অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
আমাদের পাঁচ বন্ধুর নাম লোকে রেখেছে পঞ্চপাণ্ডব।
কিন্তু ওই নামের চরিত্রদের নিয়ে বিখ্যাত এক সাহিত্যিক অনেক গল্প বানিয়ে রেখেছেন
অনেকদিন আগে থেকে। আর আমরা কেউ মহাভারতের চরিত্র হয়ে ওঠার এতটুকু ইচ্ছে রাখি
না। তাই আমাদের কেউ পঞ্চপাণ্ডব বলে ডাকলে বেজায় খেপে যাই। নিজেরাই নিজেদের নাম
রেখেছি পাঁচমাথা। সে নামে কেউ ডাকুক বা না ডাকুক, আমাদের কিসসু এসে যায় না।
বিল্টু, পক্ক, গুল্টে আর আমি এবার ইলেভেন থেকে টুয়েলভে
উঠেছি। পাঁচমাথার হেডু হচ্ছে সামুদা, কারণ সে ইঞ্জিনিয়ারিঙের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
পাড়ার গোমড়ামুখো গুরুজনেরা বলে সামুদা শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকে পড়েছে। তাতেও
আমাদের কিসসু এসে যায় না। সামুদাকে আমাদের পাণ্ডা না করে উপায় নেই। আমাদের যত
বায়নাক্কা, খরচা খরচ তাকেই সামলাতে হয়।
সামুদা কলেজের পড়া থেকে কিছুটা সময় বার করে দু-দুটো
টিউশন করে। সেই দুগ্ধপোষ শিশু দুটি পড়ে ক্লাস নাইনে, দুটোই যমজ মেয়ে। তাদের বাবা অনেক
টাকার মালিক, ব্যাবসা করেন। সামুদা টিউশন করে বেশ মোটা টাকার যে ফিজ পেয়ে থাকে
মাসে মাসে, তার একটা বড়ো অংশ খরচ হয় সানিরকে। সানিরক হচ্ছে রবিবার ছুটির দিন
সকাল দশটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত আমাদের আড্ডাস্থল। রবিবার, অর্থাৎ সানডের
ঝকঝকে সান, মানে সূর্যের মিঠেকড়া আলোয়, আমরা পাঁচমাথা বসি যে রোয়াকে, তার নামকরণ
সামুদাই করেছিল। সেদিন পক্ক, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের চারমূর্তির প্যালার মতো, “ডিলা
গ্র্যান্ডি, মেফিস্টোফিলিস, ইয়াক ইয়াক”, করে উঠেছিল। সানিরক নামটা বেশ জুতসই
হয়েছিল।
পক্কর আসল নাম সুশ্রুত দত্তবনিক। এই বিচ্ছিরি নামটা
উচ্চারণ করতে আমাদের জিভ ছিঁড়ে যেত বলে গুল্টে ওর নাম রেখেছিল পক্ক, মানে ইঁচড়ে
পাকা। গল্পের বই গিলে গিলে ও একেবারে বিশ্ব পাকা হয়ে গিয়েছে। বিপ্রতীপ বসুর নাম
গুল্টে রাখা হয়েছে ফুটবল মাঠ থেকে। সেন্টার ফরোয়ার্ড, গাট্টাগোট্টা
চেহারার গুল্টে যখন প্রতিপক্ষকে চার্জ করে, ওর পায়ের ডিম লোহার হাতুড়ি হয়ে আঘাত
করে বিপক্ষের খেলোয়াড়ের ঠ্যাঙে। সেই থেকে গুল্টে নামে পরিচিত হয়ে গেছে বিপ্রতীপ।
আসল নামটা থেকে গেছে শুধু ইস্কুলের রোল কলের খাতায়। আমাদের মধ্যে একমাত্র গুল্টেই
ফুটবল খেলে নিয়মিত। বাকিরা বেশির ভাগ সময় দর্শক। আমার নাম রাখা হয়েছে আরও বিচ্ছিরি
- লম্বু। বেয়ারা হাইট নিয়ে আমি যে লম্বু হয়ে যাব, তা আর বিস্ময়ের কী! আমাদের মধ্যে
সবচাইতে বুদ্ধিমান সামুদার ভালো নাম সৌমেন্দ্রনাথ। বিল্টুর নাম বদলানোর
দরকার পড়েনি।
সানিরকের সামনে আমাদের খেলার মাঠ। ফুটবল মাঠ হিসাবে
বেশ বড়ো। সানিরক আসলে একটা বাড়ির সদর দরজার পাশে দুটো সিমেন্টের বাঁধানো বসার
জায়গা। এই বাড়িটা এখন পোড়ো বাড়ি। লোহার গ্রিল আর পাত দিয়ে তৈরি
দরজা, এখন মরচে পড়ে জরাজীর্ণ। দরজাটা খোলা হয়নি আজ প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেল।
লোহার দরজার দু’পাশে সিমেন্টের বড়ো বড়ো পিলার দুটোর মাথায় সিমেন্টের সিংহ লাগানো।
বৃষ্টির জল আর ধুলো লেগে সিমেন্টের সিংহ দুটো এত কালো হয়ে গেছে, কাছে না এলে সিংহ
বলে বোঝা যায় না। বাড়ি
সুরক্ষিত করার জন্য পাঁচিল একটা বানানো হয়েছিল বটে, কিন্তু জায়গায় জায়গায় ভেঙে
যাওয়ায় অনায়াসে পাঁচিল টপকে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়া যায়।
বাড়িটার ভিতরে ছোট্ট বাগান ছিল একসময়, এখন জংলি
কাঁটাঝোপে ভর্তি। একটা সিমেন্ট বাঁধানো সরু রাস্তা গেট থেকে ফুট পঁচিশেক এগিয়ে গিয়ে
শেষ হয়েছে একতলা বাড়িটার ছোট্ট বারান্দার সামনে, যার একমাত্র বাসিন্দা ছিলেন যে
ভদ্রমহিলা, তিনি একাই থাকতেন এখানে। বাড়ির বড়োদের মুখে শুনেছি তার স্বামী এক মস্ত
পুলিশ অফিসার ছিলেন। রিটায়ার করার আগেই হঠাৎ হার্টফেল করে মারা যান। তার স্ত্রী,
পাড়ার লোকে যাকে ডাকত সমাদ্দার মাসিমা, তিনি এই বাড়িতে একাই থাকতেন, কারণ একমাত্র
মেয়ে নিশা লেখাপড়া শেষ করে আমেরিকার আরিজোনা ইউনিভার্সিটিতে পি এইচ ডি করতে চলে
গিয়েছিল। এ তল্লাটের সব লোক সমাদ্দার মাসিমাকে ‘মাসিমা’ বলেই ডাকত।
পাঁচ বছর আগে যখন সমাদ্দার বুড়ি বেঁচে ছিল, তখন
আমরা অবশ্য ওনাকে অন্য নামে ডাকতাম। সেটা ছিল সিক্রেট কোড – ‘খ্যাচখেচিয়া বুড়ি’। তখন আমরা স্কুলের নিচু
ক্লাসের ছাত্র। বিকেলে ফুটবল খেলার সময় মাঠ ছাড়িয়ে, রাস্তা ছাড়িয়ে, ফুটবল
কখনও কখনও মাসিমার বাড়িতে ঢুকে যেত। তারপর চিল চিৎকার জুড়ে দিত বুড়ি। বল আটকে রেখে
দিত। অনেক কাকুতি মিনতি করে বল ছাড়াতে হত। বুড়ির রাগের সঙ্গত কারণ ছিল। আমাদের
ফুটবল তার সাধের বাগানে ঢুকে, ফুলের গাছ তছনছ করে দিত। ওনার “খ্যাচখেচিয়া বুড়ি”
নামটা আমরা নিজেদের মধ্যেই সীমিত রেখেছিলাম। বড়োরা জানতে পারলে বিপদের অন্ত ছিল
না।
মাসিমার মেয়ে নিশাকে আমরা কোনোদিন দেখিনি, যেমন
দেখিনি তার বাবাকে। নিশাদি পড়াশুনোয় ভালো ছিল, ব্যাঙ্গালোরে পড়ত। অবশ্য নিশাদিকে
দেখেছিল আমার থেকে বেশ কয়েক বছরের বড়ো আমার দাদা। বলেছিল তাকে নাকি ‘হেব্বি’
দেখতে। সে স্বর্গের পরি, নাকি আরব সুন্দরী, সে নিয়ে আমার কোনো উৎসাহ দেখতে না পেয়ে
দাদা চুপ করে গিয়েছিল।
সমাদ্দার মাসিমা মারা যাবার গোটা একদিন পর আবিষ্কার
হয় উনি আর পৃথিবীতে নেই। যেদিন মারা গিয়েছিলেন, সেদিন ওনার কাজের লোক ছিল ছুটিতে।
পরদিন সে বেল বাজিয়ে বাজিয়ে হাত ব্যথা করে পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে, পচা গন্ধ পেয়ে,
সারা পাড়ার লোককে ডেকে জড়ো করেছিল। পাড়ার লোকেরাই সৎকার করেছিল এগিয়ে এসে। নিশাদি হুট বললেই তো আসতে
পারে না! বিদেশ থেকে স্বদেশে আসতে কিছু সময় লেগেই যায়। বাড়ি ফিরে শ্রাদ্ধ শান্তি
করে আবার আরিজোনাতে ফিরে গিয়েছিল নিশাদি। আমরা ছোটোরা এসব ঝামেলা দেখতে
পাইনি। ফুটবল খেলতে গিয়ে মাসিমার বাড়ির সামনে অনেক লোকের আনাগোনা দেখতে পেলেও সে সব
নিয়ে আমাদের মধ্যে কেউ মাথা ঘামায়নি।
লামার্কের সূত্র অনুযায়ী মানুষের ল্যাজ কবেই খসে গেছে।
কিন্তু ক্লাস টেনের পরীক্ষার ফল বেরোতেই আমাদের চারজনের একটা করে ল্যাজ গজিয়ে গেল।
কেমন যেন বড়ো হয়ে গেছি বলে মনে হতে লাগল। খেলার মাঠ ছাড়াও আর একটা দুনিয়া শুরু হল,
আড্ডা দেওয়ার রক – ‘সানিরক’। সমাদ্দার মাসিমার বাড়ির গেটের দু’পাশের
সিমেন্টের বসার জায়গায় গত এক বছর ধরে রবিবার সকালে বাঁধাধরা আড্ডা।
এই জায়গাটা আড্ডার জন্য বেছে নেওয়ার আর একটা কারণ
ছিল। বড়োরা এদিকটায় খুব একটা ঘেঁষে না। সবাই বলে পোড়ো বাড়িটাতে নাকি ভূত আছে।
দিনের বেলাতে ভূতেরা উপদ্রব করে না, আমাদের জানা আছে। তাই ভূত-টুত থাকলেও
আমাদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে বলে মনে হয় না।
বিল্টু, পক্ক, গুল্টে আর আমি জানুয়ারি মাসের
রবিবারের এক সকালে জাঁকিয়ে বসেছি। সামুদা একটু দেরি করে এল। আমরা ওকে দেখেই
চেঁচিয়ে উঠলাম। আমি বলি, “মুশকিল আসান এসে গেছে, নিতাইয়ের দোকানের গরম
শিঙাড়া কড়াই থেকে ল্যান্ড করেছে এইমাত্র।”
পক্ক বলে উঠল, “সঞ্জয় উবাচ? দিব্য দৃষ্টি দিয়ে তুই
যেন দেখতে পাচ্ছিস! আমরা কী ধৃতরাষ্ট্র?”
সামুদা হাতের মোবাইলটা আর এক হাতের তালুতে তিনবার
ঠুকে বলল, “বিরক্ত করিস না। কাল থেকে যা জ্বালাতন করছে মোবাইলটা! চলছেই না।”
সামুদার বিকল মোবাইল আমাদের সকালের তেলেভাজা খাওয়ার
প্রোগ্রামকে চৌপাট করে দিতে পারে এই ভেবে বলি, “দাও দেখি, একবার। ব্যাটারি খুলে
দেখি।”
সামুদা কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই? পড়িস
তো আর্টস নিয়ে। এসব তোর কম্ম নয়।”
আমি সামুদার কথায় একটু নিভে গিয়ে বললাম, “কেন,
মোবাইল যারা সারায়, তারা কি সব ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, নাকি আইনস্টাইন?”
“আইনস্টাইনের সময় মোবাইল আবিষ্কার হয়নি। রং
কমেণ্টস!”, বিল্টু বলে ওঠে।
“আড্ডা খারাপ কোরো না সামুদা। আর একটা মোবাইল কিনে
নিও”, রায় দেয় পক্ক।
“হ্যাঁ, আমার বাবার নোট ছাপানোর প্রিন্টিং প্রেস
আছে না! চাইলেই দিয়ে দেবে!” বলেই সামুদা মনোযোগ দিয়ে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে আদেশ
দেয়, “লম্বু, যা নিতাইয়ের দোকান থেকে দশটা শিঙাড়া নিয়ে আয়। বলে দিস আমার নামে যেন
লিখে রাখে।”
আমি সানিরক ছেড়ে দৌড়াই নিতাইয়ের দোকানের দিকে।
রবিবার সকালে নিতাইয়ের শিঙাড়া কড়াই থেকে ঝাঁজরি বাহিত হয়ে, লোহার ট্রেতে ঝাঁপাতে
না ঝাঁপাতেই শেষ হয়ে যায়। শিঙাড়া কচুরির ক্রেতার ভিড়ে নিতাইদার দোকানে ছুটির দিনে পা
রাখার জায়গা নেই। আমার লম্বা হাইট এক্ষেত্রে একটা বিশেষ সুবিধা পায়। অনেক লোকের
মুন্ডুর উপর থেকে নিতাইদার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অর্ডার দিয়ে দিই।
সাদা রঙের কাঁচা শিঙাড়া নিতাইদার কড়াইয়ের তেলে ডুব
দিয়ে বুড়বুড়ি কাটছে। সবাই মনোযোগ দিয়ে সেদিকেই তাকিয়ে। ক্রমশ শিঙাড়ার রং পাল্টে
বাদামি হয়ে আসছে। হঠাৎ আমার পাশে ফিসফিস করে অচেনা লোকটা আমাদের পাশের বাড়ির সমীর
কাকুকে বলল, “শুনেছেন দাদা, সমাদ্দার বাড়িতে ভূত আজকাল একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে!
