বিজ্ঞান:: ভুল হয়ে গেলো ফুল - দীপা দাস


ভুল হয়ে গেলো ফুল
দীপা দাস

আমাদের চারদিকের এই যে জগৎ, এই যে সভ্যতা, যার মধ্যে আমাদের স্বচ্ছন্দ চলাফেরা, এর অনেক অংশই বিজ্ঞানের অবদানএদের আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা প্রাণপণ পরিশ্রম করেনশারীরিক ও মানসিক দিক থেকে নিজেকে নিংড়ে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন তাদের আবিষ্কারের ফসলএকটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেছনে থাকে এক বিরাট কর্মকান্ডকিন্তু মাঝে মাঝে এমন অনেক ধারণা (idea) এবং বস্তু আবিষ্কার হয় যার পেছনে বিজ্ঞানীদের কোনো সচেতন চিন্তাভাবনাই ছিল না কোন একটি বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্তবশত বা দুর্ঘটনাবশত এমনকি খামখেয়ালিপনায় আবিষ্কার হয়েছে অনেক তথ্য, অনেক পদার্থ, যা শুনে অবাক হয়ে যেতে হয়। এই সব আবিষ্কার পরবর্তীকালে বিজ্ঞান তথা সভ্যতার উন্নয়নে এনেছে বিপ্লবের জোয়ার এরকম কয়েকটা গল্প আজ বলি শোনো

জৈব রসায়নের সূচনা

ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে মানুষ মনে করত ‘জীবন’ সম্পর্কিত বিজ্ঞান পদার্থ-রসায়নের নিয়ম মেনে চলে না। এও মনে করা হ’ত যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীর থেকে পাওয়া রাসায়নিক বস্তুগুলো (প্রোটিন, শর্করা জাতীয় পদার্থ) পরীক্ষাগারে তৈরি করা সম্ভব না। এসব জিনিস জীবদেহে বিশেষ অজানা এক অলৌকিক শক্তির প্রভাবে উৎপন্ন হয়। এই ধারণা ‘প্রাণশক্তি মতবাদ’ বা Vita Theory নামে পরিচিত ছিল। এই তত্ত্বের উপর সবারই প্রচুর আস্থা ছিল এমনকি শিক্ষিত মানুষজনও অজৈব কোনও বস্তুকে ওষুধ হিসেবে নিতে চাইতেন না
১৭৭৩ সাল ফরাসী বিজ্ঞানী হিলারি রাউল মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণীর মূত্র থেকে ইউরিয়া তৈরি করলেন ইউরিয়ার বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে গবেষণা হতে লাগল
১৮২৮ সাল। ফ্রেডরিক ভোলার ছিলেন জার্মানির বার্লিন কারিগরি স্কুলের বিজ্ঞানী যিনি অ্যালুমিনিয়াম আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। একদিন তিনি অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ও সিলভার সায়ানেটের মিশ্রণ থেকে অ্যামোনিয়াম সায়ানেট তৈরির চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর উৎপাদিত দ্রব্য পরীক্ষা করে দেখলেন যে এটি অ্যামোনিয়াম সায়ানেট নয়। বরং এই পদার্থ আর হিলারি রাউলের উৎপাদিত ইউরিয়ার ধর্ম সম্পূর্ণ এক। এ কী করে সম্ভব! ইউরিয়া তো একটি জৈব যৌগ। যে যৌগ স্বর্গীয় অলৌকিক শক্তির প্রভাবে প্রাণীদেহে উৎপন্ন হয়, তা কী করে পরীক্ষাগারে তৈরি হয়! সে যাই হোক, ভোলারকে সত্য স্বীকার করে নিতে হল যে জৈব যৌগ পরীক্ষাগারে তৈরি করা সম্ভব।
তিনি এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তে আসেন যা তিনি বিজ্ঞানী বার্জেলিয়াসকে লেখা চিঠিতে তুলে ধরেন, ‘আপনাকে জানাতে চাই যে আমি কোনো মানুষ বা কুকুরের কিডনি ছাড়াই ইউরিয়া তৈরি করতে পারি
আসলে হয়েছিল কী, ভোলার অ্যামোনিয়াম সায়ানেট ঠিকই তৈরি করেছিলেন, কিন্তু এটি ছিল একটি অস্থায়ী পদার্থ যা সহজেই পুনর্বিন্যাস বিক্রিয়ার মাধ্যমে অধিকতর স্থায়ী ইউরিয়া উৎপন্ন করে। আর এভাবে ‘প্রাণশক্তি মতবাদ’ ভূলুণ্ঠিত হল, এবং শুরু হল রসায়ন বিজ্ঞানের নতুন একটি ক্ষেত্র – জৈবরসায়ন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভোলারের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে ভোলার খুব একটা খুশি ছিলেন না, কারণ তাঁর কাছে ‘প্রাণশক্তি মতবাদ’-কে খুব সুন্দর ধারণা বলে মনে হত। কিন্তু তাঁর আবিষ্কার এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে। তিনি বার্জেলিয়াসকে লেখেন, ‘বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হচ্ছে, একটা কুৎসিত ঘটনার দ্বারা একটা সুন্দর ধারণাকে হত্যা করা

