পাতালপুরীর বন্ধুরা
প্রদীপ কুমার বিশ্বাস
জলের অতল গভীরে কোথা থেকে একটা জোর ঠেলা খেয়ে
আমি পানকৌড়ির মতো ভুস করে ভেসে উঠলাম একেবারে জলের ওপরতলায়। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলে আমাদের যে অবস্থা হয়, আমার ঠিক তাই হতে লাগল। চিত সাঁতারে কিছুক্ষণ ভেসে থাকবার পর, অনেক কষ্টে চোখ খুলতে পারলাম। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম, “আমি এখন কোথায়?” পাতালপুরী থেকে পালাবার সময়, আমাকে মৎস্যকন্যে কথা দিয়েছিল যে সে আমাকে পাতালপুরীর সীমান্ত অবধি পথ দেখিয়ে ছেড়ে আসবে। এই কি তাহলে সেই জায়গা? কিন্তু সে গেল কোথায়? আমার কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই সে চলে গেল?
ধীরে-ধীরে আমার স্মৃতি ফিরে আসছে আবছা-আবছা। আমার মনে পড়ছে, আমি, মঙ্গলজোড়ি গ্রামের, রায়বাহাদুর বাড়ির, ঋজু রায়। সাঁতারে পর পর তিনবার ডিসট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ন। আমি একজন পোড়খাওয়া সাঁতারু। এইটুকু আন্দাজ করতে পারলাম যে, আমি এখন একটা বড়ো দিঘির মাঝখানে ভাসছি। মাথা সামান্য তুলে, কোনোরকমে দিঘিটার পাড়ের চারপাশ দেখতে-দেখতে, একটা বড়ো ঘাট নজরে
এল। ঘাটের পাড়েই লাল রঙের একটা বেশ বড়ো মন্দিরের চুড়ো। ঢাক-ঘন্টা-কাঁসর আর উলুধ্বনির আওয়াজে বুঝলাম, মন্দিরে খুব সম্ভবতঃ এখন পুজো শেষে আরতি চলছে। সবাই তাতেই ব্যস্ত আছে। সেইজন্যই বোধহয় ঘাটে একটা লোকও
এখন নেই। কিন্তু এই দুপুরবেলায় আরতি? কোন দেবীর পুজো?
মাঝদিঘি থেকে ঘাটে পৌঁছোতে আমার মতো সাঁতারুর
মিনিট দু-তিনেক-এর বেশি লাগবে না। কিন্তু কেউ যদি জল কাটবার আওয়াজ শুনে বা এমনিই কোনো কারণে ঘাটে চলে আসে, তবে তার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। এই ব্যাপারটা এড়াবার জন্য, ডুবসাঁতারে এগিয়ে চললাম ঘাটের দিকে। ঘাটের পৈঠায় বসে, একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম। অনেকদিন অভ্যাস নেই। এতটা বেশি সময় ডুবসাঁতার দেবার জন্য তাই বেশ ক্লান্ত লাগছিল। ঘাটের চারপাশ, গাছ-গাছালি আর সবজির মাচাগুলো দেখতে দেখতে, ধীরে ধীরে, আমার মনে হতে লাগল যে এই ঘাট আমার খুব চেনা জায়গা হতে পারে।
পৈঠার সিঁড়ির দেয়ালে, মার্বেল পাথরের একটা বড়ো ফলক পড়তে গিয়ে, আমার দৃষ্টি থমকে গেল। ফলকে লেখা আছে, “মংলা দিঘির এই ঘাট, রায়বাহাদুর শশিশেখর রায়ের স্মৃতিতে তাঁহার পুত্র শিশিরশেখর রায় দ্বারা পুনর্নির্মিত হইল, সন ১৩২৩ চৈত্র, মঙ্গলজোড়ি”। ঘাট তৈরির প্রায় একশো বছর পর, মার্বেল ফলকটা পড়তে পড়তে, আমি, ঋজু, রায়বাহাদুর শিশিরশেখর রায়ের নাতির নাতি, নিজের স্মৃতি ফিরে পেলাম।
এই ঘাট, আমাদের গ্রাম মঙ্গলজোড়ির সবচাইতে বড়ো দিঘি মংলাদিঘির স্নানের ঘাট। এই ঘাটের পাড়েই, ওই তো, আমাদের কুলদেবী, সদাজাগ্রতা, মঙ্গলা মায়ের লাল রঙের বিশাল নাটমন্দির। ভোগদালানে, ভরদুপুরে আমাদের গ্রামের আর দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তের ভিড়, পুকুরঘাটের অশ্বত্থগাছে নতুন লাল কাপড়ে গিঁট বাঁধা মানতের সারি দেখে, মনে পড়ে গেল যে আজ তাহলে মঙ্গলবার। দুপুরে আরতি আর ভক্তের ভিড় আজকেই হয়। বৃহস্পতিবার থেকে ধরলে, আমি তাহলে টানা ছ’দিন, এই মংলাদিঘির মাঝদিঘির নিচে, পাতালপুরীতে কাটিয়েছি।
পাতালপুরীতে যাবার প্রথম
দিনটা যে বৃহস্পতিবার, তা আমি হলফ করে বলতে পারি। আমাদের চকমেলানো তেতলা বাড়ির বিশাল আঙিনার পূর্বকোণে, লক্ষ্মী জনার্দনের মন্দির। প্রতি বৃহস্পতিবার ষোড়শোপচারে লক্ষ্মীপুজো হয় বেশ ঘটা করে। বৃহস্পতিবার আর গুরুপূর্ণিমা যদি একই দিনে পড়ে তাহলে তো মহোৎসবের আয়োজন হয়। প্রসাদের নাম করে, গ্রামের সবাইকার নিরামিষ ভুরিভোজনের পাতা পড়ে। এই পুজোর ফুলের মধ্যে অন্যতম হল, একান্নটি হালকা গোলাপি পদ্ম। ফুলের জোগান যে দেয়, সেই মহালি কাকা বৃহস্পতিবারের সকালবেলাতেই জানিয়ে দিয়েছে যে এইবার সে একান্নটি গোলাপি কেন, কোনোরকমের পদ্মের একটিরও জোগান দিতে পারছে না। আমাদের গ্রাম কেন, আশেপাশের গ্রামের দিঘিতেও পদ্ম হঠাৎ করে লোপাট হয়ে গিয়েছে।
একে গুরুপূর্ণিমা, তাতে একটাও পদ্মফুল মা লক্ষ্মীকে নিবেদন হবে না, এই শুনে সেই সকাল থেকেই মায়ের কপালে হাত। বার বার নিজের মনেই বলছিল, “বিনা পদ্মফুলেই কি এবার তাহলে মায়ের পুজো করতে হবে? মা কি রুষ্ট হবেন না? কী করি আমি, হে মা দোষ নিও না আমার।” পুজোর পদ্মফুলের একটা সন্ধান, আমি কিছুক্ষণ আগে জেনেছি। সেখান থেকে পদ্মফুল এনে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলাম। সেটা করতে গিয়ে জীবনে ঘটে গেল এক দারুণ ঘটনা।
এই বৃহস্পতিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার দু’দিন আগের ব্যাপার, মানে সেদিন ছিল মঙ্গলবার। সেদিন, টিফিনের পর, অঙ্কের আর ভূগোলের হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার খাতা আমাদের দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে দেখিয়ে
সই করিয়ে আবার জমা করতে হবে। দুটো বিষয়েই আমি কোনোরকমে পঞ্চাশের ঘরে পেয়েছি। আমার চাইতে কম নম্বর পাওয়া ছেলেদের কারও ডাক পড়েনি হেড স্যারের ঘরে। কিন্তু আমার পড়েছে।
সব বিষয়ে রেকর্ড নম্বর পেয়ে সোনার মেডেল পাওয়া, এই স্কুলের কৃতি প্রাক্তন ছাত্র, পৃথিবীবিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানীর পুত্র হওয়ার অনেক জ্বালা। এমনিতেই প্রতি পদেই কাঁটা ফুটিয়ে দেওয়া জ্বালাময় তুলনা শুনতে হয় আর এই খাতা দেখানো পর্বে তার চরম এমনিতেই হবে।
পরীক্ষার খাতায় আমার করা ভুলগুলোর আলোচনা করতে করতে, হেডস্যার ফিরে এলেন তার পুরোনো ভোকাল টনিকে, বাবার সঙ্গে আমার তুলনা-কীর্তনে সেটা শুরু হল। মাথা নিচু করে ওনার ভাষণ শুনতে-শুনতে ভাবছিলাম, ওনাকে কি মনে করিয়ে দিতে হবে আমার করা ওনার মায়ের পেনসিল স্কেচের ছবির কথা? যেটা ওনার মায়ের একমাত্র একক ছবি? সেটাই তো শ্রাদ্ধ-বাসরে ফুল সজ্জিত হয়ে টেবিলে রাখা ছিল। ওনার মাকে আমি কিন্তু একবারমাত্র দেখেছিলাম। যদি তুলনাই হয়ে থাকে, তবে উনি কেন ভুলে যান যে পর পর তিনবার সাঁতারে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমি। এইসব গুণগুলো, আমার বাবার, এই স্কুলের সেরা প্রাক্তন ছাত্রের ছিল না।
দোতলায় মায়ের পাশের ঘরটায় আমার পড়ার ঘর। বিকেলে, আমি খেলতে না গিয়ে, অঙ্কের বই খুলে, নিজেই অঙ্ক কষতে শুরু করেছিলাম। লাভ-ক্ষতি চ্যাপটারের, আগে না হওয়া দু-দুটো শক্ত অঙ্কের সমাধান মাথার মধ্যে চলে এল। অঙ্ক দুটোর উত্তর মেলাতে যাব, এমন সময় কানে এল মায়ের চাপা কান্নার আওয়াজ। মায়ের মোবাইলে কথা বলবার সময়, মাঝে মাঝে স্পিকারটা চালু হয়ে যায়। বাবার ব্যারিটোন গলা এই ঘরেও স্পষ্ট শোনা গেল, “ঋজুকে আমি আর চান্স দেব না। ওকে আমি এই জুন মাসেই নৈনিতালের স্কুলে ভরতি করে দেব। হোস্টেলে না গেলে, একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে না থাকলে, ওর এই রকমই নম্বর আসবে। ঋজু মানুষের মতো মানুষ হোক। একটা ভ্যগাবন্ড ছবি আঁকা শিল্পী হয়ে ঘুরে বেড়াক, এটা আমি বরদাস্ত করব না।”
ভ্যগাবন্ড শিল্পী বলে, বাবা যে খোঁচাটা মাকে দিলেন, সেটা আমার মামার জন্য। আমার আঁকার হাতেখড়ি এই মামার কাছেই। শিল্পী মামা বেশ অনেক বছর নিরুদ্দেশ ছিল। কিন্তু মামা এখন খুব নামি শিল্পী হয়েছে। প্যারিসে থাকে, বিদেশিনী মামিও শিল্পী। বাবার ভয়, আমিও শিল্পী হয়ে ঘর ছেড়ে পালাব কোথাও।
দুটো অঙ্কেরই উত্তর মিলে গিয়েছিল, কিন্তু মায়ের কান্না শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আমি ভাবছিলাম, মাকে গিয়ে অঙ্কগুলো দেখাব আর বলব যে অঙ্ক আর ভূগোল আমি যে পারি না তা নয়। ব্যস, আমার এগুলো পড়তে ভালো লাগে না। মাকে কাঁদতে শুনে আর এগোলাম না। আমাকে নিয়ে এইরকম আজকাল প্রায়ই হয়। সে সময় মাকে একলা ছেড়ে দিলেই ভালো হয়।
সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনায়, আমার আশ্রয়স্থল হল চিলেকোঠার এই ঘর। সেবারে মামা-মামি এসেছিল এখানে। আমার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল একটা স্টুডিও ইজেল, প্যাস্টেল আর ক্যানভাসের অনেকগুলো সেট। মা, সেগুলো সবার অগোচরে, এই চিলেকোঠার ঘরে রেখে দিয়েছিল। আমার মাথায় যখন যা খেয়াল চাপে, এমনকি, আমার স্বপ্নে দেখা কিছু দৃশ্য, অচেনা অবয়ব, এইসব আঁকতে বসি কিংবা গিটারের সঙ্গতে গান গাই অথবা দুটোই করি এই চিলেকোঠার ঘরে এসে।
কয়েক রাত আগে, আমি স্বপ্নে দেখি এক অপরূপ সুন্দর
নারীমূর্তি, যার মুখ নারীর মতো কিন্তু বাকিটা ধোঁয়ায় ঢাকা। পুরো অবয়ব পরিস্কার দেখা গেল, অন্য আর এক রাতের স্বপ্নে। দেখলাম অতি চঞ্চল সেই নারী। তার সারা গায়ে মাছের মতো রুপোলি আঁশ আর তাতে অনেক মণিমুক্তো লাগানো আছে। দেওয়ালির রাতের মতো, সেই মণিমুক্তোগুলো, টুনি বাল্বের মতো থেকে-থেকে জ্বলছে আর নিভছে। মাকে এই স্বপ্ন-দৃশ্যের কথা বলতেই, মা বললে, “তুই মৎস্যকন্যার গল্প কোথায় পড়লি? তোদের ইংরেজি বা বাংলা বইগুলোতে এইসব কাহিনি নেই। কারও কাছ থেকে গল্প শুনেছিস?” আমি না বলাতে, মা কিন্তু অবাক হয়নি। উৎসাহ দিয়ে বলেছিল, “আঁকা শেষ হলে বলিস আমায়। আমি তখন তোকে মৎস্যকন্যার অনেক গল্প বলব।” শুনে গা শিউরে উঠল। মা যখন বলছে, মৎস্যকন্যা আছে তাহলে। আমার স্বপ্নটা তাহলে সত্যি। আর সত্যি হবে না-ই বা কেন? সেদিন মঙ্গলা মায়ের নাটমন্দিরে, কথক ঠাকুর মহাভারতের কাহিনি বলছিল।
দুর্যোধনদের চক্রান্তে, বিষপ্রয়োগের পর, ভীমকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল গভীর জলে। কিন্তু এতে শেষ অবধি, ভীম পৌঁছে গেছিলেন জলের তলায় পাতালপুরীতে, বাসুকি নাগের কাছে। বিষের প্রভাব কাটিয়ে, অসীম বলশালী হয়ে ভীম ফিরেও এসেছিলেন। তার মানে জলের তলাতে মানুষ আছে। জলের তলায় বিবর্তিত হতে হতে, মানুষের গায়ে মাছের মতো আঁশ, আর তারা দেখতে অর্ধেক মাছ আর অর্ধেক মানুষ হতেই পারে। এইটা বিজ্ঞানের কথা, ডারউইন সাহেব বলেছেন। হবে না
কেন?
মায়ের কথার সঙ্গে কথক ঠাকুরের কথা
আর নিজের ভাবনা, এইসব মিলিয়ে
খুব উদ্দীপিত হয়ে, লেগে পড়লাম স্বপ্নে দেখা মৎস্যকন্যার ছবি আঁকতে। কিন্তু হলে কী হবে, স্কেচবইতে যাও বা কিছুটা স্বপ্নের মতো আঁকতে পারলাম, ইজেলের ক্যানভাসে চেষ্টা করে বুঝলাম, হচ্ছে না, কিছুই হচ্ছে না। কেবলই মনে হচ্ছিল যে সেই স্বপ্নটা যদি আর একবার দেখতে পাই, তবে মৎস্যকন্যার সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ করে, দেখে নিতে পারব তার সব ক’টা ভঙ্গিমা।
একই স্বপ্ন কি আর দু’বার দেখা যায়? কালকে একটা নতুন ক্যানভাস চড়িয়েছিলাম, কিন্তু আজ সেই দুপুর থেকে যা চলছে, তাতে আমার সুখ, দুঃখের আশ্রয়স্থল এই চিলেকোঠার ঘরের একান্তে থেকে, ক্যানভাসে কিছু আঁকবার মুড আসছিল না। বিকেল গড়িয়ে আসছে। চিলেকোঠার ঘর থেকে এলাম ছাদের আঙিনায়। দিগন্তে সন্ধে নেমে আসার আগে, সূর্যের ফেলে যাওয়া দুর্বল রঙ-রশ্মি নিয়ে হালকা ধোঁয়াটে মেঘ আর আকাশের আসমানি রঙের লুকোচুরি খেলা কিন্তু দেখবার মতো। আমাদের এই বাড়ির দক্ষিণপূর্ব কোণে, পাঁচিলের বাইরেই, বিশাল মংলা দিঘি। বাইরের হাওয়া এই দিঘির জলে এসে ভেজে আর ঠান্ডা হয়ে ঘরগুলোতে ঢোকে।
মঙ্গলবারের সেই পড়ন্ত বিকেলে, চারদিক বড়ো বড়ো গাছে ঘেরা এই বাড়িতে, সন্ধে আসি আসি করেও আলসেমি করছিল বা অনিচ্ছুক ছিল নেমে পড়তে। চিলেকোঠার ঘরের পুবের জানালা দিয়ে, রোদ লাফিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যাবার সময়, সন্ধের অন্ধকারকে ডাক দিয়েছে বার বার, কিন্তু সন্ধে নামেনি। সাদা বকের দল, বাড়ি ফেরার সময়, তাদের ডানায় ধরে নিয়ে এসেছিল সন্ধেকে। তবু সে নিমরাজি মতো হয়ে, ছাদের আঙিনার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে, নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিল। এমন সময়, নিচের আঙিনায়, লক্ষ্মীজনার্দন মন্দিরে, সন্ধের শাঁখের আবাহনী আওয়াজে ভয় পেয়ে, সন্ধে তার আঁধারকে নিয়ে, ছাদের চিলেকোঠার ঘরে লুকাতে গিয়ে যেন ধরা পড়ে গেল ঘরের চার দেয়ালে। এবার সে নিজেকে ছড়িয়ে দিল পুরো দালানবাড়ি আর পুকুর বাগানে। চিলেকোঠার ঘরে দেয়ালগিরি জ্বেলে, এই পুরো ঘটনাটা কয়েকটা দ্রুত টানের পেনসিল স্কেচে, স্কেচবুকের পাতায় বন্দি করতে দেরি লাগল না। আর সেটা করতে পেরে মোবাইলে বাজানো ভায়োলিন আর নিজের গীটারের সঙ্গতে অটাম সোনাটার প্রায় পুরোটাই
গাইলাম।
নিচের পড়ার ঘরে, স্কুলের পড়া করতে করতে, আমার মনে হচ্ছিল, ছাদ আর তার চারপাশের আঁধার আমায় যেন টানছে। স্কুলের হোমটাস্কের ফাঁকে-ফাঁকে, আমার অনুভূতি, আমাকে বার বার
বলছিল যে আজকের রাতের অন্ধকার কিছু আলাদা হবে।
বিকেলে খেলতে যাবার ইচ্ছে না থাকলে, আমি এই চিলেকোঠার ঘরে থাকি। ইচ্ছে হলে, স্কেচবুকে আঁকিবুঁকি কাটি আর দেখতে থাকি ধীরে
ধীরে আঁধারের নেমে আসা আর পশ্চিম দিগন্তে সূর্যের ফেলে যাওয়া উত্তরীয় নিয়ে আসমানি রঙের আকাশ আর ভেসে যাওয়া সাদা-কালো মেঘদের খেলা। কিন্তু প্রতিদিনকার
সন্ধের আজ আঁধার নামাতে অনিচ্ছে কেন হল? রাতের কালো আকাশের কাছে কি তার উত্তর আছে?
