দেশবিদেশের গল্প:: ভূতুড়ে কুকুর - এলেন উইটিঙ্গার (অনুবাদঃ অনন্যা দাশ)


“ওটা হকিন্স,” ট্র্যাভিস আঙ্গুল দিয়ে বাড়ির সামনে বসে থাকা একজন বুড়ো লোককে দেখিয়ে বলল।

“বুড়োটার মাথায় ছিট আছে!” বলে একটা আঙুলকে কানের কাছে নিয়ে গিয়ে শুন্যে গোল গোল করে দেখাল। ওই ভাষা সবাই বোঝে! তারপর ওরা দুজন বাড়িটার সামনে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেল। জ্যাক আর ওর মা যে বাড়িটাতে সবে এসে উঠেছে সেটা ছাড়া এই বুড়োর বাড়িটাই এই রিজার্ভয়ার এলাকার একমাত্র বাড়ি। বুড়ো খ্যাপাটে বলে ওরা তার দৃষ্টি এড়াবার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারল না। বুড়ো ঠিক ওদের দেখে ফেলেছে। টলমল পায়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে সে।

“এই!” বলে হাঁক দিল বুড়োটা, “আমার কুকুরটাকে দেখেছ নাকি কোথাও? ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!”

জ্যাক থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে লোকটার দিকে তাকাল। ওর ঠাকুমার আদরের কুকুরটা একবার পালিয়ে গিয়েছিল। তাতে সবার কী মন খারাপ! যতক্ষণ না তাকে ফিরে পাওয়া গেল ঠাকুমার মনের কষ্টে এঘর ওঘর করছিলেন। তাই বুড়োটার জন্যে একটু মায়া হল জ্যাকের।

“কেমন দেখতে কুকুরটাকে?” জ্যাক জিগ্যেস করল।

“আরে চল রে!” পাশ থেকে ট্র্যাভিস হিস হিস করে বলল, “ওর কথায় কান দিস না! ওর একটা কথাও বিশ্বাস করা যায় না।”

কিন্তু লোকটা যে সোজা ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। তাছাড়া কুকুরটাকে কেমন দেখতে সেটা জানতে তো বাধা নেই। দেখতে পেলে না হয় হকিন্স বুড়োকে জানিয়ে দেবে।

“সাদা কালো ছোপ ছোপ,” বুড়ো বলল, “এই এতটা লম্বা,” বলে হাতটাকে হাঁটু আর কোমড়ের মাঝামাঝি জায়গায় ধরল।

ট্র্যাভিস হাসল, “ধুস! তুই আবার ওই খ্যাপা বুড়োটার কথায় কান দিতে গেলি কেন!”

“ঠিক আছে, দেখতে পেলে আপনাকে জানাব!” জ্যাক বলল।

“থ্যাঙ্ক ইয়ু খোকা”।

বলে বুড়োটা আবার আস্তে আস্তে করে গিয়ে চেয়ারটায় বসল। চেয়ারটাও এতটাই পুরান যে ওর রোগা শরীরের ভারেও ক্যাঁচ কোঁচ করে উঠল। আদ্যিকালের একটা চেয়ার, যে কোনও সময় যেন ভেঙ্গে পড়বে। সত্যি বলতে কী বুড়োর গোটা বাড়িটাই কেমন যেন একটা পোড়ো মতন, সেটাও ভেঙ্গে পড়লে আশ্চর্যের ব্যাপার হবে না!


“এবার চল রে বাপু!” ট্র্যাভিস ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল। এগিয়ে গেল ওরা দুজন। ট্র্যাভিসকে যে কী ভাবে সামলাবে জ্যাক ঠিক ভেবে পায় না। ওর কথামত না চললে ট্র্যাভিস আবার ভারি রেগে যায়। জ্যাকের বয়েই গেছে কারো মেজাজ সইতে কিন্তু ট্র্যাভিস আবার এই এলাকাটা বেশ ভাল চেনে আর ওর সঙ্গে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে ভালই লাগে জ্যাকের। শিকাগো শহরে থাকতে তো আর এই সব করার সুযোগ হয়নি কখনও। তাছাড়া এই এলাকাতে ট্র্যাভিস ছাড়া ওর বয়সের ছেলে খুব একটা নেই। তাই ট্র্যাভিসের সঙ্গে আলাপ হয়ে প্রথম প্রথম ওর ভালই লেগেছিল। এখন অবশ্য একটু বিরক্তিকর ঠেকছে ওর ব্যবহার। যেমন ওই যে বেচারা বুড়োটা, যে নিজের কুকুরটাকে খুঁজছ্‌ তার সম্পর্কে এক ঝুড়ি বাজে কথা বলার কী দরকার?

