মুম্বই-এর জুহু বিচে ভেসে আসা ব্রাইড’স হোয়েল |
পরিত্রাণ
দেবব্রত দাশ
“কতদিন পর এই জুহু বিচে
এলাম বল তো, টুবাই?” দিবানাথ বালুকাবেলায় একটা জুতসই জায়গা বেছে নিয়ে বসতে বসতে জিজ্ঞেস
করলেন নাতি টুবাইকে।
“গত বছরেই তো এই মাসে,
মানে মার্চে, না না, মার্চে নয়, ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে এসেছিলাম জুহুতে। তাই না গ্র্যান্ড পা?”
“আবার গ্র্যান্ড পা!” দিবানাথের
কণ্ঠস্বরে মৃদু অনুযোগ, “দাদান কী দোষ করল? কত সুন্দর, মিষ্টি একটা সম্বোধন!”
“দুঃখিত, দাদান,” মুখ কাঁচুমাচু
করে টুবাই, “তুমি দেখো, এখন থেকে আর একবারের জন্যেও ভুল হবে
না আমার।”
“টুবাই, তোকে একটা কথা
বলি শোন। মাতৃভাষাকে কখনও অবজ্ঞা করিস না। ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, জার্মান, রাশিয়ান
- সবাই মাতৃভাষায় কথা বলতেই ভালোবাসে। আর শুনলে খুশি হবি তুই, ইউনেসকোর বিচারে
বাংলাভাষা পৃথিবীর মধুরতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।”
“তাই, দাদান!” আনন্দের
ছটায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বারো বছরের কিশোরের চোখমুখ।
“টুবাই, তোর স্মৃতিশক্তি
কিন্তু আর একটু জোরালো হওয়া দরকার।” দিবানাথ আগের প্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে বলেন, “জুহু বিচে আমরা এসেছিলাম ফেব্রুয়ারিতে নয়, ২০১৬-র
২৯শে জানুয়ারির সকালে। কেন এসেছিলাম, সেটা নিশ্চয়ই তোর মনে
আছে?”
“থাকবে না আবার! উরিব্বাস,
কী বিশাল সাইজ ছিল তিমিটার!” টুবাই ধারাবিবরণী দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে, “আমরা যেখানটায়
বসে আছি এখন, এর থেকে বাঁয়ে ওই যে ওইখানটাতে জল থেকে অনেকটাই
ওপরে পড়ে ছিল বডিটা।”
“শাবাশ! আমার নাতি বলে
কথা,”
উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেন না দিবানাথ, “মেরিন ইঞ্জিনিয়ার
হয়ে যখন আমি জাহাজে জাহাজে ঘুরে বেড়াচ্ছি সাগরে-মহাসাগরে, তখন
থেকেই এই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীটার ওপর কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে আমার। ওহ্, তুই তো আবার
স্তন্যপায়ীর মানে বুঝবি না! স্তন্যপায়ী হল গিয়ে mammal।
“তিমি তাহলে মাছ নয়,
দাদান!”
“না, মাছ নয়। তিমি আর
ডলফিন মাছ নয় - ম্যামাল। এরা ডিম পাড়ে না, বাচ্চার জন্ম দ্যায়। সেই বাচ্চা মায়ের দুধ
মানে, স্তন্য পান করে। তিমি হল গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো প্রাণী।”
“হাতির চেয়েও বড়ো,
দাদান!” বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলে পড়ে টুবাইয়ের।
“শুধু বড়ো নয় রে, তুলনাই
চলে না দুয়ের মধ্যে! নীল তিমি মানে Blue Whale আকারে কত বড়ো হতে পারে জানিস? দৈর্ঘ্যে প্রায় একশো ফুট, আর ওজন কত শুনলে চোখ কপালে উঠে যাবে তোর।”
“কত, দাদান?”
