![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh7n9ocZnAEmZ8nb0tjQIjLm9NA7Qdar2_Y6I7FIhSzwJzcYJCtVJx1JjRWJUgtyby384eqx5z9LcGVCBRiaf6-Vzee1d_JfD5ryoUTfTAVpbxxSwbi4NMQ4IwxrUusLuoHI2ZcHFXG5p4/s640/Ijjat1.jpg)
ইজ্জত
অদিতি সরকার
।।
১।।
জেলা বাড়মের, রাজস্থান।
থর মরুভূমিকে পিঠের তলায় নিয়ে শুয়ে আছে করমপুরা গ্রাম।
বাতাসে বালি, জলে নুন। তিনবছর হয়ে গেল বৃষ্টি নেই। মাটি ফুটিফাটা। ক্ষেতে বাজরা
শুকিয়ে খড়। দিনেরবেলা ঘর থেকে বেরোনো যায় না। আরাবল্লী পাহাড় থেকে বয়ে আসা আগুনে
লু বাতাস চামড়া জ্বালিয়ে দেয়। চোখ করকর করে, নিঃশ্বাস টানতে গেলে গরম হাওয়ার ঝাঁঝ
নাক থেকে নিয়ে গলার ভেতর পর্যন্ত পুড়িয়ে ছাড়ে।
রাতেও বিশেষ শান্তি নেই। সূর্য ডুবলেও গরম কমে না। ইলেকট্রিকের
পাখাটাখা এ গ্রামে গুনলেও পাওয়া যাবে না। চলবে কীসে? বিজলি থাকে কতক্ষণ? ও ঝামেলায় যায়ইনি কেউ তাই।
কিন্তু পাখা ছাড়া ঘরের ভেতরে তো শোওয়াও যায় না। সারাদিনের রোদ-তাতে পাথরের দেওয়াল
একেবারে তন্দুর চুল্লি হয়ে থাকে। গ্রামের লোকজন সবাই তাই ছাদে কিংবা উঠোনেই চারপাই
পেতে ঘুমোয়।
একজন ছাড়া।
গ্রামের একমাত্র মুদি দোকানের মালিক দুখনরাম সাহু। যত গরমই
হোক, সারারাত জেগে জেগে এপাশ এপাশ করবে, তবুও বাইরে শোবে না সে। ঘরেও কি খোলামেলা
শোয়? সব জানালা সব দরজা এঁটেসেঁটে বন্ধ
করে তবে শোয় দুখনরাম। রাতে বারবার উঠে দেখে সদর ঠিকঠাক তালাবন্ধ আছে কি না।
জানালার পাল্লা কোথাও একটু আলগা হয়ে গেল কি না।
সবাই বলে দুখনরাম নাকি তিনবছর আগে দিল্লি থেকে অনেক টাকা
কামিয়ে গ্রামে ফিরেছে। সেই টাকার ওপর বিছানা পেতে শোয়, টাকা পাহারা দেয় সাহুজি।
তাই এত ভয়।
দুখনরামকে এ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই খ্যাঁক করে ওঠে যদিও। “দোকানে
যা নিতে এসেছ, নিয়ে যাও। অত কথায় কাজ কী তোমার? টাকা কামিয়েছি কি ভিখারি হয়েছি সে আমার ব্যাপার। যত্তোসব।”
সাহুজির রাগ দেখে খদ্দের হাসতে হাসতে চলে যায়। দুখনরামের
বিড়বিড়োনি কিন্তু থামে না। গজগজ চলতেই থাকে বেশ কিছুক্ষণ। তার ফাঁকেই রাস্তার দু’দিক
চট করে দেখে নেয় সে। গদির পাশে রাখা মোটা লাঠিটায় হাত বুলিয়ে নেয় একবার।
দোকান সন্ধের পর খোলা রাখে না দুখনরাম। চারটে বাজল কি মস্ত
একখান তালা ঝুলিয়ে দুখনরাম চলল। চলল মানে কোথায় আর যাবে। নিজের বাড়ির একতলাতেই তো
দোকান। তারই ঝাঁপ পরিপাটি বন্ধ করে দুখনরাম গিয়ে সেঁধোয় বাড়ির ভেতরে।
বাড়ি বটে একখানা। তিনকুলে যার কেউ নেই, সে এমন এক
রাজপ্রাসাদ কী করতে বানিয়েছে কে জানে। কী করে যে বানাল সেও আর এক রহস্য।
দুখন এই গ্রামের ছেলেও নয়। ছোটোকালেই মা বাপ মরেছিল। না
খেতে পেয়ে নিজেও মরত হয়তো। এক দূরসম্পর্কের নিঃসন্তান কাকা নিয়ে এসে নিজের কাছে রাখল
কী জানি কী ভেবে। সেও গরীব
মানুষ, এনে রাখাই সার। গাঁয়ের মুদি দোকান চালিয়ে তার নিজেরই ঠিকমতো দু’বেলা দু’মুঠো
জুটত না, সে দুখনকে কী খাওয়াবে! দুখনরামের পেটে রুটির বদলে পিঠে কিল চড়টাই পড়ত
বেশি।
একটু বড়ো হয়েই দুখন পালাল। কাকার ক্যাশবাক্সটিও ভেঙে
কাচিয়ে নিয়ে গেল সঙ্গে।
ফিরল এই সবে তিনবছর আগে। কাকা ততদিনে ইহজগত ছেড়ে অন্যদিকে
রওনা দিয়েছে। কাকি তো আগেই গিয়েছিল। ভাঙাচোরা একতলা বাড়িটা পড়ে ছিল। সেটাতেই উঠল
দুখনরামের দুর্গ। গাঁয়ের লোক দেখে আর চমকে চমকে যায়। এমন সাদা পাথরের মেঝে, এমন
মোটা মোটা পেতলের পাত বসানো ভারি কাঠের দরজা, এমন কারুকাজ করা ঝরোখা, এসব তারা
জীবনেও দেখেনি। কত টাকা বানিয়ে ফিরেছে দুখনরাম? দিল্লি শহরে কি টাকা ওড়ে?
