গোলটেবিল:: হরর লাইভ – মিলন গাঙ্গুলী :: আলোচনা: সুলগ্না ব্যানার্জ্জী


হরর লাইভ – মিলন গাঙ্গুলী
আলোচনা - সুলগ্না ব্যানার্জী

বইয়ের নাম: হরর লাইভ; লেখক: মিলন গাঙ্গুলী
প্রকাশক: অরণ্যমন প্রকাশনী; মূল্য: ১৪০ টাকা (ভারতীয় মুদ্রা)

পাঁচটি হরর বড়ো গল্পে সুসজ্জিত এই বইটি যাঁরা ভয়ের গল্প পড়তে ভালোবাসেন তাঁদের সংগ্রহে থাকা অত্যাবশ্যকীয় বলেই এটি পড়ার পর মনে হয়। রিভিউ দিতে গেলে এ বইয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে, তাই একটা ধারণা দিলাম।

১। রুমঝুমপুরের বাগানবাড়ি
বিদেশ থেকে দশ বছর পর গোলোকবিহারীর একমাত্র সন্তান ‘রঘু’ দেশে ফিরেছে। উদ্দেশ্য বাবার বানানো রুমঝুমপুরের সাধের বাগানবাড়ি, যেটি সম্পর্কে তার বাবার এক অজানা আতঙ্ক ছিল, সেটাকে হোটেল বানিয়ে বড়োসড়ো ব্যাবসা চালানো। এই বাগানবাড়ি হস্তগত করার জন্য অনেক কিছু করেছে সেতার অবর্তমানে বাগানবাড়ির দেখভালের দায়িত্ব ছিল এক বুড়ি পিসি আর ম্যানেজারের ওপর। বাগানবাড়িতে পৌঁছে সে বুঝল বাগানবাড়ি সম্পর্কে রটেছে অনেক কিছু। পারবে কি রঘু সব রটনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে বাগানবাড়িকে হোটেল বানিয়ে ব্যাবসা শুরু করতে? নাকি তাকেও সম্মুখীন হতে হবে কোনো এক আতঙ্কের প্রহরের??

২। মদন তপাদারের পাপেট
বিখ্যাত ভেন্ট্রিলোকুইজম শিল্পী মদন তপাদারের পাপেট শো - এর জন্যই টিকে আছে বনমালী অপেরা হাউস। মদন তপাদার এবং তার কথা-বলা পুতুল ‘রাজা চৌধুরী’-র অন্ধভক্ত কমলাপুরের জমিদার বাড়ির বংশধর অনীক। তার একটাই শখ, বড়ো হয়ে সে মদন তপাদারের মতোই একজন বিখ্যাত ভেন্ট্রিলোকুইজম শিল্পীই হবে। কিন্তু সত্যিই কি একজন বিখ্যাত ভেন্ট্রিলোকুইজম শিল্পীই ছিলেন মদন তপাদার? সত্যিই কি তাঁর পাপেট ‘রাজা চৌধুরী’ কেবলমাত্র একটি পুতুলই ছিল? না আর কিছু বললে গল্পটির ভয়াবহতা ক্ষুণ্ণ হবে।

৩। খুনখারাপি
দূরদর্শনের জগতে ‘রাত বারোটা লাইভ’ বিখ্যাত একটি ভৌতিক অনুষ্ঠান হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়। আমরা সবাই জানি সুদক্ষ উপস্থাপনাই জনপ্রিয়তার মূল কারণ, তবুও অনুষ্ঠানের ডিরেক্টর আলতাফ চৌধুরী উপস্থাপক ‘জুলমত খান’-কে তার অহংকারের জন্য খুব একটা পছন্দ করেন না। অনুষ্ঠানের মূল বিষয়বস্তু বাংলাদেশের সেই সব ভৌতিক জায়গা থেকে সরাসরি লাইভ সম্প্রচার যে সব স্থানের রহস্য অমীমাংসিত।
শোনা যায় জয়ন্তপুরের দাপুটে জমিদার অম্বিকাচরণের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তার বাড়িতে প্রবেশ করলে জীবদ্দশায় কেউ ফিরে আসতে পারেনি। সেবার অম্বিকাচরণের বাড়িকেই ফোকাস করবেন সিদ্ধান্ত নিলেন আলতাফ চৌধুরী। সব কিছু ঠিকঠাক হবার পর উপস্থাপক জুলমত তার সহকারী ক্যামেরাম্যান ‘জলিল’-কে নিয়ে প্রবেশ করল ছায়ামহলে। কী হল তারপর? সত্যিই কি ছায়ামহলে প্রবেশকারীরা প্রাণে বাঁচেন না? কিন্তু কেন? টান টান উত্তেজনায় ভরপুর এ গল্পটির ভয়াবহতা কলমে ব্যক্ত করা অসম্ভব।

৪। প্রেতচক্র
সুদখোর মহাজন ‘আইনুল হুজুর’-এর খুনের কিনারার দায়িত্ব পড়েছে দারোগা ‘ইমান আলী’ এবং তাঁর সহকারী ‘ভবানীবাবু’-র ওপর। এটাই তাঁদের প্রথম কেস। সন্দেহের তালিকায় আইনুলেরই চার প্রতিবেশী বন্ধু যারা কেউই আইনুলকে পছন্দ করত না। অনেক রকম কায়দাকানুন করেও যখন ইমান আলী ব্যর্থ, ঠিক তখনই ভবানীবাবু এক তান্ত্রিকের সন্ধান জানান যিনি প্ল্যানচেটের মাধ্যমে আইনুলের আত্মাকে ডেকে এনে খুনিকে ধরতে সক্ষম। পারবেন কি দারোগা ইমান আলী সফল হতে? শেষমেশ আইনুলের আসল খুনী ধরা পড়বে কি?

৫। সাক্ষী থাকে পুরোনো চাঁদ
মানুষের মন বড়ো বিচিত্র জিনিস। তার থেকেও কঠিন বিষয় অপরের মন বোঝা, তাই হয়তো আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানে নানান ধরনের মানসিক রোগের সন্ধান দেরিতে পাওয়া যায়। ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া’ এমনই একটি মানসিক অসুখ যে রোগে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহারে কোনোরকম অস্বাভাবিকতা নেই। এই গল্পটি এমনই এক রোগীকে নিয়ে। খুব সাধারণ হলেও এ গল্পটি বোঝার জন্য প্রবেশ করতে হবে গল্পের গভীরে আর বোঝার পর ঘিরে ধরবে নীরবতা।

লেখক ‘মিলন গাঙ্গুলী’-র কলমে সর্বদাই থাকে নতুনত্বের চমক। ‘হরর লাইভ’ বইয়ের গল্পগুলোও ব্যতিক্রমী নয়। ভয়ের গল্প পড়তে যাঁরা ভালোবাসেন, ছোটো হোক বা বড়ো, তাঁদের সকলের জন্যই এই সংকলনটি অবশ্যপাঠ্য।
----------

No comments:

Post a Comment