উরাশিমা এবং
সমুদ্রকন্যা
ইন্দিরা
মুখোপাধ্যায়
সে প্রায়
একশো বছর আগের কথা। জাপানের এক জেলে পরিবারের কিশোর ছিল উরাশিমা। তারও নেশা ছিল
মাছ ধরে বেড়ানো। নৌকো নিয়ে সে চলে যেত মাঝ নদীতে। মাছ নিয়ে ফিরত ঘরে। বিক্রি করত
বাজারে। একদিন তার কী খেয়াল হল, মাছ ধরার পর সুমিনোয়ির সাগর তটে সে
ভাসিয়ে দিল তার সাধের নৌকাখানি। সাদামাটা নৌকাটির রংচঙ নষ্ট হয়ে গেছিল। নৌকার দিক
নির্দেশক রাডারও ছিল না। তবে আর পাঁচটা নৌকার মতো উরাশিমার নৌকার আকৃতি ছিল
এক্কেবারে ভিন্ন। এমন নৌকো নাকি জাপানের লোকজন দেখেছে বহু যুগ আগে, জাপানের সমুদ্র
উপকূলে ভেসে যেতে।
নৌকাটি
ভাসিয়ে দেবার আগে কিছু মাছের সঙ্গে উরাশিমা সেদিন একটা কচ্ছপ ধরেছিল। জাপানে কচ্ছপকে
‘ড্রাগন গড অফ দ্যা সি’ বলে। তাই এমন পাপ কাজ সে কিছুতেই করবে না। আবার কচ্ছপটির
বেশ বয়স হয়েছে। দেখে মায়া হল উরাশিমার। বয়সের ভারে সে যেন আরও কুব্জ আর ন্যুব্জ।
উরাশিমা জাল থেকে মাছগুলোকে আলাদা করে বুড়ো কচ্ছপটিকে খুব আদরে আবার জলের মধ্যে
ছেড়ে দিল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল সে মনে মনে।
সেই দিনটা
ছিল বর্ষার এক খামখেয়ালি বৃষ্টির দিন। আলো-আঁধারির আকাশে কখনও মেঘ। কখনও বৃষ্টি।
উরাশিমা কচ্ছপটিকে ভাসিয়ে দিয়ে নৌকা ভাসানোর আগে নিজের নৌকায় খানিকক্ষণ শুয়ে পড়ল
আলসেমিতে। হঠাৎ সে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়ার ছোঁয়া লেগে।
হঠাৎ সে
দেখতে পেল সাগরের বুকে একটি সুন্দর মেয়েকে। আসমানি নীলের মধ্যে টকটকে লাল বড়ো বড়ো
ফুল ফুল ছাপের কিমোনো পরা সেই মেয়ের খোলা চুল পিঠের ওপরে এলিয়ে পড়েছে। মুখে একটু
হাসি হাসি ভাব। ঠিক যেন বহু যুগ আগে ছোটো থেকে দেখে আসা জাপানের রাজকন্যাদের ছবি।
উরাশিমার মনে হল ঠিক তেমনই।
জলের মধ্যে
দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে সেই মেয়েটি সাগরের কিনারায় তখন। উরাশিমা চেয়ে আছে তার দিকে
একদৃষ্টে। এবার সে উরাশিমার নৌকার ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল।
মেয়েটি আলগা
হাতে নৌকার গায়ে টোকা মেরে মৃদু শব্দ করতেই উরাশিমা ঘুম চোখে বলল, “কে
তুমি?”
মেয়েটি বলল, “আমার
বাবা হলেন এই মহাসাগরের ড্রাগন কিং। তিনিই আমাকে তোমার কাছে পাঠালেন। তুমি খুব
দয়ালু মানুষ। আজ একটি কচ্ছপকে তুমি মুক্তি দিয়েছ। জালে ধরা সত্ত্বেও তুমি তাকে
নিজের কাছে আটকে রাখনি। এবার আমার সঙ্গে চলো। তোমায় নিয়ে যাব এবার ঐ দূরে
মাঝসাগরের বুকে ছোট্ট এক দ্বীপে। সেখানে আমার বাবার রাজপ্রাসাদ। আমরা সেখানে গিয়ে
সুখে থাকব। সেখানে
গ্রীষ্ম কখনও ফুরোয় না। মনোরম জলবায়ু। রঙিন ফুলে ভরা প্রকৃতি। চেরি ব্লসম সেখানে
ফুটতেই থাকে আর ঝরে যেতেই থাকে। আমাদের প্রাসাদের বাগানে প্রায় অনেকটা সময় ধরেই
চেরি ব্লসমের মসৃণ কার্পেট পাতা। আমরা খালি পায়ে হেঁটে বেড়াই। কত পাখি আসে। গান
গায়। তুমি গিয়ে দেখতে পাবে। খুব ভালো লাগবে তোমার। যদি তুমি চাও আমি তোমার ‘ফ্লাওয়ার
ওয়াইফ’ হতে
পারি। বিয়ে করবে আমায়?”
