বিজ্ঞান:: খনিজ তেলের অজানা কথা - পল্লব চট্টোপাধ্যায়

খনিজ তেলের অজানা কথা
পল্লব চট্টোপাধ্যায়

মাটির নীচে প্রথম তেল

আজ থেকে প্রায় দেড়শ’ বছর আগেকার কথা। আসাম রেলওয়ে ট্রেডিং কোম্পানী উত্তর-পূর্ব আসামের ডিব্রুগড় শহর থেকে রেললাইন পাতছে বর্মা মুলুকের প্রান্ত পর্যন্ত, যদিও দুর্গমতার জন্যে তা লিডো পর্যন্ত যাবে স্লিপারের জন্যে কাঠের মোটা মোটা গুঁড়ি কাটা হচ্ছে, পোষা হাতির দল তা জঙ্গল থেকে পাহাড়ি পথে মাটির উপর দিয়ে টেনে আনছে ডিব্রুগড় ও তিনসুকিয়ার গুদামে। ইয়ার্ডের ইংরেজ মালিক হঠাৎ একদিন হাতির পায়ে তেলতেলে আঠালো গোছের কিছু একটা লেগে থাকতে দেখলেন। সেই একই চিহ্ন পাওয়া গেল কাঠের গুঁড়িগুলোর গায়ে। কী যেন সন্দেহ করে তিনি সাথে সাথেই শাবল-গাঁইতি ও ছেলে-ছোকরাদের দলবল নিয়ে হাতির পায়ের ছাপ অনুসরণ করে গিয়ে পৌঁছলেন পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা একটা জলা জায়গায়। চারদিকে ভেজামাটি আর গাছপালার বুনো গন্ধ সেখানেই একটা জায়গা বেছে একটি ছোকরাকে স্থানটি খুঁড়তে বললেন সাহেবফলও পাওয়া গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। উত্তেজনায় সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন - ‘Dig, boy, dig’ মাটির বুক থেকে বেরিয়ে এল ঘন সবুজ-কালো রঙের তরল পদার্থ, আধুনিক দুনিয়া যার নাম দিয়েছে পেট্রোলিয়াম – কালো সোনা
এইভাবেই আবিষ্কৃত হল ভারতের প্রথম খনিজ তেল, দুর্গম উত্তর-পূর্ব ভারতের অখ্যাত গ্রামে, যার নামকরণ হল এক অজ্ঞাতনামা বালকের কাজের স্বীকৃতিতে ডিগবয় তার মাত্র সাত বছর আগে ১৮৫৯ সালে আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় বিশ্বের প্রথম তেলের কুয়ো খুঁড়ে বিখ্যাত হয়েছেন এডুইন ড্রেক অবশ্য ভারতের প্রথম তৈলকূপ খুঁড়েছিলেন ম্যাক্কিলপ-স্টুয়ার্ট কোম্পানীর কর্মী গুডএনাফ ১৮৬৬ সালেই আসামের জয়পুর অঞ্চলে, তবে তাঁর প্রচেষ্টা গুড এনাফ ছিল না, যার ফলেই ডিগবয় প্রসঙ্গের অবতারণা পরে ১৮৮৯ সালে পেট্রোলিয়াম উৎপাদনে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় কূপ নং ডিগবয়-; তবে সে অন্য কাহিনি প্রথম খনিজ তেল প্রাপ্তির স্বীকৃতিতে অয়েল ইণ্ডিয়ার প্রচেষ্টায় ভারত সরকারের তরফে স্থাপিত হয় ভারতের প্রথম ‘পেট্রোলিয়াম সংগ্রহশালা’, ডিগবয় শহরেই (চিত্র ১) 


চিত্র ১ - ডিগবয়ে নির্মিত ভারতের একমাত্র পেট্রোলিয়াম মিউজিয়াম

পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল জিনিসটা কী, বা কী তার উপযোগিতা, তা নিশ্চয় আজকের দিনের কোনও ছেলেমেয়েকে বোঝাতে হবে না তবে তা মাটির নীচে এলো কী ভাবে, জমা হলই বা কী ভাবে, কোন জায়গায় আর তা খুঁজে পাওয়ার উপায় কী, আর খুঁজে পাবার পর মাটির বুকের ভেতর থেকে তাকে বের করে তাকে কাজের উপযোগী করে তোলা যায় কী ভাবে সে সব কথা জানার ইচ্ছে হচ্ছে নিশ্চয়ই তাহলে আর দেরি কেন, জুরাসিক পার্ক থেকেই শুরু করি, কেমন?

