এক যে ছিল চড়াইপাখি
সৈকত মুখোপাধ্যায়
এক যে ছিল চড়াইপাখির ছানা। তার জন্ম হয়েছিল আলিপুর
চিড়িয়াখানায় সিংহের ঘরের ঘুলঘুলির মধ্যে।
তোমরা যারা চিড়িয়াখানায় গেছ, তারা নিশ্চয় দেখেছ,
ওখানে ঘাসপাতার বড়ো অভাব। হাজার হাজার লোক প্রতিদিন চিড়িয়াখানার মাঠে ঘোরাঘুরি
করে, প্লাস্টিকের মাদুর পেতে বিরিয়ানি খায়। ধেড়ে লোকেরা বাচ্চাদের মতন বল নিয়ে লোফালুফি
খেলে। এইসব কারণে অনেক-বছর আগেই ওখানকার মাঠগুলো সব ন্যাড়া হয়ে গেছে। চারদিকে ধুলো
আর মাটি ছাড়া কিচ্ছুটি নেই। সেজন্যে ওখানে যে চড়াইপাখিরা থাকে, তাদের বাসা বানানোর
জন্যে অন্য-রকমের মেটিরিয়াল জোগাড় করতে হয়।
আমাদের গল্পের এই যে চড়াইপাখিটা, তার বাবা মা বাসা
বানিয়েছিল সিংহের ঝরে পড়া কেশর দিয়ে। বুড়ো সিংহটার এমনিতেই খুব চুল পড়ছিল। তাই তার খাঁচার মেঝেয়
সবসময়েই দশ-কুড়িটা কেশর খুঁজলেই পাওয়া যেত। সেইগুলোই ঠোঁটে করে ঘুলঘুলির মধ্যে
তুলে নিয়ে গিয়ে বাসা বানিয়েছিল মা-চড়াই আর বাবা-চড়াই। বাসাটা খাসা দেখতে হয়েছিল।
যেন সোনালি উলের তৈরি একখানা উল্টোনো টুপি।
সিংহের কেশর দিয়ে তৈরি বাসার মধ্যে জন্মেছিল বলেই
বোধহয় চড়াইছানাটা জন্ম থেকেই হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্কর সাহসী। তাই দেখে বাবা-মা তার নাম
রাখল গিরিরানি।
না না, বিরিয়ানি নয়, গিরিরানি।
‘গিরি’ কথাটার মানে এখানে পাহাড় নয় কিন্তু। গির
অরণ্যের সঙ্গে যার যোগাযোগ আছে সেই হল গিরি। এটা হচ্ছে ইয়ে... উৎপটাং সমাস।
আর রানি শব্দটা শুনেই বুঝতে পারছ, গিরিরানি ছিল
আদতে একটি মেয়ে-চড়াই।
বাসা থেকে গিরিরানি প্রথম যেদিন ফরফর করে ফ্লাইট মারল,
সেদিনই সে মরতে মরতে বেঁচে গেল। কারণ, সে সোজা ঢুকে পড়েছিল আফ্রিকান ভুতুম প্যাঁচার
খাঁচায়। নেহাত আকাশে তখন রোদ্দুর ছিল খুব কড়া আর প্যাঁচাটা চোখে ভালো দেখতে
পাচ্ছিল না, তাই গিরির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে সে কয়েক সেকেন্ড দেরি করে ফেলেছিল। তারপর থেকে গিরিরানি একটু
সাবধান হয়ে গেল। সে সাপ, প্যাঁচা আর ঈগলের খাঁচাগুলোকে এড়িয়ে চলত, কিন্তু বাকি
জন্তুদের থোড়াই পরোয়া করত।
তোমরা যখন চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যাও তখন একটু চোখকান
খোলা রাখলেই দেখতে পাবে, ওখানে খাঁচার ভেতরে যত পশুপক্ষী রয়েছে, খাঁচার বাইরে তার
থেকে কম কিছু নেই। ঝাঁকে ঝাঁকে গোলা-পায়রা, টিয়া আর চড়াই, দলে দলে কাঠবেড়ালি আর গিরগিটি,
