রাখাল রাজার
দরবারে
সমুদ্র বসু
‘গোঠের রাখাল বলে দে রে কোথায়
বৃন্দাবন
যেথা রাখাল রাজা গোপাল আমার
খেলে
অনুক্ষণ...’
- কাজী নজরুল
ইসলাম
তবে এই রাখাল রাজা
কিন্তু
বৃন্দাবনের
নয়।
পূর্ব
বর্ধমানের
কালনা
শহর
থেকে
আনুমানিক
১৫
কিলোমিটার
দূরে
বৈদ্যপুরের
কাছে
গোপালদাসপুর
গ্রামে
আছে
এই
রাখাল
রাজার
মন্দির।
শরতের
সকাল।
ভাদ্র
মাস। একদিন উইক এন্ডে
নতুন
গাড়ি
নিয়ে
বেরিয়ে
পড়লাম
এক
লং
ড্রাইভে।
গন্তব্য
রাখাল
রাজার
দরবার। রাখালদের রাজা? হ্যাঁ, ঠিকই
ধরেছেন - ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ।
ভারতবর্ষের
কৃষ্ণক্ষেত্রগুলি
মূলত
মথুরা-বৃন্দাবন-দ্বারকা
হলেও
পশ্চিমবঙ্গের
ভিতরেই
যে
তাঁর
এক
নির্জন
লীলাভূমি
রয়েছে
সে
খবর
হয়তো
অনেকেই
রাখেন
না।
আমি
গাড়িতে
গেলেও
ট্রেইন
রুটেও
যাওয়া
সম্ভব।
হাওড়া
থেকে
যেতে
হলে
হাওড়া-কাটোয়াগামী
যে
কোনো
ট্রেন
ধরে
নামতে
হবে
কালনা
স্টেশন।
কালনা
থেকে
যে সব
বাস
বৈঁচি
যাচ্ছে
সেই সব
বাসে
উঠে
টালার
মোড়ে
নামতে
হবে।
তারপর
গোপালদাসপুর
যাওয়ার
জন্য
অটো
ধরতে
হবে।
গোপালদাসপুরেই
পরিচিত
রাখাল
রাজার
মন্দির।
কালনা
থেকে
বৈদ্যপুরের
দূরত্ব
মাত্র
কুড়ি
কিলোমিটার।
অথবা
হাওড়া
বর্ধমান
লাইনে
বৈঁচি
স্টেশনে
নেমেও
একইভাবে
যাওয়া
যাবে।
যাই
হোক, ফিরে
আসি
আমার
সফরে।
শরতের
আকাশের
সাদা
পেঁজা
পেঁজা
মেঘ
আর
সাদা
কাশবনের
মধ্যে
দিয়ে
ছিল
আমার
যাত্রাপথ।
শহরের
কোলাহলের
বাইরে
যখন
বৈঁচি
হয়ে
গাড়ি
রাখাল রাজার
উদ্দেশে
ছুটছে
তখন
যেন
সত্যি
যাত্রাপথ
দেবতার
আবাসস্থলকে
সাজিয়ে
তুলছে।
বৈদ্যপুর
থেকে
দু’মাইল
দূরে
গোপালদাসপুর
গ্রাম।
গ্রামের
আগেকার
মেঠো
রাস্তা
এখন
পাকা
রাস্তা
হয়ে
গেছে।
গ্রামে
ঢোকার
মুখে
একটা
বিশাল
তোরণ
আছে।
সেই
তোরণে
খোদাই
করা
রাখাল
রাজার
মন্দির
কথাটি।
গ্রামের
পথ
ধরে
এগোলে
চারদিকে
শান্ত
নিরিবিলি
পরিবেশের
মধ্যে
রাখাল
রাজার
মন্দির। এক সময়ে
দ্বিপ্রহরের
খানিক
আগে
পৌঁছলাম
রাখাল
রাজার
মন্দিরে।
লাল রঙের এই রাখাল
রাজার
এই
মন্দিরটি
বহু প্রাচীন।
এই
মন্দিরের
বিশেষত্ব
হচ্ছে
যে
এখানে
রাখাল
রাজার
মূর্তির
পাশে
রাধা
বা
শ্রীকৃষ্ণ
দুই পাশে
গোপীনাথ
ও
রঘুনাথকে
নিয়ে বিরাজ করছেন।
বৈদ্যপুর
শহরটি
বহু
প্রাচীন
শহর।
প্রথম
মনসামঙ্গলে
আমরা
এই
শহরের
উল্লেখ
পাই।
শহরের
আনাচে