তৈলাধার পাত্র

জুরাসিক পার্ক শুনে কি ভয় পেয়ে গেলে নাকি? মনে পড়ে গেল কি স্পিলবার্গের সেই ছবি, আমাজনের রেন-ফরেস্টের সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রাগৈতিহাসিক অতিকায় জন্তু-জানোয়ারদের মুক্তাঞ্চল, ডাইনোসর, টিরানোসেরাস আর টেরোডাকটিল – যারা অন্ততঃ কয়েক কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে গেল কোথায়? তোমরা নিশ্চয়ই এত ছোটও নও যে বস্তু আর শক্তির সংরক্ষণের কথা শোন নি। তাহলে জেনে রাখ যে এই মহাবিশ্বে কোনও কিছুই হারায় না। শুধু হয়ত বদলে যায় তাদের নাম, রূপ বা রাসায়নিক গঠন। পরে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন জানান যে বস্তুর ভর থেকে শক্তি আর শক্তি থেকে বস্তুর পরিবর্তন সম্ভব এবং এই বিশ্বে (বা কোনও নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে) শক্তি ও বস্তুর মিলিত পরিমাণ সদাই সমান থাকে। তাদের রূপান্তরণ হতে পারে E=mc2 (শক্তি= ভর x আলোর বেগ), এই সূত্র মেনে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছ আমি কী বলতে চাইছি। ঠিক, সেই জুরাসিক কালের গাছপালা জীবজন্তু লুপ্ত হয়ে চাপা পড়ে মাটির নীচে, তারপর জল বা বাতাসে ভেসে স্তুপীকৃত হয় সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন জায়গায়। তার উপর মাটি চাপা পড়তে থাকে, ফলে তাদের উপরে বাড়তে থাকে চাপ আর তার সাথে কাজ করে মাটির তলের উচ্চ তাপমান আর সময় - আর আজকের দিনে সেই জীবের দেহাংশই পরিবর্তিত হয়েছে পেট্রোলিয়াম, খনিজ গ্যাস, কয়লা, গ্রাফাইট ও হীরেতে। তবে কয়লার ব্যাপারটা একটু আলাদা, কারণ কয়লা একধরণের শিলা (rock), আর তেল-গ্যাস জমা হয় ছিদ্রযুক্ত শিলার ছিদ্রের মধ্যে। অবশ্য যত সহজ মনে হচ্ছে, ঘটনাটা তত সহজে ঘটে না। তাহলে একটু খুলেই বলা যাক সমস্ত গল্পটা।

হ্যাঁ, এটা একটা গল্পেরই মত। আজ থেকে প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে সূর্য থেকে ছিটকে আসে একটি আগুনের গোলা, তৈরী হয় পৃথিবী। ভূবিজ্ঞানীদের কাছে এটাই আদিযুগ, তাঁরা এই যুগের নাম দিয়েছেন ‘হেডিয়ান’ (hadean)তারও কয়েক কোটি বছর পরে, পৃথিবী তখনও তরল অগ্নিপিণ্ড, ছিটকে এল আরেকটি আগুনের গোলা আর তা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে লাগল। তার নাম হল চাঁদ। এরপর চলল আরো দুশো কোটি বছর ধরে ভাঙাগড়া। এখন পৃথিবীর বাইরের অংশটা জমাট বেঁধে কিছুটা শক্ত হয়েছে, তৈরি হয়েছে জল-স্থল আর পৃথিবীর নিজস্ব বায়ুমণ্ডল। তখনও পৃথিবী নিষ্প্রাণ, তাই এই যুগের নাম প্রাণহীন বা azoic. তারপর আরও দেড়শ কোটি বছর ধরে প্রাণের উপযোগী জল-হাওয়া তৈরি হল, প্রথমে এককোষী অ্যামিবা, ব্যাক্টিরিয়া ও আর্কিয়া আর তা থেকে বিবর্তনের ক্রমানুসারে আসতে থাকল শ্যাওলা, ছত্রাক, মস, ছোটখাটো জলচর প্রাণী, উভচর (amphibian) ও আকাশচারী পাখি। এসব সৃষ্টি হতে হতে কিন্তু ইতিমধ্যে পার হয়ে এসেছি আরো চারশ’ কোটি বছরেরও বেশি, পার হয়েছি প্রি-ক্যাম্ব্রিয়ান থেকে প্রটেরোজোইক হয়ে প্যালিওজোইকের মাঝামাঝি। এরপর কার্বনিফেরাস থেকে শুরু করে পারমিয়ান হয়ে মেসোজোইকের গোড়া পর্যন্ত উদ্ভব হল নানা ধরণের গাছপালা আর জীবজন্ত। এই মেসোজোইকের আবার তিনটে ভাগ – ট্রায়াসিক, জুরাসিক আর ক্রেটাশিয়াস। এই সময়েই দুনিয়ায় আসে অতিকায় প্রাণী, প্ল্যাঙ্কটন, ম্যাংগ্রোভের জঙ্গল আর মহীরূহের দল। এর সময়কাল সাত কোটি থেকে পঁচিশ কোটি বছর প্রাচীন। খনিজ তেল ও গ্যাসের জন্মের জন্যে এই সময়টার গুরুত্ব অসীম। ভূতাত্ত্বিক লেখক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ইচ্ছামতীর একটি সংখ্যায় এই ব্যাপারটি ভাল বুঝিয়েছেন, আগ্রহ থাকলে তোমরা তা পড়ে দেখতে পার, এই লিঙ্কে –

পেট্রোলিয়াম কথাটা দুটি ল্যাটিন শব্দ জোড়া – petra + oleum. পেট্রা অর্থে পাথর বা শিলা, ওলিয়াম মানে তেল, অর্থাৎ পাথরে থাকে যে তেল। আগেই বলেছি, পৃথিবী একেবারে গোড়ায় তরল আর গ্যাসের মিশ্রণ ছিল, তখনও কোনও পাথর বা rock-এর জন্ম হয়নি। প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে সেই তরল জমে তৈরি হয় প্রথম পাথর, যাকে বলে আগ্নেয়-শিলা (igneous rock), যেমন গ্রানাইট বা ব্যাসাল্ট। পৃথিবীর বাইরের স্তর ঠাণ্ডা হলেও এখনও তার নীচে সবকিছু গলিত রূপে আছে, তাকে বলা হয় ম্যাগমা (magma)ভুমিকম্প, সুনামি বা অগ্ন্যুৎপাতে এই ম্যাগমা লাভা (lava) নামে বেরিয়ে আসে। এই আগ্নেয় শিলা পৃথিবীর বাইরের স্তরে (outcrop) রোদ-জল-হাওয়ার প্রকোপে নরম হয়ে বা ভেঙে বালি বা মাটিতে পরিণত হয়। নদী, হিমবাহ, বন্যা বা সমুদ্রের জলধারায় বাহিত হয়ে সেই মাটি বা silt স্তরে স্তরে জমতে থাকে, সাথে নিয়ে যায় যাবতীয় গাছপালা আর মরা জন্তু-জানোয়ারের দেহাবশেষ। এই মাটি পরে জমে শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হয়, তাকে বলে পাললিক শিলা বা sedimentary rockএদের ফাঁকে জমে থাকা জৈব অবশেষ, যাকে আমরা এখন বলি ফসিল (fossil), সমুদ্রের জল, তাপ, চাপ আর সময়ের প্রভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে পরিণত হয় খনিজ তেল ও গ্যাসে। এদের গঠনে হাইড্রোজেন আর কার্বন অপরিহার্য বলে এদেরকে বলা হয় হাইড্রোকার্বন। এদের মধ্যে C1 থেকে C4 পর্যন্ত (মিথেন, ইথেন, প্রপেন ও বিউটেন ইত্যাদি হাইড্রোকার্বন) থাকে গ্যাসরূপে। এই পেট্রোলিয়াম তৈরি হয় যে শিলায়, প্রধানতঃ সিল্ট, কর্দমশিলা বা ক্লে-স্টোন বা শেলে, তাকে বলা হয় উৎস বা source rock. স্তরীভূত এই শিলায় জমে থাকা অবস্থায় এই জৈব অবশেষের যে রূপান্তর ঘটে তাকে রান্নার সাথে তুলনা করা যায়, তাই বলা হয় cooking. এই cooking আবার তিনটি ধাপে হয়ে থাকে - diagenesis (50 deg C), catagenesis (50 - 200 deg C) আর metagenesis (200 - 250 deg C) - এই তিনরকমের প্রক্রিয়া ও বিক্রিয়ার ফলে জৈব পদার্থ পরিবর্তিত হয় তেল ও গ্যাসে। তারপরের ধাপটি হল স্থানান্তরণ বা migration, অর্থাৎ এই তেল আর গ্যাসকে ধরে রাখার মত ধারকতা বা ছিদ্রময়তা (porosity) ঐ উৎ-শিলার নেই বলে তারা চুনাপাথর (limestone), ডোলোমাইট (dolomite) বা বেলেপাথর (sandstone) জাতীয় কোনও একটি ছিদ্রময় (porous) পাথরের স্তরে এসে জমা হয়, যাকে বলা হয় ধারক-শিলা (reservoir rock)তবে ধারক-শিলা থেকে তেল বা গ্যাস খুব সহজেই বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাহলে আর তাকে উদ্ধার করে তোলা যাবে না। তাই খনিজ তেল বের করার জন্যে ধারক শিলার উপরে একটা রোধক-শিলা বা cap rock যেমন শেল, লবণ বা কর্দমশিলার স্তর থাকা খুব প্রয়োজন। হ্যাঁ, আর একটা কথা। মৌচাকের খোপে খোপে মধু ভরে থাকলেও ছিদ্রগুলো পরস্পর জোড়া না হলে একটা নল দিয়ে আর কতটুকু মধুই বা বের করা যায়? ঠিক সেইমত ধারক-শিলার ছিদ্রগুলো পরস্পরের সাথে কতটা যুক্ত, তার উপরেই নির্ভর করে তার থেকে সম্পূর্ণ তেলটুকু বার করা সম্ভব কিনা, শিলার এই গুণটির নাম permeabilityসবটুকু বলা হয় নি, আগ্নেয় বা পাললিক শিলা আবার অত্যধিক চাপে, তাপে বা রাসায়নিক প্রভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়, তার নাম তখন হয় রূপান্তরিত শিলা (metamorphic rock), যেমন মার্বেল বা কোয়ার্জাইট। তবে পেট্রোলিয়াম জিয়োলজির ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ sedimentology-র সাথে, রূপান্তরিত শিলার তেমন ভূমিকা নেই। অবশ্য ইদানীংকালে বেশ কিছু basement rock বা স্তরীকরণ শুরু হবার আগের পর্যায়ের পরিবর্তী বা আগ্নেয় শিলার ফাটল থেকেও, যাকে fractured basement বলা হয়, কিছু কিছু তেল ও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে বলে এদেরকে নিয়েও আজকাল চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

