গল্প:: অবনি স্যারের রোগ - মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ


অবনি স্যারের রোগ
মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ

গ্লোবটি বগলদাবা করে ক্লাস নাইনের ঘরে গিয়ে উঠলেন অবনি স্যার। অতি সতর্কতায় সেটি টেবিলে রেখে বললেন, “গতকাল সন্ধির পার্ট চুকেছে। এসো, আজ আমরা সমাসটা শুরু করি। সন্ধির তুলনায় সমাসটা কিঞ্চিৎ জটিল। তাই প্রবাদ আছে, সমাস শিখতে ছ-মাস। তবু দুশ্চিন্তার কিছু নেই। গোটা ব্যাপারটা জলবৎ তরলং করে বুঝিয়ে দিচ্ছি আজ। তাই এটি সঙ্গে নিয়ে এলাম
গোটা ক্লাস অবনি স্যারের দিকে দুটি চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে। সকলেই ভাবছে, মাথাটা কি গেছে অবনি স্যারের? পড়াবেন তো বাংলা ব্যাকরণ। গ্লোবটি সঙ্গে আনলেন কেন? ওটি নিয়ে তো ভূগোল আন্টির কারবার। সমাসের সঙ্গে সম্পর্ক?
ব্যাপারটা নিয়ে যখন সকলে যারপরনাই ভাবিত, সেই ব্রাহ্মমুহূর্তে ক্লাসরুমে এসে ঝাঁপালেন ভূগোল আন্টি। চোখ কপালে তুলে উত্তেজিত এবং বিরক্তিমিশ্রিত স্বরে বললেন, “ব্যাপার কী? হঠাৎ আমার গ্লোবটা নিয়ে ছুটলেন? ওদের দেশ-বিদেশের অবস্থান চেনাচ্ছেন নাকি?
গ্লোবটির দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে অমনি সংবিৎ ফিরল অবনি স্যারের। লজ্জিত হেসে বললেন, “যাঃ! এইটি নিয়ে এলাম কেন সঙ্গে করে? আনব তো বামনদেব চক্রবর্তীর ব্যাকরণ বইটা
টিফিন টাইমে টিচার্স রুমে হাসির রোল পড়ল তাই নিয়ে। ভূগোল আন্টি তারিয়ে-তারিয়ে বলছেন আর সকলে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এমন সময় টিচার্স রুমের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ালেন স্বয়ং অবনি স্যার। ওঁর বদন ম্রিয়মাণ। লজ্জিত। আন্দাজ করতে পারলেন, তাকে নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে। তার দিকে তাকিয়ে সকলে বোবা।
অসম্মানিত বোধ করলেন না তাতে অবনি স্যার। উলটে সকলকে চমকে দিয়ে নিজেই তুললেন কথাটা। একটা রিমেডি চাইলেন। অর্থাৎ ওষুধ। রোগমুক্তির। মিনতির সুরে বললেন, “বলুন না এর ওষুধ কী? আছে কিছু আদৌ? ইচ্ছাকৃত তো করি না। যেমন, আজও ঘটে গেল।”
অবনি স্যারের অসহায় চাহনির দিকে তাকিয়ে মুখ খুললেন অর্ধেন্দু স্যার। বললেন, “এই রোগের কী নাম, জানেন অবনি স্যার? অ্যালঝাইমারস। মিন্‌স, লস অফ মেমরি। স্মৃতিভ্রংশ। জটিল রোগ। সারতে চায় না। তবু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।”
“কী ডাক্তার দেখাব? অবনি স্যারের গলায় আকুতি।
“আমি বলব ডাক্তার নয়, ব্রাহ্মীশাক চিবোন,” উত্তর করলেন শ্রীতমা ম্যাডাম, “রোজ সকালে বাটনা বাটুন আর গ্যালন-গ্যালন রস গিলুন। অথবা ঝোল-ভাজা-ভর্তা, যা খুশি। এ-রোগের অব্যর্থ ওষুধ।”
“বলছেন?
