সময়ের ফেরিওয়ালা
বৈশাখী ঠাকুর
অত্যন্ত মন দিয়ে সিসিটিভি
ক্যামেরার ফুটেজটা দেখলেন কলকাতার গোয়েন্দা বিভাগের দুঁদে অফিসার তুষ্ণীক
চক্রবর্তী। নাহ্! ঐ একটা বেজে তিরিশ মিনিটের ফুটেজটায় কী একটা যেন গড়বড় লাগছে।
অনমিত্র রুদ্রকে ফের দেখা যাচ্ছে তার বেশ কয়েকঘণ্টা পরে এই বহুতল বিল্ডিংয়ে ঢুকতে,
কিন্তু বেরোতে দেখা গেল না। অথচ ওনার স্ট্রং অ্যালিবাই যে ওনাকে ওনার
এপার্টমেন্টের কেয়ারটেকার ঢুকতে দেখেছে আড়াইটে নাগাদ। অথচ ফের তিনটে নাগাদ উনি এই
বিল্ডিংয়ে ঢুকেছেন। বেশ ক’দিন ধরে নাড়াচাড়া করতে করতে অবশেষে একটা ফারাক নির্ণয়
করতে পেরেছেন তুষ্ণীক চক্রবর্তী। হাতের ঐ ঘড়িটা। ওটার সাথেই কোনও ব্যাপার হবে। সময়ের গড়মিলের
খুব বেশি প্রমাণ না দিতে পারলেও হাতের ঐ গয়নাটা প্রথম মিটিংয়ের সময় ছিল না।
টেন্ডার কলের সময় আচমকা অমন ঘড়ি আমদানি হল কোত্থেকে? রহস্যটা এখানেই। তুষ্ণীক
চক্রবর্তী নিশ্চিত।
অনমিত্র এমনিতেই ভীষণভাবে
বিভ্রান্ত। হতাশ। খুব কি ঠিক কাজ করে চলেছেন তিনি? কোথায় যেন জীবনের মজাটা হারিয়ে
যাচ্ছে। কোনও কিছুই আর জরুরি মনে হয় না। এত সহজ একটা সমাধান রয়েছে তাঁর হাতে যে
চাইলেই তিনি যা মনে হয় করতে পারেন।
বিনা পরিশ্রমেই বলতে গেলে তাঁর সব ইচ্ছে পূরণ হয়ে যায়। জটিল সমস্যার সহজ সমাধান।
প্রথম প্রথম বিপুল
উত্তেজনা ছিল। মনে হত কী ক্ষমতাশালী তিনি! দিনকে
রাত করতে পারেন। উনি পারেন
না হেন জিনিস নেই। তিনি অপরাজেয়। কিন্তু
ধীরে ধীরে টের পেলেন জীবনের ছন্দ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর কোনও কিছু করতে স্পৃহা জাগে
না। সেই উদ্যম আর উত্তেজনা নেই। অচিরেই অবসাদ আর বিষণ্ণতা তাঁকে গ্রাস করল। তাই
তুষ্ণীক চক্রবর্তীকে বেশি পরিশ্রম করতে হল না আসল কথা বার করতে।
অনমিত্র রুদ্র। এম. এস.
সফটওয়্যারের মার্কেটিংয়ের হেড। নিতান্তই ফাস্ট লাইফ যাকে বলে। সকালে দাঁত মাজেন
কলকাতায় তো ব্রেকফাস্ট করেন দিল্লীতে, লাঞ্চ খান বেঙ্গালুরুতে তো সান্ধ্য
স্ন্যাক্স নেন মুম্বাইতে। প্রতিদিনই
টাইট শেডিউল। তবুও তো মানুষের শরীর। হা-ক্লান্ত হয়ে সেদিন ফিরছিলেন ওনার
রাজারহাটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। ঢুকেই লিফটটা অন করলেন। দশতলা টিপতে না টিপতেই
লিফটে আরেকজনের আগমন। বেঁটেখাটো চেহারা। মুখটা অনাব্যশক থ্যাবড়া আর চোখগুলো কেমন
ঘোলাটে। একটু অপেক্ষা করছিলেন অনমিত্র। কিন্তু ভদ্রলোকের কোনও তাগিদই দেখলেন না
লিফটের বোতাম টেপার দিকে। তবে কি তাঁর ফ্লোরেই? হবে হয়তো। নতুন আমদানি। প্রতি তলাতে মোট ছ’টা করে
ফ্ল্যাট। স্যানালবাবু, মানে রজত স্যানাল ফ্ল্যাটটা বিক্রির কথা ভাবছিলেন। হয়তো
ওনার ফ্ল্যাটেই। অনমিত্রর আর পড়শীদের খোঁজ নেওয়া হয় কোথায়! ভদ্রলোকের মুখে কিন্তু
একটা মৃদু হাসি লেগে আছে। আলাপ করতে আগ্রহ আছে পুরোদস্তুর। দু’জনে লিফটের মধ্যে
একেবারে মুখোমুখি। না হাসলে বড্ড বেশি অভদ্রতা হয়ে যাচ্ছে। সবে স্কেলিং করা ঝকঝকে
দাঁত বের করে একটা হাসি উপহার দিয়েই দিলেন অনমিত্র।
যেমনি হেসেছেন ওমনি মাঝপথে
লিফটটা দুম করে বন্ধ হয়ে গেল। যাহ্! কারেন্ট চলে গেল নাকি! এ কি গেরো রে বাবা!
এমনটা তো আগে কখনও হয়নি! ভালো লাগে না আর।
কোথায় ঘরে ঢুকে এসি চালিয়ে একটু রেস্ট নেবেন! তা নয়। ধুর! আজকে দিনটাই খারাপ। একে আজকে
একটা প্রেজেন্টেশন ছিল। ফের জরুরি একটা মিটিং। তারপর টেন্ডার। টেন্ডারটা একটুর
জন্য ফসকে গেল। টেন্ডারটা আশানুরূপ হলে পুরো একটা ইউরোপ ট্যুর মুফতে ঘোরা যেত। কথা
দিয়েছিলেন আগরওয়াল সাহেব। শুধু কাজটা ওনাকে পাইয়ে দিতে হবে। মেজাজটা সেই নিয়ে
এমনিই একটু খিঁচিয়ে আছে। তারপর আবার উদ্ভট সময়ে লোডশেডিং। আত্মীয়স্বজন
বন্ধুবান্ধবদের একরকম বলেই রেখেছিলেন যে তিনি এরপর ইউরোপ মহাদেশে বেড়াতে যাবেন।
এমনিতেই তাঁর দ্রুত সাফল্যে অনেকেরই চোখ টাটায়। সব আটঘাট বেঁধেই নেমেছিলেন। ভেতর থেকে
সব খবরাখবর ঠিকমতোই সরবরাহ করেছিলেন। তবুও কেন যে হাতছাড়া হয়ে গেল কাজটা! তবে কি
ঘরের শত্রু বিভীষণ আছে কেউ?
“আলবৎ ধরেছেন। আপনার কাছের
কোনও লোকই বিশ্বাসঘাতকতা করছে আপনার সাথে।”
বিনা ভূমিকায় এমন একটা
কথায় অনমিত্র কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন।
লোকটা যে তাঁর মনের কথা পড়তে পারছে অনায়াসে! ভাবনা পড়ে ফেললে যে ধুন্ধুমার
কান্ড হয়ে যাবে!
“আজ্ঞে ইয়ে, ঘাবড়াবেন না।
থট রিডিং তেমন কোনও বড়ো ব্যাপার নয় আমার কাছে। আমি আপনার কাছেই আসছিলাম।”
“আমার কাছে? কেন বলুন তো!”
“হ্যাঁ, মানে খোঁজখবর নিয়ে
দেখলাম আপনার সময়ের খুব দরকার কিনা!”
“মানে!”
“আজ্ঞে, সময়। টাইম।”
“কী বলতে চাইছেন বলুন তো?”
