গল্প:: নকুল বিশ্বাসের বিজ্ঞানচর্চা - রোহন রায়


নকুল বিশ্বাসের বিজ্ঞানচর্চা
রোহন রায়
 
এক
 
দেয়ালজোড়া কাচের জানলার ওপারে ছাব্বিশতলা হ্যাবিট্যাট-বিল্ডিংয়ের কয়েকটা তলা দেখা যাচ্ছে। বিরাট বিরাট প্যানেল, প্যাঁচানো স্বচ্ছ করিডর। সবই টেম্পারড কাচের তৈরি। আলো পড়ে ঠিকরে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হেঁটে যাচ্ছে দু-চারটে আবছা অবয়ব। ওরা কেউই মানুষ নয় নিশ্চয়ই। মুগ্ধ চোখে সেদিকে তাকিয়ে সহদেব বিশ্বাস প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, খানে সব মিলিয়ে কটা থ্যানাবট থাকে? লাখখানেক হবে?
কনসালট্যান্টের চোখজোড়া কম্পিউটার-স্ক্রিন থেকে সরে এসে সহদেবের চোখে দাঁড়াল, এই মুহূর্তে এগারো লাখ চুরাশি হাজার দুশো একানব্বই
ওরে বাবা, এত রোবট ওখানে ধরে?”
আরও লাখদেড়েক আরামসে ধরে যাবে। তবে আমাদের জায়গা দ্রুতই বাড়াতে হবে থ্যানাবটের বুকিং গত বছরের তুলনায় একাত্তর পারসেন্ট বেড়েছে -বছরের বাজেটে থ্যানাবটের খরচাপাতি অনেক কমানো হয়েছে, জানেন নিশ্চয়ই ফলে মধ্যবিত্তরাও এখন নিজেদের প্রিয়জনেদের জন্য থ্যানাবট কিনতে পারছে
ছাইরঙা সাফারি স্যুটের কেতাদুরস্ত যুবকটিকে অনেকক্ষণ ধরে মাপছিলেন সহদেব। বড্ড পারফেক্ট না? গায়ের চামড়া থেকে আঙুলের নখ সবই কেমন চকচক করছে। কোথাও একফোঁটা খুঁত নেই যেন। একটু ইতস্তত করে সহদেব প্রশ্নটা করেই ফেললেন, কিছু মনে করবেন না, আপনি কি...?”
না না, সহদেবকে কথা শেষ করতে না দিয়েই কনসালট্যান্ট মিটিমিটি হেসে বললেন, “আমি রোবট নই আমাদের কোম্পানির আশি শতাংশ কর্মীই রোবট তবে ক্রিটিকাল কমিউনিকেশনের কাজগুলো এখনও রোবটদের ওপর ছাড়া যাচ্ছে না
সহদেব একটু লজ্জিত গলায় বললেন, “আসলে আজকাল অনেক রোবট অবিকল মানুষের মতোই দেখতে হয় বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল কিছু মনে করবেন না যেন।
না না, মনে করার কী আছে? ইটস ফাইন আপনি হিউম্যানয়েডের কথা বলছেন হিউম্যানয়েডদের ভিস্যুয়ালি মানুষের মতোই তৈরি করা হয় ইন ফ্যাক্ট, আর বছরদুয়েকের মধ্যে আমরা থ্যানাবটদেরও হিউম্যানয়েড ফর্মে বানাব ফ্রাবার বা ফ্লেশ রাবার নামে একধরনের এলিমেন্ট দিয়ে এমনভাবেই তাদের তৈরি করা হবে যাতে দেখতে অবিকল সেই মানুষটার মতোই লাগে তাতে আরও বেশি করে আসল মানুষটার অনুভূতি পাওয়া যাবে মানে একেবারে পারসোনালাইজড হিউম্যানয়েড-থ্যানাবট বানানো হবে। মানুষটার চিন্তাচেতনা-স্মৃতি সব তো থাকবেই, উপরি পাওনা হবে তারই মতো অ্যাপিয়ারেন্স
বলেন কী?” সহদেব হাঁ।
হ্যাঁ মিঃ বিশ্বাস। কাজ চলছে জোরকদমে। তবে কিনা হিউম্যানয়েড-থ্যানাবটের খরচ অনেকটা বেশি হবে, বুঝতেই পারছেন। বেশি মিষ্টি চাইলে চিনিটাও বেশি ঢালতে হবে।
তা তো বটেই। কিন্তু আমি ভাবছি বিজ্ঞান যে আর কী কী কামাল দেখাবে!”
