গল্প
নিয়ে স্বল্প গল্প
সবর্না
চ্যাটার্জ্জী
গল্প।
ভীষণ ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু গুরুত্বটা বোধহয় একটি শিশুও টের পায়।
শুধু শৈশব নয়, পরিণত বয়সেও কর্মব্যস্ততায় নাজেহাল আমাদের একটা মানসিক শান্তির বিষয় এই গল্প।
বেশ কিছুদিন আগে খবরের কাগজে পড়া একটা ঘটনায় বেশ আপ্লুত হলাম।
একটি ভীষণ সুন্দর প্রচেষ্টা, গল্প বলার ও গল্প শোনানোর। সল্টলেকের
একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজিত হয়েছিল দুই গল্পদিদির আসর। দক্ষিণ
কোরিয়ার সিঙ্গা কিম ও কলকাতার প্রিয়াঙ্কা চ্যাটার্জ্জী। এভাবেই
সিঙ্গা কিমের ‘কে স্টোরি টেলিং ওয়ার্ড ট্যুর’-এর কলকাতা পর্বের আরও একটা দিন কেটে গেল।
হাওড়া ও সোনারপুরের স্কুলগুলো, রোল্যান্ড রোডের প্লে স্কুল ও জ্ঞানমঞ্চে অনুষ্ঠিত গল্পের আসরের মধ্য দিয়েই
তারা তাদের ‘গ্লোবাল স্টোরিজ শেয়ার্ড লোকালি’ প্রকল্পের বাকি কাজগুলো শেষ করতে চান।
বর্তমান সমাজে যেখানে হারিয়ে গেছে বাড়িতে বসে দাদু-ঠাকুমার কাছে
গল্প শোনার দুর্লভ
মুহূর্ত, সেখানে এমন প্রচেষ্টা সত্যিই দুধের
সাধ ঘোলে মেটানো তো বটেই।
খুদে বন্ধুরা
কিন্তু সকলেই গল্প শুনতে ভালোবাসে। ভূতপ্রেত, রাক্ষসের গল্প থেকে শুরু করে ঈশপের গল্প, জাতক, বিক্রম বেতাল কিংবা আরব্য রজনী বা রুশদেশের উপকথা, এসব
গল্প শুনেই একসময় আমরাও বড়ো হয়েছি। তবে
আজকাল বাচ্চাদের মধ্যে হয়তো এদের জনপ্রিয়তা কমেছে। তার বদলে এসেছে
পোকেমন, ডোরেমন, নিনজা হাতৌরি কিংবা
ছোটা ভীম। হতে পারে ঠাকুমার ঝুলির গল্প
আজ তাদের কাছে সেভাবে হয়তো পৌঁছায়নি, কিন্তু এরূপ প্রচেষ্টায় সঠিক বক্তা পেলে এসব গল্পও
অবশ্যই আবার আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। বতর্মানের
একলা শিশুর জগতে তাই সঙ্গী এখন পেশাদারী স্টোরি টেলাররা। শুধু
শিশু নয়, মানসিক ক্লান্তি থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে এঁরা
কখনও পৌঁছে যান বৃদ্ধাশ্রমে, কখনও বা কর্পোরেট কম্পানিগুলোতেও।
গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে আমেরিকার টেনিসি প্রদেশে এই ধারাটির জন্ম।
ভারতে প্রচলিত হয় মোটামুটি কুড়ি বছর আগে। এই
বিষয়ে বেঙ্গালুরুর গীতা রামানুজম ও চেন্নাইয়ের এরিক মিলার উল্লেখযোগ্য।
তবে আমাদের সময় গল্পের আসর উপভোগ করতাম বাড়িতে মা-ঠাকুমার কাছেই।
মনে আছে, ছেলেবেলার
গল্প শোনার কথা। ঠাকুমা-দাদুর সান্নিধ্য থাকলেও
আমার ক্ষেত্রে মা-ই ছিল প্রধান গল্পকথক। রোজই
বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমায় নানান গল্পের মধ্য দিয়ে সময় কাটত আমার। খাওয়া
বা ঘুমপাড়ানোর সময়টাই প্রধানত ছিল গল্প শোনার সময়।
গড়িয়ে গড়িয়ে
অনেকটাই বয়স এখন। ভোর ছ’টায় অ্যালার্মের সঙ্গে
সঙ্গেই দিনের সূত্রপাত। সংসারের চাপ সামলেই শুরু হয়
মেয়ের সঙ্গে আবার বাচ্চাবেলায় ফিরে যাওয়া। কৌতূহলী
চোখেমুখে দুষ্টুমি মাখা একটা হাসি নিয়ে গুটিগুটি সে এগিয়ে আসে আমার দিকে।
এবার আমায় ঘোড়া হওয়ার পালা। উনি
বীরপুরুষের মতো হাতে তলোয়ার নিয়ে তেড়ে যাবেন কাল্পনিক লড়াইয়ের ময়দানে।
কখনও বা ঘোড়সওয়ারি করতে করতে ভীষণ প্রিয় একটা গানে নেচে ওঠবেন
আর আমার সঙ্গে ক্রমাগত গেয়ে চলবেন, “লকড়ি কি কাঠি, কাঠি পে ঘোড়া!” ছেলেবেলার
এই মুহূর্তগুলোকে অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। কমবেশি
সকলের মনেই এর স্মৃতি কিছুটা আরামদায়ক তো বটেই। কাজের
ফাঁকে আমিও যেন আজও কোথায় হারিয়ে যাই ছেলেবেলায়। দেখি
তখনকার বেশ কিছু অবদমিত ইচ্ছে আজও মনের কোথাও সুড়সুড়ি দেয় পূর্ণ সতেজতায়।
সবার ঘুমের পর তেপান্তরের মাঠে গিয়ে মনে হয় চিৎকার করে ডাকি আমার
‘সিভকা বুর্কা’কে।
মনে আছে, ক্লাস ওয়ানে প্রথম হওয়ায় বইটা পুরস্কার পেয়েছিলাম স্কুলের
অ্যানুয়াল ফাংশনে। রুশদেশের উপকথা।
সেই থেকেই ভালো লাগার শুরু। রোজ
খাওয়ার টেবিলে মায়ের মুখে পাতার পর পাতা শুনতে শুনতে প্রতিটা গল্প যেন আমার নিজের হয়ে
ওঠে একসময়। ভীষণ ইচ্ছা হত বোকা ইভানের
মতো চুল্লির তাকে শুয়ে ব্যাঙের ছাতা খাওয়ার। রাজকুমারী
ভাসিলিসার হাত ধরে ইচ্ছেপূরণ করার। কিংবা
কখনও সিভকা বুর্কার এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরোনো মাত্রই রূপে গুণে রাজকন্যা
হয়ে ওঠার।
রুশদেশের
উপকথা ছাড়াও ঘুমের সময় মায়ের মুখে টুনটুনি রাজার গল্প কিংবা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর গল্প বা ‘বুলবুলপাখি, ময়না, টিয়ে’-র মতো গান শোনা, এগুলোও যেন ছিল এক একটা রূপকথা।
ছুটিছাটাতে মামার বাড়ি গেলে দিম্মার কাছে শুয়ে অলস দুপুরে ঠাকুমার
ঝুলি থেকে উঁকি দিত সোনার কাঠি রূপোর কাঠি, লালকমল নীলকমল, কিরণমালা, কাঁকনমালা,
কাঞ্চনমালা, সাতভাই চম্পা আরও কত কী।
একবার শীতে আসানসোল বইমেলা থেকে দাদু কিনে আনলেন ঈশপের গল্পমালা
আর বিক্রমবেতাল। তখনও গড়গড় করে পড়তে শিখিনি।
তবুও বইগুলো নিয়ে কাটিয়ে দিতাম সারাটা বেলা।
মাকে সারা দুপুর জাগিয়ে রেখে এক-একদিনে শেষ করাতাম এক-একটা বই।
তারপর আবার রিপিটেশন চলত যতদিন না সবক’টা গল্প ঠোঁটস্থ হয়ে যায়।
আমার এক
দাদা, যে আমার চেয়ে বছর চারেকের বড়ো ছিল, একবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল আমার গড়গড় করে বই পড়ার ধরন দেখে।
রোজ শুনতে শুনতে প্রতিটা বইয়ের পাতার খুঁটিনাটি আমার ছিল অতিপরিচিত।
মা কোন জায়গা কীভাবে পড়ে শোনান সেসব হুবহু নকল করতাম।
তাই দাদার সামনে মুখস্থ অক্ষরগুলো পাতা ওলটাতে ওলটাতে নিছক গড়গড়
করে পড়ে যাওয়াটা সে সময় আমার কাছে ভীষণ সহজ হয়েছিল। অথচ
আমার অগ্রজটি নিজেই তখন রিডিংয়ে পোক্ত হয়নি বলে আমার কার্যকলাপ দেখে কিঞ্চিৎ লজ্জিতই
হয়েছিল।
মাকে দেখেছি
গল্প বলার সময় একাধিক চরিত্রে অনুপ্রবেশ করতে। গল্পকে
মনোগ্রাহী করার এটিই ছিল তার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা। সেই কারণেই গল্পগুলো কথনের গুণে শ্রতিমধুর
তো হতই, সঙ্গে সঙ্গে অমরত্ব লাভ করত আমার কল্পনায়।
সেই রীতি আজও চলে আসছে কোনও পরিবর্তন ছাড়াই।
পার্থক্য একটাই, এখন কথক আমি আর শ্রোতা আমার কন্যা।
রূপকথা
হিসাবে তখন বুঝতাম ঠাকুরমার ঝুলি। বাংলা
শিশুসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় রূপকথা সংকলন। সংকলক
ছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। তিনি
রূপকথার গল্পগুলো সংগ্রহ করেছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল
থেকে। তবে সংগৃহীত হলেও দক্ষিণারঞ্জনের
লেখনীর গুণে গল্পগুলো হয়ে উঠে শিশু-মনোরঞ্জক। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বইয়ের
ভূমিকা লিখেছিলেন। আরও একটি বই যা গল্পের আসরে
স্বমহিমায় নিজের জায়গা করে নিয়েছিল তা হল ভারতের প্রাচীনতম গল্পসংগ্রহ জাতক।
