ময়না গড় রহস্য
দেবদত্তা ব্যানার্জী
(এটি একটি কাল্পনিক গল্প, চরিত্রদের সঙ্গে ইতিহাসের মিল খুঁজবেন না। দিঠি আর অয়নের সঙ্গে পরিচয় না থাকলে ম্যাজিক ল্যাম্প অক্টোবর ২০১৭-তে হিউএন সাঙয়ের বাতিদান ও জানুয়ারি ২০১৮-তে সিরাজের পানপাত্র পড়তে অনুরোধ করব)
।। ১।।
ময়না গড় নামটা দিঠি বহুবার শুনলেও
যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এবার পূজায় দিঠিদের গন্তব্য ময়না গড়, অয়নের ছোটোকাকুর শ্বশুরবাড়ি। কলকাতা
থেকে মাত্র তেষট্টি মাইল দূরে তমলুকের গায়েই এই খাল বিল নদী নালার দেশ ময়না গড় যার
নাম রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ৩০টি
ছোটো ছোটো দ্বীপ, ৩৫টি ছোটোবড়ো খাল বা পরিখা নিয়ে বাহুবলীন্দ্র
রাজবংশের জলদুর্গ এই ময়না গড়।
পঞ্চমীর ভোরে কলকাতা ছেড়ে ছয় নম্বর
জাতীয় সড়কে পড়তেই শরতের রূপ ধরা দিল। কলকাতায়
তো গরম আর বৃষ্টি ছাড়া বাকি ঋতু বোঝাই যায় না আজকাল। পথের
দু’পাশে কাশ ফুলের মেলা, নয়ানজুলিগুলোয়
পদ্ম ফুটেছে থরে থরে। মেদিনীপুরে প্রবেশ
করতেই দু’ধারে ফুলের ক্ষেত মন ভালো করে দেয়।
ওদের সঙ্গে চলেছে অয়নের ছোটোকাকুর
মেয়ে মিয়াও, ভালো নাম অলঙ্কার। আর মিয়াওয়ের
ছোটোমামার মেয়ে অর্থাৎ ময়না গড়ের রাজকুমারী ঊর্মিমালা, ডাক
নাম মুনাই। ওরা দুই বোন কলকাতায় লেডি ব্রেবোর্নে
পড়ে। মিয়াও আর মুনাইয়ের বকবকে কান পাতা দায়। কলকাতায়
মিয়াওদের বাড়ি থেকে ওরা দুই বোন পড়াশোনা করে।
দিঠি বাড়ি থেকে লুচি আলুর দম আর
মাখা সন্দেশ নিয়ে বেরিয়েছিল। মিয়াওয়ের
মা ক্ষীরের পাটিসাপটা দিয়ে দিয়েছিল। নন্দকুমার
পার করে তমলুকের পথে ঢুকেই একটা সুন্দর জায়গা দেখে গাড়িটা থামাল অয়ন।
গাড়ি থামতেই দিঠি চটপট সবাইকে
জলখাবার বেড়ে দিল। ভোর পাঁচটায় রওনা দিয়েছে ওরা, এখন সাড়ে সাতটা। খালে
ঝুড়ি ভাসিয়ে পদ্ম ফুল তুলছে দুটো কিশোর। লুচি
খেতে খেতে সেদিকে তাকিয়ে মুনাই বলে, “আমাদের কালিদহেও অনেক পদ্ম ফোটে। দেখাব
তোমাদের। এই গাড়ি তো নৌকা করে পার করতে হবে কালিদহ।”
অয়ন আগেই শুনে নিয়েছিল যে ময়না
গড়ের খাস তালুকে পৌঁছতে গেলে আগে তিনটি পরিখা পার হতে হত। প্রথম
পরিখা কালিদহ, যেটা সেই পাল রাজাদের সময়ে তৈরি। দ্বিতীয়
ও তৃতীয় পরিখা তৈরি করান গোবর্ধনানন্দ (১৫৬১-১৬০৭)। তবে
ঐ তৃতীয় পরিখাটি এখন আর নেই। দ্বিতীয়টির
নাম মাকড়দহ। সেটিও প্রায় অবলুপ্তির পথে। সরকার
তার ওপর তৈরি করেছে কংসাবতী নদী সেতুর সংযোগকারী রাস্তা, সেতুর
থাম নির্মাণ করতে গিয়ে বুজে গেছে মাকড়দহ। এখন
রয়ে গেছে শুধু কালিদহ। ময়না গড় যেতে
হলে কালিদহ পার না করে উপায় নেই। ছোটোমামা
বলেছিলেন নৌকাই ময়না গড় যাওয়ার একমাত্র উপায়।
অয়ন ছোটোকাকুর বিয়ের পর থেকেই
বহু গল্প শুনেছে ময়না গড়ের। ছোটোবেলা
একবার গেছিল বাবার সঙ্গে, কিছুই তেমন মনে
নেই। এই ময়না গড় রাজবংশ বহু প্রাচীন বংশ। একটা
সময় এদের এই দ্বীপভূমির নিয়মকানুন বেশ কঠোর ছিল। এই সব
খালগুলোতে ছিল হিংস্র কুমির কামঠের দল। আর ছিল
কঠোর পাহারা, উঁচু মাটির ঢিপিতে কামান বসিয়ে বর্গী
থেকে ইংরেজদের আক্রমণ প্রতিহত করা হত। ওয়ারেন
হেস্টিংস এক সময় আদেশ দিয়েছিলেন পরিখা বুজিয়ে ফেলার, যদিও
তা কার্যকর হয়নি।
কিছুক্ষণ পর ওদের গাড়িও এসে থামল
সেই কালিদহের পাশে। রাজ্যপাট আজ আর নেই, তবু রাজবাড়ির কিছু ঐতিহ্য এখনও রয়েছে। একসময়
এই বংশের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। আর বউদের
নিয়ে এসে কালিদহের জলে নৌকা শুদ্ধ চুবিয়ে শুদ্ধিকরণ করে ঐ যে ময়না গড়ে প্রবেশ করানো
হত আমরণ আর বের হতে পারত না কেউ। রাজবাড়ির
বেশ কয়েকটি নিজস্ব ঘাট রয়েছে। দুটো
বড়ো নৌকায় করে ওদের গাড়িটাও পার করে দিল রাজবাড়ির মাঝিরা। কাঁচা
রাস্তায় খালপাড় দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে অয়ন দেখছিল কত পুরানো বাড়ি দু’ধারে। পথে
শিউলি ঝরে পড়েছে, বিলগুলোতে জলপদ্ম ফুটেছে। হাঁসের
দল ভাসছে কোথাও। দিঠির চোখ ওর নতুন গল্পের প্লট অনুসন্ধানে
ব্যস্ত। একটা উঁচু ঢিপির উপর দুর্গ ময়না চৌরা, বা ময়না গড়।
মুনাই বলে, “একটা সময় ময়না গড়ের
চারপাশে ছিল বাঁশ বন, কাঁটা গাছ আর বিষাক্ত সব সাপ। দূর
থেকে ময়না গড় দুর্গ দেখা গেলেও কেউ আসতে পারত না এত বাধা পেরিয়ে।”
বর্তমান বসত বাড়িটার বয়স খুব বেশি
না হলেও এটির কারুকার্য বেশ সুন্দর। পিছনে
রয়েছে পরিত্যক্ত পুরাতন রাজবাড়ি যা আজ বেশির ভাগ সংস্কারের অভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত
হয়েছে। বড়োমামা আর মামি গাড়ির আওয়াজে বেরিয়ে