দুখনরাম গম্ভীর হয়ে আটা মাপে, গুড় ওজন করে। তার মুখ দেখে
বোঝার উপায় নেই ভেতরে কী হচ্ছে। কেবল হঠাৎ হঠাৎ কেমন যেন শিউরে ওঠে সে। চোখের
ভেতরে কী যেন ঝিলিক দিয়ে যায়। তারপরেই আবার নিজেকে সামলে নেয় অবশ্য।
শুধু আজকাল দোকানে তার গদির পাশে একটা মোটা লাঠি সবসময়
থাকে। আর শোওয়ার সময় বালিশের পাশে থাকে একটা বন্দুক, গুলিভরা।
।।
২।।
করমপুরা গ্রামের দশ কিলোমিটার আগে বাস থামে। দিনে তিনবার
সোজামুখ আর তিনবার উলটোমুখে। বাসস্ট্যাণ্ড পর্যন্ত যেতে আসতে হয় হাঁটা নয় সাইকেল
নয় গাধায় টানা গাড়ি ভরসা। দুখনরামের যদিও একটা মোটরবাইক আছে। তা সবাই তো
দুখনরামের মতো বড়লোক নয়।
আজ বিকেলের বাস থেকে অচেনা লোক নামল দু’জন। এদিককার কেউ নয়।
চেহারায় শহুরে ছাপ। একজন লম্বা, তামাটে গায়ের রং। আরেকজন একটু খাটো, কিন্তু দেখলেই
মনে হয় গায়ে খুব জোর। ধু-ধু বালি আর ধুলোর মধ্যে তাদের দু’জন আর একজন ধুতি ফতুয়া
পাগড়ি পোঁটলাতে ঢাকা দেহাতিকে নামিয়ে দিয়ে ঝকর ঝকর বাস দূরে মিলিয়ে গেল ধোঁয়া
ছাড়তে ছাড়তে।
ব্যাকপ্যাক থেকে জলের বোতল বার করে শহুরেদের একজন। মুখ উঁচু
করে জল খায়। “করমপুরাই বলেছিল তো? মনে আছে? নাকি অন্য কিছু?”
“নাহ্, ঠিক মনে আছে। জেলা বাড়মের, গাঁও করমপুরা। অনেকবার শুনেছি, ভুল হবে
না,” খাটো জন হাত পায়ের গিঁট ছাড়াচ্ছিল
বেঁকেচুরে। তার মধ্যেই জবাব দেয়।
লম্বা লোকটা মুখের ওপর দিয়ে হাত চালিয়ে ধুলো মোছে। কায়দার
সানগ্লাসটা একবার খুলে আবার পরে। তার কপালে গভীর ভ্রূকুটি, “যাব কী করে? দশ
কিলোমিটার বলল তো বাসওয়ালা। এই গরমে এতটা হাঁটা?”
“ও ব্যাটা তো হাঁটা দিল।”
“ওরা লোকাল লোক। এদের অভ্যেস আছে। চেহারা দেখছ না? যেমন হাইট তেমনি হাত পায়ের মাসল। এদিকে
হয়তো সত্তর বছর বয়েস।”
“অত হবে?”
“হতেও পারে। এদের বয়েস বোঝা মুশকিল। মুখও তো দেখতে পাচ্ছি
না। যা পাগড়ি পেঁচিয়েছে!”
“হনহন করে চলেও গেল তো কতটা। ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যেই পৌঁছেও
যাবে দেখো। আমরা কি শুধু
এখানে দাঁড়িয়ে প্ল্যানই করব?”
“দাঁড়াও, ওই চায়ের দোকানে কথা বলি।”
“চায়ের দোকান আবার কোথায় দেখলে হে?”
