গোলটেবিল:: রূপকথাদের দেশে: অনন্যা দাশ :: আলোচনা: সুলগ্না ব্যানার্জ্জী

রূপকথাদের দেশে - অনন্যা দাশ
আলোচনা - সুলগ্না ব্যানার্জী

বই: রূপকথাদের দেশেপ্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড ।। লেখক: অনন্যা দাশ
প্রকাশক: সায়ন্তনী (যোগাযোগ: ৯৪৭৪০৬৯৫৯৮)
মূল্য: প্রতি খণ্ড ৭০ টাকা (ভারতীয় মুদ্রা)

'ম্যাজিক ল্যাম্প'-এর ছোট্টো বন্ধুরা আশা করি সবাই ভালো আছ সামনেই পুজো অর্থাৎ মা দুগ্গার আগমন আর পুজো মানেই লম্বা ছুটি তাই পুজোর ছুটি আরও জমিয়ে উপভোগ করার জন্যই তোমাদের সন্ধান দেব একটা নতুন বইয়ের যার দুটি খণ্ড জুড়ে রয়েছে চারটি মজাদার উপন্যাস

 

বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক অনন্যা দাশ মহাশয়ার কলমে 'রূপকথাদের দেশে' বইটির প্রথম খণ্ডে রয়েছে দুটি উপন্যাস

রূপকথাদের দেশে
ছোট্ট মেয়ে 'কিকি', তার থেকেও ছোট্ট তার ভাই 'মোমো' এখনও হাঁটতে শেখেনি মোমোকে নিয়ে ব্যস্ত মা-বাবা আর আগের মতো সময় দিতে পারেন না কিকিকে তার জন্য মাঝে মাঝে মোমোর ওপর কিকির রাগ হয় বটে, কিন্তু সেদিন দুপুরে যখন কিকিকে একা একা অঙ্ক করতে বলে মা মোমোকে নিয়ে শুতে গেলেন তখন নির্জন বাড়ি পেয়ে ডাইনিবুড়ির মতো দেখতে একটা বুড়ি হঠাৎ বাড়িতে উদয় হয়ে একেবারে মায়ের ঘরে গিয়ে মোমোকে কোলে তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে, ঠিক তখনই কিকি এসে দাঁড়ায় বুড়ির সামনে কিকি জানতে পারে বুড়ি রূপকথাদের দেশ থেকে এসেছে, তাই যত্রতত্র তার যাতায়াতে বাধা নেই সে ঠিক আছে, কিন্তু মোমোকে সে কোলে নিয়েছে কেন? মোমোও তো জাগেনি? বুড়ি জানাল জাদুকাঠি নাড়িয়ে সে মাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে, এখন কেউ জাগবে না বুড়ির কাজের লোকের বড়ো অভাব তাই সে মোমোকে নিতে এসেছে যদি মোমোকে তার হাত থেকে বাঁচাতে হয় তাহলে কিকিকে কিছু পরীক্ষা দিতে হবে বুড়ির কাছে কী সেই পরীক্ষা? বুড়ি কিকিকে পাঠাবে সাত সাতটা রূপকথার দেশে কিকিকে চিনতে হবে সে সব দেশে লুকিয়ে আছে কোন্ কোন্ রূপকথারা পারবে কি কিকি সে সব রূপকথাদের চিনতে? মোমোকে কি ছেড়ে দেবে ডাইনি বুড়ি? এসব জানতে হলে অবশ্যই পড়ে ফেল যাদু কলমের অধিকারী অনন্যা দাশ-এর লেখা এই উপন্যাসটি দেখ তো বন্ধুরা, এখানে কোন্ কোন্ রূপকথারা লুকিয়ে আছে?

রিয়ানা ম্যাজিক কার্পেট
মনটা বেশ কিছুদিন ধরে ভার হয়ে আছে ছোট্ট রিয়ানার তার ছোট্ট ভাই সদ্যোজাত শিশু পোলো জন্মের পর থেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগছে মা-বাবা দিনরাত হসপিটাল ডাক্তার করেই ব্যস্ত রিয়ানার প্রতি, তার পড়াশোনার প্রতি আর আগের মতো নজর দিতে পারছেন না তাঁরা রিয়ানার জন্য এই মুহূর্তে একজন গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করা তো দূরের কথা, সে শুনেছে পোলোর চিকিৎসার খরচের জন্য হয়তো বা বাড়িটাও বাবা প্রোমোটারকে দিয়ে দেবেন
সেদিন বিকেলে ছাদে একা দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়ানার চোখ চলে যায় চিলেকোঠার ঘরটার সেই বন্ধ দরজার দিকে যেখানে মা সবসময় তাকে যেতে বারণ করেন কী আছে ঘরটায়? বাবা-মা হাসপাতালে গেছেন পোলোকে নিয়ে, মলি মাসিও ঘুমোচ্ছে অতএব এটাই সুযোগ রিয়ানা চাবি খুঁজে এনে খুলে ফেলে চিলেকোঠার ঘর আকর্ষণীয় কিছু না থাকলেও ধুলোভরা ঘরটায় একটা বাহারি কার্পেট খুব পছন্দ হতে রিয়ানা সেটা নিয়ে আসে ঘরে এসে কার্পেটটা রাখার কিছুক্ষণের মধ্যেই উদয় হয় সেই আশ্চর্য লোকটা কে সেই লোক? কী তার উদ্দেশ্য? পোলো কি সুস্থ হবে? রিয়ানাদের জীবনে আবার ফিরবে কি আনন্দ? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে শিশু সাহিত্যিকা অনন্যা দাশ মহাশয়ার লেখা 'রিয়ানা ও ম্যাজিক কার্পেট' উপন্যাসে