এসেছিলেন। পূজার অনেক কাজ বাকি। বংশের
সদস্যরা সব দেশে বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সবাই
এই জলদুর্গে আসতে চায় না আর। দুই
মামা এখনও পড়ে রয়েছেন এই ধ্বংসস্তূপ আগলে। ওঁদের
কুলদেবতা রাধেশ্যামজি হলেও পরবর্তীতে দুর্গা পূজাও চালু হয়েছিল ময়না গড়ে।
দিঠি আর অয়নকে দোতলার দক্ষিণের
ঘরটা থাকতে দিয়েছিল। পাশেই আমবাগান। ওধারে
কংসাবতির একটা ছোটো খাল। দুপুরে খাওয়ার
ব্যবস্থা বড়ো শ্বেত পাথরের টেবিলে, একসঙ্গে জনা
চল্লিশ লোকের বসার ব্যবস্থা। তবে
এবার লোক কম। মিয়াওয়ের ছোটোমাসিও এসেছিল পরিবার নিয়ে। ওদের
ছেলে রাতুল মিয়াও-এর চেয়ে এক বছরের ছোটো। ওরা
দিল্লি থাকে।
বিশাল বড়ো কাঁসার থালায় চুড়ো করে
সরু চালের ভাত, গন্ধ লেবু, শাক ভাজা, বাটিতে সুক্তো
আর ডালের পর পাতে দিয়েছিল ময়নার বিখ্যাত গয়নাবড়ি। দিঠি
তো দেখেই যাচ্ছে শুধু। তিন রকমের মাছের
পদ, আবার চুনো মাছের টক, তেঁতুল পোড়ার চাটনি, ঘরে
পাতা দই আর বাড়ির বানানো মিষ্টি দিয়ে খাওয়া শেষ হল অবশেষে।
দুর্গা দালান থেকে ঢাকের আওয়াজ
ভেসে আসতেই রাতুল মুনাই আর মিয়াও ছুটল সেদিকে। দিঠিদের
ঘুমানোর অভ্যাস নেই, তাই বড়োমামা আর ওঁর শালা বাদল মামার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখছিল। হঠাৎ
নিচের ঘরে একটা চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সবাই দৌড়ে গেল। মিয়াওয়ের
৫১ হাজার টাকা দামের ফোনটা চার্জে বসানো ছিল, সেটা
নেই। রিং করলে বন্ধ বলছে। ওর তো
কেঁদে ফেলার জোগাড়। ফোন হারানো মানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। শুধু
কী নম্বর, বিভিন্ন প্রফেসরদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও
ফিজিক্সের নোটস ছিল বেশ কিছু। হোয়াটস
আ্যপেই তো বেশি পড়া শেয়ার করে ওরা।
মনীন্দ্র মামা ওর বড়োমামা, বললেন,
“গত সপ্তাহ থেকেই কানে এসেছে এলাকায় খুব মোবাইল চুরি হচ্ছে। কিন্তু
ময়না গড়ের রাজবাটীতে চুরি করার সাহস চোরে পেল কোথা থেকে?”
“আসলে পূজার জন্য বেশ কিছু লেবার
আর বাইরের লোক গড়ের ভেতর রোজ ঢুকছে। কিছু
বাচ্চাও ঢুকছে ফুল তুলতে। ওদের মধ্যেই
কেউ হয়তো ছিঁচকে চোর,” মিয়াওয়ের ছোটোমামা রবীন্দ্রবাবু বললেন।
“বাড়িতে জোড়া গোয়েন্দা উপস্থিত
আর চোর চুরি করে পালাল!! অয়নদা এটা কী
ঠিক?” মুনাই বলে।
অয়ন পেশায় জার্নালিস্ট হলেও শখের
রহস্য অনুসন্ধানী। দিঠিও লেখার পাশাপাশি বেশ কিছু রহস্য
সমাধান করেছে। এটা ওদের নেশা অনেকেই জানে। তাই
বলে ছিঁচকে চোরকে ধরা কি সহজ!!
এদিকে কালিদহ পেরিয়ে ময়না ব্লকের
সদরে রয়েছে ভালো ফোনের দোকান। মিয়াওয়ের
তখনই নতুন ফোন চাই। এই ফোনটা সবে একমাস আগেই কিনেছিল। মুনাই
কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে ওর সিম রিকভারির চেষ্টায় মন দেয়। রথীন্দ্রবাবু
এক ডিলারকে ফোন করে বাড়িতে কয়েকটা সেট পাঠাতে বলে ভাগনিকে বললেন, “এটা আমাদের লজ্জা
যে এখানে এসে এমন হল। কালকেই নতুন
ফোন এসে যাবে। তবে থানাতে জানাতে হবে একবার।”
।। ২।।
সন্ধ্যায় ঠাকুর দালানে বসে সবাই
বোধন দেখলেও সবার মুখ ভার। যে যার
ফোন সামলাতে ব্যস্ত। পূজা উপলক্ষে
ব্যাঙ্ক থেকে গয়নাগাটিও আনা হয়েছে। ঠাকুরের
গয়নাও রয়েছে। যদিও দেবী পাহারায় কলকাতা থেকে চারজন
সিকিউরিটি আনা হয়েছে যারা পালা করে পাহারা দিচ্ছে। তাছাড়া
দু’জন চৌকিদারও রয়েছে।
রাতের খাবারে আজ পোলাও মাংস, কিন্তু ঠিক জমল না। পরদিন
দিঠিরা পুরো ময়না গড় ঘুরে দেখবে বলে একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিল। ভোরে
আবার এক চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল সবার। দোতলার
উত্তরের ঘরে মনীন্দ্রবাবুর ছেলে দেবেন্দ্র ও তার বউ বিয়াস শুয়েছিল। বালিশের
পাশ থেকে ওদের ফোন হাওয়া। ভোর পাঁচটায়
এলার্ম দিয়ে শোয়া দেবেন্দ্রর অভ্যাস। আজ ঘুম
ভাঙলেও এলার্ম বাজেনি দেখে অবাক হয়েছিল। তারপর
বালিশের পাশে হাত দিয়ে দেখে ফোন নেই। ওর বউয়ের
ফোনটা টেবিলে চার্জে দেওয়া ছিল, সেটাও নেই। ওরা
ব্যাঙ্গালোরে থাকে। পূজায় এসেছে আর এসেই এমন ঘটনা। বাড়ির
দুই পুরুষের মাথা হেঁট।
ষষ্ঠীর সকাল এমনিতেই মেঘাচ্ছন্ন। তাতে
আবার জোড়া চুরি। দিঠি ঘরটা ভালো করে খেয়াল করল। আগেকার
দিনের বড়ো বড়ো গরাদ দেওয়া জানালা। পাশেই
একটা ঝাঁকড়া কদম গাছ যা বেয়ে অনায়াসে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ফোন টেনে নেওয়া যাবে। ও পায়ে
পায়ে নিচে নেমে বাইরে এসে কদম গাছটার পাশে দাঁড়াল, শক্ত