“আরে ওই তো। ঝুপড়িটা দেখছ না? চা না হোক কিছুর একটা দোকান তো বটে। ওখানেই খবর পাওয়া যাবে
ঠিক।”
ঝুপড়িওয়ালার দোকানে বিক্রির সামগ্রী বলতে কিছু দেশি
বিস্কুট, ভুজিয়া, বোতলে ভরা সন্দেহজনক রঙিন জল, কটকটে কমলা বেসনের লাড্ডু আর সস্তা
সিগারেটের প্যাকেট। বুড়ো দোকানমালিক ঝাঁপ ফেলার তোড়জোড় করছিল। শেষ বাস চলে
গেছে, বোঝাই যাচ্ছে আজকের মতো তার বিক্রিবাটা শেষ। অচেনা আগন্তুকদের দেখে বলিরেখায়
চৌচির মুখ তুলে তাকাল। ঝুলে পড়া পাকা ভুরুর তলায় ধূসর চোখের মণিতে কৌতূহল।
গ্রাম্য রাজস্থানী ভাষা বুঝতে ওদের খুবই অসুবিধে হলেও শেষপর্যন্ত
যেটুকু উদ্ধার করা গেল সেটা এইরকম। হাঁটতে না পারলে আজ আর করমপুরার দিকে যাওয়ার
চেষ্টা করে লাভ নেই। বরং এখানেই কষ্ট করে রাতটা কাটিয়ে দেওয়া হোক। কাল সকালে
চমনলাল গাদ্ধোগাড়ি মানে গাধার গাড়ি করে তাদের পৌঁছে দিয়ে আসবে না হয়। চমনলাল
বুড়োর ছোটোছেলে। তাকে কিছুমিছু পারিশ্রমিক দিয়ে দিলেই হবে।
“এখানে রাত কাটাব? কোথায়?”
“সরপঞ্চজির একটা ছোটখাটো হাভেলি আছে গ্রামে। তার একটা ঘর
তিনি অনেক সময় অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহার করতে দেন। সেখানেই থাকা যেতে পারে। খাওয়াও মিলবে।”
দু’জনে নিচু গলায় একটু পরামর্শ করে। উপায় যখন নেই রাজি হয়ে
যাওয়াই ভালো।
সরপঞ্চ জোহরাওয়র সিংজি গ্রামের মাঝখানে অশ্বত্থগাছের নিচে
বাঁধানো চবুতরায় বসে গড়গড়া টানছিলেন। সঙ্গে আরও কয়েকজন বয়স্ক মানুষ। এদের দেখে
মুখ থেকে গড়গড়ার নল নামালেন, “কী
ব্যাপার বুধন? এঁরা?”
“খম্মা গণি হুকুম,” বুধন হাতজোড় করে মাথা ঝোঁকায়, “মেহমান আমাদের।
আপনার ভরসায় নিয়ে এসেছি।”
জোহরাওয়র সিং সামান্য বিস্মিত দৃষ্টি দু’জনের দিকে ঘোরান, “কী ব্যাপার বলুন তো?”
লম্বা লোকটি এগিয়ে এসে নমস্কার করে, “আমরা দিল্লি থেকে আসছি। যাব করমপুরা।
আজ রাতটা এখানে কোনোরকমে যদি থাকা যেত।”
“করমপুরা? সেই অজ
গাঁয়ে আপনাদের মতো লোকের কী কাজ?”
লম্বা লোকটিই উত্তর দেয়। দিতে গিয়ে একটু ইতস্তত করে। তারপর
গলা নামায়, “আপনি গ্রামের মাথা, আপনাকে বলতে
অসুবিধে নেই। আপনার কাছ থেকে কথা বেরোবে না। আমরা আসলে গোয়েন্দা পুলিশের লোক।”
“গোয়েন্দা পুলিশ!” অশ্বত্থতলায় সমবেত শ্বাস টানার শব্দ শোনা
যায়।
“আজ্ঞে হ্যাঁ। আমার নাম নিশপাল, আর এ হল রৌনক।
পুরো নাম জেনে আপনাদের কাজ নেই। আমাদের কাছে পাক্কা খবর
আছে করমপুরায় একজন ফেরারি আসামি লুকিয়ে আছে। তার পিছু করেই এই পর্যন্ত আসা।”
“করমপুরায় ফেরারি আসামি! কে বলুন তো? কী অপরাধের আসামি? খুন, নাকি ডাকাতি?” প্রশ্নগুলো
চারদিক থেকে ছুটে আসে।
“মাফ করবেন।” নিশপাল সকলের মুখগুলোর ওপর দিয়ে একবার চোখ
বুলিয়ে নেয়। তার ঠোঁটে মৃদু হাসি, “সেটা তো বলা যাবে না। বুঝতেই পারছেন।”
“তা তো বটেই, তা তো বটেই। বেশ তো, থাকুন আজ রাতটা। আমার
হাভেলির সামনের ঘরখানা তো খালিই পড়ে থাকে। তবে হাঁ, শহুরে আরাম পাবেন না, আগেই
বলে দিচ্ছি।”
“দরকারও নেই। দু’টো রুটি আর একটা চারপাই পেলেই হয়ে যাবে,” রৌনক এতক্ষণে কথা বলে।
হা হা করে হাসেন জোহরাওয়র সিং, “দু’টো কেন, তার বেশিই মিলবে। সবজি আচার সব
মিলবে। আসুন আমার সঙ্গে।”
পা বাড়িয়েও আবার থমকে দাঁড়ান সরপঞ্চ, “কাল করমপুরা যাওয়ার ব্যবস্থা কিছু হয়েছে?”
“জি হুকুম,” বুধন
আবার মাথা ঝোঁকায়, “আমার ছোটোছেলে পৌঁছে দেবে গাধার গাড়িতে।
চমনলাল।”
“তবে তো ঠিকই আছে। আসুন।”
রৌনক সামান্য পিছিয়ে হাঁটছিল। নিশপালকে চোখের ইশারা করে
কাছে ডেকে নেয় সে। গলা নামিয়ে ফিসফিস করে, “আমাদের আসল নামগুলো বলা কি উচিত হল?”
“এখানে কে চিনবে আমাদের। এরা খবরের কাগজ পড়ে
ভাবছ নাকি? তাও তিনবছরের পুরনো খবর। সে-ও দিল্লি শহরের। ছাড়ো তো! কালকের কথা
ভাবো। শয়তানটা এতদিনে হাতের মুঠোয়।”
।।
৩।।
চমনলালের গাধা চলতে চলতে আচমকা দাঁড়িয়ে গেল।
সকাল আটটাতেই মাথার ওপর চনচনে রোদ। ভাঙাচোরা মাটির রাস্তায়
মানুষ তো দূরে থাক একটা কুকুর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। গাছ বলতে দূরে দূরে কিছু
সাংরি আর বাবুলের ঝোপ।
দু’খানা ট্রাকের টায়ারের ওপর বসানো চমনলালের জোড়াতালি গাড়ি।
পুরনো তক্তা দিয়ে তৈরি একটা পাটাতন মাত্র। না আছে মাথার ওপর ছাদ, না কোনও পাশে
ধরার জন্য কিছু। এই গরমে, অস্বস্তিতে একঘণ্টা ধরে ঢিকোতে ঢিকোতে নিশপালের মেজাজ
এমনিতেই তিরিক্ষি হয়ে ছিল। এখন একেবারে ফেটে পড়ল, “কী হল চমনলাল? থামলে কেন?
এমনি করে চললে আজ কেন, একমাসেও পৌঁছবে না তোমার গাধা।”
নিশপালের উত্তেজনা চমনলালকে ছোঁয় কি না বোঝা যায় না। সে
ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে একটু এগিয়ে গেছে। সেখান থেকেই ফিরে তাকায়, “একবার দেখুন তো এটা কী।”
“কী হল আবার!” নিশপাল একরাশ বিরক্তি নিয়ে লাফ দিয়ে নামে।
পেছন পেছন রৌনকও।
রাস্তার এপার থেকে ওপারে একটা স্বচ্ছ নাইলনের দড়ি টানটান
করে বাঁধা। সাদাটে রোদে সহজে চোখেও পড়ছে না। গাধা তার সহজাত পশুবুদ্ধি দিয়ে বিপদ বুঝে
থেমে গেছে, না হলে হঠাৎ বাধা পেয়ে গাড়ি-টাড়ি সমেত উলটে পড়তে পারত।
“এ আবার কী কাণ্ড? এ রাস্তায় চলা বারণ নাকি?”
“এমন তো কিছু শুনিনি সাহেব।”
রৌনকের চোখে ততক্ষণে অন্য কিছু পড়েছে। সে হালকা শিস দিয়ে
নিশপালকে ডাকে, “এটা দ্যাখো।”
নাইলনের দড়ির সঙ্গে শক্ত করে আটকানো একটা চৌকোমতো কিছু।
ছবি বা পোস্টারের মতো মনে হচ্ছিল। কাছে গিয়ে ভালো করে দেখল নিশপাল। চোখ তুলে যখন
রৌনকের দিকে তাকাল সে তখন তার মুখ সাদা হয়ে গেছে।
রৌনক দড়ি থেকে জিনিসটা ছাড়িয়ে নিয়ে দেখছিল। কয়েকটা খবরের
কাগজের কাটিং একসঙ্গে করে ল্যামিনেট করা। হিন্দি ইংরেজি দু’রকমই আছে। সবক’টাই একই
তারিখের কাগজ। তিনবছর আগের একটা তারিখ। সবক’টা কাটিংয়ে একই ঘটনার খবর।
দিল্লিতে একটা ক্যাশ ভ্যান লুট। টাকাভরা ব্যাগ নিয়ে ভ্যানের
ড্রাইভার, লোডার আর গার্ড পলাতক। প্রচণ্ড আহত কাস্টডিয়ানকে গাড়ির মধ্যে
রক্তাপ্লুত, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর আঘাত মারাত্মক। প্রাণের আশা ক্ষীণ।
“একেবারে শেষ করে দিয়ে আসা উচিত ছিল,” নিশপাল বিড়বিড় করে।
“শেষ করেই এসেছিলাম। ওই চোট থেকে কেউ বেঁচে ফিরতে পারে না।”
“তাহলে এটা? এটা কী?”
“এটা ওরই কাজ যে কী করে জানছ? অন্য কেউও তো হতে পারে।”
“অন্য কেউ মানে? পুলিশ?”
“হতে পারে।”
“পুলিশ সোজা এসে ধরত রৌনক। এরকম আড়াল থেকে তির ছুঁড়ত না।
তিনবছর ধরে শহরে শহরে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরেছি, কী হয়েছে? কী করতে পেরেছে পুলিশ। আজ তুমি বলছ এই
করমপুরায় তারা এসে আমাদের ধরবে? উঁহু। মানলাম না। এ চন্দন।”
“তাহলে? কী করবে? ফিরে যাবে?”
এদের কথাবার্তার মাঝেই চমনলাল দড়ি খুলে রাস্তা পরিষ্কার
করে দিয়েছে। লাফিয়ে গাড়িতে ওঠে নিশপাল। তার চোয়াল শক্ত, “ফিরে যাব? এতদূরে
এসে? নাহ্, সে হয় না। আগে দুখনরামের হিসাব বরাবর করি। তারপর
চন্দনকে বুঝে নেব।”
গাধার গাড়ির চাকা আবার গড়াতে আরম্ভ করে করমপুরার দিকে।
বেশ কিছুক্ষণ পর রাস্তার পাশে এলোমেলো পড়ে থাকা একটা শুকনো
কাঁটা-ডালের ঝোপ একটু নড়ে ওঠে। গরম বালিতে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা একটা শরীর কাঁটার
বোঝা ঝেড়ে ফেলে আস্তে আস্তে সোজা হয়। স্থির শীতল একজোড়া চোখ অনেকদূরে ক্রমশ ছোট হয়ে আসতে থাকা
গাধার গাড়িটাকে অনুসরণ করতে থাকে।
দুখনরামের দোকানে আজ খদ্দের বেশি নেই। এই গরীব গ্রামে রোজ
রোজ আটা ডাল কেনার লোকই বা ক’টা? তবুও
এখানেই ভালো আছে দুখনরাম। শহরের মোহ তার কেটে গেছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। দোকানে বসে ঢুলছিল দুখনরাম।
একটা ঠক ঠক আওয়াজে তার তন্দ্রা ছুটে গেল। সামনে অচেনা একজন। এদেশিদের মতোই পোশাক-আশাক,
কিন্তু তবুও যেন ঠিক এখানকার লোক বলে মনে হচ্ছে না। রোদ থেকে বাঁচার জন্যই বোধহয়
পাগড়ির খুঁটটা টেনে চোখের নিচ থেকে মুখ ঢেকে জড়ানো। হাতে লম্বা লাঠি একটা। সেটাই
ঠক ঠক করে দুখনরামের ঘুম ভাঙিয়েছে লোকটা। “কী চাই ভাই?” দুখনরাম চোখ রগড়ে ঘুম তাড়ায়।
“যা চাই তা দেবে তো দুখন সাহু?”
দুখনরামের সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। গদির পাশে
হাতটাও নিয়ে যেতে পারে না সে। স্থাণু হয়ে বসে থাকে। লোকটা মুখ থেকে ঢাকা সরিয়ে
ফেলেছে। ধারালো, চৌকো মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখন। কপালে একটা গভীর কাটা দাগ।
তীক্ষ্ণ দু’টো চোখের দৃষ্টি যেন দুখনরামকে বর্শার আগায় বিঁধে ফেলছে।
“চিনতে পারছ, দুখনরাম? না না, দুখনরাম নয় তো, ক্যাশ সিকিউরিটাস কোম্পানির লোডার তো ছিল ধরমপাল
সাহু। তাই না? নামটা তাই লিখিয়েছিলে তো চাকরিতে ঢোকার সময়?”
দুখনের বুক পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ। কোনোরকমে পাথর জিভটা নাড়ে
সে, “চ-চন্দন স্যার!”
“এই তো চিনেছ। তা চিনবে না-ই বা কেন। পেছন থেকে মাথায় প্রথম
ডাণ্ডাটা তো তুমিই মেরেছিলে, তাই না?”
দুখনরাম আর কথা বলতে পারে না।
“ভয় পাচ্ছ দুখনরাম? ভয় নেই। তোমায় মারতে আসিনি আমি। একটা খবর দিতে এলাম শুধু। তোমার দুই
সাথীও কিন্তু এখন এখানেই। যাদের ভাগের টাকা মেরে তুমি এখানে লুকিয়ে আছ। আজ কালের
মধ্যেই হিসেব মেটাতে আসবে তারা। কী করে মোকাবিলা করবে তাদের ভেবে রাখো। তাদের হাত
থেকে বাঁচলে তখন না হয় আমার পালা।”
মূর্তি হয়ে যাওয়া দুখনরামের দিকে চেয়ে অদ্ভুত হাসে চন্দন।
সুবেদার মেজর চন্দন দাস। এক্স ইণ্ডিয়ান আর্মি। তিনবছর
আগে লুট হওয়া ক্যাশ-ভ্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টডিয়ান।
“কী করবে ভাবো দুখনরাম। টাকা, না জান, কোনটা বাঁচাবে?”
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg8M-wuK58_ybL6rllZscPud9D7V-d4oKPa563Me6Cl-r17CYOuks0MmGzl5W-qu3KvsqPfj7YRDHp6k5Vxd3rhxMZFWwDZyvlxtVwa_RguVviVWSOM6NDkybB8JyKzAZ1K-mAm8B-m4Fo/s640/Ijjat2.jpg)
।।
৪।।
প্রায় ভেঙে পড়া বাড়িটার একটা ঘরে রৌনক আর নিশপাল মুখোমুখি
বসেছিল। অন্ধকারের অপেক্ষায়। চমনলাল অনেকক্ষণ ফিরে গেছে তার গাধাকে নিয়ে। গ্রামে
সরাসরি ঢোকেনি ওরা। একটু আড়াল দিয়ে ঘুরপথে ঢুকেছিল, পথ চলতি মানুষজনের চোখ এড়িয়ে।
এই ভাঙাচোরা বাড়িটা তখনই চোখে পড়েছিল। সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগেনি। এটাই আপাতত ওদের ঠিকানা। দুজন
আলাদা আলাদা করে ঘুরে এসেছে তারপর গ্রামে অবশ্য। দুখনরামের আস্তানার সন্ধান পাওয়া
জরুরি ছিল।
“তাহলে, আজই?” অনেকক্ষণ পরে রৌনক জিজ্ঞেস করে।
“হ্যাঁ, আজই। দেরি করার সময় নেই। টের পেলে আবার পালাবে বেইমানটা,” আবছায়া অন্ধকারে নিশপালের চোখ ধকধক জ্বলে।
“বেশ।”
“কেমন আওয়াজ হল না একটা? কে? কে গেল ওখান দিয়ে?”
নিশপাল হঠাৎ চমকে ওঠে। উৎকর্ণ হয়ে কী যেন শোনার চেষ্টা করে।
“কোথায় আওয়াজ? ইঁদুর-টিদুর হবে।”
“ইঁদুর? তাই হবে,” নিশপালকে একটু অস্থির লাগে।
রৌনক হাতের মোটা মোটা আঙুলগুলো মটকাচ্ছিল একটা একটা করে। মাথা
না তুলেই কথা বলে সে, “সবটা ফেরৎ পাবে
ভাবছ?”
নিশপাল সামান্য অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। রৌনকের প্রশ্নটা তার
কানে যায় না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রৌনক আবার একই প্রশ্ন করে। নিশপাল তাকায় তার
দিকে। একটুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর কথা বলতে শুরু করে। ঠিক প্রশ্নের উত্তর নয়,
নিজেকেই যেন নিজে বলতে থাকে সে, “পঞ্চান্ন
লাখ টাকা। পঞ্চান্ন লাখ। জান লড়িয়ে এত বড়ো বাজিটা খেললাম আমরা, আর পুরো সরটা
খেয়ে গেল ওই দুখনরাম। আসলে সব গোলমাল করে দিল চন্দন। ওই পাগল ফৌজিটা ঝামেলা না
পাকালে এসব কিছুই হত না।”
“সত্যি। ওই বাঙালি যে এরকম লড়বে এটা মাথাতেই ছিল না।”
“মনে পড়ে রৌনক, সেদিনের কথা? গাড়ি চালাচ্ছিলে তুমি, আর
পাশে বন্দুক নিয়ে ছিলাম আমি, গার্ড। ভ্যানের পেছনদিকে ছিল লোডার দুখনরাম। ওখানে অবশ্য আমরা ছাড়া
কেউ তাকে ও নামে চিনত না। মনে আছে?”
“সব মনে আছে। ছবির মতন। জনপথ আউটার সার্কল ক্রসিং থেকে
গাড়ি রিগালের দিকে ঘোরাতেই চন্দন দাস চেঁচিয়ে উঠেছিল। দুখন তাকে পেছন থেকে মাথায়
মারল এক ডাণ্ডার বাড়ি।”
“হ্যাঁ। তারপর এপথ ওপথ ঘুরে আমরা গেলাম মহিপালপুরের দিকে। ফাঁকা
জায়গা দেখে গাড়ি থামালে তুমি। টাকার বস্তাটা বার করতে যাব, তখনই চন্দন আবার
লাফিয়ে উঠল। তুমি আমি দু’জনে তাকে সামলাতে পারি না। কী তেজ তার! মাথা দিয়ে ওইরকম
রক্ত গড়াচ্ছে, তবুও কাবু করতে পারছিলাম না।”
“শেষটায় ছুরি বার করতেই হল। পেছন থেকে কোপের পর কোপ।”
“হ্যাঁ। কিন্তু যতক্ষণে নিস্তেজ চন্দনকে শুইয়ে ফেলা গেল
ততক্ষণে দুখনরাম টাকার বস্তা নিয়ে কেটে পড়েছে। খেয়ালই করিনি। কোথায় যে লুকোল! তখন
আমাদের দু’জনেরই সারা গায়ে রক্ত, জামাকাপড় রক্তে মাখামাখি। খুঁজব যে তারও উপায় ছিল না।”
“তারপর থেকে তো শুধু পালিয়েই বেড়াচ্ছি। মাঝেমাঝে পেট
চালাতে দুয়েকটা ছোটো ছিনতাই। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ।”
“আর খুঁজেই বেড়াচ্ছি। এতদিনে পেয়েছি। আজ বোঝাপড়া,” নিশপাল দাঁতে দাঁত ঘষে।
“ঠিক। আজ বোঝাপড়া।”
“কে? কে বলল কথাটা? সামনে এসে বলো কে বললে ও কথা?” নিশপালের গলা চড়ে
যায়।
“আস্তে। চেঁচিয়ে লাভ নেই,” লম্বা টানটান মানুষটা নিঃশব্দ পায়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে কখন যেন।
“চন্দন স্যার!” হতবুদ্ধি নিশপালের মুখ দিয়ে পুরনো অভ্যস্ত
সম্বোধনটাই বেরিয়ে আসে।
“স্যার! বাহ্! এখনও বেশ তমিজ আছে তো, নিশপাল যাদব।”
রৌনক উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। এখন সে আস্তে আস্তে পেছোতে
থাকে। দু’টো ব্যাকপ্যাকই ঘরের কোণায় রাখা আছে। ওই পর্যন্ত পৌঁছতে পারলেই
নিশ্চিন্ত। ব্যাগের ভেতরের জিনিসটা হাতে নিলে চন্দনকে ঠেকানো কোনও ব্যাপার নয়। সে
একবার চোখ তুলে তাকায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই থেমে যায়। চন্দনের চোখ তার দিকে ঘুরেছে।
“কী খবর, রৌনক সেবাস্টিয়ান গোমস?”
“আ-আপনি বেঁচে আছেন?” রৌনকের গলা অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও স্থির থাকে না।
“কী মনে হচ্ছে? হ্যাঁ, অনেক চেষ্টা করেছিলে তোমরা, সত্যি। কিন্তু ফৌজির জান যে বড্ড কড়া।
অত সহজে তো ময়দান ছাড়ে না।”
নিশপাল বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে ছিল। তার মুখে স্তম্ভিত
অবিশ্বাস। আরও এগিয়ে আসে চন্দন। হাতের ছোট্ট জিনিসটা উঁচু করে দেখায়।
“তবে হ্যাঁ, খাটনি কমিয়ে দিয়েছ মানতেই হবে। পুরো জিনিসটা
সুন্দর গুছিয়ে বলেছ। রেকর্ড করতে একটুও অসুবিধে হয়নি।”
রৌনক একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার বসে পড়ে। সে স্পষ্ট দেখতে
পায় চারদিক থেকে জাল গুটিয়ে আসছে তাকে ঘিরে ফেলার জন্য। আর পালাতে পারবে না সে। হাল ছেড়ে দিয়ে রৌনক একবার চন্দন আর
একবার নিশপালের দিকে তাকায়। চন্দনও নিশপালের দিকেই চেয়ে ছিল।
“গার্ড ছিলে তুমি নিশপাল। পাহারাদার। যা বাঁচানোর দায়িত্ব
দেওয়া হয়েছিল তোমায় সেটাই তুমি চুরি করতে চাইলে? এত বড়ো বেইমানিটা করতে তোমার বাধল না?”
নিশপাল হঠাৎ ক্ষেপা মোষের মতো মাথা নিচু করে একটা ঝাঁপ দেয়
চন্দনের দিকে এবং সজোরে মাটিতে আছড়ে পড়তে পড়তে সে বুঝতে পারে চন্দন সরে গেছে
বিদ্যুতের মতো।
“সেদিন বুঝতে না দিয়ে, কোনও সুযোগ না দিয়ে পেছন থেকে
মেরেছিলি তোরা। কাপুরুষের মতো। আজ দ্যাখ ফৌজি কী খেল দেখায়।”
লড়াইটা খুবই অসম এবং সংক্ষিপ্ত হল। দু’জনকে পিঠোপিঠি বাঁধা
শেষ করে উঠে দাঁড়ায় চন্দন।
“তিনমাস হাসপাতালে ছিলাম আমি। তিনমাস। ডিউটিতে অবহেলার জন্য
