জ্ঞান
দেবেন না, প্লিজ
-
আচ্ছা ছোটকা, তুমি পিছন দিকে
জোরে দৌড়তে পারবে?
-
তুই আবার এসব শুরু করলি মিতুল?
-
পারবে না তো! আমি কিন্তু পারি। তুমিও
পারবে চেষ্টা করলে।
-
আমি এই মোটা চেহারা নিয়ে পিছন দিকে হাঁটতেই
পারি না, তায়
আবার দৌড়! কী যে
বলিস না তুই!
-
উফফ্, তুমি কি এমু পাখি নাকি? না ক্যাঙারু? যে পিছন দিকে
হাঁটতেও পার না! জানি
তুমি ভাবছ মিতুল হঠাৎ এসব কী বলা শুরু করল। শুনে রাখ, এটা সত্যি। ক্যাঙারু
কোলে বাচ্চা নিয়ে ঘুরলে কী হবে, ও পিছন দিকে একপাও এগোতে পারে না। কী হল, মুখ টিপে হাসছ
কেন শুনি?
-
নাহ্, তোর কথাবার্তা শুনে মিনিবাসের কন্ডাক্টরদের
মুখটা চোখে ভেসে উঠল। ওরা বলেন শুনিসনি, ‘দাদারা পিছন
দিকে এগিয়ে যান।’
তুই ভাব একবার, কলকাতায়
যদি তোর ওই এমু বা ক্যাঙারুরা এসে মিনিবাসে ওঠে, ওরা তো নাজেহাল হয়ে যাবে একেবারে!
-
বিশ্বাস করো ছোটকা, কোনও ইয়ার্কি
নয়, পৃথিবীতে
একমাত্র ক্যাঙারু আর এমু পাখিই রয়েছে যারা একটুও পিছনে সরতে পারে না।
-
তাই বুঝি? আচ্ছা এমু পাখির
থিম-সংলাপ
কি তবে এটা, ‘এএএএএ-মুঝে পিছে হাঁটনে
কো মত বোল?’
-
বুঝেছি, কিন্তু তোমার
মজা লাগলেও এটাই সত্যি।
-
বুঝলুম। আচ্ছা, তুই এটাকে একমাত্র
বললি কেন? ওটা
তো দু’মাত্র হবে। ক্যাঙারুও তো রয়েছে।
-
ক্যাঙারুও রহিয়াছে আঙ্কেলশ্রী, পায়ের আকৃতি
ভিন্ন হইবার কারণে ইহাদিগের কেহই পশ্চাৎ-এ হাঁটিয়া উঠিতে পারেন না।
-
কারা? টিয়া আর উট?
-
টিয়া, উট! এসব আবার এল কোত্থেকে?
-
উফফ্, তুই না বড় ভুলো মন হয়ে যাচ্ছিস! এক্ষুণিই তো
বললি, হাঁটিয়া
উঠিতে –
-
হে হে। ঠিক আছে, উটের কথাই যখন
তুললে, তোমায় উটের একটা স্পেশালিটি বলি।
-
উটের জলের কুঁজের কথা বলবি তাই তো? সব জানি।
-
তুমি আর সব জানো, সব জানো কোরো না। মানাচ্ছে
না। ভুলে যেও না ফেলুদা সমগ্রটা তুমিই আমায়
গিফট করেছিলে আর তুমিই এসব ভুলভাল কথা বলছ। ওটা জলের না, আসলে ফ্যাটের
কুঁজো। যাক গে ছাড়, বাদ দাও।
-
আরে বল না, তুই টিয়ার কী
কথা বলবি বলছিলি। সেবার মনে আছে? মুসৌরি যাবার
সময় ভুল করে আমরা এ সি থ্রি-র বদলে টু-টিয়ারে উঠে গেছিলাম?
-
উফ্ ছোটকা, এটা টিয়া, মানে টিয়াপাখি। বলো
তো, টিয়া
আর খরগোশের মধ্যে মিল কোথায়?
-
খুব সোজা, দুজনেরই নামের
শেষে টি লেটারটি টিকটিক করছে।
-
তুমি আবার মস্করা করছ ছোটকা?