জাতক হল ভগবান শাক্যমুনি বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনির সংকলন।
অনেকের মতে ‘জাতক’
হল পৃথিবীর সমস্ত ছোটোগল্পের উৎস। কথিত
আছে, বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য সম্রাট অশোকের পুত্র মহেন্দ্র যখন সিংহলে গিয়েছিলেন
তখন তার সঙ্গে ছিল এই জাতকের কাহিনিগুলো। জাতকের
রচনাকৌশল মধ্যযুগীয় ইউরোপের অনেক রচনাতে গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশ্য
পথপরিক্রমায় মূল গল্প অনেক পরিবর্তিতও হয়েছে। জাতকে
প্রায় সাড়ে পাঁচশো গল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। এসব
গল্পে ধরা পড়েছে প্রায় সহস্র বছরব্যাপী ভারতে প্রচলিত বিভিন্ন রীতিনীতি,
আচার ব্যবহার তথা জীবনচর্চা।
ছেলেবেলায়
খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার গল্প শোনেনি এমন কাউকে বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে
না। এ গল্পটি সহ অসংখ্য শিক্ষণীয়
ও মজার গল্প যিনি লিখেছেন তিনি গ্রীসের বিখ্যাত গল্পকার ঈশপ। ঈশপ
ছিলেন মিশরের ফ্যারাও বাদশাহ আমাসিসের সময়কার লোক। সামস
দ্বীপে তার বাস। ইয়াডমন নামে এক নাগরিকের ক্রীতদাস
ছিলেন তিনি। ঈশপ দেখতে ছিলেন কদাকার।
কিন্তু বুদ্ধিতে ছিলেন অপরাজেয় আর রঙ্গরসে অদ্বিতীয়।
তিনি বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাঁর শিক্ষাপ্রদ অমর কাহিনিগুলো
মানুষকে শোনাতেন। বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস
থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষ ছিলেন তার গল্পের ভক্ত। তাঁর
মৃত্যুর পর গ্রীসের দার্শনিক জিমট্রিয়াস তার গল্পগুলো সংগ্রহ করে রাখেন।
সেই থেকে ঈশপের গল্প আজও সারা বিশ্বের অমূল্য সম্পদ।
আরও কিছু
গল্প সেসময় আমার পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। আলাদিন,
সিন্দবাদের কাহিনি আর আলিফ লায়লা। এগুলো
সবই আরব্য রজনীর গল্প। আরব্য
রজনী হল মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয় গল্প এবং লোককথার একটি সংকলন যা ইসলামের স্বর্ণযুগে
আরবিতে সংগৃহীত হয়েছিল। এটি অ্যারাবিয়ান নাইটস নামেও
পরিচিত।
পশ্চিম,
মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা হতে লেখক, অনুবাদক ও গবেষকগণ বহু বছর ধরে আরব্য রজনীর গল্পগুলো সংগ্রহ করেছেন।
মূলত প্রাচীন ও মধ্যযুগের আরব, পারস্য, ভারত, মিশর ও মেসোপটেমিয়ার
লোককাহিনি ও সাহিত্য এ গল্পগুলোর উৎস। এর
মাঝে অনেক গল্পই খলিফাদের যুগের। বাকিগুলো
পাহলভীয় সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত যার মাঝে কিছু ভারতীয় উপাদান বিদ্যমান।
আরব্য রজনীর মূল আরবি সংস্করণে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ,
আলি বাবা এবং চল্লিশ চোর আর সিন্দবাদের সমুদ্রযাত্রা গল্পগুলো ছিল না।
মধ্যপ্রাচ্যের এসব লোককাহিনি আরব্য রজনীর মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেন
আঁতোয়ান গ্যালেন্ড ও অন্যান্য ইয়োরোপীয় অনুবাদকগণ। আরব্য
রজনীর মূল কাহিনি-কাঠামো গড়ে উঠেছে পারস্যের
রাজা এবং তাঁর নববধূকে ঘিরে। তাঁর
ভাইয়ের বধূর অবিশ্বস্ততা তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। পরবর্তীতে
তাঁর নিজের স্ত্রীর প্রতারণায় তিনি পুরোই হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং এই অভিজ্ঞতা তাঁকে