রন্টজেন-রশ্মি বা এক্স-রে

১৮৯৫ সাল। ভুর্জবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগার। জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী উইলহেল্‌ম রন্টজেন ক্যাথোড রশ্মির বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করতে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ তিনি বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইডের পর্দায় একটি নতুন ধরনের আভা দেখতে পেলেন। তিনি দেখলেন, যে বিকিরণ বেরুচ্ছে তা অন্ধকার ঘরে থাকা কাগজ, কলম, কাঠ সব ভেদ করে যেতে পারে। তিনি রশ্মিটা দিয়ে তাঁর স্ত্রীর হাত পরীক্ষা করলেন। চমকে উঠলেন মহিলা বললেন, ‘আমি যেন নিজের মৃত্যু দেখতে পেলাম’ দেখা গেল পূর্ণ হাতের প্রতিবিম্ব সৃষ্টি না হয়ে হাতের কঙ্কালের প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়েছে ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর।
বিজ্ঞানী বুঝতে পারলেন রশ্মিটি হাতের মাংস ভেদ করলেও হাড় ভেদ করতে পারে নাতাই হাড়ের প্রতিচ্ছবি উৎপন্ন হয়েছে ফটোগ্রাফিক পর্দার উপর। রন্টজেন বুঝতে পারলেন নতুন ধরনের কোনও রশ্মি আবিষ্কার হয়েছে। তখনও পর্যন্ত এ রশ্মি সম্পর্কে প্রায় সবই অজানা ছিল বলে অজানা এই রশ্মির নাম রাখা হলো এক্স রশ্মি। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে এখন সারা পৃথিবী জুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রশ্মির ব্যাপক ব্যবহার

তেজষ্ক্রিয়তা

আগেই বলেছি ১৮৯৫ সালে আবিষ্কৃত হয় উইলহেল্ম রন্টজেনের এক্স রশ্মি। কিছু জিনিসের উপর আলো পড়লে দীপ্তি ছড়ায়, একে ফ্লোরেসেন্স বলা হয় হেনরি বেকেরেল ফ্লোরেসেন্স ও এক্স রশ্মিতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। বেকেরেল মনে করেছিলেন এক্স রশ্মি ও ফ্লোরেসেন্স একসূত্রে গাঁথা। আর এটা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে তিনি একটা কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি চাইলেন ফ্লোরেসেন্স প্রদর্শন করে এরকম একটা বস্তুকে সূর্যালোকে রেখে তারপর এটি অন্য কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে কিনা পরীক্ষা করে দেখবেন যাতে তিনি বলতে পারেন যে, ফ্লোরেসেন্ট বস্তুগুলো মূলত এক্স রশ্মি বিকিরণ করে।
ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৮৯৬। দিনটিতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় বেকেরেলের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তিনি তাঁর পরীক্ষণীয় বস্তুসামগ্রী – পটাসিয়াম ইউরিনাইল সালফেট নামক ইউরেনিয়ামের যৌগ (ফ্লোরেসেন্ট প্রদর্শনকারী বস্তু), ফটোগ্রাফিক প্লেট আর তামার খণ্ড একটি কালো কাপড়ে মুড়িয়ে রেখে দেন, আর সূর্যের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
কিছুদিন পরে বেকেরেল যখন কাপড়ের মোড়ক খুললেন তখন যা দেখলেন তার জন্য বেকেরেল প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি দেখলেন ফটোগ্রাফিক প্লেটে তামার বস্তুটির প্রতিবিম্ব। এ কি করে সম্ভব? তিনি তো ইউরেনিয়ামের যৌগটিকে সূর্যালোক স্পর্শ করাননি! এটি ছিল মূলত ভারী ধাতুর তেজষ্ক্রিয়তা প্রদর্শন।
এরপর তিনি এই পরীক্ষা তিনভাবে করলেন – একটি ইউরেনিয়াম যৌগ ফটোগ্রাফিক প্লেটে রাখেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টিতে ইউরেনিয়াম যৌগ ও ফটোগ্রাফিক প্লেটের মাঝখানে যথাক্রমে একটি অ্যালুমিনিয়াম শীট ও একটি গ্লাস শীট রাখলেন। কয়েক ঘণ্টা অন্ধকারে রাখার পর দেখলেন তিনটি সেটেই ফটোগ্রাফিক প্লেট তেজষ্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে কালো হয়ে গেছে, তবে যে সেটে মাঝখানে কোনো শীট রাখা হয়নি সেটি সবচেয়ে বেশি কালো হয়েছে কারণ এতে তেজষ্ক্রিয় রশ্মির চলার পথে কোনো প্রতিবন্ধক ছিল না। এ বিষয়ে তিনি তাঁর ডায়েরিতে লেখেন – আমি এখন বিশ্বাস করি যে ইউরেনিয়াম লবণ অদৃশ্য বিকিরণ উৎপন্ন করতে পারে, এমনকি অন্ধকারে রেখে দিলেও
স্বতঃস্ফূর্ত তেজষ্ক্রিয়তার এই আবিষ্কার তাঁকে ১৯০৩ সালে নোবেল পুরষ্কার এনে দেয়।

কৃত্রিম রঙ

উইলিয়াম হেনরি পার্কিনের প্রিয় বিষয় ছিল রসায়ন। রসায়নের প্রতি মুগ্ধ হয়ে পার্কিন তেরো বছর বয়সেই সিটি অফ লন্ডন স্কুলে ভর্তি হন। চৌদ্দ বছর বয়সেই তাঁর যোগাযোগ হয় বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের সাথে এবং তাঁর ‘শনিবারের বিকালে’র লেকচারে যোগ দেয়া শুরু করেন। ১৮৫৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে পার্কিন রয়্যাল কলেজ অফ সায়ন্সে তাঁর পাঠ শেষে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে। একটি আবিষ্কারেই তিনি হয়ে যান বিখ্যাত এবং ধনী রসায়ন গবেষণার এক নতুন দিগন্তও খুলে যায় এই আবিষ্কার থেকে। ম্যালেরিয়া রোগে ব্যবহৃত কুইনাইন প্রস্তুতির একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা ছিল তার গবেষণার প্রথম বিষয় কুইনাইন একটি প্রাকৃতিক যৌগ যা গাছের বাকল থেকে সংগ্রহ করা হ’তএই কাজ খুব সময়সাপেক্ষ ছিল বলে ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার বেশ ব্যয়বহুল ছিল সেই কাজ করার সময় একদিন ‘অ্যানিলিন সালফেট’ নামক একটি যৌগকে জারিত করবেন বলে ঠিক করলেন। দুর্ভাগ্যবশত তিনি বুঝতে পারেননি যে তাঁর পরীক্ষণীয় যৌগে ‘টলুইডিন’ নামক একটি যৌগ মিশ্রিত ছিল। যখন বিক্রিয়া কাজ সমাপ্ত হ’ল তিনি তো অবাক! একটি অদ্ভুত ঘন বেগুনী পদার্থ পাত্রের তলায় তলানি হিসেবে পড়ে আছে। পার্কিন কিন্তু দমবার পাত্র নন। পরীক্ষা করে দেখলেন সেই রঙিন যৌগটি যার নাম তিনি দিলেন ‘মভিন’ এভাবেই দুর্ঘটনাবশত আবিষ্কৃত হয় প্রথম কৃত্রিম রঙ। আর বর্তমানে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার এতই ব্যাপক যে রঙ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর প্রায় ৫,০০,০০০ টন কৃত্রিম রঙ উৎপাদন করে থাকে

সুপার গ্লু

হ্যারি কুভার ছিলেন ‘ইস্টম্যান কোডাক’ কোম্পানির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হ্যারি কুভার ও তাঁর দল একটি প্লাস্টিক তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন বন্দুকের লক্ষ্য ঠিক করার যে নল থাকে তার মুখে ব্যবহার করার জন্য এই পলিমার কাজে লাগবে, এমনটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। সেই প্লাস্টিক তৈরি তো হ’ল না কিন্তু সেই বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়ে গেল এক ধরনের আঠা যার সাথে যা কিছুই স্পর্শ করানো হয় লেগে যায়। তার প্রকল্পের সাথে না মেলায় কুভার এ নিয়ে আর বেশি নাড়াচাড়া করেননি। এর অপার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তাও করেননি। কিন্তু সৌভাগ্যলক্ষ্মী কুভারের সহায় ১৯৫১ সালপ্রায় দশ বছর কেটে গেছে ডক্টর কুভার ‘ইস্টম্যান কোডাক’ এর অন্য একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নেন। এবার তিনি জেট বিমানের ছাউনি হিসাবে ব্যবহারযোগ্য একটি তাপ-নিরোধী পলিমার তৈরির চেষ্টা করছিলেন। এবারের চেষ্টায় যে পদার্থ উৎপন্ন হল তা নিয়ে তাঁর সহকর্মী ফ্রেড জয়নার দুটো আলোক প্রতিসারক প্রিজমকে জোড়া লাগাতে সক্ষম হন বুঝতে দেরি লাগল না তাঁরা এবারও একই পদার্থ আবিষ্কার করেছেন। এবার এই পদার্থের মাহাত্ম্য বুঝতে কুভারের দেরি হ’ল না আবিষ্কার হল সায়ানো-অ্যাক্রিলেট নামক এক প্রকার আঠা যাকে বর্তমানে আমরা সুপার গ্লু হিসেবে জানি।

