চুরির ফাঁদে
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
(১)
সকালবেলায় অন্বয়দার কাছে মাঠে ফুটবল খেলতে গেছিল
রুবাই। বাড়ি ফিরেই দেখে সবিতামাসি মায়ের কাছে কেঁদে-কেটে কত কী বলছে। সবিতামাসি
ওদের বাড়ির ঠিকা কাজের লোক,
ছোটোবেলায় রুবাইকে এই সবিতামাসিই দেখে রাখত। মা নিশ্চিন্তে স্কুলে
যেত। ইদানীং সবিতামাসির ছেলে একটা দোকানে কাজ পেয়েছে, মেয়ে এ
বছর কলেজে ভরতি হয়েছে। মেয়ে বাবলিদি খুব ভালো ছবি আঁকে, বাড়িতে
একটা আঁকার স্কুলও করেছে। সবিতামাসি এখন শুধু রুবাইদের বাড়িতেই কাজ করে। তাও ছেলে
বাবিন বহুবার বলেছে কাজ ছেড়ে দিতে। সবিতামাসির বর অমলমেসোর একটা পা খোঁড়া, আগে চা বাগানে কাজ করত। সেই বাগান লকডাউনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন স্টেশনে
চা বিক্রি করে।
টেবিল থেকে জলের বোতল নিতে নিতে রুবাইয়ের কানে এল
মাসি মাকে বলছে, “বাবলির বিয়েটা আর দিতে পারব না বউদি। কত কষ্ট করে টাকা জমিয়েছিলাম। কে যে
চুরি করল?”
“ভালো করে খুঁজে দেখো, ভুল করে অন্য কোথাও রেখে দাওনি তো?” রুবাইয়ের মা
শ্রমণাদেবী বলেন।
“কালকেই তো তোমার কাছ থেকে নিয়ে গেলাম বউদি।
আগামীকাল জামাইকে আশীর্বাদ করার কথা, এখন আমি কী করব!
তাছাড়া...”
“পুলিশে খবর দিয়েছ?”
“না, বাবিন বলল,
ঐ একটা সাত গ্ৰামের পাতলা চেন আর আংটির জন্য পুলিশ কিছুই করবে না।”
রুবাই পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে। ওকে দেখে ডুকরে কেঁদে
ওঠে মাসি, বলে, “বাবু রে, তোর বাবলিদির
বিয়েটা বোধহয় ভেঙে গেল। আমার ঘর থেকে জামাইয়ের চেন আর আংটিটা কাল চুরি হয়ে গেছে
রে।”
রুবাই একটু অবাক হয়।
“ও বাবু, তুই তো কত
অসাধ্য সাধন করিস বাবা, আমার বাড়ি এভাবে কে চুরি করল একটু
দেখে দে না বাবা।”
রুবাই অপ্রস্তুত হয়ে মায়ের দিকে তাকায়। ওর মা বলেন, “যা তো একবার
মাসির সঙ্গে। ওদের ঘরের ভেতর ট্রাংক থেকে সোনার জিনিস চুরি হয়েছে। বাবলির বিয়ের
চেন আর আংটি ছিল আমার কাছে। কালকেই মাসি নিয়ে গেছিল। কাল ভোরে ওদের বেলাকোবা
যাওয়ার কথা, ছেলে আশীর্বাদ করতে।”
রুবাই ক’দিন ধরেই বাড়িতে আলোচনা শুনেছে বাবলিদির
বিয়ে। মাত্র ফাস্ট ইয়ারে পড়ে বাবলিদি। এখনই বিয়ে দিক রুবাইয়ের মায়ের ইচ্ছা ছিল না।
রুবাই শুনেছিল বাবলিদির বয়স সবে আঠারো পার হয়েছে। কিন্তু মাসি বলেছিল যে খুব ভালো
ছেলে পেয়েছে। ছেলের সাইকেল রিপেয়ারিং-এর দোকান। এক ছেলে, মা
আর ছেলের সংসার। পঞ্চায়েত থেকে দু-কামরার পাকা বাড়ি পেয়েছে ছেলে। দাবি বলতে ঐ
ছেলেকে একটা সোনার চেন দিয়ে আশীর্বাদ করতে হবে। আর বিয়েতে সত্তর জন বরযাত্রী আসবে।
