ভারতে দেখা
অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু
অমিয় আদক
আন-আইডেনটিফায়েড
ফ্লাইং অবজেক্ট, বরাবরই মানুষকে ধাঁধায় ফেলেছে। আকাশে ওড়া চিনতে না পারা দৃশ্যমান বস্তুকেই
U.F.O. (Unidentified flying
objects)-এর দলে ফেলা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশেই এমন ঘটনা বহুকাল ধরেই চলে আসছে। আমাদের দেশেও তেমনি U.F.O. দেখার ঘটনা
নেহাৎ কম নয়। তবে এই ব্যাপারে সবার আগে আছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। এই সমস্ত
অজ্ঞাত মহাকাশীয় বস্তু নিয়ে মানুষের চিন্তা এবং কল্পনার ঘাটতি নেই। U.F.O. নিয়ে বিভিন্ন
ভাষায় কল্পবিজ্ঞানের গল্পেরও শেষ নেই। এমনকি U.F.O. নিয়ে আস্ত
কল্পবিজ্ঞান আশ্রিত উপন্যাসও লেখা হয়েছে। আমি অল্প পরিসরে ভারতে দেখা U.F.O. বা ‘অজ্ঞাত
উড়ন্ত বস্তু’ বিষয়ে আলোচনা করব।
অজ্ঞাত
উড়ন্ত বস্তু ভারতে বহুপূর্বেই এসেছিল। তার প্রমাণ ওই উড়ন্ত বস্তুতে আসা কোনও সভ্য
প্রাণীরা রেখে গেছেন। পূর্বের মধ্যপ্রদেশের অংশ বর্তমানের ছত্তিশগড়। ছত্তিশগড়ের পাহাড়ি
অঞ্চলে অবস্থিত চারামা। চারামা কঙ্কের জেলায় অবস্থিত। এই চারামাতে পাওয়া গেছে
প্রাগৈতিহাসিক কালের অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর ছবি। এখানে পাথরের উপর রক পেন্টিং পাওয়া
গেছে। তা কয়েক হাজার বছরের পুরনো। সেই পেন্টিং বা ছবি ভারতের
মানুষের আঁকা নয়। এই বহুপ্রাচীন ছবির বিষয়বস্তু উড়ন্ত চাকি ও তার আরোহী। ওই উড়ন্ত
চাকির আছে ইলেকট্রিক পাখার মতো অ্যান্টেনা। প্রতিটি অ্যান্টেনার আবার তিনটি করে পা
আছে। এখানে আঁকা মানুষের আকারের ছবিও পাওয়া গেছে। সেই ছবির মানুষগুলো অবিকল আধুনিক
মহাকাশচারীদের মতো স্পেস স্যুট পরা। তাদের মুখমণ্ডলের চেহারা বোঝা যায় না।
১৯৫১
সালের ১৫ই মার্চ। তখন সকাল ১০টা ২০মিনিট। দিল্লীর একটি ফ্লাইং ক্লাবের ২৫ জন সদস্য
আকাশে একটি সিগারেট আকৃতির সাদা বস্তু দেখতে পান। সেটি আনুমানিক ১০০ ফুট লম্বা।
অল্প কিছুক্ষণ পরে ওই আকাশে দেখা বস্তুটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই ভারতের মানুষের
চোখে দেখা প্রথম অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু।
৩রা
অক্টোবর ১৯৫৭ সাল। স্থান বিহারের মানভূম জেলার তিনটি গ্রাম, কোদারি, বোরসা আর
মানগালদা। সন্ধ্যার পরে মোটরগাড়ির ইঞ্জিনের মতো জোরালো আওয়াজে
গ্রামবাসীগণ তাদের কুটিরের বাইরে বেরিয়ে আসে। আকাশে লক্ষ করে থালার আকৃতি অজ্ঞাত
উড়ন্ত বস্তু। সেটি মাটি থেকে আনুমানিক ৫০০ ফুট উচ্চতায় নেমে আসে। তারপর জোরে ধোঁয়া
ছেড়ে দ্রুত আকাশে মিলিয়ে যায়। তখন মানুষের হাতে স্মার্টফোন, ক্যামেরা কিছুই ছিল
না। ৮০০-এর অধিক গ্রামবাসীর প্রত্যক্ষ দর্শনকে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করে টাইমস অফ
ইন্ডিয়া একটি সংবাদ প্রকাশ করে।
বিংশ
শতাব্দীতে ভারতে আর অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর সাক্ষাৎ মেলেনি। ২০০৭ সালের
২৯শে অক্টোবর ভোর ৩টে ৩০মিনিট থেকে ৬টা ৩০মিনিট পর্যন্ত এক অদ্ভুত আলোক কলকাতার আকাশে
দেখা যায়। এই অদ্ভুত আলোটি ছিল দ্রুতগামী। এই বস্তুটি একটি আলোক মণ্ডল তৈরি করে
এবং ওই আলোক মণ্ডল থেকে বিচিত্র বর্ণের আলো নির্গত হয়। কলকাতার পূর্ব আকাশে
আনুমানিক ৩০ ডিগ্রি উন্নতি কোণে এটি দৃশ্যমান হয়। এটিকে দেখতে
সেদিন ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে অনেক মানুষ ভোরের আলোয় সমবেত হন। অনেকেই
হ্যান্ডিক্যামে এই অদ্ভুত দর্শন বস্তুটির ভিডিও রেকর্ডিং করেন। এই আলোকসদৃশ
বস্তুটির প্রাথমিক আকৃতি দেখা যায় গোলকাকার। গোলক আকৃতি থেকে ক্রমে সেটি ত্রিভুজাকার পাতের চেহারায়
পরিবর্তিত হয়। অবশেষে সেটি সরলরেখার আকৃতি লাভ করে। এই সমস্ত ভিডিও ফুটেজ টিভিতেও
প্রদর্শিত হয়। এই ভিডিও ফুটেজ এম.পি. বিড়লা তারামণ্ডলের
অধিকর্তা ডঃ ডি. পি. দুয়ারীর নিকট পাঠানো হয়। ওই ভিডিও
দেখে তিনি বিষয়টিকে অদ্ভুত এবং আশ্চর্যজনক হিসাবে অভিহিত করেন। অনেকদিন পরে ডঃ ডি. পি. দুয়ারী ওই আলোক গোলকটি বুধ গ্রহ হওয়া সম্ভব বলে মত প্রকাশ
করেন।
২০১৩
সালে ভারতে দুটি অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু দর্শনের ঘটনা ঘটে। চেন্নাইয়ের মোগাপ্পাইয়ারের
অধিবাসীরা পাঁচটি কমলা বর্ণের আলোর দাগকে দক্ষিণ আকাশ থেকে উত্তর আকাশের দিকে যেতে
লক্ষ করেন। তারিখটা ছিল ২০১৩ সালের ২০শে জুন। সময় সন্ধ্যা ৮টা ৫৫ মিনিটের
কাছাকাছি। ওই ঘটনাটি ২৩শে জুনের ‘হিন্দু’ সংবাদপত্রে সংবাদ হিসাবে প্রকাশিত হয়।
লাদাখের
ডেমচকের লাগোয়া খের এলাকা। সময় সন্ধ্যা, ৪ঠা আগস্ট, ২০১৩ সাল। সেনাবাহিনীর কিছু
জওয়ান আকাশে বেশ কিছু সংখ্যক আলোকিত অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুকে লক্ষ করেন। পরে আরও জানা
যায় সেনাবাহিনীর জওয়ানরা অরুণাচল প্রদেশের সীমানা এলাকায় অনুরূপ শতাধিক আলোকিত
অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুকে লক্ষ করেছেন বিগত সাতমাস ধরে। এই ঘটনাটিও ‘হিন্দু’ পত্রিকায়
১৯শে আগস্ট, ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়।
২০১৪
সালের ২৩শে জুলাই সূর্যাস্তের সময়। স্থান লখনৌয়ের রাজাজিপুরম এলাকা। সুর্যাস্তের
একগুচ্ছ ছবি থেকে দেখা যায় কোনও একটি অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর উপস্থিতি। বিষয়টিকে
অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। ‘ইন্ডিয়া টু ডে’ পত্রিকার ২৪শে জুলাই
সংস্করণে সংবাদটি পরিবেশিত হয়।
২০১৪
সালের ১০ই সেপ্টেম্বর। মুম্বাইয়ের অধিবাসী অপেশাদার UFO ভাবুক