শ্রীতমা ম্যাডাম হাসেন “হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা, স্যার। বাবাকে দেখেছি। রাতদিন ওই করেছেন। কখনও শরবত করে গলায় ঢালছেন, কখনও ঝোল-ভাজা-ভর্তা রূপে উদরসাৎ। তারপর...”
“তারপর? অবনি স্যারের আশান্বিত চাহনি।
“বাবার স্মৃতিভ্রংশ রোগ উধাও। মেমরি ক্রমে স্ট্রং। দিব্যি তরুণ বয়সের মতো গড়গড়িয়ে কবিতা আওড়াতে থাকলেন আবারও। রবি ঠাকুরের - সোনার তরী, আফ্রিকা; নজরুলের - বিদ্রোহী; সুনীল গাঙ্গুলীর - কেউ কথা রাখেনি, শঙ্খ ঘোষের - বাবরের প্রার্থনা... সব,” বলে একটু থামলেন শ্রীতমা ম্যাডাম। এরপর কিঞ্চিৎ হেসে বললেন, “এককালে নিয়মিত আবৃত্তিচর্চা করতেন কিনা বাবা।”
“ধুৎ! নিকুচি করেছে আবৃত্তির। ওসব শাক-লতাপাতার গল্প রাখুন। ওতে কিচ্ছু হবে না। আমার বাবারও ছিল অ্যালঝাইমারস। কিচ্ছু মনে রাখতে পারতেন না। এই বলে, এই ভুলতেন। বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে অন্য রাস্তা ধরে হারিয়ে যেতেন। আমরা গোরুখোঁজা করে আবার ঘরে ফিরিয়ে আনতাম। একবার থানাপুলিশও করতে হয়েছিল। বুঝলেন, ব্রাহ্মীর চাষ করে দেখেছি বাড়িতে। বাট, নো রেজাল্ট। ওসব গোখাদ্য।”
অসহায় তাকান অবনি স্যার। তার চোখে নৈরাশ্য। তবে উপায়?
“একজন ভালো ডাক্তার দেখান। জেনারেল ফিজিসিয়ান, এম ডি।” অর্ধেন্দু স্যারকে সমর্থন করে বললেন দীপঙ্কর স্যার। রোগজর্জর শরীর ওর। দিবারাত্র ডাক্তারকুলের দুয়ারে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন। কলকাতার ডাক্তার-হাসপাতাল গুলে খেয়েছেন। সেদিন ঘুরে এলেন সুদূর কোয়েম্বাটুর থেকে। দেবা-দেবী দু’জনেই। ফিরলেন মাসান্তে। তো, এহেন ডাক্তার-বিশারদ মানুষটির উপর তো ভরসা রাখা যেতেই পারে।
অবনি স্যার আরও একটু পাশ ঘেঁষে বসলেন দীপঙ্কর স্যারের। বললেন, “বেশ তো, আপনার অনেক জানাশোনা। অভিজ্ঞতাও। একটু বলুন না, কার কাছে গেলে ভলো হয়? মানে, কোন্‌ ডাক্তার?
“যাবেন? সত্যি?
হতচকিত তাকান অবনি স্যার। “যাব না কেন? বলুনই না?
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসেন দীপঙ্কর স্যার। “যা কিপটে আপনি। হাত থেকে খসবে অত টাকা? বড়ো ডাক্তার, বড়ো দক্ষিণা। দিতে পারবেন?