কানাচে
আছে
বহু
প্রাচীন
মন্দির
ও
অট্টালিকা।
মন্দিরগুলির
গায়ে
সুন্দর
টেরাকোটার
কাজ।
মন্দিরের
এক পাশে
রয়েছে
বিশাল
বটগাছ। চারদিকে সবুজ
গাছগাছালি
ও
মাঠ
যেন
রাখাল
রাজার
খেলার
প্রকৃষ্ট
জায়গা।
গর্ভমন্দিরের
সামনে
একটি
নাটমন্দির
আছে।
নাটমন্দিরটি
কয়েকটি
পিলারের
উপর
দাঁড়িয়ে।
নাটমন্দির
প্রাঙ্গণ
সুন্দর
টাইলস
দিয়ে
বাঁধানো।
প্রাঙ্গণে
কৃষ্ণের
ছোটোবেলাকার
নানা
ঘটনা -
যেমন
পুতনা
বধ, কালিয়দমন
ইত্যাদি
ছবিসহকারে
বর্ণিত
আছে।
গর্ভগৃহে
তিনটি
মূর্তি
বিরাজমান।
মাঝখানে
রয়েছেন
স্বয়ং
রাখাল রাজা।
আকাশ
নীল
গায়ের
রং।
বাম
হাতে
তিনি
নাড়ু
ধরে
রয়েছেন, ডান
হাতে
রয়েছে
পাচন।
অপূর্ব
সুন্দর
দুষ্টু-মিষ্টি
বালকের
মতোই
হাসি
হাসি
মুখ।
দেখেই
মন
ভরে
যাবে।
রাখাল
রাজার
মূর্তির
দু’পাশে
রয়েছে
দুটি
সাদা
গাভী।
রাখাল
রাজার
দু’পাশে
দুটি
অপেক্ষাকৃত
ছোটো
মূর্তি।
একটি
রঘুনাথের,
অপরটি
গোপীনাথের।
রঘুনাথের
মূর্তিটি
সবুজ
রঙের।
গোপীনাথের
নীলবর্ণ।
রাখাল
রাজার
ইতিহাস
সম্পর্কে
নানা
জনশ্রুতি
রয়েছে। গোপালদাসপুর গ্রামের
বেশিরভাগ
পরিবারই
গোস্বামীদের
পরিবার।
গোস্বামীরাই
পুরুষানুক্রমে
রাখাল
রাজার
সেবা
করে
আসছেন।
এই
গোস্বামীদের
একজন
আদিপুরুষ
রামকানু
গোস্বামী
বর্ধমান
জেলার
খাতুন্দী (খাটুন্দী)
গ্রামে
বাস
করতেন।
উনি
ছিলেন
গোপীনাথের
পরম
ভক্ত।
জনশ্রুতি
আছে
যে
একবার
বর্গি
আক্রমণের
ভয়ে
রামকানু
গোস্বামী
তাঁর
পরিবার
ও
গোপীনাথকে
নিয়ে
বৃন্দাবনের
উদ্দেশে
বেরিয়ে
পড়লেন।
পথে
জঙ্গল
পড়ল। গোপীনাথকে তো ভোগ দিতে
হবে।
তাই
রামকানু
গোস্বামী
ও
তাঁর
স্ত্রী
জঙ্গলেই
ভোগ
রান্নার
ব্যবস্থা
করলেন। ওই সময়ে
ওই
অঞ্চলের
এক
রাজা
জঙ্গলে
মৃগয়া
করতে
এসেছিলেন।
সারাদিন
শিকার
করে
রাজা
ও
তাঁর
সাঙ্গোপাঙ্গরা
ক্লান্ত
ও
ক্ষুধার্ত।
হঠাৎ
রাজা
শুনতে
পেলেন
জঙ্গলের
মধ্যে
থেকে
কাঁসর
ঘন্টার
আওয়াজ
ভেসে
আসছে।
কৌতূহলী
হয়ে
রাজা
ও
তাঁর
লোকজনেরা
শব্দের
উৎস
অনুসরণ
করে
সেই
স্থানে
পৌঁছালেন। দেখলেন এক সাধক
ও
তাঁর
স্ত্রী
ছোটো হাঁড়ি
করে
তাঁদের
আরাধ্য
দেবতা
গোপীনাথের
জন্য
ভোগ
রান্না
করেছেন।
রাজাকে
দেখে
রামকানু
গোস্বামী
প্রসাদ
গ্রহণের
অভ্যর্থনা
জানালেন।
রাজা
বললেন
আমরা
সংখ্যায়
অনেকজন
আর
প্রসাদ
মাত্র
ছোট্ট
হাঁড়িতে।
সবাইকে
কি
আপনি
দিতে
পারবেন?