তাদের আপ্যায়ন করতে হবে। মাসি আরও বলেছিল, ছেলে নাকি নেশাভাং
করে না, বাবিনদা খোঁজ নিয়েছিল।
শ্রমণাদেবী বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন এত অল্প বয়সে
মেয়ের বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। আর বাবলির পড়ার মাথা ভালো না হলেও আঁকার হাত বেশ ভালো। ও
এটা নিয়ে কিছু করতেই পারবে।
কিন্তু মাসি এই পাত্র হাতছাড়া করতে নারাজ। অবশেষে
জমানো টাকা-পয়সা তুলে শ্রমণাদেবী নিজেই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে চেন আর আংটি বানিয়ে
দিয়েছিলেন। বাবলির গয়না বলতে একটা কানের, গলার আর বাওটি আগেই করা আছে। সে সব
শ্রমণাদেবীর কাছেই গচ্ছিত ছিল। সবিতামাসি শ্রমণাদেবীকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস
করে।
রুবাই সব শুনে বলল, “স্নান করে জলখাবার খেয়ে আমি
যাচ্ছি মাসি, ঘরটা যেমন আছে থাক, আগে
আমি গিয়ে দেখব সব। তারপর প্রয়োজনে পুলিশে যাব।”
“পুলিশে যাব না বাবা। পুলিশে আমার আর বাবলির
বেশ ভয়, ঘরের ভেতর ট্রাংকের তালা খুলে খুব দূরের কেউ নেবে
কীভাবে? অথচ আমি জানি বাড়ির কেউ এ কাজ করবে না। আমি কাকে
সন্দেহ করব?”
(২)
আজ রবিবার, স্কুল ছুটি। রুবাই যখন সবিতামাসির বাড়ি
গেল ঘড়িতে সকাল সাড়ে ন’টা। মাসির বাড়িটা একদম চা বাগানের
গায়ে, পাশেই একটা ছোট্ট ঝোরা আছে, শুখা
ঝোরা। বছরে ছয়মাস সেটা শুকনোই থাকে, বর্ষার জল পেয়ে ফুলে
ফেঁপে ওঠে। নিউগ্ল্যাঙ্কো চা বাগানের কিছু পরিত্যক্ত জমিতে প্রায় পঁচিশটা ঘর করে
এই পাড়াটা তৈরি হয়েছে। কিছুটা ইটের গাঁথনি তুলে তার উপর ছিটে বেড়ার ঘর। টিনের চাল।
মাসির দুটো ঘর, বাবলিদি বাইরের মাটির বারান্দায় চট পেতে আঁকা
শেখাচ্ছিল। রুবাই যেতেই ছুটি দিয়ে দিল বাচ্চাদের। শনি আর রবি বিকেলে রুবাইদের
পাড়ার ক্লাবে বাবলিদি আঁকা শেখায়। ভালোই ভিড় হয়।
বাবিনদা কাজে বের হবে বলে খেতে বসেছিল। সবিতামাসির
বর একটা গাছের গুঁড়ির উপর বসে ফোনে কথা বলছিল কারোর সঙ্গে।
রুবাই ঘরটা ভালো করে দেখল। বেড়ার ঘর, বারান্দা মাটির
হলেও ঘরের মেঝেটা অবশ্য সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা। দুটো জানালা রয়েছে। তাতে বাঁশের কঞ্চি
দিয়ে পাতলা নেট লাগানো, মশা যাতে না ঢোকে তার ব্যবস্থা।
সামনে একটা টেবিল, তাতে একটা সরস্বতীর মূর্তি, বাবলিদি আঁকা শেখায় বলে এ বছর থেকে বাড়িতে সরস্বতী পূজা শুরু করেছিল। পাশে
আঁকার সরঞ্জাম আর বইখাতা। এটা বাবলিদির ঘর। ইট দিয়ে উঁচু করা বড়ো চৌকি, তার নীচে দুটো ট্রাংক। মাসি একটা ট্রাংক দেখিয়ে বলল ওটায়
ছিল চেন আর আংটি।
রুবাই সবিতামাসিকে বলে, “কীভাবে টের পেলে
যে ওগুলো চুরি গেছে?”
চোখ মুছে মাসি বলল, “সকালে ঘর ঝাড় দিতে গিয়ে দেখি ট্রাংকের
তালা খোলা। কী মনে হল! ট্রাংক খুলে দেখি বাক্স আছে, কিন্তু
ভেতরের জিনিস নেই।”
“কাল শেষ কখন দেখেছিলে ও দুটো?”
“সন্ধ্যা সাতটায়, তখন
কাজ থেকে আসার পথে ও দুটো এনে ট্রাংকে রেখেছিলাম। আজ পাওয়া না গেলে বিয়েটা ভেঙেই
যাবে,” বলেই চোখে আঁচল চাপা দেয় মাসি।
বাবলিদি একটা প্লেটে চারটে নারকেল নাড়ু আর একগ্লাস
জল এনে রুবাইকে দেয়। তারপর বলে, “আমি তো বিয়েটা করতে চাইনি, তোমরাই
জোর করে দিচ্ছিলে। হবে না তো হবে না।”
রুবাই একটা নাড়ু মুখে ফেলে বলে, “কাল সন্ধ্যার পর
কেউ এসেছিল বাড়িতে?”
“মহিম এসেছিল জেনারেটরের টাকা নিতে। ওর
জেনারেটরের একটা লাইন টানা আছে আমাদের ঘরে। ওকে বসিয়ে রান্নাঘরে চা করতে গেছিলাম।”
বারান্দার কোণে ছিটে বেড়ায় ঘেরা এক চিলতে রান্নাঘর।
বাবলিদি বলে, “ছোটোমামাও এসেছিল রাতে। ঐ ঘরেই বসেছিল।
খাওয়া-দাওয়া করে এগারোটায় বেরিয়ে গেছে।”
রুবাই আরেকটা নাড়ু খেতে খেতে ভাবে, ‘মহিমদা তো জানত
না ঐ ট্রাংকে গয়না আছে, রিস্ক নিয়ে ট্রাংকে হাত দেবেই বা কেন?
সবিতামাসির ছোটো ভাই ভবানিমামাকে রুবাই চেনে। লোকটা একসময় ওর বাবার
গাড়ি চালাত। নেশাখোর। তবে সে কি চুরি করতে পারে?’
ও সবিতামাসিকে জিজ্ঞেস করে, “ভবানিমামা জানত
গয়নার কথা?”
মাথা নাড়ে মাসি। বলে, “ওর তো কাল আমাদের সঙ্গে আশীর্বাদ
করতে যাওয়ার কথা। ও খোঁজ নিয়েছিল গয়না এনে ঘরে রেখেছি কিনা। তবে কোথায় আছে জানত
না।”
রুবাই জল খেয়ে ভাবতে থাকে, ‘বাবিনদা বোনের
বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচুর খাটছে। ওর টাকায় সংসার চলে। ও এ চুরি করবে না, সবিতামাসির বর নিজেও এ কাজ করবে না, তিল তিল করে
পয়সা জমিয়েছে ওরা মেয়ের বিয়ে দেবে বলে। বাকি থাকল ছোটোমামা আর মহিম।’
“মাসি, তোমরা পুলিশে
খবর দাও। ঐ মহিম বা মামা কেউ তো নিয়েছে। পুলিশ তুলে নিয়ে দু-ঘা দিলেই সব হড়হড়িয়ে
বেরিয়ে যাবে,” রুবাই বলে।
“না, পুলিশ একদম নয়।
চেন, আংটি আবার বানানো যাবে টাকা জমিয়ে। কিন্তু ছোটোমামা বা
মহিম যদি দোষী না হয়?” বাবলিদি বলে।
রুবাই বলে, “চুরি তো হয়েছে, বাইরেরই কেউ...”
“আজ সকালে রুবিদিও এসেছিল। এ ঘরেই বসেছিল।
তখন মা চা করছিল। আমি শাক বাছতে বসেছিলাম। বারবার জানতে চাইছিল কী
দিয়ে আশীর্বাদ করা হবে,”
বাবলিদি বলে।
রুবিদি ওদের তিনটে ঘর পরেই থাকে। দর্জির দোকানে কাজ
করে।
মাসি বলে, “রুবি তো জানত না জিনিসগুলো কোথায় ছিল।”
“মামা তো জানত!” রুবাই
বলে।
“ছোটোমামা... এমন কাজ করতেই পারে না,”
বাবলিদি বলে ওঠে।
রুবাই আর কিছুক্ষণ কথা বলে ঘর আর ট্রাংকটা ভালো করে
দেখে বাড়ি চলে আসে।
(৩)
দুপুরে পড়ার টেবিলে বসে ও ভাবছিল চোর চুরিটা করল
কখন আর কীভাবে?
মহিম কেন ওদের বাড়ি গিয়ে ট্রাংক খুলতে যাবে? ও কিছুই জানত না।
ওকে বাদ দেওয়াই যায়। বাকি থাকল ভবানিমামা, সে ঐ বাড়ি সবসময়
যায়। ট্রাংকে দামি জিনিস থাকবে জানে। আর বাকি থাকল বাবিনদা আর মেসো। অবশ্য
রুবিদিও এসেছিল।
একটা কাগজে ও পরপর সবার নাম লেখে। তারপর এক এক করে
নামের পাশে কাটা চিহ্ন দিতে থাকে।
“রুবাইদা আসব?” বিট্টুর
গলা পেয়ে রুবাই দরজায় দিকে তাকায়। বিট্টুরা ওদের পাশের বাড়িতে নতুন ভাড়া এসেছে,
ওদের স্কুলেই ক্লাস ফাইভে ভরতি হয়েছে বিট্টু। ওর মা অঙ্গনওয়ারি
কর্মী। বাবা একটা দোকানে কাজ করে। আর বিট্টু সারাদিন দুষ্টুমি করে বেড়ায়।
“বল বিট্টু, কী খবর?”
রুবাই খাতা বন্ধ করে ঘুরে বসে।
বিট্টু একটা কৌটো রুবাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “এই মার্বেলগুলো
একটু লুকিয়ে রাখবে রুবাইদা? মা আজ সব মার্বেল ড্রেনে ফেলে
দেবে বলেছে।”
“কেন রে? নিশ্চয়ই কিছু
দুষ্টুমি করেছিস তুই।”
“অঙ্কে দশে দুই পেয়েছি, মা বলেছে সব মার্বেল ফেলে দেবে। ওগুলোই নাকি নষ্টের মূলে।”
হাসতে হাসতে কৌটোটা নেয় রুবাই। বলে, “সে রেখে দেব। তবে দশে অন্তত আট না পেলে
এটা ফেরত পাবি না আর।”
“আচ্ছা বাবা, আচ্ছা।
চেষ্টা তো করি আমি।”
“আরও বেশি করে চেষ্টা করতে হবে। মার্বেল
ভুলে অঙ্কে মন দিলেই হবে।”
“এখন পালাই, মা সারাবাড়িতে
মার্বেল খুঁজছে। আমি এসেছিলাম যে তুমি আবার বলে দিয়ো না যেন। টা টা,” দৌড়ে চলে যায় বিট্টু।
মার্বেলের কৌটোটা বইয়ের আলমারিতে তুলে রাখতে গিয়ে
বিদ্যুৎ-চমকের মতো একটা কথা মনে পড়ে। চমকে ওঠে রুবাই। এই দিকটা তো ও ভেবেই
দেখেনি। তক্ষুনি মাকে বলে ও বাবলিদির বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে।
(৪)
রাস্তাতেই দেখা হয় বাবলিদির সঙ্গে, ক্লাবে আঁকা
শেখাতে যাচ্ছিল দিদি। ওকে দেখে একটু অবাক হয়ে বলে, “এদিকে
আবার কোথায় চললি রুবাই?”
“তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম দিদি।”
রুবাই লক্ষ করে বাবলিদির কপালে ভাঁজ পড়েছে ওকে
দেখে। ও বলে, “চোর কে আমি জেনে গেছি বাবলিদি, তবে চুরির ফাঁদে চোর
নিজেই জড়িয়ে গেছে, তাই পুলিশ ডাকতে চাইছে না...”
