টুকলুর খেলনা রাজ্যে অভিযান
সম্বিতা
“আবার তুই টেডি-বিয়ারের
চোখ খুলে ফেলেছিস?”
মায়ের বকুনিতে কেঁদে
ফেলল টুকলু। মা আরও রেগে বলল, “প্রতিদিনই তুমি খেলনা ভাঙছ। সেদিন তোমার
বাবার কিনে দেওয়া টুট-টুট গাড়িটার চাকা খুলে কোথায় ফেলেছ তা আর পাওয়া গেল না। তোমার দুষ্টুমি চরমে উঠছে। এবার ডে কেয়ারেই তোমাকে
দিতে হবে দেখছি।”
টুকলু অনেক বোঝাতে গেল
মাকে, কিন্তু মা শুনতে নারাজ। টুকলু মাথা নিচু করে নিজের
বিছানাতে শুয়ে পড়ল। তার খুব কান্না পেল। সে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে
পড়েছিল তা সে নিজেও বোঝেনি। যখন ঘুম ভাঙল, দেখল সে একটা
ম্যাপলগাছের নিচে শুয়ে। সেই গাছের পাতার রং অনেকটা হলুদ, সবুজ আর লাল রঙে
মেশানো অদ্ভুত একটা রং। যেন ছবির মতো। এ সে কোন দেশে এসে পড়ল। এ তো রানিদের বাড়ির
ম্যাপলগাছটার মতো। আমাদের বাড়ির কাছে তো এ গাছ দেখিনি। আর সে এখানে এলই বা কী
করে? সে
তো তার বিছানাতে ঘুমিয়ে ছিল। সে হাত দিয়ে চোখ মুছল। না, সে এই জায়গাটা চেনে না। চারদিকে গাছ আর গাছ। এদিক ওদিক ভালো করে দেখল। না, কেউই নেই আশেপাশে। সে
উঠে দাঁড়াল আর উদ্দেশ্যহীনভাবে সামনে পথ চলতে লাগল। চলতে চলতে একটা বিশাল বড়ো
গাছ দেখতে পেল। খানিকটা
গাছবাড়ির মতো। গাছের
খানিকটা কেটে বাড়ির দরজা বানানো হয়েছে। এরকম বাড়ি সিনেমাতে দেখেছে। তার খুব খিদে পেয়ে গেছিল। কাঁদলে যে এত ক্লান্ত লাগে তা
জানা ছিল না। বাড়িটা দেখে সে নিশ্চিন্ত হল। যদি কোনও মানুষের সন্ধান
পাওয়া যায় তাহলে ভালো হত। তার কাছে জল তো পাওয়া যেত। এ যে সে কোথায় এসে
পড়েছে! কোন জায়গা তা ভগবানই জানে। ভয়ে ভয়ে সে এগিয়ে গেল দরজার
কাছে। দরজাটার সামনে ঝোলানো একটা ছোটো ঘন্টা। ঘন্টা বাজাতেই দরজা খুলে
বেরিয়ে এল একটা ক্রিম রঙের টেডি-বিয়ার। তার এক চোখ নেই। টুকলু তাকে দেখে অবাক
হয়ে বলল, “আরে! এ তো আমার টেডি-বিয়ার! যার চোখ ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। যার জন্য মায়ের কাছে
এখুনি বকুনি খেলাম। অবাক কান্ড! তুমি জ্যান্ত?”
“তা কি মরা মনে হচ্ছে?”
“না তা না... তোমার প্রাণ
আছে... তাই আর কী!”
“আছে বৈকি! শুধু কি
তোমাদের প্রাণ আছে? এটা খেলনা রাজ্য। এখানে সবার প্রাণ আছে।”
টুকলুর মনে পড়ল, ঠাকুমার কাছে
একবার গল্প শুনেছিল সে। সবার মধ্যে প্রাণ আছে। সবার মধ্যে ভগবান আছে। দেখল, সত্যি
টেডি-বিয়ারের চোখ ছিঁড়ে সে বড়ো অন্যায় করেছে। সে বলল, “সরি, টেডি-বিয়ার।”
“চুপ কর, টুকলু। আমি তোমাকে আমার বন্ধু
ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে অন্ধ করে দিয়েছ।”
টুকলু একটু ঢোঁক গিলে
বলল, “তোমার যে প্রাণ আছে, তোমার যে ব্যথা লাগবে তা আমি জানতাম না। তবে মা আমাকে তার জন্য
খুব বকেছে।”
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমার কাছে কী জন্য এসেছ?”