জ্যাকরা যখন শিকাগোতে ছিল তখন ওর অনেক বন্ধু ছিল কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর ওরা এই গ্রাম জঙ্গল এলাকায় একটা ছোট বাড়িতে এসে উঠেছে। আসলে এক ঘন্টার দূরত্বেই ওর দাদু দিদা থাকেন। ওদের ওখানে থাকা যাচ্ছে না কারণ মা যে ডেন্টিস্টের অফিসে চাকরিটা পেয়েছেন সেটা আবার এদিকে। স্কুল খুললে নিশ্চয়ই জ্যাক অনেক বন্ধু পেয়ে যাবে কিন্তু এখন গরমের ছুটি চলছে বলে মুশকিল। তাই এখন বন্ধু চাইলে ট্র্যাভিস ছাড়া গতি নেই।

“উফফ, আমি ভাবতেই পারছি না যে তুই ওই বুড়ো হকিন্সের সঙ্গে কথা বললি! এবার ও আর তোকে ছাড়বে না, দেখতে পেলেই গল্প জুড়ে দেবে।”

জ্যাক বলল, “ওর কুকুরটা তো হারিয়ে গেছে। আমি ভাবলাম বুড়ো মানুষ যদি কিছু সাহায্য করতে পারি তাই...”

“হ্যাঁ, কুকুর হারিয়েছেই বটে!” ট্র্যাভিস ঠোঁট উল্টালো, “তুই শুনতে চাস ওর কুকুর কী ভাবে ‘হারাল’? বুড়ো নিজের লড়ঝরঝরে গাড়িটা দিয়ে ওকে চাপা দিয়ে দিয়েছিল, বুঝলি? জেসি বেচারা মরে গেছে, আর সব দোষ ওই বুড়োরই!”

“বলিস কী রে! সত্যি?” জ্যাক আকাশ থেকে পড়ল।

ট্র্যাভিস রাগ দেখাল, “আবার নয় তো কী! ওই রকম ভয়ঙ্কর কথা আমি বানিয়ে বানিয়ে বলতে পারি বলে মনে হয় তোর?”

“এ বাবা! কী ভয়ানক! আমার মনে হয় সেই জন্যেই হয়তো লোকটা পাগল হয়ে গেছে!”

“পাগল তো ওর হওয়ারই কথা। ব্যাটা নিজের কুকুরটাকে মেরেছে।”

“নিশ্চয়ই দুর্ঘটনা ছিল। ইচ্ছে করে কেউ নিজের কুকুরকে মারে নাকি?”

ট্র্যাভিস প্রতিবাদ করল না, শুধু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “শুনেছি বুড়ো সেদিন খুব তাড়ায় ছিল। খেয়াল করেনি ঠিক মত। কুকুরটা ওর বাড়ির সামনের জমিটায় শুয়েছিল আর হকিন্স দিল ওর ওপর দিয়ে গাড়িটা চালিয়ে”।

“সত্যি খুব ভয়ঙ্কর!” জ্যাক শুনে বলল।

ট্র্যাভিস কয়েক মিনিট চুপ করে থেকে বলল, “লোকে বলে জেসিকে নাকি মাঝে মাঝেই বুড়োর বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়। হয়তো সে তার মনিবকে দেখতে আসে।”

সেটা শুনে জ্যাকের বুকটা ধ্বক করে উঠল। সে সঙ্গে সঙ্গে চারপাশে তাকিয়ে দেখল কুকুরটাকে সত্যি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কিনা দেখার জন্যে। নাহ সে ভয় পাবে না মোটেই! ট্র্যাভিস ইচ্ছে করে ওকে ভয় পাওয়ানোর জন্যে ওই সব গল্প দিচ্ছে!

“আমি ও সব হাবিজাবি গল্পে বিশ্বাস করি না!” সে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “ভূত বলেই কিছু নেই – তাও আবার কুকুরের ভূত!”

ট্র্যাভিস কাঁধ ঝাঁকাল, “আমি যা শুনেছি তাই বলছিলাম।”

এর পর জ্যাকের বাড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত দুজনে আর কোন কথা বলল না।

“ঠিক আছে, আমি তাহলে চললাম,” ট্র্যাভিস বলল।

জ্যাক বললে হয়তো ও আরো কিছুক্ষণ থেকে যেত কিন্তু ওর ইচ্ছে করছিল না ট্র্যাভিসের সঙ্গে আর সময় কাটাতে।

“তোর বাড়িটা ঠিক কোথায়?”

ট্র্যাভিস গাছের সারির ফাঁক দিয়ে দেখালো, “ঐ দিকে, ডাকোটা রোডে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা শর্টকাট আছে।“

“আচ্ছা, তাহলে পরে আবার দেখা হবে,” বলে জ্যাক বাড়িতে ঢুকে পড়ল।

ট্র্যাভিস হাত নেড়ে গাছের সারির দিকে হাঁটা দিল।

###

রাতে খাবার টেবিলে জ্যাকের মা আবার ওর বন্ধু সমস্যা নিয়ে ওর পিছনে লাগলেন। মার সঙ্গে কোন এক মহিলার পরিচয় হয়েছে কাজের জায়গায়। সেই মহিলার নাকি জ্যাকের বয়সী একটা মেয়ে আছে তাই মা তার সঙ্গে জ্যাকের বন্ধুত্ব করানোর জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন!

“আমি এখন আর কেজিতে পড়ি না মা যে তোমাকে আমার জন্যে বন্ধু জোগাড় করে দিতে হবে! তাছাড়া ওই মেয়েটাই বা আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইবে কেন?”

“আমি ওর মাকে বলেছি তুমি কত ভাল ছেলে...”

“থাক অনেক হয়েছে! আর একদম না!”

“কিন্তু জ্যাক, তোমার তো বন্ধু দরকার।”

“আমার বন্ধু আছে তো, তোমাকে বলেছি না?”

“হ্যাঁ, ট্র্যাভিস। ওর সঙ্গে একদিন আমার আলাপ করিয়ে দিও। তবে তোমার কথা শুনে ওই ছেলেটাকে তো একটু বখাটে বলেই মনে হয় আমার। সারাদিন শুধু জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া কোনও কাজ নেই!”

“তাতে কী? এখন তো স্কুলের ছুটি বলে আমিও তো তাই করি।”

মা মুখ নিচু করে বললেন, “আমার হয়তো হুট করে এখানে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। স্বার্থপরের মতন কাজ হয়েছে। আসলে আমি তোমার দাদু-দিদার কাছে থাকতে চাইছিলাম কিন্তু তোমার প্রতি মনে হয় অবিচার করে ফেলেছি। শিকাগো শহর তোমার খুব প্রিয় ছিল সেটা আমি জানি।”

“ঠিক আছে, সে তো আমি পরেও আবার যেতে পারি। তখন বাবার বাবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করব”।

বাবার কথা তুললেই মার ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় সেটা জ্যাক জানে। তাই ওর কথাটা শুনে মা খাবার টেবিল থেকে উঠে নিজের শোওয়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। জ্যাক মনে মনে সেটাই চেয়েছিল, একলা থাকতে। ওর জীবনটা কী রকম বোরিং আর বন্ধুহীন হয়ে গেছে সেই কথাটা বার বার মার কাছ থেকে শুনতে ওর মোটেই ভাল লাগে না।

পরদিন মা কাজে চলে যাওয়ার পর জ্যাক সাইকেল নিয়ে রিজার্ভয়ার রোডে গিয়ে হাজির। ট্র্যাভিসকে কোথাও দেখতে না পেয়ে সে ঠিক করল বুড়ো হকিন্সের সঙ্গে কথা বলবে। বেচারা বুড়ো লোকটার জন্যে কষ্টই হচ্ছিল ওর। কুকুরের মৃত্যুর ব্যাপারটা কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছিল না। বুড়ো হকিন্স যদি তার কুকুরটাকে নিয়ে কিছু গল্প বলতে চায় তাহলে ও শুনতে রাজি। এমনিতেও তো আর কিছু করার নেই। তবে বুড়োর বাড়ি পৌঁছনোর আগেই কে যেন ওর নাম ধরে ডাকল। নির্ঘাত ট্র্যাভিস, এখানে আর কেউ তো ওর নাম জানে না।

“কোথায় তুই?” গাছের আড়াল দিয়ে দেখতে চেষ্টা করল জ্যাক।

“এই তো এখানে!” ট্র্যাভিস বেশ আস্তেই বলল কথাটা।

জ্যাক সাইকেলটাকে মাটিতে নামিয়ে রেখে ট্র্যাভিসের গলার স্বর যেদিক থেকে আসছিল সেদিকটায় গেল। কাছেই ছিল সে, মাটিতে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে! জ্যাককে দেখে সে ঠোঁটে আঙ্গুল দিল।

“কী ব্যাপার?” জ্যাকও ফিসফিস করে বলল।

ট্র্যাভিস গাছগুলোর দিকে ইশারা করে বলল, “নিচে এসে বোস। আমি দেখতে পাচ্ছি! ওই যে ওইখানে...”

জ্যাক হাঁটু গেড়ে বসে ট্র্যাভিস কী দেখছে সেটা দেখার চেষ্টা করল, কিন্তু শুধু সারি সারি গাছ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। তারপর মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে দেখতে গিয়ে মনে হল কী যেন একটা সাঁ করে সরে গেল, যেন দেখা দেবে না বলে।

তারপর হঠাৎই কুকুরটাকে দেখতে পেল জ্যাক, জঙ্গলের মধ্যে একটা খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। গায়ে সাদা কালো ছোপ ছোপ, মুখ থেকে গোলাপি জিভটা বেরিয়ে রয়েছে।

“ওই তো, ওটাই জেসি!” ট্র্যাভিস বলল, “যে ভূতুড়ে কুকুরের কথা বলছিলাম তোকে!”

জ্যাকের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। এও কী সম্ভব? কুকুরটা যেন ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে! জ্যাকের একবার মনে হল এটাও নিশ্চয়ই ট্র্যাভিসের কারসাজি, জ্যাককে ভয় পাওয়াবার চেষ্টা করছে। জ্যাক যদি ভয় পেয়ে চিৎকার করতে করতে ছুটে পালায় তাহলে ট্র্যাভিসের বেশ একটু সুবিধা হবে। স্কুল খুললে সে সবাইকে মনের সুখে বলতে পারবে যে জ্যাক আসলে ভিতুর ডিম! নাহ, জ্যাক সেটা তো হতে দিতে পারে না!

“ওকে তো আর দশটা সাধারণ কুকুরের মতনই লাগছে,” বলে জ্যাক উঠে দাঁড়াল।

“চুপ করে বোস বোকারাম!” ট্র্যাভিস ফিসফিস করে বলল, “যখন বেঁচে ছিল তখনও জেসি বেশ হিংস্র ছিল তাই অ্যাক্সিডেন্টে মরে গিয়ে যে সে বাধ্য হয়ে গেছে সেই রকমটা আশা না করাই ভাল!”

জ্যাক বিরক্ত হয়ে বলল, “ওই কুকুরটা যদি ভূত হয় তাহলে আমিও ভূত!”

বলে ট্র্যাভিসকে পিছনে ফেলে কুকুরটার দিকে এগোতে লাগল জ্যাক। কুকুরটা ওকে জ্বলন্ত দৃষ্টি দিয়ে দেখছিল।

“আরে ভূতুড়ে কুকুরদের নিয়ে কিছুই জানিস না তুই!” ট্র্যাভিস চিৎকার করে বলে উঠল, “মারা পড়বি! জেসি কামড়ে তোর পা ছিঁড়ে দেবে!”

জ্যাক কাছে আসছে দেখে কুকুরটা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠল। একটা চাপা হিংস্র গর্জন বেরিয়ে এল জন্তুটার গলা থেকে। জ্যাক ভালই জানে যে জঙ্গলের মধ্যে একটা অচেনা কুকুরের সামনে পড়াটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভূত হোক বা না হোক কুকুরটা যে ওকে দেখে খুশি নয় সেটা তো বেশ বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু ট্র্যাভিস ওকে বোকা বানাবে সেটা তো কোনও মতেই হতে দেওয়া যায় না।

কুকুরটার কাছে গিয়ে আস্তে করে একটা হাত বাড়াল সে। কুকুরটা দু পা পিছিয়ে গিয়ে আবার দাঁত খিঁচালো।

“এই ডগি!” জ্যাক বলল, “তুই কী ভূত নাকি? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তুই গাড়ি চাপা পড়েছিলি...”

ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই কুকুরটা ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর পা-টা কিছু নয় একেবারে সোজা ঘাড়ের ওপর! ওর আক্রমণে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জ্যাক কোন রকমে হাত দিয়ে ওকে আটকাতে চেষ্টা করল কিন্তু কোনও লাভ হল না। ভয়ঙ্কর রাগি জন্তুটার দাঁত ওর কাঁধে কেটে বসল। প্রচন্ড ব্যথায় হয়তো পড়েই যেত জ্যাক কিন্তু ভয় ওকে দাঁড় করিয়ে রাখল। ছাড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করল জ্যাক কিন্তু কুকুরটা ওকে কিছুতেই ছাড়ছিল না।

“জেসি! ওকে ছেড়ে দে!” ট্র্যাভিস দৌড়ে এল হাত নাড়তে নাড়তে, “যা, যা, জেসি ছেড়ে দে!”

জ্যাককে চমকে দিয়ে ট্র্যাভিসের কথা শুনে জেসি ওকে ছেড়ে দিল। ট্র্যাভিস মাটিতে পা দিয়ে মেরে মেরে আওয়াজ করতে লাগল। কুকুরটা সরে গেল, জিভ বার করে ঠোঁট চাটল, তারপর পিছন ফিরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে উধাও হয়ে গেল।

“কত করে বললাম ওর কাছে যাস না, তা আমার কথা শুনবি কেন!” ট্র্যাভিস রেগে বলল, “কী ভেবেছিলি তুই? ও তোর সঙ্গে খেলা করবে? আদর করে পা চাটবে?”

জ্যাক কামড় খাওয়া কাঁধটাকে অন্য হাত দিয়ে চেপে ধরে টলতে টলতে রাস্তায় উঠে এসে বলল, “বাপরে! ওটা মোটেই ভূতুড়ে কুকুর নয়! জ্যান্ত পাগলা কুকুর একটা!”

ট্র্যাভিস ঠোঁট উল্টাল, “হ্যাঁ, তোকে বলেছে! কী করে জানলি শুনি?”

“ভূতেদের আবার দাঁত থাকে নাকি? ভূতেরা কামড়ে রক্ত বার করে দেয় না মোটেই!”

“রক্ত কোথায়?” ট্র্যাভিস শান্ত গলায় বলল, “তোর জামাটাও তো ছেঁড়েনি।”

“অ্যাঁ!” জ্যাক হাঁটা থামিয়ে কাঁধটাকে দেখল। সত্যি তো, সে ভেবেছিল কামড়ে রক্তারক্তি কান্ড হয়ে গেছে কিন্তু কাঁধে কামড়ের কোন চিহ্নমাত্র নেই! ব্যথাটাও কুকুরের সঙ্গেই মিলিয়ে গেছে!

ট্র্যাভিস কাঁধ ঝাঁকিয়ে হাসল, “কিরে? ভূত দেখলি নাকি?”

###

জ্যাকের মা কাজ থেকে ফিরে এসে দেখলেন যে সে বাইরের ঘরের একটা চেয়ারে বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে রয়েছে।

“কী হয়েছে? কী ভাবছ? মুখখানা অমন কালচে দেখাচ্ছে কেন?” মা জিগ্যেস করলেন।

জ্যাক সোজাসুজি মাকে প্রশ্ন করল, “মা, তুমি ভূতে বিশ্বাস করো?”

মা ওর পাশেই বসে পড়ে বললেন, “কেমন ভূত? হ্যালোইন বা ভূত চতুর্দশীর ভূত?”

“না, মরে যাওয়ার পর মানুষ ভূত হয়ে ফিরে আসে – বা মরে যাওয়া কুকুর যাদের দেখতে পাওয়া যায়?”

মা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “জ্যাক, এই পরিবেশটার জন্যেই তোমার ওই রকম চিন্তা সব মাথায় আসছে তাই না? সারাদিন বাড়িতে একা থেকে ভয় পেয়ে তুমি ওই সব হাবিজাবি ভাবনা ভাবছ!”

“হয়তো হাবিজাবি নয়। ওই হকিন্স আছে না, যে রাস্তার ওইদিকটায় জঙ্গলের কাছে থাকে?”

“ছি, ছি, মিস্টার হকিন্স বলো জ্যাক! বয়স্ক মানুষকে একটু সম্মান দিয়ে কথা বলতে শেখো! সব সময় আপনি বলবে!”

“আচ্ছা বাবা মিস্টার হকিন্স! ওনার একটা কুকুর ছিল – জেসি। সে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল। আজ আমি তাকে জঙ্গলে দেখলাম”।

“কী আজেবাজে কথা বলছ!”

“আজেবাজে নয়! ট্র্যাভিস ওকে আগে দেখতে পেয়ে আমাকে ডাকল তখন আমিও দেখতে পেলাম”।

মা হেসে ফেললেন, “আমার মনে হয় তোমার ওই ট্র্যাভিস বন্ধুর কল্পনা শক্তি খুব প্রখর! ওই সব উল্টোপাল্টা কথায় বিশ্বাস করতে নেই তুমি ভালই জানো।”

“মা, আমার কথাটা শোনো! কুকুরটা আমাকে কামড়ে দিয়েছিল এইখানে...”

“সেকি তোমাকে কুকুরে কামড়েছে,” মা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, “সেটা আগে বলবে তো! এখন ইঞ্জেকশান নিতে হবে!” তারপর ওর কাঁধটা ভাল করে দেখে বললেন, “কই কিছুই তো দেখছি না!”

“চলে গেছে! প্রথমে যন্ত্রণায় মরে যাচ্ছিলাম, তার পর কুকুরটা চলে যেতেই ব্যথাও চলে গেল!”

“উফফ সত্যি জ্যাক! কী আষাঢ়ে গল্প!” মা ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললেন, “তুমি যদি মনে করো আমি ওই সব গল্পে ভয় পেয়ে যাব তাহলে ভুল ভেবেছো। ভুলে যেও না আমি এই এলাকাতেই বড় হয়েছি। এখানকার চাষাদের বানানো সব বোকা বোকা ভয়ের গল্প আমার জানা আছে। ভূতুড়ে কুকুরই বটে! বানিয়েছো ভালো! নাও এবার হাত ধুয়ে এসে আমাকে রান্নাঘরে সাহায্য করো।”

জ্যাক একদিকে খুশিই হল যে মা ভেবেছেন ওর কথা সব মিথ্যে, বানানো ঘটনা কিন্তু অন্য দিকে সে নিজে তো ভালই জানে যে কুকুরটাকে সে দেখেছে আর তার কামড়ও খেয়েছে।

###

পরদিন সকালে মা অফিসে চলে যাওয়ার পর জ্যাক বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখল ট্র্যাভিস ওদের বাড়ির সামনে ওর জন্যে অপেক্ষা করছে।

“জেসিকে দেখতে যাবি নাকি আবার?” ট্র্যাভিস হেসে জিগ্যেস করল।

“নাহ, আমি মিস্টার হকিন্সের সঙ্গে কথা বলব”।

“দুর ওই বুড়োটার সঙ্গে কথা বলে কী হবে?” ট্র্যাভিস বিরক্ত হল, “তার তো দিন না রাত সেই খেয়ালই নেই!”

“আমি ওনার বাড়িতেই যাবো,” জ্যাক দৃঢ় ভাবে বলল।

ট্র্যাভিস তাতে বেশ রেগেই গেল, “ঠিক আছে তুই ওই বুড়োর বকবক শোন, আমি জেসিকে খুঁজতে যাচ্ছি”।

“সে তোর যা ইচ্ছে।”

দুজনে হনহন করে হেঁটে চলল যেন দুজনেরই খুব জরুরি কোনও কাজ আছে। মিস্টার হকিন্সের বাড়িটা দেখা যেতেই ট্র্যাভিস জঙ্গলের দিকে ঘুরে গেল।

“কুকুরটাকে দেখতে পেলে তোকে ডাকব, কেমন?”

“কোনও দরকার নেই! আমি আর ওই কুকুরটাকে দেখতে চাই না। আমাকে কামড়ে দিয়েছিল ব্যাটা”।

“কোথায়?” ট্র্যাভিস মুচকি হেসে বলল, “আমি তো কামড়ের দাগ দেখছি না!”

হাসতে হাসতেই সে গাছের সারির পাশ দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে গেল।

মিস্টার হকিন্স তার বাড়ির সামনে চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন রোজকার মতন। জ্যাককে দেখে চিনতে পারলেন মনে হল। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে বললেন, “আমার কুকুরটাকে খুঁজে পেয়েছ কী? আমার জেসিকে?”

জ্যাক ওনার কাছে গিয়ে বলল, “সেটা নিয়েই আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। আমার মনে হয় আমি ওকে দেখেছি”।

মিস্টার হকিন্স আনন্দে পায়ে চাপড় মেরে হেসে উঠলেন। জ্যাক তখন দেখল ওনার বেশ কয়েকটা দাঁত নেই। বললেন, “আমি জানতাম ও ফিরে আসবেই! কোথায় সে? জঙ্গলে বুঝি? সব সময় জঙ্গলে পালিয়ে যেতেই ভালবাসত”।

জ্যাক ঘাড় নাড়ল, “হ্যাঁ, জঙ্গলে। কিন্তু আমি আপনাকে একটা কথা জিগ্যেস করতে চাই। মানে প্রশ্নটা একটু অদ্ভুত শোনাবে হয়তো...আচ্ছা মিস্টার হকিন্স আপনার কুকুরটা কী জীবিত?”

মিস্টার হকিন্সের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল, “মানে? কী বলতে চাইছ তুমি? তুমিই তো বললে ওকে দেখেছ আবার এখন জিগ্যেস করছ ও জীবিত কিনা। একটু আগেই তো তুমি বললে তুমি ওকে দেখেছ!”

“হ্যাঁ জানি, আমি সত্যি ওকে দেখেছি। কিন্তু আমাকে একজন যে বলল...” জ্যাক থেমে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কী ভাবে বলবে...নাহ সোজাসুজি বলাই ভাল মনে হয়।

“আমি শুনলাম আপনি নাকি জেসিকে আপনার গাড়ির তলায় চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন, আর, আর ...ও নাকি মারা গিয়েছিল”।

মিস্টার হকিন্স কিছু বললেন না। শুধু জ্যাকের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজের হাতের আঙুলগুলো দেখতে লাগলেন। শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “জেসিকে আমি খুব ভালবাসতাম, আমি কী ওর কোনও ক্ষতি করতে পারি?”

জ্যাক বলল, “হ্যাঁ জানি, কিন্তু কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছিল কী?”

“ঘটে থাকতেও পারে!” মিস্টার হকিন্স মাথাটা একদিকে হেলিয়ে খসখসে গলায় বলে চললেন, “একবার আমি গাড়িতে যখন উঠলাম তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। বউকে বলেছিলাম শহর থেকে ওকে তুলে নিয়ে আসব। ঠিক খেয়াল ছিল না,” এতটা বলে উনি থেমে গেলেন।

“কত বছর আগের কথা এটা?” উনি যাতে কথা বলা বন্ধ না করেন তাই জ্যাক বলল।

“তা হবে বছর পনেরো আগেকার কথা। আমার বউ সেলমা তখন বেঁচে।”

পনেরো বছর আগে! নাহ বুড়োটার মাথাটা গেছে। অতদিন আগে ঘটনা হতেই পারে না!

হঠাৎ মিস্টার হকিন্স টানটান সোজা হয়ে বসলেন, পরক্ষণেই আবার কুঁকড়ে গেলেন। দুহাতে মাথা চেপে ধরে বললেন, “হায় ভগবান! কেন যে আমি পিছনে তাকালাম না। কেন আমি খেয়াল করলাম না। ভগবান আমাকে ক্ষমা করুন!”

জ্যাকের খারাপই লাগছিল বুড়ো ভদ্রলোকের জন্যে। সে কাছে গিয়ে ওনার হাতটা ধরে বলল, “যা ঘটেছিল সেটা একটা দুর্ঘটনা ছিল, তাই না মিস্টার হকিন্স? আপনি বুঝতে পারেননি কুকুরটা পিছনে শুয়ে ছিল”।

মিস্টার হকিন্সের দু গাল বেয়ে জল গড়াচ্ছিল, “ওদের দুজনের কাউকেই আমি দেখতে পাইনি! ছেলেটা কুকুরটাকে বড্ড ভালবাসত। ওর সঙ্গে মাটিতেই শুয়ে থাকত। এ তল্লাটে আর তো কোনও বাচ্চা ছিল না। জেসিই ছিল ওর একমাত্র বন্ধু। আমি দুজনকেই চাপা দিয়ে ফেলেছিলাম, ছেলেটাকে আর কুকুরটাকে। অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই সব শেষ। ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করুন!”

জ্যাকের সারা শরীর কাঁপতে লাগল। নাহ, মিস্টার হকিন্স একজন আধ পাগলা ছিটিয়াল লোক, উনি কী বলছেন তার ঠিক নেই!

তাও জ্যাক জিগ্যেস করল, “কার কথা বলছেন আপনি মিস্টার হকিন্স? ছেলেটার কী নাম ছিল?”
মিস্টার হকিন্স চোখের জল মুছে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ওর নাম ছিল ট্র্যাভিস। ডাকোটা রোডের ধারে থাকত। তবে জেসির সঙ্গে দেখা করতে রোজ আসত।”

জ্যাক ছিটকে সরে গেল, পড়েই যাচ্ছিল প্রায়, “না, না, আপনি মিথ্যে কথা বলছেন। আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন আপনারা দুজনেই!”

ও পিছন থেকে কে যেন বলল, “যা বাবা! আমি কেন ঠাট্টা করতে যাবো?”

জ্যাক পিছন ফিরে দেখল ট্র্যাভিস ওই সাদা কালো ছোপ দেওয়া কুকুরটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে! ওর ঠোঁটে সেই পরিচিত অদ্ভুত হাসিটা। ওকে তাকাতে দেখে বলল, “তুই যদি আমাদের সঙ্গে খেলতে চাস তাহলে আমি জেসিকে বলে দিতে পারি তোকে আর না কামড়াতে।”

“না, না!” জ্যাক চিৎকার করে বলল, “তুই মৃত হতে পারিস না! পারিস না!”

“না, না, আমি তো মরিনি,” মিস্টার হকিন্স বললেন, “প্রায় মরতেই বসেছি কিন্তু এখনও মরিনি!”

“নাহ, আপনাকে বলছি না – ওকে বলছি!” জ্যাক ট্র্যাভিসের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, “ওই তো ট্র্যাভিস দাঁড়িয়ে রয়েছে জেসিকে নিয়ে!”

মিস্টার হকিন্স ওর আঙুল অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে বললেন, “খোকা আমার মনে হয় তুমি খুব বেশিক্ষণ রোদে ছিলে। একটু জল খাবে, দেবো?” বলে উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।

জ্যাক তখন মিস্টার হকিন্সের বাড়ি ছেড়ে ঘাসে নেমেছে, “চলে যা তুই ট্র্যাভিস, আমাকে একলা থাকতে দে!” বলে মিস্টার হকিন্সকে চমকে দিয়ে সে দৌড়তে লাগল।

ট্র্যাভিসের চিৎকার ভেসে এল পিছন থেকে, “একা একা খেলায় কোন মজা নেই। তোর যখন একলা লাগবে তখন এদিকে আসিস। আমি আর জেসি এই জঙ্গলে তোর জন্যে অপেক্ষা করব!”

জ্যাক কান বন্ধ করে নিল। জোরে জোরে ছুটতে ছুটতে সে জঙ্গলটাকে দূরে ফেলে নিজের ছোট বাড়িটাতে এসে ঢুকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
_____

লেখক পরিচিতি 

মার্কিন শিশু সাহিত্যিক এলেন উইটলিঙ্গার কিশোরদের জন্যে প্রচুর বই লিখেছেন যার মধ্যে ‘স্যান্ড পাইপার’, ‘ব্লাইন্ড ফেইথ’, ‘প্যারট ফিশ’ ইত্যাদি প্রমুখ। ওনার উপন্যাস ‘হার্ড লাভ’এর জন্যে উনি মাইকেল এল প্রিন্টস পুরষ্কার আর ল্যাম্বডা সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন। ওনার বেশ কিছু উপন্যাস নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির ‘বেস্ট বুক্স’ লিস্টে উঠেছে। সেই সব উপন্যাস ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ডাচ, ড্যানিশ, টারকিশ, ইটালিয়ান, ক্রোইয়েশিয়ান এবং কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এলেন এককালে বাচ্চাদের লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করতেন এখন স্বামীর সঙ্গে মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যে থাকেন।

ভূতুড়ে কুকুর লেখাটা নিয়ে এলেন বলেছেন, “গত বছর আমার কুকুর উডিকে বাড়িতে আনার পর থেকে আমার মাথায় কেবল কুকুরের গল্প ঘুরছে তাই এই ভূতের গল্পেও কুকুর ঢুকে গেছে সেটা আর আশ্চর্যের কী?”

এলেন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে হলে ওনার ওয়েবসাইট www.ellenwittlinger.com  এ যেতে পারো।

eeee

ছবি - পুস্পেন মণ্ডল 

1 comment: