![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh5lw024WtAaitKm31OxUpe0JKdthyNyrTzt5mNBXTpRmcxTYGvAUOpiGVgXhS19Jvc0j9X6bQkU8ggsx-1arlBkD3tHR7zEECwSSDjCd_vIYzLmvwtXMVfvGE1qFYr255Pl5jDoR2cMQw/s640/beagle.jpg)
একটা লম্বা সফরের কাহিনি
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
পর্ব দুই
বেশ কয়েকমাস
কেটে গেছে তখন ডারউইনের সেই পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে। অবশেষে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর
দিকে ডারউইন ফিরে এলেন বাহিয়া ব্লাঙ্কায়। বিগ্ল্ যদি ফিরে এসে থাকে সেই আশায়।
এসে দেখেন, এপ্রিলের শেষাশেষি সেই যে বিগ্ল্ মন্টেভিডিওতে চলে গিয়েছিল, তার পর
এখনও সে ফেরেনি। সমুদ্রে ঘুরে তার সমীক্ষার কাজ চলছেই। অতএব একজন গচো গাইডকে সঙ্গে
নিয়ে ডারউইন চললেন ডাঙাপথে বুয়েন্স্ এয়ার্সের দিকে। সে যাত্রায় পথে পড়েছিল
ভেনটানা নামের এক পাহাড়ি এলাকা। তখন অবধি একেবারেই অজানা এ এলাকাটায় উঁকিঝুঁকি
দিয়ে ফের পথচলা। হপ্তাদুয়েক বাদে শহরে পৌঁছে গিয়ে উঠলেন এক ইংরেজের বাড়ির ভাড়াটে
হয়ে। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে সান্তা ফে এলাকা ঘুরে আরও কিছু জীবাশ্ম জোগাড় করে
নিয়ে ফের একবার বুয়েন্স্ হয়ে নানা পথ হেঁটে অবশেষে নভেম্বর মাসে ফের
মন্টেভিডিওতে এসে ‘বিগ্ল্’ আর ‘অ্যাডভেঞ্চার’-এর নাগাল পেলেন তিনি।
ওরই মাঝে মাঝে কেমব্রিজের উদ্দেশ্যে তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন তাঁর চতুর্থ
কিস্তির সংগ্রহ — অজস্র জীবাশ্ম, ও জীবিত প্রাণীর নমুনা। এই ঘোরাঘুরির সময়েই তাঁর
হাতে আসে এক অতিকায় টক্সোডনের খুলি। মাত্রই ১৮ পেন্স দিয়ে সেটা কিনে নিয়েছিলেন
ডারউইন। ততদিনে এই জীবাশ্ম সংগ্রহের নেশায় পুরোপুরি মজে গিয়েছেন ডারউইন।
এই যাত্রার সময় ছোটোখাটো মজা, উত্তেজনা সবই ঘটে চলেছিল। একবার তো
উরুগুয়ে নদীর উৎসের কাছে একটা জাগুয়ারকে তাড়া করে শিকার করতে গিয়ে প্রাণটাই খোয়াতে
বসেছিলেন।
আর একবার রায়ো নিগ্রোর পাশে মার্সিডিজ নামের একটা শহরে গিয়ে তিনি ক্ষেত্রে
বলে এক স্থানীয় সৈন্যদলের পাল্লায় পড়েন। তাদের সর্দার, তিনি কী এমন সব কাজকর্ম
নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সে’সব জিজ্ঞাসাবাদ করে শেষে গম্ভীর মুখে বলেন, “একটা গুরুতর
প্রশ্ন করব আপনাকে। তার জবাব চাই। সত্যি কথা বলবেন কিন্তু।”
শুনে তো ডারউইনের বুক কাঁপতে লেগেছে। আর্জেন্টিনায় ঢুকেই তিনি পেশায়
“প্রকৃতিবিদ” শুনে সেখানকার সৈন্যটৈন্যরা কিছুই না বুঝে যে তাঁকে গুপ্তচর ঠাউরেছিল
সে স্মৃতি তিনি তখনও ভোলেননি। অতএব তিনি বেশ সাবধানে, এবারে ভয়ংকর কিছু
জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রশ্ন আসবে সেই ভেবে নিয়ে, দুরুদুরু বুকে সর্দারের দিকে তাকিয়ে
রইলেন।
খানিক বাদে সর্দার প্রশ্ন করলেন, “তা মশায়, বুয়েন্স্ এয়ার্সের
মেয়েরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে কিনা বলুন দেখি!”
শুনে ডারউইনের ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল যেন। ঘাড় নেড়ে বললেন, “সে তো
একশোবার।”
“হুম। আরেকটা প্রশ্ন। দুনিয়ার আর কোথাও মেয়েরা মাথায়
অত বড়ো বড়ো চিরুণি লাগিয়ে ঘোরে বলে আপনি জানেন?”
“আজ্ঞে না। একেবারেই না।” ডারউইনের সটান জবাব।
এইবার দেখা গেল সর্দারের মুখে হাসি ফুটেছে। সঙ্গের সেপাইদের দিকে মুখ
তুলে বলে, “ওরে, শোন তোরা, শোন। অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে আসা একটা “প্রকৃতিবিদ” কী বলছে
তাই শোন। অ্যাদ্দিন ওইটেই তো আমার অনুমান ছিল। আজ নিশ্চিত হলুম।”
এতদিন ধরে পাহাড়েজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে তখন ডারউনের হাঁফ ধরে গেছে। জাহাজে
উঠলেই সমুদ্রপীড়া ধরবে আবার, তবু, নভেম্বরের শেষাশেষি মন্টেভিডিওতে বিগল-এর ডেকে
ফিরে গিয়ে তাঁর আনন্দ ধরে না। অবশ্য দিনচারেক পরেই আনন্দে ভাঁটা পড়ল তাঁর। জাহাজও
রওনা হয়েছে, আর ডারউইনও ফের কেবিনে বিছানাবন্দি হয়েছেন বেধড়ক সমুদ্রপীড়ার গুঁতোয়।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhBY4PKu4PhIHv_MYOsMejvmCzu3F7aCgKPeIfvio6O9oMiXv10rf23A7XWQpZj0K_P7zKjJodQiYZ3R1zlmYgGntfE_nuTYrWKVcOYP5Y2ZA5zFybequDo3sFnn8QepXdwJ5iA8KkXKQc/s1600/map01.jpg)
এবারে ফের একবার মন্টেভিডিও থেকে দক্ষিণের দিকে যাত্রা (১ নং ম্যাপ
দেখ)। পথে পড়ল সান ব্লাস উপসাগর। এইখানে একটা আশ্চর্য জাদুদৃশ্য দেখেছিলেন তাঁরা।
উপকূল থেকে উড়ে আসা প্রজাপতির এক বিশাল
ঝাঁক মেঘের মতন ছেয়ে ফেলেছিল তাঁদের জাহাজদুটোকে। অথচ, সে সময় কোনও বাতাস বইছিল
না। তাহলে এত প্রজাপতিকে সমুদ্রে উড়িয়ে আনল কীসে?
আরও খানিক দক্ষিণে নামবার পর ১৮৩৪-এর জানুয়ারিতে অ্যাডভেঞ্চার চলে
গেল পুবমুখো ফকল্যান্ড দ্বীপের সমীক্ষা করবার জন্য, আর বিগ্ল্ নেমে চলল নিচের
দিকে, ম্যাজিলানের খাঁড়ির সমীক্ষা সেরে, ফের একবার বিগ্ল্ চ্যানেলের ভেতর।
উদ্দেশ্য, আগের বছরের সেই পাদ্রি পালানো দ্বীপের (উলিয়া কোভ; দু’নম্বর ম্যাপের M
চিহ্নিত জায়গাটা) তিন সদ্য খৃস্টান ফুয়েগিয়ান আদিবাসীর গির্জা কেমন চলছে তাই দেখা।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiTtSH5LCSZd6bGUtPOJr71xlBDaTNU93YUBdP4vVPX2MxBjmHyBPXS-aQSlVeznTqgsD9LMib0sGdEK1oZeEPauSWxo41L7EPoWXESgVCTDNdc3-RyqJ4smMkJ1FPfEWBN9a16dp3rQXU/s640/map02.jpg)
তা,
দ্বীপে পৌঁছে দেখা গেল গির্জা ভোঁ ভাঁ। কেউ কোত্থাও নেই। তার বাগানে আগাছার ভিড়।
তার সব জিনিসপত্র লুটপাট হয়ে গেছে। দেখে ফিট্জ্রয়ের ভারী দুঃখ হল। কম পরিশ্রম
হয়নি এখানে খৃস্টান বসাবার জন্য। প্রথমে তো আদিবাসীদের এসে গ্রেফতার করে নিয়ে
যাওয়া। তারপর তাদের খাওয়াপরা দিয়ে পুষে খৃস্টান বানিয়ে ফের জাহাজে করে এনে দ্বীপে
ফিরিয়ে দিয়ে, তাদের জন্য গির্জাটির্জা বানিয়ে দেওয়া। আর অকৃতজ্ঞ আদিবাসীগুলো সে সব
এভাবে ফেলে চলে গেল!
মনমরা হয়ে তিনি হুকুম দিলেন, ভাঙাচোরা গির্জা থেকে যেটুকু যা মেলে
তাই উদ্ধার করে জাহাজে নিয়ে যাওয়া হোক। সে কাজ চলছে, এমন সময় হঠাৎ দেখা গেল
কাছাকাছি আরেক দ্বীপ (বাটন আইল্যান্ড) থেকে এক ক্যানোভর্তি ফুয়েগিয়ান আদিবাসী
এদিকেই আসছে।
তারা এসে পৌঁছোতে দেখা গেল, গির্জার সেই তিন খৃস্টানের একজন তাদের
নেতা। তার নাম জেমি। তার হাবভাব, পোশাক আশাকে খৃস্টানত্বের কোন চিহ্ন নেই আর।
জেমির কাছে জানা গেল, সাহেবরা চলে যাবার পরপরই আরেক দল আদিবাসী এসে গির্জায় হানা
দিয়ে সব লুটেপুটে নেওয়ায় আর তাদের খৃস্টান থাকবার উপায় ছিল না নাকি। অতএব তারা
তিনজন যার যার গ্রামে ফিরে গিয়ে সুখেশান্তিতে আছে।
সেখান থেকে নোঙর তুলে বিগ্ল্ ফিরে চলল ফকল্যান্ড দ্বীপের দিকে।
সেখানে পৌঁছোবার কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বীপের পুবদিক বাদে বাকি দিকগুলোর উপকূল
এলাকার সমীক্ষার কাজ শেষ করে ফিরে এল ডিসকভারি।
কয়েকদিন জাহাজে খানিক বিশ্রাম আর প্রস্তুতি নিয়ে ডারউইন এবার চললেন
ঘোড়ায় চেপে দ্বীপের পুবদিকের খোঁজখবর নিতে। এইখানে একটা আশ্চর্য জিনিস চোখে পড়ল
তাঁর। এ এক আশ্চর্য নদী। তাতে জল নেই। তার বদলে আছে ঢেউয়ের মতো উঁচুনিচু অজস্র
বড়োবড়ো পাথরের চাঁই। সে আসলে দূর অতীতের কোনও লাভার নদীর জমাটবাঁধা রূপ।
১৮৩৪-এর এপ্রিলের শুরুতে ডিসকভারিকে সমীক্ষার কাজে রেখে দিয়ে বিগ্ল্
ফকল্যান্ড ছাড়ল। উদ্দেশ্য, পরের লম্বা সমুদ্রসফর শুরুর আগে একটা ভালো জায়গা দেখে
বিগ্ল্ এর খোলের তামার চাদরের ঢাকনাটার ফুটোফাটা মেরামত করে নেওয়া। সেইমতো খানিক
উত্তরে উঠে গিয়ে সান্তা ক্রুজ নামে একটা নদী মোহনায় নোঙর করল বিগ্ল্। সেখানে
তাকে ডাঙায় তুলে এনে মেরামতির কাজ চালু হতে ক্যাপ্টেন ফিট্জ্রয় ঠিক করলেন,
মেরামতির সময়টা আলসেমি করে বসে না থেকে একটু ঘুরেফিরে নেওয়া যাক।
শুনে ডারউইন তো এক পায়ে খাড়া। অতএব ঠিক হল, কয়েকজন মিলে সান্তাক্রুজ
নদীর উজানে নৌকা বেয়ে অভিযানে যাওয়া হবে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgKLS0UEZYjxXoERJnIVm1bPgR-7-VaX6g-OJck0VbchEu0Amai6jU4A6MNOtCLCwOtaHbOGZTWprMb5Xqy619cJRK0eqXX4IrY9JDSqCJefCPBdB3iXA2VTPsuUH6DdUMsCJ2vl3zlEiY/s640/santakruzrepair.jpg)
অতএব তিনটে ছিপ নৌকো আর কুড়িজন মাল্লাকে সঙ্গে নিয়ে ডারউইন আর ফিট্জরয়
চললেন সান্তাক্রুজের উজান বেয়ে (যাত্রাপথঃ ম্যাপ ৩)। রওনা হবার পরদিন মোহানা
ছাড়িয়ে খানিকদূর যেতে নদীর স্রোত এমন বেড়ে উঠল যে নৌকো আর এগোতে চায় না। শেষে
মাল্লারা পাড়ে নেমে কাছি দড়ি দিয়ে গুন টেনে নৌকো নিয়ে চলল। খানিক গিয়ে স্রোতের
শক্তি কিঞ্চিত কমতে আবার শুরু হল দাঁড় বাওয়া। কিন্তু তাতেও নৌকো এগোয় দিনে দশ
মাইল। বিপদের ওপর বিপদ, মাল্লাদের নজরে পড়ল নদীর দু’পাশে বুনো রেড ইন্ডিয়ানদের
আনাগোনার চিহ্ন। বোঝা গেল নদীর ধারের জঙ্গল বেয়ে তারা নৌকাদুটোকে অনুসরণ করছে।
সুযোগ পেলেই হামলা করবে। সেটা এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধ। দক্ষিণ আমেরিকার এই সুদূর
দক্ষিণ প্রান্তে তখন তীব্র শীত চলছে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের দশ ডিগ্রি নিচে। খোলা
নৌকোয় নদীর বুকে সেই ঠাণ্ডায় হাত পা যেন চলতে চায় না অভিযাত্রীদের। সবচেয়ে সমস্যা
হচ্ছিল বন্দুকগুলোকে নিয়ে। সে অস্ত্রগুলো যে শুধু ইন্ডিয়ানদের আক্রমণের ভয়ের
বিরুদ্ধে ভরসাস্থল তা তো নয়, প্রতিদিন খাবারের জন্য গুয়ানাকো শিকার করতেও তারা
কাজে লাগে যে!
সঙ্গের রসদ ফুরিয়ে আসছিল খুব তাড়াতাড়ি। সব মিলিয়ে অতএব মে মাসের চার
তারিখ নাগাদ ফিটজরয় ঠিক করলেন, আর নয়। এবারে ফেরা উচিত। ফেরবার আগে ডাঙায় নেমে
ফিটজরয় আর ডারউইন মাইল আষ্টেক ট্রেক করে এদিকওদিক খানিক দেখে এলেন। তার পরদিন শুরু
হল ফেরার পালা। এবারে স্রোতের অনুকূলে নৌকা চলল তরতরিয়ে। একেক দিনে আশি মাইলের ওপর
পথ পেরিয়ে সাত তারিখ তাঁরা ফিরে এলেন মোহনায়। সঙ্গে সান্তা ক্রুজ অভিযানের
মানচিত্র রইলঃ
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEguet44IfLsOPU6P53NaApeyfImbM_mD3QuKvsUjoAN-373tRzJWWLwoV2_V_GU_BrJnU8_XmIReZzo2R1jA3TaAD9-eTGESUhmlxA9LIgtTTR6bXAuJVGdVr7CIfSnoxJe7jtnV95bZCs/s1600/map03.jpg)
অভিযাত্রীরা মোটেই খুশি নন। এ যাত্রায় কষ্ট হয়েছে বেজায়, কিন্তু
উল্লেখযোগ্য কিছু লাভ হয়নি তাঁদের। ব্যতিক্রম শুধু ডারউইন। নদীখাত আর তার চারধারের
ভূত্বকের গড়ণ তাঁকে মুগ্ধ করেছে। উপত্যকার দেওয়ালে নানা উচ্চতায় বারংবার তাঁর নজরে
পড়েছে আগে অনেকবার দেখা সেইসব শামুকঝিনুকের খোলার তৈরি চুণের স্তর। সেই দেখতে দেখতে,
অসহ্য ঠাণ্ডায় অমানুষিক পরিশ্রম করতে করতেই তাঁর মাথায় গড়ে উঠেছে নতুন তত্ত্ব — নদী
উপত্যকার টিলাগুলো, এমনকি গোটা আন্দিজ পর্বতমালাটাই গড়ে উঠেছে সমুদ্রের বুকে স্তরে
স্তরে জমে ওঠা পাললিক শিলা ক্রমাগত ওপরদিকে ঠেলে উঠে।
ভূত্বক যে এইভাবে ক্রমাগত তার রূপ বদলে চলেছে এ ধারণাটা তো এখন
ছোটোরা তাদের ভূগোলের বইতে পড়ে ইশকুলে থাকতেই। কিন্তু ডারউইনের যুগে এই গ্রহব্যাপী
ক্রমাগত ধীরলয়ে পরিবর্তনের ছবিটা একেবারে বৈপ্লবিক ছিল। খৃস্টানদের ধর্মের বই বলে
ভগবান নাকি পৃথিবীটাকে গড়েছিলেন একেবারে নিখুঁত করে। তার আর কোনও বদল হয় না।
ডারউইনের এ তত্ত্ব তাই সরাসরি আঘাত করছিল খৃস্টানধর্মের বিশ্বাসের মূলে। কাজটা
কঠিন ছিল। কারণ সে সময়ে ইউরোপিয় ঔপনিবেশিক শক্তি সারা দুনিয়ায় তার জাল বিছিয়েছে।
আর তার হাত ধরে দুনিয়াজোড়া শক্তিশালী জাল ছড়িয়েছে খৃস্টানধর্মও। খ্যাপা ছেলেটা ডন
কিহোতের মতো একলাই তখন রুখে দাঁড়িয়েছে জগতজোড়া এই শক্তিমান ধর্মের অন্ধবিশ্বাসের
ভিত্তিটার বিরুদ্ধে।
দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের সমীক্ষার কাজ তখন শেষ পর্যায়ে। ১২ মে তারিখে
প্রচুর গুয়ানাকোর মাংস আর মিষ্টি জলের ভাঁড়ার জাহাজে তুলে নিয়ে সান্তা ক্রুজ ছেড়ে
রওনা দিল বিগ্ল্। ফকল্যান্ডের কাজ সেরে ২৩ তারিখে তার সঙ্গে এসে জুটল
অ্যাডভেঞ্চারও। তারপর দুই জাহাজ মিলে একত্রে আটলান্টিক ছেড়ে ম্যাজিলান খাড়ি ধরে সমীক্ষা
করতে করতে পশ্চিমমুখো রওনা দিল।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjiyrgj61fRkXNf4NDZ05v-2JoSkyGyILdMob1TyyY4Gl3FvTxd84xKqxUPIJpyqoI6pmYYJ8fW72259xyuns9mnp1OwOihXzkdpq9fEsTrbt_jyTaf7J8mYa9HzmayQ-l_CyDVbnj8auA/s640/beagle+in+Magillan+strait.jpg)
তাদের দুপাশে তিয়েরো দেল ফুয়েগোর অপরূপ দৃশ্য মাঝেমাঝেই কুয়াশার
ঘোমটা খুলে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ে যায় বরফের মুকুট পড়া পর্বতরাজের দল,
কিংবা তাদের গায়ে রাজপোশাকের মতো জড়িয়ে থাকা নীল গ্লেসিয়ারের আবরণ। অবশেষে সে কুয়াশা
বিদায় হল জুনের ৯ তারিখে। চলমান জাহাজের বুক থেকে ডারউইন দু’চোখ ভরে দেখলেন
আকাশছোঁয়া সারমিয়েন্তো পর্বতের বরফমুকুট, দেখলেন পাহাড় ছেড়ে সমুদ্রে এসে মিশে চলা
বরফনদীর ধারা।
তারপর ম্যাজিলান খাঁড়ি ছেড়ে, ককবার্ন খাঁড়ি পেরিয়ে টাওয়ার রকদের
রাজত্ব ছাড়িয়ে শেষমেষ ১১ জুন তারিখে জাহাজরা এসে পৌঁছোল মহাদেশের উল্টোদিকে
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে। চার নম্বর ম্যাপে সেই যাত্রাপথ দেখানো হল।
এবারে শুরু হল বিগলের মহাকাব্যিক যাত্রার পরের অধ্যায়। দক্ষিণ
আমেরিকার বাঁ উপকূল ধরে ধীরে ধীরে উঠে চলবে তা একেবারে ভালপারাইজো অবধি। তারপর
এগিয়ে যাবে প্রশান্ত মহাসাগরের গহনে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjcnw3sDykVpvEqHcRyPPW1DAkHRAx5WnOluAooCDRwooBya6gSFK4lJMs4zR348xBimNlw5aBpIFKNrKH2ehsXF08KfYPc2gCd0qPxc120IE95lTPPM1-x6Jo95T-bq4JBBGuMHFtMpEA/s640/map04.jpg)
এরপর আগামী সংখ্যায়
_____
No comments:
Post a Comment