একটু রাতের দিকে বেজি আর ভাম খাঁচাগুলোর আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। তারা বন্দি পশুপক্ষীর
থালা থেকে ছিটকে আসা টুকরোটাকরা খাবারের লোভে আলিপুরের বাগানে বাসা বেঁধেছে।
এদের মধ্যে মিশে গিরিরানিও বড়ো হতে লাগল। চিড়িয়াখানা
থেকে খাঁচার ম্যাকাও পাখিদের আপেল আর আঙুর খেতে দেওয়া হয়। হিমালয়ের ফেজ্যান্ট আর
মোনাল পাখিদের বাদাম আখরোট খেতে দেওয়া হয। তারা যতটা না পেটে ঢোকায় তার থেকে বেশি
ঠুকরে ফেলে দেয়। গিরিরানি আর তার আত্মীয়স্বজনেরা খাঁচার চারদিকে ছিটিয়ে পড়া সেই
টুকরোগুলো পরম আহ্লাদে পেটে পোরে। তাছাড়া তারা বাঁদরদের খাঁচার পাশে ছড়িয়ে থাকা
ছোলা খুঁটে খায়। হাতি আর বাইসনের খাবার গামলার মধ্যে রাখা ভেলিগুড়ের ডেলায় ঠোকর
মারে। ভেজ খেয়ে খেয়ে মুখ মেরে গেলে পিপিলিকাভুকের খাঁচা থেকে একটু নন-ভেজ পিঁপড়ের
ডিম চেখে আসে। মোট কথা, আলিপুরের চিড়িয়াখানায় গিরিরানিদের কারুরই খাবার কোনও অভাব
নেই।
বন্ধুরও অভাব নেই গিরিরানির। তার সবচেয়ে প্রিয় দুই
বন্ধুর নাম টেনিয়া আর বাকুম। টেনিয়া হচ্ছে একটা কাঠবেড়ালির ছানা আর বাকুম হল
পায়রা। খাওয়া-দাওয়ার পর দুপুরের দিকটায় গিরিরানি, টেনিয়া আর বাকুম মেহগিনি গাছের
ঘন ডালপালার আড়ালে লুকোচুরি খেলে। কিচমিচ ঝটপট বকবকুম শব্দে তখন পুকুরপাড়ের গাছটা
একেবারে ঝালাপালা হয়ে ওঠে।
দিব্যি দিন কাটছিল গিরিরানির। এরমধ্যে একটা কান্ড হল। সেটা
ছিল বর্ষাকাল। চিড়িয়াখানায় বর্ষাকালে ভিজিটর প্রায় থাকে না বললেই চলে। শীতকালে যদি
দিনে পাঁচহাজার লোক আসে তো বর্ষাকালে একশোজনও নয়। সেরকমই একটা দিনে গিরিরানি ফেজ্যান্ট
পাখির খাঁচার বাইরে তুড়ুক-লাফ মেরে আপেলের টুকরো খেয়ে বেড়াচ্ছিল।
একটা বাচ্চা ছেলে অবাক হয়ে খাঁচার ফেজ্যান্টপাখিগুলোকে
দেখছিল আর মাঝে মাঝেই নিজের মনে বলছিল, কী সুন্দর! কী সুন্দর! দ্যাখো মা, ফেদারগুলো
কী ব্রাইট অরেঞ্জ আর ইয়েলো। যেন সানসেটের আকাশ থেকে রং নিয়ে ভগবান ওদের বানিয়েছেন।
হঠাৎ ছেলেটার চোখ পড়ে গেল খাঁচার বাইরে গিরিরানির
দিকে। সে মুখটুখ বাঁকিয়ে বলল, “অ্যাঃ! কী আগলি পাখি! এটাকে বানানোর সময় বোধহয় আকাশটা
ক্লাউডি ছিল। তাই ভগবান শুধু গ্রে-কালার দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।” তারপরেই ছেলেটা
বাবা-মার হাত ধরে জিরাফের খাঁচার দিকে চলে গেল।
কিন্তু গিরিরানির যে কী হল, তার যেন আর ডানা নড়ে না। এদিকে সন্ধে হয়ে আসছে।
টেনিয়া আর বাকুম বলল, “কী রে, গিরি? বাড়ি ফিরবি না?”