“আজ্ঞে, আমি সময় ফেরি করি।”
“কী করেন?” অনমিত্রর প্রায়
স্ট্রোক হবার উপক্রম।
“এই যে ধরুন, আপনাকে আমি
একটু সময় পাইয়ে দিতে পারি। মানে আপনি চাইলে ঐ টেন্ডারের সময়টায় গিয়ে ঠিকমতো
টেন্ডার অ্যামাউন্ট ভরে ফের নতুন করে টেন্ডারটা করলেন। মানে আধাঘণ্টা আপনার যদি
ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে সময় লাগে তো ঐ আধাঘণ্টা সময় আমার।”
“মানে! ঠিক বুঝলাম না।”
“মানে ধরুন আপনাকে আমি
অতীতের ঐ সময়টায় নিয়ে গিয়ে আপানার ভুলটা শুধরে ইউরোপের ট্যুরটা নিশ্চিত করে দিলাম। তাহলে আধাঘণ্টা আপনার বেশি লাগল নির্দিষ্ট
সময়ের থেকে। তাই
আপনার জীবনের ঐ আধাঘণ্টা আমার হয়ে গেল।”
“আমার জীবন থেকে বলতে
চাইছেন? মানে আমার আয়ু আধাঘণ্টা কমে গেল?”
“কতকটা তাই। আরে মশাই, আধাঘণ্টা আর কী এমন সময়! লোকে
আড্ডা মেরে গুলতানি সেরে টিভি দেখে কত শত সময় নষ্ট করে। আপনি বুড়ো বয়সে শেষকালটায়
যদি দশদিন হাসপাতালে কাটান তার থেকে না হয় আধাঘণ্টা হাসপাতালে কম থাকবেন। আর এটা কথার কথা। আমার ধারণা, পুরো কাজটা
করতে আপনার দশমিনিটও লাগবে না। দশমিনিটটা আবার সময় হল, বলুন! জীবন থেকে দশটা মিনিট
না হয় গেলই, কিন্তু আপনার ইউরোপ ট্যুরটা তো গ্যারান্টিড হল।”
“কিন্তু তা আবার সম্ভব
নাকি!”
“আলবৎ সম্ভব!”
“কী করে?”
“চলুন, নমুনা দেখিয়ে দিই।”
“তা কত কী দিতে হবে? এমন
অফবিট ব্যপারস্যাপার...”
“আপনার কাজে যে যৎসামান্য
সময় নেব, ঐ যৎসামান্য সময়টুকুর সাথে সুদসমেত সামান্য কিছু যোগ করে আপনার জীবন থেকে
ঐ সময়ের ব্যবধানটা চিরতরে চলে যাবে। ব্যস! এর বেশি কিছু না। তা দশ-বিশমিনিট তো কতই হেলায় আপনি
নষ্ট করে থাকেন।”
অনমিত্র ভাবেন। তা বটে। টিভি দেখে, আড্ডা মেরে, ক্যাফেতে, রেস্তোরায়,
যানজটে, আলসেমি করে, কখনও কেবল হাঁ করেও, আরও না জানি কত না উপায়েই তিনি দশ-বিশমিনিট
নষ্ট করে থাকেন। সেখানে
ঐ কয়েক মিনিটের পরিবর্তে মহার্ঘ কিছু যদি আদায় হয়, ক্ষতি কী!
“কিন্তু এমনটা হবে কী
উপায়ে?”
পকেট থেকে একটা ঘড়ি বের
করলেন ভদ্রলোক। বেশ অন্যরকম দেখতে বড়ো ডায়ালের একটা অদ্ভুত ঘড়ি।
“এই ঘড়িটা পরে যতটা সময়
পেছোতে চান কাঁটা দিয়ে পেছিয়ে দেবেন। ব্যস! নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে কাজটা সেরে আবার
কাঁটা দিয়ে বর্তমান সময়ে ফিরে আসবেন। এইটুকুই। তাহলেই কাজ হাসিল।”
“অ্যাঁ!”
“অ্যাঁ নয়। হ্যাঁ।”
“এতটাই সহজ সরল?”
“একদমই তাই এবং কাকপক্ষীটি
টের পাবে না এক আপনি ছাড়া যে এমন কোনও পরিবর্তন হয়েছে। শুধু ফাইনাল রেজাল্টে দেখবে
উল্টে গেছে।”
শুনে উত্তেজনায় গায়ে কাঁটা
দিয়ে উঠেছিল অনমিত্রর। এমন হয়! এমনটাও সম্ভব!