লরেঞ্জ সিজার সন্ধ্যার বেশ পরে মুম্বাইয়ের আকাশে এক অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর ছবি তোলেন।
সেই ছবিতে উড়ন্ত বস্তুটিতে কমপক্ষে পাঁচটি ভিন্ন বর্ণের আলোর সমাহার লক্ষ করেন। লরেঞ্জ
সিজারের ছবিকে অনেকেই গুরুত্বহীন মনে করেন। তাঁরা এটিকে ‘চীনা লন্ঠনের আলো হতে
পারে’ বলে নিরাশ করেন। তিনি তাঁর ভিডিওর কপি ইউটিউবে পোস্ট হিসাবে রেখেছেন। এই
ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমের মান্যতা পায়নি।
২০১৪
সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ। একটি বাণিজ্যিক বিমান সংস্থার মহিলা পাইলট মুম্বাই
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে তাঁর স্বচক্ষে অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু দেখার ঘটনা রিপোর্ট
করেন। তিনি জানান, বিমান ২৬৩০০ ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় পুনের
আকাশে তিনি একটি সবুজ এবং সাদা বর্ণের অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুকে প্রত্যক্ষ করেন।
ঘটনাটি ৪ঠা অক্টোবর ‘পুনে মিরর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
‘ইন্ডিয়া
টু ডে’ পত্রিকায় ৩০শে অক্টোবর ২০১৪ তারিখে অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু দর্শনের দাবী করা
হয়। ওই পত্রিকার দাবী, দক্ষিণ ভারতের কেরালার কোচিতে বস্তুটিকে দেখা যায়। মানুষের
হাতের আঙুলের নখের আকৃতির একটি অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুকে কোচির
দক্ষিণ আকাশে ২৯শে অক্টোবর দেখা যায়।
২০১৫
সালের ২৫শে জুন, স্থান কানপুর মহানগরের শ্যামনগর। এক স্কুলপড়ুয়া তার স্মার্টফোনের
সাহায্যে তাদের বাড়ির ছাদ থেকে একটি অজ্ঞাত উড়ন্ত চাকির ছবি তথা ভিডিও তুলতে
পেরেছে বলে দাবী করে। সেই ছবি স্মার্টফোনের বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করেই করা।
বিশেষজ্ঞগণ তাই মনে করেন। কিন্তু ওই স্কুলপড়ুয়া এবং তার পিতা বিষয়টি অস্বীকার
করেন। ওই ভিডিওটিও ইউটিউবে দেখা সম্ভব।*
২০১৫
সালের ২৮শে নভেম্বর সোস্যাল মিডিয়াতে একটি UFO-এর
ডিজিট্যাল এডিটিং ফেক ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিটি প্রকাশ করেন গোরক্ষপুরের এক
বাসিন্দা। সোস্যাল মিডিয়াতে হৈ চৈ পড়ে যায়। ঐ ছবি ভালোভাবে পরীক্ষা করে গোরক্ষপুর
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ সিদ্ধান্ত দেন ছবিটি ডিজিটাল এডিটিং দ্বারা প্রস্তুত
একটি জাল ছবি।*
*চিহ্নিত
ঘটনাগুলিও সকলের জানা দরকার মনে করেই উল্লেখ করেছি মাত্র।
**এই
নিবন্ধের জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও আন্তর্জাল তথ্য ভাণ্ডারের সাহায্য গ্রহণ
করেছি।
_____
ছবিঃ
আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment