সোনালি জলের কুয়ো
বাবুসোনা বোস
আদ্যিকালের ঝরঝরে ঘড়িটায় ঢং ঢং করে চারটে বাজতেই মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল টুকানের। বিকেলের একফালি রোদ্দুর জানালা বেয়ে ওর শরীর ছুঁলেই মনটা ওর খেলতে যাওয়ার জন্য ছটফট করে ওঠে। ঘরে আর কিছুতেই মন বসতে চায় না। টুকান আলনা থেকে গেঞ্জিটা নিয়ে টুক করে পরে নিল। দুপুরের কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেলে মা আবার গজগজ করবে। তাই গুটিগুটি পায়ে নিঃশব্দে বাড়ির পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে পড়ল ও। ওদের বাড়িটা খুব পুরনো, প্রায় পঞ্চাশ বছর তো হবেই। আর সেই কারণেই টুকান এই পেছনের গেট ব্যবহারের বিলাসিতাটি করতে পারে।
চুপিচুপি রাস্তায় বেরিয়ে একটা মস্ত আড়মোড়া ভেঙে আকাশের দিকে তাকাতেই টুকানের চোখ উড়ন্ত ঘুড়িগুলোর মধ্যে আটকে গেল। মোমবাতি আর চাঁদিয়াল-এর প্যাঁচটা জব্বর জমেছে। মোমবাতিটা বেশ ছেড়ে খেলছে, কিন্তু চাঁদিয়ালটা বোধহয় একটু আনাড়ি। আনতাবড়ি টানছে আবার মাঝে মধ্যে ছাড়ছে। অনবরত ছেড়ে খেলার পর মোমবাতিটা হঠাৎ টেনে খেলতে শুরু করল। সেই দেখাদেখি চাঁদিয়ালটাও আবার আনতাবড়ি টানতে শুরু করল হুড়মুড় করে। অতঃপর, ভোকাট্টা! অতিরিক্ত টানাটানির শিকার হয়ে চাঁদিয়ালটি ভেসে যাচ্ছে ফটিকদের বাড়ির ছাদের দিকে। ‘বেয়াদব ফটিকটা আজ আবার একটা ঘুড়ি ফোকটে পাবে।’ মনে মনে ফটিককে গালাগাল দিতে দিতে মাঠের দিকে পা বাড়াল টুকান। কিছুদূর হাঁটতেই ও দেখল নিতাই, পলাইকাকুদের বাড়ির পাঁচিলে বসে গুলতি দিয়ে আম পাড়ছে। টুকান ওর কাছে গিয়ে জিগ্যেস করল, “কি রে, আজ খেলবি না?”
টুকানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিতাই পালটা প্রশ্ন করল, “তুই সোনালি জলের কুয়ো দেখতে যাবি?”
হঠাৎ নিতাইয়ের এরকম অদ্ভুত একখান প্রশ্ন শুনে দারুণ অবাক হল টুকান। তারপর সন্দেহ মাখা চোখে বলল, “সোনালি জলের কুয়ো?”
“হুম।” নিতাই জোরে ঘাড় নাড়ল।
“কোথায় দেখেছিস?” টুকান আবার প্রশ্ন করল। নিতাই দাঁত দিয়ে আমের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “মিত্তিরদের ভাঙা মন্দিরটার পাশ দিয়ে যে সরু রাস্তাটা গেছে, ওটা দিয়ে সোজা গেলে একটা পোড়োবাড়ি আছে। সেখানে দেখেছি।”
“বলিস কী! ওদিকটা তো জঙ্গল। তুই ওদিকে কী করতে গেছিলি?” এবার বিস্ময়ের পারদ আরেকটু চড়ল টুকানের।
“আমি তো প্রায়ই বিকেলের দিকে ওদিকটা যাই, আম খেতে। ওই পোড়োবাড়িটার পেছনে কত্ত আমগাছ! আমি পাড়ি আর খাই, কেউ বকে না। গতকাল আমি আম খেতে খেতে ওই সোনালি জলের কুয়োটা দেখেছি। দেখে আমার খুব মজা হয়েছে,” কথাটা ভীষণ ভাবলেশহীনভাবে বলেই হঠাৎ জোরে জোরে হাততালি দিতে শুরু করল নিতাই।
ওর এমন হইচই শুনে ভেতর থেকে কে একজন চেঁচিয়ে বলল, “কে রে, পাঁচিলে বসে আছিস? পাড়ার এই বেহায়া ছোকরাগুলোর জ্বালায় দেখছি গাছে আর একটাও আম থাকবে না। দাঁড়া, যাচ্ছি আমি, ধরতে পারলে তোদের ঠ্যাঙ খোঁড়া করে দেব।”
পলাইকাকুর বউয়ের বাজখাঁই চিৎকার শুনে ওরা ভয়ে মাঠের দিকে ছুট দিল। মাঠে পৌঁছে ওরা দেখল বাকিরা সবাই খেলা শুরু করে দিয়েছে। ওদের দু’জনকে দেখে তপু বলল, “কী রে, এত দেরি করলি কেন? নে, জলদি এক একটা টিমে ঢুকে যা, সবে দু’ওভার খেলা হয়েছে।”
“আজ আর খেলব না রে, একটু কাজ আছে। তোরা খেল,” বলেই টুকান নিতাইকে নিয়ে পাড়ার প্রাইমারি স্কুলের সামনেটায় চলে এল। স্কুলের চাতালটায় বসল ওরা। নিতাই এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। হঠাৎ টুকানের কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বলল, “কী রে, তুই যাবি না সোনালি জলের কুয়ো দেখতে? আমি তাহলে একাই চলে যাচ্ছি।”
“আরে দাঁড়া না, যাব তো! একটু বস, কিছুক্ষণ পরেই যাব।”
নিতাইকে আশ্বস্ত করে টুকান ভাবল যে নিতাই একটু খামখেয়ালি খ্যাপাটে ধরনের ছেলে, বয়সের তুলনায় খানিকটা অপরিণতও। কথা কম বলে কিন্তু ভাবে অনেক বেশি। হতেই পারে এটা নিছক ওর কল্পনা। হয়তো কোনও সাধারণ কুয়োকেই ও সোনালি জলের কুয়ো বলে কল্পনা করেছে। হতেই পারে। কিন্তু আজ টুকানের ওদিকটায় যেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে একবার গিয়ে দেখেই আসা যাক ব্যাপারটা কী!
যেমন ভাবা তেমনি কাজ। ওরা সাথে সাথে হাঁটা দিল ওই পোড়োবাড়িটার উদ্দেশ্যে। নিতাই তো এখন খুব খুশি। ও নিজের বন্ধুকে এমন একটা জিনিস দেখাবে যেটা আগে কখনও কেউ দেখেনি। নিতাই আপন মনে আবার হাততালি দিয়ে উঠল। টুকানের আন্দাজ যা বলছে, বাড়িটায় পৌঁছতে হেঁটে আধঘন্টামতো সময় লাগবে। ওরা হাঁটার গতিটা একটু বাড়িয়ে দিল। বেশ অনেকটা হাঁটার পর ওরা মিত্তিরদের ভাঙা মন্দিরের সামনেটায় এসে পৌঁছল। টুকান দেখল নিতাইয়ের কথামতোই মন্দিরের ঠিক পাশ দিয়ে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে, আর সোজা একটা রাস্তা বেরিয়ে গেছে। বাবার মুখে টুকান শুনেছে যে এই রাস্তাটা নাকি পাশের গ্রাম হয়ে শহরের বড়ো রাস্তায় ওঠে। যদিও ও নিজে কখনও যায়নি এই রাস্তা দিয়ে। যাই হোক, ওরা কিছুক্ষণ মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বাঁদিকের রাস্তাটা ধরল। রাস্তাটা ধরে কিছুক্ষণ এগোনোর পরই সেই পোড়োবাড়িটার সামনে চলে এল ওরা। বাড়িটা বিশাল। কোনও এককালে এখানে যে বেশ বনেদি পরিবারের বসবাস
ছিল,
তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ওরা প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা পাঁচিলটার ধ্বংসাবশেষ পেরিয়ে বাড়িটার ভেতরে প্রবেশ করল। টুকান চারদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল। বাড়িটার অবস্থা খারাপ বললেও কম বলা হয়। পুরো বাড়িটাই জায়গায় জায়গায় ভাঙা, ইটগুলো সব স্কার্ভি রুগির দাঁতের মতো বেরিয়ে আছে। ইটের ফাঁক-ফোকর দিয়ে
অশ্বত্থগাছেরা
একদম নির্দ্বিধায় বংশবিস্তার করেছে। ভূতের গল্পগুলোয় যেমন বাড়ির কথা টুকান পড়েছে, এই বাড়িটা যেন অবিকল তেমন। ভূতের কথা মাথায় আসাতেই ও খেয়াল করল যে বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, সন্ধে নামবে নামবে করছে। ও নিতাইয়ের কাঁধে একটা চাপড় মেরে বলল, “কী রে, কোথায় তোর সোনালি জলের কুয়ো?”
“ওটা তো পেছনে আছে। আয়, আমার সাথে আয়,” নিতাই টুকানের হাত ধরে টেনে ওকে বাড়ির পেছনে নিয়ে গেল। বাড়ির পেছনটা বেশ অদ্ভুত রকমের। মোটা মোটা কতগুলো পাথরের থাম বিচ্ছিন্নভাবে এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে। থামগুলো বিশাল আকৃতির। বোধহয় আগে কোনও মন্দির-টন্দির ছিল, যেটা ভেঙেচুরে এখন এই হাল হয়েছে। থামগুলো থেকে পা বিশেক দূরে একটা কুয়ো নিতাইয়ের দেখানোর আগেই টুকানের চোখে পড়ল। ও নিতাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেল কুয়োটার দিকে। কুয়োটার সামনে গিয়ে মুখ বাড়াতেই চমকে উঠল টুকান। গাছের ফাঁক দিয়ে আসা বিকেলের শেষ আলোয় কুয়োর জলটা সত্যি সোনালি রঙে চকচক করছে।
কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর ও আবার কুয়োর ভেতরটা ভালো করে আরও একবার দেখার চেষ্টা করল। সুর্যের আলোটা ধীরে ধীরে কমছে, আর যতই কমছে ততই জলের চকচকে সোনালি ভাবটা কেটে একটা হালকা ধাতব রঙ জলের ভেতর থেকে উঁকি দিতে থাকছে। টুকানের একটু সন্দেহ হল। ও এদিক ওদিক কিছু একটা খুঁজতে লাগল। হঠাৎ ও দেখল, সামনের আমগাছটায় একটা ছেঁড়া ঘুড়ি ঝুলছে। ও দৌড়ে গিয়ে বার তিনেক লাফিয়ে ঘুড়ির সুতোটা হাতে পেয়ে গেল। টেনে হিঁচড়ে ঘুড়িটাকে নামিয়ে মাঞ্জাটুকু ছিঁড়ে নিল ও। তারপর সেই সুতোটায় একটা ঢিল বেঁধে সেটাকে কুয়োর মধ্যে ফেলল টুকান। ও দেখল ঢিলটা জলের তলায় গিয়ে কাচের মতো কিছুতে ঠেকল। কিন্তু জিনিসটা যে কী সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। এদিকে সন্ধে হয়ে গেছে, অন্ধকারে ভালো করে কিছু দেখাও যাচ্ছে না।
টুকান কী করবে ভাবছে, এমন সময় দূর থেকে আসা একটা গাড়ির শব্দে চমকে উঠল। গাড়ির আওয়াজটা ক্রমশ ওদের আরও কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। টুকান ভয় পেল এবং পাওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। এই
পরিত্যক্ত পোড়োবাড়িটায় সন্ধেবেলা কেন কেউ আসতে যাবে সেটা যথেষ্ট ভাববার বিষয়। ও আর কিছু না ভেবে নিতাইয়ের হাতটা ধরে সোজা ছুট দিল বড়ো থামগুলোর দিকে। থামগুলোর সামনে গিয়ে ওরা একটা বেশ বড়োসড়ো থামের পেছনে লুকিয়ে পড়ল। নিতাই কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, টুকান ওর মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দিল ওকে। কিছু এলোমেলো কথা বলার শব্দ বিচ্ছিন্নভাবে ওর কানে আসতে লাগল। ও খুব সাবধানে সামান্য মুখ বাড়িয়ে ঘটনাটা ঠিক কী ঘটছে দেখার চেষ্টা করল। ও দেখল, চারজন লোক কাঁধে বড়ো বড়ো ব্যাগ নিয়ে কুয়োটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে লোকগুলোর মুখ ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। তবে চালচলন দেখে তো ভদ্রলোক বলে মনে হচ্ছে না। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে টুকান দেখল ওদের মধ্যে দু’জন লোক ব্যাগ থেকে দড়ি বার করে নিজেদের কোমরে বাঁধল। তারপর দড়ির অপর প্রান্তে লাগান হুকের মতো কিছু একটা জিনিস কুয়োর দেওয়ালে থাকা লোহার হাতলের সাথে আটকাল, আর তারপর কোমরে দড়ি বাঁধা লোকগুলো তরতর করে শিম্পাঞ্জির মতো কুয়োর মধ্যে নেমে গেল। দেখে মনে হল বহুদিনের অভ্যাস।