প্রোমোশন আটকে গিয়েছিল। অথচ ঈশ্বর জানেন, যতক্ষণ জ্ঞান ছিল আমি তোদের রুখতে চেষ্টা
করে গেছি। ফৌজির কাছে সবচেয়ে বড়ো কী জানিস? তার ইজ্জত। সেই ইজ্জতে দাগ লেগেছিল তোদের জন্য। এবার দাগ মিটবে।”
মুখ বাঁধা দু’টো শরীরের একটা থেকে গোঁ গোঁ শব্দ হয়।
“নাহ্। ওইভাবেই থাকতে হবে যে এখন। যতক্ষণ না বাড়মের থেকে পুলিশ
টিম এসে পৌঁছয়। আমি শুধু একটা দিন সময় চেয়ে নিয়েছিলাম পুলিশের কাছে। আড়াই বছর ধরে
তোদের ফলো করছি, শেষটাও নিজে হাতেই করতে চেয়েছিলাম। তা পুলিশ সাহেব সদাশয় ব্যক্তি।
সেটুকু পারমিশন দিয়েছেন। কাল সকালে তাঁরা এসে পৌঁছবেন। ততক্ষণ এইভাবেই থাক।”
শরীরদু’টো ঝটপট করে, পা বাঁধা মুরগির মতো।
“আরে, চিনতে পারিসনি? কাল তোদের সঙ্গেই এলাম তো! একসঙ্গে নামলাম যে বাস থেকে! জানতাম,
দুখনরামকে তোরাই খুঁজে বার করবি একদিন না একদিন। তখন তিনটেকেই একজালে তুলে নেওয়ার
অপেক্ষা শুধু।”
চন্দন হঠাৎই হেসে ওঠে হো হো করে, “দুখনরাম আবার পালিয়েছে, জানিস তো? এবার
খালি হাতেই। তবে যাবে আর কোথায়।”
।।
৫।।
মাথায় দু’টো বড়ো বড়ো সুটকেস চাপিয়ে নতুন কুলিটা ট্যাক্সিস্ট্যাণ্ডের
দিকে হাঁটছিল। সপ্তাহখানেক হল এসেছে লোকটা যোধপুর স্টেশনে। কেমন যেন অদ্ভুত মানুষ।
কথা বলে খুব কম। ভারি ভারি মাল অনায়াসে তুলে নিতে
পারে।
লোকটার নাম এখানে মঙ্গতরাম। আগে অন্য একটা, একটা তো নয়, দু’টো
নাম ছিল অবশ্য। সে নামগুলো এখানে কেউ জানে না। মাঝে মাঝে কী যেন হয় লোকটার। চুপ
করে বসে থাকে এককোণে। চোখের
ওপর তখন একটা পর্দা নেমে আসে। একটা মস্ত বড়ো দুর্গের মতো বাড়ির কথা মনে পড়ে
লোকটার। বাড়িটার ভারি ভারি দরজা, দরজায় মোটা মোটা লোহার কড়া, কড়ায় জগদ্দল তালা।
শোওয়ার ঘরের দেওয়ালের কুঠুরিতে লুকোনো টাকার বাণ্ডিল। আরও পিছিয়ে গেলে আরও কিছু
মনে পড়ে বইকি। একটা লোহার ডাণ্ডা, একটা মানুষের রক্তে মাখামাখি শরীর। নিজেকে একটা
ঝাঁকুনি দিয়ে তখন বর্তমানে ফিরিয়ে আনে মঙ্গতরাম নামে পরিচিত লোকটা।
ট্যাক্সির লাইনে সুটকেসদু’টো নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে কি
দাঁড়ায়নি, ডাকটা কানে এল।
“পালিয়ে বাঁচবে ভেবেছিলে, দুখন সাহু?”
হতাশায় সারা গা ঢিলে হয়ে আসে মঙ্গতরাম, ওরফে দুখনরামের। হল
না। শেষরক্ষা হল না। টাকাকড়িসব ফেলে পালিয়ে এসেও হল না। ফিরে দাঁড়ায় সে।
সুবেদার মেজর চন্দন দাস।
ঠিক তার মুখোমুখি। আর চন্দনের একটু পেছনে চারজন উর্দিধারী পুলিশ। সশস্ত্র।
যাদের মাল তারাও রয়েছে। হতভম্ব হয়ে একবার তার দিকে আর একবার পুলিশদের দিকে
তাকাচ্ছে।
নাহ্। পালাবার আর পথ নেই।
_____
চমৎকার টানটান গল্প! আরো পাব, সেই আশায় রইলাম।
ReplyDeleteধন্যবাদ। চেষ্টা করব।
Deleteখুব ভাল লাগল। ছবির মতো দেখতে পেলাম সব বর্ণনার গুণে।
ReplyDeleteঅজস্র ধন্যবাদ।
Deleteদারুণ লাগল, বর্ণনা একেবারে ছবির মত।
ReplyDeleteঅদিতি সরকারের গল্প মানেই পাঠকের হার্টবিট বেড়ে দ্বিগুণ। টানটান এই গল্পটাও পড়ে ফেললাম এক নিশ্বাসে। সুপার্ব।
ReplyDeleteDarun...besh thrilling. .
ReplyDeleteপ্লটের বুনট ১০০x১০০ সুতোর। ফাঁঁক নেই। ভয়তাড়িত দুখনরাম গল্পের চালচিত্রে নিখুঁঁত মাত্রা যোগ করে। চন্দনকে বাংগালি করাটা মাস্টার স্ট্রোক। বড়দের লেখা কিছু থাকলে লিংক পাঠাবেন। জয় উচ্চারণ করি
ReplyDeleteদারুন গল্প।খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteঅসাধারণ ভালো একটা গল্প, খুব ভালো লাগলো
ReplyDeletedarun....porte porte satyi chhobir moto drisyo gulo chokher samne bhese uthchhilo........asadharan lekha.........
ReplyDelete