-
কেন, র্যাবিট আর প্যারাকিট, ভুল বললাম?
-
হা হা হা, খারাপ বলোনি
যদিও। তবে একটা মজার ফ্যাক্ট বলি। জানো
কি, টিয়া
আর খরগোশ এমন প্রাণী যারা দেহ না ঘুরিয়ে শুধু মাথাটা গলা থেকে ওয়ান-এইট্টি ডিগ্রি
টার্ণ করাতে পারে? প্যাঁচাও –
-
বলিস কী! টিয়াপাখিকে যদিও
এমন দেখেছি বলে মনে পড়ছে,
কিন্তু র্যাবিটেরও এমন হ্যাবিট আছে!
-
আমাদের চারপাশে এমন বহু মজার জিনিস আছে, যেগুলো আমরা
ভালো করে খেয়াল করেই দেখি না। অথচ একটু খুঁটিয়ে
দেখলেই বুঝবে কত ছোট ছোট ব্যাপারে মজা লুকিয়ে আছে।
-
ঠিকই বলেছিস। দেখিস
না, লঙ্কা
কত ছোট্ট একটা জিনিস। কামড়ালেই কত মজা টের পাওয়া যায়?
-
সত্যিই ছোটকা, তোমার এত মোটাসোটা
চেহারা। ডায়ামিটার মাপলে অশ্বত্থ-গাছও হেরে যাবে, কিন্তু ব্রেনের
সাইজ ডাইনোসরের মত।
-
এটা কি আমার প্রশংসা করলি মিতুল? আমার থেকে আমার
মস্তিষ্ক আকারে বড়?
-
আজ্ঞে না কাকাবাবু। ডাইনোসর
আট-ন’মিটার লম্বা
হলে কী হবে? ওদের
ব্রেন ওয়াজ লাইক অ্যান আমন্ড। মানে একটা কাঠবাদামের
মত সাইজের মগজ। তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি দেখেও আমার তাই মনে
হয় মাঝেসাঝে।
-
আমি মোটা বলে আমায় এমন বললি? খুব ছোটো
লাগে নিজেকে। এমনিতেই এই চার ফুট এগারো ইঞ্চি হাইট, তার ওপর তুই
যদি আরও ছোটো করে দিস আমায় তবে যাই কোথায় বল ত?
-
তুমি বরং মহাকাশে চলে যাও। হাইট
কিছুটা হলেও বাড়তে পারে।
-
তুই আবার আমায় নিয়ে মজা শুরু করলি?
-
একদমই না। তুমি
যদি মহাকাশচারী হতে,
দেখতে অনেকটা লম্বা হয়েছ আগের থেকে। টানা কিছুদিন
মহাকাশে থাকলে উচ্চতা কিছুটা বাড়ে। ওখানে অভিকর্ষজ
বল না থাকায় মানুষের শরীরের ওপর নীচের দিকের টান থাকে না তো, তাই। এ কারণে
কিছুটা হলেও তুমি লম্বা হতে পারতে।
-
উফ্ তুই কত কিছু জানিস মিতুল। এবার
থেকে তো দেখছি তোর পায়ের ধুলো নিতে হবে! ইস্, আজ আর হবে না। মালতীর
মা ঘর ঝাঁট দিয়ে চলে গেছে। একটুও ময়লা নেই। কাল
নেব।
-
তুমি কি এটা জানো ছোটকা, যেটাকে আমরা
পায়ের ধুলো বলি তাতে সত্যিসত্যিই কিছুটা হলেও পা থেকে বেরোনো ধুলো থাকে? বুঝতে পারলে
না তো? শোনো
তবে। ঘর পরিষ্কার করলে যে ধুলো বেরোয় তার অনেকটাই
আমাদের শরীর থেকে ঝরে পড়া মৃত কোষ। ওগুলোকেই ধুলোর
মত দেখায়। তাছাড়া যেগুলোকে ধুলোবালি বলে জানি সেগুলোতো
রয়েইছে। ছোটকা, পা কিন্তু শরীরের বাইরে নয়। পা থেকে
বেরনো ডেড সেল্সও থাকে
তাতে। হ’ল কিনা পায়ের ধুলো?
