হায়দ্রাবাদের গল্প
সহেলী
চট্টোপাধ্যায়
ম্যাজিক ল্যাম্পের নববর্ষ সংখ্যায়
ভাইজ্যাগ ভ্রমণের কথা লিখেছিলাম। তখনই কথা দিয়েছিলাম আবার হায়দ্রাবাদ ভ্রমণ নিয়ে
ফিরে আসব। হায়দ্রাবাদ বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চারমিনার-এর ছবি। আর কী মনে পড়ে বল তো? ঠিক
বলেছ মুক্তোর শহর হায়দ্রাবাদ। আর বিরিয়ানি তো আছেই। আর আছে রামোজী ফিল্ম সিটি। দেখার তো অনেক
কিছুই আছে। সত্যি বলতে কোনও জায়গাই পাঁচ-সাত দিনে কিছুই দেখা হয় না। কিন্তু আমাদের
হাতে সময় বড় কম। সময়ই আমাদের সব চেয়ে বড় শত্রু। আমরা এখানে তিনদিন ছিলাম।
চারমিনার
তেলেঙ্গনা রাজ্যের রাজধানী এবং
নিজামের শহর হায়দ্রাবাদ এখন তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের বড় কেন্দ্র। আমরা দেখে নিই বিশেষ বিশেষ কিছু জায়গা।
প্রথমেই চারমিনারের কথা বলছি। ১৫৯১
খ্রিস্টাব্দে চারমিনার নির্মাণ করিয়েছিলেন মহম্মদ কুলি কুতুব শাহ। শহরে একবার
প্লেগ মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্লেগ রোগের ওপর বিজয়-এর আনন্দে সম্রাট এই চারমিনার
নির্মাণ করান। এখানে অনেক দোকানপাট আছে। খুবই জমজমাট এলাকা। অনেকে চারমিনারের
সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলে। ব্যাপারটায় বেশ রিস্ক আছে বলে আমার মনে হয়। কারণ প্রচুর গাড়ি-ঘোড়ার দৌরাত্ম্য। নিজেকে সব সময় সেফ রাখতে হবে।
গোলকুণ্ডা ফোর্ট আমার সব চেয়ে ভাল
লেগেছে। কেল্লা দেখতে বরাবরই খুব ভাল লাগে আমার। একসময় গোলকুন্ডায় হীরের খনি ছিল। বিখ্যাত
হীরে কোহিনূর পাওয়া গেছিল এখান থেকেই। আমরা গেছিলাম জানুয়ারি মাসে। গনগনে রোদ।
ঠাণ্ডা এই শহরে পড়েই না। কেল্লার ভেতরটা বেশ ঠাণ্ডা। রোদ থেকে যখন কেল্লার ভেতর
ঢুকছি বেশ আরাম লাগছে। এখনকার দিনে এসি ফেল হয়ে যাবে।
গোলকুন্ডা ফোর্ট
মধ্যযুগে কুতুবশাহী বংশের রাজধানী
ছিল গোলকুণ্ডা। আর এখন নির্জন গা
ছমছমে একটা কেল্লা। গরম লাগলে তোমরা একটু লেবুর শরবত
খেয়ে নিও। অনেকটা হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্ত নিশ্চয়ই। এখানে আছে লাইট অ্যাণ্ড সাউন্ড
যা আমাদের অতীতে পৌঁছে দেয়। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমাদের ধারণা
আছে। আলো এবং শব্দের সাহায্যে পুরোনো যুগের ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়। ঠিক যেন কেউ
গল্প শোনাচ্ছে। গোলকুণ্ডা ফোর্টের অনেকগুলো ছবি তুলেছি কিছু এখানে দিলাম।
