এতো জানাই ছিল!
সূর্যনাথ ভট্টাচার্য
জাদুকর একটা কাগজে কিছু লিখে
সেটা চাপা দিয়ে বললেন,
বছর নিয়ে খেলা। আমি যা যা বলছি আপনি আর পল্টু একসাথে করে যান। দিন নিয়ে ভাববেন
না, দিনটা
যে বছরে সেটাই নিয়ে ক্যালকুলেশন করবেন। আমাকে কিছু বলবেন না, কিছু
দেখাবারও দরকার নেই – আচ্ছা পল্টু না হয় এইটা দিয়ে আমার চোখটা বেঁধে দিক।
এই বলে একটা
রুমাল পল্টুকে এগিয়ে দিলেন। সেও গিয়ে বেশ করে জাদুকরের চোখ বেঁধে দিয়ে এলো।
তখন জাদুকর
বললেন, এবার
আপনারা আপনাদের জন্মসালগুলো লিখুন।
আমি আমার
জন্মসালটা লিখলাম, ১৯৭৮।
পল্টুও লিখল তারটা, ২০০১।
জাদুকর বললেন, এবার
আপনাদের জানা কোনও বিশেষ ঘটনার সাল লিখে তার সঙ্গে যোগ দিন।
আমি লিখলাম
আমার চাকরি পাওয়ার বছর,
১৯৯২। পল্টু লিখল ক্লাস নাইনে আবৃত্তি করে মেডেল পেয়েছিল, সেই বছরটা,
২০১৪। যোগ করে আমার হল ৩৯৭০, আর পল্টুর ৪০১৫। সবই জাদুকরের অলক্ষিতে।
জাদুকর
বললেন, হয়েছে? এইবার
পল্টুর ঘটনাটা যত বছর আগেকার সেটা আপনি আর আপনার ঘটনাটা যত বছর আগেকার সেটা পল্টু, যোগ করুন।
আমি ২৪ বছর
চাকরি করছি, আর
পল্টু ক্লাস নাইনে ছিল ২ বছর আগে। অর্থাৎ আমি ২ আর পল্টু ২৪ যোগ করে দাঁড়ালো – আমার
৩৯৭২ আর পল্টুর ৪০৩৯।
এবার বাবা পল্টু, জাদুকর
বললেন, তুমি
যোগ করো ৫৭, আর
আপনি বিয়োগ করুন ৩২।
করলাম। আমার
হল, ৩৯৭২
- ৩২ = ৩৯৪০। আর পল্টুর ৪০৩৯ + ৫৭ = ৪০৯৬।
জাদুকর
বললেন, এইবারে
যা পেয়েছেন তার সঙ্গে আপনাদের বর্তমান বয়েস দুটো যোগ দিন। বয়েস শুধু বছরে, ওকে?
আমার ৩৮
চলছে আর পল্টুর ১৫। অতএব সংখ্যাদুটো হল – আমার ৩৯৭৮ আর পল্টুর ৪১১১।
তখন জাদুকর
বললেন, এইবার
আপনাদের দুজনের সংখ্যাদুটো যোগ করে ফেলুন।
সহজ
ব্যাপার। ৩৯৭৮ + ৪১১১ = ৮০৮৯।
অবশেষে
জাদুকর রেহাই দিলেন। চোখ থেকে পট্টি খুলে মুখে করুণার হাসি ফুটিয়ে বললেন, হয়েছে তো? সব ঠিক
করেছেন তো? তাহলে
দেখুন তো এটা?
এই বলে
জাদুকর টেবিলের ওপর চাপা দেওয়া কাগজটা তুলে দেখালেন। তাতে আগে থেকেই লেখা জ্বলজ্বল
করছে, ৮০৮৯!
এটা কী করে
হল? আমাদের
বয়েস উনি জানেন না, আমরা
কোন ঘটনা বেছে নেব তার কোনও ঠিক ছিল না, সে ঘটনা কবেকার তা জানার তো প্রশ্নই
নেই। তাহলে? আমি
বেশ ধাক্কা খেয়েছি। ওদিকে পল্টুর চোখও ছানাবড়া। একবার কাগজটা দেখছে আর একবার আমার
মুখের দিকে!
আমার বেশ
একটা খটকা লাগছিল, কিন্তু
কিছুতেই ভাবতে পারছিলাম না এই বছরগুলোর মধ্যে কী সম্পর্ক থাকতে পারে। জাদুকর একটা
কৃপার হাসি হেসে বিদায় নিলেন।
ঘরের কোণে
ছিলেন মাষ্টারমশাই। পুরো খেলাটা তিনি দেখেছেন। আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছেন
দেখি। বললাম, এটা
কী হ’ল বলুন তো?
