গল্প:: সোনাই আর পেঁচো - ঈশানী রায়চৌধুরী


সোনাই আর পেঁচো
ঈশানী রায়চৌধুরী

তোমরা কি সোনাইকে চেনো? সে হল এক পাঁচ বছুরে মিষ্টি খুকি; একটা একতলা বাড়িতে থাকে তার বাবা-মা আর দাদু-ঠাম্মির সঙ্গেইস্কুলে যায় বটে, সেখানে দু-চারজন বন্ধুবান্ধবও আছে; কিন্তু বাড়িতে সে বড্ড একাএকজনও খেলার সঙ্গী নেইরোজ বিকেল হলেই ভারী মনমরা হয়ে বাড়ির সামনের দিকের লাল-কালো সিমেন্টের নকশা আঁকা বারান্দায় হয় একা একাই সেফটিপিনের গোছা ছুড়ে এক্কাদোক্কা খেলে আর তা না হলে পেছনের ঝুপসি বাগানে শুকনো মুখে ঘুরে বেড়ায়
এদিকে ওই বাগানেই যে মস্ত বেলগাছটা আছে, সেখানে এক বুড়ো বেম্মদত্যি দাদুর বাস; ছেলেপুলে নাতিপুতি নিয়েআসলে নাতি একজনইনাম তার পেঁচোযদিও ভূতপেতনিদের কস্মিনকালেও বয়সের গাছপাথর থাকে না, তবুও হিসেব করে দেখলে পেঁচো ওই সোনাইয়েরই বয়সিসে বেচারিরও বন্ধু নেই মোটেসোনাইকে খুব পছন্দ তারযতক্ষণ পারে, ভিজে ভিজে একটুখানি মেঘের কুচির মতো লেপটে থাকে সোনাইয়ের সঙ্গেসোনাই টেরও পায় না সবসময়আসলে ভূতেদের তো মানুষরা দেখতে পায় না! কখনও কখনও অবিশ্যি সোনাই ভাবে, তার হাতে একটা সুড়সুড়ি-পিঁপড়ে ঘুরঘুর করছে আর তখন সে হাত দিয়ে আবার ঝেড়ে ফেলারও চেষ্টা করে

*                   *                   *

এই যে পেঁচোকে সোনাই দেখতে পায় না বলে পেঁচোর মনে বেজায় দুঃখ, তেমনি আবার নিজের গায়ের র নিয়েও তার ভারী মন খুঁতখুঁত করেযার দাদু এমন ফুটফুটে ফরসা, সেই দাদুর নাতি হয়ে কিনা তার গায়ের রং এমন মাঠো? এ নিয়ে প্রায়ই ঘ্যানঘ্যান করে সেএকদিন তার দাদু, মানে বেম্মদত্যি বললেন, “তুমি তো কালো নও, দাদুভাইতোমার গায়ের রংটি হল নবদূর্বাদলশ্যাম
তাতে মুখ ব্যাজার করে পেঁচো বলল, “শক্ত শক্ত বাংলা কথা বলে আমাকে ভোলাচ্ছ, তাই না?
দাদু বললেন, “আরে এর মানে হল নতুন দুব্বোঘাসের মতো মিঠে শ্যামলা
পেঁচো একগুঁয়ে গলায় বলল, “ওই হল! তার মানে ফুটফুটে ফরসা তো আর নয়!”
তখন বেম্মদত্যি বললেন, “রামায়ণে লেখা আছে, বুঝলে দাদুভাই, শ্রী রামচন্দ্রের গায়ের রংটি ঠিক তোমার মতোই ছিল
পেঁচো গালে হাত দিয়ে বলল, “ও দাদু, আমরা তো ভূত! ভূতেদের কি রামনাম করতে আছে? ওই যে মানুষরা বলে রামনাম করলে নাকি ভূত ভয়ে পালিয়ে যায়?
বেম্মদত্যি নাতির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “তোমাকে বলেছি তো দাদুভাই, মানুষ আমাদের নিয়ে যা মনে আসে, তাই লেখেভূত নিয়ে যেমন যা ইচ্ছে তাই, ভগবান নিয়েও তেমনটিআসলে ওরা কাউকেই দেখতে পায় না তো! দ্যাখো, ভগবান আর ভূত... দুইয়েরই থাকা বা না-থাকা নিজেদের বিশ্বাস আর অনুভবের ব্যাপারভগবানে আর ভূতে ঝগড়াঝাঁটি থাকলে কি আর শিবঠাকুরের অত চেলাচামুণ্ডা হত, যারা সকলেই আমাদের মতো ভূতপ্রেত? তাই শুধু শুধু রামচন্দ্রের নাম করব না-ই বা কেন?
পেঁচো বলল, “তার মানে মানুষ যা যা লেখে, সবই মনগড়া?
“মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে অনেক যুদ্ধ করতে হয়, দাদুভাইসেই কঠিন পথটুকু পেরোনোর জন্য কিছু গল্প লাগে, কিছু বিশ্বাস লাগে, কিছু সাহস আর ভরসা লাগেএইসব লেখালেখি থেকেই তো মানুষ সেগুলো শুষে নিয়ে বাঁচে! এগুলোই রসদ বলতে পারো
“কই, আমাদের তো লাগে না!”
“আমরা তো মানুষ নই, দাদুভাই! আমরা বাতাসের মতো, শুধু অনুভব করা যায়এই যে তুমি ভাবছ তুমি আজ রাতে কেমন শুঁটকি মাছের ঝাল দিয়ে চাট্টি গরম ভাত খাবে, আসলে কিন্তু ভাত-মাছ কিচ্ছুই নেই! মানে আছে, কিন্তু আমাদের মতো করে আছেআমরাই দেখতে পাই, আমরাই খাইমানুষ আবার সেইসব কিছুই সেভাবে দেখতে পায় নাবুঝলে দাদুভাই, ভূত হয়ে গেলে সেই আজব জগতের সবকিছু এক্কেবারে আলাদা
“দাদু, তুমি কিন্তু বলেছিলে আমাকে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো বানিয়ে দেবে, যাতে সোনাই আমাকে দেখতে পায়কবে দেবে, কাল?
“পরশু তো তোমার জন্মদিনপরশু থেকেওইটেই এবার আমার তোমাকে দেওয়া জন্মদিনের উপহার