      এত সব তো জানা গেল, কিন্তু বিশাল একটা হ্রদে দশ টন মাছ থাকলেই কি তা ধরা যায়, যদি তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে? তাই দরকার তাদের একত্র হওয়া। তেমনই তেল মাটির নীচে থাকলেই তা বের করা যায় না, তার জন্যে প্রয়োজন বিশেষ কিছু ভূতাত্ত্বিক বিন্যাসের, যাদেরকে বলা হয় reservoir trap বা ফাঁদ। এই ট্র্যাপ মূলতঃ তিন ধরণের হয়, ভূ-গঠনাত্মক (structural), স্তর-বিন্যাসীয় (stratigraphic) diageneticএই ব্যাপারটা ভূগর্ভবিদ্যা বা জিওলজির কিছুটা প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে তোমাদের বুঝতে অসুবিধা হবে। তবু মনে কর একটা বড় চাদরে চাল ছড়িয়ে রাখা আছে, কিন্তু ছড়িয়ে থাকার ফলে তুমি মুঠো করে তুলতে পারছ না। এবার যদি চাদরটা চারদিক থেকে মুড়ে ফেলি, তাহলে ছড়িয়ে থাকা চালগুলো মাঝখানে গভীর হয়ে জমা হবে। তখন তো সেগুলোকে সহজেই মুঠো করে তোলা যাবে, তাই না? তেমনি পেট্রোলিয়াম থাকে যে ধারক শিলায়, তার মাঝখানটা যদি ভূমিকম্প বা সে-ধরণের কোনও ঘটনার ফলে উঁচু হয়ে ওঠে - উঁচু অংশটাকে বলা হয় anticline আর নীচু হলে তাকে বলে syncline - জল থেকে আলাদা হয়ে তেল আর গ্যাস সেই উঁচু ক্ষেত্রে গিয়ে জমা হয়, একে বলে fold trap, তখন তা সহজেই তোলা যেতে পারে। এছাড়াও আছে fault trap artesian trapতাছাড়া একটা স্তর থেকে যদি কিছুটা একদিক থেকে ভেঙে পড়ে ও পরে সেখানে নতুন ভাবে স্তরীভবন শুরু হয়, এর নাম unconformity, দুই ধরণের স্তরের মাঝে তেল ও গ্যাস আটকা পড়তে পারে - তার নাম stratigraphic trap. পুরুভাবে স্তরীভূত গম্বুজাকৃতি salt বা silt dome তেমনই diagenetic trap-এর উদাহরণ হতে পারে। এবার ঠিক ট্র্যাপের মাথায় গর্ত খুঁড়ে সহজেই পাথরের ছিদ্রে জমা তেল উদ্ধার করা যায়, তাই না। কিন্তু গর্ত না খুঁড়ে জানবে কী করে মাটির নীচে কোথায় আছে এধরণের ট্র্যাপ? এবার তাহলে সে কথাতেই আসি। 



