আলোর পাখি
নন্দিতা
মিশ্র চক্রবর্তী
পুপুর
সামনে সবুজ ঘাসের চাদর বিছানো গভীর একটি গর্ত। মাথার উপর বিশাল ঝাঁকড়া একটা
শিমুলগাছ। তার
থেকে অজস্র লালফুল ঝরে পড়ে আছে। বিশেষত পুপু গাছের তলার বিরাট গর্তটাতেই বসে আছে
এখন। গর্তটা
থেকে কারা যেন বহুকাল আগে মাটি কেটে নিয়ে গেছে। বর্ষায় জল জমা হয় ওখানে, আর গরমে তার উপরটা সবুজ
ঘাসে ভরে যায়। এখানটা ভারি ভাল লাগে পুপুর। এই বাগান, সামনের বিশাল
ঝিল, আর কত গাছের
ভিড়! শিমুলের ফুল কুড়িয়ে নিয়ে আসে সে, আর ঘরে রেখে
দেয়। ভালো লাগে তার।
এই
গর্ত আর বাগানটা পুপুদের খেলার জায়গা। ওরা অনেকে মিলে লুকোচুরি খেলতে আসে বিকেলে।
তারপর পুপু লুকোতে গিয়ে এই জায়গাটা আবিষ্কার করেছে। গাছেদের ভেতর থাকতে ভালো লাগে
তার। কিছুক্ষণ খেলার পর খেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার মন। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
তখন আনমনে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে তার। আর খেলতে
ভালো লাগে না। সে অন্যমনস্ক হয়ে তখন কাঠচাঁপার ফুল কুড়ায় কিম্বা ফলসা গাছের তলায়
চওড়া সবুজ ফলসা পাতাগুলোর হাওয়ায় ওড়াউড়ি দেখে। বর্ষার শেষে পাকে জামরঙা ফলসা। যে
না খেয়েছে, সে
জানে না কী অপূর্ব তার স্বাদ। তবে সব থেকে আশ্চর্য লাগে পুপুর, সে যখন
খেলতে চায় না, কেউ
তখন তার পাশ থেকে হেঁটে গেলেও তাকে দেখতে পায় না। সে কী করে যেন তাদের কাছে অদৃশ্য
হয়ে থাকে। এই যেমন, এই
ফুল ঝরে পড়া গর্তটাতে একা একা বসে থাকতে পুপুর খুব ভালো লাগছে। একটু আগে ফুলি আর
মামণিরা তার পাশ থেকে ঘুরে গেলেও তাকে একবারও দেখতে পেল না। এইসময় পুপুর বেশ মজা
লাগে।
সন্ধ্যার
একটু আগে বাড়ি ফিরে এল পুপু। আজকে
লোডশেডিং হয়েছে। এরকম এখন থাকবে বেশ কিছুক্ষণ। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তা হল আশি সালের
শুরুর দিক। তখন সন্ধ্যা হলে মাঝে মাঝেই কলকাতা শহরজুড়ে লোডশেডিংয়ের খুব দাপট ছিল।
বাড়িতে কারেন্ট না থাকলে হ্যারিকেনের ভাগ নিয়ে খুব কাড়াকাড়ি চলে। বড়দির উঁচু ক্লাস, তাই একটা
গোটা হ্যারিকেন বড়দির টেবিলে থাকে। আর একটা হ্যারিকেন নিয়ে মেজদির সঙ্গে পুপুর
টানাটানি করতে হয়। পুপুর এখন সবে ক্লাস টু। মেজদির ক্লাস সিক্স। দু’জনে
হ্যারিকেনের দু’দিকে বসে বাড়ির খাতায় স্কুলের হোমওয়ার্ক করে। পুপুকে স্কুলের আঁকার
খাতায় অবন্তীদি টিয়াপাখির গায়ে সবুজ রঙ আর ঠোঁটে কমলা রঙ করে আনতে বলেছেন। লাল
আলোয় কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ক্রেয়নের রঙগুলোর মধ্যে বেছে বেছে আন্দাজে দুটো রঙ
নিয়ে হ্যারিকেনের একদম সামনে এনে দেখতে দেখতে পুপু বললো, “বল না রে, এই দুটো কী
রঙ?”
“আমার মোটে
সময় নেই। তোর রঙ করা পরে হবে, আমাকে হ্যারিকেন ছেড়ে দে। ভারি তো
মোম রঙ! ওটার জন্য আলো লাগে নাকি? সরে যা, সরে যা এখান থেকে!”
পুপু
থতমত খেয়ে সরে বসল। অনেকটা দূরে, খাটের উপর বসে রঙ করে নিল। বাড়িতে মা নেই। মা মামাবাড়ি
গেছেন। ছোটোমামা হুইল চেয়ারে থাকেন, হাঁটতে পারেন
না। ডাক্তাররা বলেন,
তার নাকি খুব শক্ত একটা অসুখ হয়েছে। যার নাম ‘রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিস’। বিকেলে
মামার খুব মনখারাপ হয় বলে মা প্রায়ই বিকেলে মামার সঙ্গে গল্প করতে মামাবাড়ি যান।
মেজদি
আর বড়দি অনেকক্ষণ পরে বারান্দায় এসে নিজেদের মধ্যে গল্প শুরু করল। পুপুকে ওরা ওদের
দলে নেয় না। পুপুকে দেখে দু’জনেই বলে উঠল, “এই, এখান থেকে যা। আমরা বড়োরা কথা বলছি।”
পুপু
একটু সরে বারান্দার কোনায় গাছের টবগুলোর পাশে এসে দাঁড়াল। বারান্দা থেকে
দেবদারুগাছটার পাতার ফাঁক থেকে সোনালি থালার মতো চাঁদ দেখতে পেল। আজ পূর্ণিমা।
দূরে কোথাও শাঁখ বাজছে। মনে হয় পূর্ণিমার লক্ষ্মীপুজো হচ্ছে। পুপু চোখ বুজে চাঁদের
দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সে দেখতে পেল, অনেকদূর থেকে যোদ্ধার বেশে সাদা
ঘোড়ায় করে আসছে এক অপূর্ব সুন্দর যুবক। সে পুপুকে তার ঘোড়ায় তুলে নিল। তারপর
জ্যোৎস্নামাখা প্রান্তর ধরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। প্রায় আধঘণ্টা পরে বুবু, মুমুকে বলল, “পুপু কোথায়
গেল রে?”
মেজদি
বলল, “কী
জানি, হাঁদাটা
এখানেই তো ছিল! তাহলে নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে আছে।”
“দেখ না
খুঁজে! আমার পড়া শেষ হয়নি। এখনও কারেন্ট এল না। হ্যারিকেনটা এত দপ দপ করছে না! মনে
হয় তেল কম আছে। মাও এখনও এল না! ক’টা বাজে দেখ তো।”
“এই দিদি, সাড়ে আটটা
বাজে! পুপুকে আমি খুঁজতে পারব না। ও নিশ্চয়ই আলনার পিছনে বা খাটের তলায় লুকিয়ে আছে
গরমের মধ্যে। থাকুক গিয়ে, নিজেই একটু পরে বেরিয়ে আসবে।”
কারেন্ট
আসার একটু আগে সবার অলক্ষ্যে পুপুকে আবার বারান্দায় দেখা গেল। মেজদি দেখতে পেয়ে
জিজ্ঞাসা করল, “কী
রে, কোথায়
ছিলি?”