উরাশিমা তো
অবাক। এ তো মেঘ না চাইতেই জল। সামান্য জেলে পরিবারের ছেলে মাছ ধরে বেড়ায়। তার নাকি
রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে হবে? ভেবেই শিহরিত হল সেই কিশোর। কিন্তু
সেই মেয়ের রূপ কাছ থেকে দেখে উরাশিমা ভাবল এই মেয়ে কোনো মানবী হতে পারেই না। তবে
মেয়েটিকে দেখেই ভালো লাগে। তার কথাবার্তায় বেশ একটা রুচির ছাপ। ভালোবাসার নরম
ছোঁয়া।
নৌকার একটি
দাঁড় হাতে তুলে নেয় কন্যা। উরাশিমা নেয় অন্যটি। এবার দু’জনে নৌকার দাঁড় টানতে
টানতে সেই সাগর পাড় থেকে সমুদ্রের অন্য আরেক দিকে চলতে থাকল। আপাতত তারা
দু’জন বন্ধু। স্বামী স্ত্রী, বিয়ে এসব ভাবনা রাজ্যে ফিরে গিয়ে
হবে। রাজারানির তত্ত্বাবধানে।
আর পাঁচটা
মাছ ধরার নৌকার মতোই মাঝ দরিয়ায় ভাসমান হয়ে চলল তারা দাঁড় বেয়ে।
মিষ্টি সুরে
মেয়েটি গান ধরল...
‘চিন চিন কোবাকামা...’ চেনা কথা।
চেনা সুর। ঘুমপাড়ানি গানের সুর। দু’জনেরই জানা গান। উরাশিমাও গলা মেলাল তার সঙ্গে।
অস্তরাগের সোনালি আলোয় সাগরের বুকে এমন গান শোনেনি কেউ। ‘চিন চিন কোবাকামা...’। উত্তাল
সমুদ্রের নীল,
ফেনিল জলরাশি। তবুও অনাবিল আনন্দে গানের সঙ্গে ভাসতে লাগল তারা। অবলীলায়
স্রোতের অনুকূলে ভাসে একবার। আবার স্রোতের বিপরীতে যায় ভয়ে ভয়ে। বড়ো বড়ো ঢেউ
পেরোয়। দুলতে থাকে দু’জনে নৌকার মধ্যে। নির্জন সমুদ্র ওদের গানে মুখর হয়। ‘চিন চিন
কোবাকামা...’
সন্ধের মুখেই
তারা পৌঁছে গেল সেই দ্বীপ রাজপ্রাসাদে। রাজবাড়ির পরিচারকেরা এসে তাদের সাদরে বরণ
করে রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে নিয়ে গেল। উরাশিমাকে তারা দামি সিল্কের গাউন পরতে দিল।
সেই ড্রাগন রাজার প্রাসাদে তখন বিয়ের ধূম। সবাই হবু জামাইকে খাতির করতে শুরু
করেছে। রাজকন্যার সঙ্গে তার বিয়ে হবে। সেখানে আনন্দের সীমা নেই। এখানে গ্রীষ্ম
কখনও ফুরোয় না। সবসময়ই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। ফুল ফোটা থামে না। জাপানের চির
বসন্তের দ্বীপ এটি। উরাশিমা ভাবতে থাকে। সে কী এমন ভালো কাজ করেছে যে এই
রাজপ্রাসাদে তার স্থান হল এভাবে। সেখানে শুধুই আনন্দ খুশি আর মন্ত্রমুগ্ধতা।
বিয়ে হয়ে
গেল উরাশিমার সঙ্গে রাজকন্যার। এভাবে কেটে গেল তিন-তিনটে বছর।
একদিন
উরাশিমার খুব মনে হতে থাকল তার বাবা-মাকে। তারা না জানি ছেলের কষ্টে কেমনই বা
আছেন। হয়তো অপেক্ষা করে আছেন। ভাবছেন একদিন ঠিক নৌকা নিয়ে উরাশিমা ফেরত আসবে তাদের
কাছে। সমুদ্র দেবতাকে ডাকে উরাশিমা। বাবা-মায়ের জন্য বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
অবশেষে একদিন রাজকন্যাকে বলেই ফেলল সে কথা।
“আমায়
একটিবারের জন্যে আমার বাবা-মায়ের কাছে যেতে দাও। আমি আবার ফিরে আসব এখানে।”
রাজকন্যা
সেই শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
তাকে এই
প্রথম কাঁদতে দেখল উরাশিমা।
রাজকন্যা
বলল, “ঠিক
আছে, তুমি নিশ্চয়ই বাড়ি যাবে, তবে আমার ভয় করছে একটাই। যদি আমাদের আর দেখা না হয়?”
