ছড়া-কবিতা:: নিত্যবাবু - সায়ক আমান


নিত্যবাবু
সায়ক আমান

এই দশকের অন্ধকারে, প্রতিমুহূর্ত অনিশ্চিত
ঘড়ির কাঁটা দিচ্ছে তাড়া, খেলছে সময় চু-কিতকিত।
নিত্যবাবু একলা মানুষ, কারোর সঙ্গে মেশেন না
পাড়ার ক্লাবের হট্টগোলে সচরাচর আসেন না।
আজ অবধি দেননি উঁকি, পাশের বাড়ি ঝগড়া হলে
খাটের নিচে লুকিয়ে পড়েন, আওয়াজ হলে কলিংবেলে।
পাড়ার লোকে যুক্তি করে, আসল কথা ঠাউরে নেয়
সাক্ষীরা সব হলফ করে, ধর্মগ্রন্থ আউড়ে নেয়।
হয়তো লোকটা খুব সাধারণ, শান্তশিষ্ট সন্ন্যাসী
পিটিয়ে নেব চামড়া তুলে, হয় যদি সে সন্ত্রাসী।
কিছুই যখন যায় না পাওয়া সবাই বলে, “ধ্যাত্তেরি,
হয় ও মিশুক সবার সাথে, না হয় তুলুক পাততাড়ি
সবাই মিলে অস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে চড়াও হয়
নিত্য অতি পাতলা মানুষ, ঠকঠকিয়ে কাঁপছে ভয়ে।
এদের যিনি ছিলেন নেতা, তিনি চেঁচিয়ে হুমকি দেন
নিত্য বলে, “মাফ করে দিন, আমি একদম কমন ম্যান।”
নিত্য তখন নামিয়ে গলা, তুলে দেখায় হাতখানা
সবাই মিলে হামলে পড়ে – একটা খাতা, রুলটানা।
“হাতের লেখা ভীষণ বাজে, তাই এরকম ব্যবস্থা
সাদা খাতায় লিখতে গেলে, হয় না আমার সাহসটা।
তার উপরে লেখক আমি, কলম পিষে দিন গুণি
হাতের লেখা খারাপ দেখে, সবাই দেবে টিপ্পনি
শুনে সবার চোখ ছলছল, কেউ কেউ তো মুচ্ছো গেল
হারুর কাকা পান্তাখুড়ো, সঠিক উপায় বাতলে দিল।
খাতাকলম কিনছে না কেউ, সময় নেই যে, কী করবে!
ইদানীং সব লেখকগুলো জমিয়ে লেখে কি-বোর্ডে।
পাড়ার লোকে তুলল চাঁদা, সবাই গেল টেক-শপে,
নিত্যবাবুর গল্পগুলো গজিয়ে ওঠে ল্যাপটপে।
আমিও এখন লুকিয়ে দেখি, একটুখানি জানালা খুলে
নিত্য এখন নিত্যদিনই নৃত্য করেন দু’হাত তুলে
_____
অলঙ্করণঃ সুমিত রায়

No comments:

Post a Comment