পুপু
নিজেই জানে না
সে কোথায় ছিল। একটু আগে ‘রুশদেশের রূপকথা’ গল্পের বই থেকে উঠে যেন ফিনিস্ত
এসেছিল তার কাছে! তারপর তার আর কিছু মনে নেই। পুপু জানে, এসব কথা
কাউকে বলা যাবে না। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তক্ষুনি কারেন্ট চলে আসায়
কথাটা চাপা পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে দরজার কড়াটাও নড়ে উঠল। পুপুদের মাও ফিরে এসেছেন।
টিউবের
সাদা আলোতে পুপু দেখতে পেল,
টিয়াপাখির গায়ে সে লাল রঙ করে ফেলেছে। আর ঠোঁটে দিয়েছে গাঢ় সবুজ রঙ। সে মাথায়
হাত দিয়ে বসে রইল। অবন্তী দিদিমণি খুব রাগী। এখন কী হবে? খাতার পাতা
ছেঁড়া যায় না। তাদের স্কুলের দিদিমণিরা তাহলে আরও বকবেন। তবে পাখিটা ভারি সুন্দর
দেখতে হয়েছে। এমন লাল টুকটুকে পাখি সে আগে কখনও দেখেনি। তবে পাখনায় হালকা কালো আর
বাদামি রঙ দিয়ে এমন সুন্দর কাজ তো সে নিজে করেনি! এগুলো কে এঁকে দিল? পুপু মুগ্ধ
দৃষ্টিতে পাখিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভারি সুন্দর পাখি তো! তার সামনে আস্তে আস্তে
পাখিটা সজীব হয়ে উঠতে থাকে। খাতার পাতায় বসে আলতো ঘাড় নাড়ায় যেন! পুপু ভয় পেয়ে
খাতাটা বন্ধ করে রাখল। তার খুব ভয় করছে। অবন্তীদির রাগী রাগী মুখটা মনে পড়ছে।
কারেন্ট
চলে আসতেই পুপু তার প্রিয় গল্পের বই ‘রুশদেশের রূপকথা’ খুলে পড়তে
বসল। তার প্রিয় গল্প ‘ঝলমলে
বাজ ফিনিস্ত’। এই
গল্পটার মধ্যে সে নিজেকে খুঁজে পায়। এখানেও দুই দিদি ছোটোবোনের সঙ্গে খুব খারাপ
ব্যবহার করে। পুপুর সঙ্গেও রাতে শুতে এসে মেজদি খুব খারাপ ব্যবহার করে। মা আর বড়দি
একটা ঘরে, পুপু
আর মেজদি আরেকটা ঘরে ঘুমায়। মেজদি শোবার সময় রোজ পুপুকে ঠেলে ঠেলে প্রায় খাটের
বাইরে বার করে দেয়।
পুপুর
রেষারেষি ভালো লাগে না। সে চুপ করে শিক লাগানো জানালার রোয়াকে এসে পা মেলে বসল। গভীর
রাত। মেজদি ঘুমিয়ে পড়েছে। জানালা দিয়ে দুধসাদা জ্যোৎস্না এসে পড়েছে। পুপুর খুব
বাবার কথা মনে পড়ছে। বাবার বদলির চাকরি। মাঝে মাঝে আসেন। স্কুলের ছুটি পড়লে তারা
সবাই বরানগর থেকে বাবার কোয়ার্টারে গিয়ে থাকে। পুপুর বাবা কৃষ্ণেন্দু দত্ত রেলের ইঞ্জিনিয়ার, এখন
পুরুলিয়ায় পোস্টেড। পুপুকে তার বাবা বলেছেন, তাদের বাড়ির লাগোয়া এই সুবিশাল বাগান
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুপ্তনিবাস ছিল। একদিন দুপুরে বাবার সঙ্গে পুপু বাগানে
বেড়াতে এসেছিল। তখন তাকে বাবা বাগানের লোহার গেটের কাছে একটা পাথরের ফলক দেখান।
তাতে লেখা ছিল, ‘অবনীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের গুপ্তনিবাস’। পুপুকে
তার বাবা জন্মদিনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বইও কিনে দিয়েছেন। মাসে মাসে বাবা
বাড়ি আসেন। তবে সব মাসে আসতে পারেন না। তখন পুপু খুব মনমরা হয়ে যায়। সে
বাবাকে প্রায়ই পোস্টকার্ডে চিঠি লেখে।
জ্যোৎস্নাপ্লাবিত
অপূর্ব চারদিক। সামনের দেবদারুগাছের লম্বা লম্বা খাঁজকাটা পাতাগুলো আলো আর হাওয়ায়
যেন আনন্দে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। পুপু ফিসফিস করে ডাকল, “ফিনিস্ত!
ফিনিস্ত!”
সে
যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। তারপর সে দেখতে পেল আলোকিত আকাশ বেয়ে এক বিশাল বাজপাখি
এসে বসল পুপুর সামনের জানালার কার্নিশে। তারপর পরপর দুটো পাখার ঝাপট মেরে সে হয়ে
গেল সুদর্শন যোদ্ধা ‘ফিনিস্ত’। জানালার
শিক গলে ফিনিস্ত এসে বসল পুপুর পাশে জানলার রোয়াকে। বলল, “বল
রাজকুমারী, তোমার
জন্য কী করতে পারি?”
“রাজকুমারী?” পুপু বলল।
“রাজকুমারীই
তো!”
“আমার
স্কুলের খাতায় পাখির গায়ের রঙ ভুল হয়েছে।”
“ভয় পেয়ো না।
কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তোমার পাশে।”
“সত্যি?”
“সত্যি, সত্যি।”
“তুমি সত্যি
না স্বপ্ন, আমি তো বুঝতেই পারি না। আমায় তোমার একটা পালক দেবে, ঝলমলে বাজ
ফিনিস্ত?”
“নিশ্চয় দেব।”
খুব
ভোরে কুবো পাখির ‘কুব
কুব’ ডাকে
ঘুম ভেঙে গেল পুপুর। সে নিজেকে জানালার রোয়াকে আবিষ্কার করল। সে অবাক হয়ে দেখল, জানলার
কার্নিশে একটা ছাইরঙা পাখির পালক পড়ে আছে। পুপু খুব আনন্দে যত্ন করে সেটা তার
স্কুলে যাবার অ্যালুমিনিয়ামের বাক্সে তুলে রাখল। স্কুলে
যথারীতি সবাই ছবিতে ঠিকঠাক রঙ করেছে। পারেনি শুধু পুপু। সারাটা দিন ভয়ে সে জড়সড়
হয়ে থাকল। আঁকার ক্লাসে অবন্তী দিদিমণি ঢুকতেই পুপুর বুক শুকিয়ে গেল। ক্লাস টু-এর
ক্লাস হয় একতলায়। তাদের ক্লাসের সামনেই সুন্দর খোলা মাঠ, আর একটা
মস্ত নিমগাছ। ঐ মাঠেই পুপুদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। ক্লাসের সামনে থাম
দেওয়া লম্বা বারান্দা। এই স্কুলের নিয়মকানুন খুব কড়া। স্কুলে এসেই জুতো খুলে র্যাকে
রেখে আসতে হয়। স্কুলে থাকতে হয় খালি পায়ে। স্কুলের ঘর-বারান্দা ভারি পরিষ্কার আর
ধোয়ামোছা। ঐ বারান্দায় বসে তারা টিফিন খায়। টিফিনও স্কুল থেকেই দেওয়া হয়। সবার
জন্য দুধ, গ্লুকোজ
বিস্কুট আর রসগোল্লা। কেউ টিফিন না খেলে তাকে কড়া শাস্তি দেওয়া হয়। তার মধ্যেই কোনও
কোনও ছেলেমেয়ে না খেয়ে বিস্কুটের টুকরো মাঠে ফেলে দেয়। সারাবছর তাই স্কুলের মাঠে
নানারকম পাখি আসে। কাক,
শালিখ, চড়ুই, বুলবুলি, ছাতারে, পায়রা এইসব।
অবন্তী
দিদিমণি পুপুর খাতা হাতে নিয়েই চিৎকার করে উঠলেন, “কমলিকা, তুমি এইরকম
লাল পাখি কখনও দেখেছ?
এমন রঙ কেন করলে?”
পুপু
গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। তার উপর বকুনি খেলে তার আরও কথা
গুলিয়ে যায়। একবার ভাবে বলবে যে, ‘কাল সারা সন্ধে কারেন্ট অফ ছিল। হ্যারিকেনের লাল আলোতে রঙ
বুঝতে পারিনি।’ কিন্তু কথাবলিয়ে মেয়ে সে নয়। বাড়িতেই
দুটো একটা কথা বলে। তাই ভয় পেয়ে চুপ করে রইল। হঠাৎ
সামনের দিকে তাকিয়ে পুপু অবাক হয়ে গেল। দেখল, স্কুলের মাঠে অপূর্ব সুন্দর একটা
পাখি এসেছে। তার গায়ের রঙ টকটকে লাল। ডানায় আর লেজে সূক্ষ্ম কালো আর বাদামি
কারুকার্য। ঠোঁটটা গাঢ় সবুজ। পুপুর দৃষ্টি অনুসরণ করে অবন্তীদি মাঠের দিকে তাকিয়ে
একেবারে হাঁ হয়ে গেলেন। এমন আশ্চর্য পাখি তিনি জীবনে প্রথম দেখছেন। পাখিটাকে আরও
কাছ থেকে দেখবেন বলে তিনি যেই চেয়ার থেকে উঠেছেন, অমনি পাখিটা হুশ করে একমুহূর্তে