হবে নাই বা কেন বলুন, যে ভাবে তাড়াহুড়োতে শ্রাদ্ধ করেছিল... যা দিনকাল পড়েছে না!”
সমীর কাকু কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত
মুখে কড়াই থেকে সদ্য উঠে আসা বাদামি শিঙাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, কিছু বললেন না। আমিও
শিঙাড়ার ঠোঙা নিয়ে সানি রকের দিকে হাঁটা দিলাম।
সামুদার হাতে শিঙাড়ার ঠোঙা বাড়িয়ে দিয়ে সমাদ্দার
বাড়ির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাই। সত্যি বলতে কি, ভূতে আমি বেশ ভয় পাই। ওদের সমীহ করে
চলাই নিরাপদ বলে মনে করি। তাই সানিরক থেকে পোড়ো বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছি। শিঙাড়ার
দিকে মন নেই। লক্ষ করি সমাদ্দার বাড়ির দরজা জানলাগুলো ইদানীং ভেঙে যাচ্ছে, আগে
খেয়াল করিনি। বিবর্ণ বাড়িটার দেওয়াল অশত্থ গাছে ঘিরে ফেলছে। জায়গায় জায়গায় দেওয়াল ফেটে
গেছে। সদ্য শুনে আসা ভূতের হানা দেওয়ার গল্পের প্রভাবে বাড়িটাকে আরও রহস্যময় মনে
হচ্ছে।
শিঙাড়ায় কামড় দিয়ে সামুদা আমাকে বলল, “হঠাৎ
দার্শনিক হয়ে গেলি যে! শিঙাড়া পড়ে থাকবে না কিন্তু, সব উঠে যাবে।”
“সামুদা তুমি ভূতে বিশ্বাস করো?”
“সাডেনলি ভূতেদের কথা মনে পড়ে গেল যে? কাল রাতে দু-এক
পিস দেখে ফেলেছিস নাকি?”
সামুদার কথায় ভয় পেয়ে গেলাম। নিচু গলায় নিতাইদার
দোকানে শুনে আসা ঘটনা বিবৃত করতে সরু চোখে সমাদ্দার বাড়ির দিকে তাকিয়ে সামুদা বলে
উঠল, “আমাদের উপর কিন্তু খ্যাচখেচিয়া বুড়ির বেশ রাগ ছিল। এই গুল্টেটা মাঝে মাঝে
ইচ্ছে করে বুড়ির সঙ্গে মজা করবার জন্য বলে শট মেরে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিত।”
গুল্টে শিঙাড়া খেয়ে শার্টের হাতা দিয়ে মুখে আর হাতে
লেগে থাকা তেল মুছতে মুছতে বলল, “পাঁচ বছর আগে যা করতাম, এখনও পারি। একটা ফুটবল দাও,
পাঠিয়ে দেখাব।”
পক্ক বলে উঠল, “দিনের বেলা মাতব্বরি না দেখিয়ে সন্ধের
সময় করে দেখাস।”
আমি আঁতকে উঠে বললাম, “আমি নেই ওসবে। আমি তাহলে
খেলতেই আসব না।”
সামুদা আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, “দেখেছিস তো,
সায়েন্স না পড়লে ভূতে ভয় হয় কেন?”
পক্ক বলল, “কিন্তু সামুদা আইনস্টাইনও নাকি ভূতে ভয়
পেত?”
“হ্যাঁ, সব ঘটনার পিছনে আইনস্টাইনকে দাঁড় করিয়ে
দিলে যুক্তিটা বেশ পোক্ত হয় বলে মনে করে লোকে। অনেকে আবার আজকাল দাবি করছে আইনস্টাইনের
আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নাকি ভূত তত্ত্বকেও ব্যখ্যা করে,” রায় দেয় সামুদা।
এবার কিছুক্ষণ ভূততত্ত্ব ভার্সেস আইনস্টাইন চলল।
আমি আড়চোখে মাঝেমধ্যে দেখে নিচ্ছি, সমাদ্দার বুড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে চেঁচিয়ে
উঠছে কিনা - যেমনভাবে পাঁচ বছর আগে দুই কোমরে হাত রেখে বলে উঠত, “কোন বাড়ির ছেলে রে
তোরা? বাপ-মা’কে বলে দেব। বল মেরে মেরে আমার সব ফুলের গাছগুলো শেষ করে দিল গা। বল
কেটে রেখে দেব, আর যদি বল মেরেছিস এদিকে।”
শোনা গেল, সমাদ্দার বাড়িতে ভূত ঘন ঘন হানা দিতে
শুরু করেছে। পাড়ায় সে সব ভূতের গল্প ফলাও হয়ে প্রচার হতে লাগল। রাতের
বেলা নাকি লাল নীল আলো জ্বলে ঘরের ভিতর, কাচের জানলা দিয়ে দেখা যায়। রাত বারোটায়
দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিল মহাদেব মুদি। সে নাকি আলোর সঙ্গে
সঙ্গে ভৌতিক আওয়াজও শুনেছে। ভূতের গল্প পাড়া ছাড়িয়ে বেপাড়াতেও প্রচার হয়ে গেল
লোকের মুখে মুখে। আমরা রবিবারে সানিরকে বসে থাকি সে কথাও কী করে জানাজানি হয়ে
গিয়েছিল। স্কুলে বন্ধুরা ভূতের ব্যাপারে খোঁজখবর করা শুরু করল। এমনকি
মাস্টারমশাইরাও বাদ গেলেন না। বাড়ির লোকেরা ভূত-সংবাদ জ্ঞাত হয়ে আমাদের সবার উপর
চড়াও হয়ে বসল। রবিবার সকালেও যেন সানিরকের পথ না মাড়াই, সেই নিয়ে আমার মা
মাথার দিব্যি পর্যন্ত দিলেন। আমরা পাঁচজনে যে যার বাড়িতে বসে বসে, নিতাইদার শিঙাড়া
আর কচুরির শোক পালন করতে করতে, মনে মনে বুক চাপড়াতে লাগলাম।
সমাদ্দার বাড়ির একদিকে ছিল ফাঁকা জমি, আর একদিকে একটা
দোতলা বাড়ি। ভূতের ভয়ে সে বাড়ির ভাড়াটে উঠে গেল আর বাড়িওয়ালা বাক্স
প্যাঁটরা বাঁধাছাঁদা করে কোথায় চম্পট দিল, হদিস পাওয়া গেল না।
এক রবিবার সকালে সামুদা নিজের বাড়িতে আমাদের পাঁচ
জনের মিটিং ডাকল। আরজেন্ট কল শুনে দৌড়লাম। ওদের বাড়িতে ঢুকে দেখি সামুদার মা পিঁয়াজি
আর মশলা মুড়ি মেখে বিরাট এক সানকিতে রেখে দিয়েছেন চারজনের সামনে। সবার মুখ গম্ভীর।
সামুদা আমাকে দেখে বলল, “আয়, আর একটু হলে পিঁয়াজি মিস করতিস।”
পক্ক বলে উঠল, “এটা একটা ভীতুর ডিম। শুধু লম্বাতেই
বেড়েছে। একে বাদ দাও।”
“কেন, আই পি এলের টিম বানাচ্ছিস নাকি?” আমি প্রশ্ন
করি।
“করলেও তোকে নেওয়া যাবে না। ব্যাপারটা আগাগোড়া
ভৌতিক। আমরা খ্যাচখেচিয়া বুড়ির বাড়ি যাচ্ছি ভূত তাড়াতে”, বিল্টু পিঁয়াজিতে কামড়
দিতে দিতে বলে উঠল।
এবার আমি একটু রসিকতা করে বলি, “সে না হয় গেলাম না।
ভূত ধরার কোনও ইচ্ছাই আমার নেই। শুনেছি বিদেশে নাকি ভূত ধরাটা মাছ ধরার মতো সহজ
ব্যাপার। ওরা খপাখপ ভূত ধরে আর বোতলে বন্দি করে। তোমরা বরং ভূতের জন্য বেশ কটা বড়োসড়ো
বোতলের বন্দোবস্ত করে রাখ।”
সামুদা বলল, “দেখ, ভূতের উপদ্রবে আমাদের সানিরক
ডুবতে বসেছে। তাই ভূত না তাড়ালে আর চলছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভূতে বিশ্বাস করি
না। এ ব্যাপারে সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখা উচিত, আদৌ ভূতেরা ও বাড়ির দখল নিয়েছে,
নাকি পুরোটাই গুজব?”
যদিও আমার ভূত অভিযানে বিশেষ সায় ছিল না, তবে
বন্ধুদের যৌথ উদ্যোগে সাড়া না দিয়ে কোণঠাসা হতেও মন চাইছিল না। নিমরাজি হয়েই গেলাম
ভূত অভিযানে। ঠিক হল সেদিন রাতেই হানা দিতে হবে পোড়ো বাড়িতে। ফুটবল মাঠে আমরা জড়ো
হব সবাই রাত দশটায়। সামুদা কলেজে পড়ে বলে ওর উপর পারিবারিক বিধিনিষেধ একটু কম।
আমরা চারজন বাড়িতে বলব, সামুদার কাছে অঙ্ক করতে যাচ্ছি। ফলে কেউ বারণ করতে পারবে
না।
বাড়ি থেকে সামুদার বাড়িতে অঙ্ক করতে যাওয়ার পারমিশন
নিয়ে সমাদ্দার বাড়িকে সামনে রেখে ফুটবল মাঠে বসে চারজন মিলে মশা মারছি। সামুদা তখনও
আসেনি। মোবাইল বেজে গেল, তুলল না। হয়তো আগের দিনের মতো আবার মোবাইল বিগড়েছে। ঘড়িতে
দেখি রাত দশটা বেজে গেছে। পক্ক মাঠে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের
সবচাইতে কাছের গ্যালাক্সির নাম বল দেখি।”
মাঠের ঘাস ছিঁড়ে পক্কর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বিল্টু বলল,
“আবার পণ্ডিতি ফলাচ্ছিস? মশার কামড়ে গায়ের ছালচামড়া উঠে যাবার জোগাড়। তুই যাচ্ছিস
গ্যালাক্সি! যত্ত সব। এদিকে সামুদারও পাত্তা নেই।”
“এত দেরি করলে তো ভূতও খেয়েদেয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে
পড়বে!” মাঠে কাত হয়ে শুয়ে বিবৃতি দেয় গুল্টে।
আমি ভয়ে ভয়ে সমাদ্দার বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম,
সেখানে চাপ চাপ অন্ধকার। অন্ধকারে বাড়িটাকে আরও ভূতুড়ে আর রহস্যজনক মনে হচ্ছে,
দিনের আলোয় যেমন মনে হয় না। আমরা অপেক্ষা করছি রহস্যময় আলোর, যা কাহিনি হয়ে
ডালপালা ছড়িয়েছে গোটা তল্লাটে। অথচ অন্ধকারের বুক চিরে সামান্য আলোর আভাসও
বাড়িটাতে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে আমার বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করছে। গলাটাও কেমন শুকনো
লাগছে। হাতের কাছে জলও নেই যে খানিকটা গলায় ঢেলে তেষ্টা মেটাব। ঠিক তখনই আমার পিঠে কে
যেন হাত রাখল। আমি লাফ দিয়ে “কে রে” বলে চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছি, এক বলিষ্ঠ হাতের
চাপ আমার মুখ বন্ধ করে দিল।
সামুদা চাপা গলায় গর্জে উঠল, “সায়েন্স না পড়লে মানুষ
কীরকম ভীতু হয় দেখতে পাচ্ছি। নাঃ, তোকে না নিয়ে এলেই বোধহয় ভালো হত।”
লজ্জা পেয়ে বোকার মতো বললাম, “নিঃশব্দে তোমাকে আসতে
বলেছিল কে শুনি? আমাকে ভয় দেখানোটাই যদি তোমার একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তবে আর কিছু
করার নেই।”
“ওসব ছাড়। কাজের কথা শোন। এখানে অপেক্ষা করে লাভ
হবে না। আমার পিছনে দু’জন যাবি সামনে দিয়ে। লম্বু তুই আমার সঙ্গে থাক, আর গুল্টে
তুইও আয়। পিছনের গলি দিয়ে বিল্টু আর পক্ক আমার সিটি বাজানোর জন্য অপেক্ষা করবি।
ভূত দেখা দিলে আমি সিটি বাজাব। তখন তোরা পিছনের পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়বি,” সামুদার
গলায় আদেশের সুর। এই না হলে আমাদের পাণ্ডা!
পাঁচিল টপকে সামুদার পিছনে পিছনে আমি আর গুল্টে
সমাদ্দারদের ভূতুড়ে বাড়িতে ঢুকে পড়লাম। ওদের দু’জনের উপস্থিতিতে নিজেকে বেশ সাহসী
বলে মনে হচ্ছে। বারান্দায় না উঠে বাড়ির ডান দিকের ভাঙাচোরা রাস্তাটা ধরল সামুদা।
আমরা ওর পিছু নিলাম সন্তর্পণে।
রাস্তাটা ঝোপঝাড়ে প্রায় ঢাকা পড়ে আছে। পাশের জানলা
দিয়ে আড়চোখে দেখলাম ঘর অন্ধকার। এই ঘরটা ড্রয়িংরুম ছিল মনে হয়। সামুদা আরও এগিয়ে
পিছনের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানেও কাচের জানলা দিয়ে অন্ধকারে কিছুই দেখা গেল
না। সামুদা দাঁড়িয়ে পড়ে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল।
কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। গুল্টের কনুইয়ের
গুঁতো খেয়ে দেখি ঘরের ভিতর একটা বিদ্যুতের মতো আলো এক কোনা থেকে আর এক কোনা
পর্যন্ত ছুটে গেল। বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। তাহলে ভূত এসে গেছে! আর একবার
আলোর নীল রঙের শিখা ঝলসে উঠল। আমি বিল্টুর হাতটা চেপে ধরলাম। সামুদা তীক্ষ্ণ চোখে
ঘরের ভিতরটা পরীক্ষা করছে। ঘরের ভিতর আবারও আলোর দ্যুতি দেখা গেল। সামুদা হাতের ইশারায়
বাড়ির পিছনের দিকে যেতে বলল, বাড়িটাকে বেড় দিয়ে ঘুরে গিয়ে পিছনের দিকে চলে গেল।
আমরা ওকে অনুসরণ করলাম। কী করতে চলেছে বোঝা যাচ্ছে না।
একটা বারান্দা। অনেক জিনিসপত্র ছড়িয়ে আছে সেখানে। সাবধানে
পা ফেলে বারান্দায় উঠে একটা দরজা দেখতে পেলাম। সামুদা ইশারায় সেখানে আমাদের
অপেক্ষা করতে বলে অন্ধকারে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর সিটির আওয়াজ এল।
আমার বুকের মধ্যে পর্যন্ত কারেন্ট খেলে গেল যেন। চমকে উঠে প্রায় পড়ে যেতে যেতে
নিজেকে সামলে নিলাম।
দুদ্দাড়িয়ে বিল্টু আর পক্ক বাড়ির পিছনের বারান্দা
পেরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল সিটির শব্দের দিকে ধেয়ে। বাড়ির ভিতরে কোথাও ধস্তাধস্তির
শব্দ হল। আমরাও পক্কদের পিছনে দৌড় লাগালাম। যেতে যেতে লক্ষ করলাম বাম দিকের
রাস্তাটা জঙ্গল সাফ হয়ে বেশ পরিষ্কার। একটা খোলা দরজা দিয়ে আলো দেখা গেল। ভিতরে
সমাদ্দারদের আর একটা ঘর। ঘরে ঢুকতেই চমক – চেয়ারে দুই হাতে মাথাটা চেপে ধরে বসে
আছে আমাদের অতি পরিচিত ধলুদা - বাজারের মধ্যে ওর একটা স্টেশনারির দোকান আছে। ধলুদার
সামনে সামুদা কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। ধলুদা হঠাৎ কেঁদে উঠে বলল, “কাউকে বলিস
না। বড়ো ভুল হয়ে গেছে রে।”
সামুদা ধমকের গলায় বলে উঠল, “কেন করলি ধলু? এভাবে
কোনও কিছুর সমাধান হয়?” তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওই দ্যাখ ভূতের আলো, আসলে
ওটা টেসলা কয়েল, প্রচণ্ড চার্জ ধরে রাখতে পারে। ঘরের অন্য কোণে রাখা ধাতব চাকতির সঙ্গে
ইলেকট্রিকাল ডিসচার্জ হলে বিদ্যুৎ তৈরি হয়, ঠিক আকাশের মতো। কয়েলটা লাগানো আছে
একটা ইলেকট্রিক সার্কিটের সঙ্গে। যথেষ্ট চার্জ জমা হলেই ধাতব চাকতির দিকে কয়েল তাক
করলে ডিসচার্জ হয়ে আলো জ্বলে ওঠে। সামান্য শব্দও হয়, বাইরে থেকে শোনা যায় না। এই
আলো দেখে লোকে ভাবে ভূত আছে। ধলু ওর দোকানে স্টেশনারি জিনিসপত্র বিক্রির পাশাপাশি
স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য সায়েন্সের প্রজেক্ট বানায় তোরা জানিস। সেই বিদ্যে কাজে
লাগিয়ে ভূত দেখাচ্ছে।” এবার সামুদা ধলুদার দিকে ফিরে বলল, “ধলু, যা তুই বাড়ি যা, অনেক