কনসালট্যান্ট তৃপ্তির হাসি হাসলেন, “সেইজন্যই তো আমাদের কোম্পানির ট্যাগলাইন হচ্ছে, ডেথ ইজ মিথ মৃত্যু একটা গুজব এই যে দেখুন, আপনার দাদা টেকনিক্যালি মারা গেছেন দু-মাস হতে চলল অথচ তাঁরই ডাকে কিনা আজ আপনি এখানে ছুটে এলেন দশ বছর আগে হলে আমরা একে ভৌতিক ঘটনা বলতাম কিন্তু আজ? পিয়োর সায়েন্স
সহদেব মাথা নেড়ে সায় দিলেন, “দাদা বেঁচে থাকলে নিজের থ্যানাবট দেখে নিজেও ভারী খুশি হতেন উনি নামকরা একজন সায়েন্টিস্ট ছিলেন, জানেন বোধহয়?”
আরে, নকুলবাবুকে কে না চেনে? দু-হাজার পঁয়ত্রিশ সালের ভাটনগর অ্যাওয়ার্ড উনিই পেয়েছিলেন না?”
হ্যাঁ। সবাই বলে আর দু-চার বছর বাঁচলে নোবেলটাওহে হে।দাদার গর্বে নাকের পাটা একটু ফুলে উঠল সহদেবের।
কনসালট্যান্ট হাসিমুখে মাথা নাড়লেন, “ওঁর থ্যানাবট তৈরি করতে পেরে আমরা গর্বিত ওঁর মেধাকে যে প্রিজার করা গেছে, এটা আমাদের গবেষণার জন্য একটা বড়ো অপরচুনিটি বলে মনে করছি আশা করি একদিন ওঁর মেধাকে আমরা কাজে লাগাতে পারব
সেটা সত্যি হলে দাদার আত্মা পরম শান্তি পাবে।
কনসালট্যান্ট একটা কেজো হাসি দিয়ে কম্পিউটারে খুটখাট করে কীসব করলেন। তারপর সামনে ঝুঁকে পড়ে টেবিলে হাতদুটো জড়ো করে বললেন, “যাক গে, আপনাকে যেটা বলছিলাম আপনি বোধহয় এই প্রথম ভিজিটে এলেন?”
হ্যাঁ।
অলরাইট। সি, নকুলবাবুর কেসটা একটু আনইউজুয়াল সেজন্যই ওঁর কাছে যাবার আগে আপনাকে এখানে ডাকলাম।
সহদেবের কপালে ভাঁজ পড়ল, “আনইউজুয়াল কেন?”
বাড়ির লোকই সাধারণত থ্যানাবটদের ভিজিট করতে আসেন থ্যানাবট তার প্রিয়জনকে ডেকে পাঠাচ্ছে, এমন এর আগে হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না অবশ্য আমরা সম্প্রতি খেয়াল করেছি কিছু কিছু থ্যানাবটের চিন্তাশক্তি নিজে-নিজেই খানিকটা করে ইভলভ করছে নকুলবাবুর কেসটা তার মধ্যে সবচেয়ে ইয়ে। বুঝলেন কিনা?”
ইয়ে মানে?”
মানে, খুবই নিজস্বতা দেখাচ্ছেন উনি।
আপনার কথা আমি ঠিক
বুঝিয়ে বলছি,” কনসালট্যান্ট টানটান হয়ে বসলেন, “থ্যানাবটের মধ্যে মৃত মানুষের স্মৃতি, চেতনা এসব থাকলেও একেবারে স্ট্যাগন্যান্ট অবস্থায় থাকে ব্যাপারটা হচ্ছে অনেকটা বদ্ধ ডোবার মতো থ্যানাবট হচ্ছে জাস্ট একটা ডিজিস্পেস যেখানে সবই ডেটা, মানে কাঁচা তথ্য কিন্তু তারা নট নড়নচড়ন অবস্থায় আছে। সেই ডেটার জটিল কোনো প্রসেসিং নিজে থেকে সম্ভব নয়। মানে সহজ কথায় বলতে গেলে, মৃত মানুষের এই ডিজিটাল-মনের তেমন কোনো ইভল্যুশন সম্ভব নয়। কারণ ততদূর আমরা এগোতে পারিনি। কী বলছি বুঝতে পারছেন তো?”
সহদেব বেশ বিভ্রান্ত বোধ করছেন, তবু ঘাড় হেলালেন।
মানুষের চেতনার রহস্য আজও ভেদ হয়নি। ফলে তাকে রিক্রিয়েট করারও প্রশ্ন আসে না। কয়েকটা সহজ-সরল ডিডাকশন বাদে জটিল কোনো চিন্তাভাবনা করা থ্যানাবটদের পক্ষে সেভাবে সম্ভব না কিন্তু নকুলবাবুর থ্যানাবট আমাদের একটু অবাকই করছে
অবাক করছে কেন?”