চিত্র২ - তৈলাধারের (reservoir) গঠন-পদ্ধতি

অনুসন্ধান

আগেই বলেছি এদেশে প্রথম তেলের সন্ধান হাতির পায়ে লেগে থাকা তেলের দাগ থেকে শুরু হয়। এরপর থেকে একটা বিশেষ জংলা গন্ধ পেলেই আসামের যত্রতত্র খোঁড়া হতে লাগল - হাতি ছোটানো হতে লাগল সর্বত্র। কিন্তু অলৌকিক ব্যাপার রোজ ঘটে না। তাই এবার বিজ্ঞানীরা নেমে পড়লেন কাজে। বিলেত থেকে এল ভারী ভারী যন্ত্রপাতি, রীতিমত তৈলকূপ খননকার্য শুরু হয়ে গেল। প্রথমে একটা বিশাল অঞ্চলে চিহ্নিত কিছু কিছু স্থানে বাষ্পচালিত ড্রিলিং রিগ দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হল, কোথাও তেল পাওয়া গেল, কোথাও গেল না। তবে এ থেকে ভূগর্ভবিদ্‌রা মাটির নীচে পাথরের স্তরের কেমন বিন্যাস ঘটেছে তা সম্বন্ধে বেশ কিছু জানতে পারলেন ভূগর্ভের ম্যাপ তৈরি হতে থাকল, যাতে পেট্রোলিয়ামের ট্র্যাপগুলিকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এভাবে অনুসন্ধান করার প্রচুর খরচ আর তা সময়সাপেক্ষ। এক একটা কূপ ড্রিল করার খরচ তো কম না! ১৮৬৭ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করার পর থেকেই শুরু হয়েছিল এ নিয়ে চিন্তাভাবনা। ১৯১৪ সালে মিনট্রন (Ludger Mintron) নামে এক জার্মান খনি সার্ভেয়ার আবিষ্কার করেন প্রতিসরণ পদ্ধতিতে ভূকম্পজনিত মাপজোখ পদ্ধতি (seismic survey by refraction method)এই পদ্ধতিতে মাটিতে একটি ৪০-৫০ ফুট গভীর গর্তের মধ্যে ডিনামাইট দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কৃত্রিম ভূকম্পন ঘটানো হয়। সেই শব্দ ভূতলের প্রতি স্তরে (stratum) এগিয়ে চলে ও প্রতিটি স্তরের মাধ্যম-ঘনত্ব (refractive index) অনুযারী প্রতিসরিত হতে থাকে। কিছু দূরে একটি গ্রাহক যন্ত্রে এই কম্পনকে রেকর্ড করে তার বিশ্লেষণ করলেই, ভূগর্ভস্থ স্তরগুলির প্রকার, গভীরতা, স্থুলতা (thickness) ইত্যাদি বিশদ জানা যায়। এভাবে বিভিন্ন স্টেশনে সংকলিত data গুলিকে নিয়ে সমগ্র অঞ্চলের ম্যাপিং করা যায়। এর থেকে trap সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণা হয়, কোথায় ড্রিল করলে কোন গভীরতায় তেল পাওয়া যেতে পারে তার নির্ধারণ করা যায়।


চিত্র ৩ - বিভিন্ন ধরণের তৈলাধার ট্র্যাপ

তবে শব্দের প্রতিসরণের এই পদ্ধতিতে শিলার স্তরীকরণ (stratigraphy) সম্বন্ধে খুব ভাল ছবি পাওয়া যাচ্ছিল না। ইতিমধ্যে কানাডার রেজিন্যাল্ড ফেসেন্ডেন (Reginald Fessenden) নামে এক ভূ-বিজ্ঞানী প্রতিফলন বা reflection পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২১ সালে তার সফল পরীক্ষা হয়। এই পদ্ধতিতে একইভাবে বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গগুলিকে পাথরের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রতিফলিত হতে দেওয়া হয় আর অন্য একটি স্টেশনে সেগুলিকে গ্রহণ ও রেকর্ড করা হয়। এই পদ্ধতিতে পাওয়া ম্যাপের বিবরণ আগের পদ্ধতি থেকে অনেক স্পষ্টভাবে বোঝা যেতে লাগল। ভারতীয় সংস্থা Geological Survey of India এই পদ্ধতিতে সারা ভারতের ভূগর্ভের মানচিত্র করে ফেলেছিল, পরে Oil and Natural Gas Commission-এর seismic বিভাগ আরও বিশদভাবে এই কাজ চালিয়ে যান।


চিত্র ৪ - একটি সিস্মিক সার্ভের স্টেশন

তেলের অন্বেষণ এখানেই থেমে থাকেনি। কম্প্যুটার পদ্ধতির উন্নতির পর থেকেই কোটি-কোটি সংখ্যা ও তথ্য নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়েছে, আবিষ্কৃত হয়েছে seismic survey-3-D বা ত্রিমাত্রিক পদ্ধতি ও virtual reality technology ব্যবহার করে তার বিশ্লেষণ (analysis) আর মূল্যায়ন (interpretation)তাছাড়া এখন ডিনামাইট দিয়ে বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ইলেকট্রনিক কায়দায় ultrasonic তরঙ্গ সৃষ্টি করেও ভূগর্ভস্থ সমস্ত তথ্য জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকার এক বিজ্ঞানী পৃথিবীর ভেতরে উৎপন্ন প্রাকৃতিক কম্পন (natural vibration) কে ভূতলে রেকর্ড করেও সার্ভের একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করে পেট্রোলিয়াম দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। সত্যি তো, ভেবে দেখ, কোথায় কূপ খুঁড়লে তেল পাওয়ার সম্ভাবনা ১০০%, এটা জানলেই ঝামেলা ও খরচ কত কমে যায়!

তৈলখনি

তেলের ট্র্যাপ খোঁজার যত ভাল পদ্ধতিই থাক না কেন, আমরা তার নাগাল না পাওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারি না। এছাড়া মাটির বুক থেকে তেল উদ্ধার করতে গেলে যে রাস্তা তৈরি করতে হয় তাকেই আমরা বলি তৈলখনি বা কূপ (oil well)


একটি ড্রিলিং রিগের যন্ত্রাদিঃ
1.    Mud tank
2.    Shale shakers (মাড থেকে পাথর-বালি ছাঁকার যন্তর)
3.    Suction line (mud pump) (পাম্পে মাডের প্রবেশ পথ)
4.    Mud pump (মাড পাম্প)
5.    Motor or power source (মোটর বা রিগের চালিকা-শক্তির উৎস)
6.    Vibrating hose (মাড-বাহক নমনীয় পাইপ)
7.    Draw-works (ড্রিল-পাইপ ইত্যাদি তোলা-নামানোর যন্ত্র)
8.    Standpipe (মধ্যবর্তী মাড-পাইপিং)
9.    Kelly hose
10.  Goose-neck (vibrating hose swivel কে যোগ করে যে বাঁকানো পাইপ)
11.  Traveling block (চলমান ঘিরনী বা pulley block)
12.  Drill line (ড্রিলিং যন্ত্র তোলা-নামানোর তারের দড়ি)
13.  Crown block (স্থির ঘিরনী সমূহ)
14.  Derrick (সমস্ত ওজন-ধারক লৌহ-নির্মিত অবয়ব)
15.  Racking board or monkey board (ডেরিকে পাইপ বেঁধে রাখার স্থান)
16.  Stand (of drill pipe) (একাধিক ড্রিল পাইপ যেগুলি একত্রে ডেরিকে বেঁধে রাখা যায়)
17.  Setback (floor) (রিগ ফ্লোরে স্ট্যান্ড রাখার স্থান)
18.  Swivel (বা top drive) (স্থির থেকে ঘুরন্ত পাইপে মাড অন্তরণের যন্ত্র)
19.  Kelly drive (ড্রিল পাইপ ও বিটকে ঘুর্ণন দেওয়ার square বা hexagonal পাইপ)
20.  Rotary table (পাইপকে ঘুর্ণন দেওয়ার যন্তর)
21.  Drill floor (রিগের যে অংশ থেকে ড্রিলিং-এর কাজ করা হয়)
22.  Bell nipple (পাইপের অংশ যা দিয়ে ড্রিলিং মাড ফেরত আসে)
23.  Blowout preventer (BOP) annular type (গোলাকার ব্লো-আউট রোধক)
24.  Blowout preventer (BOP) pipe ram & blind ram (র‍্যাম-জাতীয় ব্লো-আউট রোধক)
25.  Drill string (পাইপের সমূহ যা দিয়ে ড্রিল করা হয়)
26.  Drill bit (মুখ্য কাটার যন্তর)
27.  Casing head or well-head
28.  Flow line (বেল নিপল থেকে শেল শেকারে মাড ফিরে আসার পথ)

চিত্র ৫ - ড্রিলিং রিগ, প্রধান যন্ত্রাংশগুলি

এই কূপ খোড়ার কাজটিকে বলা হয় ড্রিলিং (oil-well drilling)শাবল-কোদালের যুগ আমরা ডিগবয়ে ছেড়ে এসেছি, এখন অতি আধুনিক পদ্ধতিতে মাটিতে বিভিন্ন গভীরতার গর্ত খোঁড়া হয়, যার এক-একটি ২০০ মিটার থেকে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে। এই ড্রিল করার যন্ত্রকে বলা হয় ড্রিলিং রিগ (drilling rig), যা মূলতঃ একটি পিরামিড আকারের স্ট্রাক্‌চার, যাতে দুই প্রস্থ differential pulley block দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় ড্রিল করার পাইপগুচ্ছকে। এই পাইপ-সমূহের নীচে থাকে খোঁড়ার যন্ত্র বিট (drill bit) যাকে ঘোরানো হয় উপর থেকে রোটারি (rotary table) বা টপ-ড্রাইভের (top drive) মাধ্যমে। পুরো সিস্টেমটিকে উপর-নীচ করার জন্য তারের দড়ি দিয়ে চালনা করা হয় একটি draw works-এর মাধ্যমে। ড্রিল করা মাটি-পাথরের গুঁড়ো উপরে এনে ছেঁকে ফেলার জন্যে পাম্প করা হয় একধরনের কাদা-মাটি জাতীয় রাসায়নিক মিশ্রণ, যার নাম drilling fluid বা mud ড্রিলিং নিজেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উন্নতমানের বিদ্যা, যার সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। তবু জানাই যে এই ড্রিলিং রিগ, যার ক্ষমতা ও প্রকার ধার্য হয় তৈলকূপের গভীরতা, মাটির নীচের তেল-গ্যাস ইত্যাদির তরল-চাপ (formation pressure), বা কূপের প্রকৃতি - যেমন উল্লম্ব (vertical) না দৈশিক (directional),  কূপ-শীর্ষ (well head) ইত্যাদির উপর। যেখানে গর্ত করতে হবে স্থানটি চিহ্নিত করে প্রয়োজন অনুযায়ী সবচেয়ে বড় আকারের বিট দিয়ে প্রথমে খনন শুরু করা হয় ও ভূগর্ভস্থ জল-ধারক আর অপেক্ষাকৃত নরম শিলাস্তরকে পার করে ধাতুর পাইপ দিয়ে (casing pipe) তাকে খনন করা গর্তের দেয়াল থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ ২৮ ইঞ্চি বিট দিয়ে ড্রিলিং করে ground water bearing top layer কে ২৪ ইঞ্চি কেসিং দিয়ে ঢেকে সিমেন্ট করে দেওয়া হয়, যাতে পরবর্তী ড্রিলিং-এর কাজ সহজ হয় আর ভূগর্ভস্থ পানীয় জল তেল ও mud chemical থেকে দূষিত না হয়। এভাবে পরের ক্ষেপে আরেকটু ছোট ব্যাসের গর্ত আরো গভীরে নিয়ে যাওয়া হয় ও একটা সময়ের শেষে তাকেও কেস করে সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে ফেলা হয়। প্রতি ধাপের শেষে একটা করে কূপ-শীর্ষ বা well head বসিয়ে এগিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে ক্রমহ্রস্বমান (telescopic) কয়েকটি কেসিং বসিয়ে কূপটি শেষ করা হয়। ড্রিলিঙের সময়েই ইলেক্ট্রো-লগিং পদ্ধতিতে চিহ্নিত করে দেওয়া হয় তেল ও গ্যাসের উৎপাদক অংশটিকে, তারপর perforating gun দিয়ে সেখানে প্রয়োজনীয় ছিদ্র করা হয়। এইবার শেষ কেসিং পাইপের ভিতর তার থেকেও ছোট সাইজের পাইপ, যাকে বলা হয় টিউবিং বা কমপ্লিশন স্ট্রিং (tubing or completion string) নাবিয়ে তার উপরে উৎপাদনের জন্যে বিশেষ ভালভের সেট – যাকে তেল-উদ্যোগের ভাষায় বলে ক্রিসমাস ট্রী (x-mass tree) বসিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়।


চিত্র ৬- দুই রকমের ত্রিশঙ্কু বিট, কার্বাইড ইন্সার্ট ও মিল্‌ড্‌ টীথ বিট

এই ড্রিলিঙের কাজ পেট্রোলিয়াম উদ্যোগের সবচেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ, কঠিন ও বিপজ্জনক। ড্রিলিং-এর সময় ভূগর্ভস্থ চাপকে ঠিকমত সামলাতে না পারলে ঘটে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা, শিলাস্তরের থেকে গ্যাস আর তেল বেপরোয়া বেরোতে থাকে, সাথে ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড। একে বলে ব্লো-আউট (blow-out)এছাড়া মাটির নীচে থাকে হাইড্রোজেন সালফাইডের মত বিষাক্ত খুনী গ্যাস, সে আরও বেশি মারাত্মক।

কালো সোনা

তৈলকূপ খুঁড়ে ক্রিসমাস ট্রী সাজিয়ে রেখে দেওয়া হল, এবার তেল উৎপাদনের পালা। এখানেও আছে হিসেব। তেল নিষ্কাশনের লাইনে সঠিক ব্যাক প্রেসার রাখার জন্যে ঠিক মাপের ‘চোক’ (choke) না ব্যবহার করলে বিপদ, গ্যাস-অয়েলের অনুপাত কমবেশি হয়ে হয় গ্যাসের মাত্রা তেলের তুলনায় (gas-oil ratio) অহেতুক বেড়ে ও রিজার্ভয়েরের স্বাভাবিক চাপ দ্রুত কমে আপনা-আপনি উৎপাদন হওয়া বন্ধ হয়ে যায় বা তার উল্টোটা হলে প্রয়োজনের তুলনায় তেলের উৎপাদন কমে যায়। একটা অঞ্চলে সবকটা কূপের উৎপাদন সংগৃহীত করে তার থেকে জল ও গ্যাস আলাদা করার পদ্ধতির নাম group gathering and crude stabilization, এগুলো স্থানীয় পাইপলাইনের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের মধ্যেই সেরে ফেলা হয়। এর থেকে যে গ্যাস পাওয়া যায় তাদেরকে বলে মুক্ত গ্যাস (free gas) ও যুক্ত গ্যাস (associated gas)গুণগত ভাবে দুই ধরণের গ্যাস প্রায় একই ও একে দ্রবীভূত বা চাপ-যুক্ত করে LNG (liquefied natural gas)CNG (compressed natural gas) নামে ঔদ্যোগিক ও পরিবহন ক্ষেত্রে বিক্রী করা হয়। এর পর যে তরল পদার্থটি থাকে তাকে বলা হয় stabilized crude oil. এই ক্রুড বা পেট্রোলিয়াম তেলকে এরপর ট্যাঙ্কার বা পাইপলাইনের মাধ্যমে তৈলশোধন কারখানাগুলিতে (petroleum refinery) পাঠানো হয় যেখানে আংশিক অন্তর্ধুম পাতন (fractional distillation) পদ্ধতিতে প্রথমে গ্যাস (মূলতঃ C1-C4, তবে শুদ্ধতা বেশি), যাকে পেট্রোলিয়াম গ্যাস বলা হয় ও তরল করে সিলিন্ডারবন্দী করে LPG নামে ইন্ধন হিসেবে ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হয়।