কোথায় যেন উড়ে চলে গেল! হতবাক অবন্তীদি আর একটা কথাও বললেন না। পুপুর খাতার আঁকার
নিচে সই করে শুধু লিখলেন,
‘ভেরি গুড’।
ক’দিন ধরে পুপুর
শরীরটা ভালো নয়, খুব
জ্বর। আজ কয়েকদিন ধরে তাই সে মায়ের কাছে ঘুমাচ্ছে। মায়ের গায়ের গন্ধটা পুপুর খুব
ভালো লাগে। জ্বরের ঘোরে সে দেখে, মা তার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন। এ ঘর থেকে জানালা দিয়ে
বাইরেটা আর দেখা যায় না। কারণ, পায়ের কাছের জানালাটা মা বন্ধ করে রাখেন। ওদিকে
পাড়ার অন্য বাড়ি আছে। হাওয়ায় পর্দা উড়ে গেলে খাট-বিছানা দেখা যাবে। এ ক’দিন পুপুর
খুব ফিনিস্তকে মনে পড়ছে। সে গভীর রাতে ফিনিস্তের পাখার ঝাপট শুনতে পায়। ফিসফিস করে
বলে, “রাগ
কোরো না ফিনিস্ত, আমি
তোমার কাছে আসব। আমি ভালো হয়ে গেলেই আবার আমাদের দেখা হবে।”
সাতদিনের
মধ্যেই পুপুর অসুখটা খুব ঘোরালো হয়ে উঠল। পুপুর বাবা এসেছেন খবর পেয়ে। কোনও ওষুধে
তেমন কাজ হচ্ছে না। এক রাতে পুপুর মা রূপা স্বপ্ন দেখলেন, কারা যেন
খুব গভীর আলাপ-আলোচনায় মগ্ন। তারা সব আলোকিত জ্যোতির্ময় পুরুষ। তারা যেন বলছেন, “পুপুকে এই
পৃথিবীর বড়ো প্রয়োজন। ওই একমাত্র স্বপ্নকে রূপ দিতে পারে। পুপু এক অসামান্য শিশু।
ওকে খুব সাবধানে রাখতে হবে।”
তারপর
রূপার মুখের কাছে তারা যেন একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। তাদের
শরীরের তীব্র আলোর ছটায় রূপার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি তার স্বামীকে ডেকে তুললেন। তারপর
দু’জনেই সবিস্ময়ে দেখলেন,
পুপু বিছানায় নেই। রূপা ছুটে এলেন পাশের ঘরে। খাটের উপর পুপুর দুই দিদি গভীর
ঘুমে মগ্ন। পুপু বসে আছে পশ্চিমের খোলা জানালার
রোয়াকের উপর। জানালার রোয়াকে পুপুর পাশে বসে আছে এক সুবিশাল ধূসর বর্ণের বাজ বা
ঈগল জাতীয় পাখি। পাখিটার শরীর থেকে এক অদ্ভুত আলো বের হচ্ছে। এরকম ধরনের পাখি এই
পৃথিবীতে কোনও ছবিতেও তিনি দেখেননি। পাখিটা তার ডানা দিয়ে পুপুকে গভীর মমতায় জড়িয়ে
রেখেছে তার শরীরের সঙ্গে। রূপা ভয়ে কৃষ্ণেন্দুর হাতটা চেপে ধরলেন। কৃষ্ণেন্দু
হাতের ইশারায় রূপাকে চুপ করতে বললেন। কৃষ্ণেন্দুর মনে হল, এই পাখি
পুপুর কোনও ক্ষতি করবে না। তিনি সবিস্ময়ে আরও লক্ষ করলেন, তাঁদের জানালা
থেকে একটু দূরেই আকাশের বেশ মাঝারি উচ্চতায় এক তীব্র আলোকিত উড়ন্ত চাকি ভেসে
বেড়াচ্ছে।
_____
অলঙ্করণঃ
রূপশ্রী নাথ
আরো কিছুটা চললে ভাল লাগত। ফ্যান্টাসির মায়াবী জগত। হ্যারিকেনের আলোয় রঙ চিনতে না পারার পুরনো স্মৃতিটা উসকে দিল বেশ গল্পটা।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ। পুপুকে নিয়ে আরও কয়েকটি গল্প লিখে ফেলেছি।
ReplyDelete