|
অজয় |
শান্তিনিকেতনঃ কবিগুরু, খোয়াই, জঙ্গল
আর রেলের সেতু
বাবিন
“খুব একা একা ঘোরার বাতিক
হয়েছে, তাই না?” বুবুন এবার ফুঁসে উঠল, “চলবে না! মেয়ের টার্ম টেস্ট খতম, আমিও
যাব!”
এই ভয়টাই করছিলাম।
বেশ কিছুদিন ধরে একলা একলাই কয়েকটা ছোটোখাটো ট্যুর করে ফেলেছি।
ভাবছিলাম, কবে বলে যে, ‘আমাকেও নিয়ে
চল।’ আসলে নিয়ে যেতে আমার কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু
একলা একলা যত সহজে ঘোরা যায়, সঙ্গে দু-একজন থাকলে তত স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করা যায় না।
তাদের খাওয়াদাওয়া, স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে খেয়াল রাখতে রাখতে আমার ভাবনাচিন্তার
দফারফা হয়ে যায়। তার ওপর মেয়েরা মন্দিরে গেলেও টিপটপ হয়ে যেতে
চায়। সাজুগুজুতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু তার
জন্য এত্ত সময় ব্যয় করা আমার পক্ষে রীতিমতো বাহুল্য। তাই
চেষ্টা করি একা একাই বেড়িয়ে পড়তে। কিন্তু
এবার আর রক্ষা পাওয়া গেল না। বুবুন ঝুলে
পড়ল আমার সঙ্গে।
কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে গেলে
আমি চতুর্শ্চক্র যানে মোটেই চাপতে চাই না। মোটরবাইকে
ঘুরতেই বেশি পছন্দ করি। প্রকৃতিটাকে
আরও বেশি কাছে থেকে অনুভব করা যায়। কিন্তু
আমার পছন্দের ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ-এর ওপর বুবুনের একরোখা বিতৃষ্ণা আছে।
খুব উঁচু এই বাইকে চেপে ও ভীষণ অস্বস্তি বোধ করে।
তার ওপর রাস্তা প্রায় ষাট কিলোমিটারের। তাই হুকুম
হল তড়িঘড়ি একটা হিরো কোম্পানির সাদাসিধা, ভদ্রস্থ গোছের মোটর সাইকেল কিনে ফেলার। আমিও
বাধ্য ছেলে, অন্তত বুবুনের কাছে। ও ক্ষেপলে
আমার লেখালিখি সব চুলোয় যাবে! জো হুকুম! এইসব সাতসতেরো ঝক্কি সেরে অবশেষে এক শুক্রবার
‘দুর্গা দুর্গা’ বলে বেরিয়ে পড়লাম বোলপুর-শান্তিনিকেতনের উদ্দেশে।
শহর বর্ধমান থেকে পশ্চিমদিকে
একশো আট মন্দির ছাড়িয়ে, তালিত রেলগেট পেরিয়ে গুসকরা, ভেদিয়ার পথে এগিয়ে চললাম। দু’দিকে
সবুজ ক্ষেত। কোথাও হলুদ সর্ষেফুল ফুটেছে।
কোথাও বা বাহারি ফুলের চাষ। গাঁদা,
ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার বাগান দেখে বারে বারে এগিয়ে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলছি।
মনে হয় এখানেই দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে এই ফুলের সৌন্দর্য চোখ ভরে নিয়ে যাই। শুধুই
কি ফুল? ফুলকপির এমন বাহার শহরে কাঁহা মিলবে? কচি কচি পেয়াঁজকলি আর ধনেপাতাও যে এত
সুন্দর হতে পারে সবজি বাজারে দাঁড়িয়ে আমি কোনদিনও আন্দাজ করতে পারিনি!
বুবুনের আবদারে বেশ কয়েকবার
দাঁড়াতে হল রাস্তার পাশে। অগুনতি সেলফি তোলা হল। খানিক
পথ যেতে না যেতেই বুবুনের বায়না শুরু হল, “খিদে পেয়ে গেছে!”