মাটিতে পায়ের ছাপ খোঁজার বৃথা চেষ্টা। ময়না
গড় জায়গাটা একটা বিশাল এলাকা নিয়ে। এক সময়
প্রাচীর থাকলেও এখন জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে পড়েছে। সিংহ
দরজায় তালা পড়লেও ঢোকার উপায় রয়েছে।
একটু বেলায় লুচি আর নারকেল কুচি
দিয়ে ছোলার ডাল আর সীতাভোগ খেয়ে ওরা বের হল গড়টা ঘুরে দেখতে। দেবেন্দ্রর
ঘোরাবার কথা থাকলেও ও ওর বাদলমামাকে নিয়ে সদরে ছুটেছে এফ আই আর করতে। মুনাই, মিয়াও, রাতুল আর রবীন্দ্রমামা
ওদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল সব।
বসত বাড়ির পিছনেই একটা ভাঙা গড়
দেখিয়ে ছোটোমামা বললেন, “এখান থেকেই নিচে ভূগর্ভে যাওয়ার বহু পুরানো পথ ছিল। সে সব
পথ এখন নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ করে দিয়েছি। এখানে
মাটির নিচে একাধিক গুপ্তকক্ষ থাকায় ময়না গড়ে কোনো নলকূপ বসানো সম্ভব হয়নি। কিছুদিন
আগেও পানীয় জল আসত নৌকা করে সদর থেকে।”
“মামা, বংশের ইতিহাস সম্পর্কে
যদি কিছু বলতেন ভালো হত। এই দুর্গের প্রতিষ্ঠাতা
কে?” দিঠির মাথায় ঘুরছে গল্পের প্লট।
মামা একটু হেসে বললেন, “পালবংশের
রাজা লাউ সেন ময়না দুর্গের প্রতিষ্ঠাতা। আবার
কিছু ঐতিহাসিক বলেন দ্বিতীয় মহীপাল (৯৮৮-১০০৮ খ্রিষ্টাব্দ) এই একাধিক নদীবেষ্টিত
দ্বীপের মতো স্থানে জলদুর্গটি তৈরি করেন। অবশ্য
এই পাল বংশ শেষ হয়ে যাবার পর বহুদিন ময়না গড় পরিত্যক্ত ছিল। এই অঞ্চল
তখন চলে গেছিল জলদস্যু আর ডাকাতদের হাতে। পরে
উড়িষ্যা অর্থাৎ উৎকল রাজাদের দ্বারা অধিকৃত হয় ময়না গড়। বাহুবলীন্দ্র
রাজাদের অধীনস্থ জনৌতি দণ্ডপাট-এর সদর দফতর
১৫৬১-৬২ সালে বালিসিতাগড় থেকে ময়না দুর্গে স্থানান্তরিত
করা হয়। তারপর আস্তে আস্তে এ অঞ্চলে বসতি গড়ে
ওঠে। দ্বীপ ভূমিতে শত্রুর আক্রমণ কম, তাই ধীরে
ধীরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ – সব সম্প্রদায়ের মানুষেরা আসতে শুরু করে এখানে। গড়ে
ওঠে জনপদ। কয়েকটা চোর্তেন বা বৌদ্ধ স্তূপ ছিল উত্তরে, এখন আর নেই।”
“বাবা, ইতিহাস আর ভালো লাগছে না। চল কূল
দেবতার মন্দিরে যাই।” মুনাই আর মিয়াও পাশের ফুল বাগানের পথ ধরল। দিঠি
আর অয়ন ফটো তুলতে তুলতে এগোচ্ছিল।
“আমাদের কুলদেবতা রাধেশ্যামসুন্দর
জিউর দক্ষিণমুখী পঞ্চরত্ন মন্দিরে নিত্যপূজা হয় এখনও।”
একটু দূরেই পাঁচটি চূড়া দেখা যাচ্ছে। ছোটোমামা
সেদিকে যেতে যেতে বলেন, “পৌষ পূর্ণিমায় হয় রাজ্যাভিষেক পূজা। রাজ্যপাট
বা রাজা তো আর নেই, তাই রাজটীকা পরানো থাকে বিগ্রহের কপালে, মাথায় থাকে রাজমুকুট।”
অয়ন ফটো তুলছিল, মন্দির সংলগ্ন নাটমন্দির, তাকে
ঘিরে মোটা খিলান যুক্ত থাম দিয়ে ঘেরা অলিন্দ, পাশ
দিয়ে নেমে গেছে ঘাটের সিঁড়ি।
মুনাই বলে, “এ পথকে বলে রাজঘাট
বা ঠাকুর ঘাট। এই ঘাট দিয়ে রাস উৎসবে শ্যামসুন্দর জিউর
বিগ্রহ নৌকাবিহারে বাইরে আসে, দেবতা রাস মঞ্চে
অবস্থান করেন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত। শেষ
দিন মন্দিরে ফেরার সময় বাবা বা জেঠুমনি বিগ্রহের মাথায় ধরেন সোনারূপা খচিত রাজছত্র। সে সময়
মেলা হয় এখানে। ফানুস ওড়ে, খুব
মজা হয়।”
বিগ্ৰহ প্রণাম করে প্রসাদ নিয়ে
ওরা পুব দিকে এগিয়ে যায়। ভগ্ন দালান আর
ঝোপঝাড় ফিসফিস করে কত গল্প বলে। পুরাতন
রাজবাড়ির পূর্ব দিকে রয়েছে আটচালা বিশিষ্ট লোকেশ্বর শিব মন্দির। মন্দির
গাত্রের টেরাকোটার কারুকাজ দেখলে বোঝা যায় এটি বহু পুরোনো। টেরাকোটায়
ফুটে উঠেছে নৌকাবিহার, শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠবিহার, গবাদি পশু থেকে শুরু করে পর্তুগীজ সৈন্য, মুসলমান সৈন্যের ছবি। মন্দিরের
ভেতরে ১৫ ফুট গভীরে রয়েছে স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ। কংসাবতী
নদীর সঙ্গে এ মন্দিরের সরাসরি সুড়ঙ্গ পথে যোগাযোগ রয়েছে। নদীতে
জল বাড়লে শিবলিঙ্গ ডুবে যায়।
একটি প্রাচীন মূর্তি দেখিয়ে ছোটোমামা
বললেন, “এটা রুক্মিণী দেবীর মূর্তি।”
অয়ন মূর্তিটার ফটো তুলছিল। দিঠি
খুব ভালো করে লক্ষ করে বলল, “অদ্ভুত তো। গঠনশৈলী
অনুযায়ী বৌদ্ধ হীনযান তন্ত্রের দেবী তারার সঙ্গে এর প্রচুর মিল।”
মন্দিরের ঠিক বাইরে শ্বেতপাথরের
স্ল্যাবের ওপর একটি শঙ্খ যা অতীতে সূর্যের অবস্থান বোঝার জন্য ব্যবহৃত হত।
দিঠি আর অয়ন প্রতিটা জিনিস দেখে
অবাক হচ্ছিল। কলকাতার এত কাছে এত সুন্দর একটা ঐতিহাসিক
জায়গা, অথচ প্রচার নেই।
ঘুরতে ঘুরতে ওরা আবার দুর্গা মণ্ডপে
চলে এসেছিল। দুটো ঢাকি ঢাক বাজাচ্ছে আর একটা বারো
তেরো বছরের ছেলে কাঁসি বাজাচ্ছে। অয়ন
ওদের লক্ষ করে বলল, “বাঁধাধরা ঢাকি?”