চটপট করে স্কুলের বাকি হোমটাস্ক আর রাতের খাওয়া শেষ করে পা টিপে টিপে এলাম ছাদে। আমি আসার একটু
পরেই কাস্তের মতো দ্বিতীয়ার চাঁদ দেখা দিল। আঁধার সামান্য সরে গিয়ে চাঁদের হালকা আলোকে আকাশে একটু জায়গা দিল। এই সঙ্গে এল সুগন্ধি হাওয়া। অনেকদিন পরে পাওয়া প্রিয় সেই সুগন্ধকে চিনতে পারলাম। এই সুগন্ধ আসছে দক্ষিণপূর্ব কোণে আমাদের বাড়ির পাঁচিলের পরই, বিশাল মঙ্গলা দিঘি থেকে।
আকাশে বিদ্যুৎ বেশ ঘন ঘন চমকে উঠছিল। একটা বড়ো মাপের বিদ্যুৎ চমকাতেই, সেই আলোতে বোঝা যাচ্ছিল যে মংলা দিঘির একদম মাঝদিঘিতে একটা বিরাট আকারের গোলাপি লাল রঙের পদ্ম ফুটেছে। এত বড়ো পদ্ম মংলা দিঘিতে আমি এর আগে কখনও দেখিনি। কোথা থেকে দমকা হাওয়া আর তার সঙ্গে টুকরো টুকরো কালো মেঘ এল, একসঙ্গে ক্ষীণ চাঁদকে গিলতে। কিন্তু ক্ষীণ চাঁদ এদের সবাইকে
ফাঁকি দিয়ে নিজের রুপোলি কিরণ-দড়ি বেয়ে লাফ দিল দিঘিতে। মাঝ-দিঘিতে সদ্য ফোটা বড়ো পদ্ম তার সব পাপড়ি মেলে চাঁদকে ডাকে, “কাছে আয়, কাছে আয়।” চাঁদ দোলে নিজের রুপোলি কিরণের দড়ির দোলনায়। কখনও সে আকাশ আর দিঘির
সীমারেখায়, আবার কখনও সে দুলতে দুলতে চলে যায় মাঝদিঘির পদ্মের পাপড়িকে ধাক্কা দিতে। এই খেলা দেখছিলাম আর মনের স্কেচবুকে চলছিল পুরো ঘটনাটার দ্রুত টানের স্কেচিং।
বেশ সুন্দর সব কিছু চলছিল। হঠাৎ একটা বড়ো মাপের বাজ তার কড়কড় আওয়াজে চারিদিক কাঁপিয়ে
বোধহয় দিঘির জলে পদ্মটার ঠিক গায়ের ওপর পড়তে চাইল।
আকাশ চিরে ঝকঝকে তলোয়ারের মতো বাজের আলোতে
দেখা গেল, পদ্মের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আমার স্বপ্নে দেখা সেই মৎস্যকন্যা। বাজের সাদা আলো পড়ে তার রুপোলি গা থেকে নীলাভ আলো ঝলসে উঠল। মনে হল, সে যেন বাজটাকে হাতে ধরে নিয়ে অনেক দূরে কোথাও ছুঁড়ে ফেলল। এই সময় আমার মনের অতলে তার এই ছবি গেঁথে গেল বেশ ভালোভাবে। মৎস্যকন্যাকে এত ভালো করে দেখার পর ইচ্ছে হচ্ছিল, এখনই ছুটে যাই চিলেকোঠার ঘরে। ক্যানভাসে যে আঁচড় আগে টানতে পারিনি, ব্যাকগ্রাউন্ডে যে কালার কম্বিনেশন আগে ভাবিনি, বাইরের আকাশে ক্ষণে-ক্ষণে খেলে যাওয়া বিদ্যুতের মতো তারা যেন এখন মাথার
কোষে কোষে খেলছিল। আর একটা বিদ্যুৎ চমক হতে মনে হল, মংলা দিঘির দিক থেকে একটা ছায়ামূর্তি যেন চিলেকোঠার ঘরের দিকে যেতে যেতে অদৃশ্য হয়ে গেল। এবার ভয় পেয়ে আর কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা
সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে পালিয়ে এলাম। কিন্তু আমি যে কিছু ভুল দেখিনি, সেটা টের পেলাম পরের দিন সকালে স্কুল যাবার সময়।
আমাদের বাড়ির দেউড়ি থেকে বেরিয়ে, মংলা দিঘির পশ্চিম পাড় ধরে বেশ কিছুটা জোরকদমে হাঁটার পর খানিকটা পথ ধানখেতের আলের ওপর দিয়ে গেলে, তবে আসে আমাদের স্কুল। আমাদের গ্রামটা দিঘির পূর্ব পারে। পশ্চিম পারে কেবল আমাদের দোতলা বিশাল বাড়ি সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সকালে স্কুল যাবার সময়ে এই রাস্তায় প্রায় কোনোদিনই আমি ছাড়া আর কাউকে বড়ো একটা চলতে দেখিনি কখনোই। দিঘির এই পশ্চিম পাড় খুব চওড়া। পাড়ের উলটোদিকে গভীর জঙ্গল। রাত নামলে কেউ সচরাচর এই রাস্তায় চলতে চায় না। লোকে বলে তখন নাকি মেছোভূতেরা একলা লোকের পিছু নেয়।
ঝড়জলের রাতের পরের দিন সকালে স্কুল যাবার সময় আমার মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার পিছু
পিছু আসছে। আমি থামলে, সেও থেমে যাচ্ছিল। কিন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে বা আশেপাশে কাউকেই দেখতে পেলাম না।
ভয়ডর আমার চিরকালই অন্যদের তুলনায় অনেক কম। আর এই সকালবেলাটায় মেছোভূতেরা আমার পেছু নেবে কেন? আমাকে এই সকালবেলায় ভয় দেখাবার
মতলব কে করছে? সেটা জানবার জন্য জুডোর একটা বিশেষ কায়দায়, হঠাৎ থেমে গিয়ে, পেছন দিকে একটা জোরে লাফ দিয়ে, বাঁ পা-টা সজোরে চালিয়ে দিলাম শূন্যে। বিদ্যুৎগতিতে ডান দিকে সরে গিয়ে, এক ছায়ামূর্তি নিজেকে বাঁচিয়ে নিল। তবে সে আর পালাতে পারল না। আমি সিধা এক ভল্ট দিয়ে
একদম মুখোমুখি তার সামনে এসে দাঁড়ালাম একটা মোক্ষম মারমুখী ভঙ্গিমা নিয়ে। আমি তৈরি থাকলাম, ছেলেটার সামান্য বেচাল আন্দাজ হলেই, মারব এমন এক মোক্ষম মার যে কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে শুয়ে পড়বে।
ছেলেটা আমার মনোভাব বুঝে নিয়ে দুই হাত মাথার ওপর তুলে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিল। ঠিক তখনই গাছপালার আড়াল ভেদ করে সূর্যের আলো পুরো রাস্তাটায় বেশ ভালো করে ছড়িয়ে পড়ল। ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম, আমার বয়েসি বেশ রোগা চেহারার একটা ছেলে। এতক্ষণ আলোর অভাবে ঠিক করে দেখিনি, মুখের দিকে তাকাতেই আমার গায়ের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে উঠল।
মনে হচ্ছে বিধাতা পুরুষ আমাদের দু’জনের মুখ বানাবার সময় ছাঁচ আলাদা করেননি। হুবহু আমার কার্বন
কপি। এই ছেলেটির সঙ্গে আমার ফারাক শুধু গায়ের রঙে। রায়বাহাদুর বাড়ির বাকি পুরুষদের মতো আমার রং ফরসা আর এ কুচকুচে কালো। সূর্যের আলোতে এর ছায়া পড়ছে। কাজেই এ মেছো ভূত কেন, কোনো ভূতই নয়। কিন্তু আমার এর কথাবার্তা শুনে কেমন কেমন লাগছে। এ বলছে এর নাম রাঘব, পদবি বোয়েল। এই রকম পদবি শুধু আমাদের আশেপাশের দশটা
গ্রাম কেন, পুরো জেলাতে কোথাও নেই। কাল ঝড়-বৃষ্টির সময় বাজ পড়ার আওয়াজে ভয় পেয়ে ও আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। এ কথাটা সত্যি বলছে ছেলেটা। আমি কাল রাতে নিজের চোখেই দেখেছি যে একটা ছায়ামূর্তি চিলেকোঠার ঘরে ঢুকছে।
“এইখানে তুমি এলে কী করে?”
“তোমাদের বাড়ি থেকে, তোমার পিছু-পিছু।”
“দেউড়ির গেটে দু’জন দরোয়ান ছিল পাহারায়। তারা তোমাকে আটকায়নি?”
ও আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাসতে লাগল। তাহলে এ ধূর্ত কম নয়। কোনোভাবে একসঙ্গে দু-দু’জন দরোয়ানকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। খেত থেকে আমাদের বাড়িতে সবজি আর গঞ্জের বাজার থেকে গুরু পূর্ণিমার একদিন আগেই
পুজোর সব জিনিস আমাদের বাড়িতে পৌঁছে
বরুণ কাকার খালি ভ্যান ফেরত আসছিল। আমাকে দেখে ভ্যান থামিয়ে বলে, “আজ তো তোমার বেশ দেরি হয়ে গেছে। এখুনি স্কুলের ঘন্টা পড়বে। নাও, উঠে পড়ো।”
স্কুলে যাবার জন্য হাতে বেশ সময় নিয়েই প্রতিদিন ঘর থেকে বার হই। আজও তাই করেছিলাম। কিন্তু মাঝপথে এই রাঘবের
সঙ্গে কথা বলতে বলতে খেয়ালই নেই যে কত সময় বেরিয়ে গেল। আরে! রাঘব দেখি ভ্যানের সঙ্গে সঙ্গেই চলছে। আমি বলি, “ও রাঘব, তুমিও কি স্কুল যাবে নাকি? লাভ নেই, গেটেই আটকে যাবে। ওখানে দারুণ কড়া দারোয়ান, মাছিরও গলবার উপায় নেই।” বরুণ কাকা রিক্সা থামিয়ে আমার দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলে, “দাদাভাই, আমি আসার সময়, আবার এই এখন, এই মোট দু’বার তোমার কথা কানে এল। কিন্তু তুমি কথাটা বলছ কার সঙ্গে? রাঘব আবার কে? এখানে তো কেউ নেই। স্কুলের কোনো নাটকের মকশো করছ নাকি?”
বরুণ কাকার কি চোখ খারাপ হল? তাহলে ও ভ্যান চালাচ্ছে কী করে? কিন্তু ও যখন ভ্যান থামিয়েছিল আমায় দেখে, তখন রাঘব তো একদম আমার কাছেই ছিল। আর এখন, রাঘব ওর ভ্যানের সামান্য আগে আগে চলছে। তাহলে ও দেখতে পেল না কেন? শুধু বরুণ কাকা নয়, আমাদের বাড়ির দেউড়ির গেটের দু’জন দারোয়ানও দেখতে পায়নি? রাঘব কি তাহলে কোনো ম্যাজিক জানে নাকি? ও যাকে চাইবে সে ছাড়া আর কেউ তাকে দেখতে পাবে না?
এই কথা ভাবতে ভাবতে স্কুলের গেট এসে গেল। আমি স্পষ্ট দেখলাম, ভ্যানের আগে আগে চলা, রাঘব দিব্যি গেট পার হয়ে স্কুলের ভেতর চলে গেল। গেটের দারোয়ানরা কেউ তাকে দেখতেই পেল না।
ঠিক এই সময় দেখি, অঙ্কের স্যার তার সাইকেলে গেট পার হচ্ছেন। আজ ওনার পর পর দুটো ক্লাস। প্রথমটা জ্যামিতির আর পরেরটা অ্যালজেব্রার। অঙ্কের দুটো ক্লাসের কথা মনে হতেই শিরদাঁড়ায় একটা হিমেল স্রোত চলে গেল।
কাল রাতে ওইসব ঝামেলার পর জ্যামিতির আর অ্যালজেব্রা্র হোমওয়ার্ক তো করা হয়নি। আজ ক্লাসের বাইরে হাতে ইট নিয়ে নিল ডাউন হয়ে থাকাটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। টিফিনের পরই ম্যাথ ক্লাস। ভয়ে আর অপমানের লজ্জায় টিফিন ঘরে গিয়ে আমি ফিরে এসেছি সঙ্গে সঙ্গে। টিফিন বাক্স খুলতে ইচ্ছা করেনি। হঠাৎ দেখি, রাঘব আমার পাশে বসে আছে। ও বলে, “বন্ধু, তোমার অঙ্কের হোমটাস্ক কি হয়নি? একবার খাতা খুলে দেখে তো নাও।” দেখবার আর কী আছে? খাতার পাতা তো
সাদা।
কিন্তু
খাতা খুলে আমার চক্ষু চড়কগাছ। এও কী সম্ভব? জ্যামিতির ছ-ছ’টা শক্ত এক্সট্রা আর অ্যালজেব্রার বর্গমূলের দশখানা বাছা বাছা কঠিন অঙ্ক আমি নিজের হাতের লেখায় করেছি, কিন্তু কখন? এত শক্ত অঙ্কগুলোর সব ক’টা আমি করেছি এটা স্যার মানতে চাইবেন না। আমাকে করে দেখাতে বললে, আমি তো নির্ঘাত ধরা পড়ে যাব।
রাঘব বললে, “যদি আমার কথা শোনো তবে একদম ধরা পড়বে না
তুমি। টিফিন টাইম শেষ হতে এখন অনেক বাকি। তুমি এর মধ্যে যে কোনো দুটো অঙ্ক বেছে নাও আর নিজে করে দেখ।” অঙ্কগুলো কষে আর দেখতে হল না, একবার দেখেই, মনে মনে সব ক’টা স্টেপ চোখের সামনে ভেসে উঠল। এটা কী করে হল? দেখি রাঘব আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে আর ধীরে ধীরে অদৃশ্য হচ্ছে। অঙ্কে আমি এই যে হঠাৎ রামানুজম হয়ে উঠলাম সেটা ওর কোনো খেল নয় তো?
সকালে যখন রাঘবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তখনই তাকে প্রথমে রহস্যময় বা ম্যাজিসিয়ান বলে মনে হয়েছিল। বরুণ কাকার ভ্যানে উঠবার পর মনে হয়েছিল, এ হয়তো বা কোনো নতুন ধরনের অশরীরী। বিকেলে খেলার পিরিয়ডে ওর সঙ্গে কথাবার্তার পর ওর ওপর আমার অন্য ধারণা হয়ে গেল।
বিকেলে অঙ্কের ক্লাসের পর, খেলার ক্লাস। কৌশল করে একটা চোট লাগিয়ে মাঠের বাইরে অশথ গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে বসলাম। দেখি রাঘব আসছে আমার কাছে। আমি এইটাই চেয়েছিলাম। রাঘব কে, আর কোথা থেকে কী মতলবে এখানে এসেছে, জেনে নিতে হবে।
রাঘবের সঙ্গে আধঘণ্টার ওপর কথা হল। ও কিছুতেই মনে করতে পারছে না যে ও কোথা থেকে আমাদের বাড়িতে এসেছে আর কেন এসেছে। এই কথাটা অবশ্য ও আমাকে সকালেও বলেছিল। ওর সঙ্গে আরও অন্য কথা হবার পর আমার আন্দাজ জ্ঞান বলছে যে রাঘব
মিথ্যে বলছে না।
ও ভূতপ্রেত বা কোনো যাদুকর নয়। ভগবানদত্ত মানসিক ক্ষমতার বলে ও অন্য মানুষের চোখে অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারে। যাকে ওর পছন্দ হয় একমাত্র সেই ব্যাক্তিটিকে ও দর্শন দিতে পারে। এই মানসিক ক্ষমতার বলে ও খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমার অঙ্কের বইগুলো পড়ে নিয়ে হোমটাস্কগুলো যে শুধু করেই দেয়নি, সেগুলো অলক্ষ্যে
আমার মাথার মধ্যে ঢুকিয়েও দিয়েছে।
অনেক গল্পে পড়েছি যে এইরকম ক্ষমতা শুধু ভিনগ্রহের মানুষজনেরই থাকে। রাঘব কি তাহলে কোনো ভিনগ্রহ থেকে এসেছে? কালকের মতো হঠাৎ আসা, এইরকম ঝড়জলের রাতেই ভিনগ্রহের মানুষেরা এসে নামে পৃথিবীতে। হতেও পারে তা। নামার পর কি ওর উপগ্রহের সঙ্গে ও যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে? আর তার প্রতিক্রিয়ায় ওর স্মৃতি থেকে সব কিছু মুছে গেছে? নাকি ওর উপগ্রহ ভেঙে খান খান হয়ে পড়ে আছে এখানের দেবীগড়ের ঘন জঙ্গলে?
একটু পরে মনে হল, এইসব ভেবে কী লাভ? বরঞ্চ ওকে যে আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না তাতে আমারই সুবিধে। ও যেখানেই থাক বরং আমার সঙ্গে থাকুক। ওর উপস্থিতি নিয়ে কারও প্রশ্ন তো হবেই না, উপরন্তু
আমি অঙ্ক ভালো করে শিখে নিতে পারব। সব চাইতে বড়ো কথা, আমি একজন খুব ভালো বন্ধু পেয়েছি।
আজ বৃহস্পতিবার, গুরুপূর্ণিমাতে স্কুলে ছুটি। মা নিচে কাজে ব্যস্ত। আমি সকাল থেকেই লেগে রয়েছি চিলেকোঠার ঘরে, ইজেলে টাঙানো ক্যানভাসে ‘মৎস্যকন্যা’-কে তুলির টানে ফুটিয়ে তুলতে।
মংলাদিঘির দিকে জানালা
দিয়ে ভিজে হাওয়া ঢুকছে, মাঝে মাঝে তাতে আসছে সদ্য ফোটা পদ্মের সুগন্ধ। ছবি প্রায় শেষ। আঁকাতে এতটাই বিভোর হয়ে ছিলাম যে কখন
রাঘব আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আমার আঁকা দেখছে, তা আমি টেরও পাইনি। ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখে চিনতে একটু সময় লাগল। আজ ওর গায়ের রঙ নীল, মাথার চুল কোঁকড়ানো বাদামি-কালো কী করে হয়ে গেল? আমি ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি দেখে ও বলে, “আমাদের ইচ্ছাশক্তিতে আমরা অনেক কিছু পারি। আজ কিছু কারণে আমার মনের অবস্থা অন্য রকম। গায়ের রঙও আর মাথার চুলও সেইজন্য পালটে গেছে।” বেশ লাগছে কিন্তু ওকে এই নতুন রূপে। অনেকটা জন্মাষ্টমীর কৃষ্ণঠাকুর মনে হচ্ছে। আমার আঁকা মৎস্যকন্যার অসমাপ্ত ছবিটা ও একমনে দেখছে আর মাঝে মাঝে আমায় দেখছে চেয়ে চেয়ে। সেই দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী বন্ধু, আমার আঁকা এই ছবিটা কেমন এগোচ্ছে?”
রাঘব গম্ভীর কন্ঠে বলে, “তুমি জানো কে ইনি? দেখেছ কখনও এঁকে?”
আমি বলি, “স্বপ্নে বহুবার, কিন্তু বাস্তবে দেখেছি সেই ঝড়-বৃষ্টির বাজপড়া রাতে, তুমি এই চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে পড়ার একটু আগে।”
“ইনি আমাদের রাজকন্যে।”
“তোমাদের রাজকন্যে? তোমাদের রাজ্যটা কোথায়?”
বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে আমার। কাল থেকে জানতে চাইছি এই কথাটার উত্তর ওর মুখ থেকে। এইবার অবসান হবে আমার সব জল্পনার।
রাঘব বেদনার স্বরে ধীরে ধীরে বলে, “আমাদের রাজ্য পাতালপুরী। একটু আগে তোমাদের গ্রাম বেড়াতে গিয়ে ওই মংলা দিঘি দেখছিলাম। আমি যাবার পরই দেখলাম জল থেকে মাথা তুলে দাঁড়াল বেশ কয়েকটা পদ্মফুল। একটু লক্ষ করে বুঝলাম, ওগুলো সাধারণ পদ্মফুল নয়, ওগুলো এখন আমাদের দেশের পরাধীনতার চিহ্ন। মনে পড়ে গেল, এই দিঘির নিচেই আছে আমাদের দেশে যাওয়া-আসা করবার একটা সিং দরওয়াজা।”
রাঘবের কাছে মিথ্যে কথা অজানা জিনিস, কিন্তু এখন এই বৃহস্পতিবারের নির্মেঘ আকাশে, যদি কড়কড় করে আওয়াজ করা মেঘের ডাক শোনা যায়, সেটা অনেকেই কল্পনা বলবে, কিন্তু আমি বলব না।
এইরকম মনে হলেও, বোধহয় আমার অবচেতন মন জানত এই কথা। তাই নিজেকে চট করে সামলাতে পারলাম। রাঘবকে জিজ্ঞেস করলাম, “আর তুমি? তুমি কি সেই ঝড়জলের রাতে, ওই পাতালপুরী থেকে উঠে এসেছ? কেন?”