অগত্যা দাঁড়াতে হল গুসকরার
কাছে একটি দোকানে। একেবারেই সাদামাটা গ্রাম্য বিপণি। মাটির
দেয়াল, খড়ের ছাউনি। বেঞ্চি পাতা গোটাদুয়েক।
গ্রামের মানুষদেরই আনাগোনা। আমাদের
শহুরে মানুষদের দেখে সসম্মানে তাঁরা আসন ছেড়ে বসতে দিলেন। দোকানি
সযত্নে শালপাতার থালায় মটরশুঁটির কচুরি, ছোলার ডাল আর ল্যাংচা এগিয়ে দিলেন। জলযোগ
সারতে সারতে আলাপ জমালাম দোকানির সঙ্গে।
“বোলপুর আর কতদূর এখান থেকে?”
“তা প্রায় সাতাশ কিলোমিটার
খানেক হবে।”
বুঝলাম, আমরা প্রায় অর্ধেক
রাস্তা এসেছি। দোকানি আন্দাজ করেছেন আমরা ঘুরতে যাচ্ছি।
হাসিমুখে খানিকটা উপযাজক হয়েই আমাকে বলে উঠলেন, “যদি কিছু মনে না করেন তো একটা কথা
বলি।”
আমি হামলে পড়লাম, “বলুন বলুন
মশাই, আমরা তো শুনতেই চাই!”
বেশ কয়েকবার গ্রাম বাংলায়
ঘোরাঘুরির সূত্রে লক্ষ করেছি, স্থানীয় মানুষদের হাজার কথার মধ্যে থেকে অনেক কাজের
কথা পাওয়া যায় যেটা সেই ভ্রমণকে বেশ মধুর করে তোলে।
তাই দোকানি যখন নিজের থেকেই কিছু বলতে চাইছেন সেটা তো উপরি পাওনা!
উনি হেসে বললেন, “আপনারা
নিশ্চয়ই শান্তিনিকেতন ঘুরতে চলেছেন?”
আমি সায় দিলাম।
“আমি বলি কী, আপনারা শান্তিনিকেতন
নিশ্চয়ই যাবেন, তবে আগে বোলপুরের আশেপাশের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখে নিলে বেশি
আনন্দ পাবেন। এই যেমন ধরুন বল্লভপুর ইকো ট্যুরিজম পার্ক,
ডিয়ার পার্ক, কঙ্কালীশ্বরীর কালীবাড়ি, কোপাই নদী এইগুলো অনেকেই দেখেন না।”
আমি সোল্লাসে বলে উঠি, “ধন্যবাদ
দাদা, ধন্যবাদ! আমি তো তাইই চাই। যেখানে
বেশিরভাগ মানুষ যেতে চায় না, আমি সেগুলোকেই আমার ভ্রমণ তালিকায় অগ্রাধিকার দিয়ে
থাকি।”
ভদ্রলোকের সঙ্গে খানিক আলাপ-আলোচনা
করে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য স্থির করে আবার বাইকে উঠে পড়লাম। আধঘন্টাটাক
চলার পর ভেদিয়া পেরিয়ে একটি রেলওয়ে আন্ডারপাস পার করে এগিয়ে চললাম অজয় সেতুর দিকে।
পুরো রাস্তাটিই অত্যন্ত ভালো বললে খুব একটা ভুল হবে না।
মাঝে মধ্যে দু-এক জায়গায় সেতু মেরামতির জন্য অল্প একটু জায়গা সাবধানে চালাতে হয়েছে।
বাকি সমস্ত রাস্তাটাই চমত্কার! এই রাস্তায় চলার পথে সুলভ কমপ্লেক্স খুব একটা পাবেন
না, কিন্তু প্রায় প্রতিটি পেট্রোল পাম্পেই বিনা পয়সায় চমত্কার শৌচব্যবস্থার সুবিধা
