, “আশা করি কিছু একটা করা যাবে
    একটা লম্বা শ্বাস ফেলে পার্থ মিত্র তখন বললেন, “অগত্যা!”
    আমার মন এবার বলতে শুরু করে দিয়েছে যে অনিদা আর কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হিরে চোরকে ধরে ফেলবে কারণ ওর হাবভাবই বলে দিচ্ছিল যে কিছু একটা খুঁজে পেয়েছে
    আমার এই ধারণাটা সত্যি বলে প্রমাণিত হল এর পরের একটা ঘটনাতে আর সেটার জন্য আমি একেবারেই তৈরি ছিলাম না অনিদা অবশ্য আগেভাগেই একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল আমায় সেদিন সি আই ডি অফিস থেকে বেরোনোর সময় আমাকে বলেছিল যে লেজে পা দিলে সাপ তো ফোঁস করবেই তাই সতর্ক থাকাটা জরুরি মিথ্যে বলব না হলও তেমনটা
    কাল থেকেই অনিদা ল্যাপটপ নিয়ে বসে গুগুলে কী যেন লিখছে আর সার্চ করছে কোন একটা সাইট থেকে কীসব যেন নোটও করে ফেলেছে প্রায় পাঁচ পাতা হবে
    আজ বিকেলে অনিদার ঘরে বসে পপকর্ণ খাচ্ছি এমন সময় ওর মোবাইলে একটা ফোন এল ইশারাতে আমাকে ফোনটা ধরার কথা বলতে আমি সেটা হাতে নিয়ে দেখি তাতে কোনও নম্বর দেখাচ্ছে না অনিদাকে কথাটা বলতে দুড়দাড় করে নেমে এসে বলল, “প্রোটেকটেড নম্বর কই দেখি” তারপর মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে বলল, “ঠিক তাইএবার ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারটা অন করে দিল
    ওপাশ থেকে এবার একটা চাপা পুরুষ কন্ঠ ভেসে এল, আমি কি মিঃ অনিরুদ্ধ সেনের সঙ্গে কথা বলছি?”
    হ্যাঁ বলছি,বলেই অনিদা এবার মোবাইলে হাত চেপে গলা নামিয়ে বলল, “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি যে লোকটা মুখে কিছু একটা চাপা দিয়ে কথা বলছে
    ওপাশ থেকে এবার একটা ধমক ভেসে এল, রাস্তা থেকে সরে দাঁড়া নাহলে গাড়ি চাপা পড়বি
    অনিদা তখন হেসে লোকটাকে বলল, “ধন্যবাদআর তারপর ফোনটা খট করে কেটে দিয়ে হো হো করে হেসে উঠে বলল, “প্রোটেক্ট করতে গিয়ে তো পাসওয়ার্ডটাই দিয়ে দিলি রে বোকা!”
    আমি তখন বললাম, “এ তো সরাসরি অ্যাটাক করছে গো অনিদা!”
     তখন বলল, “মনে রাখবি, লক্ষ্য থেকে তোর দূরত্ব যত কমবে, পথও তত সরু হতে থাকবেকথা শুনে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে অনিদা কেস অনেকটা গুটিয়ে এনেছে এবার ল্যাপটপ আর নোটবই গুছিয়ে নিয়ে বলল, “তুই এখন ঘরে থাক কাল শনিবার কোথাও যাবি না দুপুর তিনটে নাগাদ বেরোব
    তুমি এখন কোথায় চললে?”
    একবার ব্রিটিশ লাইব্রেরি যাব ফিরতে আটটা হবে,বলে বেরিয়ে গেল অনিদা
    কথামতো অনিদা আটটার মধ্যে ফিরল বটে, কিন্তু ততক্ষণে ওর কপালে একটা কাটা দাগ তৈরি হয়ে গেছে! ভাগ্য ভালো যে কোনও সেলাই পড়েনি তবে আঘাতটা খুব একটা ছোটো নয়
    ওর এই অবস্থা দেখে আমি ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম আমাকে অবশ্য আশ্বস্ত করল এই বলে যে এখন ঠিক আছে কী হয়েছিল, এবার সেটা ওর মুখ থেকেই জানতে পারলাম
    অনিদা ভবানীপুরের দিক থেকে গাড়ি চালিয়ে আসছিল হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট যেখানে শুরু, সেখানটাতে কোনও আলো নেই গাড়ির হেডলাইটের ওপর ভরসা করেই এগোতে হচ্ছিল অনিদাকে কিন্তু মোড় ঘুরতেই ঝনন করে একটা আওয়াজ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ল গাড়ির সামনের কাচটা, আর সঙ্গে সঙ্গে একটা লোহার রড এসে পড়ল অনিদার কপালে! কয়েক মুহূর্তের জন্য মাথাটা টাল খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিল অনিদা বিপদ বুঝে শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল শেষে একেবারে ব্রেক কষল আমাদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে
    আমি ঘটনা শুনে একেবারে হতবাক খুব খারাপ লাগছিল অনিদার জন্য ওর কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারি না ফ্যালফ্যাল করে বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম ওর দিকে এবার জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমার জন্য ওষুধ আনব অনিদা?”