“এ যাবত সবচেয়ে বড়ো যে ব্লু
হোয়েলের সন্ধান পাওয়া গেছে তার ওজন ১৯০ টন,” দাদান টুবাইয়ের হাঁ হয়ে যাওয়া মুখের
দিকে তাকিয়ে বলেন, “তুই তো জানিস, এক টনে ১০ কুইন্ট্যাল, মানে ১০০০ কিলোগ্রাম।”
“তাহলে দাদান, ওজন দাঁড়াচ্ছে ১,৯০,০০০ (একলক্ষ নব্বই হাজার) কিলোগ্রাম!”
“হ্যাঁ, তাই। হাতি রয়েছে
দ্বিতীয় স্থানে। আফ্রিকান হাতি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাণী।”
“কিন্তু দাদান, গতবছর তুমি তো এতসব
ইন্টারেস্টিং ইনফর্মেশন শোনাওনি আমায়!”
“আরে, সময় পেলাম কই? সেদিন দুপুরেই তো
জাহাজ ধরতে বেরিয়ে পড়লাম!” মৃদু হেসে জবাব দিলেন দিবানাথ, “আমার
চাকরিটাই এমন যে, বছরে একবার মাত্র মাসখানেকের ছুটিতে বাড়ি
আসা।”
“বলো দাদান, যা বলছিলে বলো।”
“হ্যাঁ,” দিবানাথ আবার
শুরু করেন, “বুঝলি টুবাই, আশ্চর্য এক প্রাণী এই তিমি! শুনলে
অবাক হবি, তিমি আর ডলফিন তাদের ফুসফুস মানে লাংসের সাহায্যে বাতাস থেকে অক্সিজেন
নিয়ে শ্বাসকার্য চালায়।”
“তা কেমন করে হবে? তিমি তো জলে
থাকে!”
“শ্বাস নেওয়ার জন্যে তাকে
জল থেকে বেরিয়ে আসতেই হয়। একবার শ্বাস টেনে নিয়ে তিমি বহুক্ষণ জলের মধ্যে ডুব দিয়ে
থাকতে পারে। তিমির এক প্রজাতি ‘স্পার্ম হোয়েল’ পারে ৯০ মিনিট পর্যন্ত। আর ডলফিন
এবং অন্যান্য তিমিরা সে জায়গায় ২০ মিনিট। কতবার জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে তিমিকে শ্বাস
নিতে দেখেছি। ফোয়ারার মতো জল বেরোতে থাকে মাথার উপরের অংশে থাকা বিশাল ফুটোর ভেতর
দিয়ে,
যার নাম Blow Holes। আসলে, ব্লো হোলস হল
গিয়ে রূপান্তরিত নাসারন্ধ্র, মানে Modified Nostrils।”
“তিমি তাহলে জলে না থেকে
ডাঙায় থাকলেই পারত! খামোকা জলে থাকতে গেল কেন?”
“খুব সুন্দর প্রশ্ন
করেছিস, টুবাই,” খুশি হয়ে নাতির মাথায় হাত রাখেন দিবানাথ, “মোটেই
খামোকা নয়, প্রয়োজন বলেই থাকে। আসলে শরীরের যা ওজন, ডাঙায় থাকলে সেই চাপে দেহের ভেতরের সব অর্গানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কাজ
বন্ধ করে দিত আর তাছাড়া তিমির শরীরে এত চর্বি যে দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকরকম
বেড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটাত তিমির। গতবছর জুহুতে বসেই তোকে বলেছিলাম মনে আছে কি? তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনের সমুদ্রসৈকতে মাত্র সতেরো দিন আগে ১২ই জানুয়ারি কী
হয়েছিল?”
“বলেছিলে বুঝি, দাদান?”
আমতা আমতা করে টুবাই, “সেটা মনে না থাকলেও এটা মনে আছে, জুহুতে ভেসে আসা তিমিটা ছিল ‘Bryde’s Whale’ আর তার দৈর্ঘ্য ছিল চল্লিশ ফুটের
কাছাকাছি।”
“গুড,” আংশিক খুশি হয়ে
মন্তব্য করেন দিবানাথ, “আমার জিন যখন রয়েছে তোর শরীরে, তখন এই বুড়ো বয়েসেও
আমি যা যা মনে রাখতে পারছি, তোরও একইরকম পারা উচিত বা তার
চেয়েও বেশি।”
“পারতাম, কিন্তু...”
“কিন্তু, কী? আজেবাজে
অজুহাত খাড়া করবি না, টুবাই!”
“আজেবাজে অজুহাত নয় দাদান,” আত্মবিশ্বাসের
সঙ্গে সপ্রতিভ জবাব দেয় টুবাই, “সারাবছর স্কুলে হাজারো
টাস্ক-টেস্ট, মাথায় আর কত কী থাকবে!”
“একদম ঠিক কথা,” দিবানাথ নাতির
পক্ষ নিয়ে বলে ওঠেন, “মানছি টুবাই, আসলে কী জানিস, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তোদের শৈশব-কৈশোর শেষ করে দিয়েছে।”
“যাক গে, এবার তুমি
তুতিকোরিন এপিসোডটা শোনাও।”
“২০১৬-র ১২ই জানুয়ারি
প্রায় শ’খানেক পাইলট হোয়েল ভেসে এসে আটকে পড়েছিল তুতিকোরিনের তটভূমিতে। মাঝিরা
দিনরাত্তির একাকার করে তিমিগুলোকে সমুদ্রে ফেরত পাঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল। তবুও আবার ফিরে এসে মারা গিয়েছিল
৪৫টারও বেশি তিমি।”
“দাদান, অত আগে যাওয়ারই
বা দরকার কী! এবছর এই ২০১৭-তেই গত মাসে, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে
নিউজিল্যান্ডের সংকীর্ণ উপসাগরে আটকে গিয়ে মারা গেল তিনশোরও বেশি পাইলট হোয়েল।”
“তুই তাহলে পড়েছিস
সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদন? কিন্তু এটা কি জানিস, কেন এমন বিভ্রান্ত হয় প্রায়ই তিমির
দল?”
“পড়েছি দাদান, তবে ভালো
বুঝিনি।”
“বিজ্ঞানীরাও এখন পর্যন্ত
সবটা বুঝে উঠতে পারেননি,” দিবানাথ বিষণ্ণভঙ্গিতে পড়ন্ত বিকেলের অস্তমিত সূর্যের
আভায় আলোকিত আকাশের দিকে চেয়ে বললেন, “সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ অবশ্য তাঁরা উল্লেখ
করেছেন। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করতে করতে যখন কোনও একটি বা কয়েকটি তিমি
দিগভ্রান্ত হয়ে সংকীর্ণ উপকূলে ঢুকে পড়ে, তখন সবক’টাই তাদেরকে অনুসরণ করে
শেষপর্যন্ত আটকে পড়ে এবং নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তোলে।
“হঠাৎ করে আবহাওয়ার
অস্বাভাবিক পরিবর্তন, সমুদ্রের তলদেশে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প তিমিগুলিকে বিপথগামী করতে পারে। এছাড়া, সমুদ্রগামী জলযানের সন্ধানে জলের তলায় নিম্নকম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ ‘SONAR’ (Sound Navigation And Ranging) সৃষ্টি করার ফলে
তিমির কানে ও মস্তিষ্কের টিসুগুলিতে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে এবং তার জন্যে ভুল পথে
চালিত হতে পারে তিমি। আসলে ওই শব্দতরঙ্গকে আক্রমণকারী মনে করে তিমির দল
আতঙ্কগ্রস্ত হয়েই হয়তো তটভূমিতে চলে আসে এবং আটকে পড়ে।”
“কিন্তু দাদান, জুহুতে তো একটা মাত্র
তিমিই এসেছিল, মরা তিমি!”
“ঠিক, টুবাই।” দিবানাথ
বলেন, “বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রলারের ধাক্কায় আহত হয়ে মারা গিয়ে সৈকতে ভেসে
এসেছিল ওই তিমিটা। এরকমই ঘটেছিল ২০১৫-র ২৯শে জুন মহারাষ্ট্রের কোঙ্কণ উপকূলে
আলিবাগ থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণের তটভূমিতে। ৪২ ফুট লম্বা এবং ২০ টন ওজনের বিশাল ‘ব্লু
হোয়েল’ আধমরা অবস্থায় এসেছিল। সমুদ্রে ফেরত পাঠানোর ক্রমাগত চেষ্টা সত্ত্বেও ১০
ঘণ্টার সংগ্রাম শেষে মৃত্যু ঘটেছিল তিমিটার।”
“আচ্ছা দাদান, ওই যে তুমি বললে,
দেশবিদেশের সাগর-মহাসাগরে ঘুরতে ঘুরতে তোমার মায়া পড়ে গিয়েছিল তিমির ওপর... আরও কত
কত সামুদ্রিক প্রাণী তো রয়েছে, তাদের ওপর নয় কেন?”
“আরে, না না! সবাইকেই আমি
ভালোবাসি, তবে তিমির ওপর আমার পক্ষপাতিত্বের একটা কারণ আছে,” দিবানাথের চোখে-মুখে
নানান অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে, “অনেক অনেক বছর আগের কথা। তোর মা-বাবা জানে, তোকে বলা হয়নি। এই যে একটু আগে
নিউজিল্যান্ডের কথা বললি, তাতেই মনে পড়ে গেছে আজ আবার। যা ঘটেছিল তা ভাবলে এখনও আতঙ্কে শিউরে উঠি।”
গল্পের গন্ধে দিবানাথের
গা ঘেঁষে বসে টুবাই,
“বলো বলো, কাটছাঁট না করে পুরোটা বলবে কিন্তু, দাদান।”
“গত শতাব্দীর ঘটনা,” দিবানাথ স্মৃতি
হাতড়াতে থাকেন, “১৯৯৮-এর ফেব্রুয়ারি। দিনক্ষণও ভুলিনি। ভোলার কথা নয়। তারিখ ২৩, সূর্যের অবস্থান
অনুযায়ী স্থানীয় সময় বেলা এগারোটার এদিক ওদিক হবে। আমার জাহাজ চলেছে প্রশান্ত মহাসাগরের
ওপর দিয়ে নিউজিল্যান্ডের দিকে। দূরে হঠাৎ নজরে এল সবুজের আভাস। নিশ্চয়ই কোনও দ্বীপ।
“জাহাজের ক্যাপ্টেনের
সুনজরে ছিলাম আমি। ভদ্রলোক স্প্যানিশ। কাজ চালানোর মতো ইংরেজি বলতে পারেন। আমি
পাশেই ছিলাম। আমার উদ্দেশে তিনি যা বললেন, তার বাংলা করলে দাঁড়ায় - এত এতদিন
মাটির ছোঁয়া না পেয়ে সবারই প্রাণ আইঢাই। ওই সবুজ বনানীঘেরা দ্বীপের বালুকাবেলায়
গিয়ে চানটান সেরে দিনভর সবাই মিলে চড়ুইভাতি করলে কেমন হয়? আনন্দ-ফূর্তি
হবে, অবসাদও কাটবে। তোমার কী মত? আমি
সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম, আপনার এমন লোভনীয় পরামর্শের বিরোধিতা করার প্রশ্নই ওঠে
না। আমার মনে হয় অন্যরাও লুফে নেবে।
“দ্বীপটা থেকে দু-আড়াই
কিলোমিটার দূরে নোঙর করল আমাদের জাহাজ। কার্গো শিপ তো, সব মিলিয়ে আমরা ছিলাম জনা
চল্লিশ। একজন যাত্রী বহন করতে পারে এমন দশটা ফাইবার গ্লাসের বোট ছিল, আর চারজনকে
নিয়ে চলার মতো বোট চারটে। ঠিক হল, ওই সিঙ্গল প্যাসেঞ্জার বোটে দ্বীপের উদ্দেশ্যে
রওনা হবে দশজন। সেই সাথে দুটো বড়ো বোটে করে খাবারদাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়
কিছু সামগ্রী নিয়ে পাড়ি দেবে দু’জন। তারপর বাকি দুটো বোট কয়েকবার পারাপার করে দ্বীপে
পৌঁছে দেবে সব্বাইকে।
“আমার তর সইছিল না, তাই আগেভাগেই উঠে
বসলাম সিঙ্গল বোটে। পাশাপাশি চলেছে আরও ন’টা বোট। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, দুটো বড়ো বোটও রওনা হয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কী করে যেন আমি দলছুট হয়ে
একপাশে সরে গেলাম। এক কিলোমিটার যেতে না যেতেই হঠাৎ বড়সড় কোনও প্রাণী তার বিশাল
হাঁ-মুখ বের করে আমার বোটের পাশে ভেসে উঠল। আমি সভয়ে চেয়ে দেখলাম, সেটা খুবই বড়ো আকারের এক ‘গ্রেট হোয়াইট শার্ক’। ভয়ংকর-রকমের হিংস্র হাঙর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার
বোট টালমাটাল হয়ে উলটে গেল।”
“তুমি জলে পড়ে গেলে,
দাদান!”