রাঘব চাপা গলায় বললে, “রাজকন্যার আদেশে নির্বাসিত হয়েছি। তবে এতে আমার লাভই হবে। তোমাদের কাছ থেকে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি শিখে নিয়ে দেশকে বিদেশীদের কবল মুক্ত করব।”
আমি বলি, “তোমাদের পাতালপুরীতে রাজা নেই? রাজকুমারী দেশ চালান?”
রাঘব বলে, “রাজা আছেন, তিনি অদৃশ্য হয়ে এমন অবস্থায় আছেন যে নিজের দেশ পাতালপুরীতে ফিরতে পারছেন না। এই সবই এক বিদেশী শক্তির চক্রান্ত। এক মায়াবিনী এখন রাজকুমারী হয়ে দেশের লোককে লিলিপুট বানিয়ে দিয়েছে। এই মায়াবিনীকে তাড়াতে হলে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে। সেইসব আছে তোমাদের কাছে।”
আমাদের আলোচনা মাঝপথেই থেমে গেল। মহালি দাদা এ বাড়িতে পুজোতে ফুলের জোগান দিয়ে আসছে। সে নিশ্চয় কিছু একটা ভুল করেছে। মা তাকে একতলাতেই বেশ উঁচু গলাতেই কিছু বলছেন। আর একবার মায়ের গলা শোনা গেল, “মহালি একটা পদ্মও জোগাড় করতে পারনি। একবারও ভাবলে
না, আজ গুরু পূর্ণিমার দিনে, বিনা পদ্মে কী করে হবে লক্ষ্মী-নারায়ণের পুজো?”
গুরুপূর্ণিমার পুজোতে লাগবে বলে মা একটা পদ্মের জন্য আকুল হচ্ছেন। এইমাত্র রাঘব বললে যে মংলাদিঘিতে বেশ কয়েকটা পদ্ম ফুল ফুটেছে। এই কথাটা মনে হতেই সিধা দৌড় দিলাম মংলা দিঘির দিকে। আমি শুনতে পাচ্ছি আমার পিছনে পিছনে রাঘব আসছে চিৎকার করতে করতে, “ঋজু, ওই পদ্মফুলে হাত দিও না, তোমার বিপদ হবে।”
মায়ের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, ঋজু বিপদকে ডরায় না। মংলাদিঘিতে এসে দেখি, মাঝদিঘিতে একটা বড়ো পদ্মকে বৃত্তাকারে ঘিরে, ছোটো ছোটো অনেক পদ্মের যেন মেলা বসেছে। সবারই রঙ গোলাপি-লাল।
মাঝদিঘিতে মাঝে মাঝে ঘূর্ণি
ওঠে। এই কারণে সাঁতরে দিঘি পারাপার করা বা মাঝদিঘিতে
যাওয়া মানা আছে। এই সকালে, দিঘির আশপাশ ফাঁকা। একবার চারপাশ দেখে নিয়ে আমি ঠিক করলাম প্রথমে ব্রেস্ট স্ট্রোকে এগোব। তারপর কেউ যাতে দেখে না ফেলে সে জন্য ডুবসাঁতারে ঠিক পদ্মগুলোর কাছে গিয়ে শুরু করব তোলা। সবার শেষে বড়ো পদ্মকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেরত আসব।
পি টি স্যারের মতো নিজেকে নিজেই বললাম, “এনি ডাউট?” বলে একটু হেসে দিঘির বুকে
ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
পদ্মগুলোর থেকে মাত্র এক হাত
দূরে তখন, শুনতে পেলাম সমবেত মিহি কণ্ঠস্বর, “রাজকুমারী, হামলা শুরু করি?”
“তোরা কেউ হাত লাগাবি না, এটা আমার শিকার। এই মানুষের বাচ্চার একটা খুব ভালো গুণ যে বেশ ভালো সাঁতার কাটে, ছবি আঁকে আর গলা ছেড়ে খুব সুন্দর গান গায়। আমাদের কাজে লাগবে।”
বহুবার স্বপ্নে আর মাত্র একবার এক ঝলকের মতো দূর থেকে দেখা সুন্দরী
মৎস্যকন্যা, যে এই পাতালপুরীর রাজকন্যে, সে আমার সব কল্পনাকে চুরমুর করে বড়ো পদ্মটার ওপরে দাঁড়িয়ে, আমার একদম সামনে। সে কথা বলছিল সাপিনীর মতো হিস হিস করে।
রাজকন্যে এবার ইশারা করতেই, বিশাল আকারের রাঘব বোয়ালেরা আমায় ঘিরে ধরল। এতক্ষণ লক্ষ করিনি, ছোটো ছোটো পদ্মগুলো থেকে, অনেক রঙিন ছোটো ছোটো লিলিপুট আকারের মৎস্যকন্যে
বেরিয়ে পড়েছে। তাদের হাতে দড়ির মতো লতাপাতা।
আমাকে সাবধান করে দিয়ে রাজকন্যে বললে, “জুডোর প্যাঁচ খেলার মতো চালাকির চেষ্টা করলেই তার ফল খুব খারাপ হবে। তুমি জানো না, ওই রাঘব বোয়ালেরা একবার হাঁ করলেই তুমি সোজা ওদের পেটের মধ্যে চলে যাবে। আর আমাদের কথা যদি শোনো, তাহলে তুমি ওদেরই পিঠে চড়ে ঘুরে আসতে পারো পাতালপুরী থেকে।”
আমি হ্যাঁ বলার আগেই ছোটো মৎস্যকন্যেরা আমার পায়ে কুটুস, কুটুস করে কামড়াতে লাগল আর তার সঙ্গে
আমার হাত, পা লতাপাতা দিয়ে বেঁধে ফেলতে সুরু করলে। আমি কেমন অবশ মতো হয়ে গেলাম। এইটুকু শুধু বুঝতে পারছি যে আমার চেতনা লোপ পাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে দেখতে পেলাম
একটা বড়ো মাছের পিঠে আমাকে বেঁধে ফেলা হচ্ছে।
জলের তলায় এই অন্ধকার গুহা, মাঝে মাঝে আলো আসে। গুহার এক প্রান্ত স্ফটিকের। তাই দিয়ে দেখা যায় আরও অনেক গুহা, নানারকমের মাছেরা বেরিয়ে আসে আর ঢোকে। একটা বিশাল আকৃতির গুহা থেকে
ঝিনুকের খোলায় আসা-যাওয়া করেন, লিলিপুটের সাইজের অনেক সখী নিয়ে, পাতালপুরীর রাজকুমারী। তার আগে-পিছে একদল ভীষণাকৃতি দৈত্যাকার মাছের দল থাকে। এরা রাজকুমারীর সেনাপতি আর সৈন্যের দল।
আমার সঙ্গে থাকা দুই লিলিপুট
জলকন্যে, আমাকে এই পাতালপুরীর সম্বন্ধে এইসব বলেছে। রাজকুমারী তাদেরকে আদেশ দিয়েছেন আমার সঙ্গে থাকতে আর আমার কাছে গান আর ছবি আঁকা শিখে নিতে।
দুই কন্যের মধ্যে ছোটোটি যত মিশুকে, বড়োটি ততটাই গম্ভীর। সে কথা বলে আদেশের সুরে, “এই গুহার বাইরে যাবার চেষ্টা করলেই তোমাকে রাজকুমারীর সৈন্যেরা খুবলে খেয়ে নেবে। তোমার মুক্তি পাওয়া নির্ভর করছে, তুমি কত তাড়াতাড়ি আমাদের ছবি আঁকা আর গান শেখাতে পার তাঁর ওপর। এছাড়াও তোমাকে রাজকন্যের সখীদের বাড়ি বানানোর কাজও শেষ করতে হবে।”
এই বাড়ি বানানোর ব্যপারটা, আমাকে সবার আগে বলেছে ছোটো। দিঘিতে দেখা ছোটো ছোটো পদ্মগুলো রাজকন্যার সখীদের বিশ্রামঘর। পাতালপুরী থেকে দিঘির জলের ওপরে এসে ওনারা এই পদ্মের ওপর শুয়ে-বসে বিশ্রাম করেন, নিজেদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা করেন। আমাকে বন্দি করে, রাজকন্যে আর তার সখীরা নিজের নিজের বিশ্রামঘরে আরাম করছিলেন। সেই সময় আমার বন্ধু রাঘব এসে তাদেরকে বিশ্রামঘর থেকে ভাগিয়ে সব পদ্মগুলো নিয়ে গেছে।
“রাঘব আমাদের পাতালপুরীর সবচাইতে বড়ো বীর। ওর সঙ্গে মোকাবিলা করবার ক্ষমতা কারও নেই। রাজকন্যে আর তার সখীরা মারমুখী রাঘবকে দেখে ভয়ে পালায়। অপমানের জ্বালায় রাজকন্যে প্রথমে ভেবেছিল তোমাকে রাক্ষুসে মাগুর আর বোয়ালদের কাছে ছেড়ে দেবে। পরে আমাদের মতো ছোটোদের কথা মেনে, তোমাকে না মেরে বাড়িগুলো বানাবার কাজ দেয়।”
বন্ধুর উপযুক্ত কাজ করেছে রাঘব। ন্যায়-অন্যায় বুঝি না, গুরুপূর্ণিমাতে মা আকুল হয়ে লাল-গোলাপি পদ্ম চাইছিল। পাতালপুরীর রাজকন্যে আমাকে বন্দি করলেও, সেই পদ্মগুলো মায়ের কাছে পৌঁছে গেছে এতেই আমি খুশি। শুধু এই নয়, আমার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়াটা যে আমার বন্ধু নিজের ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতায় সামলে দিয়েছে, সেটা বুঝলাম অনেক পরে।
পাতালপুরীর এই গুহা-কারাগারে দিন-রাত বোঝার উপায় নেই। পাতালপুরীর খেত আছে। তাতে লিলিপুটেরা নানারকমের সুস্বাদু শেওলা আর একরকমের লাল রঙের ফলের চাষ করে। ছোটো কন্যে সেই খেত থেকে আমার আহার এনে দেয় আর আমার গান শোনে। একটু ধরিয়ে
দিলেই ও সুর তুলে নিয়ে নিজের আওয়াজে সেই গান গায়।
ওর কাছে শুনি যে এই পাতালপুরী আগে লিলিপুটদের দেশ ছিল। তাদের থাকবার জন্য এই পাতালপুরী যিনি বানিয়েছিলেন সেই রাজা ছিলেন আলোর মতো উজ্বল। তার জন্যই এই পাতালপুরীতে কখনও অন্ধকার নেমে আসত না। মাঝে মাঝে তিনি ধ্যানে বসে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। এই রকম এক সময়ে, এক মৎস্যকন্যা এসে তাদের দেশ দখল করে রাজকুমারী হয়ে যায়। তার অশুভ মন্ত্রের কিছু খেলায় রাজা অদৃশ্য হয়েই থেকে যান। লিলিপুটেরা নিজের দেশে রাজকুমারীর বাঁধা মজদুর হয়ে যায়।
ছোটো কন্যে বলে যে লিলিপুটদের দূর সম্পর্কের ভাই হল রাঘব। রাঘব লিলিপুট নয়, শারীরিক আর মানসিক ক্ষমতায় অনেক শক্তিশালী। রাজকন্যে এর সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে, এক চক্রান্ত করে, একে পাতালপুরী থেকে নির্বাসন দেয়।
লিলিপুটদের বিশ্বাস, রাঘব মানুষের সংস্পর্শে এসে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। রাজকন্যাকে তাড়িয়ে দিয়ে, অদৃশ্য রাজাকে ফিরিয়ে আনবে। পাতালপুরী আবার লিলিপুটদের হবে।
ছোটো কন্যের কাছে এইসব গল্প শুনতে শুনতে আমরা দু’জনে মিলে রোজ বেশ কিছু পদ্ম মানে রাজকন্যার সখীদের বিশ্রামঘর বানাই।
একদিন বড়োকন্যে চলে যেতেই ছোটো বলে, “তাড়াতাড়ি চলে এসো আমার সঙ্গে, গুহার বাইরে।”
আমি ইতস্ততঃ করি, “গুহার বাইরে? ওখানে তো...”
ছোটো বলে, “লড়াই শুরু হয়ে গেছে, পাতালপুরীর সৈন্যরা সব তাতেই ব্যস্ত হয়ে আছে।”
আমি বলি, “কোন শত্রু এল তোমাদের পাতালপুরী দখল করতে?”
ছোটো রেগে যায়, “সে আমাদের শত্রু নয়, আমাদের উদ্ধারকর্তা রাঘব। রাঘব পাতালপুরীর দক্ষিণ দুয়ারে এসে গেছে। সেই খবরে, এই পাতালপুরীতে তার সমর্থকেরা সবাই সেখানে চলে গেছে। এই মুহূর্তে, জোর লড়াই চলছে বিদেশিনী রাজকুমারীর জলসৈন্যদের রাঘব আর তার সমর্থকদের সঙ্গে। পূর্বদুয়ারে এখন কেউ পাহারায় নেই। তোমাকে সেখানে পৌঁছে দিলেই তুমি সহজেই নিজের দেশে যেতে পারবে।”
মংলাদিঘির স্নানঘাটের পৈঠায় বসে মাঝদিঘিটাকে দেখছিলাম বার বার। ওই মাঝদিঘির কত নিচে পাতালপুরী, কে জানে? কিন্তু ওইখানেই, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে আজ মঙ্গলা
মায়ের পুজোর দিন মঙ্গলবার, এই টানা ছ’দিন ওই পাতালপুরীতে কাটিয়েছি। সেটা সত্যি কি মিথ্যে কে জানে?
আমি যদি এই টানা ছ’দিন নিখোঁজ থাকি, তবে একটু আগে আমার কাকার বাড়ির সবাই, যারা