     তখন আমার কথা পাত্তা না দিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল, “লাইট আর গাড়ির কাচের টাকাটা আমি ওর থেকেই নেবতারপর পার্থ মিত্রকে ফোন করে বলল, “কাল চারটে
    কালকের ঘটনার পর অনিদা যে ভেতরে ভেতরে ভালোরকমই ফুঁসছে তা বেশ বুঝতে পারছিলাম বাইরে থেকে যদিও বোঝার উপায় নেই
    আজ সকালে প্রথমেই কাস্টমার কেয়ারে ফোন করল কালকের ওই প্রোটেকটেড নম্বরটা জানার জন্য প্রথমে তো ওরা কোনোভাবেই সাহায্য করতে চাইছিল না কারণ যে নম্বরগুলো প্রটেক্ট করা থাকে, সেগুলো কোনোভাবেই যাতে বাইরে না বেরোতে পারে সেদিকে ওরা পুরোমাত্রায় খেয়াল রাখে কিন্তু কথা আর রেফারেন্সের জোরে অনিদা কাস্টমার কেয়ারের লোকটাকে মানিয়ে নিল বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর বলল যে লালবাজারের হয়ে কাজ করে তাতে শেষমেশ কাজ হল অনিদাকে নম্বরটা দিতে লোকটা কিছুটা সময় চেয়ে নিল
    বিকেল চারটের সময় আমরা সবাই সি আই ডি অফিসের বারো তলার ঘরে জমা হলাম অনিদার কথামতো আবীর বোসকেও ডাকা হয়েছিল প্রথমটায় মিঃ মিত্র একটু না না করছিলেন বটে, কিন্তু যেহেতু উনিও ওই দলেরই একজন ছিলেন, তাই অনিদা মনে করেছিল ওনারও এখানে থাকা উচিত একে তো আচমকা তলব, তার ওপর সি আই ডি অফিসে মিটিং ডেকেছে একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ! মুখ দেখেই মনে হচ্ছিল যে বেচারা একেবারে বিশ বাঁও জলে
    অনিদা শুধু শুধু সময় নষ্ট করে না তাই মুহূর্তের মধ্যে মূল প্রসঙ্গে চলে গেল প্রথমেই আবীর বোসের দিকে চেয়ে বলল, “প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একটা মাইলস্টোন থাকে সেই রকম আমার একটা হয়ে গেল সি আইডি অফিসে বসে সি আই ডি কেস সলভ করা
    কেস! সি আই ডি অফিসে!” অবাক হয়ে বললেন আবীর বোস
    হ্যাঁ মিঃ বোস,মাথা নেড়ে বলল অনিদা
    কিন্তু কীসের কেস? নতুন কিছু হাতে এসেছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না! আর কেস যদি থাকে তার জন্য তো আমরাই আছি তার জন্য আপনাকে কেন ডাকব আমরা? আপনি তো আউটসাইডার!”
    আবীর, আমরা তোমাকে জানাতে পারিনি, আসলে...
    অনিদা মিঃ রায়কে থামিয়ে দিয়ে বলল, “তার আগে আসল ঘটনাটা বলে নিইতারপর অনিদা আবীর বোসকে মহেন্দ্রলালের হিরে চুরির ব্যাপারটা অল্প কথায় বুঝিয়ে বলতে চোখ কপালে উঠে গেল ওনার বেশ কয়েক মুহূর্ত মুখ চুন করে বসে রইলেন এবার চেঁচিয়ে উঠে বললেন, “কী বলছেন আপনি!” আমরা সবাই ওনার দিকে চেয়ে ছিলাম আবার চেঁচিয়ে উঠলেন উনি, “কিন্তু কে চুরি করল? কী করে হল এটা? আর হলই বা কবে?”
    আমরা সবাই সেটাই জানার চেষ্টা করছি,বললেন মিঃ ঘোষ
    এসিপি গুহ জানেন?”
    না, এখনও ওনাকে জানানো হয়নি,বললেন মিঃ রায়
    তাহলে তো আগে ওনাকে জানানো দরকার,বলে আবীর বোস মিঃ গুহকে ফোন করতে যেতে অনিদা ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আরেকটু অপেক্ষা করুন প্লিজ ওনাকে তো জানাতেই হবে সময়মতো উনি ঠিকই জানতে পারবেন
    আবীর বোস থেমে যেতে অনিদা বলতে থাকল
    প্রথমেই জানা দরকার যে এই চুরিটা হল কোথা থেকে,বলে অনিদা একবার সবার দিকে চেয়ে নিয়ে বলল, আমরা জানি যে ওই হিরেটা মিউজিয়াম থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল এখানে মানে আপনাদের অফিসে
    হিরেটা এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল! কিন্তু কেন?” আবার অবাক হওয়ার পালা মিঃ বোসের
    অনিদা তখন উত্তরে বলল, “মুম্বইয়ের যে দলটা এখানে তান্ডব চালাচ্ছে, তাদেরকে ভয় পেয়েছিলেন মিঃ মিত্র তাদের হাত থেকে হিরেটাকে বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল
    কিন্তু শেষ পর্যন্ত খোদ সি আই ডি অফিস থেকেই চুরি হয়ে গেল হিরেটা!” মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন মিঃ রায়
     মাই গড!” চোখ বড়ো বড়ো করে আবীর বোস বললেন, “তাহলে মিউজিয়ামে যেটা আছে, সেটা?”
