রাতের ফিসফিস
সম্বিতা
বিকাশবাবু একা মানুষ।
তিনি বিয়ে করেননি। তাঁর চল্লিশের ঘরে বয়স হবে। এক সপ্তাহ হল তিনি নতুন দেশের
নতুন শহরে এসেছেন। অফিসের কাজের জন্য তাঁকে অনেকবারই দেশের বাইরে যেতে হয়েছে।
এবার তাঁকে অফিসের বস আমস্টারডাম-এ কাজের জন্য পাঠালেন। হল্যান্ডে তিনি এর আগে
কখনও আসেননি। এই তো, গতবছরে একমাস অস্ট্রেলিয়াতে ছিলেন। চাকরির খাতিরেই তাঁর এই
বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাও হয়ে যায়। এখানে তাঁকে তিনমাসের
মতো থাকতে হবে।
এক সপ্তাহ তিনি হোটেলে ছিলেন। এবার একটা বাড়ির
সন্ধান পেয়ে তিনমাসের জন্য সেটা ভাড়া নিলেন। যে বাড়িটা তিনি ভাড়া নিয়েছেন
সেটাও খুব সুন্দর। দোতলা বাড়ি। নিচে খাওয়ার ঘর আর বসার ঘর। উপরে শোবার ঘর। বসার
ঘরে একটা ফায়ার-প্লেস আছে। বাড়িটাতে সব আসবাবপত্র আছে।
বিকাশবাবু ভালো রান্না পারেন। আর
যদি তা আমিষ হয় তাহলে তো কথাই নেই। আজ কাছের আলবার্টহাইন নামে একটা সুপারমার্কেট থেকে কিছু
মুরগির মাংস আর কিছু সবজি কিনে আনলেন। এতদিন হোটেলে থেকে আর হোটেলে খেয়ে মুখ মেরে গেছে। ইশ! এরা কিছু পারে না রান্না। আজ বেশ তরিবত করে কষা মাংস আর রুটি বানিয়ে
নিলেন। আয়েস করে টিভি দেখতে দেখতে
খেয়ে নেবেন ভাবলেন।
তবে একি! এ তো দেখি সব চ্যানেলেই স্থানীয় ভাষার প্রোগ্রাম হচ্ছে! ইংলিশের নামগন্ধ
নেই। নেটের সাথে কানেক্ট করে তিনি
ইউটিউব চালিয়ে ভালো বাংলা সিনেমা খুঁজতে লাগলেন। এই তো একটা ভালো সিনেমা পাওয়া গেল। সত্যজিৎ
রায়ের ‘তিনকন্যা’ দেখতে দেখতে রুটি ও কষা মাংস খেয়ে নিলেন। খাওয়া
শেষ হলে বাসন ধুতে লাগলেন। ভাগ্যিস, এখানে কল ঘোরালেই গরম জল পড়ে। তাই ঠান্ডাতেও কষ্ট
হয় না। এখানে সবকাজ নিজেদেরই করতে
হয়। কাজের লোক পাওয়া যায় না।
তারপর তিনি উপরে শুতে এলেন। এখানে মশারিও টাঙাতে হয় না। বেশ ভালো। এখানে কোনও মশাই নেই। শুধু লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেই হল।
খাওয়ার পর ঠান্ডাটা আরও বেশি লাগে। মোবাইলেই তিনি দেখলেন বাইরে পাঁচ ডিগ্রি। দেখে
তাঁর ঠান্ডাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেল। তিনি রুম-হিটারের তাপমাত্রা
আরও বাড়িয়ে দিলেন। পুজোর
পর ঠান্ডাটা এখানে নাকি জাঁকিয়ে পড়ে। ডিসেম্বর জানুয়ারিতে টেম্পারেচার মাইনাসে
চলে যায়। দু’একবছর অন্তর বরফ পড়ে।
সারাদিনের কাজের পর ঘুমটা বেশ ভালোই আসে। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি শুনতে পেলেন তাঁর নিচের
তলাতে বসার ঘরে কারা কথা বলছে ফিসফিস করে। ঘড়িতে রাত একটা। বিকাশবাবু এমনিতে সাহসী মানুষ। কিন্তু আজ যেন তার ঠান্ডাতে বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করল না। কী জানি, কী