“না, সদর
থেকে বায়না দিয়ে প্রতিবার আনা হয়। এরা
নতুন। পুরোহিত অবশ্য পাঁচ বছর ধরে আসছে বালিচক
থেকে।”
দু’জন মজুর পাশেই কলাপাতা ধুয়ে
পরিষ্কার করছে। ছোটোমামা বললেন, “কাল থেকে গ্ৰামের লোকেরা
ভোগ খাবে। তাই সব ব্যবস্থা হচ্ছে।”
বৃষ্টি নামায় ওদের ঘোরা বন্ধ করে
ফিরে আসতে হল।
দুপুরে দেবেন্দ্র সদর থেকে ফিরে
বলল, “গত এক সপ্তাহে অন্তত তিরিশটা ফোন চুরি হয়েছে ময়না গড় থেকেই। আজকাল
সকলের হাতেই দামি ফোন। তবে এসব চোরাই
ফোন কে কিনছে সেটা যদি পুলিশ বের করে তবেই চোর ধরা পড়বে।”
“পুলিশের সঙ্গে ওদের লেনদেন থাকে। পুলিশ
কিছুই করে না,” বাদলমামা বললেন, পেশায় উনি উকিল।
একটু পরেই মোবাইল ডিলার পিঙ্কু
এল বেশ কিছু সেট নিয়ে। সেট দেখার ফাঁকে
অয়ন ওকে বলল, “ভাই, তোমরা কি সেকেন্ড হ্যাণ্ড সেটও বিক্রি কর?”
একটু অপ্রস্তুত হয়ে পিঙ্কু তাকায়
অয়নের দিকে। তারপর বলে, “না, আমরা ওসব কারবার করি না। ঐ হারাণ
করে। ছোটো বাজারে ওর দোকান।”
“তা, এই নতুন সেট এখানে ভালো বিক্রি
হয়? মানে দামি সেটের কথা বলছি। আজকাল
তো সবার হাতেই ফোন,” দিঠি জিজ্ঞেস করে।
ছেলেটা বেশ বিরক্ত হয়। বলে,
“হ্যাঁ, কেনে। মোটামুটি
চলে যায়।”
“আসলে ছোটো জায়গা, গ্ৰাম। শহরের
মতো বিক্রি তো আর হবে না। তবে এই দেখ, একদিনে এ বাড়িতে তিনটে সেট চুরি গেল। তোমার
হঠাৎ তিনটে সেট বিক্রি বেড়ে গেল,” অয়ন হাসতে হাসতে বলে।
“আমার বিক্রি এমনিতেও ভালো। কারণ
আমি দু’নম্বরি মাল রাখি না। সিল
করা সেট পাবেন সব। ঐ মধুর দোকানে যান। ও রাখে
সব দু’নম্বরি মাল,” ছেলেটা বেশ খেপে যায়। মিয়াও
ফোন পছন্দ করে নিয়েছে। দেবেন্দ্র আর
ওর বউও নিয়ে নিল। তবে ওদের সিম পেতে সময় লাগবে। ব্যাঙ্গালোরের
সিম। মিয়াওয়ের সিমটা দু’ঘণ্টায় একটিভ হবে বলে
সব গুছিয়ে নেয় পিঙ্কু। ওর দিকে তাকিয়ে
গভীর চিন্তায় ডুবে যায় অয়ন।
বিকেলে অয়ন একবার সদরে গিয়ে মধু
আর হারাণের দোকান ঘুরে আসে বাদলমামার সঙ্গে। ওরা
পুরানো মোবাইল বিক্রি করে ঠিকই, কিন্তু পেপার সহ। চোরাই
ফোন কেনে না বলল। আর নতুন সেট খুব বেশি নেই ওদের কাছে। বলল
যে আজকাল সবাই শহরে গিয়েই কেনে। অনলাইনেও
কেনে। বিক্রি নেই তেমন। তবে
কিনলে ওরা আনিয়ে দেবে শহর থেকে।
।। ৩।।
সপ্তমীর সকাল মানেই শিউলি আর পদ্মের
গন্ধমাখা সকাল। বাড়ির সবাই স্নান সেরে নতুন কাপড় পরে
মণ্ডপে উপস্থিত। মুনাই আর মিয়াও ঠাকুরের কাজে ব্যস্ত। বাড়ির
বউরাও সব ভোগের ঘরে জোগাড় দিতে ব্যস্ত।
দিঠি আর অয়ন আজ নিজেরাই গড়ের ভেতর
ঘুরে বেড়াচ্ছিল। দেবেন্দ্র আর রাতুল এসে ওদের দলে যোগ
দেয়। একটা বারো বছরের ছেলে গড়ের ভেতর ঘুর ঘুর
করছিল। মনে হয় ভাঙা শিশি-বোতল সংগ্ৰহ করে ছেলেটা। দেবেন্দ্রকে
দেখে পালিয়ে যায়।
ঘুরতে ঘুরতে ওরা একটা ইঁদারার
সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। ইঁদারার বহু
নিচে কালো জল। নিচে নামার পাথরের সিঁড়ি রয়েছে গায়ে। দেবেন্দ্র
বলল, “ময়নাগড়ের পাতালঘরের কথা বাবা বলেছে নিশ্চয়ই। আমাদের
এক পূর্বপুরুষ জগদানন্দ ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচতে গুপ্তকক্ষে দীর্ঘদিন লুকিয়েছিলেন। ইংরেজ
সেপাই ওঁকে খুঁজেও পায়নি। এই পথ কিন্তু
নেমে গেছে সেই গুপ্তকক্ষে।”
দিঠি আর অয়ন ফটো তুলছিল।
“আমাদের লোকেশ্বর শিবমন্দিরের
স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ দেখেছ? কংসাবতী নদীর
জল বাড়লে শিবলিঙ্গ ডুবে যায়। ওখানেও
রয়েছে গোপন একটা সুড়ঙ্গপথ। রাজা
প্রয়োজনে ও পথে দুর্গ ছেড়ে জলপথে পালাতে পারতেন।” এমন আরও কিছু গুপ্তপথের গল্প করতে
করতে একটা ভগ্নস্তূপের সামনে এসে বসেছিল ওরা। সামনেই
একটা খাল, তবে মজে গেছে।
হঠাৎ ভগ্নস্তূপের মধ্যে কিছু একটা
দেখে দেবেন্দ্র এগিয়ে গেল। একটা
গোলাপি রঙের মোবাইলের ব্যাক কভার, মেয়েরা যেমন
ব্যবহার করে। ও বলল, “এটাই আমার বউয়ের মোবাইলের কভার। অর্থাৎ
চোর এ পথে যেতে গিয়ে এটা এখানে খুলে ফেলেছিল।”
“তোমাদের মোবাইলে পাসওয়ার্ড দেওয়া
ছিল কি?”