থ্যানাবটটা এমন কিছু কথাবার্তা বলছে যা আনইউজুয়াল। নট এক্সপেক্টেড ফ্রম থ্যানাবটস। এই যেমন ধরুন, এই দু-দিন আগেই ওঁর অ্যাটেনডেন্টকে বলেছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাপারটা নাকি খুব ইন্টারেস্টিং। এখানে এই নিয়ে কোনো ক্র্যাশ কোর্স করানো হয় কিনা খোঁজ নিচ্ছিলেন। আরেকদিন অ্যাটেনডেন্টকে ডেকে এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে রাখতে বলেছেন। ওঁর নাকি শীত করে। প্লাস, আপনাকে ডেকে পাঠানোর ব্যাপারটা তো রয়েইছে।
সহদেব চোখ কপালে তুলে বললেন, “ওরে বাবা, এ তো অশৈলী কাণ্ড!”
বরাভয়-মুদ্রায় হাত তুললেন কনসালট্যান্ট, না মিঃ বিশ্বাস। আজ যেটা অলৌকিক মনে হচ্ছে, কাল বিজ্ঞান সেটার পর্দা ফাঁস করে দেবে। হিউম্যান-কনশাসনেসের রহস্য ভেদ করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আশা করছি, থ্যানাবটরাই এই সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে আপনি কি বাই-এনি চান্স ভয় পাচ্ছেন?”
সহদেবের সত্যিই একটু গা-ছমছম করছিল। ঢোঁক গিলে তিনি বললেন, না, মানে, যন্ত্রটা যদি হঠাৎ অ্যাটাক করে বসে? যত যাই হোক, শেষমেশ তো যন্ত্রই!”
কিন্তু চেতনাটা তো আপনার দাদার ভয়ের কী আছে? তাছাড়া থ্যানাবটের চেহারার নমুনা দেখলেই বুঝতে পারবেন যে -জিনিসের পক্ষে কাউকে অ্যাটাক করা সম্ভব না আপনার স্ক্রিনে দেখুন
সহদেবের সামনের ছোটো স্মার্ট স্ক্রিনটা এতক্ষণ নিষ্ক্রিয় ছিল। এবার তাতে একটা ছবি ফুটে উঠল স্ক্রিনে সাদা ডাব্বার মতো একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে দেখতে অনেকটা পুরোনো দিনের কেরোসিনের জ্যারিকেনের মতো হাত-পা বলে কিছু নেই একপাশে শুধু একটা হাতল সামনে দুটো খুদে নীল আলো জ্বলছে পাশাপাশি ঠিক যেন একজোড়া চোখ। সহদেব হাঁপ ছাড়লেন, এইটাই থ্যানাবট?”
হ্যাঁ নিশ্চিন্ত হলেন?”
একগাল হাসলেন সহদেব
কনসালট্যান্ট কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে বললেন, এবার আপনি আপনার দাদাকে ভিজিট করতে পারেন। আপনি যাবেন হ্যাবিট্যাট-বিল্ডিংয়ের টুয়েন্টি সেকেন্ড ফ্লোর, ডি উইং আপনার আজ প্রথম ভিজিট আধঘণ্টা সময় পাবেন যদি সময় বাড়াতে চান, প্রতি আধঘণ্টায় পাঁচশো টাকা
সহদেব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, “কোনদিকে যাব একটু যদি বুঝিয়ে বলেন। আসলে অতবড়ো বিল্ডিংয়ে ঠিক
ডোন্ট ওরি। ভজনলাল আপনাকে গাইড করবে।আঙুল তুলে সহদেবের পিছনদিকে নির্দেশ করলেন কনসালট্যান্ট
সহদেব ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, তাঁর ঠিক পিছনেই একটা মেটাল রোবট। কখন যেন নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছে। রোবট বলে চিনতে অসুবিধা হয় না, কারণ তেমন কোনো অতিরিক্ত সাজসজ্জা তার নেই। সাধারণ মেটালের দেহ। কপালে একটা লাল আলো মিটমিট করছে। ভজনলাল সহদেবকে একটা মস্ত স্যালুট মারল। প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও স্যালুট পেয়ে খুশিই হলেন সহদেব নাঃ! রোবট হলেও ছেলেটা সহবত জানে
কনসালট্যান্ট প্লাস্টিক-হাসি হেসে বললেন, “সময় থাকতে থাকতে আপনার থ্যানাবটটাও বুক করিয়ে রাখুন ষাট বছর বয়েস হবার আগে বুক করলে টেন পারসেন্ট ডিসকাউন্ট
 
দুই
 
ভজনলালের সঙ্গে কনভেয়ার বেল্টে চড়ে হ্যাবিট্যাট-বিল্ডিংয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়ে মেটালাইভ কোম্পানির বিপুল কর্মকাণ্ডের কথা ভাবছিলেন সহদেব। এদের দৌলতে কয়েক বছরের মধ্যে চারপাশের সমস্ত কিছু কেমন ভোজবাজির মতো পালটে গেল। এই দু-হাজার তেতাল্লিশ সালে এসে নিজের যৌবনকালের কথা মনে করতে গেলে মনে হয়, যেন পূর্বজন্মের কথা
গ্রিক ভাষায় থ্যানোস মানে অমর। সেখান থেকেই থ্যানাবটনামকরণ। বিমার দালাল নীলরতনের পাল্লায় পড়ে মুমূর্ষু দাদার জন্যে একটা থ্যানাবট বুক করিয়ে রেখেছিলেন সহদেব নকুলের ক্যানসার তখন ফোর্থ স্টেজ। ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। নীলরতন বলেছিল, “নকুলবাবুর ওয়ারিশন বলতে তো আপনিই মেমোরিটা স্টোর করেই রাখুন কখন কী কাজে লেগে যায়!” তখন মনে হয়েছিল বাজে খরচ আজও তাই মনে হচ্ছে দাদা আত্মভোলা, জ্ঞানতাপস টাইপের লোক। মৃত্যুর পরেও কাজ আসবেন, এমন মানুষ তিনি ছিলেন না ফিজিক্সের অধ্যাপনার পাকা চাকরি ছেড়ে একান্তে নিজের গবেষণা নিয়ে পড়ে ছিলেন সারাজীবন বিয়ে-থা করেননি বিজ্ঞানীমহলে নামডাক হয়েছিল বিস্তর। পয়সাও নেহাত কম রোজগার করেননি। তবে বিষয়বুদ্ধি ছিল না, কিছুই জমাতে পারেননি অবশ্য সহদেবের সায়েন্টিফিক আপ্ল্যায়েন্সের ব্যাবসাটা নকুলের দু-দুটো বাঘা পেটেন্টের জোরেই দাঁড়িয়ে গেছিল তার একটা বিক্রি করলেই নকুল কয়েক কোটি কামাতে পারতেন তা তিনি করেননি সহদেবের কোম্পানির জন্যই দিয়ে দিয়েছিলেন সহদেব দাদার সে-ঋণ অস্বীকার করতে পারবেন না কখনোই খানিকটা সেই কৃতজ্ঞতার বশেই বোধহয় নীলরতনকে সেদিন তিনি নাবলতে পারেননি নীলরতন সঙ্গে সঙ্গে কাঁধের ব্যাগ থেকে থার্মোমিটারের মতো একটা যন্ত্র বের করে মৃত্যুপথযাত্রী নকুলের মুখে গুঁজে দিয়েছিল। তার মধ্যে নাকি একটা মেমোরি চিপ রয়েছে যেটা নকুলের স্মৃতি, চেতনা, চরিত্রের খুঁটিনাটি এবং গলার স্বর কপি করে নিচ্ছে। সেই চিপটা চালান হয়ে যাবে একটা থ্যানাবটের মধ্যে।
থ্যানাবট নামটা সহদেব আগে শুনেছিলেন। সেদিনই বিশদে জানলেন। থ্যানাবট আসলে হচ্ছে এক ধরনের স্টোরেজ-রোবট একেবারে লেটেস্ট প্রযুক্তি মৃত মানুষের সমস্ত তথ্য আর স্মৃতি জমা রাখা যায় এদের মধ্যে গলার স্বরটুকুও অবিকল ধরে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে একজন মানুষের ব্যবহার ও স্বভাবের অজস্র খুঁটিনাটি তথ্যের ভিত্তিতে এই থ্যানাবটরা হয়ে উঠতে পারবে সেই মানুষটির চরিত্রের এক ডিজিটাল প্রতিলিপি ফলে চাইলেই মৃত প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডা মারা যাবে, সুখদুঃখের গল্প করা যাবে দুধের তেষ্টা পিটুলিগোলা জলে মেটানোর চেষ্টা আর কী নীলরতন জানিয়েছিল, এই তথ্য কপি করার ব্যাপারটা মানুষ বেঁচে থাকতে থাকতেই করে রাখা ভালো। মৃত্যুর পর করতে চাইলে মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই করতে হবে, কারণ মৃত্যুর পর মাত্র পাঁচ মিনিট মানুষের মগজ সচল থাকে সে সুযোগ তো বেশিরভাগ সময়েই পাওয়া যায় না। কনসালট্যান্ট ভদ্রলোক তো জানালেন, কিছুদিন পর চাইলে থ্যানাবটের বাইরের চেহারাও যথাসম্ভব আসল মানুষটার মতো করে তোলা যাবে হাঁটতে হাঁটতে সহদেব ভাবছিলেন, তাঁর ছেলেরা কি তাঁর ওইরকম একটা হিউম্যানয়েড-থ্যানাবট বানাবে না? ডাউন পেমেন্টটা না হয় সহদেবই করে দেবেন নীলরতনের সঙ্গে কথাবার্তা সেরে রাখতে হবে কবে কী হয়, আগে থেকে কি কিছু বলা যায়? জীবন জিনিসটা পদ্মপাতায় জল বই তো নয়
লিফটে ওঠার আগে দুটো সিকিউরিটি চেকিং পেরোতে হল বাইশতলায় পৌঁছে আরও একটা অজস্র থার্মাল ক্যামেরার নজরদারি, অ্যান্টি-ক্লাইম্ব ফাইবার টেকনোলজি ফেন্সিং আর স্ক্যানারের পরীক্ষায় পাশ করে শেষমেশ থ্যানাবটস কোয়ার্টারের বি উইংয়ে ঢোকার সুযোগ পেলেন সহদেব ভিতরে একটা গম্ভীর রোবট তাঁর কিউবিকল নম্বর জিজ্ঞেস করল ট্যাবে নম্বর মিলিয়ে দেখে তাঁকে নমস্কার ঠুকে সামনের দিকে হাত দেখাল
তিন নম্বর অ্যাক্সেস পয়েন্টে সহদেবের চোখের মণি আর হৃদস্পন্দন স্ক্যান হওয়া মাত্রই নকুল বিশ্বাসের . প্রিমিয়াম ভার্শন থ্যানাবটটিকে চালু করে দেওয়া হয়েছিল সহদেবকে নির্দিষ্ট কিউবিকলে নিয়ে এসে ভজনলাল স্যালুট করে বিদায় নিল আধঘণ্টা পর ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলেই সে আবার আসবে।
সহদেব চেয়ারে বসলেন ঘরে চেয়ার বাদে আসবাব বলতে একটা ধাতব টেবিল, তার ওপর একটা ট্যাব, আর দেয়ালে একটা সিকিউরিটি ক্যামেরা বাড়ির লোক দেখা করতে এলে সেটা বন্ধ রাখা হয়, গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে সামনে একটা স্ট্যান্ডের ওপর কেরোসিনের ডাব্বার মতো নকুল বিশ্বাসের থ্যানাবটটি দাঁড়িয়ে তাকেও একরকম আসবাবের মধ্যেই ধরা চলে।
দাদার সঙ্গে শেষ দেখা সেই হাসপাতালের বেডে কুঁকড়ে ছোট্ট হয়ে যাওয়া শরীরটায় কিছুই নেই তখন গালদুটো তুবড়ে ভিতরে ঢুকে গেছে মনে পড়ে মনটা একটু খারাপ হল সহদেবের দাদার চেতনা বা স্মৃতি ওই ধাতব ডাব্বাটার মধ্যে ভরা কিন্তু তা বলে কি ডাব্বাটাকে দাদা ডাকাটা সংগত হবে? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সহদেব একটু আনমনা হয়ে গেছিলেন এমন সময় ডাব্বাটা বলে উঠল, “কেমন আছিস সদু?”
সহদেব চমকে উঠলেন -যে অবিকল দাদার গলা! তারপরেই বুকের ভেতরটা একটু চিনচিন করে উঠল তাঁর দাদা মারা যাবার পর -নামে আর কেউ ডাকার নেই তাঁকে এতদিন পর দাদার কণ্ঠে নিজের ডাকনাম শুনে সহদেবের চোখদুটো ছলছল করতে লাগল ধরা গলায় তিনি বললেন, “ভালো আছি দাদা তুমি কেমন আছ?
বিন্দাস!” বেশ প্রফুল্ল শোনাল নকুলের গলা, “ফার্স্ট ক্লাস! খুব আরাম এখানে সায়েন্স নিয়েই আছি সারাদিন। এদের কাজকম্মো বুঝে নিচ্ছি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আমার লাইফ এখন পুরো ডি লা গ্র্যান্ডি!”
সহদেব অবাক হলেন না তাঁর দাদা বিজ্ঞানপাগল লোক মরার পরেও যে সে-নেশা যাবে না, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে সহদেব দাদার কথায় সায় দিয়ে বললেন, “তা বটে বিজ্ঞানের দৌলতে যে মানুষের এত বাড়বাড়ন্ত হবে, তা কি পঞ্চাশ বছর আগেও ভাবা গেছিল?”
কেন ভাবা যাবে না? আলবাত ভাবা গেছিল,” নকুলের গলায় ঠেস, পড়াশোনাটা কোনোদিনই মন দিয়ে করলি না, জানবি কী করে? ব্যাবসা কেমন চলছে বল।
খুব ভালো চলছে -বছর প্রফিট-মার্জিন ফিফটিন পারসেন্ট বেড়েছে
দিয়ে কিচ্ছু প্রমাণ হয় না -ব্যাবসায় টিকে থাকতে গেলে নিজেকে আপডেট রাখা খুব দরকার প্রফিটকে সাসটেইনেবল করতে হলে লেটেস্ট টেকনোলোজি বিষয়ে সবসময় আপডেটেড থাকা দরকার তোকে নিয়ে তো সেটাই চিন্তা পড়াশোনা করতে চাস না তোরা ভাবিস ব্যাবসার জন্য পড়াশোনা লাগে না সেটাই তোদের সবচেয়ে বড়ো মূর্খামি বুঝিয়ে বুঝিয়ে মরেই গেলাম আমি তা- তুই শিখলি না
সহদেব একটু বিরক্ত হলেন। মরেও লোকটার স্বভাব গেল না। আবার সেই পড়াশোনার খোঁটা!
সহদেব বুদ্ধিশুদ্ধিতে একটু খাটো বলে নকুল সারাজীবনই সহদেবকে যথেষ্ট তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এসেছেন। সেটা মরার পরেও যায়নি দেখা যাচ্ছে। এখন অবশ্য লোকটা রাগ-টাগের ঊর্ধ্বে। এই ভেবেই সহদেব নিজেকে সংবরণ করলেন। নাহলে এই আধুনিক পরিষেবার জন্য এখনও যে মাসে মাসে কিছু টাকা গুনতে হচ্ছে, সেটা দাদাকে মনে করিয়ে দেওয়াই যেত সহদেব শান্তভাবে বললেন, “ব্যবসার চাপ বাড়ছে পড়ার জন্য এখন আর সময় করে ওঠা মুশকিল
নকুল উদাস গলা বললেন, “ভালো হলেও তোর থাকবে, খারাপ হলেও তোর থাকবে আমার কী বল! আমি তো পগার পার!”
সহদেব কবজি উলটে হাতঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বললেন, “ডেকে পাঠালে কেন সেটা তো বলবে।
এখানে আছি দু-মাস হতে চলল, তোর একদিনও সময় হল না দেখা করতে আসার? আমার শরীরটা না হয় নেই, কিন্তু স্মৃতি-সত্তা যখন টনটনে আছে তখন মন খারাপও তো হতে পারে, নাকি?”
কিন্তু তোমার তো এখন আবেগ-অনুভূতি থাকার কথা না থ্যানাবট তো নিশ্চল স্মৃতির একটা ডোবা।
ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ হল। নকুল বললেন, “কিন্তু আমার তো সবই মনে পড়ে রে সদু। তোর কথা, মুনিয়ার কথা, বউমার কথা, বউমার হাতের সেই পোস্তর বড়া, সেই মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাক --ব।
এইসব তো আর খেতে পারবে না দাদা। মায়া বাড়িয়ে লাভ কী বলো!”
না না, এইসব নিয়ে আর ভাবছিই না। জীবন ভারী ফঙ্গবেনে জিনিস, বুঝলি। আরও ফঙ্গবেনে হচ্ছে এইসব ক্ষণিকের সুখ। এইসব কি আমায় মানায়? না না, এখন আমি সায়েন্স ছাড়া আর কিছু নিয়েই ভাবছি না। সায়েন্স ছাড়া আর কোনো পিছুটান নেই এখন।
কিন্তু মরার পর সায়েন্স নিয়েই বা কী করবে দাদা? সেটুকুও কাটিয়ে ফ্যালো একটু চেষ্টা করে। খুব কঠিন হবে কি? বাকিগুলোও যখন পেরেছ।
সায়েন্স আমায় ছাড়বে না রে। আর আমিও সায়েন্স ছাড়া থাকতে পারব না। এই সার বোঝা বুঝে গিয়েছি এই দু-মাসে। সেইজন্যই তো সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললুম।
কী সিদ্ধান্ত?”
আমার ল্যাবরেটরিটা কি তোর কাজে লাগছে? ওটা ফাঁকা করে দিতে কি অসুবিধা হবে?”
ল্যাবরেটরি? ল্যাবরেটরি এখন তোমার কোন কাজে লাগবে? কোনো কলেজ-ইউনিভার্সিটিকে দেবে নাকি?”
না না। ভাবছি ফিরে যাব। বিজ্ঞানচর্চা শুরু করব নতুন করে।
তুমি বিজ্ঞানচর্চা শুরু করবে?” সহদেবের একগাল মাছি।
হ্যাঁ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাপারটা খুব মনে ধরে গ্যাছে বুঝলি। ভারী ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। এবার এই নিয়েই আদাজল খেয়ে লেগে পড়ব ভাবছি। হামবুর্গ কনফারেন্সে মরণোত্তর নোবেল চালু করার প্রস্তাব এসেছে। কনশাসনেসের রহস্যটা যদি ভেদ করে ফেলতে পারি, নোবেল কে আটকায়!” নকুলের গলায় শিশুর উচ্ছ্বাস।
সহদেব হেসে ফেললেন, “তুমি আছ যে বিজ্ঞানচর্চা করবে? এই তো তোমার ক্যানেস্তারার মতো শরীর। এই দিয়ে বিজ্ঞানচর্চা করবে?”
