পাতালঘর
অদিতি বসুরায়
ছোটদের মুগ্ধ করে রাখতে পারে
সাম্প্রতিক কালের যে গুটি কয়েক সিনেমা, পাতালঘর তাদের মধ্যে অন্যতম। শীর্ষেন্দু
মুখোপাধ্যায়ের মূল উপন্যাসটি যাঁরা পড়েছেন তাঁদের রিলেট করতে কোনও অসুবিধা হয় না,
তবে এর মানে এই নয় যে যাঁরা পাতালঘর ছাপার অক্ষরে পড়েননি তাঁদের বিন্দুমাত্র সমস্যা
হবে।
কল্পবিজ্ঞানের গল্প নিয়ে
নির্মিত এমন ছবি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে বিরল। গল্পের শুরু প্রায় দেড়শ বছর আগে। সে
সময় গ্রাম-বাংলায় দাপিয়ে রাজত্ব করছে রঘু ডাকাতের দল। কোম্পানির আমল - চারিদিকে
নানা নৈরাজ্য - তারই মধ্যে নিশ্চিন্তিপুরে বসে একমনে বিজ্ঞান-সাধনায় মেতে আছেন অঘোর
সেন। যোগাযোগ করে ফেলেছেন ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের সঙ্গেও। আর সেই সঙ্গে আবিষ্কার
করে ফেলেছেন এমন এক যন্ত্র যার সুর শুনলে মানুষ দীর্ঘ বছরের ঘুমের জন্যে প্রস্তুত
হয়ে যায়। এতই লম্বা সেই ঘুমের পাল্লা যে তা একেবারে দেড়শ বছর পর্যন্তও লোককে ঘুম
পাড়িয়ে দিতে পারে। এমন অবস্থায় নেপচা গ্রহ থেকে এসে ভিক বড় জ্বালাতন আরম্ভ করে এবং
তার বাড়াবাড়িতে বিরক্ত হয়ে অঘোর তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। এরপর একসময় তাঁর মৃত্যু হয়।
সবাই ভুলেও যায় তাঁর কথা।
এরপর আমাদের ফিরে আসতে হবে
একালে। বিজ্ঞানী ভূতনাথ নন্দীর হাতে আসে অঘোর সেনের ডায়েরি। সেখান থেকে তিনি জানতে
পারেন অঘোরের আবিষ্কার করা যন্ত্রটির কথা। সাংবাদিক বৈঠকে সে বৃত্তান্ত প্রকাশ করতেই
ভূতনাথের পেছনে পড়ে যায় অন্ধকার জগতের রানি বেগম ও তার দলবল। যেন
তেন প্রকারেণ ‘অস্তরটা’ তাদের চাই। এর মধ্যে
চলে আসে কিশোর কার্তিক এবং তার মামা সুবুদ্ধি। আসে
অপয়া, গ্রামের নাটকের দল এবং দেড়শ বছরের ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়ে ভিক। আর শুরু
করে দেয় গ্রাম জুড়ে তান্ডব।
পরিচালক অভিজিত চৌধুরীর এই
ছবিটি এই সময়ের শিশু এবং কিশোরদের সামনে এক হারানো এল ডোরাডোর খোঁজ এনে দেবে;
যেখানে আছে হেমন্তের মিঠে রোদে বুক পেতে থাকা লাল মাটির পথ – কালীপুজোয় রাত জেগে
নাটকের মহড়া – সাইকেল নিয়ে গ্রামের পথে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ – কান পেতে রেডিও শোনার
উৎসাহ। আছে চমৎকার সব গান। স্বপন বসুর গলায় দারুণ লাগে শুনতে। আছে খরাজ
মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া আর একটি অনবদ্য গানও।
এবার আসি অভিনয়ের কথায়। খরাজ
মুখোপাধ্যায়ের সুবুদ্ধি চরিত্রটি অসামান্য। দুরন্ত কাজ করেছেন ভিলেনের ভূমিকায়
রমাপ্রসাদ বণিক। মনু মুখার্জি, সুনীল মুখার্জি, মিতা বশিষ্ট, জয় সেনগুপ্ত, কেতকী
দত্ত এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাজ নিয়ে যে কোনও প্রশংসাই কম পড়ে যাবে
নিঃসন্দেহে। আর এই প্রসঙ্গে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হবে, কার্তিকের ভূমিকায় কাজ করা
সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের কথা। আনকোরা এই কিশোর অভিনেতা দাপিয়ে কাজ করেছে অন্যান্যদের
সঙ্গে। বাংলা ছবিতে শিশুদের সিনেমা নিয়ে এমন কাজ প্রশংসার দাবী রাখে।
_____
chhobiti 2003-e release...samprotik bola chale ki?
ReplyDelete