সেরা
কিশোর কল্পবিজ্ঞানঃ ফিরে দেখা
ঋজু
গাঙ্গুলী
“অল্পবিজ্ঞান
আর গল্পবিজ্ঞানের মিশেল দিয়ে তৈরি কল্পবিজ্ঞান। সহজ কথায় এ-ভাবেই বোধহয় ব্যাখ্যা
করা যায় কল্পবিজ্ঞান-কাহিনিকে।”
এই
কথাগুলো ফ্ল্যাপে লিখেই শুরু হয়েছে কিশোর পাঠকের জন্যে বাংলায় কল্পবিজ্ঞান
সাহিত্যের সেরা দুটি সমাহার। আজকের লেখা তাদের নিয়েই।
শুধু
কল্পবিজ্ঞান নয়, জঁর ফিকশনের প্রতিটি শাখায় জীবন্ত কিংবদন্তী লেখক অনীশ দেব-এর
সম্পাদনায় আনন্দ পাবলিশার্স থেকে অগস্ট ১৯৯১-এ প্রকাশিত হয় “সেরা কিশোর
কল্পবিজ্ঞান”। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের অনবদ্য প্রচ্ছদে সমৃদ্ধ শক্ত মলাটের ৩২৮
পাতার ঝকঝকে বইটা হাতে নিয়েই মন ভালো হয়ে যায়। পাতা ওল্টালে চোখে পড়ে অনুপ রায়,
সত্যজিৎ রায়, কৃষ্ণেন্দু চাকী, সুব্রত চৌধুরী, দেবাশীষ দেব, বিমল দাস এবং সুব্রত
গঙ্গোপাধ্যায়ের অলংকরণ। আর সূচিপত্র? তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ
(*)
ভূমিকা, তথা সম্পাদকের ‘কল্পবিজ্ঞান প্রসঙ্গে’
১)
প্রেমেন্দ্র মিত্র-র “ঘনাদার চিংড়ি-বৃত্তান্ত”
২)
লীলা মজুমদার-এর “শর্টকাট”
৩)
ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য-র “টিটিংগি-পাহাড়ের দেবতা”
৪)
সত্যজিৎ রায়-এর “ডাঃ দানিয়েলির আবিষ্কার”
৫)
বিমল কর-এর “সেই রহস্যময় কুয়াশা”
৬)
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী-র “ক্যাপ্টেন”
৭)
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর “ঘটোৎকচের জাগরণ”
৮)
অদ্রীশ বর্ধনের “বেলুন-পাহাড়ের বিচিত্র কাহিনি”
৯)
সমরজিৎ কর-এর “কাদের মিয়ার কান”
১০)
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর “মেঘ-চোর”
১১)
এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়-এর “কলম্বাসের বাবা”
১২)
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর “উলট-পুরাণ”
১৩)
সমরেশ মজুমদার-এর “স্বপ্নসম্ভব”
১৪)
শেখর বসু-র “আর মনখারাপ হবে না”
১৫)
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-এর “মায়াবী”
১৬)
সিদ্ধার্থ ঘোষ-এর “টাইম মেশিনের টোপ”
১৭)
অমিত চক্রবর্তী-র “বাতিক”
১৮)
কিন্নর রায়-এর “করঞ্জাক্ষর কাজের লোক”
১৯)
দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়-এর “ঝিঁঝো”
২০)
স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর “নেশা”
২১)
সংকর্ষণ রায়-এর “বিদিশার নিশা”
২২)
নিরঞ্জন সিংহ-র “আশ্চর্য চুরি”
২৩)
বিমলেন্দু মিত্র-র “বংকুবাবুর গল্প”
২৪)
সুকুমার ভট্টাচার্য-র “বখেড়া”
২৫)
রেবন্ত গোস্বামী-র “অণুঘ্রাণ যন্ত্র”
২৬)