রামকানু
গোস্বামী
রাজাকে
আশ্বস্ত
করলেন
যে
গোপীনাথের
দয়ায়
কেউ
ক্ষুধার্ত
থাকবে
না।
অগত্যা
রাজা
ও
তাঁর
সঙ্গে
মৃগয়ায়
আসা
সমস্ত
সদস্যরা
আহারে
বসলেন।
দেখা
গেল
ওটুকু
হাঁড়ির
ভোগ
শেষ
হচ্ছে না।
সকলে
পেট
ভরে
খেল।
গোপীনাথের
মাহাত্ম্য
রাজা
বুঝতে
পারলেন।
রামকানু
গোস্বামীকে
রাজা
খুশি
হয়ে
ওই
এলাকার
কিছু
জমিজমা
দিলেন
দেবোত্তর
সম্পত্তি
হিসেবে।
এই
ঘটনার
কয়েকদিন
পর
রামকানু
গোস্বামী
বৃন্দাবন
যাবেন
বলে
মনস্থ
করেছেন।
তিনি
রাত্রে
স্বপ্ন
দেখলেন
যে
স্বয়ং
রাখাল
রাজা
বালকের
রূপ
ধরে
বলছেন, আমাকে
দর্শনের
জন্য
বৃন্দাবন
যাওয়ার
দরকার
নেই।
আমি
দারু
কাঠ
হয়ে
জঙ্গলের
মধ্যে
পুষ্করিণীতে
ভেসে
আসছি।
তুই
পুষ্করিণীর
ধার
থেকে
ওই
কাঠ
নিয়ে
বাগনাপাড়ায়
যা।
সেখানে
পাঁচ
বছরের
এক
বালক
খেলা
করছে।
তাকে
দিয়ে
আমার
রাখাল
রাজা
মূর্তি
বানিয়ে
এই
গোপালদাসপুর
গ্রামে
জঙ্গলের
মধ্যে
স্থাপন
কর।
ঘুম
ভেঙে
গেল
রামকানু
গোস্বামীর।
এ কী
স্বপ্ন
দেখলেন
তিনি! স্বয়ং
রাখাল
রাজা
তাঁকে
স্বপ্নে
দেখা
দিলেন! ভক্তি
ও
ভাবে
আপ্লুত
হয়ে
গেলেন
গোপীনাথের
পরম
ভক্ত
রামকানু
গোস্বামী।
তারপর
স্বপ্ন
অনুযায়ী
সমস্ত
ঘটনা
মিলে
গেল।
রাখাল
রাজার
মূর্তি
স্থাপন
হল
জঙ্গলের
মধ্যে।
একপাশে
গোপীনাথের
মূর্তি
রাখা
হল।
সেই
দারু
কাঠের
তৈরী
মূর্তি
আজও
পূজিত
হয়ে
আসছে।
বর্তমানের
মন্দিরটি
নতুন
করে
তৈরি
হয়েছে।
রাখাল
রাজার
অন্য
পাশে
সবুজ
গাত্রবর্ণের
রঘুনাথের
মূর্তি
স্থাপন
করা
হয়েছে।
এই
মূর্তিটি
বেনারস
থেকে
গোস্বামীদের
কোনো
ভায়াত
নিয়ে
এসেছিলেন।
রাখাল
রাজার
মন্দিরের
পাশেই
রয়েছে
ছোট্ট
পুষ্করিণী
যেটিকে
বলা
হচ্ছে
যমুনা।
এখানেই
দারু
কাঠ
ভেসে
এসেছিল
বলে
কথিত
আছে।
প্রত্যেকদিন
পূজা
ও
ভোগ
হয়
এখানে।
মাঘী
পূর্ণিমার
তিন দিন
আগে
পাঁচ
বছরের
যে
বালক
রাখাল
রাজার
মূর্তি
বানিয়েছিল
তাঁর
বংশধরেরা
রাখাল
রাজাকে
ভাঁড়ার
ঘরে
নিয়ে
গিয়ে
দ্বাররুদ্ধ
করে
তিন দিন
ধরে
অঙ্গরাগ
করেন।
তিন দিন
পর
মাঘী
পূর্ণিমার
দিন
রাখাল
রাজাকে
আবার
মন্দিরে
নিয়ে
এসে
পূজা