“হ্যাঁ, তা ছিল।”
“তবে তো সফটওয়্যার ছাড়া ফোন খুলতেও
পারবে না চোর। কোনো বড়ো মাথা রয়েছে এর পেছনে,” দিঠি
বলে।
রাতুল বলে, “মোবাইলের কাজ যারা
জানে তারাই পারবে ওটা খুলতে। এ তো
এখন বিভিন্ন জায়গায় শেখানো হয়।”
সামনের ঝোপের ভেতর দিয়ে একটা হাঁটা
পথ ভগ্নস্তূপের ভেতর হারিয়ে গেছে। সেদিকে
তাকিয়ে অয়ন বলে, “এখানে লোকজন আসে, পোড়া বিড়ির টুকরো
পড়ে রয়েছে ঐ দেখ।”
“এ সব সাপখোপের আস্তানায় কে আসবে?” দেবেন্দ্র বলে।
“আচ্ছা, তোমাদের বংশে গুপ্তধনের
গল্প নেই? সব রাজবাড়িতেই এ সব গল্প থাকে কিন্তু,” দিঠি প্রশ্ন করে।
“আছে তো। আমাদের
পূর্বপুরুষ জগদানন্দ বাহুবলীন্দ্রের মহল দেখনি। ওঁর
স্মৃতিস্তম্ভ দেখবে চল। শুনেছি ইংরেজ
আক্রমণের সময় এক সিন্দুক ধনসম্পদসহ কিছু বিশ্বস্ত লোকদের নিয়ে তিনি গুপ্তকক্ষে আশ্রয়
নিয়েছিলেন। আর সারা জীবন বার হননি। সিন্দুক
উদ্ধার হলেও খোলা যায়নি এখনও।”
দেবেন্দ্র ওদের হাওয়া মহল, আয়না মহল, রাজদরবার কক্ষ
সব ঘুরিয়ে দেখাল। কাল বৃষ্টিতে এগুলো দেখা হয়নি আর। এখানে
রাজাদের শিকারের নিদর্শনরূপে গোলাকার থামের গায়ে টাঙানো আছে হরিণের মাথা। দেওয়ালে
নানা আকারের কুলুঙ্গি, যাতে একসময় জ্বলত প্রদীপ। এখানেই
রয়েছে গুপ্তকক্ষে পাওয়া সেই অভিশপ্ত সিন্দুক যা আজও খোলা যায়নি। ওরা
সিন্দুকটা দেখল। বহু পুরানো জিনিস। কারুকার্যময়
সিন্দুক খোলার কোনও ব্যবস্থা নেই। চাবির
ফুটো নেই কোথাও।
ফেরার পথে দিঠি বলল, “তোমাদের
বাড়ির কোনো বউ বৌদ্ধধর্মী ছিলেন?”
“কী জানি। এ বাড়ির
মেয়ে বউদের ইতিহাস পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে। তবে
রানি ময়নামতি প্রথম পর্দার বাইরে বেরিয়ে কিছু প্রতিবাদ করেছিলেন। আগে
কেউ অপরাধ করলে তাকে কালিদহের হিংস্র কুমির দিয়ে খাওয়ানো হত। বংশের
পুরুষরা বারমহলে বাঈজি নিয়েই রাত কাটাতেন। যথেচ্ছ
টাকা নষ্ট করতেন। রানি ময়নামতি এ সব বন্ধ করেছিলেন। উনি
ছিলেন শান্তির পূজারি। তবে রাজাও আর
ওঁর মহলে যেতেন না।”
দুপুরে ভোগ খেয়ে উঠে সবাই গল্প
করছিল। হঠাৎ মুনাইয়ের চিৎকার কানে আসে। এবার
তার ফোন চুরি গেছে। হলঘরে চার্জে দিয়ে খেতে গেছিল ও। মনীন্দ্রবাবু
এবার বাধ্য হয়েই সদর থানায় ফোন করলেন। রাজ্যপাট
না থাকলেও ওঁদের পরিবারের একটা সম্মান আছে। পূজায়
জনসমাগম হবেই। এভাবে যদি অতিথিদের জিনিস চুরি হয় তবে
তো ভাবনার বিষয়। ভয়ে কেউ আর ফোন হাতছাড়া করছে না।
সন্ধ্যায় নতুন জামা পরলেও মুনাইয়ের
মনখারাপ। ফেসবুক হোয়াটস অ্যাপ বন্ধ আপাতত। দিঠিকে
আর অয়নকে বলল, “তোমরা কেমন গোয়েন্দা, এত চুরি হচ্ছে
অথচ চোর ধরতে পারছ না।” অয়ন চুপ করে শুনল।
সন্ধ্যায় পুলিশের এক অফিসার বাড়ি
এসেছিলেন। সব শুনে ফোন সাবধানে রাখতে বললেন সকলকে। প্রচুর
ফোন চুরি হচ্ছে এলাকায়।
অয়ন আলাদা করে ওঁকে বলল, “এই এলাকার
যে তিনজন ফোনের ডিলার তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিন তো। বিক্রি
কেমন, আগে কেমন ছিল? চোরাই ফোন বিক্রি করে কিনা। একটু
চোখ রাখুন ওদের ওপর।”
অফিসার বললেন খোঁজ নেবেন। পিঙ্কু
আরেকবার এসেছিল রাতের বেলা দোকান বন্ধ করে মুনাইয়ের জন্য নতুন সেট নিয়ে। মুনাই
ফোন করে বলে দিয়েছিল ওর কী সেট চাই। রাতে
আজ সবাই জানালা বন্ধ করেই শুল।
।। ৪।।
রাজবাড়ির লাইব্রেরির কালেকশন দেখার
মতো। অয়ন আর দিঠি অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়ে এসে
সকালটা লাইব্রেরিতে ঢুকেছিল। এই লাইব্রেরি
পুরানো রাজবাড়ির দরবার কক্ষের পাশে। একটা
আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে দিঠি বলে, “বৌদ্ধধর্মের বেশ কয়েকটি প্রাচীন পুঁথিও রয়েছে। গুপ্তধনের
আর কী দরকার, জ্ঞানের ভাণ্ডার রয়েছে এখানেই।”
“গুপ্তধনের আরেকটা গল্প রয়েছে
কিন্তু। রাজারা যথেচ্ছ সম্পদ ওড়াত বলে রানি ময়নামতি
কিছু গয়না আলাদা করে লুকিয়ে রেখেছিলেন। হিরার
নাকছাবি থেকে নেকলেস সব ছিল সেই সম্পদের ভিতর,” মনীন্দ্রবাবু কখন লাইব্রেরিতে এসেছেন
ওরা খেয়াল করেনি।
দিঠি একটা প্রাচীন নথি দেখতে দেখতে
বলল, “বড়োমামা, পালি ভাষার চর্চা ছিল তোমাদের পূর্বপুরুষের
ভেতর?”
“থাকতে পারে, আমি জানি না। তোমাদের
একটাই অনুরোধ করব, ঐ প্রাচীন সিন্দুকটা যদি খুলতে পারো খুব
উপকার হবে। এখন তো আর রাজ্যপাট নেই। ব্যাবসাতেও
মন্দা যাচ্ছে।”
“আমরা চেষ্টা করব,” অয়ন বলে।
দিঠি বেশ কয়েকটা পুঁথি ঘেঁটে বলল,
“রানি ময়নামতির নাম বারবার শুনছি। উনি
কি শিক্ষিত ছিলেন?”