চিত্র ৭- তৈল-শোধনের আংশিক পাতন পদ্ধতি।

ক্রুডকে গ্যাসমুক্ত করার পর তার আংশিক পাতন হয়, তা আগেই বলেছি। এর থেকে বিভিন্ন তাপক্রমে একে একে বেরিয়ে আসে কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল, জ্বালানী তেল ইত্যাদি ও অবশিষ্ট অংশে থাকে ভারী তেল ও আলকাতরা (চিত্র ৭).

তৈলকূপের সংস্কার

মনে কর একটি তেলের কূপ উৎপাদন করতে করতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল বা উৎপন্ন তেলে জলের পরিমাণ বেড়ে গেল। সেটা ঐ অংশের তেল নিঃশেষিত হবার ফলেও হতে পারে আবার উৎপাদনের পথে বালি বা অন্য কোনও বাধা চলে এলেও হতে পারে। আবার হয়ত উৎপাদন ঠিক আছে, দেখা গেল well head বা x-mass tree-র কোন অংশ কাজ করছে না। এসব ক্ষেত্রেই কূপটির প্রয়োজনীয় মেরামতি করতে হয়, এই কাজের নাম হল ওয়ার্ক-ওভার (work over)যেমন রোগ অনুযায়ী একজন ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা করে থাকে, সেভাবেই লক্ষণানুযায়ী আলাদা আলাদা ধরণের ওয়ার্ক-ওভার কর্মসূচী নির্ধারণ করে সেভাবে এগোতে হয়।

পরিশেষে বলি, এই প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী হয়েছিল জান? খনিজ তেল সম্বন্ধীয় পারিভাষিক শব্দাবলির চয়নচীন-রাশিয়া-কাজাখস্তান প্রভৃতি দেশে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, একবর্ণ ইংরেজী না জেনেও তারা সব বিষয়ে উন্নতি করে চলেছে। জানি ভারতে তা সম্ভব নয়, আর বাংলা শব্দের সংগ্রহও তেমন নেইতাই সব শব্দের বাংলা দিতে পারিনি, আর প্রায় প্রতিটি technical term-এর ইংরেজি অর্থ দিয়েছি। পেট্রোলিয়াম উৎপাদন ভারতে এখনও খুব চালু উদ্যোগ নয়, তবু এ বিষয়ে যদি তোমাদের মনে সামান্য আগ্রহও তৈরি করতে পারি, তাহলেই বুঝব আমার শ্রম সার্থক। যদি এ সম্বন্ধে আরো কিছু জিজ্ঞাস্য থাকে, ‘ম্যাজিক ল্যাম্পের’ মতামত বিভাগে প্রশ্ন রেখো, নিশ্চয় উত্তর পাবে।
______

8 comments:

  1. একটু ছাপার ভুল হয়ে গেছে। 'তৈলাধার পাত্র' অধ্যায়ে লেখা হয়েছে diagenesis (500C), catagenesis (50- 2000C) আর metagenesis (200-2500C)। এখানে 500C হবে 50 deg C, 2000C হবে 200 deg C আর 2500C হবে 250 deg C। Fontএর গোলমালে ডিগ্রীর চিহ্ন নীচে নেবে 0 হয়ে গেছে ভুলক্রমে। (লেখক)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক করে দেওয়া হল।

      Delete
  2. খুব সুন্দর।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, রসিকবাবু।

      Delete
  3. খুব সুন্দর ও মনোগ্রাহী লেখা

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, অজানা বন্ধু।

      Delete
  4. ভালো উদ্যগ...চলনটা আর একটু সহজ হলে আরও ভালো হত

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটু দোটানায় ছিলাম। পেট্রো-জগতে ব্যবহৃত শব্দাবলীর সহজ বাংলা খোঁজা খুব কষ্টসাধ্য। তবে স্বীকার করছি আজকের বাচ্চাদের কথা ভেবে আরেকটু সহজ করা যেত, দেখা যাক ভবিষ্যতে পারি কিনা। পরামর্শের জন্যে অজস্র ধন্যবাদ।

      Delete