“একটা নমুনা পেলে বোধহয়
আপনার সুবিধে হবে। তা আপনার টেন্ডার কলের সময়ে আসুন আপনাকে নিয়ে যাই।”
ঘড়িটা হাতে পরে নিলেন
অনমিত্র। কী করে দম দিয়ে অতীতে যাবেন তা শিখিয়ে দিলেন সেই ভদ্রলোক। তারপরেই কর্পূরের মতন কেমন উবে
গেলেন। সেটা নিয়ে অবশ্য অনমিত্র একটুও ভাবিত নন। এমন একটা যন্ত্রটাকে হাতিয়ার করে
ইনি আরও কত উঁচু থেকে উচ্চতর সিঁড়িতে পৌঁছতে পারবেন, তাঁর দু’চোখে তখন সেই
স্বপ্নের বিস্তার।
আচমকা যেমন লোডশেডিং
হয়েছিল তেমনি হঠাৎ করেই আবার লিফটটা চালু হয়ে গেল। ফ্ল্যাটে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে
আবার বেরিয়ে পড়েছিলেন অনমিত্র। অফিসের বহুতল বিল্ডিংয়ে ঢুকে ঘড়িটা চালু করলেন। মুহূর্তে গমগমিয়ে সেই দেড়ঘণ্টা
আগের পরিবেশ। সন্তর্পণে কাজটা হাসিল করে তিনি ঐ অতীত সময়েই বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে একেবারে
ঐ চৌহদ্দি ছাড়িয়ে ফের বর্তমানে আসার জন্যও ঘড়ির কাঁটা ঘোরান।
তারপর তো অগণিতবার উনি অতীতে
যাবার এই কৌশলকে ব্যবহার করেছেন।
তাতে তাঁর জীবন থেকে কত সময় বেরিয়ে গেছে কোনও হিসাব রাখেননি।
মন দিয়ে কথাগুলো শুনলেন
তুষ্ণীক চক্রবর্তী।
“শুধু আপনি নন, আরও কিছু
বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মীদের সাথে এই ঘটনা ঘটছে। আপানি একটা হিসেব করে
বলুন তো কতবার কত সময় ঐ অতীতে যাবার জন্য কাজে লাগিয়েছেন।”
অতঃপর যা পরিসংখ্যান দিলেন
অনমিত্র তাতে তাঁর জীবন থেকে পাঁচবছর কমে গেছে।
পাঁচ-পাঁচটা বছর! আঁতকে
উঠলেন অনমিত্র।
“এবার বুঝতে পারছেন, কীরকম
মাকড়সার জাল এরা বিছিয়েছে?”
“এরা কারা?”
“ভিন্ন ডাইমেনশনের প্রাণী।
আমরা ত্রিমাত্রিক সভ্যতার মানুষ, সেটা জানেন তো!”
“তা, সেরকমই তো শুনি।”
“আর এরা হচ্ছে চতুর্থ
ডাইমেনশনের প্রাণী। আর আমরা সবাই জানি ফোর্থ ডাইমেনশন অর্থাৎ, সময়কে আমরা বলে
থাকি। তা, এই ভিন্নমাত্রার প্রাণীরা এই পৃথিবী কব্জা করতে চাইলে তাদের সময়ের
প্রয়োজন। এইরকম করে সুচতুরভাবে সময় বিক্রি করে এরা সময় সঞ্চয় করছে। আপনার মতো আরও
অনেকেই এই পৃথিবীতে এদের শিকার। এইভাবে যদি চলতে থাকে, আজ থেকে একশো বছর পর খুব
অনায়াসেই এরা এই পন্থায় আমাদের গ্রহকে কব্জা করে ফেলবে।”
“বিশ্বাস করুন, আমারও আর
এইভাবে ভাল লাগছে না। কিন্তু হাতে এই ঘড়িটা এমন ভাবে চেপে বসে আছে যে কিছুতেই
খুলছে না। আর সেই অদ্ভুতুড়ে লোকটারও তো সাক্ষাৎ পাই না যে জিজ্ঞাসাবাদ করব!”