“আমার খুব খিদে পেয়েছে। তোমার কাছে জল, খাবার কিছু আছে?”
টেডি-বিয়ার মাথা চুলকাল। তারপর বলল, “আমি তোমাকে খেতে
দেব। কিন্তু তোমাকেও আমাকে কথা দিতে হবে যে তুমি আমার চোখ ফেরত দেবে।”
“কিন্তু সেটা কী করে
সম্ভব! সেটা তো ড্রেনের জলে পড়ে গেছে।”
“এই দেশে এক জাদুবুড়ো
থাকে। সবাই তাকে জাদুদাদু বলেই ডাকে। পৃথিবীর দুষ্টু বাচ্চাদের
সে সব খেলনা সারাই করে। তার কাছেই তুমি আমার আরেকটা চোখ পাবে।”
“কিন্তু তার বাড়ি কোথায়?”
“তার বাড়ি অনেক দূরে। তোমাকে জোনাকিপুরের মাঠ পেরোতে
হবে। সেই মাঠ পর্যন্ত টুট-টুট গাড়ি পৌঁছে দেবে।”
“আমার টুট-টুট গাড়ির কথা
বলছ? তার
তো একটা চাকা নেই। ও কি করে আমাকে নিয়ে যাবে?”
“কিন্তু হেঁটে গেলে তিনশো
বছর পেরিয়ে যাবে। টুট-টুটকে বোলো, জাদুদাদুর বাড়ি যেতে সাহায্য করলে জাদুদাদু
ওর চাকাও লাগিয়ে দেবে। আমি তোমাকে একটা ডোনাট দিচ্ছি। চাকার মতো টুট-টুটের
পায়ে লাগিয়ে দাও। তাহলে আপাতত কাজ চলে যাবে।”
“ডোনাট তো খাবার জিনিস। এটাতে চলবে?”
“এদেশে সব হয়। এবার এস আমার ঘরে, তোমাকে কিছু খেতে
দিচ্ছি।”
স্ট্রবেরি কাপ কেক, ক্রিম ডোনাট, আপেল পাই, ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক - টেবিলের উপর সাজানো
খাবার দেখে টুকলু অবাক হয়ে গেল।
“তুমি এগুলো বানিয়েছ?”
“হ্যাঁ। এই দেশে মিষ্টি
খাবারই পাওয়া যায়।”
টুকলু প্রাণভরে সেগুলো
খেল। উফ্, কী খিদে পেয়েছিল! হঠাৎ বাইরে টুট-টুটের আওয়াজ কানে
এল তার। খাওয়া শেষ করে বাইরে এল।
টেডি-বিয়ার বলল, “আমি টুট-টুটের
চাকা লাগিয়ে দিয়েছি। তুমি আর দেরি করো না, উঠে পড়।”
টুট-টুট রাগ রাগ চোখ
নিয়ে তাকাল টুকলুর দিকে। টুকলু বুঝতে পেরে বলল, “আমি তোমাকে আর কষ্ট দেব না। তোমার চাকা জাদুদাদুকে
বলব, লাগিয়ে দেবে।”
টুট-টুট রেগে বলল, “তুমি
কী বুঝবে পা না থাকার কষ্ট? কাঠের পায়ের মতো ডোনাট লাগিয়ে চলতে হচ্ছে।”
টুকলু আর কোনও কথা না বলে
চুপ করে থাকল। টুট-টুট বলল, “উঠে পড়।”
বিয়ারকে বিদায় জানে সে
চলল অজানা এক পথে। টুট-টুটও হেলেদুলে বেশ ভালোই জোরে চলল।
ছুটতে ছুটতে হঠাৎ ঝাঁপ
দিল নীল অভ্র মেশানো এক সমুদ্রে। টুকলু অবাক হয়ে বলল, “কী করছ,
টুট-টুট?”