    ওটা নকল হিরে,বলল অনিদা
    সে কী! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না,বলে ডানহাতে চেয়ারের হাতলটা খামচে ধরলেন মিঃ বোস তারপর ধীরে ধীরে বাকি তিনজন অফিসারের দিকে চেয়ে বললেন, “এর পরিণাম কী হতে পারে ভেবে দেখেছেন আপনারা?”
    পরিণাম যাতে খারাপ না হয় আমরা সেই চেষ্টাই করছি মিঃ বোস,বলল অনিদা
    কীভাবে?”
    তার আগে প্রথমে আমরা একটা ফুটেজ দেখব
    অনিদা এবার আমাকে ইশারা করতে আমি ওর ল্যাপটপে সি আই ডি অফিসের সেই ফুটেজটা চালিয়ে দিলাম সবাই উৎসুক হয়ে চেয়েছিল ল্যাপটপের স্ক্রিনে ঠিক যে মুহূর্তে স্লাইডিং কাচের বাটামগুলোর ছায়াটা সরতে শুরু করেছে, অনিদা জিনিসটা সবাইকে বোঝাতে শুরু করল সেটা শুনে তো সবার মুখ হাঁ
    ফুটেজ শেষ হতে অনিদা বলল, “প্রথমে আমি সত্যিই ভেবেছিলাম যে লোডশেডিং হয়েছিল কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এই বিল্ডিং ছাড়া সেদিন আর কোথাও লাইট যায়নি
    মানে?” অনিদার কথা শুনে মুখ হাঁ হয়ে গেল মিঃ ঘোষের
    সেই সময় এই বিল্ডিং-এর মেইন সুইচ ইচ্ছে করেই অফ করে দেওয়া হয়েছিল
    কিন্তু কেন?” জিজ্ঞাসা করলেন পার্থ মিত্র
    কারণ যাতে চোরের ছবিটা আপনাদের এই ক্যামেরাতে না ওঠে
    কিন্তু কে বন্ধ করল সুইচটা?”
    কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অনিদা বলল, “শিবা
    শিবা!” প্রায় একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলেন তিনজন অফিসার মিঃ রায় আর মিঃ ঘোষকে দেখে আমার মনে হল যে কী সুন্দর অভিনয় করছেন ওনারা যেন কিছুই জানেন না!
    তার মানে বলতে হয় শিবাই আসল চোর!” কথাটা বিশ্বাস করতে যে কষ্ট হচ্ছে সেটা আবীর বোসের গলা শুনেই বোঝা গেল অনিদা তখন বলল, “চুরির সঙ্গে যে শিবার একটা সম্পর্ক ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই কিন্তু চুরি করেনি, চুরিতে সাহায্য করেছিল মাত্র
    সেটা কেমন করে?” জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ মিত্র
    চুরিটা হয়েছিল খুব অদ্ভুতভাবে কারণ চোর সোজা পথে এই ঘরে আসেনি এই বিল্ডিং-এর পেছনে যে ইমারজেন্সি এক্সিট আছে, সেটাই ব্যবহার করেছিল ওই সিঁড়ি দিয়েই সে সোজা উঠে এসেছিল এগারো তলায় তারপর সিঁড়ির পাশের দেয়ালের স্লাইডিং ডোর খুলে পাশের কার্নিশে উঠেছিল এবার সেই কার্নিশ থেকে বারো তলার কাচের জানালা খুলে সে ঢুকেছিল এই ঘরে আর ঠিক সেই মুহূর্তে বিল্ডিং- হয় লোডশেডিং, এবং মাত্র এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ডের মধ্যেই চোর চুরিটা সারে,এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল অনিদা
    চারজন অফিসারের মুখ তখন অনিদার কথা শুনে হাঁ আমি এবার জিজ্ঞাসা করলাম, “কিন্তু নিচে সেই ইমারজেন্সি দরজার চাবি পেল কী করে?”
    আরে বোকা,অনিদা হেসে বলল, “দরজা খোলা থেকে শুরু করে লাইট নেভানো, সবই তো করেছিল শিবা
    রাস্কেল! বিশ্বাসঘাতক! এরপর নিশ্চয়ই ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে আর ওর সাগরেদরাই ওকে খুন করে দিয়েছে উচিত শিক্ষা পেয়েছে শয়তানটা,ডান হাতে চেয়ারের হাতলে একটা ঘুঁষি মেরে বললেন মিঃ ঘোষ
    “হুম, বলে অনিদা বলল, “সবই তো বুঝলাম মিঃ ঘোষ কিন্তু তার আগে বলুন তো, বাবার অসুখের ছুতো দেখিয়ে আপনি সেদিন শিবার খুনের ঠিক আগের মুহূর্তে হঠাৎ নিচে ছুটে গেলেন কেন?”
    আমি মিথ্যে ছুতো নিয়ে গেছিলাম?” অনিদার কথা শুনে চটে উঠলেন মিঃ ঘোষ, বললেন, “কী বলছেন কী আপনি?”
    আমি ঠিকই বলছি মিঃ ঘোষ,হেসে অনিদা বলল, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই সময় আপনার কোনও ফোনই আসেনি
    তাহলে আপনি বলতে চাইছেন যে আমি মিথ্যে কথা বলছি?”
    সত্যি যে আপনি বলেননি সেটা তো আপনিই জানেন আর আমার থেকে বেশি ভালো জানেন তাই না? সেজন্য এবারে সত্যিটা বলুন না হলে বুঝতে পারছেন তো আপনার পরিণতি কী হতে পারে?”
    অনিদার আচমকা এই রূপ দেখে এবার আমতা আমতা করতে শুরু করলেন মিঃ ঘোষ, “ইয়ে না মানে -”
    বলুন বলুন,ধমকে উঠল অনিদা ঘরের বাকি তিনজন অফিসারের চোখ তখন ওনার দিকে আটকে আছে
    মিঃ ঘোষ তখন বললেন, “আসলে আপনার মুখে শিবার কথা শুনে আমি বুঝতে পারি শিবাও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাই ওকে হাতেনাতে ধরতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই খুন হয়ে যায় আমি জানতাম আপনি আমাকেই সন্দেহ করবেন তাই আমি একতলা থেকে সাত তলায় এসে আবার আপনাদের সঙ্গে নেমে যাই, যাতে আপনারা কেউ সন্দেহ না করতে পারেন
    অনিদা তাতে হেসে বলল, “আমি তখনই বুঝে গেছিলাম যে আপনি ফোনে কথা বলছিলেন না
    কী করে?”
    কারণ ফোনটা তখন না কেটেই পকেটে ঢুকিয়েছিলেন সেটা আমার চোখে পড়ে যায় ব্যস, আমি বুঝে যাই যে আপনি মিথ্যে গল্প বানাচ্ছেন!”
    মিঃ ঘোষ তখন মুখ চুন করে বললেন, “কিন্তু বিশ্বাস করুন, সত্যিই অন্য কোনও উদ্দেশ্য সেদিন আমার ছিল না
    পাশ থেকে তখন মিঃ রায় বললেন, “এর পর তোমাকে বিশ্বাস করব কী করে আশীষ?”
    অনিদা তখন বলল, “তার আগে আপনি বলুন তো, শিবার খুনের দু’দিন আগে আপনি ওকে কেন রাতের বেলা ফোন করেছিলেন?”
    অনিদার প্রশ্নটা মিঃ রায়কে করা উনি তাতে হেসে বললেন, “কেন কাউকে ফোন করা কি মানা নাকি?” কথা বলার ধরনেই বুঝলাম অনিদার কথাটা ভালোভাবে নেননি উনি
    অনিদা তখন বলল, “না তা কেন? কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে তার ঠিক দুদিন পরেই শিবা খুন হয়ে গেল, তাই না?”
    বাঃ,হেসে মিঃ রায় বললেন, “বললেন তো বেশ আমি ফোন করেছিলাম মানেই কি এটা দাঁড়াল যে খুনটাও আমিই করেছিলাম!”
    না, ঠিক তা নয়
    তাহলে?”
    অনিদা তখন হেঁয়ালি করে বলল, “ঠিক করে বলুন তো, গুপ্তা হার্ডওয়ার, গোবিন্দ অয়েল মিলসনামগুলো মনে পড়ছে কিনা
    এগুলো আবার কী? মনে হল এগুলো এক একটা দোকান বা তেলের মিলের নাম কিন্তু এগুলো কেন বলছে অনিদা? আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম অনিদার দিকে তখন ভুরু কুঁচকে মিঃ রায় বললেন, “এই সব তো দোকানের নাম বলে মনে হচ্ছে কিন্তু এগুলো আপনি আমাকে বলছেন কেন?”
    কারণ এই সব দোকানের মালিকরা তাদের কালোবাজারি চালানোর জন্য আপনাকে প্রতি মাসে ঘুষ দেয় মিঃ রায়
    ঘুষ!” কথা শুনে মনে হল মিঃ রায় আকাশ থেকে পড়েছেন! তারপর অনিদার দিকে কড়াভাবে চেয়ে বললেন, “আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন মিঃ সেন
    অনিদা ওনার কথা পাত্তা না দিয়ে বলল, “আমার কাছে কিন্তু সে প্রমাণ আছে মিঃ রায়
    তাতে কিছুটা হলেও যেন ব্যাকফুটে গেলেন মিঃ রায় বললেন, “তা থাকতেই পারে মিঃ সেন আসলে ওগুলো ঘুষ নয়
    তাহলে?”
    ওরা আমার বন্ধু তাই আমাকে গিফট দিয়েছিল
    গিফট!” বলে একটা একপেশে হাসি হাসল অনিদা
    হ্যাঁ
    আচ্ছা, তা নয় মানলাম কিন্তু আপনার আসল সমস্যা হয়ে গেল ওই গিফটের ব্যাপারটা শিবা জেনে ফেলাতে পাঁচকান হলে আপনার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যেতে পারত
    আর তাই শিবাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া?” মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল আমার, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অনিদার আঙুলে গাঁট্টার ইশারা দেখে চুপ মেরে গেলাম
    মিঃ রায় তখন নরম হয়ে গেছেন বললেন, “আপনি বিশ্বাস করুন শিবা আমার জন্য সমস্যা হয়ে গেছিল ঠিক কথা, কিন্তু খুন বা হিরে চুরি, কোনোটাই আমি করিনি
    কথাটা অনিদা কতটা মেনে নিল জানি না, তবে আমার এই কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস হল না কারণ আমি নিজে শিবার মোবাইলের কল লিস্টে মিঃ রায়ের নম্বর দেখেছি অনিদা শুধু মুচকি হেসে বলল, “এই পজিশনে থেকেও ঘুষ খাচ্ছেন!”
    আমার মাথায় তো এসবের কিছুই ঢুকছে না,বেশ কিছুক্ষণ পরে মুখ খুললেন পার্থ মিত্র
    অনিদা তখন ওনাকে বলল, “মাথায় আমারও প্রথমে কিছুই ঢুকছিল না মিঃ মিত্র কিন্তু প্রথম থেকে ঘটনাগুলোকে পর পর সাজালে যা দাঁড়ায়, তা হল -
    “হিরেটা মিউজিয়াম থেকে এখানে সরিয়ে নিয়ে আসা তারপর আশ্চর্যজনকভাবে সেটা চুরি হওয়া - এরপর আমি আসতে প্রথম দিনেই আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবার চেষ্টা করা এবার আমার চোখে এমন কিছু জিনিস পড়ল যাতে করে কিনা সন্দেহ গিয়ে পড়ল শিবার ওপরআর ঠিক তখন শিবাও খুন হয়ে গেলআর শেষমেশ আবার অ্যাটাক হল আমার ওপরে!”
    অনিদার কথা শুনে পার্থ মিত্র ওকে থামিয়ে দিলেন, দাঁড়ান দাঁড়ান, সেদিন আবার আপনাকে কে ধাক্কা মারল? আর কে বা আপনার ওপর অ্যাটাক করল? কবেই বা করল?”
    অনিদা তাতে রহস্য করে বলল, “সেটা আপনার লোককেই জিজ্ঞাসা করুন না!”
    আমার লোক! কে আবার আমার লোক?” আমতা আমতা করতে দেখেই বুঝলাম এনার মধ্যেও কিছু গণ্ডগোল আছে
    অনিদা তখন হেসে বলল, “কন্ট্রাক্ট কিলার বাবু আপনার লোক নয়?”
    অনিদার কথা শুনে থতোমতো খেয়ে মিঃ মিত্র বললেন, “কে? কে বাবু?”
    অনিদা তখন আবার সবাইকে চমকে দিয়ে বলল, “বাবু হল সেই লোক, সে হিরেটা চুরি করেছিল, শিবাকে খুন করেছিল আর শেষে আমার ওপর চড়াও হয়েছিল
    কিন্তু তার থেকে কি প্রমাণ হয় যে বাবু আমার লোক?”
    আপনার লোক না হলে কেন আপনি ওর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন? কেনই বা চুরির আগের দিন আপনি ওর ডেরায় যাবেন?”
    অনিদার কথার উত্তর না করে চুপ করে রইলেন মিঃ মিত্র অনিদা তাতে গলা চড়িয়ে বলল, “চুপ করে থাকবেন না, উত্তর দিন
    আমি অনিদার কথা যত শুনছি, অবাক হচ্ছি তার মানে মিঃ মিত্রই আসল অপরাধী! কেস কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না! এদিকে পার্থ মিত্র কোনও কথা না বলে ঘন ঘন মাথা নাড়ছিলেন আবীর বোস তখন বললেন, “আচ্ছা একটা কথা বলুন মিঃ সেন, শিবার কারসাজি যে ফাঁস হয়ে যেতে বসেছে সেই মুহূর্তে বাবু সেকথা জানল কী করে?”
    আপনি ঠিকই বলেছেন মিঃ বোস, হেসে অনিদা বলল, ওই একটা জিনিসই আমার সব চিন্তাকে ওলটপালট করে দিয়েছিল কিন্তু শেষে আমার চোখের সামনের ছবিটা পরিষ্কার হয়ে গেল সেদিন রাতে একটা পুরোনো দিনের সিনেমা দেখতে বসে
    পুরোনো দিনের সিনেমা?” অবাক হয়ে বললেন মিঃ বোস
    হ্যাঁ,মাথাটা সামনের দিকে একবার ঝুঁকিয়ে অনিদা বলল, “সেদিন মুখের নড়াচড়ার সঙ্গে ডায়লগ মিলিয়ে খেলতে খেলতে একটা অদ্ভুত জিনিস আমার চোখের সামনে চলে এসেছিল
    কীসের অদ্ভুত জিনিস?
    লিপ রিডিং
    লিপ রিডিং? মানে?”
    হ্যাঁ, এটা একটা এমন আর্ট যার সাহায্যে কিনা শুধুমাত্র ঠোঁটের নড়াচড়া দেখেই বুঝে যাওয়া যায় যে বক্তা কী বলছে
    আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম অনিদার কথা বলতে থাকল
    গত কয়েকদিন ইন্টারনেট ঘেঁটে আর ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশুনা করে আমি জানতে পেরেছি যে বিদেশে, বিশেষ করে লন্ডনে কিছু ইন্সটিটিউট আছে যারা এর ওপর কোর্স করায়, যদিও তাতে খরচ আছে বিস্তর দুধরনের লিপ রিডার থাকে এক, কম্প্যুটারাইজড আর দুই, ম্যানুয়াল প্রথমটাতে যে কথা বলছে, তার লিপের মুভমেন্ট-এর ভিডিও নিয়ে কম্প্যুটারে ফেলা হয় সেখানে লিপ রিডিং-এর সফটওয়্যার থাকে, যেটা কিনা লিপ মুভমেন্ট রিড করে এতে কাজ হয় যদিও দারুণ, তবে এটার একটা লিমিটেশন আছে ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান আর রাশিয়ানএছাড়া আর কোনও ভাষায় এর সফটওয়্যার আপাতত নেই
    আর দু’নম্বরটা? মানে ম্যানুয়াল প্রসেস?” আমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
    এই প্রসেসটা কঠিন ট্রেনিং নেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু পুরো কাজটাই করতে হয় নিজের দক্ষতার ওপর ভর করে আর তাই তার জন্য দরকার ভীষণ প্র্যাকটিস
    কিন্তু এসবের সঙ্গে চুরির কী সম্পর্ক মিঃ সেন?” জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ রায় ঠিক এমন সময় অনিদার মোবাইলে একটা ফোন এল
    অনিদা হ্যালো বলে বারদুয়েক হুঁ হুঁ আর হ্যাঁ হ্যাঁ বলে হেসে বলল, “তাহলে আমি ঠিকই ধরেছিলাম ফোনটা তার মানে ওখান থেকেই এসেছিলআমার বুঝতে বাকি রইল না যে অনিদাকে সেদিন যে লোকটা হুমকি দিয়েছিল, তার খোঁজ পেয়ে গেছে এবার ফোন কেটে মিঃ রায়ের দিকে ফিরে বলল, “আছে, মিঃ রায় আছে চুরির সঙ্গে এসবের সম্পর্ক আছে
    কী রকম?”
    আপনাদের প্রতিটা কথা বাইরে বেরিয়ে যাওয়া, লকারের কোড নম্বর বাইরে ফাঁস হয়ে যাওয়া, শিবাকে যে আমরা সন্দেহ করতে শুরু করেছি সে খবর বাইরে চলে যাওয়াভেবে দেখুন তো, চার দেয়ালের ভেতরকার খবরগুলো বাইরে চলে যাচ্ছিল কী করে?”
    কী করে?”
    অনিদা এবার আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করল, “সেদিন যখন বাইনোকুলার দিয়ে দেখছিলাম, তখন ঠিক কী দেখা গেছিল?”
    একটা লোক দৌড়ে নেমে যাচ্ছিল,বলেই আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বলে উঠলাম, “ওই লোকটাই কি তাহলে বাবু?”
    অনিদা তাতে বলল, “ঠিক ধরেছিস আর কিছু চোখে পড়েছিল তোর?”
    আর কিছু?” আমি অবাক হয়ে বললাম, “আর কী দেখব?”
    আসল লোকটাকেই তো মিস করে গেলি রে!”
    আসল লোক!” আবার অবাক হয়ে আমি বললাম, “আসল লোক আবার কে?”