‘হ্যাঁবলবেন বলে হাঁ করছিলেন অবনিবাবু। তার আগে পথরোধ করলেন নলিনী সামন্ত। স্কুলের একমাত্র ইতিহাসবিদ। ডাক্তার-কবিরাজে উনিও কম যান না। অনেক অনেক ডাক্তারের নাড়িনক্ষত্র-ইতিহাস মেলে ধরলেন অবনি স্যারের সামনে। শেষে গুরুগম্ভীর স্বরে জানালেন, “ডক্টর সোমনাথ নিয়োগীকে দেখাতে পারেন। বসেন ব্লুপ্রিন্ট’-এ। চৌরাস্তা। সোম-শনি, সপ্তাহে দু-দিন, সন্ধ্যায়। ফিজ সামান্যই। ওনলি ফোর হান্ড্রেড। ফোন নম্বর চাইলে দিতে পারি।”

“নাম বলুন?
“অবনীন্দ্র বটব্যাল।”
“বয়স?
“একান্ন প্লাস।”
“প্রবলেম? প্রশ্ন করে অবনিবাবুর দিকে জোড়াভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন ডক্টর কালীকিঙ্কর।
অবনি স্যার বলতে থাকলেন। বললেন, বাসে চেপে টিকিট কাটার বিড়ম্বনার কথা। কতদিন দিব্যি দু’বার টিকিট কেটে বাসযাত্রা সেরেছেন। বাড়ি ফিরে আবিষ্কার করেন, একই বাসের দুটি টিকিট পকেটে তার। একটি কেটেছেন বাসে উঠেই; অপরটি নামার সময়। টিকিট কাটেন না কতদিন আবারগন্তব্যস্থলে নামতে গিয়ে কন্ডাকটরের দাঁতখিঁচুনি খেয়ে পকেট থেকে পয়সা বার করেন। বললেন, বাজারে গিয়ে আলুর জায়গায় শাঁকালু, ময়দার জায়গায় আদা নিয়ে ঘরে ফেরা এবং গৃহিণীর সঙ্গে যুদ্ধে মাতার বৃত্তান্তসকল। বললেন গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া স্কুলের অভাবনীয় ঘটনাটিও।
ডাক্তারবাবু অবনি স্যারের দিকে ট্যারা চোখে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কোনো নেশা?
এদিক-ওদিক মাথা নাড়েন অবনি স্যার। বলেন, “না। সেই কোন্‌ তরুণবেলায় দু-এক পিস বিড়ি-সিগারেট ফুঁকেছি বটে। সে অতীতের স্মৃতিমাত্র। এখন নৈব নৈব চ।”
“অন্য কোনো নেশা?
আহ্লাদিত তাকান অবনি স্যার। “তা একটি আছে বইকি। সাহিত্যচর্চা। ছড়া-কবিতা লিখি।”
চোখ দ্বিগুণ ট্যারা করে তাকালেন ডক্টর কালীকিঙ্কর। তারপর প্রেসক্রিপশন লিখলেন।
সেটি হাতে নিয়ে অবনি স্যারের চক্ষুস্থির। ডাক্তারবাবু লিখলেন, ‘অদ্য হইতে ছড়া লেখা বন্ধ।’
অবনি স্যারের শুষ্ক বদনের দিকে চেয়ে মৃদু হাসলেন ডক্টর কালীকিঙ্কর। বললেন, “ইয়েস। সাহিত্যচর্চা আর নয়। ওসব ছাড়তে হবে। তবেই এ রোগের সমূলে বিনাশ। ওষুধ উপলক্ষ্য মাত্র।”
তারপর মাসাধিককাল ওষুধটি নিয়মিত খেলেন অবনি স্যার। সঙ্গে ডাক্তারবাবুর নিদারুণ ফরমান মেনে সাধের ছড়াচর্চায় তালা। যদিও গাছের গুঁড়ি যথাস্থানে। রোগটির নট নড়ন-চড়ন। উলটে অন্য এক মারণব্যাধি জড়িয়ে ধরল তাকে। হররোজ পেটটি ফুলে আস্ত ঢাক হয়ে উঠছে তার। খাবারদাবার হজম হচ্ছে না কিছুই। সঙ্গে দুর্গন্ধময় বিচ্ছিরি চোঁয়াঢেকুর। কখনও গা গুলিয়ে বমি পায়। সঙ্গে আর একটি উপসর্গ। রোজই রাত্তিরে সময়মতো বালিশে মাথা রাখেন অবনি স্যার। অথচ ঘুমের নামগন্ধ নেই দু-চোখে। সক্কালবেলা বিছানা ছেড়ে আয়নাটির সামনে দাঁড়িয়ে আঁতকে ওঠেন। চোখের নিচে কে যেন সুলেখা কালি ঢেলে রেখেছে।