গিরিরানি গম্ভীরমুখে বলল, “তোরা চলে যা। আমি একটু
পরে যাচ্ছি।”
টেনিয়া আর বাকুম চলে যাওয়ার পরে গিরিরানি নিজের মনে
এদিক থেকে ওদিক, এই খাঁচা থেকে সেই খাঁচায় উড়ে বেড়াতে লাগল। জন্ম থেকে যে
চিড়িয়াখানাকে সে চেনে, সেই চিড়িয়াখানাকেই যেন সেদিন গিরিরানি অন্য চোখে দেখতে পেল।
দেখল, খাঁচার ভেতরে যারা রয়েছে তারা কত রঙিন, কত সুন্দর। সে পাখিই হোক আর জন্তুই
হোক। ময়ূর, ম্যাকাও, ফিঞ্চ, ফেজ্যান্ট - কী তাদের রঙের বাহার! ধনেশপাখিকে
দেখো। এতো বড়ো হলুদ ঠোঁট, দেখলেই মনে হয় প্রণাম করি। এমনকি জেব্রা, জিরাফ, চিতা,
টাইগার – ওদের স্কিনেও কত সুন্দর নকশা।
যাদের সৌন্দর্য নেই তাদের শক্তি রয়েছে। গিরিরানি
গন্ডারের কাঁধের ওপর বসে বুঝতে পারছিল পায়ের নিচে রাশি রাশি মাসলের ওঠাপড়া। হাতির
পিঠে বসে দেখল সেখানেও ওইরকম।
চড়াইয়ের ছানা গিরিরানি মনে মনে ভাবল, আমার মতন
কুচ্ছিত কেউ নেই। এমনকি টেনিয়ারও পিঠে তিনটে কালো স্ট্রাইপ আছে। বাকুমের গলার
পালকে রয়েছে ময়ূরকন্ঠী রঙের ঝিকিমিকি। আমার শুধু ম্যাড়মেড়ে ধুলোর মতন পালক আর
এইটুকুনি একটা ফ্যাকাশে ঠোঁট।
সেদিন তার ঘুলঘুলির বাসায় ফিরে গিরিরানি অনেকক্ষণ
ধরে মনে মনে ভাবল, কী করা যায়। কেমন করে সুন্দর হওয়া যায়।
পরদিন ভোর হতেই সে শজারুর খাঁচার ফাঁক গলে ভেতরে
ঢুকে পড়ল। তারপর সাবধানে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার, শুনেছি আপনি নাকি জেনেটিক
ইঞ্জিনিয়ারিং জানেন?”
“কে বলল?” ঝমঝম করে গায়ের কাঁটায় আওয়াজ তুলে বুড়ো
সজারু গিরিরানির দিকে দু’পা এগিয়ে এল। গিরিরানিও তক্ষুণি দু’পা পিছিয়ে গিয়ে বলল, “বাবার
কাছে শুনেছি। কথাটা সত্যি?”
খিকখিক করে হাসতে হাসতে শজারু বলল, “সাইকেল, সাঁতার
আর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, একবার শিখলে আর সারাজীবনেও কেউ ভোলে না। এই চিড়িয়াখানায়
আমরা চারজন সুকুমারবাবুর কাছে ওই বিদ্যে শিখেছিলাম।”
“সুকুমারবাবু মানে?”
“শ্রীসুকুমার রায়। গড়পাড়ে থাকতেন। তিনি আমাদের
চারজনকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন। আমাকে আর হাঁসকে জুড়ে বানিয়েছিলেন হাঁসজারু।
বক আর কচ্ছপকে জুড়ে বানিয়েছিলেন বকচ্ছপ। আর যারা ছিল, এই ধরো গিরগিটি, টিয়া, তিমি,
হাতি ওরা কেউ এই চিড়িয়াখানার বাসিন্দা ছিল না। হাঁস আর বকও সেই দলে। কাজেই
চিড়িয়াখানার ভেতরে আমরা দুজনেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং জানতাম। আমি আর অদ্বৈত, মানে
গ্যালাপাগোসের সেই বিশাল কচ্ছপটা। অদ্বৈত মারা যাওয়ার পর এখন শুধু আমার মাথাতেই
ধরা রয়েছে ওই বিদ্যে।”
গিরিরানি ডানা-টানা কচলে কাঁচুমাঁচু মুখে বলল, “আপনি
একটু আমার সঙ্গে অন্য দুয়েকটা পাখির পার্টস জুড়ে দেবেন? আমার চেহারাটা নিয়ে ভারী
দুঃখ। আপনি যদি এই উপকারটুকু না করেন তাহলে হয়তো আমাকেও ডোডোপাখির খাতাতেই নাম
লেখাতে হবে, মানে বিলুপ্ত হয়ে যেতে হবে।”
“আরে না না। ওসব চিন্তা একদম মাথাতেই এনো না।
আত্মহত্যা মহাপাপ,” এই বলে শজারু গিরিরানিকে জড়িয়ে ধরতে গেল। গিরিরানি ফড়াৎ করে
সিলিংয়ের কাছে একটা লোহার শিকের ওপর উঠে গিয়ে বলল, “কাঁটা খুঁচিয়ে পাখি মারা তার
চেয়েও বেশি পাপ, এটা মানেন তো? তাহলে একটু চুপ করে এক জায়গায় বসুন। আমি দু’চারটে পছন্দসই
জিন নিয়ে এক্ষুণি ফিরে আসছি।”
এরপর গিরিরানি ফেজ্যান্টপাখির বাসার পাশে গিয়ে
দাঁড়ালো। ফেজ্যান্টকর্তা খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠলেন, “কী, ব্যাপার কী তোদের? এখনও আমাদের
ব্রেকফাস্ট সার্ভ করা হয়নি, আর তোরা খেতে চলে এসেছিস?”