এবার আসা যাক 'রূপকথাদের দেশে' বইটির দ্বিতীয় খণ্ডের আলোচনায় এই বইটিতেও রয়েছে লেখিকা অনন্যা দাশ-এর কলমে ছোটোদের জন্য দুটি মায়াময় উপন্যাস

সিন্ডারেলার জুতো
সেবার রিলার বাবা-মা আফ্রিকার এক প্রত্যন্ত গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্পে যাবার আগে রিলাকে তার মামার বাড়িতে রেখে গেলেন বটে, কিন্তু উগান্ডার কাম্পালা ঐ গ্রামে যাওয়ার পথেই ঝড় বৃষ্টির কারণে তাঁদের প্লেনটি নিখোঁজ হয়ে যায় স্বভাবতই অনেকটা বদল আসে রিলার জীবনেও ভালো ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল পরিত্যাগ করিয়ে মামা-মামি তাকে পাড়ার হিন্দি মিডিয়ামে ভর্তি করান বটে, কিন্তু সেখানে রিলা ভালো করে পড়া বুঝতে পারে না মামার সাংসারিক অবস্থা রিলা জানে, তাই সে মুখে কিছু বলে না দুই ছোটো ছোটো মামাতো ভাইদের দায়িত্ব সে নিজেই নিয়েছে যাতে মামির কাজের সুবিধে হয় মামিও তাকে খুব ভালোবাসেন, তাই তাকে সংসারের অন্য কোনো কাজ করতে দেন না একদিন রিলাদের স্কুল থেকে সবাইকে বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা জানানো হয় মামির অসুবিধে হবে বুঝে রিলা যেতে না চাইলেও মামি তাকে জোর করেই যেতে বলেন যাতে তার মনটাও একটু ভালো হয় বেড়াতে গিয়েই রিলার হঠাৎ করে আলাপ হয়ে যায় এলা-র সঙ্গে যে তাদের স্কুলের বা ক্লাসের নয় তবে রিলার বয়সি এই সুন্দরী ফুটফুটে এলা আসলে কে? রিলার জীবনে তার আসার আসল কারণ কী? রিলা কি সত্যিই আর পাবে না তার মা-বাবার দেখা? লেখিকা অনন্যা দাশ-এর কলমে এক অদ্ভুত সুন্দর মায়াময় এই গল্প পড়ার পর মনটা বেশ অন্যরকম হয়ে যায়

রিমঝিম, অনামিকা আর সবুজের মাঠ
গল্পের মধ্যে গল্প, তার মধ্যেও গল্প আর এমন গল্প, বিশেষত ছোটোদের জন্য এমন গল্প যিনি লিখতে পারেন তিনি অনন্যা দাশ
পেয়ারের পুতুল লিলিকে খুঁজতে গিয়েই রিমঝিম দেখা পায় অনামিকার কীভাবে? না! সেটা বলে দিলে অনামিকা আসলে কে তা বলা হয়ে যাবে, তাই সে গল্পটা না হয় বইয়ের পাতার ভাঁজেই থাক এখন ঘটনা হল অনামিকা পড়েছে এক মস্ত বিপদে 'চন্দ্রকান্ত সাবরওয়াল' নামে এক ব্যক্তি অনামিকাদের বহুদিনের আস্তানা সবুজের মাঠকে বুজিয়ে শপিংমল করতে চান ঐ মাঠ রিমঝিমদেরও খেলার জায়গা তাছাড়া সব সবুজ মাঠ এভাবে বুজিয়ে দিলে পলিউশনও তো বাড়বে খেলার জায়গাও আর থাকবে না তাই যে করেই হোক ঐ মাঠ যেন রিমঝিম বাঁচায় এটাই অনামিকার ইচ্ছে এতটুকু রিমঝিম কী করবে বুঝতে না পেরে প্রথমে মা-বাবা-দাদা-দিদি সকলের শরণাপন্ন হয় কিন্তু কেউই আমল দেয় না শেষে সে তার মাসিকে জানায় সব কিছু মাসি তখন তাকে শোনান ছোট্টো কিন্তু একরোখা 'পায়েল'-এর গল্প কীভাবে সে সবুজ ধ্বংসের বিরোধিতা করে জিতে যায় সে গল্পও এখানে না শুনে বইয়ের পাতায় জানলে তোমাদের খুব ভালো লাগবে
সব শুনে দৃঢ়চেতা হয় রিমঝিম, কিন্তু এই সবুজ বাঁচানোর যুদ্ধ বড়ো কঠিন অবশেষে অনামিকার সাহায্য নেয় সে বলা ভালো দুজনেই সাহায্য করে একে অপরকে কিন্তু কীভাবে? সত্যিই কি সবুজের মাঠকে কংক্রিটের শপিং মল হবার হাত থেকে বাঁচাতে পারে তারা? নাআর কিছু বলা যাবে না কারণ এই উপন্যাসের মধ্যে লুকিয়ে আছে একটা নয় দুটো নয় তিন তিনটে এমন গল্প যা শুধু ছোটোদের নয়, যে কোনো বয়সের পাঠকের মন জয় করতে সক্ষম

আজ তবে এটুকুই পুজো সকলের ভালো কাটুক 'রূপকথাদের দেশে' সরাসরি সংগ্রহ করা যাবে 'সায়ন্তনী'-তে ( ৯৪৭৪০৬৯৫৯৮) যোগাযোগ করে
----------

No comments:

Post a Comment