হায়দ্রাবাদের একটি বিখ্যাত
দর্শনীয় জায়গা হল সালার জং মিউজিয়াম। নবাব মীর ইউসুফ খান সালার
জং তৃতীয় নামে বিখ্যাত। তিনি আর্টস এবং অ্যান্টিক্স এর খুব বড় সমঝদার ছিলেন। সারা
জীবন ধরে তিনি যা সংগ্রহ করেছেন তার সব কিছু আছে এখানে। ১৯৫১ সালে এই মিউজিয়াম
তৈরি হয়। পন্ডিত জহরলাল নেহেরু উদ্বোধন করেন। ১৯৫৮ সালে ভারত সরকার এই মিউজিয়াম
অধিগ্রহণ করে। এখন এখানে ৩৮টি গ্যালারি আছে, তিনটে
বিভাগ আছে (সেন্ট্রাল ব্লক, ইস্টার্ন ব্লক এবং ওয়েস্টার্ন ব্লক)। আছে বিখ্যাত একটি
মিউজিকাল ক্লক। একদিনে দেখে শেষ করা যায় না এই বিশ্ব বিখ্যাত মিউজিয়াম। শুক্রবার
বন্ধ থাকে সালার জং মিউজিয়াম।
সালার জং মিউজিয়াম
হুসেন সাগর হার্ট শেপের লেক, হজরত হুসেন শাহ আলি ১৫৬৩ সালে তৈরি করেছিলেন ইব্রাহিম কুলি কুতুব শাহের
শাসন কালে। এখানে আছে ভগবান বুদ্ধের একটা বড় স্ট্যাচু। এখানে সন্ধেবেলা লাইট
অ্যাণ্ড সাউন্ড দেখবে অবশ্যই। লেসার শো দেখায় এখানে। বিড়লা মন্দির এখান থেকে খুব
কাছে।
রামোজী ফিল্ম সিটি দেখতে পুরো
একদিন লাগবে। সারা দিন প্রচুর ধকল গেলেও বেশ ভাল লাগবে। আমাদের রাজ্যের মত
ক্লান্তিকর আবহাওয়া এখানে নয়। তাই গরম লাগলেও কষ্ট কম হয়। তাছাড়া বেড়াবার আনন্দই আলাদা।
আসল নয়, নকল রেল স্টেশনঃ রামোজী ফিল্ম সিটি
আসল নয়, নকল জেলঃ রামোজী ফিল্ম সিটি
ফাউন্টেন
আসল নয় ভাই, নকল রাজস্থানঃ রামোজী
ফিল্ম সিটি
দেখার তো অনেক কিছুই আছে, কিন্তু তিনদিনে হায়দ্রাবাদের কিছুই দেখা হয় না। বিশেষ করে সালার জং
মিউজিয়াম দেখতেই অনেক দিন লেগে যাবে। যেমন মিকা মসজিদ, লাদ বাজার, নেহেরু জুলজিকাল
পার্ক, এপি স্টেট আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম, শিল্পরমনম, দ্য নিজাম’স সিলভার জুবিলি
মিউজিয়াম, চৌ মহল্লা প্যালেস, দুর্গম চেরুভু (লেক), চিল্কুর বালাজী টেম্পল,
মুরুগাবানি ন্যাশানাল পার্ক, মহাবীর হরিনা বনসথালি ন্যাশানাল পার্ক, হায়দ্রাবাদ বোটানিক্যাল গার্ডেন, ওসমান সাগর লেক,
হাইটেক সিটি, তারামতী বারাদারি, কুতুবশাহি টম্বস ইত্যাদি। এই জায়গাগুলো আমাদের
অদেখাই রয়ে গেল। আবার যদি কোনওবার হায়দ্রাবাদ আসি তাহলে সব দেখে নেওয়ার চেষ্টা
করব। ভাল থেকো তোমরা, আবার যদি কোথাও বেড়াতে যাই তোমাদের গল্প শোনাতে ভুলব না। তোমরাও
যদি বেড়িয়ে আসো কোথাও থেকে আমাদের লেখা আর
ছবি পাঠিও। ম্যাজিক ল্যাম্পে ছাপা হবে তোমাদের ভ্রমণ কাহিনী।
_____
ছবিঃ লেখক
No comments:
Post a Comment