অপু-দুগ্গা'র পুজো
মহাশ্বেতা রায়
" 'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি...'
বল তো দিদি , আসবে কবে দুগ্গাপুজোর ছুটি?"
"খালি দেখছি ছুটির চিন্তা, পড়াতে নেই মন-"
"আচ্ছা দিদি, জানিস কি তুই, কোথায় কাশের বন?
সেই যেমনটা দেখেছিলাম 'পথের পাঁচালী' তে-
ছুটেছিল দুগ্গা-অপু রেলগাড়ি দেখতে..."
"ধুর পাগ্লা , এই শহরে কোথায় সে সব পাবি..."
"আচ্ছা দিদি, আমার সাথে ছাদে একবার যাবি?
দেখ্ না কেমন আকাশেতে গোল একখান চাঁদ-
চল না দেখি চাঁদের হাসি ভাঙছে কেমন বাঁধ?"
"দেখ ভাই, তুই এবার কিন্তু খুব বকাটা খাবি !
কালকে না তোর ক্লাস টেস্ট? তুই ঠিক গোল্লা পাবি !"
"আচ্ছা দিদি, একটা কথা - সত্যি কিন্তু বলিস-
সবার থেকে এত্ত দূরে সত্যি ভাল আছিস?
কার সাথে তুই ঝগড়া করিস, কার সাথে স্কুল যাস ?
কার সাথে তুই ফেরার পথে আইসক্রিম কিনে খাস?
একলা একলা স্কুলে যেতে ভাল্লাগেনা আমার,
চোখে কেমন জল এসে যায়, গলার কাছে ভার..."
" অপুরে, তুই দেখছি রয়েই গেলি বোকাটা
আমি তো তোর সাথেই থাকি বুঝিসও না সেটা?
সেই যে সেদিন হঠাৎ করে বৃষ্টি দুপুরবেলা,
কাদাজলে তোর সাথে তো আমিই করলাম খেলা,
আর যেদিন তুই ফাংশনেতে দারুণ গেয়েছিলি-
সবার থেকে জোরে আমি দিলাম হাত্তালি,
ছবি আঁকিস যখন নিয়ে রং-পেন্সিল- তুলি
একেক সময় দু-চারটে টান আমিও দিয়ে ফেলি,
আসলে তো থাকি আমি তোর মনের ভিতর
সকাল-বিকেল-দিন-রাত্তির-পুরো-বছরভর..."
"হ্যাঁ রে দিদি, ঠিক বলেছিস, তাই তো আমি ভাবি-
ইচ্ছে হলেই কেন দেখি মনভরানো ছবি -
সেই ছবিতে ছুটছি আমি তোর হাতটা ধরে-
কাশের বনে, ধানের ক্ষেতে, নদীর ধারে ধারে,
অনেক দূরে ট্রেন চলে যায় কু-ঝিকঝিক-ঝিক-
নদীর জলে চাঁদের আলো করে যে ঝিকমিক-
সেই জায়গার নাগাল খুঁজে পায়না গুগ্ল্ ম্যাপ্
পায়না বাবার স্মার্টফোনের নতুন ট্র্যাভেল অ্যাপ্ !
শুনতে পাচ্ছি বুকের ভিতর গুনগুনানো সুর-
তোর হাত ধরেই, মনের মাঝে , নিশ্চিন্দিপুর।"
"এই তো কেমন সব বুঝেছে আমার ভাই সোনা-
এবার তবে মন দিয়ে কর একটু পড়াশোনা !
আর ক'টা দিন পরেই পুজো, ঠিকই পাবি ছুটি-
পিকলু, রুনি, টুবুর সাথে করিস হুটোপুটি-
পড়লে মনে আমার কথা চোখ যদি হয় নদী-
ভাবিস, কোথায় গেল শোলোক বলা দুগ্গাদিদি...?
দেখিস খুঁজে ঢাকের বাদ্যি-আলোর মালার ফাঁকে
মন্ডপে মন্ডপে সে যে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ।।"
ছবি -দ্বৈতা
বাঃ
ReplyDeleteখুব সুন্দর ভাবনা।
ReplyDelete