বাবলিদি একটু অবাক হয়, তারপর গম্ভীর
গলায় বলে, “শুধু চোর কে জানলেই হবে? চোরাই
মাল উদ্ধার না করতে পারলে...”
“ভুল বললাম আমি, চুরি
তো হয়ইনি, যার গয়না সে নিজেই যদি সরিয়ে রাখে তাকে কী চুরি
বলে? তুমি তো আমার মাকে জোর দিয়ে বলতেই পারতে যে এ বিয়ে তুমি
করবে না,” রুবাই মিটি-মিটি হাসে।
ওর চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে বাবলিদি বলে, “তোর ভারী বুদ্ধি
এতদিন শুধু শুনেছি, কিন্তু মানব তখনই
যখন তুই জিনিস দুটো খুঁজে দিবি।”
“আচ্ছা চলো, চেষ্টা
করেই দেখি। যদি বাড়িতে থাকে পেয়ে যাব।”
বিকেলের এই সময় সবিতামাসি কাজে যায়। মেসোও স্টেশনে
যায় চা বিক্রি করতে। বাবিনদা ফেরেনি দোকান থেকে। রুবাই ওদের ঘর দুটো বেশ মন দিয়ে
দেখে, মায়ের কাছে গল্প শুনেছিল বাঁশের খুটির ভেতর অনেকে আগেকার দিনে টাকা-গয়না
লুকিয়ে রাখত। টিনের চালের নীচে সিলিং আছে খড়ের। ওতেও গুঁজে রাখা যায়। মাটি খুঁড়ে
পুতেও রাখা যায়। ওর দুটো চোখ চরকির মতো সারাটা ঘরে ঘুরতে থাকে।
বাবলিদি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ পড়ার টেবিলের
দিকে। ও বারবার বাবলিদিকে লক্ষ করে। ওদের ঘরে লুকিয়ে রাখার মতো তেমন কোনো জায়গা
নেই।
রুবাইকে পড়ার টেবিলের দিকে এগোতে দেখে বাবলিদি দুটো
ড্রয়ার খুলে দেখায়। তারপর রঙের শিশি বোতলগুলো এগিয়ে দেয়।
রুবাই একটু হেসে বলে, “ওখানে নেই আমি জানি।”
“তাহলে...”
রুবাই ততক্ষণে তুলে নিয়েছে সরস্বতীর মূর্তিটা, আর মায়ের মূর্তির
ফাঁপা পেটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। বাবলিদির সাদা হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে
হাতটা বের করে আনে রুবাই, শেষ বিকেলের রোদে ছোট্ট প্লাস্টিকে
ভরে সেলোটেপে মোড়া চেন আর আংটি ঝিকমিকিয়ে ওঠে।
টপটপ করে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে নামে বাবলিদির দু-চোখ
দিয়ে। বলে, “বিয়েটা এখনই আমি করতে চাই না রে ভাই...”
“করতে চাও না, কোরো
না। আমি এই প্যাকেটটা আমার মায়ের হাতে তুলে দেব। মা-বাবা প্রয়োজনে সবিতামাসিকে
ডেকে বোঝাবে যে এখনই তুমি বিয়ে করবে না। আপাতত কাল আশীর্বাদ হচ্ছে না। আর যাতে
নতুন করে বিয়ের সম্বন্ধ না দেখে মাসি তার ব্যবস্থা করতে হবে তো।”
“কিন্তু মা যদি জানতে পারে আমি নিজেই নিজের
ঘরে চুরি...”
“আরে, আমি কীভাবে এটা
ফেরত পেলাম আমার মাকে ছাড়া আর কাউকে বলব না। এই মা সরস্বতীর পা ছুঁয়ে বলছি। এবার
তো একটু হাসো।”
কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেলে বাবলিদি, চোখ মুছে বলে,
“এই না হলে আমার গোয়েন্দা ভাই! তুই একদিন অনেক বড়ো হবি।”
রুবাইয়ের মনে হয় মাসির ঘরে রামধনুর সাত রং যেন
ঝিলমিলিয়ে উঠেছে।
----------
ছবি - শ্রীময়ী
বেশ গল্প।
ReplyDelete