“ভয় পেও না, টুকলু। আমাদের এই খেলনা রাজ্যে
সব হয়। গাড়ি রাস্তাতে, আকাশে, জলে চলে। এই জল-রাস্তাতে গেলে আমরা
তাড়াতাড়ি পৌঁছব।”
দেখতে দেখতে জলের রং
সোনালি হয়ে গেল। আর তাতে কত তারার মতো মাছেরা ভাসছে। এত সুন্দর লাগছে যে টুকলু
চোখ বন্ধ করতে পারল না। একটা রুপোলি রঙের ঢিবির উপর এসে থামল টুট-টুট।
“এর থেকে বেশি দূরে আমি
যেতে পারব না। এরপর তোমাকে জোনাকি রাজা সাহায্য করবে। মনে রেখো, আমার এই
কথাগুলো –
নাক বরাবর হেঁটে
পুবদিকে যাও ছুটে
নীলপাহাড়ের পাশে
জোনাকিদের দেশে
জোনাকিপুরের মাঠে
জোনাকি-রাজা থাকে
সেই তোমাকে পৌঁছে দেবে
চাঁদের বুড়ির কাছে।”
টুকলু টুট-টুটের কাছে
বিদায় নিয়ে বলল, “আবার দেখা হবে, টুট-টুট।”
টুট-টুট বলল, “আমি বিয়ারদাদার
বাড়িতে তোমার জন্য অপেক্ষা করব। সাবধানে যেও। তুমি সফল হবেই।” এই বলে টুট-টুট ঝপাস
করে আবার সোনালি জলে ডুব মারল।
টুট-টুটের কথা অনুযায়ী
টুকলু পুবদিকে নাক বারবার দৌড়োতে লাগল। দৌড়োতে দৌড়োতে সে ভীষণ ক্লান্ত
হয়ে পড়ল। তার জলতেষ্টাও পেল। কিন্তু কোথায় নীলপাহাড়? কোথায় জোনাকিদের
দেশ? সবুজ ভেলভেটের রাস্তা শেষই হচ্ছে না। সে বসে পড়ল। আর ঠিক তখনই অন্ধকার নেমে
এল। সে কুয়াশার মধ্যে যেন আটকে গেল।
কুয়াশা থেকে বেরুবে বলে
সে উঠে দাঁড়াল। আর তখনই দেখতে পেল সে নীলপাহাড়ের সামনেই আছে। সে কুয়াশাদের ফেলে এগিয়ে গেল
নীলপাহাড়ের পাশে। কিছুদূর যেতেই তার চোখে পড়ল চৌকোমতো একটা মাঠ। তাতে আকাশের তারাদের মতোই
জ্বলজ্বল করছে নক্ষত্রপুঞ্জ। তারা নেচে নেচে গান করছে। হঠাৎ কোথা থেকে একটা
মিষ্টি গন্ধ ভেসে এল। চারদিকে প্রচুর গাছ। সেখান থেকেই আসছে গন্ধটা। গাছগুলোতে ছোটো ছোটো আলো জ্বলছে। সব আলোগুলো হল ফলের মতো। জোনাকিরা গান থামিয়ে
ফেলেছে ততক্ষণে। তাদের মধ্যে থেকে একটা বেশ বড়ো সাইজের ফুটবলের মতো জোনাকি এল। তার মাথাতে মুকুট দেখে টুকলুর
বুঝতে বাকি রইল না সে জোনাকি-রাজা। জোনাকি-রাজা বলল, “টুকলু নাকি?”
“তুমি আমাকে চেন?”
“হুম। শুধু তোমাকে নয়, খেলনা রাজ্যের
সমস্ত খেলনা আর পৃথিবীর দুষ্টু বাচ্চাদের আমি চিনি, আমি জানি। তুমি যে টেডি আর টুট-টুটের
জন্য এসেছ, তও জানি।”
“তুমি জান চাঁদের বুড়ি
কোথায় থাকে?”
“আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। তবে তোমাকে একটা কবিতা
বলব। সেটা মনে রেখ। তার আগে আমাদের রাজ্যের আলোফল খাও। তাতে খিদেও মিটবে, তেষ্টাও মিটবে,
শক্তিও পাবে।”
তিনটে জোনাকি গিয়ে সেই
আলো জ্বলা ফল নিয়ে এসে টুকলুকে দিল। ফলটা আপেলের মতো দেখতে, কিন্তু
রংটা উজ্জ্বল কামলা রঙের। টুকলু ফলটা খেল। এত মিষ্টি ফল সে কোনওদিনই খায়নি।
জোনাকি-রাজা বলল, “এবার আর
দেরি না করে আমার পিঠে উঠে পড়।”
টুকলুও উঠে পড়ল। জোনাকি-রাজা ওকে পিঠে
নিয়ে আকাশের আরও উপরে উঠে গেল। সেখানে শুধু তুলো তুলো মেঘ ভেসে
বেড়াচ্ছে। মেঘের দলকে পেছনে ফেলে তারা এসে পৌঁছল রামধনুর উপর। জোনাকি-রাজা টুকলুকে তার
পিঠ থেকে নামিয়ে বলল, “এবার মন দিয়ে শোনো টুকলু,
পাঁচ পা হাঁটার পরে
দেখতে পাবে শেষে
পূর্ণিমার গোল থালা
চাঁদের গলায় সাদা মালা
পিঠের উপর পৌঁছলে
দেখতে পাবে ধোঁয়াশা
তারই মাঝে চরকা কাটে
চাঁদের বুড়ির চরকাটা।
এবার চলি, টুকলু। আবার দেখা হবে।”
টুকলু এবার জোনাকি-রাজাকে
জড়িয়ে ধরে বলল, “তোমাকে আমার মনে থাকবে, জোনাকি-রাজা।”
জোনাকি-রাজা হাত নাড়িয়ে
বিদায় জানিয়ে উড়ে মিলিয়ে গেল আকাশ পথে। রামধনুর উপর দিয়ে টুকলু পাঁচ পা
হাঁটার পর দেখল, চাঁদের গলাতে যেন সাদা মেঘের মালা রয়েছে। তারপর নীল আকাশটা যেন
ধোঁয়াশাতে ডুবে আছে। কিছুক্ষণ পর ধোঁয়াশা কেটে যেতেই সে দেখল একটা বিশাল বড়ো
সাদা মেঘ। তার উপর চাঁদের বুড়ির চরকাটা নিজে নিজেই চরকা কাটছিল। চাঁদের বুড়ি বসে তুলোর
বল তৈরি করে মেঘ বানাচ্ছিল, আর আকাশে ভাসিয়ে দিচ্ছিল। টুকলুকে দেখে ভাঙা ভাঙা
গলায় বলল, “এই যে টুকলু, ভালো করে শোনো,
বেগুনি রঙের মিশকালো
জাদুদাদুর ঘরে আলো
এই তুলোতে বসে
উড়ে যাও হেসে
পৌঁছে যাবে তুমি
মায়াবী জাদুর দেশে।”
টুকলু এক লাফে চাঁদের
বুড়ির দেওয়া তুলোর মধ্যে বসে মেঘের মতো আকাশে উড়ে গেল। উড়তে উড়তে দেখল তারা, চাঁদ, সূর্য সবার থেকে সে দূরে চলে যাচ্ছে। হাজার চুমকির মতো চকচকে
উজ্জ্বল তারারা যেন তাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাল। হঠাৎ তার চোখ পড়ল
হাওয়ায় ভেসে যাওয়া একটা বেগুনি রঙের কালচে কাঠের বাড়ির দিকে। তার চিমনি থেকে ধোঁয়া
বেরোচ্ছে। তুলোটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। টুকলু এক লাফে নামল। বাড়ির সিঁড়ির উপর নামল। ফসকালেই শূন্যে পড়ে যেত সে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাড়ির
দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজা খুলে গেল। সে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। হঠাৎ একজনের কথা সে শুনতে
পেল, “এস টুকলুবাবু, এস। আমি তোমার ডানদিকে।”