*                    *                   *

এখন কথা হল, ভূতেদের কি জন্মদিন হয়? নিশ্চয়ই হয়! তাদেরও মানুষদের মতো ইচ্ছে-টিচ্ছে হয় একটু আনন্দ করারবেম্মদত্যি তো ঠিক করে রেখেছেন আর একটু বড়ো হলে পেঁচোর পৈতেও দেবেনমানুষছানাদের জন্মদিনে কেক, পায়েস, বেলুন, রঙিন কাগজের মোড়কবন্দি উপহার, খাওয়াদাওয়া, হইহুল্লোড় হয়ভূতের ছানার জন্মদিনে কী হয়? অত ঘটাপটা অবিশ্যি হয় না
জন্মদিনের দিন সক্কাল সক্কাল পেঁচোর মা পেঁচোকে কলতলায় নিয়ে গিয়ে বেশ করে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে চান করিয়ে রগড়ে রগড়ে গা মুছিয়ে করকরে নতুন একটা ফিকে গোলাপি বাতাস-জামা আর আকাশি-নীল বাতাস-ইজের পরিয়ে পরিপাটি করে খোঁচাখোঁচা চুল আঁচড়ে চিবুকে টুক করে একটা চুমো খেয়ে বলল, “যাও, দাদু-ঠাকুমাকে আগে পেন্নাম করে এসতারপর জোছনার দুধের ঘন ক্ষীর বানিয়েছি, ওপরে বাগানের গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে... সেইটে খাবে
পেঁচো তো আহ্লাদে আটখানা হয়ে লাফাতে লাফাতে গেল দাদুর ঘরেপেঁচোর ঠাকুমা নাতিকে আদর করে কোমরে একটা ঘুনসি বেঁধে দিলেন; কালো কারে এইটুকুনি একটা রুপোলি ঝিকমিকে তারাওতে পেঁচোর পানে কারও নজর লাগবে নাতারপর কপালে একটা কাজলের টিপ পরিয়ে দিলেন
পেঁচোর দাদু বললেন, “তাহলে তো তোমাকে এবার সেই উপহারটা দিতেই হয় দাদুভাই! আজ থেকে সোনাই তোমাকে একটু একটু দেখতে পাবেহাওয়া-মিঠাইয়ের মতো চেহারা হবে তোমার
পেঁচো বলল, “আর আমি কথা বললে ও শুনতে পাবে না?
“তাও পাবেতবে জোরে শুনতে পাবে নাফিসফিস করে কানে কানে কথা বলার মতো হবে ব্যাপারটা