-
বাব্বা, পায়ের ধুলো তার
মানে পায়ের ধুলোই।
-
বলতে পারো। তবে
চোখের জল যতটা চোখের জল,
জিভের লালা যতটা জিভের লালা, পায়ের ধুলো ঠিক ততটা পায়ের ধুলো নয়।
-
হচ্ছে পায়ের কথা, এখানে আবার চোখ,
জিভ, এ সব এল কোত্থেকে!
সব আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্টে ট্রিটমেন্ট করাতে হয় রে। হা হা
হা। চোখের কাজ দেখা, জিভের কাজ স্বাদ
নেওয়া আর পায়ের কাজ চলা।
-
তোমার ভাবনায় তুমি ঠিকই বলেছ। আসলে
ডাইনোসরের ব্রেনের সাইজের মত ব্রেন নিয়ে একজন মানুষ যতটুকু ভাবতে পারে আর কী। আচ্ছা
ভাব তো, যাঁরা
চোখে দেখতে পান না, তাঁরা
তো হাত দিয়ে স্পর্শ করে করে দেখেন। পা দিয়ে গুনে
গুনে দেখে এগিয়ে যান। তাহলে কি দেখা শুধুই চোখ দিয়ে? তুমি
কি জানো ছোটকা, পৃথিবীতে
এমন প্রাণী আছে যারা জিভ নয় পা দিয়ে খাবারের স্বাদ নেয়?
-
সেটা আবার কে রে! তুই তো আমায়
পাগল না বানিয়ে ছাড়বি না দেখছি!
-
আমাদের আশেপাশেই আছে। চেনো
তাকে অথচ জানো না। প্রজাপতি।
-
প্রজাপতি!
-
হ্যাঁ। সব্বার
স্বাদগ্রহণের গ্রন্থি যেমন জিভে থাকে ওদের তেমন থাকে না। ওদের
স্বাদগ্রহণের গ্রন্থি থাকে পায়ে।
-
যাক, তোর বাবাকে তাহলে একটু সাবধানে পথ চলতে
বলে দিতে হবে। সকালে খালি পায়ে ছাদে পায়চারি করে। আর বিড়ালটাও
সারা ছাদে ইয়ে করে রাখে। মাড়ালেই স্বাদ নিয়ে ফেলবে তোর বাবা।
-
কেন কেন? বাবা কেন? বাবা কি বাটারফ্লাই?
-
তোর বাবার ভালো নাম যতই বিশ্বতোষ মিত্র
হোক না কেন, ডাক
নাম তো রাজা। রাজা হল প্রজাদের পতি। প্রজাপতি
হল কিনা?
-
বাবার কথা পরে ভাববে, তুমি আগে সকালে
দৌড়তে যাওয়া শুরু করো। দিনকে দিন আরও বাড়ছ তুমি।
-
হো হো হো, কী যে বলিস! আমি দৌড়লে ছেলেরা
সব জলহস্তী বলে আওয়াজ দেবে।
-
দিক। জানো
কি, জলহস্তী
মানুষের থেকে জোরে দৌড়তে পারে? জলহস্তী এমন একটা প্রাণী, যাকে দেখতে যতটা শান্ত আদতে ততটাই হিংস্র।
-
বলছি, এটাকেও কি জিকে হিসেবে গ্রহণ করব মেরে
আকা?
-
অফ কোর্স মেরে কাকা। এতক্ষণ
যা যা বলে গেলাম সব কটাই ফ্যাক্ট।
-
আচ্ছা মিতুল, সত্যি করে বল
তো, এত সব
জ্ঞান তুই পাস কোত্থেকে?
-
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এসব কোনও ব্যাপারই
না ছোটকা। ইন্টারনেট ঘাঁটলেই হাজারো তথ্য পাওয়া
যায়। তুমি উইকিপিডিয়া ফলো করতে পারো। ওতে
ভরসা করার মত অনেক ইনফো থাকে। তবে আজ যা যা
বললাম এগুলো সায়েন্স কিডস নামের একটা সাইটে পেয়েছিলাম। আজকের
মত এটুকুই থাক। কাল দেখব, কতগুলো মনে রেখেছ।
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment