ম্যাজিক পেনসিল: খাইয়ে হল জব্দ:: গল্প ও ছবি - অদ্রিজা মণ্ডল


খাইয়ে হল জব্দ
গল্প ও ছবি - অদ্রিজা মণ্ডল
[ষষ্ঠ শ্রেণী, সেণ্ট মেরিজ কনভেণ্ট স্কুল, সাঁতরাগাছি]

আমাদের ক্লাসে নবকৃষ্ণ পড়াশোনায় যেমন ভালো খেলাধূলাতেও তেমনি ভালো, কিন্তু তার একটা ‘মহ দোষ’ ছিল যে, সে বড্ড খেতে পছন্দ করত এমন পছন্দ করত যে অন্যের টিফিন পর্যন্ত কেড়ে নিয়ে খেয়ে নিত তাই আমরা সবাই তাকে ‘পেটুকরাম’ বলে ডাকতাম
আমি অনুষ্কা মিত্র তবে সবাই আমার সুন্দর চেহারা আর অসাধারণ গুণের জন্য ‘অনুষ্কা শর্মা’ বলে ডাকেযাক গে, এবার আসল কথায় আসি নবু মানে নবকৃষ্ণ খুব পেটুক ছিল সেদিন বুধবার ছিল আমি ক্যানটিন থেকে তিনটে এগ রোল কিনেছিলাম মাঠের আমগাছটার নিচে বসে বেশ জুত করে একটা কামড় লাগাতে গেছি, হঠা চোখ ঝাপসা হয়ে গেল কোনোরকমে চোখ মুছে দেখি, নবু আমার দুখানা রোল নিয়ে ছুটছে আর একখানা রোল আমার হাতেই রয়েছে আমি চেঁচালাম, নবু দাঁড়া!” নবু দূর থেকে বলল, অত খেলে আনফিট হয়ে যাবি, অনুষ্কা শর্মা! আমি ফিরে এসে পড়ে থাকা রোলটা হাতে নিয়ে গোঁজ হয়ে বসে রইলামহঠা সামনে এল অঙ্কিতা বলল, এই কয়েক মিনিট আগেই তো তোর হাতে তিনখানা আস্ত রোল দেখলামএকটা তো রয়েছে দেখতে পাচ্ছি, বাকিগুলো গেল কোথায়?” আমি বললুম, আর কী বলব? অন্য দুটো নবু নিয়ে পালিয়েছে নাঃ, নবুর এই খাওয়ার বদভ্যাস বন্ধ করতেই হবে একটা মতলব বাতলে দে না রেঅঙ্কিতা বলল, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, শোন বলে আমার কানে ফিসফিস করে একটা মতলব বাতলে দিল বলল, কাউকে বলিস না আমি সবাইকে আমার কথামত কাজ চালাতে বলব, আর চোখ-কান সবসময় খোলা রাখ
সেইমতো একে ওকে জিজ্ঞেস করে সন্ধ্যাবেলায় আমি জানতে পারলাম যে নবুর ইচ্ছা হয়েছে যে সে ভোজ খাবে আমি অঙ্কিতার কথামত ওকে বললাম যে আমরাই সেই ভোজের ব্যবস্থা করব ভোজ হবে রাত্রিবেলায় আমরা সবাই লুচি, কচুরি, পোলাও, কোর্মা ইত্যাদি বানিয়ে ফেললাম উঃ, সে কী সম্ভার! সে সব তৈরি করে যখন টেবিলে সাজানো হল তখন হঠা অঙ্কিতা চেঁচাল, সবাই সব খাওয়া শুরু কর! সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই হুড়মুড় করে টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করলামসবাই তখন আয়েশ করে খাচ্ছে, আমি আমার খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লাম আঁচিয়ে এসে বাইরে শব্দ শুনে আমি দেখি, নবু হয়রানের মতো কী যেন খুঁজছেআমি বললাম, দরজা খুঁজলে ডানদিকেরটা খোলা এই বলে সুট করে ঢুকে পড়লাম আর বললাম, চটপট খাওয়া শেষ কর, নবুকে ডেকে আনছি এই বলে আবার বেরিয়ে এলাম সবার খাওয়া প্রায় শেষ কেউ কেউ তখন পাঁপড় চিবিয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ মিষ্টি খাওয়া শুরু করেছেআমি ঘর থেকে বেরিয়ে ডানদিকের ঘরটায় গিয়ে দেখি নবু হয়রানের মতো খুঁজছে, কোথায় ভোজ খাব!আমি গিয়ে বললাম, ওখানে নয় রে বোকারাম, এদিকে আয়! নবু তর্কবিতর্ক না করে আমার পিছু পিছু চলল যখন আসল ঘরের সামনে এলাম তখন বললাম, নবু একটু অপেক্ষা কর এই বলে ঘরটায় ঢুকে দেখলাম সবাই খাওয়া শেষ করে বসে রয়েছে আমি গিয়ে বললাম, সবাই দাঁড়িয়ে পড়, আর যা কিছু পড়ে আছে সব একটা বড়ো থালায় জড়ো করে রাখআর থালাটা ঢাকা দিয়ে রাখসঙ্গে সঙ্গে অস্মিতা, রেশমা, কৌশিক, মৃন্ময় আর অরুণা কাজে লেগে গেলআর মিনিট দুয়েকের মধ্যে দৃশ্যটা এরকম হল - একটা বিশাল ঢাকা দেওয়া থালা একটা সুন্দর টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চারপাশে ঝাঁ চকচকে ছুরি, কাঁটাচামচ আর চামচ রয়েছেমাটিতে ঝলমলে লাল রং-এর লম্বা মাদুর পেতে দেওয়া হয়েছে, পাশে আলো সাজানো লোহার স্ট্যান্ডের সারিসবাই স্ট্যান্ডগুলোর অন্য পারে দাঁড়িয়ে রয়েছে সব কিছু হয়ে গেলে আমি দরজাটা খুলে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিলাম সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘নবকৃষ্ণের ভোজ’ তারপর আমি নবুকে ডেকে ওর মাথায় একটা টোপর পরিয়ে দিলাম নবু রাজার মত ভঙ্গিতে টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল তার গলায় প্রায় চার-পাঁচটা মালা আর সারা গায়ে ফুল সবাই তার দিকে ফুল ছুঁড়ছে ফুলের মালায় ঢাকা নবু গা থেকে একটু ফুল ঝেড়ে খেতে বসল তারপর যেই না ঢাকনা খুলেছে আমরা সবাই হ্যা হ্যা করে হেসে উঠলাম নবু নড়লও না, চড়লও না স্রেফ হাঁ করে বসে রইল, তার সামনে থালাটায় একঢিপি হাড় আর কাঁটাআর আমারও উদ্দেশ্য সফল হল কারণ এই ঘটনার পর আর কোনোদিনও কার থেকে খাবার কেড়ে নেয়নি নবু
----------

No comments:

Post a Comment