কমলা গড়ের সোনার
পালকি
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
সবুজ ঘন জঙ্গলের
বুক
চিরে
এঁকে
বেঁকে
সর্পিল
পথ
এগিয়ে
গেছে
আরও
গহীনে।
একটানা
ঝিঁঝিঁ
পোকার
ডাক
মাথার
ভিতর
ঝিম
ধরায়।
মাঝে
মাঝে
একটা
দুটো
পাহাড়ি
ঝোরা
স্বচ্ছ
জলের
স্রোত
বয়ে
নিয়ে
চলেছে।
জঙ্গল
এখানে
এতটাই
ঘন
যে
কিছুই
দেখা
যায়
না।
মাঝে
মধ্যে
দু-একটা
ময়ূর
আর
হরিণ
চোখে
পড়ে।
রুবাই এক মনে গাড়ির
জানালা
দিয়ে
বাবার
দূরবিনটায়
চোখ
রেখে
বসে
ছিল।
জঙ্গলের
ভেতর
একটা
বহু
পুরোনো
শাখাপ্রশাখা
বিস্তৃত
বটগাছের
ডালে
কয়েকটা
শাখামৃগ
ছাড়া
আর
কিছুই
তেমন
চোখে
পড়েনি।
আপাতত
ওরা
চলেছে
রাজাভাতখাওয়া
ছাড়িয়ে
জয়ন্তী
পার
হয়ে
কমলা
গড়।
আসাম
ভুটান
বাংলার
বর্ডারে
এই
ছোট্ট
জনপদ
কমলা
গড়ে
রুবাইয়ের
মায়ের
বড়োমাসির
বাড়ি।
ওঁদের
বাড়িতে
কালীপূজার
দিন
ভাগ্যলক্ষ্মীর
পূজা
হয়।
সেই
পূজা
বহু
পুরোনো।
প্রায়
একশো
বছর
বয়স
দেবী
কমলার।
বেশ
বড়ো
মন্দির
রয়েছে
দেবীর।
ছোটোবেলায়
রুবাই
দু’বার
এসেছিল।
তরাই
আর
পাহাড়ের
অপূর্ব
মেলবন্ধন
এই
কমলা
গড়
এস্টেটে।
একসময়
ইংরেজ
সরকার
রাজা
উপাধি
দিয়েছিলেন
মাসি-দিদার
দাদাশ্বশুর
দিগ্বিজয়
রায়কে।
যদিও
এখন
আর
সে
জৌলুস
নেই।
তবে
জঙ্গলের
ভেতর
কমলা
গড়
এস্টেটে
ছড়িয়ে
রয়েছে
নানা
রহস্য।
রুবাই এখন ক্লাস
সেভেনে
পড়ে।
মায়ের
কাছ
থেকে
কমলা
গড়ের
অনেক
গল্পই
ও
শুনেছে।
পাহাড়
আর
জঙ্গলের
সীমানায়
জয়ন্তী
নদী
পার
করে
সান্তারাবাড়ির
পর
এই
কমলা
গড়।
সাদা
কোঠা
বাড়িটা
একটা
টিলার
উপর
পাহাড়ের
আড়ালে।
আশেপাশে
কমলা
লেবুর
বাগান।
এই
অক্টোবরের
শেষে
সবে
লেবুতে
রঙ
ধরতে
শুরু
করেছে।
মায়ের
মুখেই
রুবাই
শুনেছিল
মেসো-দাদু
পদ্মভূষণ
রায়
আর
ওঁর
ছোটো
ভাই
রমলাভূষণ
রায়
এই
দুই
ভাইয়ের
পরিবার
রয়েছেন
এখানে।
ওঁদের
স্টেটের
আয়ের
উৎস
এই
কমলা
বাগানগুলো, এছাড়া
রয়েছে
কাঠের
ব্যাবসা।
জঙ্গলের
একটা
বিরাট
অংশ
ওঁদের
স্টেটের
ভিতর
পড়ে।
সেখানে
রয়েছে
রক্ত
চন্দনের
গাছ।
দুটো
কাঠ
চেরাই
কল
রয়েছে
ওঁদের।
আর
তিনটে
চা
বাগান।
তবে
ইদানীং
ব্যাবসা
পড়তির
দিকে, সেই
জৌলুস
আর
নেই।
তবুও
শতাব্দী
প্রাচীন
দেবী
কমলার
পূজা
হয়
খুব
ধুমধাম
করে।
ওরা নীল পাহাড়ের
গায়ে
সবুজ
কমলা
বাগানের
ভেতর
দিয়ে
কমলা
গড়ে
পৌঁছতেই
মাসি-দিদা
আর
বড়োমামা
এগিয়ে
এলেন।
মেসো-দাদু
অবশ্য
হুইলচেয়ারে
বন্দি।
শরীরের
একটা
দিক
পক্ষাঘাতে
পঙ্গু।
উনি
বসার
ঘরেই
ছিলেন।
মেসো-দাদু রুবাইকে দেখেই
বললেন,
“এই
সেই
ছোট্ট
রুবাই!! ও
তো
এখন
হিরো।
টিভিতে
দেখেছি
ওকে
আমরা।”
আসলে রুবাই এর আগে বেশ কিছু
রহস্যর
সমাধান
করেছে
নিজের
বুদ্ধিতে।
অনেক
অপরাধীকে
নিজের
বুদ্ধির
জোরে
ধরিয়ে
দিয়েছে।
সরকারের
থেকে
পুরস্কারও
পেয়েছে।
যদিও
কেউ
এভাবে
বললে
ও
ভারী
লজ্জা
পায়।
মাসি-দিদার নাতনি কমলিনী
রুবাইয়ের
সমবয়সি।
আর
ছোটোদাদুর
নাতি
কমল
কিশোর
ওদের
চেয়ে
দু’বছরের
বড়ো।
ওরা
অবশ্য
সিকিমে
বোর্ডিঙে
থেকে পড়ে। এখন ছুটিতে
এসেছে
বাড়িতে।
মনের
মতো
সঙ্গী
পেয়ে
রুবাই
এস্টেটটা
ঘুরে
ঘুরে
দেখছিল।
ওদের
বাড়ির
পিছনের
পাহাড়ে
একটা
বেশ
সুন্দর
পাহাড়ি
ঝরনা
রয়েছে।
কিশোরদা
রুবাইকে
বলছিল
এ
পথেও
মহাকাল
মন্দির
যাওয়া
যায়।
পরদিন
ওকে
ঘুরিয়ে
আনবে।
বাড়ির পিছনের বাগানেও
বেশ
কয়েকটি
কমলা
গাছ
রয়েছে।
সবুজের
গায়ে
সবে
হলদেটে
রঙ
ধরেছে।
কমলিনী
কয়েকটা
কমলা
ছিঁড়ে
ওদের
হাতে
দিল।
রুবাই
একটা
ছুলে
মুখে
দিল।
এখনও
টক, আর
ক’দিন
পর
পাকলে
মিষ্টি
হবে
হয়তো।
এমনিতে
বড়োমামা
প্রতিবছর
রুবাইদের
বাড়ি
বাগানের
কমলা
পাঠান। এতদিন
রুবাই
জানত
কমলা
বাগান
রয়েছে
বলেই
ওদের
এস্টেটের
নাম
কমলা
গড়।
কিন্তু কমলা খেতে
খেতে
কিশোরদা
ওদের
এক
গল্প
বলছিল।
“আমাদের দাদাঠাকুর দিগ্বিজয়
রায়
ভাগ্য
অন্বেষণে
বাড়ি
ছেড়েছিলেন
১৮৯৪
সালে।
বাংলাদেশের
রাজশাহী
থেকে
চলে
এসেছিলেন
আসামের
দিকে।
এই
পাহাড়
জঙ্গলের
দেশে
এসে
ঘুরতে
ঘুরতে
একদিন
এক
অদ্ভুত
স্বপ্ন
দেখেন।
পাহাড়ের
ধারে
এক
গুহার
সামনে
বসে
কাঁদছে
এক
অপূর্ব
সুন্দরী
মেয়ে, বয়স
বারো-তেরো
হবে।
তিনি
প্রশ্ন
করতেই
মেয়েটি
বলে
সে
হারিয়ে
গেছে।
এক
গা
গহনা
লাল
শাড়িতে
একমাথা
ঢলঢলে