রাত হয়ে গেছে। কেউ জানতে পারবে না, যা। কাল আমার সঙ্গে দেখা করিস বিকেলে।”
সামুদার কথা শেষ হতে না হতে ধলুদা এক ছুটে দরজা
দিয়ে বাইরে। পিছনে পড়ে রইল তার যন্ত্রপাতি। আর সামুদার নির্দেশে একটাও প্রশ্ন না
করে আমরা এক বুক বিস্ময় বুকে জমিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
পরদিন সন্ধের দিকে এক ছুটে সামুদার বাড়িতে। সামুদা
বাড়িতে ফিরল প্রায় ঘণ্টাখানেক পর। জমিয়ে বসে সামুদার মায়ের হাতে ভাজা মুড়ি আর
বাদামভাজা সহ যা শুনলাম, তা সংক্ষেপে বলি। ধলুদা একসময়ে সমাদ্দার বাড়িতে মাসিমার
ফরমায়েস খাটত। একা থাকতেন মাসিমা। তাই এটা সেটা এনে দেওয়ার একটা লোক না হলে তার
চলত না। ধলুদা আবার কেমন যেন লতায়-পাতায় ওদের আত্মীয় হত।
এই পাড়ার এক প্রপার্টি ডিলার প্রায়ই নাকি মাসিমাকে
প্রস্তাব দিত বাড়ি ভেঙে একটা বহুতল বাড়ি বানাবার জন্য। মাসিমা রাজি হননি। উনি
মারা যাবার পর, নিশাদির বিদেশে থাকার সুযোগ নিয়ে, সেই প্রপার্টি ডিলার নাকি পুরো
বাড়িটার দখলদারি নিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করে। ধলুদা কী করে যেন দোকানে কানাঘুষোয় সে
কথা জেনে যায়। তারপর বদমাইশ লোকটাকে বাড়ি হাতানোর থেকে নিরস্ত করবার জন্য ভূতের ভয়
দেখানোর পরিকল্পনা করে বসে। প্রশ্ন হচ্ছে সামুদা এই ভূতের ব্যাপার জানল কী করে।
আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর শোনা যাক সামুদার মুখ থেকে।
“যেদিন লম্বু আমাকে ভূতের খবর দিল, সেদিন দুপুরের
দিকে আমি একাই আবার সানিরকে আসি। মাথার মধ্যে ভূত রহস্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। সমাধান
করতেই হবে, হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না। রবিবার দুপুরের দিকে এদিকটা বেশ ফাঁকাই
থাকে। এদিক ওদিক দেখে টুক করে সমাদ্দারদের বাড়ি ঢুকে পড়ে সরেজমিন তদন্তে নেমে পড়ি।
দেখি বাড়িটা ঘিরে সিমেন্ট বাঁধানো একটা রাস্তা, কিন্তু ডান দিকের চাইতে বাঁ দিকের
রাস্তাটা বেশি পরিষ্কার। পিছন দিকে গিয়ে দেখি ঝোপঝাড় থাকলেও জায়গায় জায়গায় কারও
পায়ের ছাপের চিহ্ন। ভূতেদের তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে জঙ্গল পরিষ্কার করে যাতায়াত
করবে। তার মানে যে বা যারাই হোক, তারা দু’পেয়ে জন্তু।
“যাই হোক, বাড়ির পিছন দিকে গিয়ে দেখি একটা দরজা যেন
আধখোলা। ধাক্কা দিতে সেটা পুরো খুলে গেল। ঢুকে দেখলাম খালি ঘরটাতে একটা লোহার
চাকতি, আর ইলেকট্রিকের তার। মানে ভূত কখনোই নয়, একেবারে মানুষের কারবার। এর পিছনে
যে ধলুর হাত আছে সেটা অনুমান করলাম, যখন আমি ঘর তল্লাসি করে পেলাম একটা পিচবোর্ডের
টুকরো, হয়তো মেঝেতে বসার জন্য ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ভূত একটা মস্ত ভুল করে
ফেলেছিল – পিচবোর্ডের উপর তার দোকানের বিজ্ঞাপন সাঁটা ছিল, সেটা লক্ষ করেনি। তারপর
ওকে হাতেনাতে ধরব বলে তোদের সাহায্য নিলাম। তবে ও যে একাই এই কাজে নেমেছিল, সেটা
বুঝিনি। যদি দল পাকিয়ে নেমে থাকে, সেই ভেবে একটু বেশি সতর্ক হতে হয়েছিল।”
“তাহলে যথারীতি তোদের সানিরকের আড্ডা চলবে বলছিস?”
পিছন থেকে কখন সামুদার মা, মানে আমাদের মাসিমা এসে দাঁড়িয়েছেন, লক্ষ করিনি।
_____
ছবিঃ অতনু দেব
ছবিঃ অতনু দেব
হিপ হিপ হুররে
ReplyDeleteThree cheers for Arupda.. Hip hip hurrah... Ekdom chotobelay phire gelam dada.. 👍👍
ReplyDeleteকে গো? নামটা বলো!
Delete