হজম ওলা
প্রকল্প ভট্টাচার্য
(কিছু মানুষ শুয়ে আছে, পরণে
যুদ্ধের পোষাক। হঠাৎ অ্যালার্মের
শব্দ, একজন চটপট উঠে দাঁড়ালো)
১ম। ভাইসব! উঠে পড়ো, সময় হয়ে গেছে!
২য়। কই, শত্রু তো আসেনি!
১ম। কিন্তু
অ্যালার্ম বেজে গেছে, নিয়ম অনুযায়ী আমাদের যুদ্ধ শুরু করে দিতে হবে
তো!
২য়। আরে, শত্রুরা না আসলে যুদ্ধটা করব কার সাথে! ফাঁকা দেওয়ালে
কামান দাগব নাকি?
(একজন বয়স্ক উঠে বসে)
৩য়। এই হয়
মুস্কিল। অ্যালার্ম তো সময়মতোই বাজে, কিন্তু শত্রু এসে পৌঁছয় না। ফাঁকা
দেওয়ালে কামান দাগলে আমাদেরই ক্ষতি। আলসার
বা অন্য অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা।
১ম। তাহলে
ঠিক সময়ে শত্রু এসে পৌঁছয় না কেন?
৩য়। শত্রুকে
অনেক ঘুরপথে আসতে হয় যে!
(আর একজন উঠে আসে।)
৪র্থ। ঘুরপথ? কোথায় ঘুরপথ! একেবারে সোজা মুখগহ্বর থেকে সুড়ঙ্গ কাটা
আছে এখানে আসার। আমি জানি পুরো
প্রক্রিয়াটা।
১ম ও ২য়। জানো! তাহলে প্লিজ আমাদেরও বলো!
৪র্থ। শত্রু
আসলে তিনরকম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন
আর ফ্যাট। তারমধ্যে ফ্যাটটাই সবথেকে শক্তিশালী। এরা
আসে খাবারের সঙ্গে লুকিয়ে। যেই
না মুখগহ্বরে ঢোকা, অমনি আমাদের মাসলম্যান জিভ এদের ধরে এদিক ওদিক
আছাড় মারে আর চার রকম দাঁত কামড়ে, গেঁথে, চিবিয়ে এদের একটা মণ্ড পাকিয়ে দেয়।
১ম। আরেব্বাস! ওরা পালাতেও পারে না?
৩য়। কী করে
পালাবে! মুখে খাবার ঢুকলেই মুখ বন্ধ করে ফেলা হয় তো!
২য়। কিন্তু
চার রকম দাঁত কেন?
৪র্থ। চার
রকম কাজের জন্যে। ইন্সাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার আর মোলার - ওপরে আর নীচে ষোল ষোল বত্রিশটা দাঁত থাকে।
১ম। তাহলে
প্রথমে দাঁতের কাজ, তাই না?
৪র্থ। আলবাৎ! না চিবিয়ে খাওয়া উচিতই নয়! শত্রু লুকিয়ে ঢুকে পড়বে তো।
৩য়। আর লালা-র কথাটা বললে না যে?
৪র্থ। হ্যাঁ
ঠিক। লালা এসে ভিজিয়ে দেয় সেই বল-এর মতো মণ্ডটাকে। তাতে
আবার আমাদের এক সৈন্যদল থাকে, নাম টায়ালিন।
২য়। সীমান্তরক্ষী?
৩য়। হ্যাঁ
সেইরকমই। কিন্তু ওদের বেশি ক্ষমতা থাকে না, শুধু শর্করা, মানে কার্বোহাইড্রেটকে জখম করতে পারে।
১ম। তাহলে
প্রোটিন আর ফ্যাট?
৪র্থ। আমাদের
কাজ তাদের সামলানো। ভালো করে চিবানো হয়ে গেলে সেই মণ্ড খাদ্যনালী
নামে একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে আসতে থাকে আমাদের দিকে, মানে এই পাকস্থলিতে।
২য়। যদি
মাঝপথে পালিয়ে যায়?
৩য়। তার
উপায় নেই ভায়া! পেরিস্টালসিস!
১ম। সেটা
আবার কে!
৩য়। সেটা
ওই পুজোর সময় ঠাকুর দেখবার লাইনে যেমন পুলিশ সবাইকে একদিকে ঠেলতে থাকে, তেমন ঠেলা। বাবাজীদের
পাকস্থলিতে আসতেই হবে।
৪র্থ। আর তারপরেই
শুরু হয় আমাদের, মানে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের কাজ!
১ম। হ্যাঁ! ঢিসুম ঢিসুম! প্রোটিন আর ফ্যাটকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব!
৩য়। বেশি
আক্রমণ করলে আবার অসুবিধা! আমাদের অ্যাসিড বেশি হলে বাইল জুস এসে সেটা
সামলায়, জানো তো?
২য়। হ্যাঁ, যুদ্ধের শেষে সব ধুয়েমুছে দেয়।
৪র্থ। শুধু
ধুয়েমুছেই নয়! ওরা ক্ষার, তাই অম্লতা
কমায়। নয়তো বাকিরা এই মৃত শত্রুদের শরীর থেকে
প্রয়োজনীয় শক্তি নিতে পারবে কী করে!
১ম। আর যদি
অম্লতা বেড়ে যায়?
৩য়। অ্যাসিডিটি! ওরে বাবা! ডাইজিন খেতে হবে!
৪র্থ। এমন
ওষুধ খেতে হবে যাতে ক্ষার আছে, যেমন খাওয়ার সোডা। সেগুলো
খেলে অ্যাসিডিটি কমবে।
২য়। কিন্তু
আমরা তো শত্রুদের মেরেই ফেললাম, তারপর আবার কী কাজ!
৩য়। অনেক
কাজ! ক্ষুদ্রান্ত্র আর বৃহদান্ত্র ওই শত্রুদের মৃতদেহ থেকে প্রয়োজনীয়
ভিটামিন, জল ইত্যাদি বার করে নেয়। বাকিটা
বর্জ্য।
১ম। আর যদি
শত্রুদের মৃতদেহে প্রয়োজনীয় কিছু না থাকে?
৪র্থ। তাহলে
পুরোটাই বর্জ্য। এত কাণ্ড সব ব্যর্থ। কিন্তু
তেমন খাবার খাবেই বা কেন, যাকে বলে জাঙ্কফুড? কোনো
উপকারিতা নেই!
২য়। আচ্ছা, আর যদি আমরা লড়াইতে না জিতি? শত্রু যদি দলে ভারী হয়?
৩য়। হাহাহাহাহা! তখন আমাদের বন্ধু আসে, হজম ওলা!
৪র্থ। শত্রু
যেন অতিরিক্ত না আসে, সময়মতো আসে আর তাদের মধ্যে যেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
পাওয়া যায়। এই তিনটে জিনিস মনে রাখলেই আমরা জিতব। ঠিক
সময়ে, পরিমিত, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
১ম। ওই! কীসের যেন শব্দ শুনতে পাচ্ছি!
২য়। আসছে! শত্রু আসছে! ভাইসব, তৈরী হও!
ফ্যাট আর প্রোটিনদের ভেঙে গুঁড়িয়ে দাও!!
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
হজম হয়ে গেল
ReplyDeleteএকেবারে সার্জিক্যাল অপারেশন!
ReplyDelete