চুলের
ফরসা
মেয়েটা
যে
সম্ভ্রান্ত
ঘরের
দেখেই
বোঝা
যাচ্ছিল।
তরুণ
দিগ্বিজয়
তাকে
ঠিকানা
জিজ্ঞেস
করেন।
তিনি
মেয়েটাকে
লোকালয়ে
নিয়ে
যেতে
চাইছিলেন।
তখন
মেয়েটি
জানায়
তার
নাম
কমলা, সে
ভারি
দুষ্টু।
বার
বার
পালিয়ে
যায়।
কোথাও
বেশিদিন
থাকে
না।
তবে
এ
জায়গাটা
তার
পছন্দ
হয়েছে।
তাই
আপাতত
এখানেই
থাকবে
সে।
দাদাঠাকুর
যেন
তার
জন্য
এখানেই
একটা
ঘর
করে
দেয়।
বলেই
সে
পাশের
গুহায়
ঢুকে
পড়ে।
দাদাঠাকুরের
ঘুম
ভেঙ্গে
যায়।
তিনি
হয়তো
ভুলেই
যেতেন
স্বপ্নের
কথা।
কিন্তু
সামনের
পাথরটা
দেখে
চমকে
উঠলেন।
মেয়েটা
তো
এখানেই
বসেছিল।
পাশেই
একপাটি
সোনার
নূপুর
পড়ে
রয়েছে
দেখে
এগিয়ে
গেলেন।
নূপুরটা
হাতে
তুলতেই
গুহাটা
দেখতে
পেলেন।
গুহায়
ঢুকে
চলছেন
তো
চলছেন,
বেশ
কিছুদূর
গিয়ে
দেখেন
একটা
এক ফুট
হাইটের
সোনার
পালকির
ভেতর
একটা
অষ্টধাতুর
মেয়ের
মূর্তি, তার
পাশে
একটা
ছোটো
সোনার
কলস
ভর্তি
স্বর্ণ
মুদ্রা।
মেয়েটার
মূর্তিটা
দেখতে
অবিকল
ঐ
স্বপ্নে
দেখা
মেয়েটির
মতো।
তখন
তিনি
ভুটানের
রাজার
থেকে
ঐ
অঞ্চলে
জমি
কিনে
এই
এস্টেটের
পত্তন
করেন।
দেবী
কমলার
নামে
এস্টেটের
নাম
রেখেছিলেন, মন্দির
তৈরি
করে
মূর্তিটা
স্থাপন
করেন।
ভাগ্যলক্ষ্মীর
সহায়তায়
কমলা
বাগান, কাঠের
ব্যাবসা
ফুলে
ফেঁপে
ওঠে।
ওঁর
ছেলেরা
পরে
চা
বাগানের
ব্যাবসাও
শুরু
করেন।”
“দা’ভাই, পালকিটা তো রূপার।
ঐ
যে
যেটায়
করে
মাকে
কমলা
দীঘিতে
স্নান
করানো
হয়
সেটাই
তো?” কমলা
খেতে
খেতে
কমলিনী
প্রশ্ন
করে।
“না, ওটা তো পরে বাবা
বানিয়েছিলেন।
সোনারটা
যে
দাদামশাই
কোথায়
লুকিয়ে
রেখেছেন
কেউ
জানে
না,” বড়োমামা
কখন
যে
ওদের
খুঁজতে
এসেছেন
ওরা
খেয়াল
করেনি।
“জেঠুন, বলো-না সেই গল্পটা
আরেকবার,”
কিশোরের
গলায়
আবদারের
সুর।
“সেটা ১৯৬২ সাল, আমার
জন্ম
হয়নি
অবশ্য।
চিন
ভারত
যুদ্ধ
চলছিল।
তেজপুর
হয়ে
যে
কোনো
সময়
গৌহাটি
পৌঁছে
যাবে
চিনা
সৈন্য।
এদিকে
দেশে
চলছে
লুঠতরাজ।
ডাকাতি
হত
সে
সময়
এ
অঞ্চলে
খুব।
দাদামশাই
ভয়
পেয়ে
সেই
স্বর্ণ
কলস
আর
পালকি
যে
কোথায়
লুকিয়েছিলেন
কে
জানে।
বাবারা
জানতে
চাইলেই
হেঁয়ালি
করে
বলতেন -
যেখানে দেখিবে ছাই
উড়াইয়া দেখো তাই
পাইলে পাইতে পারো
সাত রাজার ধন।
দাদামশাই এই ঘটনার দু’বছরের
মধ্যে
হার্ট
আ্যটাকে
ঘুমের
মধ্যে
মারা
যান।
বাবা
আর
ছোটোকাকু
অনেক
খুঁজেও
পাননি
এই
হেঁয়ালির
সন্ধান।
তারপর
থেকে
রূপার
পালকিতেই
দেবীর
স্নানযাত্রা
হয়ে
আসছে।”
কথা বলতে বলতে
ওরা
কমলা
দেবীর
মন্দিরের
সামনে
চলে
এসেছিল।
রুবাই
মন্দিরটা
ঘুরে
ঘুরে
দেখছিল।
সামনেই
ছোট্ট
পুকুর, কমলা
দিঘি।
কয়েকটা
পদ্ম
ফুটে
আছে।
“এই পাহাড়ি অঞ্চলে
দিঘি
পুকুর
খুব
কম। এই দিঘিটাও
আমাদের
দাদাঠাকুর
দিগ্বিজয়
রায়
খনন
করান।
পাথর
সরিয়ে
অল্প
মাটি
কাটতেই
কুলকুল
করে
জল
বেরিয়ে
এসেছিল।
সারা
বছর
জল
থাকে
এই
দিঘিতে।”
মন্দিরের পিছনে ভোগের
ঘর।
রাতে
ভাগ্যলক্ষ্মীর
পূজা
হবে। আপাতত রাঁধুনে, বামুন, সবাই
কাজে
ব্যস্ত। বিকেলে দেবীর
স্নান
যাত্রা
হবে।
কমলিনী বলে, “এই পুকুরে
সারা
বছর
জলপদ্ম
ফোটে,
জানো।”
দুপুরে রুবাই, কমল কিশোর, কমলিনী
আর
রুবাইয়ের
বাবা
আর
দুই
দাদু
খেতে
বসেছিল।
ওর
মা
শ্রমণা
দেবী
সহ
বাড়ির
সবার
আজ
উপোস।
দুপুরেও
নিরামিষ
রান্না
আজ।
কালো
নুনিয়া
চালের
ভাত, মুগডাল, বেগুনি, ধোঁকার
ডালনা, ফুলকপির
পাতুরি
আর
জলপাইয়ের
টক।
খেতে
খেতেই
রুবাই
বলে,
“সোনার
পালকি
আর
কলসের
খোঁজ
ঠিক
কী
করে
করা
হয়েছিল?”
ছোটোমামা আর মামি
তদারক
করছিলেন
ওদের
খাওয়া।
মামা বললেন, “বাবা
এত
বড়ো
তিন
মহলা
বাড়ির
সব
জায়গা
খুঁজেছিলেন।
আগেকার
দিনে
তো
কাঠের
আর
কয়লার
উনুনে
রান্না
হত, ছাই
ফেলা
হত
রান্নাঘরের
পাশেই।
সেই
সব
জায়গা
খুঁড়িয়ে
দেখা
হয়েছিল।
বাড়িতে
তিনটে
রান্নাঘর।
ঠাকুর
বাড়ির
ভোগের
ঘর, সব
উনুন
ভেঙে
দেখা
হয়েছিল।
এখন
তো
গ্যাসে
রান্না।
শেষ
তিরিশ
বছরে
আর
কয়লা
বা
কাঠে
রান্না
হয়
না।
তাই
ছাই
আর
নেই
কোথাও।”
এ বাড়ির সবার
নামের
সঙ্গে
দেবী
কমলার
নামের
মিল
রয়েছে
রুবাই
আগেই
বুঝেছিল।
ও
বলে
ওঠে, “কথাটা
তো
হেঁয়ালি, ছাই
মানে
যদি
অন্য
কিছু
হয়?”
“যেখানে দেখিবে ছাই... উড়াইয়া
দেখো
তাই... আর
কী
হতে
পারে?
একটা
কয়লার
ঘর
ছিল।
সেটাও
ভেঙে
দেখা
হয়েছে,”
মামি
বললেন।
“ছাই কথার অর্থ
ভস্ম, জঞ্জাল, অকিঞ্চিৎকর
বিষয়, অপ্রয়োজনীয়
জিনিস
এসব,”
রুবাইয়ের
বাবা
রাজেশবাবু
বললেন।
“সে ধরনের সব জায়গা
খুঁজে
দেখা
হয়েছে।
কমলা
দেবী
আমাদের
কুলদেবী।”
মেসো-দাদু বললেন, “আমি
তখন
সবে
বিয়ে
করেছি।
বাবা
তো
যুদ্ধ
ও
ডাকাতির
ভয়ে
পালকি
ও
কলস
লুকিয়েছিলেন।
পরের
বছর
পূজার
দিন
আমি
ও
আমার
ভাই
বাবাকে
বললাম
কলস
আর
পালকি
ছাড়া
পূজা
হবে
কী
করে।
বাবা
একটা
রূপার
কলস
ও
পালকি
দিলেন।
বললেন
মায়ের
জিনিস
যত্নে
রয়েছে
মায়ের
কাছেই।
বার
করলেই
ডাকাতদের
নজরে
পরবে।
এভাবেই
দুটো
পূজার
পর
বাবা
হঠাৎ
মারা
যান।
তার
কয়েকবছর
পর
শুরু
হল
এদিকে
নকশাল
আন্দোলন।
ভাই
জড়িয়ে
পড়ল
তাতে।
ও
ওর
দলবল
নিয়েও
গড়ের
ভেতর
খোঁড়াখুঁড়ি
করেছিল।
যদিও
কিছুই
পাওয়া
যায়নি! এদিকে
দিনে
দিনে
আমাদের
ব্যাবসার
অবস্থা
খারাপ
হয়েছে।
আমাদের
মনে
হয়েছে
দেবী
কি
তবে
রুষ্ট
হলেন।
দু’বার
গোয়েন্দা
আনিয়েছি
কলকাতা
থেকে।
তারাও
কত
খুঁজেছে।
পায়নি।”
“রুবাই পারবে।
ও
কত
বড়ো
বড়ো
রহস্য
সমাধান
করেছে।
ও
ঠিক
পারবে।” কমলিনীর
গলায়
আশ্বাসের
ছোঁয়া।
যদিও
রুবাই
গুপ্তধনের
সন্ধান
কখনও
করেনি।
তবে
ও
বেশ
উৎসাহ
পাচ্ছিল।
মাথা
খাটাতে
ও
বুদ্ধির
জোরে
রহস্য
সমাধান
করতে
ওর
বেশ
লাগে।
ছোটোদাদুর শেষ বয়সে
একটু
মাথাটা
গণ্ডগোল
হয়েছে।
উনি
নকশাল
আন্দোলন
করতেন, প্রচুর
কষ্ট
সহ্য
করেছেন।
উনি
ওর
কাঁধে
হাত
রেখে
বললেন,
“খোঁজার
কী
দরকার! পেলেই
তো
সরকার
নিয়ে
নেবে।
অবশ্য
দেবোত্তর
সম্পত্তি
বলে
আটকানো
যায়।
কিন্তু
ভাগ্যলক্ষ্মী
সর্বদা
চঞ্চলা
চপলা।
সে
পালিয়ে
যাবেই।” কথা শুনে
বোঝা
যায়
না
যে
ওঁর
মাথার
গণ্ডগোল।
কথাটা
আক্ষরিক
অর্থে
ঠিকই
বলেছেন
হয়তো।
খেয়ে উঠে রুবাই
আবার
কমলিনী
আর
কমল
কিশোরের
সঙ্গে
বাড়ির
চারদিকে
ঘুরতে
বার
হল।
যে
হেঁয়ালি
দাদামশাই
বলে
গেছেন
তা
তো
আসলে
একটা
প্রবচন।
ওর
অর্থ
মা
বুঝিয়ে
বলেছিল
ওকে, জঞ্জালের
মধ্যেও
অনেক
সময়
অনেক
কিছু
লুকিয়ে
থাকে।
ঘুরতে ঘুরতে কমলা
দীঘির
ঘাটে
এসে
ছোটোমামার
সঙ্গে
দেখা
হয়
ওদের।
স্নান
যাত্রার
জন্য
ঘাট
সাজাচ্ছেন
মামা।
দিঘির
দিকে
তাকিয়ে
থেকে
রুবাই
বলে,
“এই
দিঘি
কতটা
গভীর?”
“খুব বেশি নয়।
মাত্র
তিন
ফুট, পাথরের
ফাঁক
দিয়ে
জল
এসে
ভরে
দিয়েছিল
খননের
সময়।
তবে
এটার
সব
জল
তুলেও
দেখা
হয়েছে, কোনো
গুপ্ত
পথ
বা
গুহা
কিছুই
নেই।”
“আচ্ছা যে গুহায়
মূর্তি
আর
পালকি
প্রথম
পাওয়া
গেছিল
সেটা
কি
দেখা
যায়?”
রুবাই
বলে।
“এখানের অনেক পাহাড়
ফাঁপা, মহাকাল
মন্দিরও
এমন
একটা
গুহার
ভেতর।
তবে
ঐ
কমলা
দেবীর
গুহাটা
একটা
ভূমিকম্পে
বন্ধ
হয়ে
গেছিল,”
ছোটোমামা
বলেন।
“মূর্তি আর পালকি
গড়ের
ভেতরেই
আছে।
বাইরে
যায়নি।
কারণ
ঐ
লক্ষ্মীদেবী
আমাদের
সৌভাগ্যর
দেবী।
ঐ
পালকি
আর
কলস
আমরা
পূজা
করি।
ঐ
কলসের
মোহর
কখনও
শেষ
হবে
না।
এটাই
বাবা
ঠাকুর
বিশ্বাস
করতেন।” ছোটোদাদু
কখন
যেন
উঠে
এসেছেন
ওখানে।
হঠাৎ
ছোটোমামি
এসে
ওঁকে
ঘরে
নিয়ে
গেলেন।
স্নান যাত্রা শুরু
হবে।
আশেপাশের
গাঁয়ের
লোক
এসেছে
এই
স্নান
দেখতে।
ধুপ
চন্দন
দীপের
গন্ধের
সঙ্গে
অগুরুর
গন্ধ
মিশে
একটা
মিষ্টি
গন্ধ
ছড়াচ্ছে।
বাড়ির
পুরুষরা
দেবীকে
স্নান
করায়
আর
মহিলারা
সাজায়।
এই
রীতি
চলে
আসছে
বিগত
তিন
পুরুষ
ধরে।
কিশোর আর মামারা
পালকিসহ
দেবীকে
স্নান
করালেন।
পালকিটা
অন্তত
চার
কেজি
রূপার
তৈরি।
রুবাই
ভাবছিল
এমন
একটা
সোনার
পালকির
আজকের
দিনে
দাম
কত
হবে!
রুবাই ভোগের ঘরের
পেছনের
আবর্জনা
ফেলার
জায়গাটা
দেখছিল।
পাশেই
ভগ্ন
কয়লা
আর
খড়ির
ঘর।
“এসব আমরা বহুবার
খুঁড়ে
দেখেছি, কোথাও
নেই
রুবাই
মাষ্টার,”
ছোটোমামা
আবার
ওদের
সঙ্গে
এসে
যোগ
দিলেন।
সন্ধ্যা
হয়ে
আসছে।
অন্ধকার
হলেই
পূজা
শুরু
হবে।
সবাই মন্দিরের সামনে
এসে
বসল।
দশ
ইঞ্চির
অষ্টধাতুর
কমলা
দেবীর
মূর্তিকে
বেনারসি
আর
গহনায়
সাজানো
হয়েছে।
ধুপের
ধোঁয়ায়
গর্ভগৃহ
আচ্ছন্ন। আশেপাশের গ্ৰামের
লোক
এসে
পূজা
দিচ্ছে।
মন্দিরের
সিঁড়ির
দু’পাশে
দুটো
পাকা
জায়গা
মাটি
দিয়ে
ভরাট, সবাই
ওখানে
মোমবাতি
ও
ধুপ
জ্বালিয়ে
যাচ্ছে।
ধুপের
ছাই
জমে
উঠছে
ধীরে
ধীরে।
রুবাই
সেদিকে
তাকিয়ে
ভাবতে
থাকে
হেঁয়ালিটা
নিয়ে।
ছাই
উড়ানোর
কথা
কেন
বলেছিলেন
উনি!!
রাত আটটায় যজ্ঞ
শুরু
হল।
মূর্তির
সামনের
চাতালে
বড়ো
যজ্ঞ
কুণ্ড।
লেলিহান
শিখা, পোড়া
ঘি
আর
চন্দন
কাঠের
গন্ধে
মনে
ভক্তি
জেগে
ওঠে।
এই
রক্ত
চন্দনের
কাঠ
আসে
এস্টেটের
বাগান
থেকে।
প্রায়
পঁচিশ
মিনিট
পর
যজ্ঞ
শেষ
হল। সবার কপালে
যজ্ঞ
তিলক
পরিয়ে
দিলেন
পুরোহিত।
দীপাবলি
উপলক্ষে
বাজি
পোড়ানো
হল
অনেক। প্রসাদ বিতরণ
চলল
অনেক
রাত
অবধি।
সবাই
শুতে
শুতে
প্রচুর
রাত
হয়েছিল।
রুবাই
সোনার
পালকি
আর
কলসির
কথা
ভাবতে
ভাবতেই
ঘুমিয়ে
গেছিল।
পরদিন সকালে দধিকর্মার
পর
প্রসাদী
ফল
মিষ্টি
মোয়া
দিয়ে
জলখাবার
পর্ব
মিটতেই
বড়োমামা
বললেন, “কী
রুবাই
বাবু? হেঁয়ালির
কোনো
সমাধান
হল?”
“চলো, মন্দিরটা আরেকবার
দেখে
আসি।” রুবাই
বড়োমামা
ছোটোমামা
আর
ভাই-বোনকে
নিয়ে
আবার
মন্দিরের
চাতালে
এল।
সিঁড়িতে
কালকের
আলপনা, চারদিকে
গাঁদার
মালায়
সাজানো। দরজার ঠিক উপরে
একটা
রূপার
স্বস্তিক
চিহ্ন।
সিঁড়ির
দু’ধারে
ধুপ
জ্বালানোর
জন্য
যে
মাটির
ভরাট
অংশ
সেদিকে
তাকিয়ে
দাঁড়িয়ে
রুবাই
বলল,
“এই
অংশটা
কি
পরে
বানানো
হয়েছিল?”
“একটা বড়ো ভূমিকম্প
হয়েছিল
পনেরো
বছর
আগে।
তারপর
সিঁড়ি
আর
এ
অংশটা
তৈরি
করাই
নতুন
করে।
আগে
ধুপ, মোম
দেবীর
সামনেই
দিত
সবাই।
তাতে
আসুবিধা
হত, ভিড়
হত
যে
খুব।”
কিশোর বলে ওঠে,
“যাঃ, এটাও
নয়
তাহলে! আর
ছাই
কোথায়
রয়েছে?”
“কেন? যজ্ঞ বেদিতে।
যজ্ঞ
বেদিটা
বেশ
উঁচু।
মন্দির
নির্মাণের
অনেক
পরে
মনে
হয়
এটা
তৈরি
হয়েছে।”
“তুমি কী করে জানলে?”
পদ্মভূষণ
বাবুর
হুইল
চেয়ারটা
বড়োমামি
ঠেলে
নিয়ে
এসেছেন।
উনি
কৌতূহলী
হয়ে
চলে
এসেছেন।
“আসলে
মন্দিরটা
বেশ
পুরোনো,
দেখেই
বোঝা
যায়।
কিন্তু
এই
বেদিটা
তত
পুরোনো
নয়।
এটা
সিমেন্টের
তৈরি।
মন্দির
তো
পাথরের
তৈরি।”
“এটা বাবা মারা
যাওয়ার
কয়েক
বছর
আগে
বানিয়েছিলেন।
আগে
দেবীর
সামনে
যজ্ঞ
কুণ্ডে
যজ্ঞ
হত।
পরে
বাবা
বড়ো
করে
এই
পাকা
যজ্ঞ
কুণ্ডটা
তৈরি
করান,
এই
চাতালে
বসে
যাতে
সবাই
যজ্ঞটা
দেখতে
পায়। ভেতরে হলে লোকে
দেখতে
পেত
না।”
রুবাই বেদিটার গায়ে
একটা
পাথর
দিয়ে
ঠুক ঠুক
শব্দ
করছিল
আর
কান
পেতে
কিছু
শুনছিল।
হঠাৎ
বলে
ওঠে, “এটার
ভেতরটা
ফাঁপা।
যজ্ঞ
কুণ্ডের
ছাইটা
সরিয়ে
দেখলে
হয়
কিন্তু।”
দু’ফুট বাই দু’ফুটের
যজ্ঞ
কুণ্ড
পরিষ্কার
করা
হল।
বহু
পুরোনো
ছাই
জমেছিল
ভিতরে, ভিতরটা
অবশ্য
পাথরের।
সেই
পাথরে
আস্তে
আস্তে
চাপ
দিচ্ছিল
রুবাই।
বেদির
ভিতরের
দেয়ালে
একটা
খাঁজ
ছিল, সেটা
বেশ
জোরে
ঠেলতেই
পাথরটা
সরে
গেল।
মেঝেতে
একটা
স্বস্তিক
চিহ্নর
মতো
খাঁজ
কাটা। তা অনেক ঠেলেও
সেটা
সরল
না।
হঠাৎ
রুবাই
বলল, “মন্দিরের
দরজার
উপর
একটা
রূপার
স্বস্তিক
চিহ্ন
রয়েছে, সেটা
কি
খোলা
যায়?”
“হ্যাঁ।
ওটা
আলগা
বসানো
হয়েছিল!” মামা
বলে।
“ওটাই
চাবি! নিয়ে
এসো
ওটা!”
স্বস্তিকটা খাঁজে খাঁজে
বসিয়ে
চাপ
দিতেই
পাথরটা
সরে
গেল! একটা
সিঁড়ি
নেমে
গেছে
নিচে।
সবার
মুখে
যুদ্ধ
জয়ের
হাসি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বড়ো বড়ো টর্চের
আলো
জ্বালিয়ে
দুই
মামা
প্রথমে
নিচে
নামলেন, আটটা
ধাপ
নামতেই
একটা
ছোট্ট
ঘর।
টর্চের
আলোয়
কুলুঙ্গিতে
ঝলমলিয়ে
উঠল
মা
কমলার
সোনার
পালকি
আর
কলস।
মামারা রুবাইকে মাথায়
তুলে
নাচছে
তখন।
দাদুদের
মুখেও
হাসি।
রুবাইয়ের বড়োমামি বললেন,
“এবার
বলো
রুবাই, তুমি
কী
করে
বুঝতে
পারলে
যে
এখানেই
লুকানো
আছে
মা
কমলার
গুপ্তধন?”
“মা বলেছিল ছাই মানে
অবাঞ্ছিত
জিনিস
হতে
পারে, কিন্তু
ঠাকুরের
জিনিস
তো
কোনো
নোংরা
জায়গায়
থাকতে
পারে
না।
বড়োদাদু
বললেন
গড়ের
বাইরেও
যাবে
না
দেবীর
জিনিস।
ওগুলো
সৌভাগ্য
লক্ষ্মীর
সঙ্গে
যুক্ত, তাই
মন্দিরকেই
গুরুত্ব
দিয়েছিলাম।
রান্নার
ছাই, কয়লার
ঘর
সব
নোংরা
জায়গা।
কিন্তু
যজ্ঞস্থল
তো
পরিষ্কার।
কাল
বেদিটা
দেখেই
মনে
হয়েছিল
এটা
বেশ
কিছু
বছর
পরে
তৈরি
হয়েছে।
আর
ছাই
তো
যজ্ঞ
বেদিতে
ছিলই।
তখনই
বুঝতে
পেরেছিলাম
কিছুটা।
এখন
বেদিটা
ফাঁপা
দেখেই
শিওর
হলাম।”
“এত বছর ধরে আমরা
খুঁজেছি, যজ্ঞ
বেদির
কথা
কখনও
মাথায়
আসেনি।
আসলে
বছরে
একবার
এই
যজ্ঞ
হয়।
তাই
এখানে
যে
ছাই
থাকতে
পারে
মনেই
ছিল না।
বাবা
যে
এখানে
গুপ্ত
কক্ষ
বানিয়েছিলেন
তাও
জানতাম
না। ঐ স্বস্তিকটা
যে
চাবি
তাও
কখনও
মনে
হয়নি।” পদ্মভূষণ
রায়,
রুবাইয়ের
মেসো-দাদু
বললেন।
পালকি
আর
কলসের
উপর
তখন
সবার
নজর।
রোদে
ঝলমল
করছে
সোনার
পালকি
আর
স্বর্ণ
কলস।
মেসো-দাদু
বললেন,
“কিন্তু
সরকার
কি
এসব
অধিগ্ৰহণ
করবে?”
“না বোধহয়, কারণ
এই
মন্দির
আর
তার
সংলগ্ন
এলাকা
দেবোত্তর
সম্পত্তি।
তাই
এই
কলস
আর
পালকি
দেবীর
জিনিস, গুপ্তধন
নয়,”
বড়োমামা
বললেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর ছড়িয়ে
পড়েছিল, দলে
দলে
লোক
আসতে
শুরু
করেছিল
আশেপাশের
গ্রাম
থেকে
মা
কমলার
পালকি
আর
কলস
দেখতে।
সবাই
রুবাইকেও
দেখতে
চাইছে।
সবার
প্রশ্নর
উত্তর
দিতে
দিতে
ও
ক্লান্ত।
এবার
ও
কমল
কিশোরকে
জিজ্ঞেস
করে
যে
কখন
ওকে
মহাকাল
মন্দিরে
নিয়ে
যাবে
কমল
কিশোরদা। পাহাড়ের গায়ে
ঝরনার
মাঝে
ঐ
মন্দিরের
গল্পও
অনেক
শুনেছে
রুবাই।
রহস্যঘন
সেই
মন্দির
যেন
ওকে
হাতছানি
দিয়ে
ডাকছে।
----------
ছবি - রাজা আক্তার
No comments:
Post a Comment