বইঃ কিশোর কল্পবিজ্ঞান সমগ্র
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশকঃ পত্র ভারতী, আই এস বি এন
নম্বরঃ 9788183741576, প্রথম প্রকাশ – জানুয়ারি ২০০৫
আলোচনাঃ সৌগত সেনগুপ্ত
২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে পত্র ভারতী থেকে
প্রকাশিত বইটার সম্পর্কে বলতে গেলে যেটা বলতে হয় সেটা হল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মত লেখকের
সমস্ত কিশোরপাঠ্য কল্পবিজ্ঞান কাহিনিকে দুই মলাটের মধ্যে আনার যে কঠিন প্রচেষ্টা
সেটা সার্থক ভাবে করেছেন বইটির প্রকাশক পত্রভারতীর শ্রী ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজ যতটা প্রচারিত ওঁর অন্য কিশোর উপন্যাস, গল্প বা
কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য তেমন প্রচারিত নয়। আমরা
অনেকেই জানিনা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম কিশোর কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস ‘তিন নম্বর
চোখ’ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হত আনন্দবাজার পত্রিকার সোমবারের সাপ্তাহিক
আনন্দমেলার পৃষ্ঠায় ১৯৭৩ সালে। যে উপন্যাস দিয়ে শুরু হয়েছে এই সংকলন।
এছাড়া ভবিষ্যৎ পৃথিবীর
মহাকাশচারীদের নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘আকাশ দস্যু’ সহ আরও চারটি উপন্যাস, যথাক্রমে ‘অন্ধকারে
সবুজ আলো’, ‘মহাকালের লিখন’ এবং ‘ইচ্ছাশক্তি’ সঙ্কলিত হয়েছে এই বইয়ের প্রথম অংশে।
বইটির পরের অংশে আছে ৩৭টি গল্প। এর মধ্যে প্রথমেই আছে বিশ্বমামা সিরিজ। বিশ্বমামা
হলেন একজন পাগলাটে বৈজ্ঞানিক। তিনি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ান। তাঁকে নিয়ে লেখা
গল্পগুলো প্রকাশিত হত মূলত কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান পত্রিকায়। বিশ্বমামা সিরিজের মোট ১৪টি
গল্প আছে এই বইতে।
রণজয় বিশ্বাস এই বাংলারই একটা
গ্রামের ছেলে। ভিন গ্রহের প্রাণীদের মহাকাশযান থেকে খসে পড়া একটা অংশ তার গায়ে লেগে
সে হয়ে যায় আট ফুটের থেকেও বেশি লম্বা আর গায়ের রঙ হয়ে যায় নীল। তার গলার আওয়াজ
শুনলে মনে হয় মেঘ ডাকছে। গ্রামের মানুষ তাকে দেখলে ভয় পায়। পরেশ
মাইতিও রণজয়ের মত গ্রামের ছেলে। কিন্তু তার চেহারা রণজয়ের ঠিক উলটো। চার ফুটের
চেয়েও বেঁটে বলে তাঁকে গ্রামের ছেলেরা সবসময় অত্যাচার করত। জঙ্গলে দুজনের দেখা হয়
আর তারপর শুরু হয় একের পর এক কান্ড। শুকতারা পত্রিকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একের পর
এক গল্প লিখেছেন, নীল মানুষকে নিয়ে। তার মধ্যে ১৩টা গল্প সঙ্কলিত হয়েছে এই বইতে।
এছাড়া বাকি গল্পগুলির মধ্যে
কল্পবিজ্ঞান এসেছে বিভিন্নভাবে। এগুলি সবই আনন্দমেলা, দেবসাহিত্য কুটিরের
পূজাবার্ষিকী, কিশোর ভারতী, শুকতারা সহ সেই সময়ের বিভিন্ন কিশোর পাঠ্য পত্রিকায়
প্রকাশিত। এর মধ্যে কাকাবাবুর গল্পও একখানি সংযুক্ত হয়েছে
যার নাম সাধুবাবার হাত।
লেখক নিজে বইয়ের শুরুতে
লিখেছেন, পিতার আদেশে যে দু’বছর তাঁকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয়েছিল, তার গুরুত্ব তাঁর
কাছে অনেক। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁর কল্পবিজ্ঞান কাহিনি লেখা। সে কাহিনির
কিছুটা বিজ্ঞান অনেকটাই কল্পনা। কাকাবাবুর স্রষ্টার অন্য ধরনের লেখাগুলো নিয়ে এই