গিরিরানি বলল, “খেতে আসিনি। অন্য একটা আর্জি নিয়ে
এসেছিলাম।”
চড়াইরা নিজেদের মতন থাকে, কারুর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি
করে না। তাই তাদের সকলেই ভালোবাসে। ফেজ্যান্টও বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারলেন না।
বললেন, “বলে ফেল, কী চাই।”
“আজ্ঞে, আপনার গলার কাছ থেকে দুটো রঙিন পালক দেবেন?”
“কী করবি? খেলবি বুঝি? আচ্ছা, এই নে,” এই বলে
ফেজ্যান্ট-কর্তা গিরিরানিকে দুটো লাল-কমলা পালক দিলেন।
তারপর গিরিরানি গেল ময়ূরের কাছে। বলল, “স্যার,
আপনার পেখমের একটুখানি পালক আমাকে দেবেন?”
ময়ূর বলল, “এখন বর্ষাকাল, আমার নাচের সীজন। এখনই
তোর পেখমের পালকের দরকার হল? আচ্ছা নিয়ে যা একটুখানি।”
ময়ূর গিরিরানিকে একটু পেখম দিল।
তারপর গিরিরানি ম্যাকাওয়ের কাছ থেকে একটুখানি নীল ঝুঁটি
আর ধনেশের কাছ থেকে হলুদ ঠোঁটের কুঁচি নিয়ে শজারুর খাঁচায় ফিরে গেল।
শজারু অবশ্য ঠিক অপারেশন করল না। যেটা করল সেটাকে
আকুপাংচার বলা চলে। গিরির শরীরের এখানে ওখানে কাঁটা ফুটিয়ে দু’চারটে কোষ ঢুকিয়ে
দিতেই গিরিরানির গলায় চলে এল ফেজ্যান্টের জেল্লা। ল্যাজে ময়ূরকন্ঠী রঙের ঝিলিক।
ঠোঁটে ধনেশ-মার্কা হলুদ আর চাঁদিতে ম্যাকাওয়ের নীল।
আকুপাংচারের পর গিরিরানিকে দেখতে লাগছিল অবিকল
বাউলের আলখাল্লার মতন বিদঘুটে। এখানে লাল, ওখানে নীল, সেখানে হলুদ। সেই অবস্থাতেই
সে অন্য চড়াইদের থেকে একমাইল দূরে বুনোমোষের খোঁয়াড়ের মধ্যে একা একা গম খুঁটে
খাচ্ছিল।
একা কেন?
আরে, তার যে ভীষণ ডাঁট হয়েছে! নতুন রূপের অহঙ্কারে
সকাল থেকেই গিরিরানি একেবারে মটমট করছে। অন্য চড়াইদের তো বটেই, এমনকি প্রাণের
বন্ধু টেনিয়া আর বাকুমকে অবধি সে আজ চিনতে পারছে না।
টেনিয়া আর বাকুম বেচারার মতন একটু দূরে বসে তাদের
বন্ধু গিরিরানির অদ্ভুত ব্যাপারস্যাপার দেখছিল আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল, ‘এটা
কি গিরি ঠিক করল? এই যে প্রকৃতিদেবী ময়ূরকে ময়ূরকন্ঠী রং দিয়েছেন আর চড়াইকে ধূসর,
এর পেছনে তার একটা কোনও হিসেব তো কাজ করছে। সেটাকে অমান্য করাটা কি ঠিক?’