আছে যেটা কিনা লম্বা পথ পাড়ি দেবার জন্য ভীষণ দরকারি।
অজয়ের সেতুর উপর এসে কেউ যদি
গাড়ি দাঁড় না করান তাহলে বলতে হবে, হয় তিনি নিত্য এই জায়গা দিয়ে যাতায়াত করেন, রোজ
এই সৌন্দর্য দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, নইলে নিতান্তই বেরসিক মানুষ! সেতুর উপর
পায়ে চলা পথ ঘেঁষে মোটর বাইক দাঁড় করিয়ে আমরা সেতুর রেলিংয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।
অপূর্ব! দিগন্ত বিস্তৃত
সোনালি বালুকাবেলা আর তার ফাঁক দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে অজয়! নামটি পুরুষালি,
মেয়েলি হলে বলতাম তন্বী! জলের স্রোতের দাগ দেখে মনে হচ্ছে যেন কত শত কালের সহস্র
মানুষের পদচারণার চিহ্ন বুকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলেছে।
ডানদিকে অর্থাৎ, পূর্বদিকে
চেয়ে দেখি লালরঙা দীর্ঘ এক সেতু। তার ওপর
পাতা দুটি রেলের লাইন। বুঝলাম, এই পথেই বর্ধমান থেকে
শান্তিনিকেতন ভায়া নিউজলপাইগুড়ি পাড়ি দেয় রেলের গাড়ি।
কিছুদিন আগেই আমি গিয়েছিলাম এর ওপর দিয়েই। কিন্তু
রাত্রিকালে পার হবার জন্য ‘বাংলার এই
অপরূপ রূপ আমি দেখিতে পাই নাই!’ ভাবছিলাম, এখন এই সেতুর ওপর দিয়ে মুখোমুখি দুটি
ট্রেন যদি আসে কী ভালোই না হয়! কিন্তু সে কপাল কি আমার আছে? আপাতত আমরা আবার মোটর সাইকেলে
সওয়ারি হয়ে এগিয়ে চললাম।
প্রথম গন্তব্য বল্লভপুর।
এখানে একটি পাখিরালয় ও হরিণ সংরক্ষণ প্রকল্প আছে। ‘আমার কুটির’ নামক ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পও আছে। এই
রাস্তা সোজা চলে গেছে সেই পথেই। রাস্তার পাশের
বোর্ড দেখে খুঁজে পেতে কোনও অসুবিধাই হল না। বাঁদিকের
লালমাটির পায়ে চলা পথ ধরে এগিয়ে চললাম। শাল-পিয়াল-শিশু-সোনাঝুরি-আকাশমণি-কাজু-বহেড়া-হরিতকি’র জঙ্গলের মধ্যে অনেকে যে পিকনিক
করতে আসেন সেই চিহ্নও দেখলাম। লালমাটির
দেশে জঙ্গলের মধ্যে বাইক নিয়ে সটান ঢুকে গেলাম গাছপালার ফাঁকফোঁকর দিয়ে। কেউ
কোত্থাও নেই আমাদের দেখার জন্য। শুধুই
পাতাঝরার শব্দ, পাখিদের কিচিরমিচির আর আমার মোটর বাইকের মৃদু আওয়াজ।
রাস্তা হারিয়ে ফেললে এমন কোনও জনমনিষ্যি নেই যে আমাদের এই জঙ্গল থেকে বার করবে। কোনও
গল্প কি উঁকিঝুঁকি মারছে?