নকুল একটু অসন্তুষ্ট হলেন যেন, “বিজ্ঞানচর্চায় শরীর লাগে নাকি? এ কি ডাম্বেল-বারবেল ভাঁজা নাকি? আমার ভাবনাচিন্তা তো এখনও টনটনে।
মানে তুমি কি বলছ তোমাকে এই অবস্থায় বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাব? তারপর ল্যাবে তুমি গবেষণা করবে?”
অত ঝামেলা করার দরকার নেই। এই ক্যানেস্তারাটা দিয়ে হবেই বা কী?”
মানে? তাহলে কীভাবে নিয়ে যাব তোমায়?”
এখন আর যাতায়াত নিয়ে সমস্যা কীসের? যখন খুশি যেখানে খুশি যাচ্ছি। এই তো গতকালই হামবুর্গে সায়েন্স কনফারেন্স অ্যাটেন্ড করে এলাম। দু-দিন আগে ঘুরে এলাম অ্যান্টার্কটিকা। এস্কিমোদের জীবনযাত্রাটা সরেজমিনে দেখে এলাম। গত হপ্তায় এভারেস্টটা দেখে এলাম। দু-চারটে ইয়েতির সঙ্গে মোলাকাত হল। খোশগল্প হল।
অ্যাঁ!”
হ্যাঁ রে। সবাই ওদের ভয় পায় বটে, কিন্তু ব্যাটারা দেখলাম বেশ বিনয়ী, সভ্য-ভদ্র। খুব স্পিরিচুয়াল জীব। সিক্সথ সেন্স প্রবল।
সহদেব হাঁ করে যন্ত্রটার দিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে বললেন, “তুমি এইসব জায়গায় গেছিলে?”
নাহলে আর বলছি কী?” ভারী উৎফুল্ল শোনাল নকুলের কণ্ঠ, “লাইফটা এখনই এনজয় করছি বুঝলি! ফুস করে এখানে-সেখানে চলে যাচ্ছি টিকিট কাটা, রিজার্ভেশনের বালাই নেই খাওয়া-দাওয়া, বাহ্যি-টাহ্যির ঝামেলা নেই কোনো বন্ধন নেই। কোনো পিছুটান নেই। একমাত্র একটাই পিছুটান এখনসায়েন্স। সেজন্যই ভাবছি আবার ফিরে গিয়ে গবেষণা শুরু করব। এটা বলার জন্যই তো ডাকলুম তোকে।
সহদেব মাথা চুলকোলেন। এ কী প্রলাপ বকছে যন্ত্রটা! মানুষটা বেঁচে থাকলে না হয় বলা যেত, পেট গরম হয়েছে কিংবা মাথা বিগড়েছে। কিন্তু থ্যানাবট-অবস্থায় তো তা সম্ভব না। এ-কি তবে প্রোগ্রামিংয়ের কোনো গণ্ডগোল? নাকি থ্যানাবটরা স্বপ্ন দ্যাখে? সেটা হলেও অবাক হবার কিছু নেই। মানুষের চেতনা ভয়ানক রহস্যময় জিনিস। তার তল পাওয়া সত্যিই মুশকিল।
যন্ত্রটা সহদেবের অভিব্যক্তি খুঁটিয়ে জরিপ করছিল বোধহয়। নকুল বিশ্বাসের অসন্তুষ্ট কণ্ঠ শোনা গেল, “আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি?”
না। ইয়ে, মানে, স্বপ্ন-টপ্ন দ্যাখোনি তো? তুমি শিয়োর?”
স্বপ্ন কেন দেখতে যাব?” খ্যাঁক করে উঠল নকুলের গলা, “মরার পর কি ঘুম বলে কিছু আছে যে স্বপ্ন দেখব?”
সহদেব চিন্তিত মুখে বললেন, “তোমার ইনস্ট্রাকটরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমার মনে হয় তোমার সিস্টেমে কিছু সমস্যা হচ্ছে।
ওই গবেটটা? ও কী বোঝে? কী জিজ্ঞেস করবি ওকে শুনি?”
তুমি ভুলভাল বকছ কেন সেটাই জানতে চাইব। তুমি কী বলছ আমি তো মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।
যন্ত্রের চোখের জায়গার নীল আলোদুটো সামান্য বড়ো হয়ে উঠল। তারপরেই নকুলের খ্যানখ্যানে চিৎকারে কেঁপে উঠল একটেরে ঘরটা, “আমি ভুলভাল বকছি বলে মনে হচ্ছে তোর? প্রমাণ চাই? তাহলে শোন, এর মধ্যে একদিন বাড়িতেও গেছিলাম। দেখলাম নতুন কুকুরছানা পুষেছিস। সাদা, ছোট্ট বলের মতো। বোধহয় ল্যাব্রাডর। ড্রয়িংরুমে একটা পেল্লায় সোফাসেট এনেছিস। গ্যারেজে নতুন একটা এসইউভি গাড়িও দেখলাম। কী? ঠিক বলছি?”
সহদেবের মাথাটা বোঁ করে একটা চক্কর খেয়ে গেল। যন্ত্রটা এসব কী বলছে? মিনমিন করে তিনি বললেন, “প্রযুক্তি কি এতটাই উন্নত হয়ে গেছে?”
নকুলের গলা একটু নরম হল, “আহা! এর মধ্যে প্রযুক্তির কী দেখলি? কথা তো হচ্ছে তোর সঙ্গে আমার।
প্রযুক্তি নয়? তুমি তো বলতে গেলে একরকম প্রযুক্তিই। কৃত্রিম উপায়ে তোমার চেতনাকে সংরক্ষণ করা হয়েছে তুমি তো আর তুমি নও ঠিক
আরে কচুপোড়া! তুই এখনও বুঝতে পারিসনি? সাধে কি গবেট বলি?”
কী বুঝব?”
আরে আমি হচ্ছি নির্জলা আমিই। নহি যন্ত্র, নহি যন্ত্র।
সহদেব কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। তবে টের পাচ্ছিলেন, কনকনে এসি ঘরেও কুলকুল করে ঘাম দিচ্ছে কোনোমতে বললেন, তুমি থ্যানাবট নও?
খিকখিক করে একটা হাসির শব্দ হল, “না বাপু, আমি কোনো বট-অশ্বত্থ নইআমি পিয়োর স্পিরিট বিশুদ্ধ আত্মা নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রানি, নৈনং দহতি পাবকঃ বুঝলি?”
সহদেবের বুকের মধ্যে হঠাৎ সশব্দে কী যেন একটা ফেটে গেল, আর এক ঝাঁক ভয়ার্ত পায়রা উড়ে গেল ঝটপট করে চেয়ারের হাতল চেপে ধরে কাঁপা-কাঁপা গলায় তিনি বললেন, “কী যা-তা ইয়ার্কি মারছ দাদা? তুমি না বিজ্ঞানী?”
মেলা জ্ঞান দিস না! পদার্থের বিনাশ নেই, শুধু রূপান্তর আছে জানিস না? সব ভুলে মেরেছিস? গবেট কোথাকার! দাঁড়া, হাতেকলমে না দেখালে তুই বুঝবি না!”
সহদেব বিস্ফারিত চোখে দেখলেন, একটা সাদা আঁশের মতো ধোঁয়া-ধোঁয়া অবয়ব থ্যানাবটটার ধাতব শরীর থেকে বেরিয়ে ডিং মেরে একটা উঁচু তাকে উঠে বসল থ্যানাবটের চোখের নীল আলোদুটো দপ করে নিভে গেল কেমন একটা অষ্টাবক্র হয়ে মাটিতে নেতিয়ে পড়ল যন্ত্রটা
আপদ যন্ত্রটার বল্টু ঢিলে করে দিলাম,” আঁশের মতো অবয়বটা থেকে নকুল বিশ্বাসের তৃপ্ত গলা ভেসে এল, “ভিতরে কলকবজা সব বোঝা হয়ে গ্যাছে। খুব জটিল কিছু না। এ-জিনিস আমি আমার ল্যাবে অনেক ভালো করে তৈরি করতে পারব। মরণোত্তর নোবেলটা আমায় পেতেই হবে রে সদু
গোঁ গোঁ শব্দ করে চোখ উলটে ভিরমি খেলেন সহদেব বিশ্বাস।
----------


[লেখকের কথা: থ্যানাবট (Thanabot) ব্যাপারটা আমার কল্পনা নয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-নির্ভর কোম্পানি চ্যাটজিপিটি সত্যিই এই নামে একটি প্রোজেক্ট ঘোষণা করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই বিশেষ যন্ত্রমানবের স্মৃতিভাণ্ডারে জমা করা যাবে একজন মানুষের যাবতীয় তথ্য ফলে যন্ত্রমানবটি পেয়ে পাবে সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব মানুষটির নিজের আগাম ও সজ্ঞান অনুমতি ছাড়া বৈধতা পাবে না তাঁর থ্যানাবট আগামী এক দশকের মধ্যেই হয়তো মানুষ প্রোজেক্ট থ্যানাবট’-এর সুবিধা নিতে পারবেন। আগ্রহীরা ইন্টারনেট সার্চ করলেই এ-ব্যাপারে বিশদে জানতে পারবেন। গল্পের বাকি ঘটনাক্রম আমার স্বকল্পিত।]
----------
ছবি - সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

No comments:

Post a Comment