লোকদু’টো কুয়োতে নামার পর বেশ কিছু সেকেন্ড কারোর কোনও সাড়াশব্দ নেই। হঠাৎ লোকদু’টো কুয়োর ভেতর থেকে বেরিয়ে এল। আর সাথে ধরাধরি করে বার করল একটা গোল কাঁচের বাক্স। বাক্সটা দেখতে অনেকটা ওই প্লাস্টিকের গামলাগুলোর মতো। এত কঠিন একটি কাজ মাত্র দু’জনে কারোর সাহায্য ছাড়া কীভাবে করল সেটা ভেবেই আশ্চর্য হল টুকান। যাই হোক, কাঁচের বাক্সটি বার করার পর লোকদু’টো ওটার ঢাকনাটা খুলে, বাক্সের ভেতরের জিনিসগুলো বার করে বড়ো ব্যাগদু’টোয় ভরতে শুরু করল। জিনিসগুলো যে ঠিক কী, অন্ধকারে তা ঠিক বোঝা গেল না।
কাজ শেষ হওয়ার পর কাঁচের বাক্সটিকে ঢাকনা এঁটে পুনরায় একই পদ্ধতিতে কুয়োর ভেতরে রেখে এল লোকদু’টো। তারপর সব গুছিয়ে-টুছিয়ে নিয়ে
নিঃশব্দে সেখান থেকে প্রস্থান করল। টুকান কান পেতে শুনতে পেল গাড়ি স্টার্ট হওয়ার আওয়াজ, যেটা ধীরে ধীরে কমতে কমতে মিলিয়ে গেল দূরে। টুকান এবার খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। কিন্তু এইমাত্র যে ঘটনাটা তার চোখের সামনে ঘটল সেটার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পেল না টুকান। তবে এখানে যে কোনও একটা গন্ডগোলের কারবার চলছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই টুকানের।
“ওই লোকদু’টো কে ছিল রে টুকান?” হঠাৎ নিতাইয়ের কথা শুনে চমকে উঠল ও। ছেলেটা এতক্ষণ পর একটা কথা বলল। ভাগ্যিস, ওরা
থাকাকালীন কিছু বলেনি। তাহলে আর রক্ষে থাকত না। টুকান মনে মনে হাসল। তারপর নিতাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি এখন যা বলব তুই যদি শুনিস তাহলে কাল তোকে একঝুড়ি আম দেব। কী, শুনবি তো?”
“হ্যাঁ...” নিতাই বড়ো করে ঘাড় নাড়ল।
“শোন, আমি যখনই বলব দৌড়তে, তোর গায়ে যত জোর আছে তত জোরে বাড়ির দিকে দৌড়াবি। ঠিক আছে?”
“আচ্ছা।”
টুকান এবার নিতাইয়ের হাতটা ধরে গুটি গুটি পায়ে বাড়ির সামনেটায় এল। তারপর চারদিক ভালো করে দেখে নিয়ে বলল, “নিতাই, দৌড়ো।”
ওর বলা মাত্রই দু’জন প্রাণপণে ছুট লাগাল বাড়ির দিকে। এক নিঃশ্বাসে ছোটার পর একেবারে গ্রামের মাঠের সামনে গিয়ে থামল ওরা। মাঠে এখন কেউ নেই, সব খেলে-ধূলে বাড়ি চলে গেছে। থানায় একবার ব্যাপারটা জানানো দরকার। টুকান আর দেরি করল না। নিতাইকে বাড়ি পাঠিয়ে সোজা ছুট দিল থানার দিকে।
আনন্দবাজার পত্রিকা
তারিখঃ ১২/৫/২০১৬
‘সাহসী দুই কিশোরের তৎপরতায় পলাশপুর গ্রামের এক পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে কুখ্যাত সোনা
পাচারকারী চক্রের হদিস পেল পুলিশ। অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চরম সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য সরকারের তরফ থেকে পুরষ্কৃত করা হল দুই কিশোরকে।’
_____
ছবিঃ পুষ্পেন মন্ডল
বাহ, দারুণ লাগল। খুব ভালো লিখেছিস রে।
ReplyDelete