ব্যাপার! এত রাতে... আজ ফ্রাইডে। পাশের ফ্ল্যাটের লোকেরা কথা বলছে, পার্টি
করছে হয়তো। এসব ভেবে বিকাশবাবু নিজের
মনকে বোঝালেন, আর শুয়ে পড়লেন। একঘন্টা পর আওয়াজটা থেমে গেল। ঘড়িতে দেখলেন রাত দু’টো। এরপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
পরেরদিন সকালে তাঁর ঘুম ভাঙল। অফিসের
একটা ফোনে বস বলছেন ইন্ডিয়া থেকে আরেকজনকে এখানে পাঠাচ্ছে একমাসের জন্য। সে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি পাবে না। তাই যদি... বিকাশবাবু ঝামেলা, লোকজন বেশি একটা
পছন্দ করেন না। তিনি একা নিরিবিলি থাকতেই ভালোবাসেন। তাই তিনি বললেন, ভাড়া বেশি দিতে হলেও অসুবিধা
নেই। কিন্তু কারও সাথে তিনি ঘর
শেয়ার করবেন না। সারাদিনটা তাঁর বেশ ভালোই
কাটল রান্না করে। ক্যানেলে ছিপ নিয়ে দু’তিনঘন্টা
বসে মাছ ধরলেন, হাঁসেদের পাউরুটি খাওয়ালেন। আজ দিনটা বেশ কাটল। ভারী সুন্দর জায়গা। ছোটোবেলার কথা তাঁর মনে পড়ে
যাচ্ছে। তাঁর গ্রামের বাড়িতে পোষা
হাঁস-মুরগি ছিল। তিনি তাদের দেখাশুনো করতেন। তবে এত ঠান্ডা হাওয়া দেয় মাঝে মাঝে! আজ বেশ রোদ উঠেছিল। যা রোদের তেজ যেন গা পুড়ে যায়। তবে কোনও ঘাম নেই। তাই ক্লান্তিও নেই।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর তিনি শুতে গেলেন। ঘুম
এল বেশ সহজেই। এত সুন্দর পরিবেশ, এত
শান্ত, কোনও পলিউশন নেই; এতই
নিরিবিলি যে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু হঠাৎ আবার কিছু মানুষের কথায় তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। কারা এত রাতে যে ফিসফিস করে কথা বলে কে জানে! প্রত্যেক
রাতে যে কাদের উৎসব চলে কে জানে! দেখছি কাল পাশের বাড়িতে কমপ্লেন করতে হবে। একবার নিচে গিয়ে দেখবেন ভাবলেন, কিন্তু সিঁড়ি
দিয়ে নিচে নেমে আর ঘরে ঢোকার সাহস হল না তাঁর। তিনি আবার ফিরে গেলেন বিছানায়। কিন্তু চোখের পাতা এক করতে পারলেন না। তারপর হঠাৎ করেই সব শান্ত হয়ে গেল। তিনি টেবিল-ঘড়িতে দেখলেন দু’টো বাজে। তার মানে প্রতিদিনই একঘন্টা চলে এরকম।
পরেরদিন তিনি সকালে উঠেই ঠিক করলেন কমপ্লেন
জানাতে ওই পাশের বাড়ি যাবেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা হেঁটে বাড়িটার দিকে তাকাতেই
তিনি অবাক হয়ে গেলেন। এ
কী! এটা তো ফাঁকা বাড়ি, ফর সেল লেখা রয়েছে! বাড়িটা তো ফাঁকা, বিক্রির জন্য
রেখেছে। তাহলে মাঝরাতে কারা কথা বলে? তার
মানে! এবার বেশ ভয় ভয় করতে লাগল তাঁর। ভূত-টুত নেই তো ওনার
বাড়িতে! তাই হয়তো কমে ভাড়া পেয়েছেন। তাঁকে একজন অফিসের কলিগ বলেছিলেন, বেশ কমে বাড়িটা পেয়েছেন, এত কমে এই এলাকাতে বাড়ি পাওয়া খুব সহজ নয়।
তিনি ঠিক করলেন, না, একা থাকবেন না তিনি। এই ভৌতিক বাড়িতে একা থাকা যাবে না। ভূত তো আবার বিদেশি! যদি তাদের মাতৃভাষাতে কিছু
বলে তাহলে তো তিনি বুঝবেন না। তিনি অফিসে ফোন করে বললেন, নতুন ব্যক্তিটি যিনি ইন্ডিয়া
থেকে আসছেন তিনি স্বচ্ছন্দে বিকাশবাবুর সাথে থাকতে পারেন। তাতে ওনার কোনও আপত্তি নেই। তবে লোকটা তো সোমবার আসবে। আজ তো রবিবার। আজকের রাত তাঁকে একাই থাকতে হবে। এই ভেবে তিনি পার্কের রঙিন হয়ে যাওয়া পাতাওয়ালা গাছগুলোর
মাঝে হেঁটে বেড়িয়ে সময় কাটালেন। খয়েরি, সবুজ, কমলা, হলুদ
সমস্ত রং-এর সোয়েটারে সুসজ্জিত হয়েছে তারা। এ যেন শীত আসার আগে পার্বণ লেগেছে তাদের। রহস্যময় ভৌতিক বাড়িটাতে তাঁর আর ফিরে যেতে মন
চাইল না। রাতের খাবার তিনি বাইরেই
খেয়ে নিলেন। কিন্তু সূর্য ডুবলে এত
ঠান্ডা লাগে যে রাস্তায় রাত কাটাবেন সেটা সম্ভব না। এটা করলে তিনি নির্ঘাত নিউমোনিয়া হয়ে মারা যাবেন। ভূতেরা তো কথা বললেও নিচের ঘরে থাকে। ওরা তো আর উপরে আসে না। তাই ঘরে গিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে কানে তুলো গুঁজে শুয়ে
থাকলেই হয়। হ্যাঁ, বেশ
আইডিয়া।
বিকাশবাবু বাড়ি ফিরে সোজা উপরে নিজের শোবার
ঘরে চলে গেলেন। আজ খুব জোরে হওয়া দিচ্ছে। বাইরে কাচের জানালায় সোঁ সোঁ করে আওয়াজ
হচ্ছে। খুব জোরে জোরে গাছপালা দুলছে। ঠিক যেমনটা ভয়ের সিনেমাতে দেখেছেন তিনি। বিকাশবাবু কানে তুলো গুঁজে শুয়ে পড়লেন। কে জানে, মনে হয় প্রেতেরা নিচের ঘরে বসে হয়তো তাঁকেই মারার
প্ল্যান করছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে
চোখের পাতা এক হয়ে এসেছিল তা তিনি বোঝেননি। হঠাৎ দেখলেন, তিনি নিচে নেমে যাচ্ছেন সিঁড়ি দিয়ে। বসার ঘরের দরজা খুলতেই দেখলেন চারটে কঙ্কাল
সোফাতে বসে আছে। তিনি বসার ঘরে ঢুকতেই ওরা
একসাথে তাকাল বিকাশবাবুর দিকে। বলল, “আসুন বিকাশবাবু, আপনাকে ঘিরেই তো আমাদের আড্ডা। আপনাকে নিয়ে আমাদের কত প্ল্যান।”
বিকাশবাবু কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “আপনারা বাংলা
জানেন!”
একটা কঙ্কাল উত্তর দিল, “হ্যাঁ,
শিকারের ভাষা জানতে হয়।
তাই না?”
বিকাশবাবু ঢোঁক গিলে কথাটা বললেন, “আমাকে নিয়ে
কি আপনাদের আলোচনা? আর আমি শিকার?”
আরেকটা কঙ্কাল উত্তর দিল, “আপনি
আমাদের শিকার। আপনার জন্যে আমরা অপেক্ষা
করছিলাম। বুঝলেন না এটা?”
“এটা করবেন না,” এই বলে বিকাশবাবু এবার কাঁদতে লাগলেন।
আরেকটি কঙ্কাল বলল, “আপনাকে
খাওয়ার জন্য এত কিছু... তা কী হয়?”