“জলে পড়লাম তো বটেই, মৃত্যুদূত তখন
আমার কয়েক হাত দূরত্বের মধ্যে। আমি যখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি, তখন
ঘটল অত্যাশ্চর্য এক আবির্ভাব। ভুস করে ভেসে উঠল ‘long-finned pilot whale’ গ্রেট হোয়াইট শার্ক আর আমার ঠিক মাঝখানে। লং ফিন্ড পাইলট হোয়েল তো আসলে
এক জাতের সামুদ্রিক ডলফিন। বড়ো আকারের জন্যে তিমিগোষ্ঠীভুক্ত
এরা। তারপর যা ঘটল তা অতি বড়ো কল্পনাবিলাসীও কল্পনা করতে পারবে
না। আমাকে পিঠে চাপিয়ে নিয়ে দ্রুত সাঁতার কেটে পৌঁছে দিল দ্বীপের বেলাভূমিতে।”
“আর ওই গ্রেট হোয়াইট
শার্ক? কিছু করল না?”
“সংবিৎ ফিরে পেয়ে আমি
দেখলাম, কিছু দূরে উথালপাথাল, জলের রঙ লাল হয়ে উঠছে ক্রমশ। আসলে নিজে আক্রান্ত হয়ে
আহত অবস্থাতেও ওই লং ফিন্ড পাইলট হোয়েল আমাকে রক্ষা করেছিল।”
এই পর্যন্ত বলে দিবানাথ
থামলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “মানুষই যেখানে মানুষের বিপদে মুখ ঘুরিয়ে
চলে যায়, সেখানে এমন পরোপকারী মনুষ্যেতর জীবের কথা ভোলা যায়, বল! জানিস টুবাই, আমার কাছে আজও বিস্ময়, বুঝে পাই
না, সেদিন কেমন করে বেঁচে গিয়েছিলাম আমি!”
“তোমাদের পিকনিক হয়েছিল
তারপর ওই দ্বীপে?”
“তোর কী মনে হয়?” দিবানাথ
বিস্ময়ভরা দৃষ্টি মেলে টুবাইয়ের মুখের দিকে তাকান, “হতে পারে
ভাবলি কেমন করে! বড়ো বোটদুটোতে চেপে আমরা জাহাজে ফিরে না গেলে সেদিন হাঙরের দল
জমিয়ে পিকনিক করতে পারত।”
“তারপর দাদান?”
“তারপর আর কিছু নেই। নটেগাছটি মুড়োল, আর আমার
গপ্পও শেষ,” দিবানাথ বললেন, “এবার ওঠ, এতক্ষণে তোর মা-বাবা দু’জনেই হয়তো কাজ
সেরে বাড়ি ফিরে এসেছে, আর তোর ঠাম্মু আমাদের দু’জনকে নিয়ে খুব চিন্তা করছে
নিশ্চয়ই।”
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment