মোদক চুরি
দীপান্বিতা রায়
ক-দিন ধরেই দুগ্গার বাড়িতে গোছগাছ চলছে। বর্ষা এখন শেষের
দিকে। আকাশের কালো মেঘগুলোর রং কেমন যেন হালকা হয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই তাদের ঠেলে
সরিয়ে নীল আকাশ উঁকিঝুঁকি মারে। ভোরের দিকে শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস দেয়। তবে এসবই
অবশ্য পৃথিবীর গপ্পো। কৈলাসপর্বত মানে যেখানে দুগ্গার বাড়ি সেখানে এমন ঋতুবদলে
আকাশ-বাতাস বদলায় না। সারাবছরই বেশ মোলায়েম রকম ঠান্ডা থাকে। দুগ্গাকে
বিয়ে করে বাড়ি আনার পরই শিবঠাকুর হিমালয় পর্বতকে ডেকে বলেছিলেন,
“দ্যাখো বাপু,
বাংলাদেশের মেয়ে বিয়ে করেছি। ঠান্ডা সইতে পারে না মোটেই। ভালো করে চারদিক ঘিরে
মাথা উঁচু করে দাঁড়াও, যাতে কনকনে হাওয়া ঢুকতে না পারে। আর সুয্যিকে বলে দিয়ো
বছরভর যেন মিঠে-কড়া রোদ্দুর পাই। গিন্নির বড়ি দিতে অসুবিধা হবে না। আমিও ষাঁড়ের
পিঠে চেপে গাঁয়ে-গঞ্জে ঘুরতে গিয়ে ঘেমে-চুমে একশা হব না।”
শিবঠাকুরকে
ভয়-ভক্তি করে সবাই। তাই সেই নিয়মই চলছে। তবে অনেক উঁচুতে উড়ে যাওয়া পাখির মুখে,
আকাশের এরকম রং বদলানোর খবর পেলেই দুগ্গা বুঝতে পারে, আশ্বিন মাস এল বলে। বাপের
বাড়ি যাওয়ার সময় হল। ছেলে-মেয়েরা মামারবাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। বাহনদের
নাইয়ে-ধুইয়ে পরিষ্কার করে। নন্দি-ভৃঙ্গি গোরুর গাড়ির ছই বদলায়। মেঘের ময়ূরপঙ্খী
চেপে বাপের বাড়ি যায় দুর্গা। গোরুর গাড়িতে করে মা-কে আকাশের খেয়াঘাটে পৌঁছে দেয়
নন্দি-ভৃঙ্গি। অসুরও যায় সঙ্গে। তার যদিও আজকাল আর মর্ত্যে যেতে মোটে ইচ্ছে করে
না। বয়স হয়েছে। বাতেও ধরেছে। সারাদিন হাঁটু মুড়ে বসে থাকতে কষ্ট হয়। দুগ্গা তাকে
বলেছে,
“যতক্ষণ পুজো চলবে, ততক্ষণ কষ্ট করে বসে থাকবি। রাতে শেতল
দিয়ে যেই মন্দিরের দরজাটি বন্ধ করবে, অমনি লম্বা হয়ে পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়িস। পেঁচাকে
বলে দেব। ভোররাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তোকে ডেকে দেবে।”
বাধ্য
হয়েই রাজি হয়েছে অসুর। কিছু করার নেই। অসুরবধ না হলে তো আর দুগ্গা-পুজো হয়
না। তাছাড়া মা-এর পুজো মানে তো গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ধুমধাম। পুজোর পর চাল-ডাল,
ঘি-চিনি, ফল-ফুলুরি-মিষ্টি আসে চার নৌকা ভরতি। তাতেই তো
সংসার চলে সারাবছর। অল্প একটু জমি অবশ্য আছে। তাতে চাষ করে নন্দি-ভৃঙ্গি। শিবঠাকুর
সারা বছর শুধু বিনা পয়সায় রুগি দেখে আর যাত্রা-পালায় নাচ-গান করে কাটিয়ে দেয়।
সংসারে মন নেই মোটেই।
শুধু
অবশ্য দুগ্গা নয়, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ সবারই পুজো হয় মর্ত্যে। তবে সে
তো ছোটো ছোটো পুজো। সরস্বতী ভারী ভালো মেয়ে। পুজোর ফল-সন্দেশ নিয়ে আসে বাড়িতে। লক্ষ্মীও
দিব্যি ভরা-ভরতি ঝাঁপি নিয়ে ফেরে। কার্তিক বেচারির পুজোর তেমন ধুম নেই। কিন্তু আসল
দুষ্টু হল গণেশ। দশ দিন ধরে পুজো। কত হইচই-গান-বাজনা। বড়ো বড়ো পরাত ভরতি মোদক। তাছাড়াও শিঙাড়া,
কচুরি, জিলিপি থেকে শুরু করে চকোলেট, সন্দেশ কিচ্ছু বাদ নেই। গণপতি বাপ্পা ছোটো
ছেলে বলে সব দেওয়া থাকে পুজোর থালায়। কিন্তু কোঁচড়ে করে কুটোটি নিয়ে আসে না গো! এবার
তাই দুগ্গা ঠিক করেছে আর ছাড়াছাড়ি নেই।
নিজের
ঘরে বসে মন দিয়ে হলুদ রঙের জরিপাড় ধুতিটি কুঁচিয়ে রাখছিল গণেশ। ছোটো তোরঙের ভিতর
বাকি জামা-জুতো, গয়নাগাটি গোছানো হয়ে গেছে। ইঁদুরও সাফ-সুতরো হয়ে লেজ আঁচড়ে তৈরি।
পরদিন ভোর-ভোর রওনা হতে হবে। এ তো আর বাংলাদেশ নয় যে মেঘের নৌকায় চাপলাম আর হুশ করে
পৌঁছে গেলাম। সেই নীল সমুদ্দুরের ধারে। চাররাত লাগে হেঁটে যেতে। গোরুর গাড়িতে
চাপিয়ে গণেশকে নিয়ে যেতে নন্দি-ভৃঙ্গি রাজি নয় মোটেই। অমন মোটাসোটা চেহারা। বেচারা
গোরুরা হাঁফিয়ে-হুঁফিয়ে একশা হয়। তাই হেঁটেই যায় গণেশ। তাতে অবশ্য তার দুঃখু নেই।
দিব্যি চারদিক দেখতে দেখতে, লোকের বাগানে ফল-ফুলুরি খেতে খেতে যাওয়া যায়। ইঁদুরও
পায়ে পায়ে গপ্পো-গাছা করতে করতে চলে খুরখুর করে। কার বাগানে কলা পেকেছে, কার গাছ ভরতি
জামরুল টুসটুস করছে, এইসব খবরাখবর জোগাড় করে আনে। আজও ধুতি কোঁচানোর সময় সেইসব
আলোচনাই হচ্ছিল। এমন সময় কোমরে আঁচল জড়িয়ে ঘরে ঢুকল দুগ্গা,
“শোন গণেশ, প্রতিবার পুজো নিতে যাবি আর খালি হাতে বাড়ি ফিরে
লম্বা-চওড়া গল্প শোনাবি, সেসব চলবে না। এবার অন্তত একহাঁড়ি মোদক তোকে নিয়ে আসতেই
হবে। আহা! ক্ষীর আর নারকেলের পুরভরা মোদক যখন পরাত ভরে সাজিয়ে দেয়, তখন দেখতেই কেমন
সুন্দর লাগে। ঠিক যেন আমার মায়ের হাতে তৈরি তুলতুলে নরম সেদ্ধ পিঠে। নাহ্, এবার
আর আমি কোনো কথা শুনব না। বাড়ির সবার জন্য মোদক নিয়ে আসতে হবে তোকে।”
মা-এর
কথা শুনে গণেশের তো মুখ হাঁ হয়ে গেল। মুলো মুলো দাঁত বেরিয়ে এল।
“সে কী মা! মোদক আমি আনব কী করে! আমার তো হাতে তোরঙ থাকবে।”
“তাতে কী হয়েছে। হাতে তোরঙ নিবি। আর মোদকের হাঁড়ি বসিয়ে
নিবি মাথায়। চলে আসবি গটগটিয়ে। এই যে ইঁদুর, তোকেও বলে দিচ্ছি কিন্তু। মোদক নিয়ে
না ফিরলে এবার আর বাড়িতে ঢুকতে দেব না আমি।”
ইঁদুর
আর কী করে। মুখ চুন করে ঘটঘট করে ঘাড় নাড়ল দু-বার।
চতুর্থীতে
শুরু হয়ে গেল পুজো। চলবে সেই চতুর্দশী পর্যন্ত। মা-এর হুকুম। অমান্য করার উপায়
নেই। ইঁদুর তাই গিয়েই একখানা বড়োসড়ো হাঁড়ি জোগাড় করে ফেলেছে। গণেশের ধুতির নীচে
লুকিয়ে রাখা হয়েছে হাঁড়িটা। রোজ যখন আরতি হয় আর সবাই চোখ বুজে, জয় গণেশ - গান করে
তখন ইঁদুর চুপি চুপি পরাত থেকে মোদক সরিয়ে হাঁড়িতে ঢুকিয়ে রাখে। একটু একটু করে
ভরে উঠছে হাঁড়ি। চতুর্দশীর দিন ইঁদুর দেখল, হাঁড়ি বেশ মুখ পর্যন্ত ভরতি হয়ে
গেছে। এবার একখান সরা ঢাকা দিয়ে নিয়ে গেলেই হয়। মা নিশ্চয় খুশি হবে।
বিসর্জন
পর্ব মিটে গেলে রওনা দিল দুজনে। গণেশের বগলে তোরঙ, মাথায় একটা পোঁটলা, তার ওপর
মোদকের হাঁড়ি। ইঁদুরের গলায় একটা ছোটো মতো ঝোলা।
“ওতে আবার কী নিয়েছিস তুই?”
“এই দুটি ছোলা-বাদাম নিলাম। রাস্তায় যদি খিদে পায়।”
ইঁদুরের
কথা শুনে ভুঁড়ি দুলিয়ে হাসল গণেশ, “আরে দূর, খিদে পেলে ছোলা-বাদাম খেতে হবে কেন! আমার পোঁটলাতে
খাস্তা কচুরি আর মিষ্টি আছে। সেসবই তো খাব দুজনে।”
হাঁটতে
হাঁটতে সন্ধে হয়ে এল। এক গ্রামের ঠাকুরদালানে গিয়ে বসে গণেশ আর ইঁদুর। রাতটা
সেখানেই থাকবে। সকাল হলে আবার হাঁটা শুরু। পুঁটলি খুলে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুয়ে পড়ল
দুজনে। একটু পরেই ঘড়ঘড় করে নাক ডাকতে লাগল গণেশের।
পরদিন
সকালে গুছিয়ে-গাছিয়ে বেরোনোর আগে কী মনে হতে হাঁড়ির মুখের ঢাকনা খুলে ইঁদুর দেখে,
ওমা মোদক তো কমে গেছে বেশ খানিকটা। গণেশকে জিজ্ঞাসা করতেই সে চোখ গোল গোল করে বলল,
“সে কী! কাল রাতে টের পাসনি বুঝি! ডাকাত পড়েছিল তো। তিন-তিনটে মুশকো
লোক। হাতে আবার লাঠি। আমার ধুতি ঝেড়েঝুড়ে দেখছিল টাকা-পয়সা কিছু আছে কিনা। না
পেয়ে তখন হাঁড়ির ঢাকনা খুলে কতগুলো মোদক নিয়ে চলে গেল।”
“তা, তুমি এত বড়ো বীর, আর ডাকাতদের তাড়াতে পারলে না!”
অবাক
হয়ে বলল ইঁদুর।
“না বাবা। তিন-তিনটে ডাকাত। হাতে আবার লাঠি। আমার ঠ্যাঙ ভেঙে
দিলে কী হত শুনি? তুই আমাকে ঘাড়ে করে কৈলাসে নিয়ে যেতিস? চল চল আর
মেলা দেরি করিস না। হাঁড়িতে এখনও অনেক মোদক আছে, চিন্তার কিছু নেই।”
গণেশকে
ঘাড়ে করে নিয়ে যাওয়ার কথা কল্পনা করেই মুখ শুকিয়ে গেছিল ইঁদুরের। তাই সে আর
কথাটি না বলে, ঝোলা কাঁধে ঝুলিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে পড়ল।
পরের
দিন রাতে আবার এক ঠাকুরমণ্ডপে থাকা। ইঁদুর সেদিন ঠিক করেছে রাতে জেগে থাকবে। ডাকাত
এলে চেষ্টা করবে দুজনে মিলে তাড়াতে। গণেশের অবশ্য সেসব ভাবনা নেই। একপাশে ছিল
একটা খড়ের গাদা। সেখান থেকে খানিক খড় নিয়ে শুয়ে পড়ল তার ওপর আরাম করে। আর
শোয়ামাত্রই ঘুম। ইঁদুর জেগেছিল খানিকক্ষণ। কিন্তু রাত দুই প্রহর পেরোনোর আগেই কখন
যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি।
পরদিন
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে মোদকের হাঁড়ি প্রায় অর্ধেক খালি।
“এ কী! মোদক কোথায় গেল?”
ইঁদুরের
কথা শুনে ঢেউ করে একটা লম্বা ঢেঁকুর তুলে গণেশ বলল,
“আর বলিস না। কাল রাত্তিরে দু-ব্যাটা চোর এসেছিল এখানে। তুই
তো ভোঁসভোঁস করে ঘুমোচ্ছিস। আমিও ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ খুটখাট আওয়াজে ঘুম ভেঙে দেখি,
চোরদুটো হাঁড়ির ঢাকনা খুলে মোদক খাচ্ছে। আমি তো অমনি লাফ দিয়ে উঠে তেড়ে গেলাম।
ব্যাটাচ্ছেলেরা গায়ে এমন তেল মেখে এসেছিল যে একেবারে পিছলে পালিয়ে গেল। কিন্তু
ওইটুকুর মধ্যেই আধহাঁড়ি প্রায় সাবড়ে দিয়ে গেল রে। যাক গে, কী আর
করবি, এখনও তো আধহাঁড়ি আছে। মা-এর ওতেই হয়ে যাবে।”
পরদিন
ইঁদুর বেচারা তিনপ্রহর পর্যন্ত জেগে থেকেও শেষপর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়ল। আর সেদিনও
গণেশের কাছে জানা গেল রাতের বেলা দুটো সিড়িঙ্গে ভূত এসে নাকি বেশ কয়েকটা মোদক
খেয়ে গেছে। এখন আর হাঁড়ির নীচে তলানিতে কয়েকটা মোদক শুধু পড়ে আছে। ইঁদুরের তো
খুব মনখারাপ। ভয়ও লাগছে খুব। কী বলবে দুগ্গাকে গিয়ে। গণেশ কিন্তু দিব্যি ফুর্তিতে
আছে। মোদক নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই। সকাল থেকেই তাড়া দিচ্ছে, “চল চল
বেরিয়ে পড়ি। আজ আর কিছু খাব না। পেটটা কেমন ভার-ভার লাগছে।”
কী
আর করা। চুপচাপ বেরিয়ে পড়ল ইঁদুর। কিন্তু মনে তার শান্তি নেই। রোজ রাতে কেউ না
কেউ মোদক খেয়ে নিচ্ছে এটা কী করে হতে পারে! ইঁদুর ঠিক করল আজ রাতে সে জেগে থাকবেই।
দেখতে হবে আজও কোনো চোর আসে কিনা।
যেমন
ভাবা তেমনি কাজ। গণেশ ঘুমিয়ে পড়লেও ইঁদুর কিন্তু সেদিন জেগে আছে। রাত বেশ অনেক
হয়েছে। হঠাৎ নাক ডাকা থেমে গেল গণেশের। উঠে বসে সে ভালো করে দেখল ইঁদুর ঘুমোচ্ছে
কিনা। ইঁদুর তো এদিকে চোখ বুজে, মটকা মেরে পড়ে বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছে। গণেশ তো আর
সেটা বোঝেনি। ইঁদুর ঘুমোচ্ছে ভেবে সে এবার হেলেদুলে উঠে হাঁড়িটা নিয়ে বসল। তারপর
যে-কটা মোদক ছিল সাবাড় করে গামছায় মুখ মুছে
শুয়ে পড়ল নিজের জায়গায়। পিটপিট করে সব দেখল ইঁদুর।
আচ্ছা,
এই তবে রোজ চোর-ডাকাতের গল্প! দেখাচ্ছি মজা তোমার।
গণেশ
ঘুমিয়ে পড়তেই ইঁদুর উঠল চুপিচুপি। তারপর হাঁড়ি খুলে যেটুকু ভাঙাচোরা মোদক ছিল,
তাই নিয়ে বেশ করে লেপে দিল গণেশের শুঁড়ে। তারপর শুয়ে পড়ল নিজেও। পরদিন সকালে উঠে
গণেশ খুব করুণ গলায় ইঁদুরকে বলল, “কাল রাত্তিরে দুটো পেতনি এসেছিল রে।
বাকি মোদক ক’টাও খেয়ে নিয়েছে...”