“হতে পারে, উনি রুক্মিণীদেবীর পূজা করতেন। বাকি
মহিলাদের থেকে আলাদা ছিলেন।”
দিঠি আরও কিছু বইপত্র ঘেঁটে দেখছিল। যত দেখছিল
অবাক হচ্ছিল।
বড়োমামার অনুরোধে একটা আতস কাচ
দিয়ে সিন্দুকটা পরীক্ষা করছিল অয়ন। দিঠি
ওর গায়ের কারুকার্যের ছবি তুলতেই ব্যস্ত।
“একটা সময় গুপ্তধনের সন্ধানে আমাদের
এই ভগ্নস্তূপে খুব চোর আসত। ছোটোবেলা
বাবামশাইয়ের এক বন্ধু ইংরেজ সাহেব এসেছিলেন গুপ্তধন খুঁজে দেবেন বলে। কিন্তু
ভদ্রলোককে সাপে কেটেছিল। তারপর থেকে ভূতের
গুজব ছড়িয়েছিল বলে চোর আসাও কমেছিল,” মনীন্দ্রবাবু বলেন।
“গুপ্তকক্ষগুলো কি দেখা যাবে একবার?”
দিঠি বলে।
“ও সব তো বহুদিন অব্যবহারে সাপখোপের
আস্তানা। আর এত গোলোকধাঁধা রয়েছে যে পথ হারালেই
আটকা পড়বে।”
দিঠির ফোনে একটা ফোন আসায় ও বাইরে
বেরিয়ে যায়। এই ঘরগুলোতে টাওয়ার আসে না সব সময়।
দুপুরের ভোগ খেয়ে ওরা দু’জন রাতুল, মুনাই আর মিয়াওকে নিয়ে গড়ের পশ্চিমদিকটা দেখতে গেছিল। ওদিকে
রয়েছে ফলের বাগান।
রাতুল বলে, “একসময় প্রচুর পোষা ময়ূর ছিল এখানে। রাজপরিবারের
মহিলাদের ঘাটও এদিকে।”
মুনাই নতুন ফোনে সেলফি নিতেই ব্যস্ত। হঠাৎ
অয়ন বলে, “মিয়াও কোথায় গেল?”
“তোমার সঙ্গেই তো এগিয়ে গেছিল,”
রাতুল বলে। দিঠিকেও দেখতে পায় না ওরা। তিনজনে
পুরো বাগানটা তন্ন তন্ন করে খোঁজে। একটা
ভাঙা সিঁড়ি রয়েছে একটা দেওয়ালের গায়ে। কখনও
ঘর ছিল এখানে। ঐ ভগ্নস্তূপে মিয়াওয়ের ওড়নাটা পড়ে ছিল। অয়ন
ভাবে মেয়েটার কোনো বিপদ হল না তো!
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার খুঁজতে
থাকে ওরা, কিন্তু কেউ নেই। ওদের
না পেয়ে ওরা ফিরছিল বাড়িতে খবর দিতে। দিঠির
ফোন নট রিচেবেল। হঠাৎ দেখে শিবমন্দিরের দিক দিয়ে হাসতে
হাসতে দিঠি আর মিয়াও আসছে। ওদিকে
সন্ধিপূজার ঢাক বাজছে। ঠিক সাড়ে চারটেয়
সন্ধিপূজায় বসেছেন ঠাকুরমশাই।
।। ৫।।
সন্ধিপূজার পর সবাইকে নিয়ে হলঘরে
জমিয়ে বসেছিল অয়ন আর দিঠি।
দিঠি বলল, “রাজবাড়ি আর গুপ্তধন
থাকবে না তা হতেই পারে না। আমি
তাই প্রাচীন নথিগুলো একটু ঘেঁটে দেখছিলাম। এ বংশে
মেয়ে বউদের বারমহলে আসা নিষেধ ছিল। ওদের
অন্দরমহলে প্রায় বন্দি করে রাখা হত। রানি
ময়নামতি ছিলেন সে যুগের শিক্ষিতা সুন্দরী রমণী। বৌদ্ধ
পরিবারের মেয়ে, তাই পালি ভাষা জানতেন। বিয়ের
সময় সঙ্গে এনেছিলেন হীনযান বৌদ্ধদের তারা দেবীকে, কিন্তু
শ্বশুর বংশে তাকে প্রতিষ্ঠা করা হল রুক্মিণী দেবী হিসাবে। রানি
ময়নামতি অনেক কিছুই বদল এনেছিলেন। এক সময়
এ বংশের পুরুষদের যথেচ্ছভাবে সম্পদের অপচয় করতে দেখে উনি কিছু সম্পদ সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত
নেন। আর পালি ভাষায় একটু হেঁয়ালি করে তা লিখে
রাখেন একটা পুঁথির ভেতর। বংশের কোনো সন্তান
যদি পণ্ডিত হয় সে হয়তো খুঁজে পাবে ঐ সম্পদ, এই ছিল আশা। কিন্তু
পালি ভাষা এ বংশে আর মনে হয় না কেউ শিখেছিল। কারণ
তখন বঙ্গে ইংরেজি আর ফার্সি ভাষা শিখত সবাই। তাই
ঐ হেঁয়ালি কারও চোখেই পড়েনি। বহু
বছর পর এক ইংরেজ সাহেব এসেছিলেন এখানে গুপ্তধনের খোঁজে, কিন্তু
তিনি অনেকটা এগিয়েও সাপের কামড়ে মারা যান। আচ্ছা, এই ময়নাগড় তো তিনটে খাল দিয়ে ঘেরা ছিল। দুটোর
হদিস পেলেও তৃতীয়টি কোথায় কেউ জানো?”