“দেখা না পেলেও তাদের
শ্যেনদৃষ্টি সর্বদা আপনাদের ওপর নজর রাখছে। চাইলেই আপনি ওটা খুলতে পারবেন না।”
“তবে উপায়!” রীতিমত হতাশা
ঝরে পড়ল অনমিত্রর গলায়।
“জীবনের ষোলো আনাই তো
গোল্লায় দিয়েছেন। চলুন আমার সাথে, একটু হাওয়া খেয়ে আসবেন। আমারও মাথাটা একটু খুলবে। তারপর না হয় ভাবা যাবে।”
“তাই চলুন।” ফ্যাকাসে একটা
হাসি হেসে বললেন অনমিত্র।
রাজারহাটের বহুতল ফ্ল্যাট থেকে তাঁরা নীচে নামলে তুষ্ণীক চক্রবর্তী
আয়েস করে একটা সিগারেট ধরালেন।
“চলবে নাকি?”
“দিন একটা।”
লাইটার দিয়ে সিগারেটটায়
অগ্নিসংযোগের সময় হালকা করে ঘড়িতেও আগুনটা ঠেকিয়ে দিলেন তুষ্ণীক চক্রবর্তী। ঘড়িটা
হাত থেকে মাটিতে খুলে পড়ে গেল। কেমন একটা কম্পন অনুভব করলেন দু’জনেই। ছায়া ছায়া
অবয়ব হয়ে সেই থ্যাবড়ামুখের লোকটাকে যেন দেখা গেল লিফটের কাচটায়।
তুষ্ণীক চক্রবর্তী ততক্ষণে
ঘড়ি তুলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফেলেছেন।
“উঠুন, উঠুন। কুইক, কুইক!”
অতি দ্রুত ড্রাইভ করে গাড়িটাকে ইকো পার্কের কাছাকাছি নিয়ে এলেন। কেবলই মনে হচ্ছে কে যেন একটা শোঁ
শোঁ হাওয়ার শব্দ করে তাঁদের পেছনে ধাওয়া করছে। তারপর একসময় ইকো পার্কের একধারে গাড়িটা
পার্ক করে দ্রুত ঐ বিশাল জলাশয়টার দিকে ছুটে গেলেন তুষ্ণীক চক্রবর্তী। কিছু বুঝতে
না পেরে, তার চেয়েও বড়ো কথা কিছু ভেবে না পেয়ে অনমিত্র পেছন পেছন ছুটলেন। পকেট থেকে ঘড়িটা বের করে আগুন ধরিয়ে ছুঁড়ে
ফেলে দিলেন দূরে জলাশয়ের মধ্যে।
“এইভাবেই এই অলক্ষুণে
যন্ত্রগুলোকে নষ্ট করতে হবে, বুঝলেন! এইরকম যন্ত্র আরও কয়েকটা এই শহরের বুকে ঘুরে
বেড়াচ্ছে। সেগুলোর আগে গতি করি, তারপর আমার শান্তি।” তুষ্ণীক চক্রবর্তী কথাগুলো
বলেই ঝড়ের বেগে ফের চলে গেলেন। দ্রুতবেগে ওনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন
অনমিত্র। মনে হল, পরের জন্য চিন্তা করে কেমন অর্থবহ এদের জীবন। জীবন মানে তো শ্বাস
নেওয়া নয়। জীবনযাপন করা। বাঁচার মতো বাঁচা। এমনিই জীবনের পাঁচটা অমূল্য বছর তিনি
খুইয়েছেন। এবার
আর নয়। চাকরিটা বাদ দিয়ে বাকি সময়টা তিনি কোনও এনজিও-তে কাজ করবেন। পরের তরে বাঁচবেন। পাঁচটা বছর তাঁকে মেক-আপ করতেই
হবে। নাহ্, আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট নয়। ভাবনাটা মাথায় আসতেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন
অনমিত্র।
পশ্চিমের আকাশ তখন লাল হয়ে
উঠেছে। আবার একটা নতুন দিনের অপেক্ষা।
_____
ছবিঃ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
kolpobigyan holeo onek gulo bastob sotyi o ashonka ke tule dhora holo nipun vabe.
ReplyDeleteবেশ লাগল, অনেকদিন বাদে আপনার লেখা পড়লাম, ছোট কিন্তু মুচমুচে, টানটান আর বাস্তবকে দূরে সরিয়ে দেন নি।
ReplyDeleteহুশ করে পড়া হয়ে গেল গল্পটা। কিবোর্ড-এ আঙুলগুলো চলতে থাকুক, যাতে আমরা আরো এমন গল্প পাই।
ReplyDelete