“সে আর কী করবে। ভূত-পেতনিরা তো ওরকমই হয়। মাকে গিয়ে সেকথাটাই বোলো বরং।”
উদাসমুখে
বলল ইঁদুর। রওনা দিল দুজনে। কৈলাস আর বেশি দূর নয়। দুপুর-দুপুর বাড়িও পৌঁছে গেল।
ছেলেকে দেখে ভারী খুশি হল দুগ্গা।
“যাক ভালোয় ভালোয় ফিরে এসেছিস দুজনে। হ্যাঁ রে, সব কিছু
ঠিকঠাক ছিল তো?”
“হ্যাঁ মা, সব ঠিক ছিল। খুব ধুমধাম করে পুজো হয়েছে। আর
কতরকমের খাবার...”
“হ্যাঁ রে, আমাদের জন্য মোদক এনেছিস তো?”
মা-এর
কথা শুনে মুখখানা করুণ করে গণেশ বলল, “না গো মা। সে অনেক কথা। মস্ত এক হাঁড়ি মোদক আনছিলাম জানো। কিন্তু
রাস্তায় চোর-ডাকাত আর ভূত-পেতনিতে সব মোদক খেয়ে নিয়েছে...”
“চোর-ডাকাতে সব মোদক খেয়ে নিয়েছে!”
ভুরু
কুঁচকে যায় দুগগার।
“হ্যাঁ মা, জিগ্গেস করো ইঁদুরকে...”
বলতে
বলতে শুঁড় নেড়ে মা-এর দিকে এগিয়েছে গণেশ। আর অমনি দুগ্গা দেখতে পেয়ে গেছে
শুঁড়ের ডগাটি ক্ষীর আর নারকেলে মাখামাখি।
“পেটুক ছেলে... ডাকাতে খেয়েছে না তুমি
খেয়েছ! ঠিক বুঝেছি আমি।। দাঁড়াও আজ দেখাচ্ছি মজা। নন্দি এক্ষুনি ঘরে বন্ধ করে দে
গণেশকে। আজ ওর খাওয়া বন্ধ...”
রেগে
আগুন হয়ে বলল দুগ্গা।
মা-এর
হুকুম, নন্দি এসে শিকল তুলে ঘরে বন্ধ করে দিল গণেশকে।
বেলা
গড়িয়ে গেছে। ভাত খাবার সময় হল সবার। গণেশ বেচারি একলাটি জানলায় বসে খিদেতে
কাঁদছে। দেখে ভারী মনখারাপ হল ইঁদুরের। গুটিগুটি রান্নাঘরে দুগ্গার কাছে গিয়ে
বলল, “মা, চার-ছয়খানা মোদক আমি নিজে খাব বলে ঝোলায়
ভরে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এগুলো তুমি নাও আর গণেশদাদাকে ছেড়ে দাও। খিদে পেয়েছে
তো ওর।”
মনে
মনে হাসলেন দুগ্গা। ইঁদুরের মাথায় হাত বুলিয়ে মোদক ক-টা সবাইকে ভাগ করে দিয়ে,
গেলেন গণেশের কাছে। শিকলি খুলে আচ্ছা করে ছেলের হাতি-কান মলে দিয়ে বললেন,
“খবরদার আর পেটুকগিরি করবে না। জানো না, ভালো জিনিস
সবার সঙ্গে ভাগ করে খেতে হয়? আর যেন কোনোদিন বলতে না হয়।”
ভালো
মানুষের মতো ঘাড় নেড়ে দুধ-ভাতের থালা নিয়ে বসে হামহাম করে খেতে শুরু করল গণেশ।
----------
ছবি - শ্রীময়ী
No comments:
Post a Comment