টুকলু দেখল কালো জ্যাকেট, মাথায় বিদেশি
জাদুকরের টুপি, হাতে একটা ছোটো কালো জাদু-লাঠি, সাদা চকচকে চুল, চোখে গোল সোনালি ফ্রেমের চশমা যার
মধ্যে দিয়ে নীল চোখ তার দিকেই তাকিয়ে। টুকলু বলল, “আমি টেডির
চোখ আর টুট-টুটের চাকা লাগাতে তোমার কাছে এসেছি।”
“হুম। আমি পৃথিবীর সব খেলনা
জোড়া লাগাই। তোমার মতো দুষ্টুছেলের অভাব নেই দুনিয়াতে। তারা আসে আমার কাছ।”
“আমি আর দুষ্টু নেই।”
“আচ্ছা, তাহলে কথা দাও আর
কোনওদিন খেলনা ভাঙবে না।”
“কথা দিলাম, ভাঙব না।”
“তবে চল আমার সঙ্গে।”
জাদুদাদু টুকলুর হাতটা এক
হাতে ধরে অন্য হাতে জাদু-লাঠি ঘোরাতেই তারা পৌঁছে গেল টেডির বাড়ি। টেডি মনখারাপ করে বসে
রয়েছে ওর চেয়ারে। টুকলু তার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই দেখ কাকে এনেছি।”
টেডি খুশিতে দু’বার
লাফালো। জাদুদাদু টেডির দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার বন্ধু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।”
টেডি হাসল। জাদুদাদুটা জাদুছড়ি
টেডির চোখের উপর ঘোরাতেই টেডির চোখ লেগে গেল। টেডি বলল, “ধন্য বন্ধু, আজ থেকে তুমি
আমার বন্ধু হলে।”
এবার টুট-টুট গাড়ির
চাকার উপর জাদুছড়ি ঘোরাতেই টুট-টুটের চাকা ঠিক হয়ে গেল। টুট-টুট আর টুকলু ‘হিপ
হিপ হুররে’ বলে লাফিয়ে উঠল। জাদুদাদু বলল, “এবার চলি, টুকলু। আমাকে যেতে হবে। তবে কথা দিলাম, আবার দেখা
হবে কিন্তু তোমার বাড়িতে।”
হঠাৎ ‘টুকলু... টুকলু...’
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল
টুকলুর। ও দেখল, ও আর অন্য কোথাও নেই। কোথায় খেলনা রাজ্য, কোথায়
টেডি আর টুট-টুট! নিজের বিছানাতে শুয়ে আছে। তাহলে খেলনা রাজ্যে অভিযান আসলে
স্বপ্ন। মায়ের গলা শুনতে পেল সে, “কী রে, বিকেল হয়ে সন্ধে হতে চলল,
এখনও ঘুমোচ্ছিস? দেখ তোর সঙ্গে কে দেখা করতে এসেছে।”
টুকলু নিজের ঘর থেকে
বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখল, একজন বয়স্ক ভদ্রলোক তার সঙ্গে দেখা করতে
এসেছে। একদম জাদুদাদুর মতো দেখতে। নীল চোখ, সোনালি ফ্রেমের
চশমা, সাদা চুল, ফর্সা, লম্বা। মা পেছন থেকে বলল, “উনি আমাদের প্রতিবেশী মিস্টার জোনস। উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে
নতুন এসেছেন। ওঁর খেলনার ফ্যাক্টরি আছে। তোমার টেডি আর টুট-টুট গাড়িটা
ওঁকে দিয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন, কোনও ভাঙা খেলনা থাকলে উনি তা সারিয়ে দেন।”
টুকলু অবাক হয়ে দেখল
লোকটাকে। লোকটা বলল, “কেমন আছ, টুকলুবাবু? অল ওকে?” এই বলে
সে তার একটা হাত বাড়িয়ে ধরল। তার হাতে টেডি আর টুট-টুট। বলল, “এই নাও তোমার
খেলনা।”
_____
অলঙ্করণঃ সম্বিতা
No comments:
Post a Comment