    চুরি থেকে খুন, যার মাথা থেকে এতসব বেরিয়েছিল
    কার মাথা থেকে এতসব জঘন্য মতলব এসেছিল মিঃ সেন?” বলে দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠলেন মিঃ মিত্র
    তাতে অনিদা মিঃ রায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “সেটা আপনি ওনাকেই জিজ্ঞাসা করুন এটা ছিল একটা সুযোগ আর সেটা হাতে চলে এলেই মোস্ট সিনিয়ার সি আই ডি অফিসারের চেয়ারটা হাতের মুঠোয় কারণ তখন রাস্তা হয়ে যেত একেবারেই ক্লিয়ার! কিন্তু কী করে? অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চলছিল সুযোগ তৈরির আর সেই সু্যোগ হাতে তুলে দিলেন মিঃ মিত্র নিজেই আর সেই সুযোগটা এমন, যাতে করে এক ঢিলেই দুই পাখি মারা হয়ে যেত সিনিয়ার অফিসারের চেয়ার আর তার সঙ্গে কোটিপতি তাই আর দেরি কেন? লিপ রিডিং-এর প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ওই আন্ডার কন্সট্রাকশান বিল্ডিংটা থেকে বাইনোকুলারের সাহায্যে জেনে নেওয়া হয়েছিল সব প্ল্যান প্রোগ্রাম এমনকি লকারের পাসওয়ার্ডও তারপর হাত করা হল শিবাকে আর সব শেষে মঞ্চে উপস্থিত হল বাবু কন্ট্রাক্ট কিলার বাবু মাঝে মাঝে যে কিনা সি আই ডিদের জন্যও কাজ করে অনেক গোপন খবরও এনে দিত অফিসারদের টাকার জন্য সব কিছু করতে পারে তাই ওকে হাত করা খুব একটা কঠিন হল না এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা তবে বেশি অপেক্ষা করাও সম্ভব না, কারণ হাতে সময় খুবই কম শেষে প্রদর্শনীর শেষ দিনটাকেই অপারেশনের দিন বলে ঠিক করা হল এটা কিন্তু মানতেই হবে যে প্ল্যানিংটা কিন্তু ছিল অসাধারণ
    আমি তখন বললাম, “তার মানে আমার অনুমানই ঠিক আসল অপরাধী মিঃ রায়?”
    অনিদা আমাকে তখন বলল, “তুই একটা জিনিস ভুল করছিস
    কী?”
    শিবাকে সেদিন কে ফোন করেছিল?”
    মিঃ রায়
    কী করে জানলি?”
    মোবাইল কল লিস্টেই তো নামটা দেখলাম
    কোন লিস্ট?”
    রিসিভ লিস্ট
    কিন্তু মিসড কলের লিস্টটা দেখেছিলি?”
    না
    ভুলটা তো সেখানেই হয়েছিল
    কেন?”
    সেখানেও কিন্তু একটা ভারী নাম ছিল
    ভারী নাম?” বুঝলাম আবার চমকে দেবে অনিদা
    এবার ঝট করে আবীর বোসের দিকে ঝুঁকে পড়ে অনিদা বলল, “লোভ বড়ো বাজে জিনিস মিঃ বোস
    তাতে অবাক হয়ে আবীর বোস বললেন, “মানে?”
    হিরেটা খুব বুদ্ধি করে চুরি করিয়েছিলেন মানতেই হবে!” অনিদার কথাটা এবার ঘরের সবাইকে অবাক করে দিয়েছে অন্যদের কথা জানি না, আমি কিন্তু এর মধ্যে বুঝে গেছি ওর কথার মানেটা কী! বলতে থাকল নিজের অজান্তেই মেট্রো স্টেশনে আমাকে সেদিন হেল্প করে ফেললেন আপনি সন্দেহটা আমার তৈরি হয়েছিল সেখান থেকেই জয় যখন বলল সেদিন আমার মুখ নাড়া দেখেই আপনি নাকি বুঝে যান যে আমি কী বলেছি তখনই আমার মনে একটা খটকা লেগেছিল
    কিন্তু এর থেকে কী প্রমাণ হয়?” বেশ ভাবলেশহীন মুখেই জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ বোস
    এর থেকে এটাই প্রমাণ হয় মিঃ বোস যে আপনিই হলেন সেই ব্যাক্তি যে কিনা হিরে চুরি থেকে শিবাকে খুন, সব কাজগুলো করেছেন
    অনিদার এই কথাটার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের পরিবেশটা আচমকা থম মেরে গেল ঘরে উপস্থিত তিনজন অফিসার তখন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন
    আবীর বোস কিন্তু তখনও নির্বিকার বললেন, “আই থিঙ্ক, ইউ আর মেকিং সাম মিসটেক
    অনিদা অবশ্য ওনার কথা পাত্তা দিল না বলল, “বছর পাঁচেক আগে আপনি ইংল্যান্ডে ছিলেন, সেটা তো ঠিক?”
    এতে ভুলের কী আছে?” হেসে বললেন মিঃ বোস
    আর আপনি সেখান থেকেই শিখেছিলেন লিপ রিডিং আপনার সার্টিফিকেটের একটা কপি আমার কাছে আছে মিঃ বোস
    আমার মনে হয়েছিল ওটা আমার ক্যারিয়ারে একটা ভ্যালু এড করবে, তাই শিখেছিলাম,বললেন মিঃ বোস
    তাতে পার্থ চোখ গোল গোল করে মিত্র বললেন, “তোমার বিদ্যে জানা আছে! কই আমি তো জানি না!”
    অনিদা তখন হেসে বলল, “তাহলে ভালোয় ভালোয় সব দোষ স্বীকার করে নিন এবারে?”
    এবারেও দমানো গেল না মিঃ বোসকে উনি খুব স্বাভাবিক গলাতেই বললেন, “ওই ঘটনাগুলোর জন্য যে আমিই দায়ী, তার কোনও প্রমাণ আছে?”
    প্রমাণ?” একপেশে হাসি হেসে অনিদা বলল, “আপনার ক’টা প্রমাণ চাই সেটা বলুন আগে
    তাতে কোনও কথা না বলে আবীর বোস অপলকে চেয়ে রইল অনিদার দিকে অনিদা বলতে থাকল
    প্রমাণ এক, শিবার মিসড কল লিস্টে আপনার নামদুই, আপনার লিপ রিডিং জানাতিন, বাবুকে দিয়ে খুন আর চুরি দুইই করানো
    বাবু?” অনিদার কথা শুনে এবার গলা সপ্তমে চড়িয়ে মিঃ বোস বললেন, “ও নামে আমি কাউকেই চিনি না
    অনিদা তখন হেসে বলল, “তাই নাকি? বাবু কিন্তু সব স্বীকার করেছেতারপর মুখটা গম্ভীর করে বলল, “আর চার নম্বর প্রমাণটা হল আমাকে ফোনে শাসানো
    তাতে আবার গলা চড়ালেন মিঃ বোস বললেন, “আমি আবার কবে আপনাকে ফোনে শাসালাম? কেন শুধু শুধু আমার নামে মিথ্যে বলছেন মিঃ সেন?”
    তাতে অনিদা বলল, “না, ফোনটা আপনি হয়তো করেননি তা ঠিক আপনার হয়ে করেছিল বাবু আর ফোনটা ওকে দিয়েছিলেন আপনি তার আগে নম্বরটা করে দিয়েছিলেন প্রাইভেট
    এবার অনিদা যেটা করল সেটা ম্যাজিক ব্যাগ থেকে একটা কাগজে মোড়া প্যাকেট বের করে সেটার মোড়কটা খুলে এগিয়ে দিল মিঃ বোসের দিকে তারপর বলল, “দেখুন তো, চিনতে পারেন কিনা! বাবুর কাছেই তো রেখেছিলেন জিনিসটা? আজ সকালে ওর থেকে উদ্ধার করেছি
    চোখের সামনে হিরেটা দেখে ততক্ষণে চোখ ঝলসে গেছে আমাদের সবার আমার মুখ দিয়ে তখন অস্ফুটে বেরিয়ে এল, “মহেন্দ্রলালের হিরে!”
    “এবার এটাকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেবার দায়িত্ব আপনাদের,” বলে পার্থ মিত্রের হাতে হিরেটা তুলে দিল অনিদা ওদিকে আবীর বোস তখন পুরোপুরি কোণঠাসা! কোনও প্রতিবাদ নেই দেখেই বুঝলাম হার স্বীকার করে নিয়েছেন উনি অনিদা এবার আমার দিকে ফিরে বলল, “চল জয়, এখানে আমাদের কাজ শেষ
    পার্থ মিত্র, কুশল রায় আর আশীষ ঘোষ তখন অনিদার দিকে এগিয়ে এসেছেন মিঃ মিত্র হাত জোড় করে অনিদাকে বললেন, “আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেব!”
    মিঃ রায় তখন বললেন, “শুধু ফিস দিয়ে আপনাকে আর ছোটো করব না মিঃ সেন কিন্তু টাকার অঙ্কটা যদি জানান?”
    অনিদা তাতে হেসে বলল, “সেটা আপনাদের ওপর মিঃ রায় তবে হ্যাঁ, আমার গাড়ির সামনের কাচ আর সামনের দুটো লাইটের দাম আমি নেব আর সে দুটো যেন ওই শয়তানটার পকেট থেকেই কাটা হয়বলে আবীর বোসকে দেখাল অনিদা
    ফেরার সময় আমি উশখুশ করছি দেখে অনিদা হেসে আমায় জিজ্ঞাসা করল, “কিছু জানার আছে মনে হচ্ছে?”
    ধরা পড়ে গেছি বুঝে আমি হেসে বললাম, “কিন্তু সেদিন সিঁড়িতে তোমাকে ধাক্কাটা কে মেরেছিল অনিদা?”
    তাতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে অবাক করে দিয়ে অনিদা বলল, “সেটা এখনও রহস্য রে জয় জানা গেল না! হতে পারে মহেন্দ্রলালেরই ভূত!”
_____
ছবিঃ রাজা আক্তার

1 comment:

  1. This is really a nice and informative, containing all information.Check it out here:ajker mobile

    ReplyDelete