ভোগ
নিবেদন
করা
হয়।
প্রতিদিন
সকাল
থেকে
ভোগ
দেওয়া
শুরু
হয়।
সকালে
ঘুম
থেকে
উঠেই
দাঁত
মেজে
রাখাল
রাজা, গোপীনাথ
ও
রঘুনাথ
খান
মাখন, মিছরি, ক্ষীরের
নাড়ু
ও
নারকেল
নাড়ু।
এরপর
সকাল
সাড়ে
নটায়
ফলমূল
ও
মিষ্টি
ভোগ
দেওয়া
হয়।
যদি
শীতের
দিন
হয়
তাহলে
মধ্যাহ্নভোজনের
আগে
একবার
সকাল
এগারোটায়
খিচুড়ি
ভোগ
দেওয়া
হয়।
এই
ভোগটাকে
বাল্যভোগ
বলে।
দুপুর
বারোটায়
রাখালরাজা, রঘুনাথ
ও
গোপীনাথ
মধ্যাহ্নভোজন
সারেন। মধ্যাহ্নভোজনে
থাকে
পাঁচ
রকমের
ভাজা, দু’রকমের
ডাল, তিন-চার
রকমের
তরকারি, শুক্তো, চচ্চড়ি, পোলাও, চাটনি, পায়েস, ক্ষীর, দই
ও
মিষ্টি।
রাখাল
রাজা
যে
হাতটা
বাড়িয়ে
আছেন
সেই
হাতে
একটা
বড়ো
ক্ষীরের
নাড়ু
দেওয়া
হয়।
আগে থেকেই কিনে
নিয়ে
গেছিলাম
রজনীগন্ধা
ফুলের
মালা, তুলসীপাতা, পাঁচরকম
ফল
ও
মিষ্টি।
মন্দিরের
অবস্থান
এত
নির্জন
গ্রামে
যে
সেখানে
কোনো
দোকানপাট
থাকা
চিন্তাভাবনার
বাইরে।
তাই
কেউ
পুজো
দিতে
চাইলে
আগে
থেকে
কিনে
নিয়ে
যাওয়া
শ্রেয়।
পুজোর
পালা
গোস্বামী
পরিবারে
সারা
বছর
ভাগ
করা
থাকে। আমার পরিচিত
যাঁর
পালা
ছিল
তাঁর
সঙ্গে
আগেই
যোগাযোগ
করে
নিয়েছিলাম
যাতে
একটু
ভোগ
প্রসাদ
পাওয়া
যায়।
তাঁদের
ব্যবহার
খুব
ভালো।
আমার
কোনো
অসুবিধাই
হয়নি।
খুব
ভালো
করে
পুষ্পাঞ্জলি
দিয়ে
পুজো
দিলাম।
আমার
নিয়ে
যাওয়া
রজনীগন্ধার
মালাটা
শ্রীকৃষ্ণের
বিগ্রহে
যেন
ঝলমল
করছিল।
পুজোর
পর
দেখলাম
চমৎকার
আরতি।
মন্দিরে
নেই
কোনো
ভিড়।
তবে
শুনলাম
সাধারণত
খুব
ভক্ত
সমাগম
হয়
ছুটির
দিনে।
গত
বছর
থেকে
করোনার
জন্য
ভক্ত
সমাগম
কমেছে।
আরতির
সময়
শ্রীকৃষ্ণের
মুখমণ্ডল
যেন
মনে
হচ্ছিল
জীবন্ত।
আরতির
উত্তাপে
ও
প্রতিফলনে
মুখমণ্ডল
যেন
আরও
সজীব
হয়ে
ভক্তকুলের
দিকে
চেয়ে
ছিল। আরতির ঠিক পর পরই
যারা
গিয়েছিল
সবাইকে
ভোগপ্রসাদ
খেতে
বসতে
বলা
হল
একটি
চাতালে।
কুপনের
দাম
মাত্র
৪০
টাকা।
ফ্রাইড
রাইস, আলুভাজা, ভাত, ডাল, শুক্তো, শাকের
চচ্চড়ি, আলু
পটলের
তরকারি, চাটনি, পায়েস
মিলিয়ে
অসাধারণ
দ্বিপ্রাহরিক
আহার
পর্ব
সারলাম।