এলোমেলো কিছুক্ষণ ঘোরার পর
আমরা আবার ফিরে চললাম উলটোপথে। গন্তব্য
বল্লভপুর ডিয়ার পার্ক। প্রায় ৭০০
একর জমি জুড়ে এই পার্ক। চিতল, কৃষ্ণসার হরিণ আর ময়ূরের নির্ভয়
বিচরণ ক্ষেত্র। নানান পাখিও বাসা বেঁধেছে এই পার্কের
গাছের ডালে। তাদের কিচিরমিচির শুনতে শুনতেই পথশ্রম লাঘব হয়ে
গেল।
পার্কের লাগোয়া ঝিলের বুকে
সাঁতরে বেড়াচ্ছে বালিহাঁস, তিতির, জলপিপি, হর্নবিল, পিনটেল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি
ইত্যাদি চেনা অচেনা দেশী-বিদেশি পাখিরা। রয়েছে
অগুনতি কচ্ছপ। সকলেই মহানন্দে সাঁতরে বেড়াচ্ছে ঝিলের জলে।
ডিয়ার পার্কের আগেই আছে একটি
ইকো পার্ক। আর সেখানে রয়েছে খুবই সুন্দর কয়েকটি
কটেজ। ভ্রমণার্থীদের থাকার জন্য সুবন্দোবস্ত আছে।
ডিয়ার পার্কের হরিণের মায়া
কাটিয়ে আমরা এলাম বোলপুর হাটে।
ইউক্যালিপটাস জঙ্গলের ধারে নানান হস্তশিল্প কর্মের পসরা নিয়ে বসেছে এই হাট।
মাটির গয়না থেকে সুতোর কাজ করা কাপড়, মাটির মূর্তি থেকে বাউল গান সবই রয়েছে সেখানে।
হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলাম হাটের পিছনের অরণ্যের পানে।
গভীর এক খাত। তার নিচে ঝিরিঝিরি ধারায় বয়ে চলেছে একটি জলস্রোত।
শুনেছিলাম প্রকৃতি নাকি কথা বলে। আজ এই
জনহীন প্রান্তরে এসে অনুভব করলাম সেই কথার সারমর্ম।
হাট থেকে শান্তিনিকেতন আসার
পথের ডানদিকে নজরে পড়ল এক শিল্প প্রদর্শশালা। এখানে
দুটি বাড়ির দুই সংগ্রহশালায় নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের অসংখ্য ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম
রাখা আছে। এত মূল্যবান কারুকার্য খরিদ করার সাধ্য আমার নেই।
তাই ছবিই সঙ্গী হল। হ্যাঁ, এখানে ছবি তোলার অনুমতি পাওয়া গেল।
|
ভাস্কর্য্য প্রদর্শশালা ১ |
|
|
ভাস্কর্য্য প্রদর্শশালা ২ |
|
|
ভাস্কর্য্য |
|
|
সুদৃশ্য বাগান |
|
|
মৈত্রী |
|
|
প্রদর্শশালার ভিতরে |
|
|
অসামান্য সব শিল্পকর্ম |
|
|
থরে থরে রাখা শিল্পকর্ম |
|
এরপর প্রবেশ করলাম
শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। প্রথমেই
কুড়ি টাকার টিকিট কেটে বিচিত্রা বা রবীন্দ্রভবনের প্রদর্শশালায় গেলাম।
কবিগুরুর ব্যবহার করা নানান সামগ্রীর সঙ্গে এখানে রক্ষিত দৃষ্টিনন্দন বহু চিত্রকর্ম। রয়েছে
কবির ব্যবহৃত বসন-ভূষণ-কলম-পান্ডুলিপি-কাপ-চটি-জোব্বা। আছে
বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া অমূল্য সব উপহার। ভিড়
সবচেয়ে বেশি উপচে পড়ছে হারিয়ে যাওয়া নোবেলটির প্রতিকৃতির সামনে।
এবার আমরা এগিয়ে গেলাম
উত্তরায়ণ চত্বরের দিকে। এখানে রয়েছে উদয়ন, কোনার্ক,
শ্যামলী, পুনশ্চ আর উদীচী – এই পাঁচটি বাড়ি। অবিশ্যি
শ্যামলী এখন সংরক্ষণের কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে। প্রতিটি
বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত জিনিস থরে থরে সাজানো।
কবির ব্যবহৃত অস্টিন গাড়িটিও রাখা আছে এই চত্বরে।
সেলফি তোলার ভিড় সেখানে।
বেশ কিছু স্কুল থেকে
ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে শান্তিনিকেতন বেড়াতে এসেছেন কয়েকটি গ্রুপ। তাদের
সঙ্গে একজন গাইডও রয়েছেন। তিনি উচ্চস্বরে জায়গাটির ইতিহাস
বোঝাচ্ছিলেন। আমরাও তার ভাগীদার হলাম।
“বোলপুর
জায়গাটির ইতিহাস অতি প্রাচীন। মার্কন্ডেয়
পুরাণে পাওয়া যায়, সুপুরের রাজা সুরথ ভাগ্যের দোষে নিঃসম্বল হয়ে পড়ে দেবী চন্ডীকে খুশি
করতে একবার এক লক্ষ বলি উত্সর্গ করেন। সেই থেকে
এই জায়গার নাম হয় ‘বলিপুর’ এবং পরে লোকমুখে পরিবর্তিত হয়ে ‘বোলপুর’।
“রবীন্দ্রনাথের
পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালে রায়পুরের জমিদার লর্ড এস. পি. সিনহার
কাছ থেকে নিকডাঙায় প্রায় কুড়ি বিঘা জমি কিনে শান্তিনিকেতন আশ্রমটি গড়ে তোলেন।
১৮৭৩ সালে রবীন্দ্রনাথের আগমন হয়। তিনিও
মুগ্ধ হন লালমাটির দেশের সৌন্দর্যে। অবশেষে ১৯০১
সালের ২২শে ডিসেম্বর বাংলার ৭ই পৌষ মাত্র ৫টি ছাত্র নিয়ে রবীন্দ্রনাথ
ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন। তাই
প্রতি বছর ৭ই পৌষ জমকালো মেলার আয়োজন করা হয়। পোড়ে
আতশবাজি। একেই বলে পৌষমেলা। পরবর্তীকালে
এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় পাঠভবন। ১৯২১ সালের
২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতী সোসাইটির প্রতিষ্ঠা হয়।
পরবর্তীকালে কবিগুরুর প্রয়াণের পর ভারত সরকার এটি অধিগ্রহণ করেন এবং বিশ্বভারতী
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।”
|
রবীন্দ্রভবন প্রদর্শশালা |
|
|
বিচিত্রা |
|
|
উদয়ন |
|
|
উত্তরায়ণ চত্বরে ফুলের বাহার |
|
|
আহা ফুল, বাহা ফুল |
|
|
কবিগুরুর ব্যবহৃত গাড়ি |
|
|
মনোহারী ফুল |
|
|
শ্যামলী |
|
|
সেইকালের ছাপা যন্ত্র |
|
|
উদীচী |
|
|
পুনশ্চ |
|
|
কোনার্ক |
|
|
বিমূর্ত শিল্পকর্ম |
|
|
শিল্পী রামকিঙ্কর বেজের করা ভাস্কর্য্য |
|
|
শিল্পী কে এস রাধাকৃষ্ণনের করা ভাস্কর্য্য |
|
|
শিল্পী রামকিঙ্কর বেজের বিখ্যাত ভাস্কর্য্য ‘সাঁওতাল
পরিবার’। ছবিটি তোলার সময় আশ্চর্যজনকভাবে একটি পাখি ক্যামেরার
দৃষ্টিপথে চলে এসেছে। |
|
দুপুর একটায় এই এলাকা বন্ধ
করে দেওয়া হয় এক ঘন্টার জন্য। এখান