পরেশ দত্ত-র “চৈতন্যচরণ”
২৭)
অমরজ্যোতি মুখোপাধ্যায়-এর “শেষ ফেরি”
২৮)
সুধীন্দ্র সরকার-এর “শচীদাসের খেল”
২৯)
চঞ্চল পাল-এর “রঙের রহস্য”
৩০)
অমিতাভ মুখোপাধ্যায়-এর “অচেনা শত্রু”
৩১)
শুভমানস ঘোষ-এর “‘আ-’ মানে”
৩২)
অনীশ দেব-এর “বুদ্ধি যদি বৃদ্ধি পায়”
গল্পগুলোর
বেশির ভাগই শুধু কল্পবিজ্ঞান নয়, বরং যে কোনো ধরণের শিশু-কিশোর সাহিত্যের সম্পদ।
তাছাড়া, প্রকাশের ২৩ বছরের মধ্যে (আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহের চতুর্থ কপিটি নভেম্বর
২০১৪-র) ৮টি সংস্করণ, তথা ১০ হাজার কপি বিক্রির পরিসংখ্যানই বইটির জনপ্রিয়তা
সাব্যস্ত করে। তাই এই ‘ক্লাসিক’ বইটি নিয়ে আমার মুগ্ধতার বিস্তৃত বিবরণ না দিয়ে
শুধু বলব, এখনও যদি বইটা না পড়ে থাকেন, তাহলে দয়া করে অবিলম্বে, (কথাটা পড়ার সময়
আমি আপনাদের “ইওর টাইম স্টার্টস নাও” বলছি, এটা ধরে নিন) বইটি সংগ্রহ করুন, এবং
পড়ুন।
কিন্তু
সাহিত্য এক জায়গায় থেমে থাকে না। কল্পবিজ্ঞান, যা আরো বেশি করে সমসাময়িকতার ওপর
নির্ভর করে, তারই বা সংকলন এক জায়গায় থেমে থাকে কীভাবে? তাই, ২০১৪-য় পশ্চিমবঙ্গ
সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে শিশু কিশোর আকাদেমি উদ্যোগী হয় কল্পবিজ্ঞান
নিয়ে লেখা শিশু-কিশোর কাহিনির একটি নতুন সংকলন প্রকাশ করতে। এ আমাদের পরম সৌভাগ্য
যে অনীশ দেব এবারো সংকলনটি সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।
জুন
২০১৫-য় আমরা পাই “সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞানঃ সেকাল থেকে একাল”। কোয়েলি ভট্টাচার্যের
প্রচ্ছদ-সম্বলিত বড়ো আকারের ৩৬০ পাতার এই ঝকঝকে হার্ডকভারটি হাতে নেওয়া মাত্র মন
ফুরফুরে হয়ে ওঠে। ছাপার দিক দিয়ে এই বইটিও আকাদেমির সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছে। সঙ্গে,
আগের বইটির মতো অত বেশি সংখ্যায় না হলেও রয়েছে সত্যজিৎ রায়, অনুপ রায়, দেবাশীষ
দেব, সুব্রত চৌধুরী, সুদীপ্ত মণ্ডল, যুধাজিৎ সেনগুপ্ত, দেবব্রত ঘোষ, অলয় ঘোষাল, সোমনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং বিপ্লব মণ্ডলের অলংকরণ।
নানা
সরকারি (এবং অদরকারি) ভূমিকার পর, বিগত সংকলনটির অবস্থান, এবং আকাদেমির উদ্যোগে
নতুন একটি সংকলন করার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে লিখেছেন সম্পাদক তাঁর “কল্পবিজ্ঞান
প্রসঙ্গে”-তে। কিন্তু গল্প চয়নের মাপকাঠি নিয়ে তিনি কিছু বলেন নি, এটুকু ছাড়া যে
গত শতকের ৭টি গল্প দিয়ে ‘সেকাল’, এবং শূন্য দশকের ১৬টি গল্প দিয়ে ‘একাল’ চিহ্নিত
হয়েছে এই সংকলনে।
কী
কী গল্প আছে এই সংকলনে?
১) প্রেমেন্দ্র
মিত্র-র “পিঁপড়ে পুরাণ”: কল্পবিজ্ঞান
সাহিত্যের সম্পদ, এই রোমাঞ্চকর আখ্যানটি পড়ার সুযোগ থেকে অনেক পাঠক বঞ্চিত থেকেছেন
স্রেফ লেখাটি সম্বন্ধে ভালোভাবে না জানার ফলে। সম্পাদকের কাছে প্রথমেই কৃতজ্ঞতা
জানাই লেখাটি এমন এক সংকলনের মাধ্যমে আমাদের কাছে তুলে ধরার জন্যে।
২) সত্যজিৎ রায়-এর “আশ্চর্য প্রাণী”: ক্লাসিক, এবং বহুপঠিত। তবে এই
শংকু-কাহিনিটি আবারো প্রমাণ করে দেয়, কল্পবিজ্ঞানের আড়ালে এ গল্প আসলে বিশুদ্ধ
ফ্যান্টাসি মাত্র।
৩) দিলীপ রায়চৌধুরী-র “প্লুটোর অভিশাপ”: এই লেখাটা পড়ে আরো একবার বুকের ভেতরটা টনটন
করে উঠল এই ভেবে যে, রোমাঞ্চকর এমন আরো অগণিত কাহিনি পাঠের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত
হলাম লেখকের অকাল প্রয়াণের ফলে। তবে আশার কথা এটাই যে লেখকের সবক’টি গল্পকে
বিস্মৃতির আড়াল থেকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছেন সহৃদয় প্রকাশক, যা নিঃসন্দেহে
আমাদের সবার কাছে আনন্দের খবর।
৪) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর “প্রতিবিম্ব”: ক্লোনিং, এবং মৃত্যুকে পরাভূত করার এথিক্স
যে সেই সময়ের লেখকদের কতটা আলোড়িত করেছিল, তার কিছুটা অনুভব করা যায় এই গল্পটি
পড়ে।
৫) অদ্রীশ বর্ধন-এর “রক্তবীজ”: আগের সংকলনের নো-হোল্ডস বার্ড অ্যাকশন
কাহিনির বদলে এই সংকলনে স্থান পেয়েছে লেখকের একটি গভীর চিন্তার গল্প, যার
কেন্দ্রেও রয়েছে ক্লোনিং।
৬) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর “নীল রঙের মানুষ”: এই গল্পটিতে নানা ধরণের সাই-ফি ট্রোপ (যেমন
মহাকাশযান, ভিনগ্রহী ইত্যাদি) ব্যবহার হলেও আদতে এটি ফ্যান্টাসি, এবং তাও একটি
লম্বা সিরিজের প্রথম কাহিনি মাত্র। এর বদলে সম্পাদক লেখকের অন্য কোনও গল্প বাছলেই
পারতেন।
৭) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর “অজয়”: ক্রিকেট যে লেখকের অন্যতম প্রিয় বিষয়, তা ‘অদ্ভুতুড়ে’
সিরিজের নানা লেখায় আমরা জেনেছি। এই গল্পে ক্রিকেট-এ এসে পড়েছে ক্লোনিং।
৮) বাণী বসু-র “দ্বিতীয় পৃথিবী”: আনন্দমেলায় ধারবাহিক প্রকাশের সময়েই এই
বড়োগল্পটি আমায় মুগ্ধ করেছিল। লেখাটা আরো একবার পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে
সম্পাদকের উদ্দেশে রইল এক রাশ কৃতজ্ঞতা।
৯) সিদ্ধার্থ ঘোষ-এর “রোডল”: কল্পবিজ্ঞান যে কতটা নিষ্ঠুর ভাবে মানবিক
হতে পারে, সেটা বোঝার জন্যে আমাদের মাঝেমধ্যে এই লেখকের লেখা পড়া উচিৎ। এঁর
লেখাগুলো পাঠকের কাছে যে কবে ফিরে আসবে...।
১০) শিশির বিশ্বাস-এর “ভাইরাস”: টেলিযোগাযোগ বিষয়ে লেখকের ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা এবং সমকালীন বিজ্ঞানের সমন্বয়ে এই গল্পটার মাধ্যমে বই পোক্তভাবে ‘একাল’-এ
প্রবেশ করেছে।
১১) সুচিত্রা ভট্টাচার্য-র “দাবানলের দেশে”: আনন্দমেলায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত এই
নভেল্লাটিও পড়তে বেশ লেগেছিল, এবং আবারো পড়তে গিয়ে বেশ লাগল। তবে হ্যাঁ,
কল্পবিজ্ঞান নয়, বরং এটিকেও ফ্যান্টাসি বলাই শ্রেয়।
১২) অসীম ত্রিবেদী-র “খপাৎ”: আলোচ্য সংকলনে এই গল্পটি সম্পূর্ণ বেমানান,
দুর্বল, এবং ভাষাগত ও বিষয়গত কারণে পরিত্যাজ্য। নেহাত এমন একটা সংকলনের গ্রেডিং ‘স্টার’
দিয়ে করা অনুচিত, নইলে স্রেফ এই একটি গল্পের জন্যে বইটি থেকে একটি নক্ষত্র বিদায়
নিত।
১৩) ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়-এর “জিন চাই, জিন”: অনাগত ভবিষ্যতের এক ভয়ংকর ছবি খুব কম
কথাতেই ফুটিয়ে তোলে এই গল্প, যা এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়-এর “হিমশিশু” নামক ক্লাসিক
(বড়োদের) গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়।
১৪) শুভমানস ঘোষ-এর “অদ্ভুত দৃশ্য”: খুব সহজ একটা গল্পের মাধ্যমে খুব গভীর কিছু
কথা বলেছেন লেখক, যা এই সময়ের শিশু-কিশোর পাঠকদের পড়ানো অত্যাবশ্যক।
১৫) প্রচেত গুপ্ত-র “রনি আর বনি”: যন্ত্র আর মানুষের সম্পর্ক নিয়ে গালভরা
অনেক কথার বদলে এই একটি গল্প পড়লে শুধু ছোটোরা নয়, আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ছোটো
মানুষগুলোও নতুন করে মানুষ হওয়া শুরু করার মতো উপকরণ পাবে।
১৬) সৈকত মুখোপাধ্যায়-এর “ধূমাবতী”: এই বইয়ের, এবং সম্ভবত এই সময়ের শ্রেষ্ঠতম
কল্পবিজ্ঞান গল্প এটি, যার রসাস্বাদন শুধু শিশু-কিশোর নয়, বরং প্রাপ্তমনস্ক পাঠক
মাত্রেই করতে পারবেন, এবং তারপর গল্পটা কোনও দিন ভুলতে পারবেন না।
১৭) কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর “বেগুনি রঙের এল.ই.ডি”: প্রথম সংকলনের অ্যাকশন-নির্ভর স্বভাবটা
একটু হলেও ফিরে এল এই রোমাঞ্চকর গল্পের মাধ্যমে।
১৮) যশোধরা রায়চৌধুরী-র “অংকিটের বুদবুদ”: আহা! প্রথম সংকলনে পড়া লীলা মজুমদার এবং
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর গল্পদুটোর জায়গা একাই নেওয়ার মতো এই গল্পটা স্কুলের
টেক্সট করা উচিৎ।
১৯) অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী-র “আমরা নেই”: এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কল্পবিজ্ঞান-কাহিনিকার
আমাদের উপহার দিয়েছেন এমন একটি গল্প যা এলিয়েন ইনভেশন বা টেকনোলজির বুড়ি ছুঁয়েও
আসলে এক বুকভাঙা অনুভবের কথা বলে। এমন লেখা পড়তে পেলে মনে হয়, বই পড়া সার্থক।
২০) উল্লাস মল্লিক-এর “ডবল কিরু”: ঠিক দমফাটা না হলেও মুচকি-মুচকি হাসির একটি
গল্প অবশেষে আমরা পড়ার সুযোগ পেলাম এটির মাধ্যমে। শীর্ষেন্দু এবং লীলা মজুমদারের
ঘরানায় লেখা এই গল্পটাও আমার ভালো লেগেছে।
২১) রাজেশ বসু-র “মালয়দ্বীপের বিভীষিকা”: অবশেষে আমরা একটা গল্প পেলাম যাতে কল্পনা
আছে, বিজ্ঞান আছে, ভয় আছে, সাসপেন্স আছে, এবং ভরপুর অ্যাকশন আছে, সঙ্গে আছে আরো
এমন ‘ঘটনার’ সম্ভাবনা। দুর্দান্ত!
২২) সৌরভ মুখোপাধ্যায়-এর “খেলোয়াড় রামখেলাওন”: ভেলকুনমামা ও তাঁর এক আবিষ্কারকে কেন্দ্রে
রেখে লেখা এই হালকা হাসির গল্পটি রেবন্ত গোস্বামীর গল্পে বিজ্ঞানী সাত্যকি সোম ও
তাঁর রোবট নরোত্তমের কাণ্ডকারখানা পড়ে অভ্যস্ত পাঠকের কাছে পুরোনো ঠেকলেও এই সময়ের
পাঠকের কাছে হয়তো নতুনত্বের স্বাদ দিতে পারবে।
২৩) অনীশ দেব-এর “ভোলাকে ভোলা যাবে না কিছুতেই”: আসিমভের রোবট সিরিজের সেরা গল্পগুলোর সঙ্গে
পাল্লা দেওয়ার মতো মানবিক গুণসম্পন্ন এই গল্পটা পড়ার পরেও যদি রোবটের মনুষ্যত্ব আর
মানুষের অমানবিকতা নিয়ে আপনি কিছুক্ষণ না ভাবেন, তবে আপনি নেহাত পাষাণহৃদয়।
সামগ্রিকভাবে এই সংকলন থেকে দুটো জিনিস স্পষ্ট হয়, যথাঃ
১. বিজ্ঞানের অগ্রগতি নয়, বরং তার এথিক্যাল বা নীতিগত দিকটা
এই সময়ের লেখকদের বেশি ভাবাচ্ছে। ছোটোদের মধ্যে এই গল্পগুলোর মাধ্যমে তাঁরা তাই
ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন কিছু শুভ চিন্তার বীজ, যাতে আগামী প্রজন্ম এক সুস্থ ও সুন্দর
পৃথিবীকে উত্তরাধিকার হিসেবে পায়।
২. বাংলায় কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যর যে গতিপথ দিলীপ রায়চৌধুরী,
ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, অদ্রীশ বর্ধন, সংকর্ষণ রায়, নিরঞ্জন সিংহ প্রমুখের
মাধ্যমে হার্ড সাই-ফির দিকে নির্দিষ্ট হয়েছিল, নানা কারণে গত এক দশকে তা মানবিক
মূল্যবোধের গল্প বলার দিকে, তথা ফ্যান্টাসি-কেন্দ্রিক কাহিনির দিকে চলে এসেছে।
তবে এসব তত্ত্বকথায় কাজ কী? এই আকর্ষণীয় সংকলনদুটি চটপট
জোগাড় করে ফেলুন, আর দারুণ ভিড়ে এক প্যান্ডেল থেকে অন্য প্যান্ডেলে ঘুরে আর সেলফি
না তুলে বরং জানলাটা শক্ত করে এঁটে নিজের মনের মহাকাশযানে চেপে হারিয়ে যান গল্পের
মহাকাশে!
_____
খুব সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন প্রতিটি গল্পকে, সাথে দারুনভাবে তুলে ধরেছেন নিজস্ব মতামত। আপনার রিভিউ এর তুলনা নেই, অসাধারণ!!!
ReplyDeletekhub bhalo review. Sabkata galpo abasya amar para neyi. সৈকত মুখোপাধ্যায়-এর “ধূমাবতী amaro khub priyo galpo.
ReplyDeleteএই বইটির কি কোনো রকম ফ্রী ভিজিট্যাল কপি পাওয়া যাবে!
ReplyDelete