আরেকটি কঙ্কাল খপ করে বিকাশবাবুর হাত ধরে টানতে
লাগল। আর বিকাশবাবু ‘আমাকে ছেড়ে
দিন, ছেড়ে দিন’ বলে চিৎকার করতে লাগলেন।
এদিকে কে শোনে কার কথা। কঙ্কালগুলো একসাথে চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘ম্যান
ফ্রাই ডিলেসিয়াস, হা হা হা...’ তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠল। আর তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। উফ্, তাহলে এটা স্বপ্ন ছিল! ভাগ্যিস, কলিংবেলটা বেজেছিল। তিনি টেবিলের উপরে রাখা জলের গ্লাস থেকে জল
খেলেন। সেই জল চোখেমুখে দিলেন। তারপর নিচে নেমে এসে দরজা খুলে দিলেন। একজন অল্পবয়সি ছেলে এসেছে। ওনার থেকে দশবছরের ছোটো হবেন। রোগাসোগা চেহারা। বললেন, “আমি রঞ্জন বাগচী। আমাকে একমাসের জন্য এখানে পাঠানো হয়েছে আপনার
সাথে কাজ করার জন্য। আপনি
মনে হয় ঘুমোচ্ছিলেন।
বিরক্ত করলাম।”
বিকাশবাবু বললেন, “না
না, আপনি এসে খুব ভালোই করেছেন।”
“আসলে কোম্পানি হোটেলের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই আপনাকে বস বলেছিলেন আমার কথা।”
“হুম। আসুন আসুন। সব জানি। আমি এখানে একাই থাকি। আমি এর আগে হোটেলেই সাতদিন থেকেছি। হোটেলের ভদ্রলোক খুব ভালো ছিলেন, হেল্পফুল। উনি আমাকে এই বাড়িটার ব্যবস্থা করে দেন। আমি তিনমাস এখানে থাকব।”
“আমাকে বিকাশদা আজই অফিসে জয়েন করতে হবে।”
“হ্যাঁ, দু’জন একসাথেই বেরিয়ে যাব।”
রাতে ডিনারের পর বিকাশবাবু বললেন, “একটা কথা বলব রঞ্জন?”
“বলুন বিকাশদা।”
“ভূতে বিশ্বাস আছে?”
“কেন বলুন তো?”
“আসলে এ বাড়িতে একটা প্রবলেম আছে। যবে থেকে এসেছি তবে থেকে দেখছি রাতেরবেলা বসার
ঘরে কারা যেন কথা বলে। তবে
কোনওদিন ঢুকতে সাহস পাইনি।”
“ওটা পাশের বাড়ির আওয়াজ নয় তো?”
“না, পাশের বাড়ির নয়। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি।”
“তাহলে তো ভয়ের বিষয়। তবে কোথায় আওয়াজ? শুনতে পাচ্ছি না তো!”
“অপেক্ষার আর বেশি দেরি নেই।” কথাটা বলতে বলতেই ফিসফিস করে
কথা শুরু হল।
রঞ্জনবাবু শক্ত করে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরলেন। তাঁর মুখ ফ্যাকাসে। তিনি কাঁপা গলাতে বলতে লাগলেন, “ভূত ভূত... আমার
মাথা ঘুরছে, চোখে ঝাপসা দেখছি। আমার চশমা...”
বিকাশবাবু টেবিলের উপর থাকা চশমা এগিয়ে দিলেন। আর মনে মনে বললেন, নিজের
ভয়ের জন্য অন্যকে ডাকলেন। আর সেই কিনা ভীতু বেরোল!
এবার একটু জোর গলাতে বললেন, “যাবে নাকি নিচে দেখতে, কারা কথা বলছে?”