—
একটা সামান্য ব্যাপার, মাষ্টারমশাই
বললেন, হয়তো
খেয়াল করোনি। তোমার জন্মসালটার সঙ্গে বয়েস যোগ করলে সংখ্যাটা কী হয় বল তো?
—
আমার হয় ১৯৭৮ প্লাস ৩৮, মানে ২০১৬।
—
পল্টু, তোমার?
—
২০০১ আর ১৫, ঝটপট বলতে
গিয়েও পল্টু যেন থমকে গেল,
সেই ২০১৬!
—
এটাই ক্লু। মাষ্টারমশাই বললেন, যে কোনও
ঘটনার সাল আর সেই ঘটনা যত বছর পুরনো, সেই দুটো যোগ করলে সর্বদাই এই চলতি
বছরটা আসবে! জাদুকর যা করালো তাতে দেখবে চারটে ঘটনা ও তাদের বয়েস যোগ করা হয়েছে।
অর্থাৎ চারবার ২০১৬,
মানে ৮০৬৪।
ব্যাপারটা
খানিকটা পরিষ্কার হল যেন,
কিন্তু পুরো মেঘ তো কাটল না। বললাম, কিন্তু এসেছে তো ৮০৮৯। মানে মাঝে ঐ
যে সংখ্যাদুটো দিল —
—
ঠিক তাই। ওটাই ওর চালাকি, মাষ্টারমশাই
প্রাঞ্জল করলেন, ওটা
না করলে এই ম্যাজিক একবারের বেশি দেখানো চলে না। কেন না প্রতিবারেই তো ৮০৬৪ আসবে।
এই ঘরে আর একজোড়া লোককে দেখালেই সব কায়দা বেরিয়ে যেত।
—
বুঝেছি বুঝেছি, পল্টুও এবার
উচ্ছ্বসিত, ঐ
সংখ্যাদুটো তো ওর জানা। মামাকে ৫৭ যোগ করতে দেওয়া আর আমাকে ৩২ বিয়োগ করতে দেওয়ার
মানে হল, পুরো
সামটায় ২৫ অ্যাড করা। তাই ঐ কাগজটায় ও আগে থেকে ৮০৬৪ প্লাস ২৫ ইকুয়াল্টু ৮০৮৯ লিখে
রাখল।
—
এই তো কে বলে বুদ্ধি নেই, মাষ্টারমশাই
পল্টুর মাথায় একটা টোকা মেরে বললেন, পল্টু আমাদের বোকা হলে কী হবে বুদ্ধি আছে।
—
এখুনি বটুকদা আর রামাইকে দেখিয়ে আসছি।
পল্টু দারুণ
উত্তেজিত। আমি বললাম,
একবারের বেশি দেখাতে হলে তুই যে সংখ্যাদুটো দিবি সেটা পালটে দিস যেন।
—
জানি। আর বলতে হবে না। বলেই
কাগজটা নিয়ে পল্টু হাওয়া হয়ে গেল।
মাষ্টারমশাই
আমাকে বললেন, বেশ
মজার কিন্তু। চট করে স্ট্রাইক করে না।
তারপর একটু
থেমে আবার বললেন, খেলাটা
এরকম করেও দেখানো যায়। শেষকালে ঐ বয়েসদুটো না যোগ করিয়ে পুরো সমষ্টিটা জেনে নাও।
তারপর জিজ্ঞেস করো তাদের বয়সের ডিফারেন্স কত। তাহলেই তাদের বয়েস বলে দিতে পারবে।
—
হ্যাঁ তাই তো, আমিও তখন
ফর্মে এসে গেছি, যে
সামটা ওরা বলবে সেটা ৮০৮৯ থেকে যত কম সেটা ওদের বয়েসের যোগফল। এবার বয়েসের
ডিফারেন্স পেলেই তো প্রত্যেকের বয়েস বলে দেওয়া যাবে। সাম আর ডিফারেন্স যোগ করে দুই
দিয়ে ভাগ করলে একজনের আর বিয়োগ করে দুই দিয়ে ভাগ করলে অন্যজনের বয়েস। তাই না?
—
একদম কারেক্ট! মাষ্টারমশাই আমার পিঠটাও
আলতো করে ঠুকে দিলেন।
_____
No comments:
Post a Comment