সংকলন এজন্যেই সংগ্রহযোগ্য। বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় আর অলঙ্করণশিল্পী
সুদীপ্ত মন্ডল। আমরা জানি সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের আঁকা প্রচ্ছদে কাকাবাবু অমর হয়ে
আছেন। এই বইয়ের প্রচ্ছদও দৃষ্টিনন্দন। সুদীপ্ত মন্ডলের অঙ্গসজ্জাও যথাযথ। বইটির
শেষে কাহিনীগুলোর প্রকাশকাল সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া আছে, যা সংকলনটিকে
সম্পূর্নতা দিয়েছে। ছাপার ভুল চোখে পড়েই না, বইয়ের পাতা ও বাঁধাই যথাযত। বর্তমান
গ্রন্থ তালিকা অনুযায়ী মুদ্রিত মূল্য ৩০০ টাকা।
শেষে বইটির কতগুলো খামতি চোখে
পড়েছে সেদিকে একটু আলোকপাত করি। উপন্যাস অংশে প্রকাশিত ‘মহাকালের লিখন’ আর ‘ইচ্ছাশক্তি’
কাহিনির মাপ উপন্যাসের থেকে অনেক ছোট। এগুলিও গল্পের মধ্যেই ধরা যেত। এছাড়া ‘তিন
নম্বর চোখ’ ছাড়াও আর একটি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস ‘ডুংগা’ এই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত
হয়নি। ‘তিন নম্বর চোখ’-এর পরিপূরক উপন্যাস হল ‘ডুংগা’, যেটি আনন্দমেলা পত্রিকায়
প্রকাশিত হয়েছিল। আরেকটি উপন্যাস ‘কালো পর্দার ওদিকে’-ও এই সংকলনের জন্য উপযুক্ত।
কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত ‘জলচুরি’ নামে একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্পও
বাদ গেছে। নীল মানুষ সিরিজের কয়েকটি গল্প যেমন নীল মানুষের দেশে, ইচ্ছা গ্রহ আর
পৃথিবীতে নীল মানুষ এই বইতে জায়গা পায়নি। অন্যান্য গল্পগুলির মধ্যে দেওয়ালের সেই
ছবি, নতুন পুকুরের জাগ্রত দৈত্য, অদৃশ্য পাখি, সেই অদ্ভুত লোকটা আর লাল জঙ্গল
কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মধ্যে পড়ে না। দেওয়ালের সেই ছবি সামাজিক গল্প, নতুন পুকুরের
জাগ্রত দৈত্য অলৌকিক গল্প, অদৃশ্য পাখি, সেই অদ্ভুত লোকটা, লাল জঙ্গল মূলত
ফ্যান্টাসি আর সাধুবাবার হাত কুসংস্কার বিরোধী বিজ্ঞান নির্ভর গল্প বলা যায়।
মহাকালের লিখনও অনেকটা এই ধরনেরই লেখা। যেহেতু এই সংকলন ২০০৫-এ প্রথম প্রকাশিত
হয়েছিল তাই আশা করা যায় ২০০৫ পরবর্তীতে লেখকের প্রয়াণ পর্যন্ত বাকী যে সমস্ত
কল্পবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা আছে পরবর্তী সংস্করণে সেসব যুক্ত হয়ে বইটির পরিবর্ধিত
সংস্করণ প্রকাশ পাবে।
_______
একটি মূল্যবান কিন্তু বেশিরভাগ সময় উপেক্ষিত বইয়ের বেশ ভালো পর্যালোচনার জন্য ধন্যবাদ সৌগত।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ ঋজুদা
DeleteKhub bhalo laglo.beshirbhag galpo porechi jodio boita hate Pele kinei felbo.lekhata besh bhalo hoeche saugatda
ReplyDeleteThank you Sudeep
Deleteমহাকালের লিখন ও কাকাবাবু সিরিজের গল্প, উল্লেখ হয় নি। সত্যি বইটা সবার কেনা উচিত,এটুকু বলতে পারি।
ReplyDeleteএহে মিসটেক মিসটেক পরের বার খেয়াল রাখব অর্ণবদা
Deleteআপনার লেখা পড়েই কিনা জানিনা... বইটার নতুন সংস্করণে তিন নম্বর চোখ বাদ দিয়ে শুধু ডুংগাকে রাখা হয়েছে! আমার পছন্দ হয়নি এই বই! সম্পাদনা আরো ভাল হওয়া উচিত ছিল! তিন নম্বর চোখ ও ডুংগাকে একত্রে রাখা, কালো পর্দার ওদিকের মত উপন্যাস, লাল জঙ্গলের মত গল্প এছাড়া নীল মানুষের একাধিক গল্প এই বইতে অনুপস্থিত।
ReplyDelete