রান্নার
স্বাদ
তুলনাহীন।
যে
যত
খুশি
চেয়ে
খেতে
পারে।
মধ্যাহ্নভোজনের পর ঠাকুর
বিশ্রামে
যান।
আবার
সন্ধ্যায়
তাকে
ঘুম
থেকে
তুলে
সন্ধ্যাবাতি
দেওয়া
হয়।
রাত্রে
আবার
রাখাল
রাজা
গোপীনাথ
ও
রঘুনাথকে
লুচি
ফল
মিষ্টি
ভোগ
দেওয়া
হয়।
তারপর
আবার
শয়ন
দিয়ে
দেওয়া
হয়
ও
মন্দির
বন্ধ
করে
দেওয়া
হয়।
এই
ভোগের
আরেকটি
বিশেষত্ব
হল
যে
অঘ্রাণ
মাসে
রাত
ছোটো
বলে
অঘ্রাণ
মাস
থেকে
ফাল্গুন
মাস
পর্যন্ত
রাখাল
রাজার
দুপুরের
ভোগের
আগে
খিচুড়ি
ভোগ
হয়।
ফলমূল
মিষ্টান্ন
ইত্যাদি
দেওয়া
হয়।
মধ্যাহ্নভোজনের
সময়
দু’ধরনের
চালের
ভোগ
থাকে।
পাঁচ
কিলো
মতো
সেদ্ধ
চালের
ভোগ
হয়
রঘুনাথের
জন্য।
সঙ্গে
তরিতরকারি
পায়েস
মিষ্টি
থাকে।
রঘুনাথ
রান্নাশালে
এসে
খেয়ে
যান। শালগ্রাম শিলা
নিয়ে
যাওয়া
হয়
রান্নাঘরে।
আর
রাখাল
রাজার
জন্য
ও
গোপীনাথের
জন্য
গোবিন্দভোগ
চালের
পোলাও
বানিয়ে
ভোগ
দেওয়া
হয়।
বহু
দূর-দূরান্ত
থেকে
বহু
মানুষ
এসে
প্রতিদিন
খেয়ে
যান।
ভোগের
জন্য
আগে
থেকে
কুপন
কাটতে
হয়।
এছাড়া
বড়ো
উৎসব
যেমন
রামনবমী
বা
জন্মাষ্টমীতে
হাজারের
ওপর
লোক
হয়।
এখানে
চার জন
রাঁধুনি
আছেন
যারা
সকাল
থেকে
রোজ
ভোগ
রান্না
করেন।
রাখাল
রাজার
মন্দিরের
সামনে
একটা
ছোটো
মন্দির
আছে
যেটাকে
বলা
হচ্ছে
দোলমন্দির।
রামনবমীর
আগের
দিন
নেড়া
পোড়ানো
হয়।
রামনবমীর
দিন
দোল
মন্দিরে
একটা
দোলনা
বা
ঝুলা
টাঙানো
হয়।
রামনবমীর
সময়
রাখাল রাজা, গোপীনাথ
ও
রঘুনাথ
এই
মন্দিরে
এসে
দোলনায়
দোল
খান।
এই
সময়ে
সকলে
এসে
আবির
দিয়ে
রাখাল
রাজা, রঘুনাথ
ও
গোপীনাথকে
ভক্তি
নিবেদন
করেন।
পুরোহিত
ভক্তবৃন্দের
উদ্দেশে
আবির
ছড়িয়ে
দেন।
পাশে
খোলা
জায়গায়
রামনবমীর
দিন
একটি
মেলাও
বসে।
পাশে
আরেকটি
মন্দির
আছে,
যেটি
হচ্ছে
সাধক
রামকানু
গোস্বামীর
সমাধি
মন্দির।
জন্মাষ্টমীর
দিন
দৈনন্দিন
ভোগ
নিবেদনের
পরে
রাখাল
রাজা
শয়নে
যান
এবং
সন্ধ্যাবেলায়
জন্মাষ্টমীর
পূজা
ও
নানাবিধ
অনুষ্ঠানসূচী
সম্পন্ন
হবার
পর
ফল
মিষ্টি
অন্ন
তরিতরকারি
দিয়ে
ভোগ
নিবেদন
করা
হয়।
সেই
ভোগ
পুজো
শেষ
হলে
ভক্তবৃন্দদের
প্রসাদ
দেওয়া
হয়।
সেদিন
মন্দির
আলোকসজ্জায়
সাজানো
হয়।
পরদিন
নন্দ
উৎসব
পালিত
হয়। (অর্থাৎ বাসুদেব
শ্রীকৃষ্ণকে
কারাগার
থেকে
নন্দের
বাড়িতে
নিয়ে
এসেছিলেন
জন্মাষ্টমীর
দিন।
পরদিন
গোটা
মথুরা
বৃন্দাবনে
নাচ
গানের
সঙ্গে
এই
নন্দ
উৎসব
পালিত
হয়। রাখাল রাজার
মন্দিরে
জন্মাষ্টমীর
পরের
দিন
নাচ-গান,
নানারকম
খেলার
মধ্যে
দিয়ে
এই
উৎসব
পালিত
হয়।) একটা
নারকেল
তেল-সিঁদুর
দিয়ে
বালকদের
মধ্যে
ছেড়ে
দেওয়া
হয়।
বালকদের
মধ্যে
কাড়াকাড়ি
হয়
কে
ওই
নারকেলটি
নিতে
পারবে।
জনশ্রুতি আছে যে রাখাল
রাজা
সন্ধেবেলায়
ওনার
গাভী
নিয়ে
এই
জঙ্গলে
চরে
বেড়ান।
যার
জন্য
সন্ধ্যারতির
পরে
ওই
মন্দিরে
বা
মন্দির
চত্বরে
আর
কেউ
থাকে না।
মন্দিরগুলির
স্থাপত্য
ও
ভাস্কর্য
দেখে
মোহিত
হতে
হয়।
অপূর্ব
সুন্দর
টেরাকোটার
কাজ
করা
লাল
রঙের
মন্দিরগুলি
ঐতিহ্যের
ধারক
ও
বাহক।
রামনবমী
ও
জন্মাষ্টমী
এখানে
খুব
ধুমধাম
করে
পালিত
হয়।
মন্দিরের
চারপাশের
গাছগাছালি
ভরা
পরিবেশ
অতি
মনোরম। সামনে দিয়ে
বেহুলা
নদী
বয়ে
যাচ্ছে, যদিও
জল
খুব
কম।
তবে
বর্ষাকালে
এই
বেহুলা
ফুলে-ফেঁপে
ওঠে। গোপালদাসপুরের
যমুনা
এই
নদী।
শান্ত
নিরিবিলি
পরিবেশে
বটগাছের
নিচে
কিছুক্ষণ
সমাধিস্থ
হয়ে
বসে
থাকলে
এক
অপূর্ব
অনুভূতি
হয়।
মন
আকুল
করে
রাখাল
রাজাকে
ডাকলে
হয়তো
কেউ
কেউ
রাখাল
রাজার
বাঁশির
মূর্ছনাও
শুনতে
পাবেন।
প্রকৃতি
প্রেমীরা
অবশ্যই
একবার
গোপালদাসপুরে
এসে
ঘুরে
যেতে
পারেন
আর
ঐতিহ্যের
সাক্ষী
হতে
পারেন।
এখানে
এলে
নিশ্চিত
এক
অনন্য
অনুভূতি
হবে
ও
মন
প্রশান্ত
হবেই।
দ্বিপ্রাহরিক আহার
পর্ব
সেরে
মন্দির
চত্বরে
একটু
বিশ্রামের
পর
যখন
গাড়ি
করে
ফিরছি
তখন
মন
হয়ে
গেছে
শান্ত, স্থির।
রোজকার
জীবনের
মানসিক
চাপকে
দূরে
সরিয়ে
রেখে
গমগম
করে
কানে
বাজছে
ঠাকুরমশাইয়ের
মন্ত্রোচ্চারণ
– “হে কৃষ্ণ, করুণাসিন্ধু
দীনবন্ধু
জগৎপতে।
গোপেশ
গোপীকাকান্ত
রাধা
কান্ত
নমহস্তুতে।।”
----------
ফোটো - লেখক
চমৎকার লেখা, এখানে কি চৈতন্যদেব এসছিলেন ?
ReplyDelete