“মাথা খারাপ! এই ভূতের হাতে মরবার ইচ্ছে নেই
বাপু।”
বিকাশবাবু আর কী করবেন। দু’জন মিলে সাহস করে
ব্যাপারটা দেখবেন ভেবেছিলেন, তা আর হল না। দু’জনে দু’বিছানায় বসে রইলেন। ভয়ে চোখের পাতা এক করতে পারলেন না কেউ। রাত দু’টোর পর যথারীতি আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছিল। তবু আতঙ্কে তাঁরা কেউ ঘুমোতে পারলেন না।
পরেরদিন দু’জনের কেউই অফিসে যেতে পারলেন না। বিকাশবাবু বুঝলেন, ভয় তাকে গ্রাস করছে। এভাবে তো এখানে থাকা যায় না। না, এভাবে চলতে পারে না বেশিদিন। আজ রাতে এই রহস্যের সমাধান করেই ছাড়বেন তিনি,
তাতে যাই হোক। ভূত না অন্যকিছু দেখতেই হবে
তাঁকে।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর বিকাশবাবু রঞ্জনবাবুর
হাতটা খপ করে ধরে বসার ঘরে দরজার সামনে এসে বললেন, “আজ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি। ঘরটায় কী হচ্ছে দেখব।”
রঞ্জনবাবু বললেন, “আরে!
কী করছেন বিকাশদা? আপনার মাথাখারাপ হল নাকি?”
বেশ ধমকের সুরেই বললেন বিকাশবাবু, “চুপ
করে ভগবানের নাম নাও।”
তারপরই শুরু হল সেই আবার আওয়াজ। মানুষের কথোপকথন। বিকাশবাবু এক ধাক্কা মারলেন দরজায়। ক্যাঁচ আওয়াজ করে রাতের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে দরজাটা খুলে
গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে অজানা আতঙ্কে,
ভয়ে ভরে গেল মনটা। দু’জনেই ঘরের মধ্যে ঢুকে
গেলেন। আরে, ঘর তো পুরো ফাঁকা! কেউ
নেই। কিন্তু টিভি চলছে। কিন্তু ওরা তো কেউ টিভি অন করেননি। তাহলে? রঞ্জনবাবু বলে উঠলেন, “ভূতেরা
যে টিভি দেখে তা জানা ছিল না।”
বিকাশবাবু ঘরের লাইট জ্বালালেন। রিমোট দিয়ে টিভিটা বন্ধ করলেন। তারপর বললেন, “বুঝেছি
এবার ব্যাপারটা। ভূত-টুত কিছু নয়।”
রঞ্জনবাবু বললেন, “তাহলে
ব্যাপারটা কী? কী বুঝলেন?”
“এর আগে এ বাড়িতে যারা থাকত তারা প্রতিদিন এ
সময় এ সিরিয়ালটা দেখত। আর
তার জন্য টাইমারও অন করে রাখত। তাই যখন সময় হত এই নির্দিষ্ট সময়ে সিরিয়ালটা শুরু হত,
আবার শেষ হলে ওটা আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যেত। ওরা বাড়ি ছাড়ার আগে টিভির এই সেটিংটা বন্ধ করে দিয়ে যেতে
ভুলে গেছে। তাই আমাদের সম্মুখীন হতে হল
এমন ঘটনার।”
রঞ্জনবাবুর দিকে এবার ফিরে বললেন, “সত্যি
রঞ্জন, তুমি আমার থেকে ছোটো হয়ে এত ভয় পাও?”
“সত্যি বিকাশদা, একটু সাহস থাকলে কত কিছুই না
জয় করা যায়!”
বিকাশবাবু নরম সুরে বললেন,
“তোমাকে ছাড়া তো এটা সম্ভব হত না ভাই। তোমার হাতটা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমি একা তো পারিনি কিছু করতে।”
রঞ্জনবাবু বললেন,
“তবে অনেক হল দাদা। জব্বর বোকা বনেছি।” এই বলে দুজনেই হাসতে লাগলেন।
“যা বলেছ ভাই। টিভি আমাদের পিলে চমকিয়ে দিয়েছিল,” বললেন
বিকাশবাবু।
“সত্যি কথা।”
“চলো ভাই রঞ্জন, শুতে যাই। অনেক রাত হল। আজকের মতো কাল আর অফিস কামাই করা চলবে না।”
“চলো দাদা।”
আজ খুব ভালো ঘুম হল ওদের।
_____
ছবিঃ সম্বিতা, সুজাতা চ্যাটার্জী
No comments:
Post a Comment