গল্প:: হারু ডাকাতের খোঁজ চলছে - সুমন মিশ্র


হারু ডাকাতের খোঁজ চলছে
সুমন মিশ্র


এক

রবিবারের সকাল বাবা বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে মনোযোগ সহকারে খবরের কাগজের পাতা ওলটাচ্ছে বাইরে এখনও সামান্য ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব আছে চারপাশে ছড়িয়ে আছে ভোরের একটা মিঠে সুবাস যদিও একটু পরেই ওসব কেটে যাবে, তারপর সারাদিন ধরে চলবে অসহ্য গুমোট গরম এই রকমই চলছে গত একসপ্তাহ ধরে কাগজে লিখেছে বৃষ্টি আসতে এখনও ঢের দেরি আছে
মা ইতিমধ্যে রান্নাঘরে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে আজ সকালের প্রাতরাশে লুচি আলুরদম রান্না হবেআমি অঙ্কের হোমওয়ার্ক নিয়ে বসে মাথা চুলকোচ্ছি কোনোমতে সামনের কয়েকদিন কাটাতে পারলেই ব্যস, আর কোনো চিন্তা নেই, গরমের ছুটি শুরু হয়ে যাবে এই মুহূর্তে অঙ্ক একেবারেই মাথায় ঢুকছে না কে জানে লুচিগুলো যে কখন ভাজা হবে
হঠাৎ মায়ের ফোনটা বেজে উঠল আমার পড়ার টেবিলেই সেটা রাখা ছিল বড়োমামা ফোন করেছে। ফোনটা মাকে দেওয়ার জন্যে একছুটে রান্নাঘরে পৌঁছোলাম মায়ের ফোনটা পুরোনো হয়ে গেছে, স্পষ্ট করে কথা শোনা যায় না, তাই স্পিকার অন করে কথা বলতে হয় আমিও কথা শুনব বলে মায়ের পাশে মেঝেতে বসে পড়লাম
এদিক ওদিককার দু-একটা কথার পর বড়োমামা আসল প্রসঙ্গে এল, “কী রে, পিকলুর গরমের ছুটি কবে শুরু হচ্ছে?”
এই তো সামনের সপ্তাহেই শুরু হওয়ার কথা তবে যা গরম চলছে, আগেও শুরু হতে পারে
মামাও বেশ উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তা তোরা কবে আসছিস এই বাড়িতে? পুঁচকি আর বিল্টু তো আমার মাথা খেয়ে ফেলছে, ঘুরে-ফিরে এক কথা, পিকলুদা কবে আসবে
বড়োমামার সব উৎসাহে জল ঢেলে দিয়ে মা বলল, “দাদা, এইবার গরমের ছুটিতে বোধ হয় আমাদের যাওয়া হবে না
সে কী কথা তোরা তো প্রতিবারই পিকলুর গরমের ছুটিতে এখানে আসিস সবাই কত আশা নিয়ে বসে আছে সবাই একসঙ্গে জড়ো হলে একটু হইহুল্লোড় করে ছুটি কাটাতে পারব
কিন্তু দাদা গতবছর যা হয়ে গেল, এখনও ভাবলে বুক ঢিপঢিপ করেকথাটা বলতে গিয়ে মায়ের গলা যেন একটু কেঁপে গেল
বড়োমামা সাহস জোগালেন, “সেই দিনের পর থেকে তো হারু আর তার দলবলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বেমালুম উধাও হয়ে গেছে পুলিশ খোঁজ চালাচ্ছে, তবে মনে হয় না দোলনপুরে তাদের আর দেখা যাবে বলে তুই অত চিন্তা করিস না, পিকলুকে নিয়ে চলে আয়
গতবার গরমের ছুটিতে মামারবাড়ি গিয়ে যে হুলুস্থুল কাণ্ড হয়েছিল তাতে মায়ের চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক তবে আমি জানি এইবার মামারবাড়ি গেলে হারু ডাকাতের দলবল কোনো সমস্যা তৈরি করবে না গতবারের ঘটনাটা বলব তবে তার আগে মামারবাড়ির কথা একটু বলি
আমার মামারবাড়ি দোলনপুরে স্রোতহীন, শীর্ণকায়া সরস্বতীর বাঁকে গাছগাছালিতে ঢাকা ছোটো সুন্দর একটা গ্রাম মা বলে, দাদুর কোনো এক পূর্বপুরুষ সপ্তগ্রামের জমিদারের নায়েব ছিলেন। প্রচুর জমিজমা কিনে তিনি দোলনপুরে বসতবাড়ি বানান যদিও সেই পুরোনো জাঁকজমক আর নেই। তবে এখনও যা আছে তা নেহাত কম নয়। দাদুর পৈতৃক ব্যাবসা আছে। দুটো বিশাল আমবাগান আছে। বড়ো সবজির খেত আছে। গোরু, ছাগল আর মুরগির খামার আছে। এছাড়া পুরোনো বসতবাড়ির পাশে এক প্রকাণ্ড পুকুর আছে। সেই পুকুরের জলের উপরে দাদুর প্রিয় হাঁসেরা, আর জলের মধ্যে প্রকাণ্ড প্রকণ্ড রুই কাতলা ঘুরে বেড়ায়।