ঠিক যে নয়, সেটা ওরা একটু বাদেই হাড়ে হাড়ে টের পেল।
আকাশের অনেক উঁচুতে একটা শিকরেবাজ উড়ছিল। নিচে
তাকিয়ে সে দেখল, বাঃ! বেশ চমৎকার একটা রংচঙে পাখি খোলামাঠের ওপর বসে আছি দেখছি।
একেবারে সহজ টার্গেট। আর দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে বাজপাখি ছোঁ মারল।
মিস হওয়ার কোনও কথা ছিল না। মিস হলও না। মাঠের
মধ্যে গিরিরানিকে ধারালো নখের মধ্যে চেপে ধরে বাজপাখি বিজয় উল্লাসে হাঁক ছাড়ল, “কিরকিরকিরকির,
ক্র্যাও ক্র্যাও ক্র্যাও।”
ব্যাপার দেখে টেনিয়া আর বাকুম তো ততক্ষণে অজ্ঞান
হয়ে যায় আর কি। দুজনেরই যেন শরীর জমে বরফ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছিল। বাজপাখি যেখানে
গিরিকে পায়ের মধ্যে চেপে ধরে বসেছিল তার থেকে মাত্র ছ’ফুট দূরেই কাঠবেড়ালির ছানা
আর পায়রার ছানা এ ওকে জড়িয়ে ধরে ঠকঠক করে কাঁপছিল। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার,
বাজপাখিটা অত কাছ থেকেও ওদের দেখতে পাচ্ছিল না।
বাজপাখি এবার ঘাড় তুলে তাকাল এদিক ওদিক। তারপর
গিরিকে নিয়ে উড়ে যাবার জন্যে ডানা খুলল। উড়েই যেত। বাঁচিয়ে দিল একটা বুনোমোষ। বোধহয় গিরিরানির গায়ের
চড়া রং দেখেই তার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। সে একেবারে চার পা তুলে ফুলস্পিডে চার্জ
করল ওদিকে। বাজপাখি পড়ি কি মরি করে গিরিরানিকে ছেড়ে ওপরে উড়ে গেল আর টেনিয়াও তাদের
বন্ধুকে মোষের খুরের ঠিক চারফুট দূর থেকে খপ করে তুলে নিয়ে পোঁ করে উঠে গেল একটা
শিরীষগাছের ডগায়।
জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর গিরিরানি বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ!”
টেনিয়া রেগে চেঁচিয়ে উঠল, “এখন থ্যাঙ্ক ইউ বলা
হচ্ছে? সকাল থেকে যে চিনতে পারছিলিস না বড়ো?”
গিরি বাকুম আর টেনিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “স্যরি
রে! ভুল হয়ে গেছে। আর এমন করব না। প্রমিজ।”
তারপর সে বলল, “কিন্তু বাজপাখিটা আজ কেমন করে আমাকে
দেখল, বল তো। এতদিন তো এরকম হয়নি।”
বাকুম বলে উঠল, “এটাও বোঝো না? তোমার ক্যামুফ্লেজ
যে খুলে গেছে!”
“মানে?”
“মানে তোমার রং-মেলানো পালক। টিয়াপাখির পালকের রং
সবুজ। কারণ, সে সবুজ পাতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। তোমার, আমার আর টেনিয়ার গায়ের
রং যে ম্যাড়মেড়ে ধূসর তার কারণ আমরা তিনজনেই খোলামাঠের মধ্যে বসে খাবার খুঁটে খাই।
মাঠের ধুলো আর কাঁকরের মতন আমাদের গায়ের রং। তুমি আজ ময়ূরের আর ফেজ্যান্টের পালক
নিয়ে খোলা মাঠে বসে থাকলে হবে? তোমাকে তাহলে যেতে হবে জঙ্গলের আড়ালে - যেখানে
ঝলমলে পালক আর জঙ্গলের আলোছায়া একে অন্যের সঙ্গে মিশে যাবে।”
গিরিরানি ডানা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলল, “দরকার
নেই বাবা আমার জঙ্গলে গিয়ে। আমার মাঠই ভালো। আমার পুরনো গ্রে-কালারের পালকগুলোও
খুব ভালো। চল, আরেকবার শজারুদাদুর কাছে গিয়ে ব্যাকগিয়ার মেরে ওগুলো ফিরিয়ে নিয়ে
আসি।”
_____
ছবিঃ অদ্রিজা ঘোষ
খুব ভালো লাগল।
ReplyDeleteকি মিষ্টি চিড়িয়াখানা
ReplyDeleteMisti galpo
ReplyDeletekhub misti galpo
ReplyDeleteGood story for today's smart kids.
ReplyDeleteMisti misti
ReplyDeletedarun darun /|\
ReplyDelete