তুতাইয়ের কপ্পামাসি
চুমকি চট্টোপাধ্যায়
“এতা খাব না... অ্যাঁ
অ্যাঁ... এতা পচা খেতে...”
“তাহলে আমি খেয়ে নিই, আমার গায়ে
জোর হবে, দুষ্টু
লোক আমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না, তাদের আমি এক ঘুসি মেরে মাটিতে ফেলে দেব। কিন্তু তুতাই
পারবে না, ও
তো খায় না, গায়ে
জোর হবে না। দুষ্টু লোক এলে তুতাই কী করবে তাহলে?”
“কপ্পামাসিকে ডাকবে।”
তুতাইয়ের কথা শুনে হেসে ফেলে
কল্পনা। সাড়ে চার বছরের তুতাইকে দেখাশোনা করার জন্য সকাল আটটা থেকে রাত আটটা অবধি
কল্পনা থাকে ওদের বাড়িতে।
তুতাইয়ের বাবা অধীপ
চাকরিসূত্রে দুবাইতে থাকে। মা নীলাঞ্জনা স্কুলে পড়ায়। তুতাই ছোটো, একা থাকবে
কী করে? তাই
কল্পনা আসে।
এর আগে অঞ্জু আসত। সে একটু
রাগী রাগী ছিল। তুতাই তখন আর একটু ছোটো। ছোটো
বাচ্চারা দুষ্টুমি তো করবেই। তুতাইও করত। খেতে চাইত না, জিনিসপত্র
ছুড়ত, বাথরুমে
গিয়ে কল খুলে দিত, জল
ঘাঁটত। অঞ্জুমাসি রেগে গিয়ে তুতাইকে বকত।
নীলাঞ্জনা স্কুল থেকে ফিরলে
তুতাই রোজই বলত, “অন্নুমাসি
বকেছে।”
তুতাই একটু আদো আদো কথা বলে, অঞ্জুকে বলত অন্নু। নীলাঞ্জনা অঞ্জুকে জিজ্ঞেস করলে সে বলত, “বকিনি দিদি, একটু চোখ বড়ো
করেছি মাত্র। এত ছোটো ছেলেকে কেউ বকে!”
প্রতি রাতেই অধীপের সঙ্গে কথা
হয় নীলাঞ্জনা আর তুতাইয়ের। তুতাইয়ের একটাই কথা, “বাবি, তুমি কবে আথবে?” এটুকু বলেই
দৌড়ে চলে যেত অন্য ঘরে।
নীলাঞ্জনা তুতাইয়ের নালিশের
কথা অধীপকে জানাল। অধীপ বলল, “রোজই যখন এক
কথা বলছে তুতাই, তখন কিছু তো সত্যি বটে। এক কাজ করো, বাড়িতে সিসি
টিভি লাগাও। তোমার ফোনের সঙ্গে কানেক্ট করা থাকবে। তুমি অফিসে বসেই বাড়িতে কী
হচ্ছে, সব
দেখতে পাবে।”
“গুড আইডিয়া! কিন্তু
কাকে বলব এ ব্যাপারে সেটা তো ঠিক জানি না,” নীলাঞ্জনা বলল।
“সে নিয়ে কোনো চিন্তা
নেই। আমার বন্ধু অর্ক সিকিয়োরিটি অ্যাপলায়েন্সের ব্যাবসা করে। আমি কালকেই ওকে বলে
দিচ্ছি। ও গিয়ে লাগিয়ে দেবে।”
তুতাইদের বাড়িতে বসে গেল
ক্যামেরা। নীলাঞ্জনার ফোনের সঙ্গে কানেক্ট করে দিল। অফিসে বসেই নীলাঞ্জনা বাড়িতে
কী হচ্ছে, সবটাই
নজর রাখতে পারে।
তুতাই যে মিথ্যে মিথ্যে বলেনি, সেটা ক’দিনেই বুঝে গেল ওর মা। এমনকি, একদিন তো গালে চড় মারতেও দেখল
নীলাঞ্জনা।
সেদিন রাত্রে অধীপ যখন ফোন