উরাশিমা
হেসে বলল, “না
না, তাই
কখনও হয় নাকি?
আমি ঠিক আবার ফিরে আসবই আমার ফ্লাওয়ার ওয়াইফের কাছে।”
রাজকন্যা
উরাশিমার হাতে একটি গালা দিয়ে আঁটা কাঠের ছোট্ট বাক্স দিয়ে বলল, “এই
নাও। এটা যেন ভুলেও খুলো না, কেমন? এটা খুলে ফেললে তুমি কিন্তু আর আমার
কাছে আসতে পারবে না পথ চিনে।”
রেশমের ফিতে
বাঁধা সেই কাঠের সুদৃশ্য বাক্সটি হাতে নিয়ে উরাশিমা ভাবল, ঠিক এমনি বাক্স সে
দেখেছে সমুদ্র তীরে কানাগাওয়া মন্দিরে । মায়ের সঙ্গে গেছিল একবার। নানারকমের দামি
পাথর আটকানো থাকে বাক্সের গায়ে। এই বাক্স সঙ্গে থাকলে সমুদ্রযাত্রা নাকি শুভ হয়।
তাই উরাশিমার মা নিয়ে গেছিল ছেলেকে। দূরে দূরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যায় ছেলে। তার
যাতে মঙ্গল হয় যাত্রাপথ।
মনে বড়ো
শান্তি হল উরাশিমার। তার ফ্লাওয়ার ওয়াইফের দিকে চেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
বলল, “মনে
থাকবে। আমি প্রতিজ্ঞা করলাম। এই বাক্স আমি কখনওই খুলব না। প্রমিস, প্রমিস, প্রমিস।”
রাজকন্যাও
খুশি হল সেই শুনে।
উরাশিমা
পাড়ি দিল সমুদ্রের বুকে। ঘন নীল পাহাড়ের সারিকে পাশে রেখে। দূর দিগন্তে রুপোলি
আলোর রেখা দেখতে পেয়ে মন চিকচিক করে উঠল তার। এই তো সেই চেনা জলপথ। কতদিনের অদেখা
চেনা মাছ ধরার জায়গা। এসে গেছে তার গ্রাম। এসে গেছে তার বাড়ি। কতদিন সে দেখে না
তার বাবা-মাকে।
নৌকোটিকে
রেখে এক লাফে ডাঙায় নামে সে। কিন্তু উরাশিমা যতই তার গ্রামের বাড়ির দিকে এগিয়ে চলে
ততই তার সেই স্থান বড়ো অপরিচিত মনে হল। সবকিছু পালটে গেছে। সাগরের তটে আর সারে
সারে মাছ ধরার নৌকা বাঁধা নেই। তার বদলে বড়ো বড়ো ফিশিং ট্রলার বা মাছ ধরার জাহাজ।
আরও কিছুদূর এগুতেই বড়ো বড়ো লাইট পোস্টের খুঁটি চোখে পড়ে তার। রাস্তাঘাট সব ঝাঁ
চকচক করছে। পাকা রাস্তার মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে এগোয় উরাশিমা। দু-একজন মানুষ এগিয়ে
আসে তার দিকে। কেউ কাউকে চিনতে পারে না। উরাশিমা জিজ্ঞেস করে তার বাবা-মায়ের কথা।
নিজের নাম বলে। লোকগুলি কিছুই বলতে পারে না। তবে দূরে তারা পথনির্দেশ দেয়। সমাধি
হয়তো আছে তাদের দূরের সেই কবরডাঙায়। নামও হয়তো বা খোদাই করা আছে। এই বলে গোরস্থানের
পথ দেখিয়ে দেয় তারা।
মন ভারী হয়ে
যায় উরাশিমার। কিছুই মেলাতে পারে না সে। গিয়ে চাক্ষুষ পরখ করে দেখে আসে সে। সবুজ
মসে ঢেকে যাওয়া গোরস্থানের পাথরের ওপরে লতাপাতা সরিয়ে অবশেষে সে দেখতে পেল পাথরের
ওপরে খোদাই করা তাদের তিনজনের নাম। কিন্তু মৃত্যুর সময়কাল মেলাতে পারে না সে। এ তো
প্রায় চারশো বছর আগের তারিখ। তবে কী সে এদ্দিন নিজের কাছে তার সময়কে বেঁধে রেখেছিল?
তাদের
গ্রামের বাড়িটা?
সেটা বুঝি আর নেই এতদিন পরে? তবুও লোকজনকে জিজ্ঞেস করে গ্রামের
বাড়ির খোঁজে বেরোয় উরাশিমা। বদলে গেছে রাস্তা, ঠিকানা। সেই
ছোট্ট নদীর সাঁকো? কোথায় গেল? কোথায়ই বা গেল নদীর ধারে সেই শিন্টো
মন্দির? ওদের
বাড়িটা আর নেই দেখে চোখে জল আসে তার। কেউ সেটি ভেঙে নতুন অট্টালিকা বানিয়ে ফেলেছে।
এরই নাম তবে উন্নয়ন? কী ছিল তার গ্রাম আর কী হয়েছে সেখানে সভ্যতার আলো পড়ে। খুব
রাগ হয় মনে মনে। রাগে দুঃখে এবার সে কাঁধের ঝুলিতে রাখা তার ফ্লাওয়ার ওয়াইফের
দেওয়া সেই মহার্ঘ্য কাঠের বাক্সটি বের করে আনে। ভুলে যায় সব প্রমিস।
রেশমের
ফিতের বন্ধন খুলে ফেলে বাক্সের মধ্যে কী রাখা আছে দেখতে যায় উরাশিমা। গালার প্রলেপ
সরিয়ে ফেলে কাঠের বাক্সটি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে এক চেনা গানের সুর। ‘চিন চিন কোবাকামা, ইউমো
ফুকে সোরও...’। মিউজিক্যাল
বক্স দিয়েছে তার বউ? কী সুন্দর। কিন্তু গানের সঙ্গে আরও কিছু বেরিয়ে পড়ছে যে।
ঠাণ্ডা, দুধ
সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে চারিদিক। সঙ্গে অপূর্ব এক উদ্বায়ী গন্ধ। সেই সুর, গন্ধ, ধোঁয়া
সব ছড়িয়ে পড়ছে দূরে সমুদ্রের দিকে...
পরক্ষণেই
উরাশিমার মনে পড়ে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। বাক্স কিছুতেই খুলবে না। কিন্তু কী যে হল
তার! কেন
যে সে হঠাৎ করেই তা খুলে ফেলল।
এবার হঠাৎ
উরাশিমা আবিষ্কার করে তার পায়ে আর জোর নেই আগের মতো। তার দাঁত
পড়ে গেছে। সে কানেও ভালো শুনছে না। একটা ঠাণ্ডা স্রোত যেন তার রক্তে বইছে। দেহে আর
চলার শক্তি পায় না সে। তবে কী সমুদ্রের রাজকন্যা, ড্রাগন গড, দ্বীপের
রাজপ্রাসাদের জামাই আদর, তার ফ্লাওয়ার ওয়াইফের দেওয়া বাক্স
সবই মায়া?
এতদিন ধরে উরাশিমা তবে মায়ার খেলা খেলল? ধীরে ধীরে
অশক্ত শরীরে সে এগিয়ে গেল কোনোমতে। সাগর পাড়ে। তার অতি প্রিয় মাছ ধরার নৌকাটিকে আস্তে
করে ঠেলে দিল সমুদ্রের দিকে। নৌকো ভাসতে ভাসতে চলল... বয়সের ভারে
কুব্জ উরাশিমা যেতে যেতে শুনতে পেল সেই চেনা গানের সুর... ‘চিন চিন
কোবাকামা,
ইউমো ফুকে সোরও...’ সেই চেনা সুর বাজতে লাগল কানে। মনে পড়ল মায়ের মুখ। বালির
চরে লুটিয়ে পড়ল উরাশিমা শেষ বারের মতো। সেই সাদা ধোঁয়ার মধ্যে থাকা সুগন্ধ
লেপটে রইল উরাশিমার নাকে। দু’চোখ জুড়ে সে দেখতে পেল তার ফ্লাওয়ার ওয়াইফ, সমুদ্র
দেবতার মেয়েকে। চির প্রশান্তির ঘুম তার দু’চোখ জুড়ে তখন। এদ্দিন সে যে সময়ের
স্রোতকে আটকে রেখেছিল, সেই সময়ের স্রোতে সেও তবে বিলীন হয়ে গেল?
----------
(জাপানি
রূপকথা অবলম্বনে)
মূল কাহিনী: Japanese Fairy
Tales, Lafcadio Hearn
ছবি: Ruth Mccrea
No comments:
Post a Comment