প্রবন্ধ:: ভারতবোধঃ একটি অণুলেখন - ডঃ মীরা চক্রবর্তী


ভারতবোধঃ একটি অণুলেখন
ডঃ মীরা চক্রবর্তী

মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ

বৈদিক কবির মাঙ্গল্য বিধানের এই অভিব্যক্তিতে ভারতবোধ উপলব্ধি করা যায়। মাটিতে, জলে, হাওয়ায় যেখানে মধু, মানুষকে সেই জল মাটি নিশ্চয়ই শক্তি যোগাবে, তার কল্যাণের কাজে লাগবে। আর এজন্যই পৃথিবী, জল, অগ্নি (সূর্য/ আলো), আকাশ ও বায়ুর জন্য এই উপাসনা মন্ত্র। কারণ এই পঞ্চমহাভূত-কে ঘিরে আমাদের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবন। এই পঞ্চমহাভূতের কাছে আমরা বিশেষ ঋণী।

আজকের পরিস্থিতির উত্তরোত্তর অস্বাভাবিকতা হয়তো প্রশ্ন করতে পারে এই অভিব্যক্তির প্রাসঙ্গিকতা এখন এই সময়ে। কিন্তু তা একেবারেই নয়। আমাদের সার্বজনীন প্রচেষ্টায় সবরকম দূষণ ও অকল্যাণ যাতে দূর হয় সেই কথা মনে রেখে আমাদের ফিরে যেতে হবে ওই বিরল পঙক্তিতে। ওই বাণীকেই আদর্শ করে অগ্রসর হতে হবে - যদি জীব ধ্বংস নয় জীব-কল্যাণই ভারতবোধ হয়। যে কোনও দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে প্রত্যেকেই আমরা এক-একটি ক্ষুদ্র ওয়েসিস হতে পারি যদি দৃঢ় সংকল্প থাকে মনে। আত্মশক্তির বোধ ও বৃদ্ধি সবকালেই ধ্বনিত হয়েছে, একালেও তার অভাব হবে না।

উপনিষদ থেকে রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী, সি ভি রমন, রামানুজন ও আরও অনেকে - কোথাও একে ক্ষুণ্ণ হতে দেখি না। তবে কেন এই পঙ্গুত্ব?

মনে হয় এই সাময়িক পঙ্গুত্বের উত্তরাধিকারী আমরা নই। আমরা বারবার বাধা অতিক্রম করতে পেরেছি, এবারেও পারব। হয়ত সময় কিছুটা লাগবে, কিন্তু আত্মশক্তিতে বলীয়ান ভারত আবার সেই মহাশক্তিকে স্বাগত জানাবে। আজ তাই আমাদের প্রবাসী ও নির্বাসিত সত্ত্বাকে আমরা যেন মনে করিয়ে দিতে পারি কবির বাণী – “সংকটের কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মান

আমাদের পথ চলার অন্যতম পুরোধা হয়ে উঠুক উল্লিখিত সেই বৈদিক মন্ত্র।

মীরা চক্রবর্তী
(প্রফেসর, কালচারাল স্টাডিস)
জৈন বিশ্ববিদ্যালয়
_____

No comments:

Post a Comment