এদিন বউ আর সবেধন নীলমণিটিকে নিয়ে নেমন্তন্ন খেতে বেরিয়ে যারপরনাই গোল বাঁধালেন অবনিবাবু। যাচ্ছিলেন মেট্রোয় চেপে। আগেভাগেই বলে নিয়েছিলেন ভিড়ের চোটে এদিক-ওদিক হয়ে গেলেও নামবেন শেষ স্টেশন, নোয়াপাড়ায়। প্ল্যাটফর্মে নেমে নড়বে-চড়বে না কেউ। ভিড় হালকা হলে মুলাকাত। তারপর একসঙ্গে মালতীদিদির বাড়ি।
বাধ্য ছাত্রীর মতো অবনি স্যারের কথা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করলেন আলপনাদেবী। ভিড়ঠাসা ট্রেন নোয়াপাড়া স্টেশনে এসে ব্রেক কষতে টুপ করে নামলেন। কিন্তু প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হতে বুঝলেন, অবনিবাবু নেই। নামেননি তিনি এই স্টেশনে। নির্ঘাত আগের কোনো স্টেশনে নেমে পড়েছেন। অথবা এখানে নেমে ছেলে-বউয়ের কথা বেবাক ভুলে একাই রওনা দিয়েছেন বিয়েবাড়ি। ভাবতে গিয়ে বিষম খেলেন আলপনা। কী ভয়ানক কাণ্ড! এমনও ঘটে কখনও? সপরিবার নেমন্তন্ন খেতে বেরিয়েছেন - ভুললেন তা? তবে উপায়? মালতীদির বাড়ির ঠিকানা যে তার জানা নেই। ব্যাগ খুলে মোবাইলটি হাতে নিলেন তারপরই।
টুংটাং বেজে ওঠা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে একহাত জিভ বার করলেন অবনি স্যার। বুঝলেন, কেলোর কীর্তি বাঁধিয়ে বসে আছেন। ঝড়ের মতো মনে এল, ঠিক কোথায় কী জন্য সপরিবার ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন আজ। আশ্চর্য হয়ে গেলেন নিজেই। সব ভুলে দিব্যি কলেজস্ট্রিট পাড়ায় এসে উঠেছেন! ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পুরোনো বই ঘাঁটছেন! হে ভগবান! তবে কী সত্যি মাথাটি খারাপ হয়ে গেছে তার? হাতের বইটি ছুড়ে ফেলে অমনি মেট্রোয় লাফ। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে নেমে বউটিকে চিনতে পারলেন না। অচেনা এক মানুষ তখন আলপনাদেবী। তার দুই চক্ষু রক্তবর্ণ। নাসিকারন্ধ্রে বিষধর সর্পিনীর ফোঁস-ফোঁস। মুখে ফুটন্ত খই।
স্বামীটিকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার কথাই ভাবলেন এরপর আলপনাদেবী। বুদ্ধিও খেলে গেল মাথায়।
এদিন বাজার করতে বেরিয়েছিলেন অবনিবাবু। কথা ছিল, ব্ল্যাকে দু-লিটার কেরোসিন তেল নিয়ে আসবেন। বেমালুম ভুললেন তা অবনিবাবু। ঘরে ফিরলেন শূন্য হাতে। উপরি নুনের বদলে নিয়ে ফিরলেন চিনি। আটার বদলে কাটোয়ার ডাঁটা ইত্যাদি। কাণ্ড দেখে রেগে কাঁই হলেন আলপনা। রাগ প্রকাশ করলেন না যদিও। ঠান্ডা মাথার খুনিদের মতো আসল কাজটি সারলেন এরপরই
“কেমন হয়েছে তরকারি? জিজ্ঞাসা করে তাকান আলপনা।
“আহা, খাসা হয়েছে,” আঙুল চেটে, ঢেকুর তুলে উত্তর করেন অবনিবাবু।
“আর বড়াটি?
“সেটিও চমৎকার।”
“ওইটি কীসের বড়া, জানো? আলপনাদেবীর সহাস্য বদন।
“ডালের বোধ করি,” ভুরু কুঁচকে বলেন অবনি।
উত্তরে-দক্ষিণে মাথা দোলান আলপনা। “উঁহু, বলতে পারলে না।”
“তবে?
“ছড়ার,” আলপনাদেবীর ঠোঁটে উপচে পড়া হাসি।
“মানে!” অবনিবাবুর বিস্মিত চাহনি।
বুঝিয়ে বলতে থাকলেন আলপনা। “শোনো, গ্যাস ফুরোতে বুক করতে বললাম। করেছিলে?
“না।”
“আজ বাজার বেরোতে বললাম, কেরোসিন তেল আনতে। এনেছ?
“না। তাও আনলাম না।”
“তবে কীসে রান্না করি? পরনের শাড়িকাপড় জ্বালিয়ে, নাকি মাথার চুল ছিঁড়ে?
“আহা, তা কেন!”
“অগত্যা তোমার লেখার টেবিলে গিয়ে উঠলাম। তাক থেকে একটি-একটি করে নামালাম তোমার ছড়াভরতি ডায়ারিগুলি। তারপর সঁপে দিলাম স্বয়ং অগ্নিদেবের মুখগহ্বরে। আমার নিবেদন তৎক্ষণাৎ গ্রহণ করলেন তিনি। রান্নাও হয়ে গেল গড়গড়িয়ে।”
বিষম খেলেন অবনিবাবু। হাতে ধরা বড়ার টুকরোটি মেঝেতে টুপুস।

রাত্তিরের আহারপর্ব সেরে বালিশে মাথা রেখেছেন আলপনা। অমনি শ্রীমান পাপাইচন্দ্রের প্রশ্ন। “মা, দুপুরে ওটা কীসের বড়া খেয়েছিলাম?
“কেন? ডালবড়া।”
“আরে না। বাবাকে যে বলছিলে?
হেসে উঠলেন আলপনা। “ছড়ার বড়া?
“ইয়েস, ছড়ার বড়া। তাই বলি মা, এত্ত ছড়া আসছে কোথা থেকে।”
“কীসের ছড়া? কোথায় আসছে? বালিশ থেকে মাথা তুলে তাকান আলপনা।
“সত্যি মা। লিখেও ফেলেছি কতগুলো। শুনবে?
“কী বলছিস হাবিজাবি!” ককিয়ে উঠে বলেন আলপনা।
“সত্যি বলছি মা। ছড়া। স্রেফ বাবার মতো। সন্ধ্যায় বসে লিখলামও ক-টি,” বলেই মস্ত এক ঢেকুর তুলল পাপাইচন্দ্র। সঙ্গে জলজ্যান্ত ছড়া –
‘উদোমগড়ের রাজা
প্রত্যহ খান খাজা,
খাজা হলে বাসি
শূল, নয়তো ফাঁসি।’
ধড়মড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলেন আলপনা। ছেলের কীর্তি দেখে কাঁদবেন না দেয়ালে মাথা ঠুকবেন, ভেবে পেলেন না। করুণ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর আতঙ্কে শরীর হিম হয়ে এল তার - দুপুরবেলা বড়াটা যে উনিও খেয়েছিলেন!
----------
ছবি - নচিকেতা মাহাত

No comments:

Post a Comment