থেকে বেরিয়ে আমরা রাস্তা পেরিয়ে অপর পারে চলে এলাম।
ছাতিমতলা, মুক্ত শিক্ষাঙ্গন, কলাভবন, কালোবাড়ি, সঙ্গীত ভবন, প্রার্থনা গৃহ ইত্যাদি
ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
বাঙালির কাছে শান্তিনিকেতন
এতই পরিচিত যে এই সমস্ত স্থানের মাহাত্ম্য আর নতুন করে কিছুই বলার নেই। এরপর
আমরা মধ্যাহ্নভোজনের সন্ধানে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের পরিচিত একটি ঝুপড়ি
ভোজনালয়ে। মোটা চালের ভাত, ডাল, দু’রকম তরকারি, পুকুরের
কাতলা মাছের ঝোল সহকারে তৃপ্তি করে খাওয়া সাঙ্গ করে পরবর্তী গন্তব্য স্থির করে
ফেললাম।
এখান থেকে আট কিলোমিটার দূরে
কোপাই নদীর তীরে কঙ্কালীতলায় কঙ্কালীশ্বরীর মন্দির। শান্তিনিকেতন
থেকে পিচ ঢালা রাস্তা চলে গিয়েছে প্রান্তিকের পথে।
প্রান্তিক স্টেশনের গায়ের লেভেল ক্রসিংটি পার করে এগিয়ে চললাম সোজা। সবুজ
ক্ষেতের বুক চিরে বয়ে চলা রাস্তাটি বেয়ে আমরা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম
কোপাইয়ের তীরে মন্দির চত্বরে।
গ্রামটির নাম বেঙ্গুটিয়া।
তবে দেবীর নামেই সবাই চেনে একে, কঙ্কালীতলা। আর
পাঁচটা মন্দিরের সঙ্গে এর বিশেষ তফাত নেই। তবে
মন্দিরের পাশেই একটি ছোটো অগভীর কুন্ড রয়েছে যেটি এই মন্দিরকে একটি বিশেষত্ব
দিয়েছে। কথিত আছে, এই কুন্ডের ঈশানকোণে সতীর কোমরের অংশ
পড়েছিল। মূল দেবীর অবস্থানও কঙ্কালরূপী শিলায়,
এই কুন্ডেরই জলে। সতীর একান্ন পীঠের শেষ পীঠ এই
কঙ্কালীপীঠ।
কোপাই এখানে উত্তরবাহিনী। নদীটি
বড়োই শীর্ণ। তবে পাড়ে পাথর বাঁধানো অংশ দেখে বোঝা গেল, সময়
সময় নদী আছড়ে পড়ে দুই পাড় ভেঙে দিয়ে যায়। তাই এই
সাবধানতা।
কূলভাঙা নদীকে বিদায় জানিয়ে
আমরা উঠে পড়লাম দ্বিচক্রযানে। সারাদিনের
স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে অজয়ের সেতুতে উঠে পড়লাম।
বাঁদিকে রেলের সেতুর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, একটিও কি ট্রেন এই সময় আসতে পারে না?
উফ্! বিশ্বাস করুন, মিরাকল আজও হয়! একটি নয় দু-দুটি ট্রেন হুইসল বাজিয়ে তেড়ে এল
যেন দু’দিক থেকে। একটির গন্তব্য কলকাতা আর একটির সম্ভবত
জলপাইগুড়ি! চটপট বাইক দাঁড় করিয়ে আইফোন তাক করলাম সেই অপূর্ব দৃশ্যের দিকে।
সার্থক হল আমার বোলপুর আসা। চমত্কার
একটি ছবি চলে এল আমার ক্যামেরায়!
|
ছাতিমতলা |
|
|
শান্তিনিকেতন গৃহ সামনে থেকে |
|
|
শান্তিনিকেতন গৃহ পিছন থেকে |
|
|
মুক্ত শিক্ষাঙ্গন |
|
|
আম্রকুঞ্জ |
|
|
প্রার্থনা গৃহ |
|
|
কঙ্কালী কালী মন্দির |
|
|
কোপাই নদী |
|
_____
ছবিঃ লেখক
No comments:
Post a Comment