[নিচের দীর্ঘ ইমেলটা এসেছে একেনবাবুর কাহিনিকার
বাপিবাবুর কাছ থেকে। একটা ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলতে একেনবাবু এখন কলকাতায়। বাপিবাবু
আর প্রমথবাবু এসেছেন ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে। ওঁদের নিউ ইয়র্কের আড্ডাটা এখন
একেনবাবুর বাড়িতে বসছে,
তবে শুধু শনিবার। যাঁরা একেনবাবুর কাহিনির সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা
প্রমথর গার্ল-ফ্রেন্ড ফ্র্যান্সিস্কাকে চিনবেন।]
বাপিবাবুর ইমেল -
শনিবার সকালে একেনবাবুর
বাড়িতে আড্ডা দিচ্ছি,
প্রমথ ফ্র্যান্সিস্কাকে নিয়ে এসে ঢুকল।
“হোয়াট এ প্লেজেন্ট
সারপ্রাইজ!” আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, “কবে এলে তুমি? প্রমথ ব্যাটা কিছু বলেনি তো!”
ফ্র্যান্সিস্কা এগিয়ে এসে
আমাকে হাগ করে বলল,
“ও কিছুই জানত না। দিল্লিতে আমাদের একটা পেপার প্রেজেন্ট করার কথা এই সোমবার, তবে
আমার আসাটা স্থির ছিল না। শেষ মুহূর্তে যখন জানলাম আমি আসছি, ঠিক করে ফেললাম
কলকাতায় উইক-এন্ডটা কাটিয়ে যাব।”
ফ্র্যান্সিস্কাকে দেখে
একেনবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছেন। আনন্দে আপ্লুত। মাথা দুলিয়ে হ্যান্ডশেক করতে করতে
বললেন, “গুড
ডিসিশন ম্যাডাম, ভেরি
গুড ডিসিশন।”
আমাদের হইচই শুনে একেনবউদি
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
“আমার ফ্যামিলি, ম্যাডাম।”
ফ্র্যান্সিস্কা একেনবউদির
অনেক গল্প আমাদের কাছ থেকে শুনেছে। বউদির হাত ধরে বলল, “সো প্লিজ টু
মিট ইউ ফাইনালি। আমি ফ্র্যান্সিস্কা।”
“তোমার কথা আমি অনেক শুনেছি,”
আমাকে অবাক করে দিয়েই পরিষ্কার ইংরেজিতে কথাগুলো বললেন বউদি।
একটু বাদেই বউদি ছুটলেন
রান্নাঘরে, নিশ্চয়
ফ্র্যান্সিস্কা আর প্রমথর খাবারের বন্দোবস্ত করতে। অতিথি এলে বউদি ওই কাজটি নিজেই
করবেন। ফ্র্যান্সিস্কাও পিছন পিছন যাবার চেষ্টা করল, কোনও মতে ওকে
নিরস্ত করা গেল। একেনবাবুই তাতে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নিলেন, “ইন্ডিয়ান
কুকিং-রুম ইজ ভেরি কনফিউজিং প্লেস ম্যাডাম।”
“উনি বলতে চাচ্ছেন, কিচেন,”
প্রমথ বিশদ করল।
“আমি বুঝতে পারছি ডিটেকটিভ কি
বলতে চাইছে। আমার কাছে তো মনে হয় কুকিং রুম কথাটাই মোর অ্যাপ্রোপ্রিয়েট – যেমন, ডাইনিং রুম,”
ফ্র্যান্সিস্কা একেনবাবুকে খুব পছন্দ করে, আর সব সময়ে সাপোর্ট করে।
“থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম। আসলে
কলকাতায় এলে আমার ইংরেজিগুলো সব গুলিয়ে যেতে থাকে।”
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি। শুধু
গোয়েন্দাগিরির ক্ষমতা গুলিয়ে না গেলেই হল, এদিকে তো এখানে একটা এজেন্সিও খুলতে বসেছেন!”