নারীবিদ্বেষী করে তোলে। তিনি তাঁর স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড
দেন এবং একের পর এক কুমারী বিয়ে করে তাঁদের পরের দিন সকালেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া শুরু
করেন যাতে তাঁরা প্রতারণার সুযোগই না পায়। রাজার
উজির ছিলেন কুমারী সন্ধানের দায়িত্বে। রাজ্যে
আর কোনও কুমারী খুঁজে না পেয়ে অবশেষে উজির নিজের কন্যার সঙ্গে রাজার বিয়ে দেন।
বিয়ের রাতে শাহরাযাদ রাজাকে একটা গল্প বলা শুরু করে কিন্তু শেষ
করে না। রাজা গল্পের শেষ জানতে এতই
আগ্রহী থাকে যে মৃত্যুদণ্ড বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। শাহরাজাদ
একটা গল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরেকটা গল্প শুরু করে। পরের
গল্পটাও রাতের মাঝে শেষ হয় না। এভাবেই
তাঁর মৃত্যুদণ্ড বিলম্বিত হতে থাকে ১০০১ রাত পর্যন্ত।
আরব্য রজনীতে
বিভিন্ন ধরনের গল্প সন্নিবেশিত হয়েছে। এতে
একই সঙ্গে রয়েছে ইতিহাস দ্বারা অণুপ্রাণিত গল্প, প্রেম কাহিনি, বিয়োগাত্মক কাহিনি, রম্যরচনা, কবিতা এবং প্রহসন।
আরব্য রজনী
যখন হাতে আসে তখন ঠাকুমার ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়েছি বহুদিন। সিন্দবাদের
সমুদ্রযাত্রা আমার সারা শরীরে শিহরণ জাগাত। যদিও
এই সময় নিজেই পড়ে উপভোগ করতে পারি, তবুও মায়ের কাছে মাঝেমাঝেই বায়না করতাম গল্পগুলো শোনানোর জন্য।
সামনে বিরাট রাক্ষুসে রকপাখির গা ছমছমে ছবির বর্ণনা মায়ের চেয়ে
আর ভালো কেউ দিতে পারত কি না জানা নেই।
গল্প শোনা
বা গল্প বলা এই জগত সত্যিই আমাদের অবসাদ মুক্ত করে। চেনা
গণ্ডির মধ্যেকার জটিলতাগুলো থেকে সাময়িক মুক্তি তো অবশ্যই পাওয়া যায়।
খুদে ইভানের মতো বুদ্ধিমান হওয়ার বাসনা আজও কোথাও না কোথাও আমার মতো আরও অনেকের মনে
নিজের অজান্তেই ঘুরঘুর করে। তবে
দুঃখের বিষয় হল, পরম বীর বিক্রমাদিত্যের
মতো হাতে তলোয়ার নিয়ে নিঝুম রাতে বেরিয়ে পড়ার কাল্পনিক ইচ্ছেগুলো আজ হারিয়ে যাচ্ছে
নিঃসঙ্গতার অন্ধকারে। নিঃশব্দে
জায়গা করে নিচ্ছে ব্লু হোয়েলের মতো বিভীষিকা। কৃত্রিমতার
যান্ত্রিক জীবন তাই আজ হয়তো গল্প বলাও ভুলতে বসেছে। কিন্তু
কিছু পুরাতন নাই বা হল নতুন, বিশেষত তাতে
যদি অবসাদ দূর হয় যে কোনও বয়সের মানুষের, সেই রীতিকে ধরে রাখার
সফল প্রয়াস আজ ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। মানুষকে
এ-বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
কলকাতা এগিয়ে এসেছে আজ গল্পের আসরকে পুনরুজ্জীবিত করতে।
প্রিয়াঙ্কা চ্যাটার্জ্জীর মতো কবিতা গুপ্ত,
অর্পিতা নাগ স্টোরি টেলারদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য নাম।
বিশিষ্ট প্রকাশক সিগালের ভূমিকা এ-বিষয়ে না বললেই নয়। ২০১২
সাল থেকে প্রতিবছর শিশুদিবস উপলক্ষে ‘পিস ওয়ার্ক’ প্রকল্পের ভিত্তিতে গল্পমেলার আয়োজন করেন
তারা। ছোটো ছোটো বাচ্চাদের বাচিক
প্রতিভা, কল্পনাশক্তির উন্নতিকল্পে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া
হয়। এমন প্রয়াস সত্যিই প্রশংসার
দাবি রাখে। আশা করি ভবিষ্যতে দৈনন্দিন
কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আবার জনপ্রিয়তা ফিরে পাবে গল্প বলার আসর,
নিজের প্রয়োজনীয়তার গুণে।
_____
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, এই সময়
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment