বিজ্ঞান:: রহস্যের নাম মহাকাশ - সুমনদীপ পাণ্ডে


রহস্যের নাম মহাকাশ
সুমনদীপ পাণ্ডে

তারায় ভরা রাতের আকাশ, দেখতে কত সুন্দর লাগ, তাই না? কিন্তু, কখনও কি ভেবে দেখেছ এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডকে দেখতে ঠিক যতটা সুন্দর ততটাই রহস্যময়! চলো, আমরা আজ জেনে নেব এই মহাবিশ্বের কিছু মহা বিস্ময়কর ঘটনা সম্পর্কে
) ডার্ক ম্যাটার - মানব সভ্যতার একদম গোড়া থেকেই মানুষের মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল, আমরা সাধারণ চোখে আমদের চারপাশে যে সমস্ত উপাদান দেখতে পাই তার বাইরে আর কোথাও কিছু নেই কিন্তু এই ধারণা যে কত ভ্রান্ত তার প্রমাণ পাওয়া গেল ১৯৩৩ সাল নাগাদ বিজ্ঞানীরা জানালেন এই ব্রহ্মাণ্ডের যেটুকু আমরা চোখে দেখতে পাই তা কেবলমাত্র শতাংশ আর বাকি ৯৫ শতাংশ তৈরি ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি দিয়ে এদের দেখা সম্ভব নয় আধুনিক বিজ্ঞানও আমাদের ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে সেরকম স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারে না
) ব্রহ্মাণ্ড কী প্রকাণ্ডবিজ্ঞানচর্চার একদম গোড়ার থেকে বিজ্ঞানীদের মনে একটাই প্রশ্ন ছিল, এই ব্রহ্মাণ্ডের আকার ঠিক কতটা? আর এই প্রশ্নের উত্তর বার বার একটাই বেরিয়ে এসেছেঅনাদি অনন্ত ১৯২৯ সালে বিজ্ঞানী এডউইন হাবাল আবিষ্কার করলেন এই ব্রহ্মাণ্ড স্থির নয়, সচল ক্রমবর্ধমান অর্থাৎ আমাদের ব্রহ্মাণ্ড তার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি নিজের আয়তন ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে এবং আগামী দিনেও নিজের পরিধি আরও এভাবে বাড়িয়ে চলবে তাই এক কথায় বলা সম্ভব নয় এর আকার ঠিক কতটা
) ওয়াও সিগন্যাল (WOW signal) – আচ্ছা, যদি বলি আকাশের দিকে কান পাতলে কি শব্দ শোনা যায়? এর এককথায় উত্তর হল, না কিন্তু বিজ্ঞানীরা তো এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অক্লান্তভাবে ব্রহ্মাণ্ডের বুকে শব্দতরঙ্গের খোঁজ করে যাচ্ছিলেন অবশেষে ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট এতদিনের পরিশ্রমের ফল মিলল ওহাইও-এর মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের (Ohio state aerospace research center) এক রেডিও টেলিস্কোপ মহাকাশ থেকে আশা কিছু রহস্যময় শব্দতরঙ্গকে ধরল বিজ্ঞানীরা এই শব্দতরঙ্গকে নিয়ে প্রচুর কাটাছেঁড়া করে শেষে বুঝতে পারলেন এই শব্দতরঙ্গ তাদের চেনাজানা কোনো শব্দ নয় এই গবেষকদলের একজন বিজ্ঞানী জেরি হেমান-এর (Jerry R. Ehman) কাছে ব্যাপারটা এতটাই বিস্ময়কর ছিল, যে তিনি এই তরঙ্গের নাম রাখলেন ওয়াও সিগন্যাল (WOW signal) অনেক চেষ্টা করেও এই তরঙ্গের কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি তাই অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এর পেছনে ভিনগ্রহের প্রাণীদের হাত আছে যাই হোক এই ঘটনা বিজ্ঞানীমহলে এমন আলোড়ন তৈরি করেছিল যে বিজ্ঞানীরা তারপর থেকে ক্রমাগত এই তরঙ্গের পালটা তরঙ্গ মহাকাশে পাঠিয়ে চলেছিলেন এলিয়েনদের উত্তরের আশায় কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ অবধি এর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি এক ইতিহাসের আশ্চর্য ঘটনা হয়েই রয়ে গেল
) ধাতু যায় চিটেতুমি যদি মহাকাশে নিয়ে গিয়ে দুটো একই ধাতুকে পরস্পর ঠেকাও তাহলে সেই ধাতু দুটো সারা জীবনের মতন একসঙ্গে জুড়ে যাবে এটাকে বলেকোল্ড ওয়েলডিং পৃথিবীতে এরকম ঘটনা ঘটে না, তার একটাই কারণ হচ্ছে হাওয়া পৃথিবীতে যখন দুটো ধাতুকে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ঠেকানো হয় তখন এয়ার মলিকিউল ওই ধাতুটির সঙ্গে বিক্রিয়া করে দুটো ধাতুর মাঝখানে একটা অক্সিডাইসড স্তরের সৃষ্টি করে ফলে দুটো ধাতু আর জোড়া লাগে না যেহেতু মহাকাশে হাওয়া নেই তাই খুব সহজেই দুটো ধাতু একে অন্যের সঙ্গে আটকে যায়
মহাকাশের যেমন শেষ নেই, ঠিক তেমনই তাকে ঘিরে রহস্যেরও শেষ নেই তাই আজ এই পর্যন্ত থাক পরে আবার অনেক গল্প বলা যাবে
----------
তথ্যসূত্র ও ছবি - আন্তর্জাল

No comments:

Post a Comment