*                    *                   *

সোনাই বসেছিল বারান্দার ঠিক নিচে, সিঁড়ির ধাপিতেহঠাৎ মনে হল চোখের সামনে একটা ছোট্ট মেঘের কুণ্ডলী; রঙিনকী সুন্দর অর্ধেকটা ফিকে গোলাপি আর অর্ধেকটা দুর্গাপুজোর আকাশের মতো নীল! যেই না সোনাই খপ করে ধরতে গেল, অমনি কুণ্ডলীটা কেমন ভাসতে ভাসতে এগিয়ে এসে লেপটে গেল তার ডান কানের লতিতেতারপরই সোনাই শুনতে পেল কে যেন ফিসফিস করে তার কানে কানে বলছে, “ভয় পেও না, আমি তোমার বন্ধুআমার নাম পেঁচোতোমাদের বাগানে বেলগাছে আমার বাড়িআমার দাদু তো বেম্মদত্যি! খুব ভালো লোক, তোমাকে বড্ড ভালোবাসেআমি একটা ছানা ভূত
সোনাই ভুরু কুঁচকে বলল, “কই, তোমার তো কুলোর মতো কান নেই, মুলোর মতো দাঁত নেই! এমনকি সরু সরু লম্বা লম্বা হাত পা-ও নেইআর গলার স্বরটাও ভারী মিঠে! খোনা খোনা নয় তো! যাঃ, মিছিমিছি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ! তুমি মোটেই সেরকম ভূতের ছানা নও
“কী রকম ভূতের ছানা?
“ওই যেমন বইতে আছে! পান্ত ভূতের জ্যান্ত ছানার ছবি
“দূর, ও সব তো বানিয়ে বানিয়ে লেখা! আমি সত্যি সত্যি ভূত, কিন্তু ভালো ভূত, বন্ধু ভূততুমি জানো, আমি তোমার সঙ্গে রোজ ইস্কুলে যাই?
গালে হাত দিয়ে অবাক গলায় সোনাই বলল, “বলো কী!”
“হ্যাঁ গো! ওই যে সেদিন অংকের দিদিমণির নাক সুড়সুড় করছিল আর অমন বিচ্ছিরি হাঁচি? সে তো আমি নাকের ভেতরে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম বলেতোমাকে বাঁচানোর জন্যই তো!”
“আমার জন্য?
“বা রে! আমি অমন কাণ্ড না করলে সেদিন তোমার গার্জেন কল হত না? তারপর এমন কুট্টিপানা কান দুটো আর আস্ত থাকত? তোমার মা তো কান দুটোই একেবারে গোড়া থেকে উপড়ে নিত! আমি যেন দেখিনি, তুমি মাঝে মাঝে কেমন রামপিটুনি খাও!”
খুব দুঃখী গলায় লজ্জা লজ্জা মুখ করে সোনাই বলল, “কানমলা খুবই বিচ্ছিরি খেতে! উচ্ছেসেদ্ধর থেকেও বিচ্ছিরি!”
পেঁচো বিজ্ঞের মতো গলায় সায় দিল, “যা বলেছ! এমনকি কুমড়োর ঘ্যাঁটও কানমলার চেয়ে ভালো খেতে!”
সোনাই বলল, “তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু?
পেঁচো বলল, “আজ থেকে কেন? সে তো সেই কবে থেকেই!”
সোনাই খুব খুশি হয়ে বলে উঠল, “যাক বাবা, আজ থেকে তাহলে আমারও একটা বেস্ট ফ্রেন্ড হল!”
পেঁচো সবে হেসে উঠে হাততালি দিতে যাবে, সোনাই মোক্ষম প্রশ্নটি করে বসল, “আচ্ছা পেঁচো, তুমি অংক কষতে পার? ইংরিজি ট্রান্সলেশন? মানে আমি আবার ওই দুটোতেই একটু ইয়ে কিনা! বড্ড বকুনি খাই!”
পেঁচো আমতা আমতা করে বলল, “ভূতপেতনিরা ইস্কুলে যায় না! মানে বাড়িতেই যেটুকু যা, লেখাপড়া করেতবে হ্যাঁ, আমি নামতা জানি উনিশের ঘর পর্যন্ত আর ইংরিজি নিয়ে চিন্তা নেইআমার পিসেমশাই আবার সাহেব-ভূতবিলেতে থাকেরোজ কথা হয়পিসিও এখন কেমন সুন্দর ইংরিজিতে ফরফর করে কথা বলে! যেখানে যেখানে তোমার আটকে যাবে, জেনে নিয়ে তোমাকে বলে দেব
সোনাই অবাক! জানতে চাইল, “তোমরাও মোবাইলে কথা বলো?
পেঁচো হেসে উঠল, “দূর! ভূতেদের ওসব দরকারই হয় না! আমরা এখানে ফিসফিসিয়ে কথা বললেই সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পারে সে কথা পিসি আর পিসেমশাইয়ের কানে হাওয়ায় ভেসে ভেসে পৌঁছে যায় চোখের পলকে!”
গোল গোল চোখ করে সোনাই বলল, “ইস, তোমাদের কী মজা! জানো, আমার ঠাম্মা যখন সিমলা বেড়াতে গেল গত বছর, আমি খুব চেয়েছিলাম আমার পুতুলের বাড়ির জন্য রঙিন কাঠের ছোট্ট ছোট্ট খাট-আলমারি-চেয়ার-টেবিল এসব যেন নিয়ে আসেওখানে গিয়ে দাদুর মোবাইল হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেলতারপর দাদু যেদিন ফেরার আগে টেলিফোন-বুথ থেকে ফোন করল, মাকে বললাম দাদুকে বলে দিই ওগুলো কিনে আনতে; মা চোখ পাকিয়ে বলল হ্যাংলামি না করতেওসব নাকি জঞ্জাল! তার মানে আমি যে এখানে ফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে মাকে বলতে বললাম কথাটা, দাদু আর ঠাম্মি শুনতেও পেল না! আমারও আর খেলনা-বাড়ির জিনিসপত্তর পাওয়া হল নাআচ্ছা পেঁচো, তোমার মা তোমাকে বকে?
পেঁচো উদাস গলায় বলল, “বকে না আবার! এই দ্যাখো না, আমার দুটো কানের সাইজ কেমন একটু আলাদা আলাদা না? আসলে একটা কান বেশিবার টেনেছে তো; তাই একটু বেশি লম্বা হয়ে গেছে!”
সোনাই বলল, “তোমাকে দেখতে পাচ্ছি নাকি পষ্ট করে, যে তোমার কান দেখতে পাব? তুমি তো একটুখানি গোলাপি ধোঁয়া আর একটুখানি নীল ধোঁয়াআর একটু একটু ঠান্ডা ঠান্ডা; অনেকটা জল-আইসক্রিমের মতো।”
পেঁচো খুশি খুশি গলায় বলল, “যাক, তুমি তাহলে আমাকে একটু একটু দেখতে পাচ্ছ!”
সোনাই বলল, “পেঁচো, আমার সব বন্ধুরা তো একজন আর একজনের বাড়িতে যায়আমার তো এতদিন কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল না; এখন তুমি হলে! তোমাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবে না?
“আমরা তো তোমাদের বাগানেই থাকিআর আমাদের বাড়িতে তো তুমি যেতে পারবে না, সোনাইসিঁড়ি নেই, দরজা-জানলা, ছাদ, দেয়াল কিচ্ছু নেইশুধু ভূতেরাই আসা যাওয়া করতে পারেজানো সোনাই, আজ আমার জন্মদিনতাই দাদু আমাকে উপহার দিয়েছে আজএমন উপহার, যাতে তুমি আমাকে একটু একটু দেখতে পাও
“ও মা, আজ তোমার জন্মদিন? আমি ঠিক এই বছর থেকে আজকের তারিখটা মনে রাখব!”
“তাই রেখো, সোনাইযতদিন তুমি আমাকে মনে রাখবে, ততগুলো বছরই আমার ঠিকঠাক জন্মদিন হচ্ছে বলে আমার মনে হবেতোমার জন্মদিন তো দু-মাস পরেই, তাই না?
“তুমি কী করে জানলে?
“বা রে, গত বছর যে আমি জানলা দিয়ে দেখলাম তুমি নতুন ফ্রক পরে পায়েস খাচ্ছ! তিনটে গল্পের বই পেলে, একবাক্স রং পেনসিল, নতুন ইস্কুলের ব্যাগ!”
“এই বছর তুমি এসো আমার জন্মদিনেআমি নেমন্তন্ন করলাম
“আসবআমি তোমাকে অনেক ফুল দেব জন্মদিনেতুমি সক্কালবেলায় বাগানে এসোতোমার দাদু যে ডবল জুঁই গাছ পুঁতেছেন, ঝেঁপে ফুল আসবে ততদিনেগাছের পাশে দাঁড়িও তুমি; ডাল ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে তোমার গায়ে মাথায় মাটিতে অনেক অনেক ফুল ফেলে দেবতারপর সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে গিয়ে কাচের প্লেটে জল ছিটিয়ে রেখোদেখবে কেমন সারা বাড়ি মিঠে গন্ধে ম করবে!”
“থ্যাঙ্ক ইউ, বেস্ট ফ্রেন্ডকিন্তু আমি তোমাকে আজ কী দেব? জন্মদিনে?
পেঁচো ফিসফিস করে বলল, “তুমি শুধু আমার বন্ধু হয়ে থেকোআর আমি কিছুই চাই না! কিচ্ছুই না
----------
ছবি - শ্রীময়ী

No comments:

Post a Comment