খোঁচা না দিয়ে একটা কথাও প্রমথ বলতে পারে না।
“ডোন্ট বি সিলি!” প্রমথকে মৃদু
শাসন করল ফ্র্যান্সিস্কা, “আমি শিওর ডিটেকটিভের মাইন্ড ইজ শার্প অ্যাজ এ ট্যাক।
আচ্ছা ডিটেকটিভ, তুমি
কী করে এতো এতো কমপ্লেক্স রহস্য সমাধান কর বল তো?”
“কারণ ম্যাডাম, আমি
লজিক্যাল পাজল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি আর খুব ডিটেকটিভ গল্প পড়ি। সেখান থেকে বিস্তর
আইডিয়া পাই।”
একেনবাবুর সিরিয়াস মুখ দেখে
বোঝার জো নেই যে উনি রসিকতা করছেন! ইদানীং খেয়াল করছি কলকাতায় নিজের ডেরায় ফিরে
মাঝে মাঝেই এরকম দুয়েকটা মজাদার বাণী ছাড়ছেন। ফ্র্যান্সিস্কার কয়েক মুহূর্ত লাগল
ব্যাপারটা ধরতে, তারপর
এক গাল হাসল।
“ইউ আর জোকিং, রাইট?”
“আসলে ম্যাডাম, গোয়েন্দাগিরি
হল নানান যুক্তি আর খুঁটিনাটি জিনিসের কারবার… খুব বোরিং কাজ।”
“গোয়েন্দা গল্পের ব্যাপারটা
না হয় বুঝলাম, কত
রকম ভাবে একটা মানুষকে খুন করা যায় বা চুরি করা যায়, কিন্তু লজিক্যাল পাজ্ল এল
কোত্থেকে?” আমি
জিজ্ঞেস করলাম।
“বলছি স্যার,” একেনবাবু
একটু মাথা চুলকোলেন, “আচ্ছা, ম্যানহাটনের সেই হোমলেস লোকটার খুনি ধরিয়ে দেবার গল্পটা মনে
আছে?”
“কার কথা বলছেন?”
“ওই যে স্যার, যে লোকটা
কিছুদিন আগে হাডসন রিভার সাইড পার্কে এক মহিলাকে দেখেছিল কাউকে ধাক্কা দিয়ে জলে
ফেলে দিচ্ছে! লোকটা অবশ্য একটু নেশার ঘোরে ছিল স্যার, তাই ঠিক
বোঝেনি লোকটিকে খুন করা হচ্ছে...”
ফ্র্যান্সিস্কা উত্তেজিত হয়ে
বলল, “আরে, এটা তো গত
জুলাই মাসের ঘটনা, কেসটা
আমি পত্রিকায় পড়েওছি! একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে খুনের জন্য ধরা হয়েছিল, তাই না?”
“ঠিক ম্যাডাম। মৃতদেহটা পুলিশরা
যখন হাডসন নদী থেকে উদ্ধার করছে, তখন খেয়াল করল কাছেই পার্কের লম্বা বেঞ্চিতে একটা হোমলেস
লোক শুয়ে ঘুমোচ্ছে। টহলদার পুলিশের একজন বলল, লোকটা নাকি মাঝে মাঝেই ওখানে এসে
শুয়ে থাকে। ওর কাছ থেকে কি কিছু খবর পাওয়া যাবে? কিন্তু
এবারই হল ঝামেলা ম্যাডাম,
লোকটা নিরক্ষর আর বোবা। ঘুম ভেঙ্গে উঠে বডিটা নদী থেকে তোলা হচ্ছে দেখে
উত্তেজিত হয়ে হাত-পা নাড়তে শুরু করল, কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না কী বলতে
চাইছে! ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট ধৈর্য ধরে ওর হাত-পা নাড়া দেখে শেষে বুঝলেন সম্ভবত
একজন মেয়ের কথা বলছে,
যে ধাক্কা দিয়ে কাউকে জলে ফেলেছে!
‘তুমি কি বলতে চাইছ, একজন মেয়ে লোকটাকে
ধাক্কা দিয়ে হাডসন নদীতে ফেলেছে আর তুমি দেখেছ?’
লোকটা ঘন ঘন মাথা নাড়ল।”
“ও মাই গড! তারপর?”
“এটুকু বোঝা গেল ম্যাডাম,
একজন মেয়ে সম্ভবত খুনের সঙ্গে জড়িত, কিন্তু মুশকিল হল এই নিরক্ষর বোবা
হোমলেস লোকটির কাছ থেকে আর কী পাওয়া যেতে পারে! এদিকে বিকেল চারটেতে ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্টকে যেতে হবে একটা গার্ডেন টি-পার্টিতে। ঘণ্টা কয়েকের পার্টি, কিন্তু ওঁর
না গিয়ে উপায় নেই, কারণ ম্যাডাম স্টুয়ার্ট যাচ্ছেন। আরেকজন
যিনি আসবেন শুনেছেন তিনি হলেন খ্যাতনামা প্রফেসর ত্রুফো। প্রফেসর
তিরিশ বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন আমেরিকায় হ্যান্ডশেক করার প্রচলন কতটা কমছে! সেটা ইন্টারেস্টিং, নিশ্চয় এই পার্টিতেও তিনি ডেটা কালেকশন করবেন!”
“যতসব গাঁজাখুরি ব্যাপার,”
প্রমথ বক্রোক্তি করল, “ফুল অফ ননসেন্স!”
“তোমার তো কেমিস্ট্রি ছাড়া সব
কিছুই ননসেন্স!” ফ্র্যান্সিস্কা ধমকাল প্রমথকে।
“ননসেন্স না তো কী? কে ক-জনকে
হ্যান্ডশেক করছে জেনে লাভটা কী?”
প্রত্যুত্তরে ফ্র্যান্সিস্কা
বোধহয় কিছু বলতে যাচ্ছিল।
একেনবাবু তার আগেই উত্তর
দিলেন, “লাভ-ক্ষতি
জানি না স্যার, কিন্তু
স্টুয়ার্ট সায়েবকে যেতেই হবে, মুখ দেখাবার জন্য হলেও... ম্যাডামের হুকুম। ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্ট ভবঘুরেটাকে সঙ্গে নিলেন, উদ্দেশ্য পার্টি শেষ হলে ওকে নিয়ে
আবার হাডসন রিভার ড্রাইভে আসবেন, দেখাতে বলবেন ঠিক কোথায় ধাক্কা দিয়ে জলে ফেলা হয়েছিল… সেখান থেকে যদি খুনের কোনও ক্লু পাওয়া যায়। সঙ্গে
একজন ডেপুটিকেও নিলেন যখন উনি পার্টিতে মুখ দেখাতে যাবেন তখন ভবঘুরের ওপর নজর
রাখতে।
“পার্টিটা কাছাকাছি একটা
প্রাইভেট পার্কে হচ্ছিল। মিসেস স্টুয়ার্ট ইতিমধ্যেই এসে গেছেন। গাড়িটা রাস্তায়
দাঁড় করিয়ে, ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্ট ঢুকলেন পার্কে। উনি ঢোকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এলেন প্রফেসর ত্রুফো আর
তাঁর কম-বয়সি সুন্দরী স্ত্রী। পরপরই
অন্যান্য অভ্যাগতরা। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট দেখলেন এসেছেন
মোট পাঁচটি দম্পতি। পার্টিতে এলে যা হয়, অনেকেই ‘হায়’, ‘হ্যালো’ বলছেন, কেউ কেউ হ্যান্ডশেক
করছেন। সেই পর্ব শেষ হতে বেশি সময় লাগল না। তখন প্রফেসর পকেট থেকে নোটবই বার করে
জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন কারা কত জনকে পার্টিতে এসে হ্যান্ডশেক করেছেন। শূন্য থেকে
আট সবগুলো সংখ্যাই ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট শুনলেন। অর্থাৎ, যিনি কাউকেই
হ্যান্ডশেক করেননি তিনি শূন্য, যিনি একজনকে করেছেন তিনি এক, এই ভাবে।
ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের মাথায়
অবশ্য ঘুরছে খুনি খুঁজে বার করার চিন্তা। কোনও মতে দু-চার
মিনিট এঁর ওঁর সঙ্গে কথা বলে তিনি মিসেস স্টুয়ার্টকে ফিসফিস করে বললেন, ‘আমার পক্ষে
আজ সময় দেওয়া অসম্ভব। একজন উইটনেস গাড়িতে বসে আছে, তাকে নিয়ে ক্রাইম সিনে যেতে
হবে।’ মিসেস স্টুয়ার্ট ব্যাপারটা বুঝলেন।
“পার্কের একেবারে পাশে
গাড়িটা। পুলিশের গাড়ি হওয়ার এই সুবিধা, যেখানে খুশি গাড়ি পার্ক করা যায়। পার্টি
থেকেই ক্যাপ্টেন দেখতে পাচ্ছিলেন গাড়িতে বসে ভবঘুরেটা উত্তেজিত হয়ে হাত-পা নাড়ছে। ডেপুটি
বোধহয় বিরক্ত হয়েই লোকটাকে গাড়িতে আটকে রেখে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্টকে দেখে ডেপুটি বলল, ‘গাড়ির ভিতর বসে ভীষণ চেঁচাচ্ছিল, বারবার ‘শাট আপ’
বলেও ফল হচ্ছিল না। তাই ওকে গাড়িতে আটকে রেখে দাঁড়িয়ে আছি।’
ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টকে দেখে
ভবঘুরে একটু শান্ত হল। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট গাড়িতে উঠে ডেপুটিকে বললেন হাডসন রিভার
ড্রাইভ ধরতে। ভবঘুরে যেখানে থামতে বলবে সেখানে থামাতে। গাড়ি চলছে, ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্ট দেখলেন ভবঘুরে বার বার চারটে আঙুল দেখাচ্ছে।
‘ফোর?’
জোরে জোরে মাথা নাড়ল ভবঘুরে।
‘ফোর হোয়াট?’
হঠাৎ ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের
হাতটা চেপে ধরে ঝাঁকাতে শুরু করল।
‘কী করছ!’
আবার চার আঙুলে ফোর সাইন।
এতো আচ্ছা ঝামেলা! আবার
জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফোর
হোয়াট?’
আবার হাত ধরে ঝাঁকানি।
এবার বুঝতে পারলেন ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্ট।
‘হ্যান্ডশেক?’
ঘন ঘন মাথা নাড়ল ভবঘুরে।
অর্থাৎ, ‘হ্যাঁ।’
‘যে মহিলা পার্টিতে চারবার
হ্যান্ডশেক করেছে?’ ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্ট মনে হল বুঝতে পারছেন ভবঘুরে কী বলতে চাইছে।
এবার প্রবলভাবে মাথা ঝাঁকানি, ‘হ্যাঁ।’
‘ওকে, ওকে,’ বলে
শান্ত করলেন ভবঘুরেকে।
কিন্তু পার্টিতে কে বলেছিলেন
চারবার হ্যান্ডশেক করেছেন?
ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট মনে করতে পারলেন না। প্রফেসর ত্রুফো কারোর নামই লেখেননি,
শুধু সংখ্যাগুলো লিখেছেন। কিন্তু প্রথম কাজ, কোথায় লোকটাকে জলে ফেলা হয়েছিল
তাড়াতাড়ি সেটা জানা। কিছু এভিডেন্স যদি ওখান থেকে উদ্ধার করা যায়। ভবঘুরেকে বললেন যেখানে
লোকটাকে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল গাড়িটা সেখানে পৌঁছলেই যেন জানায়।
হাডসন রিভার ড্রাইভ দিয়ে যেতে
যেতেই ভবঘুরে এক জায়গায় ভীষণ ভাবে পা দাপিয়ে হাত নাড়তে লাগল। গাড়ি থামল। নদীর একদম
পাশে একটা বেঞ্চ। আর এর মধ্যেই ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বুঝে গেছেন, কার কথা ওই
ভবঘুরে বলতে চাইছিল। মহিলাটি মিসেস ত্রুফো।”
“তার মানে? কী করে
বুঝলেন?” আমি
জিজ্ঞেস করলাম।
“সেটাই তো ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্ট যুক্তি দিয়ে বার করলেন স্যার। শুধু মনে রাখবেন, স্বামী-স্ত্রীরা
নিজেদের মধ্যে হ্যান্ডশেক করেন না। আর ‘শূন্য’ থেকে ‘আট’ সবগুলো সংখ্যাই প্রফেসর
পেয়েছিলেন।”
“ননসেন্স!” প্রমথ বলল।
“ননসেন্স কেন হবে? ডিটেকটিভ, তুমি একটু
বুঝিয়ে বল তো!” ফ্র্যান্সিস্কা অনুরোধ করল।
“ম্যাডাম, ক্যাপ্টেন
স্টুয়ার্ট চিন্তা করলেন এইভাবে। স্বামী-স্ত্রী মিলে মোট দশজন ছিলেন। তাহলে যিনি
একবারও কারোর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেননি, তাঁর পার্টনার নিশ্চয় আটবার
হ্যান্ডশেক করেছেন।”
“সেটা কেন হবে?”
“কারণ ম্যাডাম, কারোর
পক্ষেই আটজনের বেশি লোকের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা সম্ভব নয়। মোট দশজন লোক, পার্টনারের
সঙ্গে কেউ হ্যান্ডশেক করেন না, আর নিজের সঙ্গেও নয়। এবার ভেবে দেখুন ম্যাডাম, এঁদের কেউ
যদি আটজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন, তাহলে তাঁর পার্টনার ছাড়া অন্যরা
সবাই অন্তত এক জনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছেন। সেখান
থেকেও আট আর শূন্য পাওয়া গেল।”
“বুঝলাম, তারপর?”
“এবার বলি ম্যাডাম, সাত আর এক –
এই দুটো সংখ্যা কোত্থেকে পাওয়া যায়। ‘আট’ আর ‘শূন্য’ দম্পতিকে হিসেব থেকে বাদ দিয়ে
দিন। বাকি রইলেন আটজন। এখন ঠিক আগের মতো করেই হিসেব করুন। এদের মধ্যে একজন আরও
ছ-জনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে পারেন। ছ-জন, কারণ তিনি নিজের পার্টনারের সঙ্গে
হ্যান্ডশেক করতে পারেন না,
নিজের সঙ্গেও নয়। আর যেহেতু তিনি এর আগে একটা হ্যান্ডশেক করেছেন, ওঁর মোট
হ্যান্ডশেকের সংখ্যা হবে সাত। ওঁর পার্টনারও আগে একবার হ্যান্ডশেক করেছেন, তাহলে তাঁর
সংখ্যা হবে এক। তাহলে আমরা পেলাম আট, সাত, এক, আর শূন্য – এই চারটে সংখ্যা। এবার
হিসেব থেকে ‘সাত’ আর ‘এক’-কে বাদ দিন। তাহলে বাকি থাকবেন ছ-জন। একই লজিক ব্যবহার
করে এঁদের মধ্যে পাবেন চার আর শূন্য হ্যান্ডশেক করা লোক। আর এই দলে সবাই আগে
দুজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছেন। সেই সংখ্যা যোগ করে পাওয়া যাবে ছয় আর দুই। তাহলে পাওয়া গেল আট, সাত, ছয়, দুই, এক, আর শূন্য।
এবার ‘ছয়’ আর ‘দুই’-কেও বাদ দিন ম্যাডাম, তাহলে থাকল মোট চারজন। এঁদের থেকে
পাবেন দুই আর শূন্য হ্যান্ডশেক করা লোক। আর এঁরা সবাই আগে তিনজনের সঙ্গে
হ্যান্ডশেক করেছেন, তাহলে
ওঁদের হ্যান্ডশেকের সংখ্যা হবে পাঁচ আর তিন। অর্থাৎ আমরা আট সাত ছয় পাঁচ, তিন, দুই এক আর
শূন্য পেয়ে গেলাম। এখন ‘দুই’ আর ‘শূন্য’-কে বাদ দিলে থাকল শুধু দুজন। তাঁরা
নিজেদের মধ্যে হ্যান্ডশেক করতে পারবেন না, কারণ তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। আর এঁরা
দুজনেই ইতিমধ্যে চারজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছেন। এখন যেহেতু প্রফেসর ত্রুফো এক
থেকে আট সবগুলো সংখ্যাই ন-জনকে প্রশ্ন করে পেয়েছেন, তাহলে তিনি নিজে আর তাঁর স্ত্রী
চারজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছেন, ঠিক কিনা!”
“ওহ মাই গড! এই ভাবেই খুনি
ধরা পড়েছিল?” ফ্র্যান্সিস্কার
চোখে-মুখে মুগ্ধ বিস্ময়।
“ঠিক তা নয় ম্যাডাম, তবে মিসেস
ত্রুফোই খুনটা করেছিলেন। কিন্তু সেটা বার করা হয়েছিল প্রায় চল্লিশ জনকে ইন্টারভিউ
করে, তাদের
মধ্যে জনা দুই ভবঘুরেও ছিল। তবে প্রত্যক্ষদর্শী কেউই ছিল না। কেসটা খাড়া করা হয়
অজস্র কল রেকর্ড পরীক্ষা করে। মৃতের পকেটে মোবাইল ছিল, জলে ডুবে
ভিজে গেলেও, সিম
থেকে বেশ কিছু ছবি উদ্ধার করা গিয়েছিল, তার অনেকগুলোতেই মিসেস ত্রুফো ছিলেন।
মিসেসের গাড়িতে কয়েকটা মাথার চুল পাওয়া গিয়েছিল, ফরেনসিক অ্যানালিসিসে সেটার মৃতের
চুল ম্যাচ করেছিল। মোট কথা,
পুলিশদের অনেক বোরিং কাজ করতে হয়। সেগুলো লিখলে কি কেউ পড়বে?”
“কিন্তু, ইনভেস্টিগেশন
শুরু তো হয়েছিল সুন্দর একটা পাজল দিয়ে,” ফ্র্যান্সিস্কা বলল।
“ওটা বানানো ম্যাডাম, একটা বাংলা
বইয়ে পড়েছিলাম।”
“তাই বলুন, খুব
চেনা-চেনা লাগছিল,” প্রমথ বলে উঠল, “কিন্তু সে নিয়ে কিছু বললেই তো ফ্র্যান্সিস্কা
চেঁচামেচি করত আপনাকে বাধা দিচ্ছি বলে!”
“ডোন্ট বি সিলি!”
এসব কথা-বার্তার মধ্যেই লুচি, বেগুনভাজা, চা আর
মিষ্টি এসে হাজির।
সেদিকে তাকিয়ে ফ্র্যান্সিস্কা
বলল, “লুকস
লাইক হোয়াইট পুরি।”
_____
ছবিঃ স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
খুব ভালো লাগল পড়ে।
ReplyDeleteআচ্ছা, এতে কি মাইশোর পাকটা ঢোকানো যেত না? লুচি উইদ মাইশোর পাক খারাপ কি?
ReplyDeleteবেশ বেশ।
ReplyDelete