মামারবাড়িতে আছে দাদু, দিদিমা, দুই মামা-মামি। আর আছে পুঁচকি ও বিল্টু। ওরা আমার মামাতো ভাইবোন। আমি ওদের থেকে বয়সে বড়ো, তাই আমিই ওদের দলপতি
আর আছে নিশিদা। সে দাদুর খাস লোক। দাদুর সঙ্গে তার আলাপ হয় মাহেশের রথের মেলায় এক নাম-সংকীর্তনের আসরেতাও আজ থেকে প্রায় বছর দশেক আগের ঘটনা। নিশিদাকে দাদা বলা যায় না। কিন্তু মামাদের মুখে শুনে শুনে অভ্যেসের বশে আমরাও তাঁকে নিশিদা বলেই ডাকিতার মাথা ভরতি ধূসর মখমলে চুলমোটা ধূসর গোঁফের আড়ালে ঠোঁট ঢাকা পরে যায়তার বয়স ঠিক কত আমরা জানি না, তবে তার শরীরের কাঠামো বড়োই মজবুতসর্বক্ষণ তার সঙ্গে থাকে একটা মোটা লাঠি। সেটা নাকি পুরোনো আমলে মামারবাড়ির লেঠেল সর্দার ব্যবহার করত, এখন দাদু তাকে দিয়েছে সঙ্গে রাখার জন্যে। নিশিদার গায়ের রং শ্যামলা। মুখের গড়নটাও কেমন কাঠ-কাঠ, রাক্ষুসেআর চোখগুলো দেখলেই কেমন বুক ঢিপঢিপ করে অমন ভয়জাগানো চেহারা হলেও লোকটা একেবারেই গোবেচারা। বৈষ্ণব মানুষ, কৃষ্ণ-অন্ত-প্রাণ। ঘরের কুলুঙ্গিতে তার প্রাণের গোপাল আছে। চৈতন্য ভাগবতের পাঠ শুনলে সে শিশুর মতো কেঁদে ফেলে। দাদু বলেন – নিশির শরীরটাই শক্তপোক্ত, মনটা একেবারে তালশাঁস।
সকাল থেকে সন্ধে সে কিছু না কিছু কাজ করেই চলেছে। মাঝে ক্ষণিকের বিশ্রামের অবকাশ পেলে ঘরের সামনে খাটিয়া পেতে সে তার বেতার যন্ত্রটি নিয়ে বসে। নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরোনো দিনের গান চালিয়ে শোনে। তখন তার অন্যদিকে হুঁশ থাকে না। সে চোখ বন্ধ করে গানের তালে তালে মাথা দোলাতে থাকে, আর আপন মনে মিচকি মিচকি হাসে

মামার বাড়িতে যেতে আমার বেশ লাগে। এখানে সারাদিন শুধুই খেলা আর খেলা, কোনো পড়াশোনা নেই। কখনও আমবাগানে লুকোচুরি খেলে, কখনও আমগাছের ডাল থেকে ঝোলানো দোলনায় ঝুলে, কখনও সবজি খেতের পাশে ছোটাছুটি করে, কখনও গ্রামের মধ্যে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়ে, কখনও বা পুকুরের পাড়ে বসে মাছেদের খেলা দেখে আমাদের সময় কেটে যায়। আর এইসব অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে কিঞ্চিৎ সময় বের হলে আমরা চলে যাই নিশিদার কাছে। সে আমাদের দেখে মিচকি মিচকি হাসে, তারপর আমাদেরকে পাশে বসিয়ে নানান গল্প শোনাতে থাকে। পুরোনো দিনের গল্প, গ্রামের গল্প, শহরের গল্প, রূপকথার গল্প।