করল, নীলাঞ্জনা
বলল, “অঞ্জু
তুতাইকে মারে। আমি তো সারাক্ষণ নজর রাখতে পারি না, কাজ থাকে। অফিসে গিয়েই একবার দেখি, টিফিন
আওয়ারে একবার দেখি আর মাঝে কখনও সময় পেলে একটু দেখি। এটুকুতেই যা বোঝার বুঝেছি।
একে রাখা যাবে না।”
“ইমিডিয়েটলি ছাড়াও।
সেন্টারে কথা বলো। দরকারে তুমি তিন-চার দিন ছুটি নিয়ে নাও।
তার মধ্যে নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
“সে তো হবে, কিন্তু সে-ই বা কেমন হবে কে জানে।”
সেন্টার থেকে পাঠাল কল্পনা সাহাকে।
কল্পনা উচ্চারণ করতে পারে না তুতাই, বলে কপ্পামাসি। স্কুলে যাবার জন্য
তুতাইকে রেডি করে দেয় ওর মা, কল্পনা গিয়ে ওকে স্কুলবাসে তুলে দেয়। তার পরেই অফিস বেরিয়ে
যায় নীলাঞ্জনা।
সাড়ে বারোটায় স্কুল থেকে ফেরে
তুতাই। কল্পনা গিয়ে নিয়ে আসে। তারপর চান করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয় আর ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
ব্যাপারগুলো শুনতে যত সহজ,
আদতে কিন্তু তত সহজ নয়। কারণ, তুতাই খেতেও চায় না, ঘুমোতেও চায় না কেবল চান করতে গেলে বেরোতে
চায় না। জল ঘাঁটতে খুব ভালোবাসে তুতাই।
নীলাঞ্জনা তো কল্পনাকে নিয়েও
চিন্তায় ছিল। অফিসে গিয়ে কাজে মন দিতে পারত না। মাঝে মাঝেই মোবাইল খুলে বাড়ির
হালচাল দেখত। দশ দিন পেরিয়ে গেছে, তেমন কোনো খারাপ জিনিস চোখে পড়েনি। বরং তুতাই কল্পনার কথা
শুনছে বলেই মনে হয়েছে।
স্কুল থেকে ফিরে জামাকাপড়
ছেড়েই চান করতে দৌড়োয় তুতাই। কল্পনা আগেই বাথরুমে জামা প্যান্ট রেখে আসে। চান হয়ে
গেলেও তুতাই বলে, “আর
একতু চান করি না কপ্পামাসি।” কল্পনা বলে, “শিগগির খেয়ে
নেবে চলো তুতাইবাবা,
নাহলে একানড়ে এসে তোমার খাবার খেয়ে যাবে।”
“একনলে কে?”
“সে আছে এক লুভো
রাক্ষস। বাচ্চাদের ভালো খাবারের খোঁজ পেলেই টুক করে এসে খেয়ে নেয়। আজ আবার মাগুর
মাছ আছে তো! এক্ষুনি এসে পড়বে। চলো চলো।”
তুতাই খেতে বসে। কল্পনা একটু
ভাত সবজি দিয়ে মেখে দেয়,
একটু ভাত ডাল দিয়ে আর একটু ভাত মাছের ঝোল দিয়ে মেখে মাছ বেছে পাশে রেখে দেয়।
তুতাই এক গ্রাস ভাত মুখে নিয়ে টোপলা বানিয়ে বসে থাকে। কল্পনা বলে, “এই রে, ওই শব্দ
পাচ্ছি একানড়ের। তুতাইবাবার খাবার খেতে আসছে।”
ভাতের দলা গিলে তুতাই জিজ্ঞেস
করে, “কই?”