স্যাকারিন

রসায়ন পরীক্ষাগারে যখনই যাবে কাজের শেষে ও শুরুতে হাত ধুয়ে নিতে ভুলো না কিন্তু। আর খবরদার! কোনও রাসায়নিক পদার্থের স্বাদ ভুলেও নেবার চেষ্টা করবে না একজন কিন্তু ভুলে গিয়েছিলেন ১৮৭৯ সাল। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইরা রেমসেনের পরীক্ষাগারে রাশিয়ান রসায়নবিদ ও গবেষক কন্সট্যান্টিন ফালবার্গ আলকাতরার একটি নতুন জাতক তৈরির চেষ্টায় ছিলেন। তিনি তেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেন না। কাজ শেষে হাত না ধুয়েই তিনি বাড়িতে গেলেন দুপুরের খাবার খেতে আর খেতে বসে লক্ষ করলেন পাঁউরুটিতে অস্বাভাবিক মিষ্টি স্বাদ। একটি সাক্ষাৎকারে ফালবার্গ বলেন তিনি ততক্ষণাৎ ল্যাবে ফিরে এসে সব পদার্থের স্বাদ নিতে শুরু করলেন যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি এই মিষ্টি স্বাদের উৎস খুঁজে না পেলেন। ভাগ্যবশত সেদিন তাঁর ল্যাবে কোনও বিষাক্ত পদার্থ ছিল না।
প্রকৃতপক্ষে ফালবার্গের ল্যাবে খনিজ আলকাতরা, সালফারের যৌগ, অ্যামোনিয়া এবং অন্যান্য রাসায়নিক বস্তুর বিক্রিয়ায় একধরনের মিষ্টি স্বাদের পদার্থ উৎপন্ন হয়েছিল তাঁর অজান্তেই। আর ফালবার্গের প্রস্তুত করা সেই পদার্থ ছিল বিশ্বের প্রথম কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষিত মিষ্টিকারক পদার্থ – স্যাকারিন। ভাগ্যিস ফালবার্গ সেদিন হাত ধুতে ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তিনি প্রথম কৃত্রিম মিষ্টিকারক পদার্থের ধারণা পান। তবে স্যাকারিনের ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হবার পর এর ব্যবহার বর্তমানে কমে গেছে।

অনেক গল্প শোনা হ’ল তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভাবছ – আমাদের সাথেও কি এমনটা হতে পারে! অবশ্যই হতে পারে তার আগে বিজ্ঞান জানো, বিজ্ঞান ভালবাসো
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল

1 comment:

  1. পড়লাম। খুব ভাল লাগল, এরকম একটা লেখার জন্যে বহুদিন ধরে উন্মুখ হয়ে ছিলাম। আমি ভোলারের পরীক্ষা সম্বন্ধে আরেকটু তথ্য যোগ করতে চাই। অজৈব পদ্ধতিতে ইউরিয়া সংযোজন করে তিনি বার্জেলিয়াসকেই কেন তা জানান? তার দুটি কারণ। প্রথমতঃ জৈব বা প্রাণশক্তি (vital force) সিদ্ধান্ত ছিল বার্জেলিয়াসের ১৮১০ সালে প্রচারিত মতবাদ এবং দ্বিতীয়তঃ ফ্রেডেরিক ভোলার ছিলেন বার্জেলিয়াসের প্রিয় শিষ্য ও তাঁর এই মতবাদে দৃঢ় বিশ্বাসী। তাই গুরুকে আঘাত দেবার জন্যে নয়, তাঁকে যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুল না বোঝে তার জন্যে এই চিঠি। আর একটা কথা। Isomerism জিনিষটারও আবিষ্কর্তা ছিলেন বার্জেলিয়াস। কিন্তু অ্যামোনিয়াম সায়ানেট আর ইউরিয়া (NH4CNO & NH2CONH2) যে পরস্পর isomer, তা ভোলার প্রথম দেখান, এবং accidentally!
    পরিশেষে, আমার অনুরোধ, পরের কোনও সংখ্যায় বার্জেলিয়াস, যাঁকে Father of Modern Chemistry বলা হয়, তাঁর জীবন ও গবেষণা সম্বন্ধে ছোটদের উপযোগী করে কিছু লেখ।

    ReplyDelete