দুই

এবার আসি গত বছরের ঘটনাটায়। সেবারও আমাদের গরমের ছুটি দিব্যি কাটছিল। মামারবাড়িতে এসেছি প্রায় হপ্তাখানেক হয়েছে, এমন সময় একদিন ভোরবেলা সবকিছু কেমন পালটে গেল। দাদু তখন আরামকেদারায় বসে সকালের চা খাচ্ছিলেন। মামারাও দাওয়ায় বসে সংবাদপত্রের পাতা ওলটাচ্ছিল। নিশিদা উঠোনে বসে একমনে কাস্তেতে শান দিচ্ছিল। আমি আর পুঁচকি উঠোনের কোনায় দৌড়াদৌড়ি করছিলাম। বিল্টু তো ছোটো, সে তখনও ঘুম থেকে ওঠেনি
এমন সময় বাড়ির মূল ফটকের সামনে একটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়াল। তারপরই দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে সৃজনকাকু আসছেন। সৃজনকাকু বড়োমামার ক্লাসমেট, আর দোলনপুর থানার ওসি। তিনি এসেই দাদুকে একটা নমস্কার করলেন তারপর সামান্য কুশল বিনিময়ের পরেই আসল প্রসঙ্গ উঠল সৃজনকাকু গম্ভীর গলায় বললেন, “একটা ব্যাপারে আপনাদের একটু সতর্ক করে দিতে এলাম। আপনি হয়তো এখনও শোনেননি হারু ডাকাত ফিরে এসেছে

“হারু ডাকাত ফিরে এসেছে? এত বছর পর!” কথাটা শুনে দেখলাম দাদুর চোখ-মুখে চিন্তার কালো মেঘ ঘনিয়ে এলমামারাও সৃজনকাকুর কাছে এসে বসল ভালো করে ব্যাপারটা শোনার জন্যে। এমনকি নিশিদাও দেখলাম দাদুর পায়ের কাছে এসে বসে পড়েছে। হাঁটু দুটো বুকের কাছে জড়ো করে ভুরু কুঁচকে সে উৎসুক দৃষ্টিতে সৃজনকাকুর দিকে তাকিয়ে আছে। দাদুই জিজ্ঞাসা করলেন, “একথা ঠিক যে সেইবার আমার হাতে জব্দ হওয়ার পর হারু ডাকাত দোলনপুরে আর কোনোদিন উৎপাত করেনি, তবে আশেপাশের গ্রামে সে অনেক লুঠপাঠ চালিয়েছিল একসময়। কিন্তু সে তো বহুকাল আগের ঘটনা। তারপর তো সে হঠাৎ করেই একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। তুমি নিশ্চিত যে সে সত্যিই ফিরে এসেছে?”
“সেই রকমই মনে হচ্ছে, গত সপ্তাহে অন্নপূর্ণা তেলকলের মালিক রতন তোপদারের নাতিকে হারুর দল অপহরণ করেছিল। সঙ্গে মুক্তিপণ চেয়ে চিঠি দিয়ে গিয়েছিল রতনবাবুর বাড়ির লেটার বক্সে। চিঠির বক্তব্যের শেষে লেখা ছিল ‘নমস্কারান্তে হারু’ বুঝতেই পারছেন কেন হারু ডাকাতের নাম এতদিন পরে আবার উঠছে। এই কথাটাই ছিল হারু ডাকাতের সিগনেচার স্টাইল ডাকাতির পর সে একটা চিরকুট ফেলে যেত যেখানে এই কথাটাই লেখা থাকত। আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওদের ডেরা খুঁজে পাইনি। শেষে বাড়ির লোক মুক্তিপণ দিয়ে বাচ্চাটিকে ছাড়িয়ে আনতে বাধ্য হয়। এটা প্রথম ঘটনা নয়, এর আগেও আরও দুটো হুবহু একইরকম ঘটনা ঘটেছে গত মাসে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ, সম্ভাব্য ডেরাগুলোয় তল্লাশি চালিয়েও ওদের কারোর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কিন্তু মনে হচ্ছে আশেপাশেই কোথাও ওদের গোপন ডেরা আছে। আপনার উপরে তো তার পুরোনো রাগ আছেতাই আপনাদের সতর্ক করতে এলাম।”
এবার নিশিদা তার খসখসে গলায় বলল, “আমার যেন কেমন সন্দেহ হচ্ছে। হারু ডাকাত তো পুরোনো পদ্ধতিতে ডাকাতি করত শুনেছি। বন্দুক সে ব্যবহার করত না। গায়ে তেল মেখে, মাথায় সিঁদুরের তিলক এঁকে, রক্তবস্ত্রে মাথা-মুখ ঢেকে, হাতে লাঠি নিয়ে দলবলের সঙ্গে দরজা ভেঙে ঢুকত। ডাকাতির পর চিরকুটে শুধু লিখে রেখে যেত নমস্কারান্তে হারু। বেশ ডাকাবুকো একটা ব্যাপার ছিল, কিন্তু লুকিয়ে অপহরণের মতো কাপুরুষ তো সে ছিল না। আর সে যখন চলেই গিয়েছিল তখন আবার ফিরবে কেন?”
সৃজনকাকু বললেন, “হয়তো পেটের টানে। হয়তো সে অন্য কোনো কাজ করছিল, কিন্তু এখন পর্যাপ্ত উপার্জনের অভাবে সেই পুরোনো পেশায় ফিরেছে। আর অপহরণের একটা কারণ হতে পারে বয়সের কারণে সরাসরি ডাকাতি করার ধকল আর নিতে পারছে না।”
“আমার কিন্তু মনে হয় হারু ডাকাতের নামে অন্য কেউ এসব করছে। হারু ডাকাত বলতে যা যা মনে পড়ে তার সঙ্গে কিছুই যেন পুরোপুরি মিলছে না।” নিশিদা আরও কিছু বলত কিন্তু তার আগেই দাদু তাকে ধমক দিয়ে চুপ করালেন।
“নিশি, তোকে আর সকাল সকাল গোয়েন্দাগিরি করতে হবে না। যা গিয়ে বাজারটা করে আন।”
নিশিদা উঠে যাওয়ার পরপরই সৃজনকাকুও উঠে গেলেন। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলেন সাবধানে থাকতে, আর বাচ্চাদের চোখে চোখে রাখতে।

এর ফলে মামারবাড়ির পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেল সবাই কাজ করছে, গল্প করছে কিন্তু আগের সেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা চলে গিয়ে সবসময় কেমন যেন একটা সতর্কভাব
আমাদের খেলাধুলাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হল বাড়ির বড়োরা কাছেপিঠে না থাকলে একা একা খেলতে যাওয়া যাবে না এমনকি আমবাগান আর পুকুরপাড়ে আমাদের বসে থাকাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হল শুধুমাত্র নিশিদার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোয় কোনো নিষেধ ছিল না কিন্তু নিশিদাও কাজকর্মে সারাদিন এত ব্যস্ত থাকে যে আমাদের সবসময় সঙ্গ দিতে পারে না দু-দিনের মধ্যেই আমরা হাঁসফাঁস করতে শুরু করলাম হারু ডাকাতের পরেও ভারী রাগ হল, ডাকাতি যখন ছেড়েই দিয়েছিল তখন আবার ফিরে এল কেন? আর এলই যদি তাহলে আমাদের গরমের ছুটির মধ্যে কেন এল
কিন্তু আমাদের এইসব প্রশ্নের উত্তর কে আর দেবে। তাই একদিন নিশিদা যখন কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছে তখন আমরা তাকে গিয়ে ধরলাম, “আচ্ছা হারু ডাকাত আবার ফিরে এল কেন?”
নিশিদা চুপ করে খানিকক্ষণ দূরের আমবাগানের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর দূরমনস্ক গলায় বলল, “তা ঠিক জানি না, তবে তার ফেরার কথা তো ছিল না। সে ডাকাতি একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিল।”
পুঁচকি জিজ্ঞাসা করল, “হারু ডাকাত ডাকাতি কেন ছেড়েছিল?”
নিশিদা কেমন অন্যমনস্ক গলায় বলে চলল, “লোকমুখে একটা গল্প শোনা যায় দিদিভাইসেইবার পানিহাটির ঐতিহাসিক দণ্ডমহোৎসব বা চিঁড়ের মেলায় ভক্ত সমাগম হয়েছিল চোখে পড়ার মত। জলপথ হোক অথবা সড়কপথে, হাজার হাজার ভক্তের দল এসে উপস্থিত হচ্ছিল শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং নিত্যানন্দ প্রভুর পদধূলি ধন্য মহোৎসবতলা ঘাটের প্রাচীন বটবৃক্ষের তলায়। হারুর দলের কাছে খবর ছিল গুপ্তিপাড়ার এক কাপড়ের ব্যবসায়ী জগবন্ধু গোস্বামী সেই বছর অনেক দানধ্যান করবেনজগবন্ধু গোস্বামীকে দেখে বোঝা যেত না যে তিনি ধনী মানুষ। অতি সাধারণ ছিল তাঁর জীবনযাপন। কিন্তু খবর ছিল উৎসব শেষে তিনি একরাত সোদপুরে থাকবেন। পরের দিন সোদপুরের স্টেশন রোডে একটা দোকান কেনার ব্যাপারে অগ্রিম দিয়ে তারপর গুপ্তিপাড়ায় ফিরবেন। তিনি রাতে কোথায় থাকবেন, কতজন তাঁর সঙ্গে থাকবে তা কিছুই জানা ছিল না। হারু নিজেই জগবন্ধুবাবুর গতিবিধি অনুসরণ করছিল। দলের বাকিরা আশেপাশে ছড়িয়ে ছিল। রাঘব ভবন থেকে ঘুরে এসে জগবন্ধুবাবু একসময় দণ্ডমহোৎসব চত্বরের চৈতন্য মন্দিরের পাশে গাছের ছায়ায় বসলেন। দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেলের রং গাঢ় হচ্ছে। ভাগীরথীর বুকে তখন জোয়ারের ঢেউয়ের আনাগোনা শুরু হয়েছে। উৎসব চত্বরে তখন অগণিত ভক্তের আনাগোনাখোল, করতালের শব্দে চতুর্দিক মুখরিতবৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের কীর্তনের শব্দ হৃদয়ে যেন মিঠে শান্তির প্রলেপ লাগাচ্ছে।
হারু জগবন্ধুবাবুর দিকেই সজাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। পাশেই এক বৈরাগী সুললিত কণ্ঠে চৈতন্য ভাগবত পাঠ করছিলেন। কপালে তাঁর রসকলি আঁকা, মুণ্ডিত মুস্তক, পরনে শুভ্র বসন। চারপাশে ভক্তরা আকুলভাবে তাঁর পাঠ শুনছেন। সেই পাঠ হারুর কানেও অল্পস্বল্প আসছিল। প্রথমে বিক্ষিপ্ত, তারপর ঘন ঘন। কখন যে হারু মন দিয়ে সেই পাঠ শুনতে শুরু করেছিল সে নিজেই উপলব্ধি করতে পারেনিকোথায় গেল জগবন্ধু, কোথায় গেল হারুর দল, কোথায় গেল এত মানুষের কলতান। সব যেন হারিয়ে গেল। কত ভক্ত এসে বসল, কত জন দেরি হয়ে যাবে বলে উঠে গেল। হারু ঠায় বসে থাকল সেখানে। ধীরে ধীরে রাত ঘন হল। ভক্তের ভিড় হালকা হয়ে এল, মেলার দোকানগুলো এক এক করে ঝাঁপ বন্ধ করতে শুরু করল, বেশিরভাগ আলো নিভে গিয়ে মন্দিরের টিমটিমে আলোটুকু জ্বলে রইল, ঠিক তখন হারু গিয়ে সেই বৈরাগীর পায়ের কাছে বসল। তার দু-চোখ ঝাপসা হয়ে গাল বেয়ে নেমে আসছে অশ্রুধারা। সে বাষ্পরুদ্ধ গলায় শুধু বলল - এ কী করলে ঠাকুর। এ কী মায়ায় জড়ালে

এটুকু বলে নিশিদা একটু দম নিতে থামল। আমি বললাম, “তারপর কী হল?”
নিশিদা আবার দূরে একটা তালগাছের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে চেয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত, তারপর দাসভাবে হেসে বলল, “শোনা যায় হারুর মনের পরিবর্তন হয়েছিল সেদিন। সে বৈষ্ণব হয়ে গিয়েছিল। কারোকে কিছু না বলেই সে সেদিন নিরুদ্দেশ হয়েছিল। কেউ তাকে আর দেখেনি, না পুলিশ, না তার দলের লোকেরা
নিশিদা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই বাড়ির ভিতর থেকে আমাদের জন্যে ডাক এল। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তিন

সেইদিন দুপুরেই এক কাণ্ড ঘটল। সকাল থেকেই গুমোট হয়ে ছিল। দুপুরের পর থেকেই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করল। তিনটে বাজতে না বাজতেই আমবাগানের পিছনের আকাশ কালো করে এল। ধীরে ধীরে ঝোড়ো হাওয়াও বইতে শুরু করল। চারপাশে কেমন বৃষ্টির গন্ধ। আমি, পুঁচকি আর বিল্টু বড়োমামনির পাশে শুয়েছিলাম। আমার ঘুম আসেনি, হারু ডাকাতের কথা ভাবছিলাম। বাইরে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করতেই মন চলে গেল আমবাগানের দিকে। পুঁচকিকে ডেকে পা টিপে-টিপে বেরিয়ে এলাম। বিল্টুকে ডাকা যাবে না, যা ছটফট করে, বড়োমামনির ঘুম ভেঙে কেলেঙ্কারি হবে।
বাইরে বেরিয়ে একছুটে চলে এলাম আমবাগানের ধারে। ততক্ষণে শনশন করে হাওয়া বইছে, টুপটাপ আম ঝরে পড়ছে। আমরাও মনের আনন্দে আম কুড়োচ্ছিলাম এমন সময় তিনটে লোক কোত্থেকে এসে আমাদের মুখ চেপে ধরল। একজন আমার চোখ-মুখ বেঁধে দিল। আর একজন পুঁচকিকে বলল, “খুকু, তোমার দাদাকে নিয়ে গেলাম। বাড়ি গিয়ে বোলো, হারু ডাকাত তোমার দাদাকে নিয়ে গেছে। বাড়ির লেটারবক্সে রাখা চিঠিতে মুক্তিপণের কথা লেখা আছে।”
আরেকজন কর্কশ গলায় বলল, “যাও তো খুকু এবার একছুট্টে বাড়ি গিয়ে সবাইকে জানাও।”

এরপরের ঘটনাগুলোর কিছুটা বাড়ির সকলের মুখে শোনা, কিছুটা নিজের দেখা, কিছুটা নিশিদার মুখে শোনা। আমি পুরোটা নিজের মতো সাজিয়ে বলছি।

পুঁচকি কাঁদতে কাঁদতে এসে বাড়িতে সবটা জানাতেই বাড়িতে একটা কান্নার রোল উঠল। মা তো দুবার কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞানও হারাল মামারা আশপাশটা খুঁজে দেখতে চলে গেল বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক বেড়ে চলল চারপাশের আলো যখন প্রায় মরে এসেছে তখন মামারা ফিরে এল সকলে বাড়ির দাওয়ায় অধীর অপেক্ষায় বসে ছিলেন, কিন্তু মামারা কোনো আশার কথা শোনাতে না পারায় বাড়ির পরিবেশ আরও থমথমে হয়ে গেল শেষে উপায়ান্তর না দেখে দাদুই বললেন, “এবার তো তাহলে সৃজনকে জানাতে হয়, পুলিশ ছাড়া তো আর গতি দেখছি না।”
নিশিদা সেদিন গিয়েছিল পাশের গ্রামে ডাক্তারদাদুর বাড়িতে তিনি দাদুর পুরোনো বন্ধু দাদু মাঝে মাঝেই নিশিদার হাত দিয়ে খেতের টাটকা শাকসবজি পাঠিয়ে দিতেন তাঁর কাছে নিশিদার বেলা থাকতেই ফিরে আসের কথা ছিল, কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল নিশিদা বাড়ি ফিরে দেখল সারা বাড়ি জুড়ে থমথমে পরিবেশ তারপর দাদুর কাছে সবটা জানতে পেরে কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ হয়ে থাকল তারপর তার চোখ-মুখের অবস্থা ক্রমশ পরিবর্তন হয়ে গেল চোখ ক্রমশ রাগে লাল হয়ে উঠল চোয়াল শক্ত হয়ে গেল ঘন ঘন নিশ্বাস পড়তে শুরু করল সে শুধু বলল, “এত সাহস! দাদাবাবুকে তুলে নিয়ে গেল? আচ্ছা আমিও দেখছি কার ঘাড়ে কটা মাথাতারপর লেঠেল সর্দারের সেই লাঠিটা হাতে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপে সে অদৃশ্য হল বাইরের চাকবাঁধা অন্ধকারে

আমার চোখের বাঁধনটা লোকগুলো খুলে দিতেই দেখলাম আমি একটা স্যাঁতস্যাঁতে ঘরের মধ্যে কাঠের চেয়ারে বসে আছি একটা মোমবাতি জ্বলছে, তার টিমটিমে আলোয় ঘরময় এক রহস্যজনক আলো-আঁধারির খেলা চলছে ঘরের দেয়াল নোনা-ধরা, চারপাশে কেমন ভ্যাপসা গন্ধ কোনো জানালা নেই আছে একটা কপাটবিহীন দরজা, তার সামনে থেকে একটা সিঁড়ি উঠে গেছে উপরের দিকে সিঁড়িতে কোনো আলো নেই, আছে খালি চাকবাঁধা অন্ধকার
একটু ধাতস্থ হতেই দেখলাম তিনটে লোক আমায় ঘিরে আছে, আর পাশেই কাঠের চৌকিতে একটা লোক বসে আছে মাথায় কাঁচাপাকা চুল, মজবুত চেহারা মোমবাতির আলোয় তার মুখটা ভয়ংকর দেখাচ্ছিল বিশেষত তার গালের কাটা দাগটার দিকে নজর পড়তেই আমার শিরদাঁড়ায় হিমেল স্রোত বয়ে গেল মনে মনে ভাবলাম, এ হারু ডাকাত না হয়ে যেতেই পারে না
লোকগুলো নিজেদের মধ্যেই মুক্তিপণ নিয়ে কথা বলছিল হঠাৎ হারু ডাকাত বলল, “কাল অবধি টাকা না দিলে, দ্বিতীয় চিঠিটা দিবিতারপরও টাকা না দিলে খোকাকে সরস্বতীর জলে ভাসিয়ে দিবি
বাকি লোকগুলো একসঙ্গে হেসে উঠল ওদের মধ্যে একজন আমার কানের কাছে ফিশফিশ করে বলল, “সর্দার কিন্তু সত্যি তোমায় ভাসিয়ে দিতে পারে, তোমার দাদুর উপর তার বেজায় রাগ
ভয়ে তখন আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না, তাও কোনোমতে আমি বললাম, “কেন? দাদু কী করেছে?”
হারু ডাকাত এক ঝটকায় চৌকি থেকে উঠে দাঁড়াল, তারপর লোকটার দিকে তাকিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, “এত কথার কী আছে যা রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা করদেখলাম লোকটার মুখ শুকিয়ে গেছে সে তড়িঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়িটা দিয়ে উঠে গেল এবার হারু ডাকাত আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “খোকা, জানতে চাও তোমার দাদু কী করেছে? এই দেখোবলেই সে নিজের গালের কাটা দাগটা দেখাল রাগে তখন তার নিশ্বাস-প্রশ্বাসের বেগ বেড়ে গেছে
সে আরও কিছু বলার আগেই সিঁড়ির দিক থেকে একটা আর্তনাদ ভেসে এল, তারপরই হারু ডাকাতের সেই শাগরেদ সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে গড়াতে নীচে এসে পড়ল সবাই চমকে তাকাল সিঁড়ির দিকে সেখানে জমাট-বাঁধা অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না লোকটা কিন্তু নিঃস্পন্দ হয়ে পড়ে আছে, তার মাথা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে
কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা কেউ কিছু করার আগেই সেই অন্ধকার থেকে লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে বেরিয়ে এল একজন মোমবাতির আলোয় তাকে দেখে চমকে উঠলাম, আমাদের নিশিদা!!
নিশিদা বনবন করে লাঠি ঘোরাল বিদ্যুৎগতিতে সে একজনের মাথায়, আর একজনের থুতনিতে লাঠির বাড়ি বসিয়ে তাদের ভূপতিত করল সর্দার ঘটনার আকস্মিকতায় হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলনিশিদা তাকে কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে লাঠির এক আঘাতে চৌকির উপর ফেলে দিল তারপর লাঠি দিয়ে বিছানার উপর চেপে ধরে হিমশীতল গলায় বলল, “মাজিদ, তোর খুব সাহস বেড়ে গেছে না?”
আমার সব গুলিয়ে গেল এ যদি মাজিদ হয় তাহলে হারু ডাকাত কোথায়?
মাজিদ আতঙ্কমাখা গলায় বলল, “কে? কে তুমি?
নিশিদার মোটা গোঁফের নীচে একটা শ্লেষের হাসি খেলে গেল, “আমার নামে ডাকাতির দল চালাচ্ছিস, আর আমাকেই চিনতে পারছিস না?”
“হারু সর্দার!! তুমি বেঁচে আছ?” ভয়ে মাজিদের গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না আমারও সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিশিদা হারু ডাকাত বৈষ্ণব ভক্ত, গোবেচারা নিশিদা আসলে ডাকাত সর্দার! কিন্তু তা কী করে সম্ভব
বেঁচে তো আছিই, কিন্তু তোর সাহস তো দেখছি আশমান ছুঁয়েছে। কী ভেবেছিলি, ডাকাতি করবি তুই, আর সব দোষ হবে হারু সর্দারের? একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নে, এই তল্লাটে তোকে আবার দেখলে তুই আর বাঁচবি নানিশিদা গমগমে গলায় বলল
মাফ করে দাও ওস্তাদ আমি এ তল্লাটে আর থাকব না মাজিদ সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলল সঙ্গে সঙ্গেই নিশিদা মাজিদের চোয়ালে মুষ্ট্যাঘাত করে তাকে অচেতন করে দিল তারপর আমার হাত ধরে প্রায় টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এল
দেখলাম মাজিদ সর্দার জঙ্গলের মধ্যে পোড়ো শিবমন্দিরের নীচে একটা চোরাকুঠুরিতে আমায় রেখেছিল চারপাশে ঝোপজঙ্গল, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, একটা অদ্ভুত ভয়ঘন পরিবেশদুজনেই তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এগিয়ে চললাম
আমায় কী করে খুঁজে পেলে নিশিদা?” অনেকক্ষণ চুপচাপ চলার পর আমি প্রশ্ন করলাম
যখন ডাকাতি করতাম, তখন এটাই আমাদের ডেরা ছিললোকচক্ষুর আড়ালে, বেশ সুরক্ষিত যখন শুনলাম আমার নামে কেউ ডাকাতি করছে তখনই বুঝেছিলাম এটা নিশ্চয় মাজিদের কাজ ও আমার ডানহাত ছিল ও ছাড়া আর কারও এমন সাহস হবে না আর আন্দাজ করেছিলাম ডেরাটাও হয়তো আমাদের পুরোনো জায়গাতেই রয়েছে
তুমি যে হারু ডাকাত সেটা দাদু জানে?” আমার মনে তখন প্রশ্নের ঝড়
নিশিদা থমকে দাঁড়াল, তারপর ধীরে ধীরে বলল, “কর্তাবাবু ভগবান উনি সব জেনেই আমায় কাজে রেখেছেন সেইবার আমরা কর্তাবাবুর বাড়িতে দলবল নিয়ে ডাকাতি করতে গেলাম কিন্তু কর্তাবাবু এই লাঠিটা হাতে নিয়ে আমার রাস্তা রুখে দাঁড়ালেন…”
দাদু লাঠি চালাতে জানে!” আমি নিশিদার কথায় অবাক হয়ে বললাম
শুধু চালাতে জানে? অমন লাঠি চালাতে আমি কাউকে দেখিনি আমি তাঁর সামনে দাঁড়াতেই পারলাম না কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার লাঠি হাত থেকে ছিটকে পড়লমাজিদ আমায় বাঁচাতে ছুটে এল তার লাঠির আঘাতে কর্তাবাবু ছিটকে পড়লেন মাজিদ আবার আঘাত করতে গেল, কিন্তু কর্তাবাবু কোমর থেকে একটা ছোরা বের করে মাজিদের গালে চালিয়ে দিলেন রক্তাক্ত মাজিদকে নিয়ে আমরা কোনোক্রমে পালিয়েছিলাম হারু ডাকাত ওই একবারই হেরেছিল মারামারির সময় সেই রাতে একমুহূর্তের জন্যে আমার মুখ থেকে লাল কাপড়ের ঢাকাটা সরে গিয়েছিল, কর্তাবাবু কিন্তু ঠিক আমার মুখটা মনে রেখেছিলেন তারপর বহুবছর পরে মাহেশের মেলায় তিনি আমায় দেখে আবার চিনতে পারেন আমি তখন অন্য মানুষদীনহীনের জীবনযাপন করছিলাম তিনিই আমায় এখানে এনে একটা কাজ দেন ওনার মতো মানুষ হয় না দাদাবাবু

তারপর আবার অনেকক্ষণ কোনো কথা নেই বাড়ির কাছাকাছি যখন প্রায় চলে এসেছি, তখন নিশিদা একটু কিন্তু কিন্তু করে বলল, “দাদাবাবু আমিই যে হারু ডাকাত সেটা বাড়িতে বোলো না যেন
আমি এবার নিশিদাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললাম, “আমি কারোকে বলব না তুমি তো হারু ডাকাত নও তুমি তো আমার নিশিদা
বাড়ি ফিরে নিশিদা বলেছিল আমি নাকি নিজেই ডাকাতদের খপ্পর থেকে পালিয়ে এসেছিলাম, মাঝরাস্তায় নিশিদা আমায় খুঁজে পায়
এরপরে আমাদের দোলনপুরে হারু ডাকাতের দলের আর কোনো উৎপাত হয়নি যদিও পুলিশ এখনও হারু ডাকাতের খোঁজ চালাচ্ছে সৃজনকাকুর মতে হারু ডাকাতের খোঁজ পাওয়া যাবেই তবে আমিও গতবছর দুর্গাপুজোয় চারদিনই অঞ্জলি দিয়েছি আর মা দুর্গাকে বলেছিমা, দেখো যে হারু ডাকাতের খোঁজ যেন কেউ কক্ষনো না পায়
আচ্ছা আমি তো না খেয়েই অঞ্জলি দিয়েছিলাম মা দুর্গা কি আমার কথা শুনবে না?
----------
ছবি - সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

No comments:

Post a Comment