“ওই যে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ
হচ্ছে, তুমি
শুনতে পাচ্ছ না? একবার
কী হয়েছিল জানো? তোমার
মতো একটা বাচ্চা খেতে চাইত না। খাবার পড়ে থাকত। একদিন ওর মা দেখে থালায় খাবার নেই।
ছেলে খেয়ে নিয়েছে ভেবে খুব খুশি হয়েছে মা। কিন্তু বাচ্চাটা দিন দিন রোগা হয়ে
যাচ্ছে, গায়ের
জোর কমে যাচ্ছে। আসলে ও তো খাচ্ছে না, সবই তো একানড়ে খেয়ে নিচ্ছে।”
“আমার গায়ে জোল আছে,” বাইসেপে হাত
দিয়ে দেখায় তুতাই। কল্পনা বলে, “আরে তুতাই তো ভালো ছেলে, ও তো নিজের খাবার সব খেয়ে নেয়।
একানড়ে পারবেই না ওর সঙ্গে।”
“এক ঘুসি মালব
একানলেকে,” শেষ
গরাসটা মুখে ঢুকিয়ে তুতাই বলে। এক মিনিটের জন্য মোবাইল খুলে দেখে নেয় নীলাঞ্জনা, তুতাইকে
নিয়ে বিছানায় যাচ্ছে কল্পনা। তার মানে খাওয়া হয়ে গেছে।
এক একদিন তুতাই খুব বায়না
করে। আজ স্কুল থেকে ফেরার পর ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যান করেই যাচ্ছে, “ঘোলা নেব, ঘোলা দাও।”
কল্পনা বুঝতেই পারছে না তুতাই
কী চাইছে। নীলাঞ্জনা এর মধ্যে একবার ফোন করেছিল। তুতাই কাঁদছে কেন জানতে চাইছিল।
কল্পনা বলে, “কিছু
একটা চাইছে যেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনি কথা বলবেন দিদি? এই নিন।”
“তুতাই, তুমি কাঁদছ
কেন?”
“ঘোলা নেব। ঘোলা দাও,” কাঁদো কাঁদো
গলায় বলে তুতাই।
“আচ্ছা। তুমি
কপ্পামাসিকে ফোনটা দাও।”
কল্পনা ফোন ধরে।
“কল্পনা, ও ঘোড়া
চাইছে। নিশ্চয়ই ফেরার সময়ে রাস্তায় দেখেছে। একটু ম্যানেজ করে নাও, কেমন?”
“আপনি চিন্তা করবেন না
দিদি।”
ফোন রেখেই কল্পনা তুতাইকে বলে, “চান করে নিয়ে চলো আমরা একটা মজার
জিনিস দেখব। তাড়াতাড়ি চলো,
বাথরুমে যাই।”
মজার জিনিস দেখার কৌতূহলে চুপ করে যায় তুতাই।
চান করিয়েই তুতাইকে কোলে নিয়ে
ছাদে চলে যায় কল্পনা। যাবার আগে হাতে করে অল্প খানিক মুড়ি নিয়ে নেয়। ছাদে উঠে পুব
দিকের পাঁচিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিচে কার্নিশের দিকে তাকাতেই কাঠবেড়ালিটাকে দেখতে পায়
কল্পনা। রোজই এখানে ঘোরাফেরা করে দুটো তিনটে কাঠবেড়ালি। কাপড় মেলতে গিয়ে দেখেছে
কল্পনা।
“এই দেখ তুতাইবাবা, কাঠবেড়ালি।
দেখেছ কী সুন্দর ল্যাজ!” কাঠবেড়ালিটা ওদের দেখেই সরে গেছিল। কল্পনা
কার্নিশে মুড়ি ছড়িয়ে ডাকল, “আয় আয়, খাবি আয়।” কল্পনার কথা
শুনে তুতাইও বলল, “আয়, আয়।”
কাঠবেড়ালিটা মুড়ি দেখে একটু
একটু করে এগিয়ে এসে খেতে শুরু করে। আরও একটা কাঠবেড়ালি এসে যায়। সেও খেতে শুরু
করে। তুতাইয়ের খুশি আর ধরে না। হাততালি
দিয়ে ওঠে। ভুলে যায় ঘোড়ার বায়না।
নীলাঞ্জনা অফিস থেকে ফিরতেই
তুতাই হই হই করে বলে ওঠে,
“মাম, কাতবেলালি
দেখেছি! মোতকা ল্যাজ।” ছেলের কথা শুনে হেসে ফেলে নীলাঞ্জনা।
কোলে তুলে আদর করে। “সানডে আমাকে দেখাবে তো?” বড়ো করে ঘাড়
নাড়ে তুতাই।
এভাবেই ফুল চিনিয়ে, প্রজাপতি
দেখিয়ে, মেঘের
মধ্যে নানা ছবি দেখিয়ে,
পাতার ওপর বৃষ্টির ফোঁটা দেখিয়ে, পাখি চিনিয়ে তুতাইয়ের অনেক বায়না
সামলে দেয় কল্পনা।
রবিবার নীলাঞ্জনা বাড়ি থাকে
বলে কল্পনা ছুটি পায়। ইদানীং নীলাঞ্জনা খেয়াল করেছে, কল্পনা না এলে একটু ছটফট করে তুতাই।
ভাত খাবার সময় গল্প শুনতে চায়। সারা সপ্তাহ অফিস করে ক্লান্ত থাকে নীলাঞ্জনা। তাও
চেষ্টা করে গল্প বলার। তুতাই সন্তুষ্ট হয় না বিশেষ।
“এই গল্প না, একানলের
গল্প। কপ্পামাসি জানে। কপ্পামাসিকে দাকো না।”
নীলাঞ্জনা বুঝে পায় না সেটা
কী গল্প!
আর দু’সপ্তাহ বাদেই খ্রিস্টমাসের ছুটি। অধীপ আসছে। খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল বলে
তুতাইয়েরও টানা ছুটি থাকে। বছরের এই সময়টাতেই ওরা বেড়াতে যায়। এবার ওরা যাচ্ছে
ঈশ্বরের নিজের দেশে মানে, কেরালায়।
বাবাকে দেখে মহা খুশি তুতাই।
অধীপ ওর জন্য নানারকম আধুনিক খেলনা এনেছে। কথা নকল করা টিয়াপাখি, হামাগুড়ি
দিতে দিতে পড়ে গিয়ে কাঁদতে থাকা বাচ্চা, আইসক্রিম বিক্রি করা গাড়ি যাকে ‘গিভ মি অ্যান আইসক্রিম’ বললেই ভেতর থেকে একটা আইসক্রিম কোন
ধরা হাত বেরিয়ে আসে এবং আরও অনেক খেলনা। সে সব পেয়েই তুতাই কপ্পামাসিকে দেখাতে
বসল।
“আইস্কিম চাও, চাও না।”
“আইসক্রিম দাও।” কল্পনা বলল
বটে কিন্তু হাত বেরোল না। খেলনা কেবল ইংরেজি বোঝে। খুব রেগে গেল তুতাই। বাবাকে
গিয়ে নালিশ করল, “এতা
পচা গাড়ি, কপ্পামাসিকে
আইস্কিম দেয়নি। নেব না এতা।” বাবার দিকে
ঠেলে দিয়ে চলে এল তুতাই।
অধীপ নীলাঞ্জনাকে বলল, “কল্পনার
সঙ্গে তুতাইয়ের ভালোই র্যাপো হয়েছে দেখছি। মহিলা বেশ ভালো।”
“হ্যাঁ, তুতাইকে খুব
যত্ন করে। সব থেকে বড়ো কথা,
অসম্ভব ধৈর্য আর বুদ্ধি। তুতাইয়ের বায়নাগুলো এমন সুন্দর করে সামলায় যে আমিও
তেমন পারি না। বড়ো বড়ো ডিগ্রি থাকলেই হয় না জানো, বোধ থাকাটা খুব জরুরি। আমিও এমন অনেক
কাজ করেছি তুতাইকে শাসন করতে গিয়ে, এখন মনে হচ্ছে সেগুলো করা ঠিক হয়নি।”
অধীপের পাশে বসে রুবিক কিউব
নিয়ে খেলছিল তুতাই। অধীপ বলল, “বেটা, তুমি জানো আমরা বেড়াতে যাব? তোমার যা যা হোমওয়ার্ক আছে সব
কমপ্লিট করে নিও কেমন। তুতাই ইস আ গুড বয়।”
“কপ্পামাসি যাবে তো?” তুতাইয়ের
কথা শুনে অবাক হয় অধীপ। তারপর বলে, “কপ্পামাসির তখন ছুটি থাকবে।
কপ্পামাসির তো বিশ্রাম দরকার, তাই না। আমরা ফিরে এলেই আবার কপ্পামাসি চলে আসবে।”
“আমি যাব না, কপ্পামাসির
কাছে থাকব।”
আশ্চর্য হয়ে যায় অধীপ। বাবাই মা-কে ছেড়ে কল্পনার কাছে
থাকতে চাইছে তুতাই! কথা আর না বাড়িয়ে নীলাঞ্জনার অফিস থেকে ফেরার অপেক্ষায় থাকে।
নীলাঞ্জনা কথা বলে তুতাইয়ের
সঙ্গে। সেই এক গোঁ ধরে আছে ছেলে, কপ্পামাসির কাছে থাকব। কল্পনাকে ব্যাপারটা বলাতে সেও খুব
সুন্দর করে বোঝায় তুতাইকে। কিন্তু তুতাই নাছোড়বান্দা।
অধীপ নীলাঞ্জনা ঠিক করে, কল্পনাকেও
নিয়ে যাবে। তৎকালে টিকিট কাটা হয় কল্পনার। অসম্ভব খুশি হয় তুতাই।
কেরালায় গ্রিন রিসর্টে ওঠে
ওরা। গাছপালা, ফুলে
ফুলে ভরা চারিদিক। মাঝে মাঝে কটেজ। যেন স্বর্গের বাগান! এসেই তুতাই তার কপ্পামাসির
হাত ধরে বেরিয়ে পড়েছে ঘুরতে।
এক ঝাঁক ফড়িং উড়তে দেখে
কল্পনা বলে উঠল, “দেখো
দেখো তুতাইবাবা, ওগুলো
হল ফড়িং। আর ওই দেখো গাছে দুটো বুলবুলি পাখি বসে আছে। আরও অনেক পাখি দেখাব তোমাকে।”
একটা বিশাল উঁচু সুপুরি গাছকে
বেড় দিয়ে উঠেছে বড়ো বড়ো পাতার মানি প্ল্যান্ট। কল্পনা তুতাইকে আঙুল তুলে ওপরে
দেখিয়ে বলে, “তুতাইবাবা, ওগুলো কী
জানো? ওগুলো
হল সুপুরি। পানের মধ্যে দিয়ে খায়। জীবনদাদু পান খায় দেখেছ না?”
তুতাই মাথা উঁচু করে দেখে।
তারপর মানি প্ল্যান্ট দেখিয়ে বলে, “এতা?”
“এটা হল টাকার গাছ, মানি
প্লান্ট। এরা নিজে নিজে বড়ো হতে পারে না, কোনো গাছ বা লাঠিকে জড়িয়ে ধরে বেড়ে
ওঠে। বুঝেছ সোনা?”
কল্পনার পা জাপটে ধরে তুতাই, “আমি মানি প্লান্ত, তুমি সুপুলি
গাছ।”
শুনেই তুতাইকে কোলে তুলে নেয় কল্পনা। “এ কী বলছ তুমি
সোনাবাবা! তুমি সুপুরি গাছ, আমি মানি প্লান্ট তো!” কল্পনার গলা
জড়িয়ে ধরে আছে তুতাই।
আত্মীয়-স্বজনহীন কল্পনা তখন
সুপুরি গাছ হয়ে এক শিশুর নিষ্পাপ ঘেরাটোপে বন্দি। কটেজের
জানলা দিয়ে নীলাঞ্জনা সেই দৃশ্য দেখে ইশারায় অধীপকে ডাকে। নীলাঞ্জনার চোখে জল, অধীপের মুখে
অসীম তৃপ্তি।
----------
ছবি - নচিকেতা মাহাত
No comments:
Post a Comment