সবাই মাথা নাড়ে। মনীন্দ্রবাবু
বলেন, “আমরা আসলে কলকাতায় পড়াশোনা করেই বড়ো হয়েছি। এ গড়ে
আসতাম ছুটিছাটায়। বাবামশাই ছিলেন খুব কড়া স্বভাবের। তাই
ও সব খোঁজ করিনি কখনও।”
“আমার ধারণা পশ্চিমে বাগানের ভেতর
যে প্রাচীর আর সিঁড়ি আছে তা ঐ তৃতীয় খালে নামার। ওখানে
একটা মজা খাল রয়েছে। ঐ খালেই কুমীর
ছাড়া থাকত, কারণ মহিলারা যাতে ও পথে পালিয়ে না যায়। ঐ খাল
ওদিক দিয়ে পাতালে নেমে গেছে। যাই
হোক ওদিকে ঘুরতে ঘুরতে মিয়াও একটা সুন্দর পাখির ছবি নিতে গিয়ে একটা ফাটল গলে পড়ে যায়। নিচে
শুকনো পাতা আর বালি থাকায় ব্যথা পায়নি। এবার
গুপ্তকক্ষের গোলকধাঁধায় আটকে যায় ও। মোবাইলের
আলো জ্বালিয়ে ও বেরোবার রাস্তা খুঁজতে থাকে। টাওয়ার
নেই যে কাউকে ফোন করবে। ও একটা ক্ষীণ
জলের ধারা বরাবর সুড়ঙ্গ ধরে হাঁটতে থাকে, একটা জায়গায় এসে একটা বড়ো জলাশয় পায়। জলাশয়ের
মাঝে একটা দরজা রয়েছে। কিন্তু সেদিকে
যেতে হলে জলে নামতে হবে। জলে না নেমে
ও পাশের দেয়াল বরাবর হাঁটতে হাঁটতে আরেকটা পাথরের দরজা পায়। সেটা
অনেক চেষ্টা করেও খুলতেই পারে না ও।
“ওদিকে আমি সকালে পালি ভাষায় লেখা
পুঁথিতে মেয়েলি হাতের লেখা দুটো হেঁয়ালি পেয়েছিলাম, যা ছবি তুলে কলকাতায় আমার এক ভাষা
বিশারদ বন্ধুকে পাঠাই। ও একটু আগে খোঁজ
করে হোয়াটস আ্যপে হেঁয়ালিটা পাঠায় -
‘যদি – সূর্য উদয় পশ্চিমে হয় নিয়ম ভাঙার দেশে
তারা দেখো দিনের বেলায়, পথ পাবে যে শেষে
বিপদ আছে, সাহস করে খুঁজতে যদি চাও,
চাবি তুমি পাবেই খুঁজে, ধনসম্পদ! তাও;
শুধু আমার শেষ অনুরোধ রেখে গেলাম
যা,
এ বংশের মেয়ে বউরা বাটিয়া নিও
তা।’
“আমি হেঁয়ালিটা নিয়ে ভাবতে থাকি। পশ্চিম
দিক থেকে খোঁজা শুরু করি। হঠাৎ মনে হয়
সূর্য পশ্চিমে ওঠা মানে তো নিয়ম ভাঙা। রানি
ময়নামতি অনেক নিয়ম ভেঙেছিলেন। মনে
পড়ে রুক্মিণী দেবীর সঙ্গে তারা দেবীর মিলের কথা। দিনের
বেলায় তারা দেখা বলতে বোধহয় ওটাই বলেছেন উনি। ঐ মন্দিরের
সামনে গিয়েই বিশাল শঙ্খটা চোখে পড়ে। ওটাও
তো সূর্য ঘড়ি আপনারা বলেছিলেন। কী মনে
করে ওটাকে উলটো ঘোরাই। অর্থাৎ পশ্চিম
থেকে পূবে। সর সর করে একটা আওয়াজ হয়। তাকিয়ে
দেখি তারা দেবী বা রুক্মিণী দেবীর বেদিটা সরে গেছে। একটা
পাতালে নামার পথ দেখা যাচ্ছে।
‘সূর্য উদয় পশ্চিমে হয় নিয়মভাঙার
দেশে
তারা দেখো দিনের বেলায়, পথ পাবে
যে শেষে’
এটুকু তো মিলল। এবার
পরের লাইনগুলো আওড়ালাম -
‘বিপদ আছে, সাহস করে খুঁজতে যদি
চাও
চাবি তুমি পাবেই খুঁজে, ধনসম্পদ, তাও!!’
সাহস করে নামতে শুরু করলাম, কিন্তু সামনে তো জলাশয়!! হঠাৎ
দেখি দুটো সিঁড়ির ধাপের পর দেয়ালে একটা বন্ধ দরজা রয়েছে পাথরের। পাশেই
একটা খাঁজে আবার শঙ্খ রয়েছে। শঙ্খটা
ঘোরাতেই দেখি দরজা খুলে গেল, ছোট্ট কুঠুরিতে
মোবাইলের আলোয় দেখলাম একটা ছোটো হাতির দাঁতের সিন্দুক আর একটা বড়ো কারুকার্য করা লোহার
তিন মাথাওয়ালা দণ্ড। আমার ধারণা রানি
নিজের স্ত্রীধনটুকুই লুকিয়ে রেখেছিলেন। তা অবশ্য
কম নয়। আর ঐ শলাকা হল বড়ো সিন্দুকের চাবি। ঐ চাবি
লুকিয়ে রাখাতে ঐ সম্পদ আর কেউ ভোগ করতে পারেনি। সিন্দুক
আর খোলাই যায়নি। ঐ গুপ্তকক্ষর অন্য দুটো দেওয়ালেও দরজা
ছিল। বাকি দুটো দরজাতে চক্র আর পদ্ম আঁকা, বৌদ্ধ ধর্মে এই তিনটে অতি পবিত্র চিহ্ন। আমি
শঙ্খ দ্বার দিয়ে ঢুকেছি। পদ্ম আঁকা দরজাটা
বেশ ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে। শ্যাওলা জমেছে। মনে
হয় ওধারে জল আছে। দরজায় গায়ে কূর্ম অবতারের ছবি ছিল। মনে
হয় ওদিকে সেই কুমিরভর্তি খালের শেষাংশ। খুলিনি
তাই। চক্র আঁকা দরজায় কান পেতে অবাক, ও ধার থেকে যেন কেউ খুলতে চাইছে। দমাদম
ধাক্কা দিচ্ছে। ‘কে’ বলে ডাকতেই একটা ক্ষীণ মেয়েলি গলা
পেলাম। চক্র ঘুরিয়ে খুলতেই দেখি মুনাই দাঁড়িয়ে। ওর মোবাইলের
চার্জ প্রায় শেষ ততক্ষণে।”
পড়ন্ত বিকেলের আলোয় সবাই মিলে
আবার যাওয়া হল ঐ দেবী তারার মন্দিরে। এই মন্দিরের
প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রানি ময়নামতির হাত দিয়ে। এই গুপ্তকক্ষ,
সিঁড়ি এবং এত হেঁয়ালি সব ওঁর মস্তিষ্কপ্রসূত।
মনীন্দ্রমামা, রথীন্দ্রমামা আর
বাকি সবাই দিঠি আর অয়নের সঙ্গে ঐ কক্ষে গিয়ে সিন্দুক আর ঐ তিন মাথাওয়ালা শলাকা নিয়ে
ফিরলেন। শলাকাটার মাথায় রয়েছে চুম্বক, যা বড়ো সিন্দুকের কারুকার্যের খাপে খাপে বসে গেল। শতাব্দী
প্রাচীন বড়ো সিন্দুকটাই আগে খোলা হল। রয়েছে
বেশ কিছু নথি, আর দু’ঘড়া মোহর, কিছু কড়ি, বেশ কিছু রূপার
টাকা আর ছোটো একটা চন্দন কাঠের বাক্স, বাক্স ভর্তি
গহনা। আর রানি ময়নামতির হাতির দাঁতের তৈরি ছোটো
সিন্দুক খুলে পাওয়া গেল হিরার নাকছাবি ও দুটো নেকলেস, লকেট, হিরার বালা, মুক্তার গয়না, সোনার আর্মলেট, কোমর বন্ধনী, আরও অনেক গয়না।
দেবেন্দ্র সব দেখে শুনে বলল, “দেশের
আইন অনুযায়ী এ সব তো এখন সরকারের সম্পত্তি। আমাদের
কোনো অধিকার আর নেই।”
“সরকার তোমাদের একটা ভাগ অবশ্যই
দেবে। আর রানি ময়নামতির স্ত্রীধন বাড়ির মেয়ে
বউদের সম্পদ। ওটা ঠিক গুপ্তধন নয়, উনি নিজেই বলে গেছেন তা বাড়ির মেয়ে বউরা পাবে,” দিঠি হেঁয়ালির
শেষ চার লাইন মনে করিয়ে দেয়।
।। ৬।।
আজ নবমী, আজ দিঠিদের বাড়ি ফেরার কথা। ফেরার
পথে ওদের মহিষাদল রাজবাড়িতে নবমীর পূজা দেখতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মহিষাদলের রাজামশাই। ওঁর
সঙ্গে অয়নের বহুদিনের আলাপ। এই বাড়িতে
অজানা খুশির আবেশ। কারণ সকাল সকাল থানা থেকে জানিয়েছে মোবাইল
চোর ধরা পড়েছে। অয়নের কথা মতো তিনজন ডিলারের উপর কড়া
নজর রাখা হয়েছিল। চোরকে কাজে লাগিয়েছিল এক মোবাইল বিক্রেতা
নিজেই। চোরের থেকে সব ফোন সে সংগ্ৰহ করে কলকাতায়
নিয়ে বিক্রি করে দিত। চোর ছিল দুটো
একদম বাচ্চা ছেলে, ওরা শিশি-বোতল-কাগজ কুড়োতে ঢুকত সবার
বাড়ি, আর রাতেও চুরি করত। ধরা
পড়তেই ওরা ডিলারের নাম বলে দিয়েছিল। বিক্রেতার
দু’দিক দিয়ে লাভ হত। যত জনের ফোন
চুরি যেত অনেকেই তার কাছ থেকে নতুন ফোন কিনতে আসত। চোরাই
মাল নিয়ে ট্রেনে ওঠার সময় সেই ডিলারকে এবার হাতেনাতে ধরেছিল পুলিশ। পিঙ্কু
নিজেই ছিল এ সবের মাথা। না হলে এই গ্ৰামে
প্রতি মাসে দামি মোবাইল কী করে বিক্রি হবে? অয়ন
একদম ঠিক জায়গায় ধরেছিল।
অফিসার সবাইকে থানায় ডেকেছিল মোবাইল
ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু সবারটা
পাওয়া গেলেও মুনাইয়েরটা ছিল না ঐ লটে। মুনাই
অবশ্য নতুন ফোন নিয়েই ব্যস্ত। ওর আর
পুরানোটা চাই না।
পিঙ্কু ততক্ষণে সদরে চালান হয়ে
গেছে। মুনাই নিজের নতুন ফোনে সবার ছবি তুলে
রাখছিল। মিয়াও ওকে বলে, “কী রে, অয়নদা দিল তো মোবাইল চোর ধরে।”
“হুম, বাট
আমারটা তো পায়নি।”
“তোমারটা তো চুরি যায়নি মুনাই। পুরানো
হয়ে গেছিল। চুরি হলেই সবাই নতুন ফোন পাচ্ছিল আর তুমি
গত দু’মাস বায়না করেও নতুন ফোন পাওনি। তাই
নিজেই ফোনটা কোথাও ফেলে দিয়েছিলে।”
মুনাই একটা ঢোঁক গিলে চারপাশে
তাকায়। তারপর বলে, “কী করে বুঝলে তুমি?”
“কারণ ফোনটি ফেলার আগে তুমি সব
কন্টাক্টস নোট করে রেখেছিলে। ফোন
হারালে সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হয় পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। নতুন
ফোন পেয়েই মিয়াও ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছিল যে ওর সব কন্টাক্টস হারিয়ে গেছে। সবাই
যেন নতুন করে যোগাযোগ করে ওর নম্বরে। আর তুমি
নতুন ফোন পেয়েই ছবি দিলে ‘গট নিউ ফোন’ বলে। তাতেই
সন্দেহ হয়েছিল আমার। তাই আমি লক্ষ
করছিলাম তোমায়, তুমি বেশ রাতে একটা ডাইরি থেকে কিছু লোড
করছিলে ফোনে। পরদিন আমি চুপি চুপি তোমার ডাইরিটি উলটে
দেখে সবটা বুঝতে পারি।”
“তুমি আমার ডাইরিটা ধরেছিলে?” মুনাইয়ের চোখে বিস্ময়।
“গোয়েন্দা বাড়িতে থাকলে তো ওসব
সামলে রাখতে হয়। জোড়া গোয়েন্দা বাড়িতে আর তুমি...” রাতুল বলল।
মুনাই হাতের ইশারায় চুপ করিয়ে
দেয় ওদেরকে। কারণ ওর মা, ছোটোপিসি, জেঠিমা আর দিঠি আসছিল এদিকে।
দিঠির গলার চেনে জ্বল জ্বল করছে
হাফ মটর দানার মতো তিনটে হিরা বসানো একটা লকেট। দেবেন্দ্রর
মা বললেন, “এটা এই পরিবারের তরফ থেকে দিঠির উপহার। ওর জন্যই
তো আমরা এই রানির ঐশ্বর্য ফিরে পেলাম।”
রাতুলের মা বলেন, “তবে ময়নাগড়ে
আরও অনেক রহস্য রয়েছে। এখনও পিছনের
ভগ্নমহলে পূর্ণিমার রাতে কে যেন কেঁদে বেড়ায়। অমাবস্যায়
এক কোট-প্যান্ট পরা সাহেবকে ওদিকে দেখা যায়। মাঝে
মাঝে মাঝরাতে নাচঘর থেকে ঘূঙুরের আওয়াজ ভেসে আসে। আবার
হাওয়া নেই এমন দিনেও দরবার কক্ষের ঝাড়বাতিটা দুলতে থাকে জোরে জোরে। এ সব
রহস্যর সমাধান করতে হবে তো? আবার এসো কিন্তু।”
দিঠি চোখেমুখে কপট ভয় ফুটিয়ে বলে,
“ওরে বাবা, ভূতে আবার আমার একটু ভয় রয়েছে। ও সবে
আমি নেই। তবে অয়ন ভালো ভূত ধরতে পারে। ও চলে
আসবে।”
অয়ন কটমট করে তাকাতেই সবাই হেসে
ফেলে।
অয়ন বলে, “ভূতের খোঁজে নয়, ইতিহাসের টানে আসব আবার। ময়না
গড়ের নাম অনেকেই শোনেনি। একটা ডকুমেন্টরি
শুট করার ইচ্ছা রইল। আগে অফিসে কথা
বলি। আপনারা অনুমতি দিলে কাজটা নিয়ে এগোব।”
সবাইকে বিদায় জানিয়ে ওদের গাড়িটা
কালিদহের উদ্দেশে এগিয়ে যায়। পিছনে
পড়ে থাকে রহস্যে ঘেরা ময়না গড়।
_____
ছবিঃ সুমিত রায়
Excellent
ReplyDeleteকল্প গল্প হিসাবে সুন্দর। তবে যেহেতু স্থান আর ইতিহাস নিয়ে জড়ানো তাই একটু খোঁজ খবর নিয়ে নিলে ভালো হতো।
ReplyDelete